এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ‘ভাষাই পরম আলো’- শ্রী কলিম খান (১৯৫০-২০১৮)

    সোমনাথ রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১২ জুন ২০১৮ | ৩৭৩৬ বার পঠিত
  • কলিম খানের কাজের জগতের সূচনাবিন্দু হয়ত বা আকস্মিক। প্রথাগত পড়ালেখার জগৎ থেকে বেশ কিছুটা দূরে একাকী অনুধ্যায়ের আশ্চর্য উদাহরণ, যা আজকের পৃথিবীতে বিরল হতে হতে প্রায় অবিশ্বাস্য হয়ে উঠছে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যা জেনেছিলাম, বাজারচলতি মার্ক্সবাদী পাঠ্যক্রমের অসারতার জায়গা থেকেই তিনি খুঁজতে বসেছিলেন পুঁজির উৎপত্তির কাহিনি। আর তার অন্বেষণেই হাত বাড়ান প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যগুলির দিকে, মহাভারত-রামায়ণ-পুরাণ। পুরাণ-পাঠ এক জটিল পরিস্থিতির সূচনা করে, যেখানে আপতিক সরল অর্থে আখ্যানগুলিকে গাঁজাখুরি মনে হয়। অথচ শিশুপাঠ্য রূপকথা অবলম্বন করে কেন সহস্র বছর উপমহাদেশের তাবড় পন্ডিতরা স্মৃতিচর্চা করে চলবেন, তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পান না। ফলে আরও নিবিষ্ট হন পাঠে। আর, এক পর্যায়ে এসে উপলব্ধি করেন, শব্দ আসলে ইতিহাসও। শব্দের মধ্যে সূত্রায়িত আছে ইতিহাসপাঠের নির্দেশনাও। সেই চাবিটি ঘুরিয়ে তার পরের দু-তিন দশক আমাদের বায়োস্কোপ দেখিয়ে গেছেন কলিম খান। যেমন ধরুন ‘দিশা থেকে বিদিশায়’ গ্রন্থের লক্ষ্মীর পাঁচালিঃ ওয়েলফেয়ার ইকনমির ভূত ভবিষ্যৎ থেকে একটা অনুচ্ছেদ যদি দেখি-
    “নারায়ণ, মৎস ও কূর্ম্মের পর বরাহ রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বরাহ শব্দের অর্থ ‘নিয়োগ করা হয় যাহাকে’। আমাদের পাঁজিতে বলা হয় যে ‘এখন বারাহ কল্প চলছে’। আধুনিকতাবাদীরা হাসেন। পাঁজিটি কতজন পন্ডিতের দ্বারা অনুমোদিত, তার তালিকা দেখেও তাঁরা ভয় পান না। এখন আমরা জেনেছি পাঁজির কথাটি সঠিক- এখনও নিয়োগ প্রথাভিত্তিক সামাজিক প্রকল্পই চলছে। ভূস্বামী মজুর নিয়োগ করেন, কারখানা-মালিক শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করেন ......। নিয়োগ ছাড়া কোনও কাজই হয় না এযুগে এবং এই সমস্ত প্রকারের নিয়োগের পিছনে আর্থিক বিনিয়োগ একান্ত সঙ্গী। প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতি অনুসারে, ঐ উভয় প্রকার বিনিয়োগকে একত্রে ‘বরাহ’ বলে। সেই বিনিয়োগের পরবর্তী যুগের রূপগুলিকে অর্থাৎ ‘বরাহের অপত্য’ বলে বারাহ।”

