এখন অভ্যেস হয়ে গেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর সাথে দিন কাটানো। বেশ অনেকদিন হয়ে গেল আমরা বাড়ি বন্দী, কুয়েত নাম এর মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট দেশ এ। দুবাই নয় সৌদি ও নয় সেই ১৯৯০ তে সাদ্দাম এর জন্যে খবর এ আসা কুয়েত এ। আমি এখানের সেই ৫-১০ % ভারতীয় র মধ্যে পরি যাদের এখানের ৫০ ডিগ্রি ৬০ ডিগ্রি গরম কে মোকাবিলা করতে বিশেষ কষ্ট করতে হয়না, আরবিক ভাষা তে কথা ও বলতে হয়না বা । দুবাই এর মতন ঝাঁ চকচকে না হলেও কুয়েত এও আমরা আধুনিক সব সুবিধা ভোগ করে থাকি, সাথে উপরি পাওনা হল ঝক ঝকে নীল আকাশ, ঝিনুক ভরা সমুদ্রের ধার সাথে রাশ-আওয়ার এ প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম।
ফেব্রুয়ারি মাস এর শেষ সপ্তাহে যখন সমস্ত কুয়েতবাসী ন্যাশানাল ডে আর লিবারেশান ডে লম্বা ছুটি কি ভাবে কাটাবে, কি করে চট করে পাশের কোনো দেশ থেকে ঘুড়ে আসা যায় তাই নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছে আর আমরাও চীন এর খবর দেখে, সোশাল মিডিয়া এর চুটকি-ফুটকি- জ্ঞান পাহাড়ে কখনও হেসে কখনও আতঙ্কিত হয়ে ভাবচ্ছি আমার বাচ্ছাদের স্কুল থেকে শিখে আসা ‘হ্যাপী বার্থ ডে’ গান এর সাথে হাত ধুলে ই আমাদের কিছু হবেনা। আমরা তো হেঁটে কারুর সাথে গায়ে গা লাগিয়ে রাস্তায় ঘুরছিনা। চীন থেকে তো বিমান নামা বন্ধ করে দিয়েছে কুয়েত সরকার, বিমান বন্দর এ চেকিং চলছে পুরো দমে আমাদের আর ভয় নেই। তাছাড়া বাচ্ছা-ওলা বাড়ি তে তো প্রত্যেক মাস এক বার হাঁছি কাশি জ্বর তো ছেলে খেলা।
এমন সময় করোনা কখন যে ঢুকে পড়ল কুয়েত এ। ২৪ শে ফেব্রুয়ারি সকালে কুয়েত মিনিস্ট্রি অফ হেল্থ থেকে যখন তাদের ইন্টাগ্রাম এর পাতায় জানাল যে ইরান থেকে ঘুরে আসা ৩জন কুয়েতি র দেহে করোনা র সঙ্ক্রমণ নিশ্চিত ততক্ষণে মধ্যপ্রাচ্যের সুখী বাসিন্দার আবশ্য কর্তব্য পালন করতে আমরা ৩দিন এর ছুটি কাটাতে বাহারেন পৌঁছে গেছি। অবশ্য তার ৩-৪ দিন আগে থেকেই ‘স্ট্যা সেফ’ এর বার্তা মেনে আমরা হাত ধুচ্ছিলাম। কুয়েত সরকার ছুটি পরবার আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিল ২৫ শে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি র ন্যাশানাল ডে এর সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল, প্যারাড বাতিল, ইরান যাওয়া ও মানা। সেদিন বাহারেন ও ইরান থেকে আসা ২জন এর দেহে পাওয়া গেল করোনা ভাইরাস। কুয়েত এর জন সংখ্যা এমনি এ কম তবু যেন বাহারেন যাবার পথ এ, ভোর ৪;০০ টের বিমান বন্দর এ দেখলাম একটু যেন বেশী ই খালি।
বিমানবন্দর এর ব্যান্ডেজ ভুত
লক্ষ্য করলাম কয়েক জন আপাদও মস্তক ডিসপোসেবেল মেডিকেল এপ্রন আর মাস্ক -এ ঢেকে, এক বটল হ্যান্ড স্যানিটাজার আর একটি কম্পিউটার নিয়ে এক কোণা তে বসে আছে। এক্টু যেন ভয় ই করলো… এই ভাবে ঘুরতে যাওয়া ঠিক হচ্ছে কি। কিন্তু বিমান বন্দর এর কর্মীদের তৎপরটা দেখে এক্টু স্বাস্তি পেলাম। সব কিছু পরিস্কার রাখবার চেষ্টা চলছে। লোক জন এক্টু দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে। মন কে প্রবোধ দিলাম কয়েকটি মাস্ক থাকলে ভাল হত, সাথে সাথে গ্লাভস। বাহারেন বিমানবন্দর এর ইম্মিগ্রেসন এ এই তাপীয় স্ক্যানার বা টেম্পারাচার স্ক্যানার দিয়ে নিজে যখন গেলাম তখন বুঝলাম এই ভাবে রোগ বাছাই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা। তবুও চেষ্টা দেখে মন্দ লাগলনা। ৩ দিন পর যখন কুয়েত ফিরলাম তখনও দেখলাম ব্যান্ডেজ ভুত এর মতন এই কুয়েত বিমান বন্দর এও একজন আপাদও মস্তক ডিসপোসেবেল মেডিকেল এপ্রন, মাস্ক ঢেকে, এক বটল হ্যান্ড স্যানিটাজার নিয়ে তাপিয় স্ক্যানার বা টেম্পারাচার স্ক্যানার এর সামনে সম্ভবত ব্যাজার মুখে বসে আছে। আমি তো নিজেই হেঁচে চলেছি তখন কিন্তু নাক্মুখ একটি সারজিকাল মাস্ক দিয়ে ঢাকা। ভয়ে ভয়ে নিজের গলায় নিজেই হাত রেখে দেখছি, বার বার, বাচ্চা দের গলায় তেও।। আমাদের ইম্মিগ্রেসন এ আটকান হল। জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্যে আর আমাদের আগের একটি ইতালিয় পরিবার কেও থামানও হল। তারাও আমাদের মতন কুয়েতবাসি। আরাবিক বুঝিনা তবু মনে হল আমাদের পাসপোর্ট এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত দেখছে। তখনও আমাদের কেউ বলেনি আমাদের আগামি ২ সপ্তাহ কি করতে হবে।
মাস্ক মাফি, স্যানেটাইজার মাফি!!
২৪শে ফেব্রুয়ারি সকালে বাহারেন নেমে আমার বা আমাদের প্রথম কাজ ছিল এক বাক্স মাস্ক কেনা। সেই যে খোঁজা শুরু করেছি বাহারেন থেকে এখনও আমরা কুয়েত এর কোথাও পাইনি। ভোজবাজি র মতন বাহারেন এর এবং কুয়েত এর বাজার থেকে সমস্ত মাস্ক গায়েব। আমার স্বামী সারজিকাল/ ফেসিয়াল/ ফেস মাস্ক অনেক রকম ভাবে ওষুধ এর দোকান, মনিহারী দোকান, মায়ে জামা কাপড এর দোকান ও ইংরিজি/হিন্দি /ইশারা-আরবিক বুঝিয়ে শেষ মেশ খান্তি দিলেন। সব জায়গা তে বলে ‘মাফি’। মনে হচ্ছিল যেন মাস্ক কিনতে ই আমরা বাহারেন এসেছি। মাস্ক খোঁজবার ফাঁকে ফাঁকে একটু বাহারেন দর্শন করে ফেললাম। দেখলাম আমাদের মতন কুয়েত থেকে এসে পড়া লোক জনই ঘুরছে। বাহারেন এর জনসংখ্যা এমনি ই কম। ২ বছর আগে ও দেখেছিলাম এই বার করোনা র ভয়ে আরও ঘর বন্দী। শেষ মেশ আমাদের হোটেল রিসেপ্সন থেকে ই পাওয়া গেল সেই দুষ্প্রাপ্য জিনিস। সবাই খুশী। মাস্ক এর সাথে হ্যান্ড স্যানেটাইজার ও ‘মাফি’।
আজ এক মাস পরেও কিন্তু কুয়েত এর কোথাও মাস্ক ও হ্যান্ড সানিটাইজার ও দেখিনি। কিন্তু যে সমস্ত অত্যাবশ্যক বিভাগ যা খোলা আছে তার দরজা, কাউন্টার সব জায়গা তে বিশাল বড় বড় বোতল করে স্যানেটাইজার রাখা আছে। এবং গন্ধ শুঁকে বলতে পারি তার অ্যালকোহল এর পরিমাণ সব ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া কে মারবেই মারবে। সারজিকাল গ্লারবে।প্রথম দিকে অপ্রতুল হলেও এখন যথেস্থ পরিমাণে রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যাবসায়ি বেশী দামে মাস্ক প্রভৃতি বিক্রি করছিল, সরকার তাদের দোকান সিল করে বন্ধ করে দিয়েছে।
সংক্রমণ বৃদ্ধি ও ঘোষনার সপ্তাহ সাথে স্বপৃথকীকরণ
মার্চ ১, রবিবার ছিল আমাদের কাজে, স্কুলে যোগ দেবার দিন, কিন্তু ২ দিন আগেই আসে অতিরিক্ত এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধের নোটিশ। সরকারী নির্দেশ মেনে অফিস থেকে স্বপৃথকীকরণ এর আদেশ, যারা কুয়েত এর বাইরে গেছিল তাদের জন্যে (১০ টি দেশ এর নাম ছিল, বাহারেন ও ছিল সেই তালিকা তে)। সাথে সাথে কুয়েত সরকার এর ট্রাভেল ব্যান নোটিশ, ইরান, ইন্ডিয়া, মিশর, লেবানন, ব্রিটেন দেশ সংখ্যা বাড়তেই থাকে একে একে। সাথে বাড়তে থাকে সেই সমস্ত দেশ এর নাম যেখানে ঘুরতে গেলে স্বপৃথকীকরণ থাকতে হবে। পরের দিকে সেই তালিকা তে বাহারেন এর নাম না থাকায় নিজেরা একটু নিশ্চিন্ত হলাম যাক বাবা বাহারেন সংক্রম এর দ্বিতীয় ধাপে যাবার আগেই আমরা চলে এসেছি। মাঝে আরেক নির্দেশিকা তে ছিল ভারত, মিশর, সিরিয়া, শ্রীলঙ্কা , বাংলাদেশ থেকে যারা কুয়েত এ আসছহে তাদের সকল কে COVID19 অসংক্রম এর প্রমান পত্র থাকলে তবেই কুয়েত এ প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে।
তারপর ১১ই মার্চ এল এক ভয়ানক নির্দেশ, সমস্ত প্রবাসী কুয়েতবাসী যারা ২৭শে ফেব্রুয়ারির পর কুয়েত এসেছে তারা যেন উল্লিখিত তারিখে কুয়েত ফেয়ার গ্রাউন্ডে সিভিল আইডি আর পাসপোর্ট নিয়ে পূর্বাহ্নিক সতর্কতামূলক মেডিকেল সক্রীনিং এর জন্যে জমায়েত হয়। হাতে ২-৩ দিন সময় ছিল আর সেই সময় ছিল একের পর এক নির্দেশিকা কারন লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রম এর সংখ্যা, বাড়ছে সাথে বাড়ছে বিভ্রান্তি। প্রতিবেশী দেশ গুলি তেও সংখ্যা বাড়ছে। ততদিনে ইতালি র আবস্থা দেখে সরকার বুঝতে পারছেনা কি ভাবে অবস্থা র সামাল দেবে। ৩-৪ ঘণ্টা র মধ্যে নতুন নির্দেশ এল, না সকল কে নয় শুধু মিশর, লেবানন আর সিরিয়া থেকে যারা এসেছে তাদের প্রত্যেক্কেই কুয়েত এর স্বাস্থকর্মী দ্বারা COVID19 সংক্রম সতর্কতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, সে যে দেশের মানুষ হোকনা কেন। বাকী সব যাত্রীদের ছিল নিজের বাড়ি তেই স্বাপৃ্থকীকরণ এর নির্দেশ। এ যেন ঠগ বাছহতে গাঁ উজার। আর যত দিন সেই কাজ টি সম্পন্ন না হচ্ছে ততদিন সকলে লক্ষ্মী হয়ে বাড়ী তে গৃহবন্দী … ‘লকডাউন’ । ১২ই মার্চ থেকে।
মিনিস্ট্রি অফ হেলথ এর একটি ভিডিও থেকে বোঝা গেল স্থানীয় কুয়েতি দের ও দেখলাম পরীক্ষার নির্দেশ রয়েছে তবে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করে আসছে স্বাস্থকরমী রা। হবে নাই বা কেন ৪.৭ মিলিয়ন জন সংখ্যার মধ্যে মাত্র ১.৭ মিলিয়ন তো স্থানীয়বাসী ।
১২ই মার্চ থেকে লকডাউন, আপাততঃ ১২ই এপ্রিল পর্যন্ত। সাথে ১১ ঘণ্টা কারফিউ।
শুধু অত্যাবশ্যক পরিসেবা বাদে সমস্ত কিছু বন্ধ এখন। স্কুল কলেজ, সিনেমা হল আগেই বন্ধ ছিল। কিছু কিছু পরিবার পার্ক এ বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছিল, বা সমুদ্রের ধারে ঘুরছিল। রেস্তরাঁ তেও খাচ্ছিল। তাদের সামাল দিতে পুলিশ বেশ তৎপর ছিল এবং গত ১০-১২ দিনে আমি কারুকে সেভাবে নিয়ম ভাংতে দেখিনি। একদিন তো শুনলাম আমাদের বাড়ি র কমিউনিটি হল তে কিছু পরিবার পটলাক বারবিকিউ করছিল সেটিও পুলিশ এসে থামিয়েছে, ৫ মিনিট এর মধ্যে সকলে হল খালি করে দিয়ে চলেও গেছে। সাধু বাদ দিলাম পুলিশ কে। উল্ট দিকের পার্ক ও দেখলাম বন্ধ করে গেল এক সন্ধ্যে য়ে।
লকডাউন ঘোষনা র সাথে সাথে ১১ই সন্ধ্যে বেলা সমস্ত সুপার মার্কেট এ পাগল এর মতন ভীড় ছিল। বিভ্রান্তি থেকে অসুস্থ হওয়া রুখতে কী ব্যাবস্থা ছিল জানিনা তবে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কিন্তু ঘোষণা করে চলেছে দোকান বন্ধ হবেনা, স্থানীয় ব্লক এর কোওপারেটিভ বাজার, ব্যাংক, হাসপাতাল এবং ওষুধ খোলা থাকবে। আমরা লাইন এর দৈর্ঘ দেখে অনলাইন এ ২-১ টি জিনিষ আনতে দিলাম তা এসে পৌ ঁ ছাল রাত্রি ১২ঃ৩০ টায়। তখন ও বুঝতে পারছিনা লকডাউন মানে ঠিক কি? দেশে ১৪৪ ধারা দেখেছি এটা ঠিক কেমন।
সুপার মার্কেট এ জিনিষ এর কমতি নেই তবে আমদানি তে প্রভাব পড়ছে ধীরে ধীরে।
দুদিন বাদে (তত দিনে কিন্তু আমাদের স্বপৃথকীকরণ এর ১৪ দিন হয়ে গেছে) যখন সুপার মার্কেট এ গেলাম, দেখলাম ২-১ টি জিনিষ বাদে সব ই যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। টয়লেট পেপার এর তাক টি একটু খালি খালি লাগল, পাস্তা র প্যাকেট ও কম। মানুষ এত্ত কেনবার পর ও সব তো আছে। ইরান, পাকিস্তান এর মাছ দেখলাম নেই। নাই বা খেলাম মাছ। কুয়েত এ কিন্তু তেমন উৎপন্ন কিছু হয়না। কিছু খামার আছে সেখান থেকে অরগানিক সবজি আসে। দুধ এর কারখানা আছে। মুরগী খামার ও আছে কয়েক টি। তবে এই তা বুঝলাম সরকার যেমন আশ্বাস দিচ্ছে আগামি ৬ মাস এর জন্যে কুয়েত প্রস্তুত সেটা অত্যুক্তি নয়। এখানের সুপার মার্কেট এ প্রচুর সাহাজ্যকারী কর্মী আছেন তারা বেশির ভাগ ই বাংলাদেশ বা ভারত এর। তাদের প্রত্যেকে দেখলাম মুখে সারজিকাল মাস্ক আর হাত এ গ্লাভস পরে আছেন। একজন ট্রলি-র হাতল গুলি প্রত্যেক গ্রাহক ব্যবহার করবার পর ল্যাইজল দিয়ে পরিষ্কার করছেন। মাঝে মাঝে স্বয়ংক্রিয় দরজা বা রেলিং গুলি ও পরিস্কার করা হচ্ছে। আমি তো এখনও কোন কিছু র অভাব বোধ করিনি। তবে এখনও ‘মাস্ক মাফি’ , ‘সানিটাইজার মাফি’। সাবান তো আছে বাড়িতে আর বেরচ্ছি ই বা কোথায়? তাই ও গুলি র প্রয়োজন ও নেই। রেস্তরাঁ তে বসে খাওয়া বন্ধ থাকলেও হোম ডেলিভারি কিন্তু চালু আছে। গাড়ী ও চলছে তবে অনেক কম। কেউ দরকার না হলে রাস্তা য় বেরোচ্ছে না। কিছু মানুষ হয়েত বেরোচ্ছে কিন্ত তার সংখ্যা কম। জন পরিবহন ও বাকী দোকান বাজার সব বন্ধ। গত ২২শে মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ১১ ঘণ্টা র কারফিউ। অকারণে রাস্তা য় বেরলে ১০,০০০ করিতে(২৪ লক্ষ টাকা) জরিমানা সাথে ৬ মাস এর জেল। ৫ মিনিট অন্তর অন্তর অনেক পুলিশ এর গাড়ী টহল দিচ্ছে। সরকার এর আশ্বাস আছে সঙ্কট কালীন অবস্থায় পুলিশ পাশে আছে। সাহায্য চাইলে ওনারা আছেন। আছে.২৪ ঘণ্টা হেল্প লাইন।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় কুয়েত এর পুলিশ বেশ ভাল ই তৎপর। দিনে দিনে তাদের দক্ষতা ও বাড়ছে। গত কয়েক দিন থেকে সুপার মার্কেট এ ঢোকবার আগে ১৫-৩০ মিনিট সোশাল ডিস্টান্স বজায় রেখে লাইন এ অপেক্ষ্যা করতে হচ্ছে। কিছু দোকানে অপেক্ষ্যার সময় চেয়ার এ বসবার সুবিধে ও রয়েছে। তাপমাত্রা ও দেখা হচ্ছে, বাধ্য করা হচ্ছে হাত পরিস্কার করতে। কুয়েত এ চাহিদার যেহেতু ৯০% জিনিষ ই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় তাই লকডাউন এর ২-৩ সপ্তাহ পরে কিন্তু একটু যেন জিনিষ পত্র কম কম। আতঙ্কিত ক্রেতা র সংখ্যা এখানেও কম নেই তবু জন সংখ্যা কম বলে এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এ আছে। সাথে আছে সরকারের আশ্বাস।
সতর্কতামূলক গ্ণসংক্রম, গ্ণস্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পৃথকীকরণ
১৫ ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে ছিল সতর্কতামূলক গ্ণসংক্রম পরীক্ষা। প্রথম দিন হয়ত একটু এলমেলো অবস্থা ছিল কিন্তু পরে যথেষ্ট সুষ্টু ভাবে অঞ্চল অনুযায়ী মিশর, লেবানন, সিরিয়া থেকে আসা যাত্রী পরীক্ষা করা হয়। অনুপস্থিতিতে জেল ও নির্বাসন এর ভয়ে সকলেই এই পরীক্ষা নিতে বাধ্য। WHO নিয়মাবলী মেনে উপস্থিত সকলের মধ্যে ১ মিটার দুরত্ব বজায় রেখেই তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়, ছিল খাবার এর ব্যাবস্থা ও। পরীক্ষার জন্যে কুয়েত ফেয়ার গ্রাউন্ড এর হলঘর টিতে ৮ ফিট দূরে দূরে চেয়ার পেতে দলে দলে শয়ে শয়ে মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, নেওয়া হয় ভ্রমণ বৃত্তান্ত। সপ্তাহব্যাপী এই পরীক্ষা চলা কালীন বাকী কুয়েতবাসী কিন্তু ঘরবন্দী। যেহেতু শপিং মল, পার্ক, সিনেমা হল সমস্ত বন্ধ ছিল, ছিল ‘ঘর থেকে কাজ করবার’ কঠিন নির্দেশ রাস্তা য় একদম দরকার না হলে তেমন লোকজন দেখা যায়নি।
যারা সংক্রমিত হয়েছিল তাদের কে কুয়েত এর ২-১ টি পাঁচতারা হোটেল এ রাখা হয়। একদম আলদা করে সেনা সুরক্ষাতে। সেই ব্যাবস্থা নিয়ে সোশাল সোশাল মেডিয়া তে ফিডব্যাক ভাল ই। কুয়েত এ ক্রিটিকাল রোগী র সংখ্যা কম ই ছিল। এখনও পর্যন্ত ২১১ জন নিশ্চিত ভাবে সংক্রমিত আর কারুর মৃত্যু হয়নি।
এই মুহূর্তে কুয়েত
১) বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৪টে অব্ধি কারফিঊ, বাকী সময় লকডাউন। জরুরি অবস্থা তে বেড়োবার অনুমতি আছে তবে পুলিশ এর কারণ সন্তোষ জনক মনে না হলে ১০,০০০ কেডি (২৪ লক্ষ্য টাকা) জরিমান, সাথে ৬ মাস এর জেল হবার সম্ভাবনা আছে। শুধুমাত্র ওষুধ এর হোম ডেলিভারি চালু আছে।
২) সকাল ৪ টে থেকে বিকেল ৫ টা, লকডাউন। এই সময় রাস্তায় গাড়ী আছে কিন্তু সংখ্যা অনেক কম। যাবার জায়গা তো নেই। মানুষ হাঁটছে তবে দুজনের বেশী একসাথে হাটঁলে পুলীশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গাড়ী থামিয়ে ও মাঝে মাঝে পুলীশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পরিবার এর একজন এর অনুমিতি আছে সুপার মার্কেট যাবার। ব্যাঙ্ক, মানি এক্সচেঞ্জ, হাসপাতাল এই সময় খোলা। রেস্তরাঁ থেকে খাবার ‘ডেলিভারি’ ও চালু আছে এই সময়ে।
৩) যেকোনো জন সমাগম সাথে শুক্রবারের মসজিদে জুম্মা নামাজ ফেব্রুয়ারি মাস এর শেষ সপ্তাহ থেকেই বন্ধ। পাবলিক বাস আগেই বন্ধ হয়েছিল, ২৬শে মার্চ থেকে ট্যাক্সি ও বন্ধ। বিমান পরিসেবা আগেই স্থগিত, বন্ধ দেশের সীমা ও।
৪) সুপার মার্কেট এ ঢোকবার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে টেম্পারেচার চেকিং এর পর। নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতা ই এক সাথে মার্কেট এর ভেতর থাকতে পারবেন, বাকী দের বাইরে অপেক্ষা করতে হবে ‘সোশাল ডিস্টান্স’ বজায় রেখে, দাঁড়িয়ে, চেয়ার এ বসে, টোকেন ও দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সিভিল আইডি র ঠিকানা অনুযায়ী স্থানীয় সুপার মার্কেট বা কোওপারেটিভ এই প্রবেশ করা যাবে। পুলিশ চেকিং আর সাথে সহায়তা চলছে। জিনিষ কেনা তে ‘র্যাশানিং’ এখনও চালু হয়নি। সরকার চেষ্টা য় আছে সামান্য যে ঘাটতি আছে সেটি পূরণ এ।
৫) স্কুল কলেজ সেই ১লা মার্চ থেকে বন্ধ। খুলবে সেপ্টেম্বার একেবারে গরমের ছুটি র পর। কিছু কিছু বেসরকারী স্কুলে ই-লারনিং চলছে। যদিও সমস্ত পরীক্ষা আপাতত বাতিল। যে সমস্ত কাজ ঘর থেকে করা যায় সেগুলি সকলে ঘর থেকেই চলছে।
৬) কুয়েত সরকার এর নির্দেশে যদি কেউ বাড়ী ভাড়া দিতে অক্ষম হয় তা এই মাস এর জন্য মুকুব করা হয়েছে। সমস্ত সংস্থা কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কারুকে ‘বলপুরবক’ ছুটি নিতে বলা যাবেনা, পুরো মাস এর মাহিনা দিতে ও কোম্পানী বাধ্য।
৬) এখনও অব্ধি গণ সংক্রমণ এর কোন খবর বা গুজব নেই। প্রতিদিন সংখ্যা বাড়ছে তবে সকলেরই সংক্রমিত হবার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে ।
আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের আগের কুয়েত ফিরে পাব। এত দিন ৫০-৬০ ডিগ্রি র গরম কাল অসহনীয় মনে হত তবু সে দিন গুলি যেন বড্ড ভাল ছিল। কবে আসবে সেই অবাধ আনাগোনার ছাড়পত্র?
কি ভয়ংকর শ্বাসরোধী ব্যাপার! কিন্তু উপায়ও তো নাই। লেখাটি বেশ তথ্য বহুল, রিপোর্টাজ ধাঁচের, বাহুল্য বর্জিত।
আর বাংলাদেশে আমরা এক সপ্তাহেল অঘোষিত লকডাউনেই হাঁফিয়ে গেছি। এখানে মাস্ক, স্যানিটাইজার মাঝে উধাও ছিল, এখন আবার একাধিক কোম্পানি উদ্যোগ নেওয়ায় তা পাওয়া যাচ্ছে। তবে ডেটল বা স্যাভলন প্রথম ধাক্কাতেই গায়েব। কাঁচা বাজারের দাম বাড়ছে, পাউরুটি, বিস্কুট একদম উধাও। নিত্য আয়ের মানুষ প্রায় অনাহারে আছেন, আজই গণছুটি ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হলো। ...
যে সকল দেশ নিয়মশৃঙ্খলা মেলে লক ডাউনের পথে গেছে, সেই সব দেশ ভাল সাড়া দিয়েছে। কানাডা, সাউথ কোরিয়া ও ভাল লড়াই করেছে। লেখাটা ভাল লাগল।