। স্রোংচান গামপো - ২ ।
“তারপর? চিনের দরজায় রাজা স্রোংচান গামপো কড়া তো নাড়লেন। ওরা খুলল কি?” আমি জয়দাকে আবার গল্পের ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার জন্য বললাম।
“সে দরজা খোলা কি অত সহজ রে! তবে তার আগে রাজার বিয়ে খেয়ে যা।”
“বিয়ে এখুনি হবে কী করে? চিনের রাজা মেয়ে দেবেন - তবে তো!”
“রাজাদের কি আর একটা বিয়েতে মন ভরে রে! স্রোংচান গামপোর ছয় রাণীর কথা শোনা যায়। চারজন অবিশ্যি লোকাল। অন্য গোষ্ঠীর দলপতিদের কন্যা। তখনকার দিনের রাজা-রাজড়ারা রাজনৈতিক মৈত্রীর জন্যই বোধহয় বিয়ে করতেন। রাজা-রাণীর প্রেমের গল্প বোধহয় রূপকথার বাইরে সেরকম এক্সিস্ট করেনা। ব্যতিক্রম নেই বলছিনা। তবে সম্রাট গামপো অন্তত ব্যতিক্রম ছিলেন না। সবচেয়ে বড় রাণীর নাম ছিল মোংজা ত্রিচাম। এই মোংজা ত্রিচামের ছেলেই ছিল গুংসং গুংচান। ছেলের বয়স তেরো বছর হলে সম্রাট গামপো তাকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করেন। কিন্তু কপাল খারাপ। মাত্র বছর পাঁচেকের মধ্যে গুংসং গুংচানের মৃত্যু হয়। পিতামহ নাম্রি স্রোংচানের পাশেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তবে মৃত্যুর আগে একটা কাজের কাজ করে গেছিল। একটি বিয়ে। এবং এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে গেছিল।”
“মাত্র আঠারো বছর বয়সে? করিৎকর্মা ছেলে তো!” শুভ বলে উঠল।
“দেখ তাহলে। আর তুই! এই পঁচিশ বছর বয়সেও প্রেমে পড়েছিস স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছিস!” জয়দার কথা শুনে শুভ আবার একটু লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে নিলো। জয়দা আবার বলতে লাগল, “স্রোংচান গামপোর এই নাতির নাম ত্রিমাং লেনচান। গামপোর পরে তিনিই হন তিব্বতের সম্রাট। তিনি অনেকদিন রাজত্ব করেন। যদিও প্রায় গোটা রাজত্বকাল জুড়েই লড়ে যান চীনের সাথে। এমনকি তুর্কীদের সাথে মিত্রতা করে তাদের সাহায্যে কাশগড়, খোটান জয় করেন। সে যাই হোক। আমরা ফিরে আসি রাজা স্রোংচান গামপোর কথায়। যখন আশেপাশের ছোট খাট কম শক্তিশালী উপজাতিরা এসে ঠঙাস করে তাদের তরোয়াল গামপোর পায়ের কাছে ফেলে সম্রাটের আধিপত্য স্বীকার করে নিলেন, তখন গামপো ভাবলেন এবার অন্য দেশের দিকে তাকানো যাক। অন্য দেশ বলতে তিব্বতের পায়ের কাছে হিমালয়ের কোলে আছে ‘নেপাল’। আর উপরে ‘চীন'। চীনে তখন সুই রাজাদের গদিচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেছে ট্যাং রাজবংশর প্রথম রাজা তাই সুং। শক্তিশালী চীনের সাথে টক্কর নেওয়ার আগে নিজের জমি শক্ত করার জন্য দরকার রাজনৈতিক বন্ধুত্বের। গামপো তার দীর্ঘদিনের বন্ধু, মন্ত্রী তোনমি সম্ভোতকে পাঠালেন নেপালের রাজা অংশুবর্মনের দরবারে। সাথে এক চিঠি। নেপাল-রাজকন্যা ভৃকুটি দেবীর পাণি প্রার্থনা করে রাজা লিখেছেন - 'যদিও আমি তিব্বতের একচ্ছত্র সম্রাট, আমার নামে ইয়াক আর স্নো-লেপার্ড এক ঘাটে জল খায়, কিন্তু আমি একান্তই অশিক্ষিত। প্রজারা সব বর্বর। যদি আপনি আপনার কন্যার বিবাহ অনুগ্রহ করে আমার সাথে দেন, তবে আপনার পরম বৌদ্ধ কন্যার দৌলতে আমারও একটু ধর্ম চর্চা হবে। আমি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করে দেব তার জন্য।’ সাথে যে কথাটি উহ্য ছিল তা হল, 'অভয় দিচ্ছি শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা? বসলে তোমার মুণ্ডু চেপে বুঝবে তখন কাণ্ডটা!’ অংশুবর্মন অভিজ্ঞ রাজা। তিব্বতের সম্পর্কে জানেন। সুতরাং উহ্য কথাটি বুঝতে সময় লাগল না। তিনি ভেবে দেখলেন এ বিয়েতে সম্মতি দিলে তার দুদিকেই লাভ। এক, ওই ‘ডোথ্রাকি’মার্কা লোকগুলোর সাথে খামোখা রক্তক্ষয় করতে হবে না। দুই, একজন শক্তিশালী রাজার মিত্রতা পাওয়া যাবে। নীচে ভারতবর্ষে হর্ষবর্ধন গোবর্ধন সবাই একেবারে হা-রেরে-রেরে-রেরে করে তরোয়াল বাগিয়েই আছে। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করে বসবে। সেক্ষেত্রে তিব্বত রাজের সাহায্য পেলে পিতৃদত্ত প্রাণটা এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও যেতে পারে। সুতরাং তোনমি সম্ভোতকে আদর আপ্যায়ন করে জানিয়ে দিলেন যে তিনি এ বিয়েতে রাজি!”
“কী আশ্চর্য! মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল না একবার?” শুভ হাঁহাঁ করে উঠল।
“নাহ। মেয়ের মন বোঝা এরকম কুচক্রী রাজনীতিকদের কাজ নয়। তারা শুধু নিজের রাজ্যের সীমানা বাড়াতে জানে। কার সাথে মিত্রতা করলে নিজের ইয়ে বাঁচানো যাবে সেই চিন্তাতেই বিভোর থাকতে পারে। নারী হৃদয়কে বোঝার জন্য কোয়ালিফায়েডই নয়! সুতরাং সে দুঃখের কথা ভেবে লাভ নেই। পরম কারুণিক তথাগতর মূর্তির পায়ে মাথা ঠেকিয়ে অনাগত মৈত্রেয়কে বুকে চেপে রাজকন্যা ভৃকুটি বাপের বাড়ি ছেড়ে চললেন অজানা অচেনা ‘বর্বর' তিব্বতিদের দেশে।”
“এ তো একেবারে ডেনেরিস টারঘারিয়ান! ড্রাগন-ট্রাগন কিছু ছিল?” গেম-অফ-থ্রোনসের ফ্যান শুভ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।
“নাহ। অমন যুদ্ধবাজ মহিলা ছিলেন না উনি। বরং সাথে মৈত্রেয়র মূর্তি ছাড়াও আরও বৌদ্ধদেব-দেবীর মূর্তি নিয়ে যান বলেই জানা যায়। তবে সম্রাট গামপো তার নববধূর জন্য মন্দির নির্মাণ করে দেন। রামোছে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা পায় মহিষী ভৃকুটির সাথে নিয়ে আসা দেবমূর্তিরা।”
“এটা কবেকার ঘটনা?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। এত ঘটনা পরম্পরায় সালতারিখ গুলিয়ে যাচ্ছে।
“সঠিক জানা যায় না। এমনকি আদৌ এ বিয়ে হয়েছিল কি না সে নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ। যদিও স্রোংচান গামপোর পাশে ভৃকুটির ছবি পাওয়া যায় - প্রাচীন তিব্বতি চিত্রকলায়। কিন্তু সে ছবির ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। চীনের ডুন-হুয়াং গুহা থেকে স্যার অরেল স্টেইনের উদ্ধার করা 'বা-এর প্রশস্তি’তে নেপালরাজের কন্যার সাথে বিবাহের কথা লেখা রয়েছে। আবার অনেকে বলেন যে বিয়ে একখানা হয়েছিল হয়ত - কিন্তু ভৃকুটি রাজা অংশুবর্মনের কন্যা নন। আদতে তিনি রাজা উদয়দেবের সন্তান। সে যাই হোক, মনে করা হয় যে যদি এ বিয়ে হয়ে থাকে তবে তা হয়েছিল ছশোবাইশ সালের আশেপাশে কখনো।”
“অংশুবর্মন কে? নাম শুনিনি তো কখনো।”
“নেপালের লিচ্ছবিদের রাজা। প্রথমে রাজা শিবদেবের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরে ক্ষমতা দখল করে নিজে রাজা হন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজা ছিলেন বলে জানা যায়। অবিশ্যি নিজের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ঘটনা থেকেই সেটা স্পষ্ট। তবে রাজনীতিক হিসাবে সমস্ত পারদর্শীতার পাশাপাশি শিল্পসাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন। নিজে সংস্কৃত ব্যাকরণের বইও লেখেন একটা। এর বেশী আমি কিছু সেরকম জানিনা - বইপত্র ঘেঁটে দেখতে পারিস।”
“আচ্ছা, অংশুবর্মণের কথা ছাড়। তিব্বতে ফেরত যাও। বিয়ের পর স্রোংচান গামপো কি সংসারী হলেন?”