    এই চাবির তিনি নাম রাখলেন ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থ বিধি। শব্দের মূল হলো ক্রিয়া। শিব শব্দের মধ্যে খুঁজে পেলেন ‘শিখা বহন করা’র ক্রিয়া। ব্যাখ্যা করে ফেললেন কেন ভারতের জাতীয় নায়ক শিব। থেমে থাকলেন না তৎসম বাংলা শব্দেই। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলির বিচ্ছেদের আগেই যে মানবযূথ অজস্র ক্রিয়া করে ফেলেছে। তাই কমোডিটি-ফেটিশ বুঝতে ‘কাম-উদিতি’ -যা থেকে কামনার উদয় হয়, তাই-ই পণ্য এই ধারণা খাপে বসে গেল। এরকম করে সূত্র মেনে ইতিহাস মেলাতে থাকলেন। ইতিহাস সর্বদাই কাহিনি। তাই কলিম খান যে কাহিনি আমাদের সামনে ন্যারেট করলেন, তা পাঠককে আবিষ্ট করে রাখল ঘটনাজালে। এখানে আরও একটা সূত্র এসে যায় যে, কলিম খান মার্ক্সিস্ট। বলতে গেলে ধ্রুপদী মার্ক্সিস্ট, যিনি ভারত-ইতিহাস লিখতে গেলেও সামন্ততন্ত্র শব্দটা লিখে ফেলেন। ফলে তিনি দেখালেন ইতিহাস আসলে অর্থনীতিও। আর, মহাভারত-রামায়ণ-পুরাণ ধরে তাঁর নির্মিত ইতিহাসব্যাখ্যা দেখাতে থাকল পুঁজি আর শ্রমসম্পর্কের বিবর্তনের একটি সম্ভাব্য ধারা। যা সচরাচর আমাদের পাঠে আসে না।

    যিনি কলিম খান পাঠ করেছেন, তিনি ‘সচরাচর’ শব্দটি লেখার পর ভাবতে বসবেন আসলে তিনি কী লিখেছেন? শব্দের স্মৃতিতে যে ইতিহাস, তা ব্যবহারিক অর্থেই বক্তাকে সেই ইতিহাসের অংশ করে দেয়। যেমন ধরুন যে মানুষটা বলেন যে তিনি চাষবাস করে খান, তিনি আসলে এও বলে ফেলেন যে তিনি খাওয়ার জন্যে শুধু চাষ করেন না, বাসও করেন। কৃষি না করলে বনচারী যাযাবর উপজাতির লোক গৃহস্থ হত না। তার গৃহে স্থিত হওয়ার দরকারই ছিল না। শব্দের আলো এইভাবে লোকসমাজের স্মৃতির মধ্যে জ্বলে, সূর্যের মতই সারাদিন আলো দিয়ে যায়।

    কলিম খান আরও কিছু দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছিলেন। প্রথম দুঃসাহস হল যে, তিনি এইসব লিখে ফেলেছিলেন। এইভাবে ইতিহাস পড়া, শাস্ত্র পড়ার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে থাকে নিজের পুরোনো জানা-বোঝার জাড্যতাগুলোকে ঝেড়ে ফেলার দুঃসাহস। তার ওপর সেগুলো পাঁচজনকে পড়ানো! এই দুঃসাহসিক কাজটা করতে পেরেছিলেন, তার একটা বড় কারণ তিনি প্রচন্ড শক্তিশালী লেখক। সমসাময়িক বাংলাভাষার ক্র্যাফটসম্যান-শিপ বিচার করলে তাঁর স্তরের প্রাবন্ধিক খুব বেশি পাওয়া যাবে না। প্রায় অসম্ভব মনে হবে এমন সব কথা, যেমন ধরুন, নারায়ণ আসলে পুঁজি, কৃষ্ণ আসলে ব্ল্যাক মানি, রাম হলেন সেই গণনায়ক যিনি ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ পুরোহিত রাবণকে দমন করে বৌদ্ধযুগের সূচনা করেন কিম্বা culture শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘কুলাচার’- এইসব যুক্তিপরম্পরা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে প্রাবন্ধিককে অসীম শক্তিমান হতেই হয়। আর দ্বিতীয় দুঃসাহসটা হল তিনি একজন বিরাট পাঠক, কিন্তু একদমই স্বশিক্ষিত পাঠক। স্মৃতি-শ্রুতি-ভারতীয় দর্শন থেকে শুরু করে মার্ক্সীয় সাহিত্যের একজন অগ্রগণ্য পাঠক ছিলেন তিনি। আজকের দিনে এই পাঠও বিরল। কিন্তু, দুঃসাহসের ব্যাপার হল, এই পঠনের সবটাই তিনি করেছেন অ্যাকাডেমিক পরিমণ্ডল বা সাংগঠনিক পাঠচক্রের বাইরে। সেই জীবনের সূচনাপর্বে তিনি রড কারখানার শ্রমিক, পরিণতির সময়ে ডিটিপি-কর্মী। অথচ সম্পূর্ণ নিজের উদ্যমে, নিজের তাগিদে ও নিজের নির্দেশনায় পড়ে যাচ্ছেন, ভাষ্য নির্মাণ করছেন আর তা লিখে ফেলছেন। কলিম খানের জীবনাবসানে সেই রূপকথারও শেষ হল।

    তাঁর অবদানকে অ্যাকাডেমিক ওয়ার্ল্ড সেভাবে পাত্তা দেয় নি। রবি চক্রবর্তী ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পন্ডিতও স্পৃহা দেখান নি তাঁর কাজকে অনুবাদ করে বাংলার বাইরে পৌঁছনোর। কলিম খানের বিশ্ববীক্ষা হয়ত প্রশ্নাতীত নয়। কিন্তু প্রশ্ন করার মতন হাতও বেশি ওঠে নি, এ দুর্ভাগ্যের। সৌভাগ্য যে এই আকালে তিনি ‘বিশ্ববীক্ষা’র জন্ম দিয়েছিলেন। সৌভাগ্য যে খোলাবাজারের হাওয়া লেগে বাংলাভাষা যখন শুকিয়ে আসছে তখন তিনি ‘শব্দার্থকোষ’ লিখে ফেলছেন। কিন্তু, আবারও দুর্ভাগ্য যে বিশ্ববীক্ষার জনক হলেও তাঁকে শুধু বাংলাভাষার সেবক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

    আমরা জানি না ইতিহাসবেত্তা কলিম খান তাঁর যোগ্য সমালোচক পাবেন কী না- না কি তিনি শুধুই প্রান্তিক সমাজ থেকে উঠে আসা ‘লিটল ম্যাগাজিনের দার্শনিক’ হিসেবেই ইতিহাস হয়ে গেলেন- যিনি শব্দের শবদেহের উপর বসে সাধনা করেছিলেন, বুঝতে চেয়েছিলেন কীভাবে দক্ষ হইতে অদিতি জন্মে আর অদিতি হইতে দক্ষ!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১২ জুন ২০১৮ | ৩৭৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | unkwn.***.*** | ১২ জুন ২০১৮ ০৭:০৯84539
  • কলিম খানের থিয়োরির মূল অর্থাৎ অক্ষরের নিরুক্তি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। ব্যুৎপন্ন বুঝতে বিশেষত ননফোনেটিক আপাত লজিকহীন ভাষাদের গঠনের যুগ বোঝার বড় চাবিকাঠি। যদিও ধ্বনি সাম্য,বিপর্যয় ও বিভিন্ন অন্যান্য জটিলতার কাছে সে নিয়ম আধুনিক যুগে আমার কাছে অসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরেও যে মনোযোগ ওনার ছিল প্রাপ্য, তা বিরুদ্ধাচার বা খণ্ডন করার মাধ্যমেও উনি যে পেলেন না স্রেফ বিদ্যায়তয়নিক ধারার বাইরে থেকে এককভাবে প্রাচীন শব্দতত্ত্ব নিয়ে এই পরিমাণ ও মাপের কাজের পরেও তা আমাদের লজ্জা! অভিধানের ইত্তিহাসে ক্রিয়াভিত্তিক অভিধানের স্থান দেবে ভবিষ্যৎ। বাদে এবং বিতণ্ডায়, সমর্থনে ও অনুসরণে। অবজ্ঞার ভ্রান্ত অহমিকায় জ্ঞানচর্চার পায়ে কুড়ুল মেরে নয়।
