কাজটার মাহাত্ম্য কোথায়? যাকে খুঁজতে যাওয়া সেই পথিক হারিয়ে যায়নি। তিনি বেঁচে আছেন। যদি তিনি মারা যেতেন, আর তাঁর কাগজপত্র উপজাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত, তাহলে আমি কাগজের প্রতিটি টুকরো ও তাঁর আবিষ্কারের প্রতিটি বস্তু , তাঁর হাড়গুলি সহ উদ্ধার করে এনে যাদের কাছে সেসব মূল্যবান, তাঁদের হাতে তুলে দিতাম। যে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, সেটা ততটা মহৎ নয় যতটা বুদ্ধির। আমি তাঁকে অসুস্থ, নিঃস্ব অবস্থায় পেয়েছি; আমার উপস্থিতি দিয়ে আমি তাঁকে আনন্দ দিয়েছি, আমার রসদ দিয়ে আমি তাঁকে স্বস্তি এনে দিয়েছি। ... ...
আমার নিজের অভিযানের দলকে ভেঙে দেওয়ার পর, ডাঃ লিভিংস্টোনের অনুরোধ অনুযায়ী আমি আরেকটা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ইংরেজ অভিযানে যা কিছু ছিল না, সেগুলো আমি মিঃ অসওয়াল্ড লিভিংস্টোনের দেওয়া অগ্রিম অর্থ থেকে কিনেছিলাম। ইংরেজ অভিযানের ভাণ্ডার থেকে পঞ্চাশটি বন্দুকও নেওয়া হল। সেই সঙ্গে ছিল গোলাবারুদ, উপঢৌকনের বাবদে কাপড়। গোগোদের নজরানা দেওয়ার জন্যও, আবার অভিযানের দলের রসদ যোগানোর জন্যও। মিঃ লিভিংস্টোন তাঁর বাবার স্বার্থে কঠোর পরিশ্রম করেছেন ও তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করেছেন। ... ...
মিঃ নিউ এর থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ বিদায় নিলাম। তাঁর মহৎ, উচ্চ মার্গের পেশাযাপনের নিরিখে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারণা উচ্চ। বন্ধুত্বপূর্ণ, সমালোচনার মাধ্যমে তাঁর ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিলে নিশ্চয় তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন। উপরের চিঠি থেকে পাঠক ঠিকই বুঝবেন যে ডসন, হেন এবং নিউ-এর সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, জাঞ্জিবারে বর্তমান খবরাখবর থেকে যে কোন অপরিচিত লোক ধারণা করবেন যে এই তিনজন ভদ্রলোক পরস্পরের দিকে ছুরি উঁচিয়েই আছেন। তবে এসব আপাত বিরোধ, উপরিতলের ঝামেলা, কোনও গভীর শত্রুতা নয়। ... ...
মোম্বাসা থেকে কয়েক মাইল পশ্চিমে, আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে একজন আবাসিক ধর্মপ্রচারক আছেন। রেভারেন্ড চার্লস নিউ। তাঁর থেকে আমি ইংরেজদের এই অভিযানে ধ্বস নামার বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়েছি। যদিও তিনি প্রথমে মৌখিকভাবে তাঁর মন্তব্যগুলি জানিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে সেগুলো আমাকে একটি চিঠির আকারেও লিখে পাঠিয়েছেন। আমি এই সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলো তুলে দিচ্ছি এখানে। ... ...
আমরা ধীরে ধীরে তীরে ভিড়লাম; একটা নৌকায় পা দিলাম, সেটা আমাদের পাড়ে নিয়ে চলল। শীঘ্রই আমার বন্ধু রাজদূতের সান্নিধ্যে হাজির হলাম, তিনি আমাকে জাঞ্জিবারে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন; এর পরে পরেই রেভারেন্ড চার্লস নিউ-এর সঙ্গে পরিচয় হল। তিনি আমার আগমনের এক বা দু দিন আগে ইংরেজ অনুসন্ধান অভিযানের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ... ...
কিরাঙ্গোজি তার শিঙা বাজাতে থাকল, আস্টলফো১-এর জাদু-শিঙ্গার মতন প্রায় বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেয় আর কি! স্থানীয়রা ও আরবরা আমাদের চারপাশে ভিড় করে এলো। আর সেই উজ্জ্বল পতাকা, যার নক্ষত্রগুলি মধ্য আফ্রিকার বিশাল হ্রদের জলের উপর দুলেছিল, যেটি উজিজিতে দুর্দশাগ্রস্ত, নির্যাতিত লিভিংস্টোনের কাছে ত্রাণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল, সে আবার সমুদ্রে ফিরে এলো - ছেঁড়া অবস্থায় তা সত্য, তবে কোন ভাবেই অসম্মানিত নয়- ছিন্ন-ভিন্ন, কিন্তু পূর্ণ-সম্মানে। ... ...
১ মে, কিঙ্গারু হেরা। জানজিবারে একটা প্রচণ্ড ঝড়ের খবর শুনেছি। শুনছি যে প্রতিটি বাড়ি ও জাহাজকে নাকি ধ্বংস করেছে। এমনই রটেছে। আর ওই একই বিধ্বংসী ঝড় বাগামোয়ো ও হুইন্ডের উপর দিয়েও বয়ে গেছে। এমনটাই লোকেরা বলছে। তবে এতদিনে আমি মোটামুটি জানি যে আফ্রিকানরা কেমন বাড়িয়ে কথা বলে। তবে দেশের ভিতর দিকে ঝড়ের যা প্রভাব দেখে এসেছি, তার থেকে মনে হয় এটা গুরুতর ক্ষতি করতেই পারে। শুনলাম যে বাগামোয়োতে নাকি শ্বেতাঙ্গরা এসেছে, আমার খোঁজখবর করতে এই দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের তোড়জোড় চলছে। ... ...
ভোর পাঁচটার সময় আমরা মাকাটা নদী পেরোতে শুরু করি। কিন্তু এর পরেই ছয় মাইল জুড়ে রয়েছে একটি লম্বা হ্রদ, যার জল মৃদুভাবে ওয়ামির দিকে বয়ে গেছে । এখানে জলস্রোতগুলির সঙ্গম: চারটি নদী এক হয়ে গেছে। কিগোংগোর স্থানীয়রা আমাদের সতর্ক করেছিল যে আমরা যেন এখন পেরনোর চেষ্টা না করি, কারণ এখানে আমাদের মাথার ওপরে জল; কিন্তু আমি সবাইকে শুধুমাত্র একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, আর তারপর নিজেদের পথে চলতে শুরু করলাম। ... ...
এতক্ষণে আমরা পাটমহুলিয়া ছাড়িয়ে ফের ১৮ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে পড়ে সার্ভিস রোড ধরে ফুলডুংরি পাহাড়টার কলে। এবার আমাদের আন্ডারপাস গলে ডানদিক বা দক্ষিণ দিকে যেতে হবে। সেইমত শহরটার ভেতরে ঢুকে কলেজ রোড ধরা গেল। রাগিনী আর ঝিলমিল গুগল ট্র্যাক করে আমাদের সোজা রেলের ফ্লাইওভার ক্রস করিয়ে ডানহাতি নামিয়ে দিল তারপর আরও কিছুটা গিয়ে বাঁহাতি রাস্তায় ডাহিগোড়ার সেই প্রবাদ প্রতিম গৌরীকুঞ্জ। ফের ৩৭বছর পর এসে দাঁড়ালাম আরণ্যক স্রষ্টার বাড়ির সামনে। জায়গটার ভোল অনেকটাই পাল্টে গেছে। অবশ্য তার কৃতিত্ব সরকারের নয়। স্থানীয় কিছু মানুষ মিলে গৌরী কুঞ্জ উন্নয়ন সমিতি বানিয়ে নিজেদের উদ্যোগে রক্ষনাবেক্ষন করছেন। ... ...
সমস্ত লোক হাতের কাজ বন্ধ করে দিল। সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা একদিকে বন্যা, আরেকদিকে গুলি দুয়ের চাপে থতমত। সে নিজেই অবাক চোখে পিস্তলটাকে দেখছিল, কিছুক্ষণের মরিয়া চেষ্টার পরে অবশ্য বাক্সটি নিরাপদে তীরে নিয়ে আসতে সফলও হয়েছিল। ভিতরের জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায়, রজব শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। আর কোন কারণেই ফের বাক্সটিকে স্পর্শ না করার হুমকি দেওয়া হল তাকে। তারপর এটা দেখেশুনে পা ফেলা, খুঁতহীন কুলি মাগঙ্গার দায়িত্বে দেওয়া হল। ... ...
আমাদের শিবির থেকে, আমেরিকান কনসালের কাছে চিঠি দিয়ে তিনজনকে জাঞ্জিবারে পাঠিয়েছিলাম, সেই সঙ্গে 'হেরাল্ড'-এর কাছে টেলিগ্রাফ পাঠানোর জন্যও। রাজদূতকে অনুরোধ করেছিলাম যে তিনি যেন একটা-দুটো ছোট বাক্স ভরে কিছুমিছু বিলাসদ্রব্য দিয়ে লোকদের ফেরত পাঠান যা ক্ষুধার্ত, জীর্ণ, ছ্যাতলাধরা মানুষজন তারিফ কুড়াবে। বার্তাবাহকদের বৃষ্টি- অনাবৃষ্টি, নদী- বন্যা কোনো কিছুর জন্যই থামতে বারণ করা হয়েছিল - যাতে তারা তাড়াহুড়ো করল না আর তারা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আমরা তাদের ধরে ফেললাম এমন ঘটনা না ঘটে। প্রবল উৎসাহে "ইনশাআল্লাহ, বানা" বলে তারা রওনা দিল। ... ...
রাস্তায় নেমেই ঘড়ির কাঁটায় নজর দিয়ে দেখে নিয়েছি বেলা তখন দশটা বেজে পনেরো। ঝাড়খন্ড আর বাংলার আকাশ থেকে তখনও ঘূর্ণাবর্তের ছায়া কাটেনি বটে কিন্তু এখন এই মুহূর্তে সোনার মত রোদ গলে পড়ছে। গুগল ট্র্যাকার দেখে ঝিলমিল আর রাগিণী আমাকে জানালো আমাদের হাঁটতে হবে এক কিলোমিটার পথ। মৃত্যুঞ্জয় গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে গেছে, গীয়ার নিউট্রাল করে শব্দহীন গাড়ি নেমে গেছে সুন্দরী দুয়ারসিনির পথে। আমাদের সাথেও রয়েছে চার সুন্দরী। রুশতি আজ জিন্স্ পরেছেন। নীল ফেডেড জিন্সের ওপর লাল আর কালো স্ট্রাইপ দেওয়া সাদা শার্ট। মেয়ে রাগিণী আজ পুরোপুরি কালো পোশাকের আশ্রয় নিয়েছে। স্লিভলেস ঝালর দেওয়া কালো টপ আর পালাজো। রিয়ানের আজ কমলা আশ্রয়। কলার দেওয়া হাঁটু ছাড়ানো কুর্তি আড়াল করেছে কালো চোস্তা পাজামাকে। ঝিলমিল একটা মেরুন পাজামার ওপর কালো টি শার্ট চড়িয়েছে। ... ...
গাঢ় অন্ধকারে ডুবে রয়েছে ভারতের আদিতম রেল স্টেশন। জরুরি কোনও বিদ্যুৎ সংযোগে ছোট্ট স্টেশনটার বাইরে একটা সোডিয়াম ভেপারের আলো পড়েছে টিকিট ঘরের বাইরে টালির চালে বসানো বোর্ডের ওপর। পলিমারের নীল বোর্ডের ওপর সাদা রঙে দেবনাগরী হরফে লেখা গালুডিহি! সেই আলোর এক চিলতে পড়েছে সামনের রেল লাইনের ওপর। অনায়াসে পায়ে হেঁটেই লাইন টপকে আমরা ঢুকে পড়লাম টিকিট ঘরের ভেতর। আমরা দাঁড়িয়ে আছি ১৩৩ বছর আগে তৈরি হওয়া একটি প্রাচীন রেল স্টেশনে! ১৮৮৭ সালে নাগপুর থেকে ছত্তিশগড় রেল লাইন পাততে শুরু করলো বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানী যা শেষ অবধি বিলাসপুর হয়ে আসানসোল অবধি এগিয়ে গেল। আর তার অব্যবহিত পরেই শুরু হল মুম্বাই থেকে কলকাতা অবধি রেললাইন পাতার কাজ ভায়া এলাহবাদ! ১৮৮৭ সাল ধরলে অবশ্য বছরটা ১৩৫ হওয়া উচিৎ কিন্তু আরও ২ বছর কমিয়ে বললাম এই কারনে যে প্ল্যাটফর্মের সেই আদি অকৃত্তিম ওজন মাপার যন্ত্রটা দেখলাম মরছে ধরা দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ... ...
৩০ তারিখে আমরা খোঞ্জে পৌঁছলাম, মাটির থেকে অনেকটা উঁচুতে দৈত্যাকৃতির সিকামোর আর বাওবাব গাছের পাতার বিশাল চাঁদোয়ার কারণে জায়গাটা উল্লেখযোগ্য। খোঞ্জের সর্দার চারটে গ্রামের গর্বিত মালিক, তার থেকে সে পঞ্চাশ জন সশস্ত্র লোককে এক ডাকে হাজির করতে পারে; তবুও ন্য়ামওয়েজির বাসিন্দাদের প্ররোচনায় এই লোকটা আমাদের ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত ছিল, কারণ আমি তাকে মাত্র তিন ডোটি অর্থাৎ বারো গজ কাপড় হঙ্গা হিসাবে পাঠিয়েছিলাম। ... ...
শেষ হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে বু্রুডির ভেতর গড়ে যখন পৌঁছলাম তখন মেলা তুঙ্গে উঠেছে। ভীড় উপচে পড়ে গড়িয়ে পড়বে নীল হ্রদের ভেতরে। ঝুটা মতির গয়নার দোকান সার দিয়ে বসে। ওদিকেই ভীড়টা বেশী বটে কিন্তু পাথরের গয়না, ডোকরাও রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও মধুবনি আর ওড়লি ঘরানার ছাপা শাড়ি। এক সদ্য গোঁফ ওঠা তরুনের হাত ধরে বউ টানছে ওদিকে। বসেছে অসাধারণ বাঁশ আর বেতের ঝুড়ি, ঠাকা, কুলা, মান তো আছেই আর আছে পাথরের বাসন কোসন। কোনও এক পাশ থেকে সাঁওতালি যাত্রার ঘোষনা করা হচ্ছে। মেলা থেকে একটু দুরে হাঁড়িয়া বিক্রি করতে বসেছেন মধ্য বয়সী মহিলার দল। হাঁড়ির মুখে গামছা বেঁধে বাসি ভাত ঘষেই চলেছে তাঁরা। সন্ধ্যা গড়ালেই বাড়বে বিক্রি বাটা। জুয়ার চরকি ঘুরছে বনবন। হাব্বাডাব্বার কৌটায় নড়ছে ঝান্ডি, মুন্ডি, চিড়িয়া আর কাফান। ... ...
১৭ ই মার্চ।—কোয়ালাহ নদীর কাছে পৌঁছালাম, রুবুগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই নদীকে ন্যাহুবা বলে, আরেকজন বলে উন্যাহুহা। মাসিকা ঋতুর প্রথম বৃষ্টিপাত হল এই দিনে; উপকূলে পৌঁছনোর আগেই আমার গায়ে ছাতা পড়ে যাবে। গত বছরের মাসিকা ২৩শে মার্চ শুরু হয়েছিল, আমরা তখন বাগামোয়োতে আর শেষ হল ৩০ এপ্রিল। পরের দিন উন্যামওয়েজি সীমান্তের পশ্চিম তুরায় অভিযান থামালাম আর ২০ তারিখে পূর্ব তুরায় পৌঁছালাম; অল্প কিছুক্ষণ পরেই, একটা বন্দুকের জোর শব্দ শোনা গেল, আর ডাক্তারের চাকর সুসি ও হামওয়দা এসে হাজির, সঙ্গে উরেডি ও আমার আরেকজন লোক। ... ...
১৩ ই মার্চ। লিভিংস্টোনের সাথে আমার থাকার শেষ দিন চলে এল আর পেরিয়েও গেল। শেষ রাতে আমরা একসঙ্গে থাকব, পরের দিনটাকে তো আর এড়ানো যাবে না! যদিও আমার মনে হচ্ছে, যে-ভাগ্য আমাকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সেই ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি। মিনিটগুলো দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে, জমে জমে ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দরজা বন্ধ, আমরা দুজনেই নিজের নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তিনি কি ভাবছেন জানি না। আমারগুলো দুঃখের। আমার দিনগুলো যেন স্বর্গসুখে কেটেছে; নাহলে কেনই বা আমি বিদায়ের ঘণ্টার এগিয়ে আসতে এত গভীর কষ্ট পাব? আমি কি পরের পর জ্বরে ভুগি নি, ইদানীংকালে দিনের পর দিন কাতর হয়ে শুয়ে থাকিনি? ... ...
আমরা এই তথাকথিত ভদ্রলোকেরা যেমন কেন্দাডি পাহাড়টার মাথায় একটা শিবের মন্দির গড়ে তার নাম সিদ্ধেশ্বর পাহাড় করে দিয়েছি তেমনি জাদুগুড়া কিংবা জাদুগড়াকে জাদুগোড়া করে দিয়েছি। এক সময় এই জাদুগুড়া ছিল বন্য হাতিদের আদি বাসস্থান। হাতিদের বাসস্থান অর্থেই জায়গাটার নাম জাদুগুড়া। এই জাদুগুড়া আসলে ঝাড়খণ্ডের যাকে বলে সোনার খনি। আমরা যখন কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করছি তখন বহড়াগুড়ার কাছাকাছি এলাকা থেকে প্রথমে বাঁহাতি তারপর ডানহাতি দুটি পাহাড়শ্রেণী দেখতে পাই। আসলে এই গোটাটাই দলমা পাহাড়শ্রেণী বা দলমা রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। ঝাড়খন্ড প্রবেশের মুখটায় এই দলমা যেন অনেকটা হাঁ করে আমাদের প্রবেশের জায়গা করে দিচ্ছে। ধলভূমগড় থেকে আমরা সেই হাঁ-এর ভেতর ঢুকে যাচ্ছি। ঘাটশিলা থেকে গালুডি হয়ে জামসেদপুর আমরা সেই হাঁ-এর ভেতরেই থাকছি। ... ...
খড়গপুর চৌরঙ্গী থেকে শুরু হয়ে সদ্য শেষ হওয়া ফোর লেনের জাতীয় সড়ক সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। রাস্তা জুড়ে অজস্র আন্ডারপাশ সমস্ত চেনা জায়গাকে আড়াল করে অচেনা করে দিয়েছে। নিমপুরায় পথের পাশেই থাকা সিঙাড়া সিংয়ের ধাবা কিংবা মুন হোটেল এখন পথের নীচে, লোধাশুলির মাহাত হোটেলও নজরে পড়েনি। মোহনপুরের যে ঘন জঙ্গলের জন্য জাতীয় সড়কের ওপর সূর্যের আলো পড়তনা তাও এখন নির্বিরোধী, ফর্সা। ঘাটশিলারও তাই অবস্থা। তারই মধ্যে আন্দাজে দ্বিতীয় আন্ডারপাশের পাশ দিয়েই বেঁকে জাদুগোড়া-মুসাবনির রাস্তা ধরেছি। ৩৭ বছর পরেও এরাস্তা বড় চেনা! ঝাঁপানো বৃষ্টির মধ্যেই একটুও অসুবিধা হয়নি রাস্তা চিনতে। ডানদিকে টুমানডুংরি আর মৌভান্ডারক আর বাঁয়ে হিন্দুস্থান কপার লিমিটেডকে রেখে দিব্যি আমরা উঠে পড়লাম সুবর্নরেখা সেতুর ওপর। ... ...
উপরের (এর আগের কিস্তিতে প্রকাশিত) চিঠিতে আমার আর নতুন করে জোড়ার কিছুই নেই - এটা নিজেই সব বলে দিয়েছে; তবে তখন আমি ভেবেছিলাম যে এটা আমার সাফল্যের সব থেকে বড় প্রমাণ। আমার নিজের কথা বলতে, আমার তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে এক বিন্দুও মাথাব্যথা নেই, একমাত্র যতক্ষণ না যে সংবাদপত্র আমাকে এই অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল, তারা সেই বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে। তবে একথা সত্যি যে তাঁর ভ্রমণের ফলাফল সম্পর্কে কৌতূহল ছিল; তবে, তিনি যখন স্বীকার করেছেন যে তাঁর শুরু করা কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকে আমি স্বেচ্ছায় যতটুকু বলেন তার বেশি এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কুণ্ঠাবোধ করেছি। ... ...