আলোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গয়ে উঠলো নতুন সরকার। তারপর বদলালো বিন্যাস, কি করে তা কারো জানা নেই। গঙ্গার পাড় ও জি টি রোড ধরে ত্রিপলের ঘর বাড়লো। সেখানকার বাস্তুতন্ত্র বদলাবে স্বাভাবিক। জুটমিল কিংবা সুতোকল সবেই পরিবর্তন দোরগোড়ায় এসে ঠেকলো। কীভাবে হঠাৎ করে শিং গজিয়ে ওঠে মাথায়। তারপর আর কে আটকায়? কী দুর্দান্ত সে বেগ। এখন মাহেশে বৃষ্টির রাতে রথের মেলা থেকে ফিরলে রাধারাণীর বাড়ি ফেরা নিশ্চিত মনে হয় না। খটির বাজারে বড়ো করে গেট করা আছে তারপর থেকে রিষড়া অবধি বাংলার বাইরে।সে পথের মাঝে একটুকরো বাঙালি হলো রামকৃষ্ণ আশ্রম। যেই অঞ্চলে রাম নবমীর মিছিল জুড়ে উত্তেজনা, হেডলাইন হতে পারতো শিখরে শ্রীরামপুর। যাগগে, পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা রামমন্দিরে সমস্যা ছিলনা বাঙালি পুজো করে যেত দুবেলা। এখন সেখানে হাবিজাবি ভাষার নামাবলী পরিহিত পন্ডিত (রবিশঙ্কর নয়)। ... ...
কখনও একটা গোটা বাজারকে প্রাণভয়ে দৌড়োতে দেখেছেন? আজ তাই দেখতে হলো। আট থেকে আশি সবাই দৌড়াচ্ছে। দেখলাম এ দৌড়ের কোনও জাত নেই, ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, বয়স নেই, লিঙ্গ পরিচয় নেই – কিচ্ছু নেই, বিশ্বাস করুন কিচ্ছু নেই। থাকার মধ্যে আছে কেবল ভয়, প্রাণের ভয়। সবকটা লোক তেড়ে পালাচ্ছে। ... ...
এই মিছিলের নাম, ‘India March for Science’। কেন এই মিছিল? এ বছর নতুন নয়। ২০১৭ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানসমাজ তাঁদের দেশের সরকারকে বারংবার অনুরোধ করছিল, যেন অবৈজ্ঞানিক চিন্তা, কুসংস্কার, ইত্যাদির, সরকারি খরচে প্রসার রদ করা হয় এবং বিজ্ঞানমনস্কতার চর্চা করা হয়। সরকারি নীতি – তা সে পরিবেশ বিষয়কই হোক, বা স্বাস্থ্যসম্পর্কিত, যেন বিজ্ঞান-অনুসারী ও কল্যাণকামী হয়। ভারতের বিজ্ঞানকুলও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এঁদের দাবি ছিল, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ও প্রচার, সংবিধানের 51(A) ধারা অনুযায়ীই, আমাদের কর্তব্য। এই সব দাবি নিয়ে এবং বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান-আন্দোলনের সমর্থনে ভারতও হাঁটতে থাকে প্রতি বছর, ২০১৭ থেকে ২০১৯। ... ...
২২ জুলাই কলকাতা প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে এক কলঙ্কের দিন। কলকাতার সাংবাদিকদের এক লজ্জার দিন। যাঁদের তোলা ছবি এক একটি ছবি সহস্র বাক্যের সমান, তাঁরা নাকি ‘সাংবাদিক’ নন। হয়তো আরও কিছু সদস্য বৃষ্টি, ব্যস্ততা ঠেলে ভোট দিতে এলে অন্য রকম হত ফলটা। সে আক্ষেপ বারবার ঠেলা দিচ্ছে চিন্তাকে। কিন্তু কলকাতার শতাধিক সাংবাদিক যে মনে করেন, চিত্রসাংবাদিকরা সাংবাদিক নন, সে কথাটা ছুরির মত বিঁধছে। তবে কি ছোঁয়ান্যাপার ভয়ের মত, ক্রমাগত আমরা অন্যকে ছোট করে নিজেকে শুদ্ধ, ভদ্র, সম্মানযোগ্য রাখার চেষ্টা করতে করতে কাণ্ডজ্ঞানকেও ফিনাইল-জলে ধুয়ে ঝেঁটিয়ে বের করে দিয়েছি? ভুলে যাচ্ছি, যোগ্যকে মর্যাদা দিতে না জানার মত অযোগ্যতা আর কিছুতে নেই? ... ...
গতকাল যখন পার্ক সার্কাসের একটি খাবারের দোকানের সামনে জমায়েত হচ্ছিলেন বেশ কিছু এনআরসি বিরোধী কর্মীরা, তখন পুলিশ এসে বলে ওই স্থানে জমায়েত করা যাবে না। কারণ, ওই জমায়েতের নাকি কোনও অনুমতি নেই। অথচ নির্বাচন কমিশনের থেকে প্রাপ্ত অনুমতিপত্র দেখানো হলেও তাঁরা বলেন, অনুমতিতে বলা নেই যে ঐ স্থানে জমায়েত হয়ে মিছিল শুরু করা যাবে। আর কথা বাড়ালে গ্রেপ্তার করা হবে। কোনও কথা বাড়ানোর সুযোগই দেওয়া হল না, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হলো প্রসেনজিত বসু, মনজর জমিল, ইমতিয়াজ আলি মোল্লা, অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ দশজনকে। ঘটনাচক্রে আমরা কয়েকজন তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে। পুলিশ এসে আমাদের বলল, এইখানে জমায়েত করা যাবে না। আমরা উল্টে বললাম, দু’জন মানুষ কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে কথা বলাও অপরাধ নাকি? এটা কি উত্তরপ্রদেশ? ... ... ...
