। বোদরাজ্যের রাজা ।
"আহ! বড় বাজে বকিস তোরা!" জয়দা গম্ভীর গলায় একটা মিনি হুঙ্কার ছেড়ে বালিশের তলা থেকে একটা আধখাওয়া সিগারেট বের করে সেটা খুব কায়দার সাথে নাকের তলায় ঘষতে লাগল।
আমি বললাম,"সিগারেটেও র্যাশন করছ?"
"হুঁ" লাইটার দিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে একটা লম্বা টান দিয়ে ঘরটাকে ধোঁয়াময় করে আমাদের কাশিয়ে টাশিয়ে একসার বলল,"র্যাশন না করলে আমার সিগারেটর সাপ্লাই কোথা থেকে আসবে শুনি? আন্না তো দোকানের ঝাঁপ ফেলে তিরুনালভেলি চলে গেছে।"
বুঝলাম সমস্যা গভীর! কথা না বাড়িয়ে বলি,"তারপর? ঞাট্রি কানকো কোথায় একটা পৌঁছল..."
"কানকো! তোর কানকো কেটে নেব! চানপো। ইংরিজিতে লিখলে হয় টি এস এ এন পি ও।" জয়দা রেগেমেগে বলে উঠল।
"একি! সেটার উচ্চারণ তো… উচ্চারণ তো..." বলে শুভ জিভ দিয়ে টাকরায় কেমন একটা অদ্ভুত শব্দ বের করতে লাগল।
জয়দা সেটা দেখে হেসে বলল,"হচ্ছে না তো? হবে না... ওটার উচ্চারণ চানপোই হয়। যেমন সিকিমে ছাঙ্গু লেকে গেছিস তো, অথবা পেমিয়াংচি গুম্ফা? বানানগুলো দেখেছিস? Tsa দিয়েই লেখা হয়। আসলে এটা একটা তিব্বতি বর্ণ - যেটার উচ্চারণ আমাদের বাংলা 'চা' বা 'ছা' এর কাছাকাছি। টেরি ওয়াইলি নামে এক মার্কিন টিবেটোলজিস্ট বা তিব্বত-বিশেষজ্ঞ তিব্বতি হরফগুলিকে ইংরিজিতে ট্রান্সলিটেরেট করেন। সম্ভবতঃ ১৯৫৯ সাল নাগাদ। এটাকে ওয়াইলি (Wylie) ট্রান্সলিটেরেশন বলা হয়। বুঝলি?"
শুভ সব বুঝে ঢক করে মাথা নেড়ে দিল। জয়দার সিগেরেটটা এত কথার ফাঁকে অর্ধেক থেকে এক চতুর্থাংশ হয়ে গেছে। আগুনটা ফিল্টারে ঢুকবো ঢুকবো করছে প্রায়। জয়দা একটা যাকে বলে বুক ভরা টান দিয়ে ক্যারমের স্ট্রাইকারের মত জানলা দিয়ে ফেলে দিল। আমি হাঁ হাঁ করে উঠে বললাম,"ও কি! কার মাথায় পড়বে ঠিক আছে? অমন করে ফেলতে বারণ করেছি না!"
