দিল্লিতে প্রচন্ড ঠান্ডা,মাঝে মাঝে বৃষ্টি আর সূচ ফোটানো হাওয়ায় দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া কৃষকদের সঙ্গে কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্র সরকারের আলোচনায় উত্তপ্ত হল বিজ্ঞানভবন। এই উত্তাপের খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম। তবে ঘটনা হল তাতেও গলল না বরফ। রাজধানীতে প্রতিবাদী কৃষক ও সরকারের মধ্যে অষ্টম দফার বৈঠকও ( শুক্রবার ৮,জানুরারি,২০২১) ব্যর্থ। ৩ নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবি মানতে নারাজ সরকার। অন্যদিকে, অনড় কৃষকরাও। আগের সাতটি আলোচনার মতো এই আলোচনাতেও সমাধান সূত্রে পৌঁছতে পারে নি দু’পক্ষ। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন - কৃষি আইন নিয়ে বৈঠক হয়েছে, তবে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। আইন প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কোনও শর্ত যদি কৃষকরা দেয় তাহলে তা বিচার করে দেখা যেতে পারে। সংসদে বেআইনিভাবে,গায়ের জোরে তিনটি কৃষি বিলকে আইনে পাস করিয়ে নেওয়া নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রী তোমরের পরিষ্কার দাবি - কৃষকরা আইন প্রত্যাহারের কোনও বিকল্প দেয়নি। তাই আলোচনায় কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। তাঁর আরও দাবি এই আইন দেশের সব রাজ্যের কৃষকদের জন্য পাস করা হয়েছে। এই আইনের সমর্থনে বহু কৃষক রয়েছেন তাই তা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। তবে আইনের প্রতিটি ক্লজ ধরে ধরে আলোচনা হবে। অর্থাৎ নিজেদের অবস্থানে অনড়ই থাকছে কেন্দ্র - ফলে ক্রমশই সরু হচ্ছে সমাধানের রাস্তা।
অন্যদিকে, অনড় কৃষকরাও। তাদের সাফ বার্তা আইন প্রত্যাহার করাই কৃষকদের মূল দাবি। কানুন ওয়াপসি না হলে ঘর ওয়াপসির প্রশ্ন নেই। কৃষকদের দাবি, সরকার যদি সমস্যার সমাধান করতে না চায়, তাহলে বারবার আলোচনায় বসে লাভ কী? ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের মুখপাত্র রোকেশ সিং টিকায়েত সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন - আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কৃষকরা ক্ষান্ত হবে না। অর্থাৎ কৃষকদের আন্দোলন চলবে। আগের পরিকল্পনা মতোই ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের ট্রাক্টর নিয়ে কুচকাওয়াজ হবে। তবে তার আগে অবশ্য ঘটতে চলা কয়েকটি ঘটনাবলী অন্য মাত্রা দিতে পারে কৃষক আন্দোলনকে। যেমন ১১ তারিখ কৃষি আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি এবং ১৫ জানুয়ারি ফের সরকারের সঙ্গে কৃষকদের আলোচনা।
কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিধানসভায় কৃষি আইন বিরোধী প্রস্তাবও পাস করেছে কয়েকটি রাজ্য সরকার। কিন্তু কি ভাবছে সাধারণ মানুষ? এই আইন নিয়ে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করে সরব হয়েছে নেটিজেনদের একাংশ। চলছে তর্ক-বিতর্ক। এসবের মধ্যেই কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এবার পথে নামছে শ্রীরামপুরের নাগরিক সমাজ। এর আগে বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়েছে হুগলি জেলার অন্যতম প্রধান শহর শ্রীরামপুর। মরোনোত্তর দেহদান থেকে চক্ষুদান, রক্তদান থেকে স্বাস্থ্যপ্রকল্প সবেতেই আন্দোলনের পথ দেখিয়েছে শ্রীরামপুর। মানবাধিকার আন্দোলন থেকে কুসংস্কার বিরোধী গণবিজ্ঞান আন্দোলন,সাহিত্যসৃষ্টি থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সবক্ষেত্রেই ব্যাতিক্রমী হয়ে রয়েছে এই মফস্বল শহরের উদ্যোগ। এর আগেও বার বার ধর্মীয় আগ্রাসন, বাংলা ভাষা ও বাঙালির অবমাননা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শ্রীরামপুরের সচেতন নাগরিক সমাজ। প্রতিবার এই উদ্যোগে পা মেলান কবি থেকে গল্পকার,ডাক্তার থেকে ব্যাঙ্ককর্মী, শিক্ষক থেকে ছাত্র-ছাত্রী সকলেই। দেশজুড়ে আজ বড় বিপদ। ধর্মের ভিত্তিতে,হিন্দু-মুসলমানের ভিত্তিতে ফের আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে যেতে চলেছে গোটা দেশ - বরং বলা ভাল সেই পথেই চালানো হচ্ছে জনমতকে। নিয়ম-নীতি, আইন কানুন সব কিছু গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কালা আইন এনেও তাঁর স্বপক্ষে চলছে জোরদার প্রচার।
এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধেই এবার কোনও রাজনৈতিক দল নয়, পথে নামছে শ্রীরামপুরের নাগরিক সমাজ। আগামী ১৩ জানুয়ারি শ্রীরামপুর শহরে বিভিন্ন বাজারে প্রচারপত্র বিলি করা হবে। ২০ জানুয়ারি পথে নামবে সাধারণ মানুষ। ভাবছেন সুদূর দিল্লিতে চলা কৃষক আন্দোলনে ছোট্ট একটি শহরের কিছু মানুষের পথে নামা কর্মসূচির কী ই বা প্রভাব পড়বে ? বন্ধু কথা একটাই,এ বড় সুখের সময় নয়। অঙ্ক কষা পরে হবে,ছোট হোক বা বড় - এখনই দেশ জুড়ে শুরু হোক নাগরিক প্রতিবাদ,পথে নামুক আরও হাজারো শ্রীরামপুর।
শ্রীরামপুরের তো শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসও রয়েছে। এই সময় করোনা ভাইরাস জনিত অবস্থার সুযোগ সরকার তিনটি কৃষি আইনের সঙ্গে তড়িঘড়ি চারটে শ্রমিক বিরোধী শ্রম আইনও পাস করিয়েছে।
এখন সরকার কর্পোরেটের স্বার্থে একই সঙ্গে শ্রম ও কৃষি আইন পাস করিয়েছে । সচেতন মানুষদের দায়িত্ব নয়কি একই সঙ্গে শ্রমিক বিরোধী আইনগূলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা? নাকি সেগুলো আগে শ্রমিকরা পথে নামবে, অবস্থানে বসবে-- তবে নাগরিক?