৯-ই অক্টোবর ২০১৯ প্রথম কিস্তি
≠======================
দু’চারমাস বাদে বাদে একবারটি এদিক সেদিক ঘুরে না এলে তো বদ্দিবুড়ির হাড় মুড়মুড়ি, কান কটকট শুরু হয়ে যায়। জীবন এদিকে তার কালো সাদা ধুসর মাটিপাথর রক্তপুঁজ ফুলফুলুরি উপুড় করে দিয়েই যায় --- বদ্দিবুড়ি একবার ভাবে জীবন বড় রঙীন আরেকবার ভাবে জীবন কেমন পাঁশুটে কুচ্ছিত। হাত পা ছটফটায় পালাতে চায় তো বদ্দিবুড়ি না বেরিয়ে করেটা কি?
এদিকে পুজো এবারে বড্ড আগে। তা অগাস্টেই ঠিক করে ফেলা দশেরার সপ্তাহে দুধসাগর প্রপাতে যেতে হবে, তারকরলি সৈকতে থাকতে হবে কোজাগরির সময়। খুঁজে পেতে কোলেম ন্যাশনাল পার্কের কাছে একটা হোটেল পাওয়া গেল যাদের এলাকার মধ্যেই নাকি ১৫-১৬ রকমের পাখী আসে, খায়দায়, থাকে গরমের আগে পর্যন্ত। বার্ডিং, দুধসাগর ট্রেকিং আর প্রায় স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা ঝোপজঙ্গল গাছপালার মধ্যে খড়ের ছাউনির কুটিরে বাস – এই হল তাদের বৈশিষ্ট্য। তারকরলিতে এমটিডিসির রেজোর্টে একটি ঘরও খালি নেই, অগত্যা এক হোমস্টে, বর্ননায় লেখা ‘রাইট অন দ্য বিচ’।
৮ই অক্টোবর ছিল দশেরা, অফিস ছুটি। ৯ তারিখ সক্কাল সক্কাল বেরোতে অসুবিধে কিছু নেই, তবে এবারে ঘরে অতিথি আছেন, তিনিও এ যাত্রায় সঙ্গিনী হবেন। গাড়ির জন্য সারথী ৮ তারিখ সকালেই ঠিক করা হয়ে গেছে। একটু বয়স্ক মানুষ, ফলত যে কোন অনুরোধ কিম্বা নির্দেশই বেশ বার দুই তিন না বললে তিনি শুনতে চান না। সাড়ে আটটায় বেরিয়ে সোয়া দশটা নাগাদ সাতারা, মন্দ নয়। গুগল ম্যাপ দেখিয়েছিল ৮ ঘন্টা ১৪ মিনিটের রাস্তা, ব্রেক টেক নিয়ে সাড়ে ন’ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবো বলে আশা। এদিকে সঙ্গিনীর দাবী ছিল ট্রেনে যাওয়া --- আট ঘন্টা গাড়িতে বসে থাকার কথা শুনেই নাকি তাঁর মাথা ঘোরে। সাতারার কাহাকাছি একটা বড়সড় ঝকঝকে ধাবায় দাঁড়িয়ে দোসা খাওয়া গেল, সারথী অবশ্য আমাদের বড়াপাও নামক বস্তুটি খাবার জন্য পীড়াপিড়ি করছিলেন। ও বস্তু আমি জীবনে একবারই খেয়েছিলাম, ২০০৭ এ পুণে আসার পরের দিন। বাকী জীবনটুকুতে আর না খেলেও চলবে। কোলাপুর হাইওয়ের ধারে খেতগুলোতে দেখলাম ভুট্টা আর আখ নতুন করে লাগিয়েছে। আগস্টের বিধ্বংসী বন্যার পর পরই এই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দেখেছিলাম খেত কে খেত জমাজলে পচে বাদামী হয়েছিল – কাচবন্ধ গাড়িতেও তার বিকট পচাগন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। সেই সময়ের সারথী অপেক্ষাকৃত কমবয়সী, গোপ্পে ধরণের মানুষ ছিল, আখচাষ ও কিসান আত্মহত্যা নিয়ে বিস্তারে আলোচনা হয়েছিল মনে পড়ল। কালচে সবুজ ডাঁটো গাছগুলি বেঁচেবর্তে থাকুক আহা --- কিসানেরা বাঁচবে তাতে।
এনএইচ_৪৮ ধরে যেতে যেতে ‘নিপানি’র কাছে এসেই গন্ডগোলটা হল। ম্যাপ দেখাচ্ছে সোজা যেতে আর সারথী চান ডানদিকে ঘুরে নিপানি –আম্বোলিঘাট – সাওন্তওয়াড়ি হয়ে যেতে, কারণ ওটাই গোয়ার রাস্তা। আমিও আগস্টে সেপথ দিয়েই গেছি কাজেই খুব একটা জোর দিয়ে বারণ করতেও পারলাম না। নিপানি থেকেই কর্ণাটক শুরু হয়ে যায়, মোড়ের মাথায় দুটো মস্ত মস্ত খাবার জায়গা আছে। একটা কর্ণাটক সরকারের কাবেরি ভবন আর একটা ধাবা, নাম Goa Ves. সারথীমশাই সোজা কাবেরি ভবনের পার্কিঙে ঢোকালেন, অগত্যা সেখানেই মধ্যাহ্ন ভোজন। খাবারের স্বাদ ভালই, তবে পাশেরটিতে আগস্টে যা খেয়েছিলাম তার তুলনায় এদের পদবৈচিত্র্য বা স্বাদ সাদামাটা। খেয়েদেয়ে গুগলম্যাপের চেঁচামেচি উপেক্ষা করে ডানদিকের রাস্তাটিই নেওয়া হল। এতক্ষণ পর্যন্ত রাস্তা ছিল চমৎকার মাখন মসৃণ, শুরু হল ভাঙাচোরা গর্তেভরা রাস্তা। এরকমই চলবে আম্বোলিঘাট হয়ে রেড়ি-বেলগাঁও রোড পেরোন পর্যন্ত।
আগস্টে আম্বোলিঘাটের রাস্তা ছিল ভয়ংকর। আম্বোলি জলপ্রপাতের কাছে ধ্বস নেমে রাস্তাশুদ্ধু ধ্বসিয়ে নিয়ে গেছে --- লালমাটিভরা পিছল ভাঙা পথে অল্প অল্প করে ঘাট ওঠা --- ধারে ধারে ভেঙেপড়া বড়সড় পাথর লোহার সরু তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধা যাতে গড়িয়ে রাস্তায় না আসে --- তুমুল বৃষ্টিতে গোটা পাহাড়ই ঝর্ণা --- শতধারায় জল নেমে আসছে পাহাড়ের উপর থেকে ---অঝোরবৃষ্টি, নেমে আসা মেঘ আর কুয়াশায় চারিদিক সাদা --- গাড়ির চাকা পিছলোচ্ছে অল্প অল্প --- ফগ লাইট জ্বেলে পা টিপে টিপে এগোন। দেখা যাক এবারে কেমন অবস্থা রাস্তার।
সাথে আছি :)