"পড়বে না!" চোখ বন্ধ করে একগাল হেসে বলল, "ম্যাক্সিমাম আমাদের কার্নিশেই পড়ে আছে। দেখ। ইনিশিয়াল ভেলসিটি, এঙ্গেল সব মেপে প্রোজেক্টেইলের অঙ্ক কষেই তো ছুঁড়ি - যাতে ঠিক কার্নিশে ল্যান্ড করে! যাক গে... যেটা বলছিলাম... " বলে আমার কথাটাকে বাঁহাত নেড়ে যেন জাস্ট কার্নিশে ল্যান্ড করিয়ে দিল।
"বোদ - তিব্বতের প্রাচীন নাম। অনেকে 'বোদ' না বলে… যাক গে, সেটা আবার বাংলায় শুনলে নামের চেয়ে বেশী বদনাম মনে হবে। বাদ দে। বোদ কথার অর্থ সম্ভবতঃ 'প্রাচীন ভূমি' বা 'আদিবাসস্থান' জাতীয় কিছু। সেটা নিয়ে বিস্তারে পরে বলছি। এখন আমাদের রাজামশাই হিমালয় টপকে চলেছেন 'বোদরাজ্যে'। সেখানে ফিরে আসি। যদিও এসবই গল্প কথা। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। প্রায় সাত-আটশ বছর পরে লিখিত ইতিহাস নির্ভর করে এসব ধারণা পাওয়া গেছে। সে ইতিহাসও কতটা ভরসা করা যায় - বলা মুশকিল।"
"কেন?" জিজ্ঞেস করি আমি।
"কারণ - ধর্ম। পৃথিবীতে ইতিহাস যা লেখা হয়েছে তার অধিকাংশই রাজার অ্যাপয়েন্ট করা ঐতিহাসিকের লেখা। ফলে রাজনৈতিক কথা বেশী পাওয়া যায়। আর কিছু ইতিহাস লেখা হয় ধর্মের প্রভাবে। যেমন তিব্বতে লেখা হয়েছিল। বৌদ্ধধর্ম সেখানে প্রসারিত হওয়ার পর ইতিহাস লেখা শুরু হয় - আর লেখা হয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের দ্বারাই। উভয়ক্ষেত্রেই বায়াসনেস থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবে হয়ত রাজার নামে ভাল কথা প্রচুর থাকতে পারে - কিন্তু উদ্ভট অতিমানবিক গল্পকথা কম থাকে। যেটা বেশীমাত্রায় আছে তিব্বতের ইতিহাসে। ফলে গল্প সরিয়ে সত্যি ঘটনাকে বুঝতে পারা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। বুঝলি?"
"বুঝলাম। তাহলে ঞাট্রি চানপোর সময়কাল বা এই ভারত থেকে আসার ঘটনা সত্যি নাও হতে পারে?" আমি জিজ্ঞেস করি আবার।
"এমনকি ওইরকম কোন লোকের অস্তিত্বই হয়ত ছিল না। তাও হতে পারে! ইনফ্যাক্ট বর্তমান পণ্ডিতদের মতে তিব্বতের প্রথম রাজা স্রোংচেন গামপো - সপ্তম শতাব্দীতে। ঞাট্রি চানপোর গল্প বানিয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা। আর দুজনের মধ্যেকার লম্বা সময়টাকে মেক আপ দিতে আরও যে বিশ পঁচিশ রাজার নাম স্থানীয় প্রাচীন বিভিন্ন লোককথা থেকে তুলে স্রেফ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে - কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি ছাড়াই।"
"এ বাবা! এ তো ব্যাক ক্যালকুলেশন..." শুভ মন্তব্য করল!
"একদম। তুই ইস্কুলে এরকম করেই তো অঙ্ক মেলাতিস?" জয়দা ফুট কাটল।
"তোমাদের সাথে কথাই বলা চলে না!" বলে শুভ গাল ফোলাল।
জয়দা আর আমি অবিশ্যি সেটাকে খুব একটা পাত্তা যোগ্য মনে করলাম না। আমি বললাম,"কনটিনিউ।"
একটু গলাটা ঝেড়ে নিয়ে জয়দা আবার শুরু করল।
"হ্যাঁ যেটা বলছিলাম। এইসব জল মেশানো ইতিহাসের সত্যমিথ্যা বিচার করা খুবই মুশকিলের কাজ। সেসব কঠিন কর্ম অবিশ্যি পণ্ডিতরা বিস্তর করেছেন। এখনও করে চলেছেন। কদিন আগেই আমার সাথে ব্রিটিশ লাইব্রেরীর এক টিবেটোলজিস্টের সাথে কথা হচ্ছিল। ইমেলে। ভদ্রলোকের নাম স্যাম ভ্যান শাইক। ওর একটা রিসার্চ পেপার আমার হাতে আসে কদিন আগে। সেইটার কথা পরে বলব। আসলে, সেটা উলটে পালটে দেখতে দেখতেই তিব্বতের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে বেশ আগ্রহ জন্মাল। ভদ্রলোক সদাশয় ব্যক্তি। মেইল করে কিছু জানতে চাইলেই ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে গুছিয়ে উত্তর চলে আসে। স্যামের যে কাজটার কথা জেনে আমার এই উৎসাহ - সেটা আসবে আমাদের গোটা গল্পের শেষদিকে। এখন আপাতত ফেরা যাক রাজা রূপতির গল্পে।"
