খ্যাতিমানেরা কি স্বল্পখ্যাতদের দমিয়ে দেয়? না না, মনুষ্য সম্পর্কিত উপলব্ধি নয়। মানবজমিন নিয়ে চাষবাস রামপ্রসাদ সেন, শীর্ষেন্দুবাবুরাই করুন। এ নেহাতই মিষ্টি-কথা। মানে মিষ্টির কথা।
হালের রসগোল্লা বা ক্ষীরমোহন নিয়ে বাংলা-ওড়িশার দ্বৈরথে কথাটা হঠাৎ মনে হল। বাঙালি মিষ্টি মানেই রসগুল্লা না হয় মিষ্টি দই। বলিউডি তারকারা এ রাজ্যে এলে হোমওয়ার্ক করে আসেন। আর সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘হামি রসগুল্লা আর মিষ্টি দোই বালবাসি।’ যেন রসগুল্লা ছাড়া বাংলায় আর কোনও মিষ্টি মেলে না। ব্যক্তিগত মত, রসগোল্লার জন্য বাঙালির হেদিয়ে মরার প্রাবল্যে অনেক ভাল মিষ্টি সেই ভাবে প্রচার পায়নি। প্রচার আর বিপণনের অভাবে তারা স্থানীয় মিষ্টি হয়েই রয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ হারিয়ে গিয়েছে। শুধু হাতের নাগালের বাইরে থেকে যাওয়ায় বহু বাঙালির রসনা তাদের স্বাদ বঞ্চিত হচ্ছে। সেই রাগেই লেখার শুরুতে খ্যাতিমানদের একটু গাল দিয়ে নান্দীমুখ করে নিলুম।
আমি অবশ্য কিছুটা ভাগ্যবান। নানা কার্যকারণ সূত্রে বেশ কয়েকটি স্থানীয় মিষ্টিকে জিভের নাগালের মধ্যে আনতে পেরেছি। স্থানীয় মিষ্টির কথা যখন হচ্ছে তখন একেবারেই স্থানীয়ভাবে শুরু করা যাক।
হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর ব্লকের বাসিন্দা আমি। এই ব্লকেই আছে মাজু নামে একটি জায়গা। যেখানে পাওয়া যেত খইচুর নামে একটি মিষ্টি। নামটা প্রথম শুনেছিলুম আমাদের ইস্কুলের শিক্ষক গৌরবাবুর কাছ থেকে। পরে গিয়ে যখন খোঁজ নিয়েছিলুম তখন খইচুর তার কৌলিন্য হারিয়েছে। মাজু বাজারে একটা মাত্র দোকানের ময়লা শোকেসে পুরনো অ্যালুমিনিয়ামের ট্রে-শয্যায় শুয়ে হাঁফ ছাড়ছে। অথচ একসময় দারুণ নাম ছিল এই মিষ্টির। সারি সারি দোকান ছিল মাজুতে।
তখন হাওড়া-আমতা রুটে চলত স্যার বীরেন মুখার্জির ছোট রেল। সকলে মার্টিন রেল বলেই জানতেন। ওই রুটেই পড়ত মাজু। হকারেরা দোকানগুলো থেকে খইচুর কিনে ট্রেনে ফেরি করতেন। ১৯৭১ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে গেল মার্টিন রেল। মাজুও স্থানীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। খইচুরও। খদ্দেরের অভাবে দোকানগুলোও বন্ধ হতে শুরু করল। একটি দোকানই মাজুর মিষ্টির ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। শৈল ময়রার দোকান। একবার লেখালেখির সূত্রে গিয়েছিলাম। জেনেছিলাম খইচুরের পাক প্রণালী। ভাল ধানের (নামটা বলেছিলেন দোকান মালিক শৈলবাবুর ছেলে। এখন ভুলে গিয়েছি) খই, গুড়, সুগন্ধী মশলা দিয়ে তৈরি খইচুর। গোল্লা পাকানোর সময়ে কারিগরের হাতের তালুতে ঘি মেঘে নিতেন। খেতে অনেকটা জয়নগরের মোয়ার মতো। ও হ্যাঁ, জয়নগরের মোয়া খেয়েছি। তবে তা কলকাতা থেকে কেনা। সেগুলো জয়নগর জাতক না জগজীবনপুরের, তা জানি নে। খইচুর কি এখনও আছে? জানতে একবার অভিযান চলল আমাদের। জানা গেল, শৈল ময়রা মারা গিয়েছেন। খইচুর তৈরির কৌশলটিও তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁর ছেলেরা এখন তেলেভাজা ভাজতেই বেশি ব্যস্ত। খইচুর করেন বটে। কিন্তু তাতে খইয়ের, গুড়ের সুগন্ধের বদলে কর্পূরের কড়া গন্ধ। বড্ড মনখারাপ হয়ে গেল।