  • Atoz | unkwn.***.*** | ১২ জুন ২০১৮ ১১:০১84540
  • এখন বারাহ ক্ল্প চলছে? নিয়োগ আর বিনিয়োগের কল্প? বারাহ কল্পের পর কী আসবে? নারসিংহ কল্প? বিষ্ণুর বরাহ পরবর্তী অবতারই তো নৃসিংহ। তখন আর নিয়োগ বিনিয়োগ হবে না? কী হবে তখন?
  • দিলীপ ঘোশ | unkwn.***.*** | ১২ জুন ২০১৮ ১১:৫২84541
  • অত্যন্ত জরুরী লেখা। কলিম খান সাহেবের লেখাএ সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ হয়নি আমার। ওঁর লেখালেখির একটি তালিকা এই রচনাটির সঙ্গে সন্নিবেশিত হলে বেশ হতো।
  • dc | unkwn.***.*** | ১৩ জুন ২০১৮ ০১:৪৫84542
  • আচ্ছা কিছুদিন হলো গুরুতে কলিম খান নিয়ে দু একজন কথা বলছেন দেখছি। ইনি কে?
  • modi | unkwn.***.*** | ১৩ জুন ২০১৮ ০৩:২৬84543
  • খুবই মজার লেখা। এনাকে নিয়ে একটা সেই অনুকুল ঠাকুর টই হয় না?
  • বিপ্লব রহমান | unkwn.***.*** | ১৩ জুন ২০১৮ ০৬:২৭84544
  • কলিম খান-এর মূল লেখা পড়ার আগ্রহ বোধ করছি, অনলাইন এ কোথাও কি কিছু আছে?

    "ব্যুৎপন্ন বুঝতে বিশেষত ননফোনেটিক আপাত লজিকহীন ভাষাদের গঠনের যুগ বোঝার বড় চাবিকাঠি।"

    অ-এর সাথে একমত।বাংলা ভাষার গুপ্ত ম্যাজিক যেন এইখানে।

    কলেজে বাংলার ক্লাস নিতেন নরেন বিশ্বাস, তিনি পন্ডিত মানুষ ছিলেন, তার সুখ্যাতির শেষ নাই। তিনি চর্যাপদ পড়াতে গিয়ে এই ম্যাজিক প্রথম ফাঁস করেন।

    যেমন, "দুহিতা"। নরেন স্যার মতে, এর ধ্বনীগত বুৎপত্তি হলো-- দুদ্ধ + হিতা = দুহিতা। মানে, দুধ দোয়ান যিনি। কৃষি যুগের পত্তন হলে প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতায় মেয়েদের কাজ ছিল গরুর দুধ দোয়ানো। কালক্রমে মেয়েদেরই দুহিতা, পরে কন্যা অর্থে দুহিতা কথটি ব্যবহৃত হয়।

    আবার "নখদর্পন" কথাটি এসেছে প্রাচীন যোগ চর্চা থেকে। এর ধ্বনী রূপ-- নখ+দর্পন। তখন নাকি সাধুরা যোগবলে নিজের বুড়ো আঙুলের নখের দিকে তাকিয়েই ভুত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বলতে পারতেন। অর্থাৎ সাধুদের নখের আয়নায় ধরা পড়তো ত্রিকাল। "নখদর্পন" কথার আধুনিক মানে দাঁড়ায়, কোনো বিষয়ে সম্মক ধারণা রাখা।