“সে কি আর রাজাদের হওয়া মানায়? বিয়ের পর রাণীর জন্য মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দিলেন। বললেন, তুমি ধর্ম কর্ম কর - আমি দেখি রাজ্য কদ্দূর বাড়ানো যায়। ও হ্যাঁ, আসল কথাই তো বলতে ভুলে গেছি। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই রাজার মনে হল এই জীবন আর পোষাচ্ছে না। মনে হল বিদেশী রাজকণ্যেকে বিয়ে করে এনে কি আর ওই বর্বর অশিক্ষিতদের মাঝে রাখা যায়! সুতরাং নতুন একটা ফ্ল্যাট চাই। উঁচুতে। চারদিক খোলামেলা হতে হবে। আমি তুই হলে নাহয় ব্যাঙ্ক লোন দেবে কি না এসব ভাবতাম। কিন্তু তিনি তো সম্রাট। খুঁজে পেতে পছন্দ হল একটা ছোট্ট পাহাড়। চারপাশে সুন্দর উপত্যকা। ওখানেই নতুন রাজপ্রাসাদ তৈরী করার হুকুম হল। তিব্বতের প্রথম পাকা বাড়িটির জন্ম হল। রাজা তো রাণীদের নিয়ে নতুন বাড়িতে চললেন। সাথে সাতশো দাস-দাসী। মন্ত্রী - সান্ত্রী, পাইক - লস্কর। এককথায় গোটা রাজধানীটাই সরিয়ে নিয়ে চললেন ইয়ারলুং থেকে। নতুন জায়গার নাম দেওয়া হল - রাসা। উপত্যকা জুড়ে বসল নগর। মধ্যিখানে মারপোরি পাহাড়ের উপর রাজার লাল প্রাসাদ। রাজা স্রোংচান গামপো এই নতুন নগরে এসে ইয়ার্লুং জাতির নাম পাল্টে এই নতুন রাজবংশের নাম দিলেন ‘টুপো’। রানীর জন্য এই নতুন নগরেই তৈরী হল বৌদ্ধ মন্দির রামোছে। এখনো সেই মন্দির দেখতে পাওয়া যায়।”
“এখনও আছে? কোথায়?” আমি অবাক।
“ইয়েস! ওই যে বললাম ‘রাসা' নগরে!” জয়দা রহস্যময়ভাবে হাসে।
“রাসা আবার কোথায়? নাম শুনিনি তো!” আমি ভেবে পেলাম না এরকম কোনও শহরের নাম।
“শুনেছিস। শুনেছিস। তিব্বতের রাজধানী কী?”
“এখন?”
“হ্যাঁ।”
“লাসা।” বলেই হঠাৎ মাথার মধ্যে খেলে গেল, “তাহলে রাসাই কি আজকের লাসা?”
“ডি লা গ্র্যান্ডি! বুদ্ধি তো খুলে গেছে! দেড়হাজার বছর আগের সেই ‘রাসা'ই আজকের ‘লাসা’।"
“এতদিন ধরে রাজধানী পাল্টায়নি কখনো?”
“পাল্টেছে। কিন্তু আবার ফিরে এসেছে। সে গল্প পরে বলছি। স্রোংচান গামপোর গল্প শেষ হয়নি এখনো।”
“বেশ। বেশ। ওয়ান স্টেপ অ্যাট এ টাইম!”
“একদম। রাজা নতুন প্রাসাদে গুছিয়ে নিয়ে বসে ভাবলেন অনেকদিন যুদ্ধ করা হচ্ছে না! নীচে নেপাল রাজের সাথে ব্যাপারটা গুছিয়ে ফেলেছি। এবার একটু উপর দিকে তাকানো যাক!”
“মানে, চীন?”
“হ্যাঁ। যেই ভাবা সেই কাজ। দূত গেল। চীনের রাজা তাই সুং-এর দরবারে। একই দাবী। বিয়ে করব। কন্যা দাও। কিন্তু পরাক্রমশালী তাই সুং সদ্য সুই রাজবংশকে নিকেশ করে সিংহাসনে বসেছেন। তার কনফিডেন্স লেভেলই আলাদা। তার ওপর শিক্ষা শিল্প সংস্কৃতিতে চীন সাম্রাজ্য পৃথিবীর মানচিত্রে একেবারে জ্বাজ্যল্যমান। সেখানে উপজাতি প্রধান, অশিক্ষিত, প্রায় বর্বর তিব্বতিরা। তাদের কোথাকার কে রাজা, সে এসে বলল আর অমনি রাজকন্যা দিতে হবে? ‘আমি কি ডরাই সখী, ভিখারি রাঘবে?’ - বলে ভাগিয়ে দিলেন দূতকে। দূত ফিরে এসে সম্রাটকে সংবাদ দেওয়া মাত্র স্রোংচান গামপো নাকি এক লক্ষ সেনার এক বিশাল বাহিনী পাঠালেন চীন অভিমুখে। কিন্তু প্রথমেই চীন আক্রমণ করলেন না। বরং চীনের আধিপত্য স্বীকার করে যে সমস্ত ছোট ছোট রাজ্য বা উপজাতিগুলো নিশ্চিন্তে ছিল, তাদের ধরে ধরে কচুকাটা করতে লাগলেন। তারপর জয় করে নিলেন একেবারে চীনের শহর ঝোংঝৌ অবধি। চীনা সেনার সাথে চলল লড়াই। বেশ কয়েকবছর নাকি সে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলেছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন। চীনা বাহিনী কিছুতেই সুবিধা করে উঠতে পারল না তিব্বতিদের সাথে। তারা যতই সুশিক্ষিত সেনা হোক না কেন, মুখে লাল রং মেখে কোনও যুদ্ধবিদ্যার নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়া পাহাড়ি উপজাতির মানুষদের সাথে পারবে কেন? পিছু হটতে থাকল চীনারা। স্রোংচান গামপো তখন আবার দ্যূত পাঠালেন তাই সুং-এর কাছে। দ্যূতের হাতে পাঠালেন স্বর্ণখচিত এক বর্ম আর বিয়ের ব্যাপারটা ভেবে দেখার অনুরোধ। অর্থাৎ হয় বিয়ে দাও নয় যুদ্ধ চালু থাক! তাই সুং তিব্বতিদের এমন নাছোড় মনোভাব দেখে চিন্তায় পড়লেন। মন্ত্রীরা পরামর্শ দিল যে বিয়েতে সম্মতি দিলেই যদি এই যুদ্ধ বন্ধ হয়, তবে এত ভাবনা কীসের? রাজা বললেন, বেশ। আর উপায় দেখিনা। মেয়েটাকেই পাঠাই। স্রোংচান গামপোর ষষ্ঠ বিবাহ হল। ছশো চল্লিশ সালে চৈনিক রাজকুমারী ওয়েনচেঙের সাথে। পিতৃরাজ্য থেকে তুষার মরুর দেশে পাড়ি জমালেন রাজকুমারী। এর সাথেও চলল তরুণ রাজকুমার শাক্যমুনি বুদ্ধের ধাতব মূর্তি। অজানার পথে বরাভয়।”
(চিত্রঃ রাজা স্রোংচান গামপোর সাথে দুই রাণী)
“এর জন্যও মন্দির হল?”
“হল। লাসায় গেলেই মানুষ এখনো সেই মন্দির দেখতে যায়। নাম ‘জোখাঙ’। তখন অবিশ্যি জোখাঙের নাম ছিল ‘ট্রিলনাং’। সেই ট্রিলনাং মন্দিরে স্থাপিত হল বুদ্ধের সেই মূর্তি। এই দুই রাণীর হাত ধরেই তিব্বতে প্রবেশ ঘটল বৌদ্ধ ধর্মের। আর রাণীদের অনুরোধে বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই রাজা স্রোংচান গামপো গ্রহণ করলেন বৌদ্ধ ধর্ম।”
“সবই তো হল। কিন্তু ওই অশিক্ষিত বর্বরদের মধ্যে নিজের মানিয়ে নিলো কী করে ওয়েনচেঙ বা ভৃকুটি? আমি হলে তো ওই মারপোরি থেকেই লাফ মারিতাম!”