"এই রূপতি আবার কার পতি? এই অন্য কার একজনের কথা হচ্ছিল... " শুভ গাল ফোলানো কমিয়ে গল্পে মজে গেছে আবার।
"রাজা রূপতির কাহিনী পাওয়া যায় The Red Annals বলে একটি বইয়ে। বইটি লেখা হয় ১৩৪৬ থেকে ১৩৬৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। কুঙ্গা দোরজে নামে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর লেখা। অবিশ্যি ভদ্রলোক শেষ বয়েসে এসে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। তার আগে দীর্ঘদিন কাটিয়েছিলেন মোঙ্গল রাজপরিবারে। সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় - গুরুত্বপূর্ণ হল এই গ্রন্থকে বলা হয় তিব্বতের ইতিহাসের এক আকর গ্রন্থ। এর আগে যা লেখা হয়েছে, সেসব সেভাবে পাওয়া যায়নি। এটাই তিব্বতের বৌদ্ধ ইতিহাসের প্রাচীনতম গ্রন্থ যেটা বর্তমান ঐতিহাসিকদের হাতে এসেছে।" জয়দা একটা বালিশ টেনে নিয়ে কাত হলেন। "এখানে বলছে রাজা রূপতি ছিলেন কৌরব পক্ষের এক রাজা। কৌরবদের সাথে জুটেছিলেন নিজের আখের গোছাতে। যেই দেখেছেন কৌরবরা পাণ্ডবদের কাছে ব্যাপক ঝাড় খাচ্ছে অমনি কেটে পড়েছিলেন। য পলায়তি স জীবতি। উনি নারী ছদ্মবেশে পাণ্ডবদের হাত থেকে পালিয়ে হাজির হলেন হিমালয়ে। এটা গল্প নম্বর এক। গল্প নম্বর দুই হল যেটা আগে বলছিলাম। কোশলরাজ প্রসেনজিতের এক বংশধরই হিমালয় পার হয়ে তিব্বতে পৌঁছেছিলেন। কোশলরাজ প্রসেনজিতের বংশধরকে প্রথম রাজা সাজানোর পিছনে আবার একটা উদ্যেশ্য খুঁজে পেয়েছেন অনেক ঐতিহাসিক। তারা বলছেন, যেহেতু কিছু শতাব্দী পরে এইসব ঘটনার কথা লিখে গেছেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাই তারা যে নিজেদের ধর্মকে মহিমান্বিত করার চেষ্টাতেই রত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। প্রসেনজিত ছিলেন বুদ্ধদেবের একজন প্রিয় শিষ্য। সুতরাং তার সাথে তিব্বতি রাজবংশকে যুক্ত করে রাজবংশের বংশগৌরবকে বৃদ্ধি করা এই কাহিনী নির্মাণের উদ্দেশ্য হওয়াটা আশ্চর্য নয়। গল্প তিন - প্রাচীন তিব্বতে যখন দৈত্য দানো ঘুরে বেড়াত, সেই সময় বৎসরাজ..."
"মৎসরাজ? মানে ইলিশ?" শুভ হঠাৎ স্বপ্ন থেকে জেগে উঠল মনে হল।
"হে ঈশ্বর! ওরে হতভাগা একটু ইতিহাস বই এর কথা মনে কর। খালি খাই খাই! ষোড়শ মহাজনপদের নাম মনে আছে?" জয়দা কথার মাঝে ব্যাঘাত পড়াতে ধমকই দিল একটা।
শুভ মাথা নেড়ে দিল। মনে নেই। আমারও মনে নেই। দু একটা নাম মনে পড়ছিল। "গান্ধার, কোশল... আর কীসব ছিল না?"
"কাকা কোথায়? কমল কুমার অন্য অন্য অনেকের চেয়ে বেশী শুনেছেন। মামার গায়ে পায়ে মস্ত মস্ত বিছে!" জয়দা যে কী একটা বলল সেটা আমাদের দুজনের কাছেই তিব্বতি ভাষা মনে হল।
"এটা কী জয়দা?" মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করি।
"ষোড়শ মহাজনপদ! প্রতিটা শব্দের শুরুর বর্ণ দিয়ে এক একটা। কাশী, কোশল, কম্বজ, কুরু, অঙ্গ - যার থেকে 'বঙ্গ' শব্দটির উৎপত্তি ধরা হয়, অস্মক, অবন্তী, চেদি, বৎস, শূরসেন, মল্ল, গান্ধার, পাঞ্চাল, মগধ, মৎস, বৃজি!"