    আর নরেন স্যার কবিতা নিয়েও ম্যাজিক করেছেন, আবৃতি করতেন অসামান্য! "বনলতা সেন" নিয়ে তার বিশেষ অভিমত আছে, সে কথা আরেকদিন।
  • Atoz | unkwn.***.*** | ১৪ জুন ২০১৮ ১০:৫৭84546
  • এই দেখুন গ্রীক রোমান ট্রোজান ইত্যাদিদের নামটাম সব কেমন :
    সকৃতেশ
    হরিকুলেশ
    মেঘস্থানেশ
    প্রিয়ম
    তন্দুরেশ
    অধীশ
    অঘমর্ষণ
    কৃতমনাস্ত্রা
    কুশেন্দ্রা
    অতলান্তা
    অজাক্ষ
    অর্য্যমাক্ষী

    হি হি হি ঃ-)
  • শক্তি | unkwn.***.*** | ১৫ জুন ২০১৮ ১১:৩০84547
  • কি কঠিন অধ্যবসায়ে প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেছেন কলিম খান ।পরিশ্রমী লেখা শ্রমসাধ্য পঠন দাবি করে
  • এলেবেলে | unkwn.***.*** | ২৩ জুন ২০১৮ ০২:৫৩84548
  • কলিম খান নিয়ে এটি দ্বিতীয় টই যদিও আলোচনা এখানে সেভাবে হচ্ছে না।

    আমি বাংলা ভাষাতত্ত্ব তেমন বুঝি না যদিও ইংরেজি ভাষাতত্ত্বের ফোনিম-মরফিম কোনো এককালে পড়তে হয়েছিল। এখন এ লেখা খানিক অবিচুয়ারি এবং খানিক ভাষাতত্ত্বের প্রাথমিক ছোঁয়া দিয়ে যায়। প্রথমেই যেখানে খটকা লাগে সেটা হল 'শব্দের মূল হলো ক্রিয়া' এই ব্যাপারটা ধরে নেওয়া। আমরা সবাই জানি সব শব্দের রুট বা ধাতু হয় না, অনেক শব্দের ধাতুরূপ আমাদের জানাই নেই। বাংলা ভাষায় প্রচুর কন্নড় শব্দের ছড়াছড়ি, পর্তুগিজ শব্দেরও। সেই শব্দগুলো কোনোটা সরাসরি, কোনোটা সংস্কৃত হয়ে আবার কোনোটা উচ্চারণবিকৃতির মাধ্যমে বাংলা শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করেছে। এখন সব শব্দকেই যদি ক্রিয়াভিত্তিক ফর্মুলার খোপে বসিয়ে দেখতে যাই তবে তা কতদূর ভাষাবিজ্ঞানসম্মত হবে? ধরা যাক, কন্নড় 'ইয়েলক্কি' থেকে বাংলায় আসা 'এলাচ' কিংবা পর্তুগিজ 'Kiranuti' থেকে 'কেরানি' শব্দটির ক্রিয়াভিত্তি কী এবং তা যদি নিরূপিত হয় তাহলে তার রাস্তা যে সঠিক এমন ধারণার পেছনে কোন কারণ বিদ্যমান?