“ওই জন্যই তো তোর নাম ইতিহাসে লেখা থাকবেনা। এরা, বিশেষ করে, রাণী ওয়েনচেঙ এসে তিব্বতিদের সভ্য করে তোলেন। অন্ততঃ ট্যাংদের লেখা ইতিহাস তাই বলে। রাজার পোশাক ছিল চামড়ার। স্বভাবতই সেটা খুব একটা সুখপ্রদ ছিল না রাণীর কাছে। রাণী বললেন দেখ বাপু, তুমি যদি ওই গন্ধওলা চামড়ার জামা না ত্যাগ করেছ, তবে আমি বাপের বাড়ি চলে যাব বলে দিলুম। রাজা স্রোংচান গামপো অগত্যা কী করেন? যতই মহাবলশালী সসাগরা ধরণীর অধিপতি হোন না কেন স্ত্রীয়ের কথা অমান্য করে কেউ কোনদিন টিকতে পারেন নি। স্রোংচান গামপো সারেন্ডার করলেন। তাই সুং হয়ত এ খবর পেয়ে মুচকি হেসেছিলেন - সে কথা ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেনি। রাজা চামড়ার পোশাক ত্যাগ করে ব্রোচ আঁটা হাল্কা নরম চীনা রেশমের কাপড় গায়ে তুললেন। প্রথম প্রথম নিশ্চয়ই মনে হত যেন কিছুই পরেন নি - এই বুঝি নাতি এসে শুধল, রাজা তোর কাপড় কোথা! যাই হোক, এসব ভয়কে জয় করে গোটা দেশ জুড়ে চালু হয়ে গেল রেশমের কাপড় পরা। তিব্বতিদের আর একটা অভ্যাসও ছিল। মুখে লাল রঙ করা। বোধহয় একটা ভয়ঙ্কর পৈশাচিক ভাবমূর্তি খাড়া করে বিপক্ষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার জন্যই। জানিনা আমি। রাণী ওয়েনচেঙ বললেন এসব চলবে না। রাজা ব্যস্ত হয়ে বললেন, কেন রাণী? কী অপূর্ব দেখতে লাগে দেখ! রাণী মুখ বেঁকিয়ে বললেন, সে অ্যাস্থেটিক সেন্স কি আর আছে তোমাদের! শোন, মুখের এইসব রঙচঙ মাখা চলবেনা - বলে দিলাম। আমার বাপের বাড়ির লোকেরা হাসবে। রাজা ভাবলেন, ঠিকই তো! অমন বড় বংশের মেয়ে - বলছে যখন… ব্যাস! রাজ্যে নিষিদ্ধ হল মুখে লাল রঙ করা।”
“হাহাহাহা। তাই সুং তো মেয়ের কাণ্ড দেখে নিশ্চয়ই হেসে গড়িয়েছেন!”
“সে আর বলতে! শুধু তাই নয়, চৈনিক সভ্যতার আলো ধীরে ধীরে সর্ব ক্ষেত্রে এসে পড়ল। তিব্বতের অজ্ঞানতার আঁধারে থাকা মানুষরা ধীরে ধীরে জ্ঞানের আলোর স্পর্শ পেতে শুরু করল। তিব্বতি ঐতিহাসিকরা অবিশ্যি এসব জ্ঞানলাভের কথা অত কিছু লিখে যান নি। তারা ধর্ম-কর্ম নিয়েই ব্যস্ত। খালি কে কার অবতার তাই লিখে গেছেন।”
“ওয়েনচেঙকেও কারোর অবতার বানিয়েছে নাকি?”
“তা নয় তো কী! সম্রাট স্রোংচান গামপোকে তো অবলোকিতেশ্বরের অবতার হিসাবে মনে করাই হত। এই দুই বিদেশী রাণী হলেন বৌদ্ধ দেবী শ্বেততারা এবং হরিৎ ভৃকুটিতারার অবতার। এমনকি চৈনিক রাজা তাই সুং কেও ছাড়েনি।”
“ওরে বাবা! তিনি কার অবতার?” আমি প্রশ্ন করি।
জয়দা শুভর দিকে একবার আড়চোখে দেখে নিয়ে গম্ভীর মুখে বলল, “মঞ্জুশ্রী!”
(ক্রমশঃ)
এক্কেরে ডি লা গ্র্যান্ডি! তাপ্পর?
হ্যাঁ। 'দূত' বানাটা আমি এখানে পোস্ট করার পরে দেখেছি। আমার এডিটরের সমস্যা। অভ্রর সাথে ম্যাকের কিছু একটা সংঘাত আছে। কিছুতেই সঠিক বানান নিতে চায় না। :(