"বাপরে! এতগুলো নাম মনে আছে?" আমরা সমস্বরে বলি।
"হ্যাঁ। চেষ্টা করলেই থাকে। আবার চেষ্টা না করলে থাকে না। নিজেদের দেশের ইতিহাস। ভুললে চলে?" এই বলে একটা ইঞ্চি পাঁচেক লম্বা হাই তুলে বলল,"এই ষোড়শ মহাজনপদের একটা ছিল 'বৎস'। অবিশ্যি মৎস্য নামেও একখানা ছিল। যদিও সেটা ইলিশ নয় বলেই আমার বিশ্বাস। এনি ওয়েজ, এই বৎসরাজ উদয়নের এক পুত্র জন্মায়। রাজপুত্র জন্মালে দেশে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বইল না। কারণ যে পুত্র জন্মাল সে এক বিকৃতদেহ মানুষ। চোখের পাতাগুলো নাকি নিচের দিকে জোড়া, উপরদিকে বন্ধ হয়। হাতের পায়ের আঙুল সব ব্যাঙের মত - পাতলা মেমব্রেন দিয়ে আটকানো। এমন চেহারার ছেলে দেখে রাজা হেব্বি ভয় পেয়ে গেলেন। আদেশ দিলেন যে এই পুত্রকে নদীতে ভাসিয়ে দাও। কর্মচারীরা সেই আদেশ পালন করলেন। কিন্তু অমন একটি শিশু, সে যতই বিকৃতদেহধারী হোক না কেন, তাকে অমন ভেসে যেতে দেখে এক কৃষকের মায়া হল। নদী থেকে তুলে নিয়ে লালন পালন করলেন। পরে বড় হলে এই সব জেনে সে মনের দুঃখে হিমালয়ে চলে যায়। তারপর হিমালয় পার হয়ে এসে হাজির হয় সোজা তিব্বতে!"
(চিত্রঃ ঞ্যাট্রি চানপো - স্কন্ধবাহিত শক্তিধর)
"তারপর?"
"অচেনা একটা দেশ। মানুষ জনের দেখা পাওয়া যায় না। রুক্ষ শীতল জায়গা সব। চানথাং গোশি বলে একজায়গায় দেখা হয়ে গেল একদল মানুষের সাথে। তারা ছিলেন বোন পুরোহিত।"
"কী পুরোহিত?" শুভ প্রশ্ন করল।
"বোন। তিব্বতের প্রাচীন ধর্ম।" শুভদা উত্তর দিল।
"ভাইও আছে নাকি?" শুভর মাথায় সাথে সাথে বদ বুদ্ধির উদয়। জয়দা অবিশ্যি সেটাকে অত পাত্তা দিল না। বলল,"বোন নিয়ে বিস্তারিত পরে বলছি। এটুকু শুনে রাখ যে বৌদ্ধ ধর্ম প্রবেশ করার আগে বোনই ছিল তিব্বতের জাতীয় ধর্ম। সেই ধর্মের কয়েকজন পুরোহিতের সাথে দেখা হল আমাদের রাজপুত্তুরের। তারা অমন অদ্ভুত গড়নের মানুষ দেখে অবাক। এ আবার কে! কোথা থেকে উদয় হল! স্থানীয় ভাষায় তারা এসে জিজ্ঞেস করল, কে তুমি? এ কিছুই বুঝল না। শেষে হাত তুলে নাকি আকাশের দিকে দেখিয়ে সে বোঝায় যে সে ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত হয়ে এখানে হাজির হয়েছে। যদিও আমার বিশ্বাস যে ওদের ভাষা না বুঝে হাত তুলে বোঝাতে চেয়েছিল যে সুদূর ভারতবর্ষ থেকে এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু পুরোহিতরা বুঝল উল্টো। অবিশ্যি তাতে ক্ষতি কিছু হল না! ঈশ্বর প্রেরিত এই অদ্ভুত মানুষকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। সবাই মিলে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে চলল নিজেদের গ্রামে। সেখানে গিয়ে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল যে এই দেব-পুরুষ আমাদের রাজা। নাম হল 'স্কন্ধবাহিত শক্তিধর' যার তিব্বতি অনুবাদ 'ঞাট্রি চানপো'।"
"বাপরে! এত কিছু ডিটেইলে জানা গেল কী করে?"
"কিছুই জানা যায় নি। সাতশো হাজার বছর পর সম্রাট রলপাচেনের সময় তিব্বতের ইতিহাস যখন প্রথম লিপিবদ্ধ করার কাজ হল তখন মুখে মুখে চলে আসা এইসব উপকথা স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসে।"
"তারপর কী হল?"
"তারপর নির্বিঘ্নে রাজত্ব করতে লাগল। তিব্বতিরা নির্দ্বিধায় ঞাট্রি চানপোকে তাদের প্রথম রাজা হিসাবে মেনে নিয়েছে। তার কারণ আছে অবিশ্যি। তিব্বত তখন একটা দেশ বা রাজ্য হিসাবে ছিল না। বরং বারোটি ছোট ছোট রাজ্য ছড়িয়ে ছিল গোটা তিব্বত জুড়ে। তার মধ্যে একটি ছিল এই ইয়ারলুং রা। ইয়ারলুং উপত্যকায় এদের বাস ছিল। সেই উপত্যকার বুক চিরে বয়ে যেত সানপো নদী।"
"সানপো, মানে, ব্রহ্মপুত্র?" আমি জিজ্ঞেস করি। ভূগোলে পড়েছিলাম মনে পড়ল।
"হ্যাঁ। ওই জন্য ইয়ারলুং সানপোও বলা হয়। যাই হোক, এই ইয়ারলুং গোষ্ঠীর রাজারাই পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মকে তিব্বতে প্রসারিত করার উদ্যোগ নেন। আর বাকিদের থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠে লাসা নগরীর প্রতিষ্ঠা করে জাঁকিয়ে বসেন। সেই জন্য এদের পূর্বসূরী হিসাবে ঞ্যাট্রি চানপো পেয়ে গেছেন প্রথম রাজার মর্যাদা। অনেকে বলেন ঞ্যাট্রি চানপোর আসল নাম - মানে ভারতবর্ষে থাকাকালীন নাম ছিল 'বুদ্ধশ্রী'। যদিও এইসবের পরেও তিব্বতের ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত প্রথম সম্রাট স্রোংচান গামপো অবধি একটা কয়েকশো বছরের গ্যাপ।"
"তাহলে বৌদ্ধ ধর্মটা পৌঁছল কবে তিব্বতে?"
"ধৈর্য ধর। এখনো অনেক শতাব্দী পার হতে হবে তার উত্তর পেতে গেলে।"
শুভ অনেকক্ষণ ধরেই উশখুশ করছিল। গল্প শুনতে শুনতে বিকেল পার করে ফেলেছি খেয়ালই নেই। জয়দা একটু থামতে এবার শুভ বলেই ফেলল,"বলছি তিব্বতিরা চা খায়?"
"হ্যাঁ! চা খায় কী রে! চা ওদের প্রায় স্টেপলের পর্যায়ে পড়ে! ঠাণ্ডায় জলের বদলে বার বার চা খাওয়াটাই ওরা প্রেফার করে বেশী। চমরীগাইয়ের দুধের চা..." জয়দা চোখ বন্ধ করে চমরীগাইয়ের দুধের ব্যাপারটা একটু অনুভব করার চেষ্টা করছিল।
শুভ করুণ মুখে বলল, "তা আমরা একটু চমরীগাই না হলেও চেন্নাইএর গাইয়ের দুধের চা কি খাব না? খাব না আমরা চা?"
(চলবে)
উফ! হেবি হচ্ছে!
হা-হা-হা-হা, ভালো জায়গায় থেমেছে এই পর্ব।
ডিসকভারিতে তিব্বতে দালাই লামার কি এক ধর্মীয় আয়োজনে বৌদ্ধ পুরোহিত ভান্তেদের স্পেশাল চমরী গাইয়ের দুধের মাখন হতে প্রস্তুতকৃত মাখন চার সুখ্যাতি শুনেছি। ঠান্ডায় খুবই নাকি কার্যকরী ও স্বাস্থসম্মত।
তা সে দেশে বৌদ্ধ ধর্ম কবে এলো? জলদি পরের পর্ব প্লি...
মাখন চা এর গল্পও বলব। বৌদ্ধ ধর্ম আসার এখনো দেরী আছে... আগে তিব্বতিরা লেখা পড়া শিখুক... :D
ধন্যবাদ। লেখা ত্রুটিমুক্ত রাখার জন্য 'ফুট কাটা' ইজ মাস্ট!