ইরফান যখন কলেজ ওয়েব সাইটের ব্যাক এন্ডে SQL Injection পাঠিয়ে তাদের ডেটাবেস থেকে রমিলার নাম্বার তুলে এনেছিল, তখন ওর বয়স মোটে সতেরো। কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। স্নাতকের তৃতীয় বছরে বাংলার এক নামজাদা দৈনিক পত্রিকার ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিল সে। আর মাস্টার্সের দ্বিতীয় বছরে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল উপমহাদেশের দুঁদে কোডারদের। কিছু মানুষ থাকে এরকম, এক একটা বৃত্তি যেন ছেলেখেলা হয়ে ওঠে তাদের কাছে। ইরফান তাদেরই প্রতিনিধি। চাকরি ওর পেশা নয়, একটা মুখোশ মাত্র। বাকি সময়টা সে তার রাজারহাটের স্টুডিও ফ্ল্যাটে ফ্রিল্যান্সিং করে। হ্যাকিং সংক্রান্তই নানাবিধ কাজ। ডার্ক ওয়েবে 'লিকড' হওয়া ইনফরমেশন সরিয়ে ফেলা থেকে স্ক্যামারদের চক্কর থেকে বের করে আনা, এমনকি চাইল্ড পর্ণ ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ নির্মূল করা পর্যন্ত। এছাড়া বড় বড় বিদেশী সংস্থা ‘বাগ বাউন্টি প্রোগ্রাম’, ‘পেনিট্রেশন টেস্টিং’ এর কাজে ইরফানদের মতন হ্যাকারদের সাথে চুক্তি করে। বৈধ কাজ, তবে আয়ের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রাখতে হয় অবৈধ খাতে। ট্যাক্সের ভয়ে নয়, বেনামী থাকার সতর্কতায়। ডিজিটাল দুনিয়াতে কে কাকে কিভাবে নজরে রাখছে একথা বলা প্রায় অসম্ভব। অজ্ঞাতকুলশীল থাকাটাই একজন হ্যাকারের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং আবশ্যিক শর্তও। ... ...
দিনটা স্পষ্ট মনে আছে শিখার। বৌদি টাকাটা দিয়ে বলেছিল, অ্যাডভান্স নিয়ে আবার কামাই করা শুরু করো না। শিখা ভালোমানুষের মতো মুখ করে বলেছিল, একদম কামাই হবে না। আমার লোহার শরীর। যদি দু একদিন ছুটি নিই, আনিসুলের মা এসে ঠেকার কাজ চালিয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না। এ তো আর ফ্ল্যাট বাড়ি না যে আনিসুলের মা ঢুকতে পারবে না। বিকেলে শিখারা যখন গপ্পে বসেছিল একসঙ্গে, টিভিতে বারবার ডাক্তার মেয়েটার কথা বলছিল। তার বাপ মা বন্ধু বান্ধব সবাইকে দেখাচ্ছিল। শিখারা মুড়ি মাখা খেতে খেতে সাধারণত এইসময় "বাঁশরির বিয়ে" বা "নয়নতারা" সিরিয়াল দেখে। সেদিন কেউ সিরিয়াল দেখেনি। শিউলির মা বলেছিল, "মেয়েমানুষ ঘরে থাকাই ভালো, কোন দরকার ছিল ডাক্তার হবার?" শিখাও একরকম তাইই ভাবছিল। আর ভাবছিল , ডাক্তার মেয়েটা ডিউটি দিয়ে পেশেন্টদের ঘরেই থেকে গেলে পারত টেবিলে মাথা টাথা দিয়ে ঘুমিয়ে। প্রাণটা বেঁচে যেত। বড় বৌ বলেছিল, ছত্রিশ ঘন্টা ডিউটি মা, শরীরে সয় না। বেচারা ঘুমাতে গিয়েছিল। ... ...
কলেজের কথা মনে পড়তে অরূপের কথা, তার পোর্টিকোর কথা আর মামাদের বা মামাতো ভাইবোনদের কথা মনে পড়ছে কেন কে জানে? মেজোমামার সঙ্গে অরূপকে রিলেট করানো যাবে কি? কী করে যাবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এটা ঘটনা যে মেজোমামার টিবি হয়েছিল কিন্তু সেতো অল্প বয়েসে মারা যায়নি। দীর্ঘদিন পেন্দ্রারোর বলে একটা জায়গায় সেনিটোরিয়ামে ছিল।তখন স্টেপ্টোমাইসিন বেরিয়েছে, সেই ওষুধ আর সেখানকার হাওয়ায় মেজোমামার আর মরা হয়ে ওঠেনি। সে বেঁচে ফিরে এলো তবে ছেড়ে যাওয়া ডাক্তারিটা আর পড়তে ঢুকলো না কোনো কারণে। পরে সে সিনেমা করতে গেল, মানিক ব্যানার্জির পুতুল নাচের ইতিকথা কিন্তু সেটাও হয়ে উঠলো না করা। ... ...
উত্তরগোলার্ধ্বে শীতকাল শেষ হয়ে বসন্তের উঁকিঝুঁকি, দক্ষিণ গোলার্ধ্বে সবে শরৎ। বাইরে তাপমাত্রা এখনো গায়ে ছ্যাঁকা না দিলেও দোকানে জিনিষপত্র কিনতে গেলেই হাতে ছ্যাঁকা খাচ্ছেন গৃহস্থ। রোজার দিন শেষ হয়ে এলো প্রায়, গাজনের সন্ন্যাসীদের এখনো দিন কুড়ি চলবে। দু:খী মানুষ সুখী মানুষ উদাসীন মানুষেরা ঘোরেফেরে দোকান বাজারে। কেউ বাধ্য হয়ে কেউ বা শখে কেউ কেনে ঝোলা উপচিয়ে কেউ বা দেখেশুনে রাখে 'পরেরবার ঠিক দেখিস... ' ... ...