হাওড়ারই আমতায় পাওয়া যায় ভাল পান্তুয়া। বেশ নাম। খেতেও অন্যরকম। মোটেও বাজার চলতি পান্তুয়ার মতো থ্যাসথেসে নয়। ছালটা মোটা। সেই বর্মের গর্ভে এলাচদানা রসে ডুবে ঘাপটি মেরে বসে। এলাকার পুরনো এবং নামী দোকান চরিতদের। নারায়ণ চরিত এবং বিকাশ চরিত জানিয়েছিলেন, তাঁরা পয়সা বাঁচানোর জন্য লোক ঠকান না। অন্য জায়গার পান্তুয়ার মতো নিভু নিভু আঁচে পান্তুয়া ভাজলে তাড়াতাড়ি লাল রং আসে বটে। কিন্তু পান্তুয়া নরম থাকে। একটু কাঁচা কাঁচা ধরনের। আর গনগনে আগুনে ভাজলে চামড়া মোটা হয়। কিন্তু ভেতরটা থাকে সাদা। প্রচলিত আছে, অনেককাল আগের পুরনো কারিগরদের হাতে তৈরি পান্তুয়া কানের কাছে নিয়ে নাড়ালে ভিতরে রসের ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ পাওয়া যেত। এখন সেখানে অনেক নতুন দোকান হয়েছে। কিন্তু চরিতদের দোকান থেকে কিনলেই ভাল জিনিসটা মেলে। ও হ্যাঁ, কিনতে গেলে সকালের দিকে যাওয়াই ভাল। পুরনো দোকানগুলোর পান্তুয়া দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
হাওড়ার বাইরের নামী মিষ্টি প্রথম চেখেছিলুম মালদায়। রসকদম্ব আর কানসাট। মালদার আম ছাড়াও এই দু’টো মিষ্টির বেশ নাম আছে। তখন সদ্য ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’-এর মালদা এডিশনে যোগ দিয়েছি। আমার সঙ্গে একই দিনে যোগ দিয়েছে শৌভিক বাগচী। কলকাতার ছেলে। বেশ খাদ্যরসিক। ও একদিন টেনে নিয়ে গেল ইংলিশবাজারে। আমাদের মেসবাড়িটা ছিল ওল্ড মালদায়। পুরসভা এলাকার একেবারে শেষে। পুরনো মালদা আর ইংলিশবাজারে মাঝে মহানন্দা। মাঝির গোনাগুনতি দুই লগির ঠেলায় সরু খালের মতো মহানন্দা পার হলুম। বাকি মহানন্দার বুক থেকে জল সরে গিয়েছে। পায়ে হেঁটেই পার হওয়া গেল। রাজ্যের এক সময়ের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের (তখন অবশ্য মন্ত্রী হননি) বাড়ির পাশ দিয়ে গিয়ে ইংলিশবাজারের কোন দোকানে গিয়ে ঢুকেছিলুম আর খেয়াল নেই। চৌকো চৌকো, ছোট ছোট করে কাটা খবরের কাগজে (ওখানে খাবারের প্লেট বলতে ওই খবরের কাগজ কাটা) করে টেবিলে এল গায়ে দানাদার চাদর জড়ানো রসকদম্ব। পরে লম্বাটে ক্ষীরের গুঁড়ো মাখা কানসাট। রসকদম্ব দু’রকম হয়। একটু শস্তার যেটা তার উপরে ছড়ানো থাকে চিনির দানা। অনেকটা হোমিওপ্যাথিক চিনির গুলির মতো। আর দামি রসকদম্ব গায়ে জড়ায় পোস্তদানা। রসকদম্বের কেন এমন নাম সেটা বোঝা যায়। চিনি বা পোস্তদানা গায়ে জড়ানো থাকে বলে অনেকটা কদমফুলের মতো লাগে।
কিন্তু কানসাট কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এটি আসলে বাংলাদেশের মিষ্টি। নবাবগঞ্জ জেলায় কানসাট নামে একটি জায়গায় এর জন্ম। পরে কীভাবে মালদায় ঘাঁটি গড়েছে। কাকতালীয়ভাবে, মালদার মতোই কানসাটেও প্রচুর আম হয়। এবং সেই আমেরও বেশ সুনাম। ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’এ আমার তৎকালীন সহকর্মী সুমনা চক্রবর্তী একটা তথ্য জানিয়েছিল। কানসাট এক সময়ে অবিভক্ত বাংলারই অংশ ছিল। মালদার অংশ। তাই দেশ ভাগ হলেও মালদায় মিষ্টিটা রয়ে গিয়েছে।
মালদা যাতায়াতের সময়েই বর্ধমান স্টেশনে চোখে পড়ত ঠেলাগাড়িতে মৈনাকের মতো বসে থাকা সীতাভোগ-মিহিদানার স্তূপ। কিন্তু কোনও দিন চেখে দেখা হয়নি। প্রথম গালে পড়ল ভালকি মাচান বেড়াতে গিয়ে। দ্বিতীয়বারেও ভালকিমাচান। প্রথমবার কিছুটা ঠকেছিলুম। ভালকি থেকে ফেরার পথে বর্ধমান স্টেশনে নেমেছিলুম। আমরা ক’জন। স্টেশন থেকে বেরিয়ে কাছাকাছির দোকান থেকে কেনা হয়েছিল মিহিদানা-সীতাভোগ। তার পরে ট্রেনে চাপতেই খবর এল, কোথাকার স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রশিংয়ের গেট ভেঙেছে। ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত। তখন পুজোর সময়। কিন্তু বেশ গরম। ট্রেন যত দেরি হচ্ছে ব্যাগে বর্ধমানের দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টি তত সেদ্ধ হচ্ছে। সেবার আমাদের সঙ্গে ছিল বন্ধু মিন্টু। ও শ্বশুরবাড়ির জন্যও নিয়েছিল। সেটা কী অবস্থায় কুটুমবাড়ি পৌঁছেছিল সেটা আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আমাদের বাড়ির মিষ্টি প্রায় দম ছেড়ে দিয়েছিল।
মালদার রসকদম্ব |
পরে আবার পুজোর সময়ে ‘যথা ইচ্ছা তথা যা’-এর গ্রুপের সদস্যেরা মিলে গিয়েছিলুম ভালকি মাচান। শুভ, দীপু, বাবলা, ইন্দ্র আর আমি। আবার বর্ধমান স্টেশন। এবার আর ভুল করিনি। ‘এবেলা’র সহকর্মী আরুণির বাড়ি ওখানে। ওকে ফোন করে জেনে নেওয়া হয়েছিল ভাল দোকানের সন্ধান। গণেশ সুইটসের সীতাভোগ, মিহিদানা ভালই ছিল। ট্রেনে বসে দীপু, শুভ, বাবলা আর ইন্দ্র মিলে কাড়াকাড়ি শুরু করেছিল। ইন্দ্র ওজনে-আকারে বেশি। দলের অন্যদের দাবি, কাড়াকাড়িতে ও-ই বেশি লাভবান হয়েছে। বাবলা ছোটখাট। মারামারিতে না গিয়ে আঙুল চাটছিল। আমি তো ভয় পেয়ে আমার বাড়ির জন্য নেওয়া প্যাকেটগুলো কোলে আঁকড়ে ধরে বসেছিলুম।
আমাদের গ্রুপের প্রথম ভ্রমণ বাঁকুড়া। ২০১৪ সালের দুর্গাপুজোর সপ্তমী থেকে শুরু হয়েছিল বাঁকুড়া চষা। খেয়েছিলুম অনেকরকম মিষ্টি। কোনওটা বেসনের কাঠিভাজা গুড়ের পাকে গোল কিন্তু এবড়োখেবড়ো, কোনওটা লুচির মতো গোল, রসে ডোবানো। কিন্তু আসল মিষ্টিগুলোই বাদ পড়ে গিয়েছিল। পড়ে সহকর্মী সৌরভ এনে খাইয়েছিল মণ্ডা। বেলিয়াতোড়ে যামিনী রায়ের বসতভিটেয় ঢুকেছিলুম প্রায় অভিযান করে। তালা দেওয়া গেটের পাঁচিল টপকে। কিন্তু বেলিয়াতোড়ের প্রসিদ্ধ মিষ্টি ম্যাচা চেখে দেখা হয়নি। ম্যাচার জন্য এখনও মনটা মুষড়ে পড়ে।
বন্ধু সুদীপ্তার বিয়েতে গিয়ে খেয়েছিলুম পেনেটির গুঁফো। বন্ধুদের বাড়ি পানিহাটিতেই। কিন্তু ওরা এই মিষ্টির সন্ধান জানত না। খোঁজ দিয়েছিলেন মীনাক্ষী ম্যাডাম। মীনাক্ষী সিংহ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পড়াতেন। এই সেদিন সুদীপ্তাই হোয়াটসঅ্যাপে একটা শর্টফিল্ম পাঠাল। তনুশ্রীশংকরের মেয়ে অভিনীত ছবি, ‘থার্ড আই’। তাতে দেখি, মীনাক্ষী ম্যাডামও অভিনয় করছেন। সুদীপ্তার বাবা ম্যাডামকে নেমন্তন্ন করতে গিয়েছিলেন। পানিহাটিতে বাড়ি শুনে ম্যাডামের স্বামী জানতে চেয়েছিলেন, ‘তাহলে গুঁফো খাওয়াবেন তো?’ সুদীপ্তার বাবা অবাক হয়েছিলেন। মিষ্টির এমন পুরুষালি নাম শুনে। তবে তিনি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গুঁফো বেশ পুরনো যুগের মিষ্টি। এখনকার দোকানদার আর ওই মিষ্টি করেন না। উনি কিন্তু অনেক খুঁজেপেতে, পুরনো দোকানদারকে ধরে বিশেষ অর্ডার দিয়ে মেয়ের দিদিমণির স্বামীর অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। গুঁফো আসলে সন্দেশ। কিন্তু ভিতরে রসালো পদার্থ থাকে। কামড় বসালে সেই রস রসিকের গোঁফে লেগে যায়। গোঁফে লাগে বলেই এমন নাম। পেনেটিতে একসময় প্রচুর বাগানবাড়ি ছিল। গুম্ফবানবাবুর রসনার তৃপ্তিতে এই সন্দেশের জন্ম কিনা, জানা নেই। পরে জেনেছি, গুঁফোর জন্ম নাকি গুপ্তিপাড়ায়। তবে বার্থ সার্টিফিকেট আমার হাতে নেই, এই বলে দিলুম।
একবার গুপ্তিপাড়া, কালনায় ঘুরতে গিয়েছিলুম। গুপ্তিপাড়ায় মাখা সন্দেশের নাম আছে। তবে কালনার মাখা সন্দেশ বেশি বিখ্যাত। আর বিখ্যাত নোড়া পান্তুয়া। নোড়া পান্তুয়া নামটা শোনা ইস্তক মনে হয়েছে, মুখে ঢোকাব কী করে? কালনা বাজারে খুঁজে বের করা হল পুরনো দোকান। বইয়ের দোকানের পাশেই। আমাদের কৌতূহলে দোকানদার হেসে বললেন, ‘নোড়া পান্তুয়া আর কিছুই নয়, ল্যাংচা। নোড়ার মতো দেখতে হয় বলে এমন নাম।’ তবে আকারে মোটেও নোড়ার মতো নয়। সেই আয়ুর্বেদ রোগের ওষুধ বাটার খল-নুড়ির নুড়ির মতো। খেতে দুর্দান্ত। অন্য জায়গার ল্যাংচার থেকে আলাদা। আর মাখা সন্দেশ? সে তো ‘তোমার তুলনা তুমি’। দানা দানা। কিন্তু মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। এই সন্দেশের দাম নাকি প্রতিদিন ওঠানামা করে। ছানার দাম বাড়লে মাখা সন্দেশের দাম বাড়ে। কমলে কমে। আমরা কিনলুম ২০০ টাকা কিলো। তার আগের দিন দাম ছিল ১৮০ টাকা। সন্দেশের দাম শেয়ার বাজারের মতো ওঠানামা করে, এই প্রথম শুনেছিলুম।
জনাইয়ে গিয়ে মনোহরা খাওয়া হয়ে গিয়েছে। মনোহরা মিষ্টিটা কেমন? খেতে অনেকটা কাঁচাগোল্লার মতো। কিন্তু নানা সুগন্ধি মশলা দেওয়া। সেই সুগন্ধ ধরে রাখার জন্য গোল্লার ওপরে চিনির রসের একটা আস্তরণ দেওয়া হয়। আর গোল্লাটা বসে থাকে জমাট চিনির একটা পৈঠায়। সবমিলিয়ে দেখতে অনেকটা ফিফা বিশ্বকাপের মতো। তবে মিষ্টির মুড়ো আর পৈঠার মধ্যে ফাঁক প্রায় নেই। এমন মিষ্টির জন্মরহস্যটা কী? জনাই বাজারে আছে ললিত ময়রার দোকান। বেশ পুরনো। অনেকে কমল ময়রার দোকানও বলেন। দোকানটি চালান ললিতবাবুর নাতি নবকুমার। কমলবাবুর ছেলে। তিনি মিষ্টির জন্মরহস্য জানেন না। তবে জানালেন, এই এলাকাতেই ভীম নাগের বাড়ি। তাঁদের কারও অবদান থাকতে পারে মনোহরার জন্মে। অন্য একটা গল্পও প্রচলিত আছে। সেটা রাজরাজড়াদের কৃতিত্ব দাবি করা গল্পের মতো। যেমন লেডি ক্যানিংয়ের সম্মানে তৈরি হয়েছিল লেডিকেনি। জনাইয়ের ময়রাপাড়ায় যে রাজপ্রাসাদ দেখেছি তারই ফেসবুক পেজে গল্পটি লেখা। রাজার বংশধরেরা এখন কলকাতাবাসী। তাঁদেরই কেউ লিখেছেন, কালীপ্রসাদবাবুর বংশেরই কেউ নাকি তাঁর প্রজা ময়রাদের নতুন ধরনের সন্দেশ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ময়রা বা ময়রারা নতুন সন্দেশ তৈরি করেন। কিন্তু রাজা তখন বাইরে। তিনি ফিরতে ফিরতে সন্দেশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই চিনির আস্তরণের ব্যবস্থা। যাতে ভিতরের মাল মশলা ঠিকঠাক থাকে।
জনাইয়ে আরেকটি মিষ্টি পাওয়া যায়। লম্বা বোঁদে। অনেকে নিখুঁতি বলেন। পাড়ার এক ভাইয়ের আত্মীয়ের বাড়ি জনাই। ও একদিন এনে খাইয়েছিল। বেশ খেতে। একবার কামারপুকুরে গিয়ে খাওয়া হয়েছিল সাদা বোঁদে। রামকৃষ্ণদেবের প্রিয় বোঁদে। কিন্তু আমাদের দলের কেউ কেউ তেমন পাত্তা দিল না সাদা বোঁদেকে। ঝাড়গ্রামে বেড়াতে গিয়ে পেয়েছিলুম তালের গুড়ের রসগোল্লা। স্টেশন থেকে বেরিয়ে নেতাজি মোড়ের ডানদিকে ‘পান্থসখা’ নামে একটা দোকানে। অন্যরকম স্বাদ।
মনোহরা |
বরন্তি বেড়াতে যাওয়ার সময়ে আদ্রা স্টেশনে দেখেছিলুম কেকের ঠেলার মেলা। সারি সারি ঠেলাগাড়ির শোকেসে সাজানো কেক। আমাদের দলের ‘টেস্টার’ ইন্দ্রবাবু দেখেই আনচান শুরু করেছিল। আমি রাজি ছিলুমনি। কিন্তু ফেরার সময় রাতে কিনেই ছাড়ল। তারপর এক কামড় খেয়েই থম মেরে বসে রইল। কী হল রে? উত্তর এল, ‘বড্ড বাজে। মুখেরটাই গিলতে পারছি না।’ পরামর্শ দিলুম, ‘ফেলে দে’। উত্তর এল, ‘কেকওয়ালা কটমট করে তাকিয়ে আছে। ফেললে যদি মারে।’
অমৃত কড়াইয়ের সন্ধানে
আক্ষেপটা পুরোপুরি রাবীন্দ্রিক। ওই ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া…’ মামলা।
আমাদের ক্ষেত্রে অবশ্য কবিতিকার কয়েকটি শব্দ বদলাতে হবে। লিখতে হবে এমনভাবে, ‘চাখা হয় নাই জিহ্বা মেলিয়া/ঘর হতে শুধু মাইল কয়েক উজিয়া…রাবড়ি। আমাদের ঘরের এত কাছে ঘর ঘর রাবড়ি তৈরি হয়, সেটাই জানা ছিল না। অথচ আমরা ওই এলাকা উজিয়েই জনাইয়ে গিয়েছি। মনোহরা খেতে। ভালকি মাচান থেকে ফেরার সময়ে ট্রেন ছেড়ে দিয়ে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা কিনতে নেমেছি। অথচ আঁইয়ায় যাইনি। আঁইয়া আমাদের বাড়ি পাতিহাল থেকে মেরেকেটে ১৫-১৬ কিলোমিটারের বেশি হবে না।
জানা যখন হয়েই গিয়েছে তখন কী কর্তব্য? মঙ্গলবার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা। তারপর বাইক নিয়ে সাঁইসাঁই। আমি আর ইন্দ্র। এখন বেশিরভাই সময়ে আমি আর ইন্দ্রই আমাদের ‘যথা ইচ্ছা তথা যা’ গ্রুপের পাগলা জগাই। প্রতিবন্ধকতা নামের সাত জার্মানের সঙ্গে ফাইট দিচ্ছি। আমাদের অবস্থা এখন ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’-এর সেই বুড়ির মতো। সেই বুড়িটা জিজ্ঞাসা করত না, ‘কে, নিরঞ্জন এলি?’ আমরা জিজ্ঞাসা করি, ‘কী রে শুভ আসছিস?’ (রেলের গার্ডবাবু মোগলসরাই থেকে ছুটি পেয়েছেন কিনা জানার চেষ্টা)। কিংবা ‘কোথায় চললেন দীপুভাই?’ (গবেষক ভাইয়ের এবারের সরেজমিন ক্ষেত্র কোথায়? জব্বলপুর না সিকিম না হিমাচল, তা জানা)। বা ‘বাবলা যাবি?’ (কাজ ফেলে যাওয়ার সময় হবে কি?)।…
আঁইয়া জায়গাটা আমাদের হাওড়া জেলার সংলগ্ন জেলা হুগলিতে। ফুরফুরা-আঁইয়া-গোপালপুর রোড ধরে ছুটল বাইক। কিছুটা খারাপ রাস্তা আর রাস্তার পাশে অনেকটা এলাকা জুড়ে বিদ্যুতের সাবস্টেশনের লোহার খাঁচা ছাড়া দু’পাশ বেশ মনোরম। আঁইয়া পাঁচমাথা মোড়ে এসে মনে হল, একবার স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, রাবড়িপাড়া আমরা ফেলে এসেছি। আবার পশ্চাৎ অপসারণ।
গ্রামটার নাম গাংপুর। এখানে ঘর ঘর বালতি। এই বালতিরা জলাধার নয়, রাবড়িকর। বালতিরাই রাবড়ি করেন। তারপর বালতি করে সেসব কলকাতার দোকানে দোকানে সরবরাহ। একটা ভাল বালতির খোঁজ সেই পাঁচমাথার মোড় থেকেই জেনে এসেছিলাম। তাঁর খোঁজ করা গেল। আসলে গাংপুরের এই জায়গাটি গোপপল্লি। এক গোপবধূই বালতি-কারখানা দেখিয়ে দিলেন।
কারখানায় তখন আরেক গোপবধূ কড়াইয়ে ফুটন্ত দুধে পাখার বাতাস করছেন। তিনি জানালেন, এটিই আমাদের খোঁজ করা কারখানা। তবে তাঁর জবাব ভীষণ কাঠ কাঠ। কেন? কী দরকারের মতো আরও নীরস এবং সন্দেহ প্রকাশক বাক্য বেরোল গোপবধূর স্বরযন্ত্র থেকে। ব্যাপারটা কী? আমাদের কোনও কারণে সন্দেহ করছেন নাকি? বললাম, ‘এই একটু খোঁজখবর নেব?’ জানা গেল, কলকাতা থেকে ফিরে বালতি এখন কাত হয়েছেন। ঘুমোচ্ছেন। আমাদের অনুরোধে গোপবধূ স্বামীকে ডেকে আনতে গেলেন।
কিছুক্ষণ পরে যাঁকে সঙ্গে নিয়ে ফিরলেন তাঁকে দেখে আমরা নটনড়নচড়ন। এ যে আয়ানপতি! দুর্জন অতি কিনা জানি না। তবে নিশ্চিত, এঁর পদবি কখনও বালতি হতে পারে না। চৌবাচ্চাই ঠিকঠাক। কী চেহারা! আর মুখখানাও রাগী রাগী। কাঁচা ঘুম ভাঙানোর জন্য পেটাবেন নাকি? ইন্দ্র ক্যারাটেয় কী একটা যেন বেল্টধারী। কিন্তু শুভ-বাবলা তো সেসব মানতে চায় না। বেল্টের কথা উঠলেই ওকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কীসের বেল্ট? চামড়ার না রবারের?’ ইন্দ্র রেগে গিয়ে চুপ করে থাকে।
গোপমানবও রেগে ছিলেন। মুখ খুলতেই মালুম হল। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার?’ আমার এমনিতেই নরম গলা। লোকে বলে, ন্যাকা গলা। তার উপর চেহারা দেখে ভড়কে গিয়ে গলার স্বর প্রায় আকুতি-কাকুতির পর্যায়ে নেমে এসেছিল। কী আর বলব? স্বরযন্ত্রের বিশ্বাসঘাতকতায় আমার প্রবল ব্যক্তিত্ব পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম, ‘এই ইতিহাসের খোঁজে এসেছি।’ ফুৎকারে আমাদের অনুসন্ধিৎসা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘ইতিহাস-ফিতিহাস আবার কী! বাপ-ঠাকুরদা করত, আমরাও করছি। এর মধ্যে ইতিহাস আবার কোতা?’ ছাত্রাবস্থায় অনুচ্ছেদের সারসংক্ষেপ করা নিয়ে হেব্বি ঝাড় খেতাম। নিয়ম ছিল, সারসংক্ষেপ যেন অনুচ্ছেদের এক তৃতীয়াংশ হয়। কিন্তু আমার কখনই আড়াই তৃতীয়াংশ ছাড়া আঁটত না। বেশি ভাবনা, বেশি কথার অভ্যাস সেই ছেলেবেলা থেকেই! ভদ্রলোক বোধহয় সারসংক্ষেপে অনেক নম্বর পেতেন। আরও একটা ভাবনা মাথায় এল, এই আয়ান ঘোষের রাধাদেবীকে, ইয়ে মানে রাবড়িদেবীকে, যদি কুলচ্যুত, কড়াইচ্যুত আর কী, করতে হয়, তাহলে ইতিহাস দিয়ে হবে না। অঙ্ক লাগবে।
জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনারা কারখানা থেকে রাবড়ি বিক্রি করেন?’ মুখের পেশি কিছুটা নরম হল। গলার স্বর নামল দু’পরত। জানতে চাইলেন, ‘কতটা নেবেন?’ হিসেবনিকেশ করে বললাম, ‘দু’কিলো।’ উনি কারখানায় ঢুকে গেলেন। কিছুক্ষণ খুটখাট করে আবার বেরিয়ে এলেন। তারপর বললেন, ‘বুঝলেন দাদা, আমরা প্রচার চাই না। প্রচারে আমাদের প্রবলেম হয়।’ সোশ্যাল সাইটের বিস্ফোরণের যুগে এ কী কথা! তাহলে যে শুনি, অ্যাড এজেন্সিগুলো গুচ্ছের টাকা কামাচ্ছে শুধু লোকের হয়ে প্রচার করে! কিন্তু ইনি প্রাচীন পদ্ধতিতেই বিশ্বাসী। নিজেরে যে বড় বলে সে বড় নয় (মানে নিজের পয়সায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরাই সেরা, ভুয়ো দাবি)। লোকে যারে বড় বলে সেই বড় হয়। মানে লোকমুখে প্রচারই যথেষ্ট। একজন খেয়ে প্রশংসা করল। আরেকজনকে বলল। সে খুশি হল। এভাবে জ্যামিতিক এবং গাণিতিক হারে প্রচার বৃদ্ধি।
কিন্তু প্রচার চান না কেন? ভদ্রলোকের ভয়, তাঁদের খদ্দের তো সবই কলকাতার বড় বড় দোকান। বেশি প্রচার হলে খদ্দেরা জেনে যাবেন, ওই নামী দোকানগুলো নিজেরা রাবড়ি বানায় না। ফ্র্যাঞ্চাইজিতে চালায়। তাতে দোকানদাররা খেপে গিয়ে প্রচার উন্মুখ রাবড়িকরদের বালতি আর উপুড় করতে না-ও দিতে পারেন। তারপর বললেন, ‘খবরের কাগজে বেরনোর পরে আমাদের একটু প্রবলেম হয়েছে।’
আমরা অভয় দিলাম। উনি কারখানায় ঢুকে গেলেন। ততক্ষণে ইন্দ্র ছবি তোলার অনুমতি পেয়ে গিয়েছে। ও কারখানায় ঢুকে ছবি তুলতে শুরু করল। আর আমি রাবড়ির প্রস্তুতপ্রণালী দেখতে লাগলাম। উনুনে বিশাল দু’টো কড়াই। তাতে ঢিমে আঁচে দুধ ফুটছে। আর সেই গোপবধূ ফুটন্ত দুধে পাখার বাতাসের তোয়াজ করে চলেছেন। যে তোয়াজে প্রেমিকা তাঁর অধরপল্লব আলগা করে মধুক্ষরা স্বর ভাসিয়ে দেন। বধূর বাতাসের তোয়াজে ফুটন্ত দুধও শরীর আলগা করে সর ভাসিয়ে দিচ্ছে। সেই সর কাঠি দিয়ে তুলে কড়াইয়ের গায়ে লাগিয়ে দিচ্ছেন তিনি। দুধ কমবে আর কড়াইয়ের গায়ে সর বাড়বে। মেঝেয় আরও দু’টো কড়াই। তাদের গায়ে পুরু সরের চাদর জমাট হয়ে রয়েছে। কড়াইয়ের তলদেশে ফুটিয়ে ফুটিয়ে কমিয়ে আনা দুধসাগর। সুধাসাগরও বলা যায়।
ভদ্রলোক আবার বেরোলেন। পরীক্ষায় যতই কম নম্বর পাই না কেন, আমার তখনও ইতিহাসের মোহ যায়নি। বালতি পদবির উৎস জানতে চাইলাম। ভদ্রলোক বললেন, ‘বলতে পারব না। শুনেছি, বর্ধমানেও গাংপুর বলে একটা জায়গা আছে। ওখানে বালতিরা আছে।’ অনুমান করলাম, এই এলাকার জমিদার হয়তো নবশায়ক সম্প্রদায়কে গ্রামে জায়গা দেওয়ার সময়ে বর্ধমানের গাংপুর থেকে কোনও বালতিকে এনে বসিয়েছিলেন। কথার মাঝেই ছুরি নিয়ে বেরোলেন গোপবধূ। নিপুণ হাতে কড়াইয়ের গায়ে জমাট সরে ছুরি চালাতে লাগলেন। চালনার শেষে ছুরি দিয়ে উস্কে দিলেন বরফি বরফি কাটা সরের পাপড়িগুলো। সেগুলো ঝরে পড়তে শুরু করল সুধাসাগরে। পাপড়িগুলো সুধাসাগরে ভালমতো চান করার পরে হয়ে উঠবে রাবড়ি। গল্প করতে করতে জেনে গিয়েছি, ভদ্রমহিলা বিয়ের আগে পর্যন্ত রাবড়ি তৈরির কিছুই জানতেন না। এখানে এসেই শেখা। বাড়ির কাজ সামলে উনি রাবড়ি তৈরিতে স্বামীকে সাহায্য করেন।
ততক্ষণে আমাদের রাবড়ি প্যাকেট বন্দি হয়ে গিয়েছে। সেগুলো আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ভদ্রমহিলা বললেন, ‘একটু জল খান।’ জল মানে তো সঙ্গে রাবড়িও। আমি আর ইন্দ্র পরস্পরের দিকে তাকালাম। থার্মোকলের প্লেটে এল গরমাগরম রাবড়ি। তারপর সেসব…। খেতে খেতে শিব্রাম চকরবরতীর কথা মনে পড়ছিল। ইস! লোকটা যদি বেঁচে থাকতেন। মালদার চাঁচলের রাজপুত্র থেকে কলকাতার চাতালের প্রিন্স হয়ে ওঠা লোকটা রাবড়ি ভালবাসতেন খুব। আমার জীবনের অন্যতম আইডল। বেঁচে থাকলে এক টিফিন রাবড়ি সুকরেষু করে আসতাম মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে গিয়ে।…
রাবড়ি |
খাওয়া শেষে ‘ভাল লাগল’, ‘দারুণ’, ‘আবার আসবেন’, ‘বিয়েবাড়িতে অর্ডার থাকলে বলবেন’ ইত্যাদি সৌজন্যমূলক, কেজো বাক্যালাপ এবং বিদায় সম্ভাষণ সেরে আমরা আবার বাইকে।
তখন সন্ধে নেমেছে। হাতে ক্ষীরসমুদ্রের থলি, মুখে পোকা (ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা তখন রাস্তায়। চোখে-মুখে ঢুকছে) আর কানে ইন্দ্রর গজগজানি। ওর দাবি এবং বিশ্বাস, আমাদের কোনও জায়গায় ঘোরা এবং তা নিয়ে লেখার পরে খবরের কাগজ, পত্রিকাগুলো খবর করে। কথাটা কাকতালীয় কি না জানি না। কিন্তু বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সত্যি। ইন্দ্রর রাগ, এই প্রথম আমরা খবরের কাগজ পড়ে কোনও কিছুর সন্ধানে বেরিয়েছি।
এই অমৃত কটাহের সন্ধানে।
মিষ্টিরও ফ্র্যাঞ্চাইজি! করপোরেট যুগে আরো কতো কী হবে!
এপারেও অঞ্চল বিশেষে বিখ্যাত মিষ্টি আছে প্রচুর। শুধু রাজশাহীর রসকদম্ব নয়, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, সিরাজগঞ্জ রাজভোগ, পোড়াবাড়ির চমচম, টাংগাইলের ডামুরকির প্যারা, কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার রসমালাই, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, ঢাকার যাদব ঘোষের রসগোল্লা ইত্যাদি।
এই গল্পের বুঝি শেষ নেই।
দীপক দাস,
টাংগাইলের পোড়াবাড়ির চমচমই, অতি বিখ্যাত। ঘন কালচে রং-এর, কিছুটা ছোট সাইজের, চেপ্টা, লম্বাটে, দুমুখ কিছুটা সরু, খুব কড়া মিষ্টি স্বাদ নয়।
আবার ঘিয়ে রং-এর চমচমও আছে, সেটি ছানার গুড়ো মাখানো, এটি মিষ্টতার দিক থেকে কিছু কড়া স্বাদের।
জেনে অবাক হবেন, পোড়াবাড়ির চমচমের কারিগররা বংশপরম্পরায় বিশ্বাস করেন যে, যমুনা নদীর জল ছাড়া চমচমের মান ভাল হয় না! যদিও যমুনা নদী অনেকটা দূরে, কিন্তু রিকশা ভ্যানে করে বিশাল ড্রাম বা মাটির জালায় করে আনা হয় সেই জল, আর ব্যবহার হয় চমচম তৈরিতে।
এনিয়ে বিখ্যাত সাংবাদিক ফখরে আলম একবার দুর্দান্ত ফিচার লিখেছিলেন বলে মনে পড়ছে।
পোড়াবাড়ির চমচম নিয়ে লেখা একটি পুরনো লেখা রেখে যাই, আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
পুনশ্চঃ এপারে কথিত হিরো আলম ছাগু শ্রেণীর মর্যাদায় বিশেষ বিনোদন, রেসিডেন্স ভাঁড়। তার নামোল্লেখ বগুড়ার দইয়ের জন্য মর্যাদার সাথে যায় না।
ভাল থাকুন।