    দ্বিতীয়ত, অবিচুয়ারি হওয়ার দরুণ 'প্রায় অসম্ভব মনে হবে এমন সব কথা, যেমন ধরুন, নারায়ণ আসলে পুঁজি, কৃষ্ণ আসলে ব্ল্যাক মানি, রাম হলেন সেই গণনায়ক যিনি ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ পুরোহিত রাবণকে দমন করে বৌদ্ধযুগের সূচনা করেন কিম্বা culture শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘কুলাচার’- এইসব যুক্তিপরম্পরা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে প্রাবন্ধিককে অসীম শক্তিমান হতেই হয়।' জাতীয় বাক্য লেখা হয়েছে। অবিচুয়ারিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন প্রচলিত রীতি অবশ্যই কিন্তু যিনি অ্যাকাডেমিক আলোচনার প্রতিস্পর্ধী হিসাবে চিত্রিত সেখানে অবিচুয়ারি প্রচল গতে চলবে কেন? প্রাবন্ধিক যে অসীম শক্তিমান সে তো ধরে নেওয়া, প্রমাণিত তো নয়। তিনি তাঁর এই যুক্তিপরম্পরা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁর নিজস্ব বৃত্তে কিন্তু বৃহত্তর ক্ষেত্রে তা প্রামাণ্য সূত্র হিসাবেও তো স্বীকৃত হওয়া দরকার। কিন্তু তার বদলে 'তাঁর অবদানকে অ্যাকাডেমিক ওয়ার্ল্ড সেভাবে পাত্তা দেয় নি। রবি চক্রবর্তী ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পন্ডিতও স্পৃহা দেখান নি তাঁর কাজকে অনুবাদ করে বাংলার বাইরে পৌঁছনোর।' জাতীয় বঞ্চনার তত্ত্ব হাজির করে লাভ কতদূর? অ্যাকাডেমিক ওয়ার্ল্ড তাঁর অবদানকে কেন সেভাবে পাত্তা দিল না তার হদিশ গোটা লেখাটায় নেই। আর প্রতিটা শব্দকে এভাবে ভাঙতে ভাঙতে যাওয়া সত্যিই কি যায়? পটল বা ঝিঙের মধ্যেও লুকিয়ে আছে ক্রিয়াভিত্তিক শব্দের সুপ্ত বীজ - এটার ব্যাখ্যা পাওয়া তবে বড্ড জরুরি হয়ে পড়ে।
  • এলেবেলে | unkwn.***.*** | ২৬ জুন ২০১৮ ০৩:৪৭84550
  • @ss অজস্র ধন্যবাদ। কলিম খানকে নিয়ে আরেকটি টইতে আপনার চমৎকার বিশ্লেষণ পড়েছি। এই টইটা খানিক একটেরে অবস্থানে ছিল। আপনার নজর পড়ায় এটিও সমৃদ্ধ হতে পারে বলে আশা রাখি। কিন্তু দু'টো টইতেই যেটা লক্ষ্যণীয় সেটা হচ্ছে মূল লেখকরা এখনও পর্যন্ত কোনও কথারই জবাব দেননি। সেটা ইচ্ছাকৃত না কি অনিচ্ছাকৃত তা জানি না। গুরুতে লেখা দিলে এবং সে নিয়ে আলোনা হলে লেখকের জবাব দেওয়ার দায়বদ্ধতা থাকে বলে আমার অভিমত। সেটা বারংবার লঙ্ঘিত হলে খারাপ লাগে এই যা।
  • ss | unkwn.***.*** | ২৬ জুন ২০১৮ ০৫:৫০84549
  • হক কতা কৈছেন এলেবেলে। কে কার থেকে কি নিয়েছে ভগাই জানে। ভাষিক দেওয়া-নেওয়ার খেলা বুঝে, কে দাতা আর কেই বা গ্রহীতা, সেসব জেনেবুঝে সামাজিক ইতিহাস লিখতে এলেম লাগে; আপ্ত চলে না, লাগে পাথুরে প্রমাণ, নইলে ভাট।
    'লম্বা সরু কোমর' বলে উঠি যখন, তখন বক্তার বিষয়ী-অবস্থান থেকে ভাষা-উৎস খোঁজার তাগিদ বোধ করিনে।
  • বিদ্যুৎ ব্যানার্জী | unkwn.***.*** | ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:১৮84551
  • যুক্তি পরম্পরা ধরে এগুলে তার উত্তর দেয়ার দায় লেখকের থাকে ।।।কিন্তু অতবাঅপআপ্তবাক্যে বিশ্বাসী কলিম অনুরাগী লেখকদের ধর্মগুরুদের সেই দায় নেই।।।যেমন ঈশ্বর সর্বশক্তিমন এটা প্রমান করার দায় ধর্মগুরুদের থাকে না
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন