প্রবাদ বনাম ঘটনাঃ
প্রবাদ ১। রসুন, লেবু ইত্যাদি ঘরোয়া টোটকা, যা সাধারণ জ্বরে বা সর্দিকাশীতে কাজ দেয়, সেগুলি খেলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ভুল। রসুন এমনিতে খুবই উপকারী এবং তার কিছু জীবানুনাশক ক্ষমতাও আছে। তেমনি লেবু বা ওই জাতীয় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারেও মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু এখন অবধি রসুন, লেবু বা অন্য কোন খাবার খেয়েই করোনা ভাইরাসকে রোধ করা গেছে এমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
প্রবাদ ২। নিয়মিত নুন-জল বা স্যালাইন ওয়াটার দিয়ে গার্গল করলে এবং কিছুক্ষণ পরে পরে জল খেলে করোনা ভাইরাসগুলি গলা থেকে ধুয়ে যায় এবং এভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব
ভুল। নিয়মিত গার্গল করার ফলে করোনা ভাইরাস থেকে কেউ রক্ষা পেয়েছেন এরকম কোন প্রমাণ নেই। এতে আপনার গলাব্যথার উপশম হতেই পারে – কিন্তু এর ফলে ভাইরাস্টি ফুসফুসে প্রবেশ করা থেকে আটকাবে না – কিছুক্ষণ পরপর জল খেলেও না
প্রবাদ ৩। উষ্ণ এবং জলীয় বাষ্পপূর্ণ অঞ্চলে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে না।
ভুল। উষ্ণ এবং জলীয় বাষ্পপূর্ণ অঞ্চল সহ সমস্ত ধরণের এলাকাতেই কোভিড ১৯ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
প্রবাদ ৪। গরম জল পান এবং উপযুক্ত পরিমাণ সূর্যালোক করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী
ভুল। উচ্চ উষ্ণতায় কোভিড-১৯ মরে যায় এরকম কোন প্রমাণ এখনো পর্যন্ত নেই। গরম জল পান বা উষ্ণ সূর্যালোক এমনিতে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যালোক আমাদের ভিটামিন ডি সংশ্লেষণে সহায়তা করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে খুব বেশী সূর্যালোকে আবার চামড়া ঝলসে যেতে পারে।
প্রবাদ ৫। গরম জলে স্নান করলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচা যেতে পারে।
ভুল। গরম জলে স্নান করার ফলে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আটকাবে না। আপনি গরম জলে স্নান করুন বা না-ই করুন, আপনার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী থেকে ৩৭ ডিগ্রীর মধ্যেই থাকে। বরং খুব বেশী গরম জলে স্নান করলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকরও হতে পারে কারণ তাতে আপনার গায়ে ফোসকা পড়তে বা পুড়ে যেতে পারে। নিজেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার সেরা উপায় হল বারবার আপনার হাতগুলি পরিষ্কার করা। এর ফলে আপনার হাতে লেগে থাকা ভাইরাসগুলি পরিস্কার হয়ে যায় এবং আপনি চোখে, নাকে বা মুখে হাত দিলে আপনার যে সংক্রমণের সম্ভাবনা তা কমে যায়।
প্রবাদ ৬। হ্যান্ড ড্রায়ার করোনা ভাইরাসকে মেরে ফেলার ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী।
ভুল। হ্যান্ড ড্রায়ার আদৌ কোভিড-১৯ ভাইরাস মেরে ফেলার জন্য কার্যকরী নয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে ঘন ঘন অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজার দিয়ে অথবা সাবান এবং জল দিয়ে হাত ধুন। হাত ধোয়া হয়ে গেলে সেটা তোয়ালে দিয়ে অথবা ড্রায়ার ব্যবহার করে ভালভাবে শুকিয়ে নিন।
প্রবাদ ৭। সারা শরীরে ক্লোরিন অথবা অ্যালকোহল স্প্রে করলে করোনা ভাইরাস মরে যায়
ভুল। আপনার সারা শরীরে অ্যালকোহল অথবা ক্লোরিন স্প্রে করলেো যেসব ভাইরাস ইতিমধ্যেই আপনার শরীরে প্রবেশ করেছে তারা মরবে না। বরং এই ধরণের বস্তু স্প্রে করলে তা আপনার জামাকাপড় এবং শরীরের মিউকাস অংশ, যেমন চোখ বা মুখগহ্বরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। মনে রাখবেন ক্লোরিন বা অ্যালকোহল কোন ভূমিতলকে জীবানুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে কিন্তু তা সবসময়ে পেশাদারদের পরামর্শ মেনে করা উচিৎ।
প্রবাদ ৮। নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দিয়ে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা সম্ভব।
ভুল। নিউমোনিয়ার টীকা, যেমন নিউমোকক্কাল টীকা অথবা হিমোফিলিয়াস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (hib) টীকা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কোনরকম প্রতিষেধক নয়। এই ভাইরাসটি এতটাই নতুন এবং ভিন্ন ধরণের যে এটির জন্য একেবারে নিজস্ব প্রতিষেধকের প্রয়োজন। গবেষকেরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তাঁদের সবরকম সাহায্য করে যাচ্ছেন। তবে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে কার্যকরী না হলেও শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন টীকা বা ফ্লু এর টীকা নেবার পরামর্শ অবশ্যই দেব আপনার স্বাস্থ্যের কারণে।
প্রবাদ ৯। এই নতুন করোনা ভাইরাস মশার কামড়ে সংক্রমিত হয়।
ভুল। আজ অবধি এরকম একটিও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা থেকে মনে হতে পারে যে করোনা ভাইরাসটি মশাবাহিত। এই নতুন করোনা ভাইরাসটি মূলতঃ শ্বাসতন্ত্রের ওপর ক্রিয়াশীল যা আক্রান্তের কাশি, হাঁচি, নাক থেকে বার হওয়া কফ অথবা থুতু ইত্যাদির মাধ্যমে ড্রপলেট বা জলকণার আকারে বাহিত হয়ে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। তাই এর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে বারবার অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার অথবা সাবান জল দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। এবং যে ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি হচ্ছে তার খুব কাছাকাছি আসা এড়িয়ে চলুন।
প্রবাদ ১০। করোনা ভাইরাস কেবলমাত্র বয়স্কদের আক্রমণ করে।
ভুল। সমস্ত বয়সের সব মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের আগে থেকেই অসুস্থতা (যেমন হাঁপানি, ডায়বেটিস বা হার্টের সমস্যা) আছে তারা এই ভাইরাসে বেশী করে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সব বয়সের মানুষকেই এর বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন – যেমন হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি।