নরেন মোদী তথা বিজেপির অ্যাজেন্ডাগুলি প্রথম থেকেই স্পেসিফিকালি মৌলবাদী এবং পুঁজিসহায়ক। এগুলি কোন গোপন অ্যাজেন্ডা নয়, বিজেপি দলের ইতিহাস বা ইস্তেহার এইসব অ্যাজেন্ডারই সমাহার এবং এসব জেনেই আমরা তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছি। ২০১৪য় হয়তো সবাই ততটা বুঝে আনেন নি, কিন্তু ২০১৯ এ সেকথা বলার কোন জায়গা ছিল না। এখন কথাটা হচ্ছে একের পর এক জনবিরোধী, মুষ্টিমেয় পুঁজিসহায়ক সিদ্ধান্ত নিয়েও এই সরকার দ্বিতীয় টার্ম পেল কিভাবে?
স্ট্র্যাটেজিটা কিন্তু খুব সিম্পল। এরা অর্থনৈতিকভাবে চূড়ান্ত জনবিরোধী একটা অপকম্ম করে, লোকে প্রথমে বিস্ময়ে বাকস্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর সেই ঘোর কাটিয়ে যখনই প্রতিবাদের স্বর উঠতে শুরু করে তখনই ধর্মীয় বা জাতপাতের রাজনীতির প্রবল নোংরা কিছু একটা করে বসেন। প্রতিবাদীরা তখন সেটার প্রতিবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবং এর মজা হচ্ছে, অর্থনৈতিক অপকম্মে যত মানুষ প্রতিবাদে সামিল হন, এই ধর্মীয় অপরাধ, জাতপাতভিত্তিক অপরাধ, লিঙ্গভিত্তিক অপরাধে তত মানুষ তো সামিল হনই না বরং তাদের একটা বড় অংশ প্রকাশ্যে বা পরোক্ষে এগুলি সমর্থন করতে শুরু করেন। ফলে অর্থনৈতিক অপকম্মটি পিছনের সারিতে চলে যায় এবং ধীরে ধীরে লোকের গা সওয়া হয়ে যায়। নোটবন্দীর পরেই রোহিত ভেমুলা, নাজীব আহমেদ, কানহাইয়া কুমার কাণ্ড, জিএসটির পরেই কাঠুয়া, উন্নাও, মাঝেমধ্যে ময়ুরের চোখের জল, বিদ্যাসাগরের সহজ পাঠ, এনারসি বিরোধী আন্দোলন যখন চরমে, তখনই দিল্লীর দাঙ্গা, জিডিপি "নেগেটিভ গ্রোথে" যাবার পরে উমর খালিদ এবং অন্যদের র্যান্ডম গ্রেপ্তারি, কৃষিবিল পিছনের দরজা দিয়ে পাশ করিয়েই হাথরাস - এভাবেই দ্বিতীয় টার্ম পার করে তৃতীয় টার্মের দিকে এগোতে চায় এই সরকার।
ছকটা সহজ, সেই কারণেই এই ছক ভাঙাটা খুব কঠিন। বিজেপি কোন গোপন তাস আর খেলছে না। তারা সরাসরি আমাদের ভিতরের লুকানো ফ্যাসিস্ট প্রবৃত্তিকে বাইরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। আমাদের ভিতরের শয়তানকে জল বাতাস দিয়ে জাগিয়ে তুলছে। শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারব আমরা? লড়াইটা কিন্তু আমাদের নিজেদের সঙ্গেই - সবার আগে। এই লড়াইটা জিতলে ফ্যাসিস্ট শক্তি হারবে। যতদিন এই লড়াইটা আমরা জিতব না, আরও অনেক দলিত, মুসলমান, গরীব চাষী, পরিযায়ী মজদুর জানমানের মূল্যে চোকাবে আমাদের পরাজয়ের দাম।
"তাসরাসরি আমাদের ভিতরের লুকানো ফ্যাসিস্ট প্রবৃত্তিকে বাইরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। আমাদের ভিতরের শয়তানকে জল বাতাস দিয়ে জাগিয়ে তুলছে। শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারব আমরা? লড়াইটা কিন্তু আমাদের নিজেদের সঙ্গেই - সবার আগে। এই লড়াইটা জিতলে ফ্যাসিস্ট শক্তি হারবে। যতদিন এই লড়াইটা আমরা জিতব না, আরও অনেক দলিত, মুসলমান, গরীব চাষী, পরিযায়ী মজদুর জানমানের মূল্যে চোকাবে আমাদের পরাজয়ের দাম"।
--এই প্যারাগ্রাফের জন্যে রোহিতকে হাজারটা বড় হাতের 'ক'।
বামদল এবং কংগ্রেস শুধু রাজনৈতিক শ্লোগান এবং রেটোরিকে আটকে রয়েছে।
দু'দিকেই আছে 'দীক্ষিত' ভক্ত। ওদের কথা ভুলে লক্ষ্য হবে মাঝের অবস্থানের লোকদের মনে প্রশ্ন তোলা। তার জন্যে তথ্য দিয়ে ওদের মিথ্যে ইতিহাসের বিকৃত প্রচারের মোকাবিলা করা দরকার। রেটোরিক বা ব্যঙ্গবিদ্রুপ তখন কাজ করে যখন আপনার গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মেম্বারদের ( গ্রুপ, পাড়া , আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব) মধ্যে এস্টাব্লিশড।
তার আগে ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়িয়ে সোজা ফ্যাক্ট এবং বিশ্ওয়াসযোগ্য তথ্য তুলে বারবার ওদের ইউটিউব বা হোয়াটস অ্যাপ হিস্টরির বিকৃতিকে তুলে ধরা। এবং রোহিনের কথা অনুযায়ী আচার আচরণে চিন্তায় বিতর্কে হারানো গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক ভ্যালুগুলোকে বারবার তুলে ধরা। কাজটা কঠিন এবং একদিনে সম্ভব না ।
ওরাও তো চার-চারটে দশক ধরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, সংস্কার ভারতী, বনবাসী পরিষদ ইত্যাদি গড়ে গ্রাসরুট লেভেলে নিরন্তর ক্লান্তিহীন প্রচার চালিয়ে গেছে। তার ফসল আজকে কাটছে।ওদের থেকেও শেখার আছে।
লড়াইয়ে
যথাযথ বলেছেন রৌহিনদা
'আমাদের ভিতরের শয়তানকে জল বাতাস দিয়ে জাগিয়ে তুলছে। শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারব আমরা? লড়াইটা কিন্তু আমাদের নিজেদের সঙ্গেই - সবার আগে'
- এ লড়াইয়ে আমি জিতব, রৌহিন জিতবে, এই সাইটে যারা নিয়মিত লেখেন, তাদের প্রায় সকলেই হয়ত জিতবেন, বিজেপি-র প্রচারে আমরা পাল্টাব না।
সমস্যাটা হল - এই সাইট এক বাবল, এর বাইরে বিশাল ভারতবর্ষ পড়ে আছে, সেখানে মানুষ বদলাচ্ছে, তার ভিতরের শয়তান জাগছে।
গুরু প্রকাশিত বই পত্তর যদি রঞ্জন-্দা কথিত 'যে জন আছে মাঝখানে' , তার কাছে পৌঁছয় - সেটা কিছুটা সাহায্য করবে।
এরকম একটা সাইটে নতুন লেখক / পাঠক যারা আসছেন, আমার ধারণা তাদের প্রায় সবাই সো কলড 'লিবারাল' , মাঝখানের লোক নন। তাও যদি মধ্যবর্তী , দোদুল্যমান অবস্থানের কিছু মানুষ থাকেন, তাদের হয়ত একটু ভাবান যাবে।
দিনের শেষে এইটুকুই
@Aranya সমস্যাটা হল এখানে আপনার, আমার ব্যক্তিগত জয় একেবারেই মূল্যহীন। সবাই মিলে জিততে হবে। এবং হ্যাঁ "সবাই" বলতে এই গুরুর স্পেক্ট্রামের বা "লিবেরাল" স্পেক্ট্রামের বা "বামপন্থী" স্পেক্ট্রামেরও বাইরে, সবাই মানে সবাই - ভারতের জনসংখ্যার অন্তত ৫০-৫৫%। তা না হলে আমরা সবাই হারছি। এখন এই ইনক্লুশনটা আমরা কে কিভাবে করব, সেটা ভাবাই কাজ কারণ সেটাই আসল যুদ্ধ
সত্যি লড়াই ছাড়া আর কোন উপায় নেই। লেখককে ধন্যবাদ।