গত ২৬ শে জুলাই থেকে SSKM হসপিটালের নার্সিং স্কুলের সামনে নার্সেস ইউনিটির নেতৃত্বে সারা রাজ্যের নার্সদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। এই আন্দোলনের কারণ কি? অনেকের মুখেই প্রচারিত হচ্ছে, এটা নার্সদের মাইনে বাড়ানোর দাবি। কিন্তু, এটা ভুল। আসল কারণ কি তবে? ... ...
প্রথম কথা লকডাউন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। এই রাজ্যের একটা বড় জনভারের অংশ ইতিমধ্যেই গত লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার উপর রাজ্যের উপর দিয়ে গেছে আম্ফানের মতন বড় দুর্বিপাক। গ্রামে-গঞ্জে দিকে দিকে কোভিড ছড়িয়ে পড়েও রুটি-রুজি মার খেয়েছে অনেকের। তার উপর এই আচমকা একদিনের নোটিসে লকডাউন। পেটের ভাত জুটবে তো সকলের? উপোষী পেটে কোভিড সংক্রমণ কিন্তু প্রায়-নিশ্চিত মৃত্যুর প্রেসক্রিপশন। কেন “দুয়ারে রেশন” এর মত সুবিধার কথা ভাববে না সরকার? আর শুধু তো রেশন নয়, বেঁচে থাকতে লাগে আরও কিছু জিনিস। যেসব মানুষ লকডাউনের চক্করে সাময়িক জীবিকাহারা হলেন বা আগেই জীবিকা হারিয়ে অসহায় বিপন্নতার দরজায়, সেই অজস্র অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত / একদা-জড়িত মানুষদের জন্য কেন সরাসরি সাময়িক আর্থিক ভাতা দেওয়া হবে না? এবং কেন নিশ্চিত করা হবে না যে সেই অর্থ বিপন্ন মানুষ পাবেন ‘দাদা’ না ধরে, কাউকে তার থেকে ভাগ না দিয়ে? ... ...
এই অভিযোগের স্তূপের মধ্যেই নতুন করে কাল ভাইরাল হয়েছে একটি বিস্ফোরক ভিডিও। আলাদা করে তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু নানা সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই সেটি প্রকাশ করে চলেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে উত্তেজিত জনতার জমায়েত, গুলির আওয়াজ, আর্তচিৎকার এবং রক্তাক্ত অবস্থায় কয়েকজনকে পড়ে থাকতে। এখনও পর্যন্ত এর সত্যতা কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। ভিডিওটি যদি সত্যি হয়, তো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার কোনো চিহ্ন সেখানে দেখা যাচ্ছেনা। শোনা যাচ্ছে গুলির আওয়াজ। তা একতরফা। কাঁদানে গ্যাস বা লাঠি চালনার কোনো চিহ্ন নেই। সামান্য বা একেবারেই বিনা প্ররোচনায় গুলি করে মারা হয়েছে সাধারণ ভোটারদের। ... ...
নওদীপ কৌর-এর বিষয়ে নতুন করে বলবার অপেক্ষা রাখে না। গত জানুয়ারি মাসে দিল্লির কৃষক আন্দোলনকে সমর্থনের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেশ বিদেশের বহু বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ গ্রেফতারের বিরোধিতা করেন। দেড় মাস বন্দি থাকার পর ছাড়া পান নওদীপ। তিনি গান পরিবেশনের পাশাপাশি সাহিত্য উৎসবের আলোচনাতেও যোগ দেন, যার শিরোনাম ছিল ‘এক গুচ্ছ বুলেটপ্রুফ কবিতা’। ... ...
শুভেন্দুর মূল তাস, যা বোঝা গেল দুইটি। এক, নন্দীগ্রামে মমতা বহিরাগত। দুই, সাম্প্রদায়িক বিভাজন। এই এলাকায় গত বছর দশেক ধরে আরএসএস-এর নানা সংগঠন তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে একটা 'মুসলিম আগ্রাসন' সংক্রান্ত টেনশন এমনিতেই আছে। শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক সব সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তৃতা সেই আগুনকে আরও উস্কে দিয়েছে। নন্দীগ্রামের জনবিন্যাসের অঙ্কে চোখ বোলালে দেখা যাচ্ছে ওখানে ৩০/৩৪ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে বলে যে আলোচনা চলছে তা একটু বাড়াবাড়ি। নন্দীগ্রাম বিধানসভা গঠিত নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে। ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী এই দুই ব্লক মিলিয়ে মোট ৩৩১,০৫৪ জনসংখ্যার ২৪৪,৬৬৭ জন, অর্থাৎ ৭৩.৯৬% হিন্দু, এর মধ্যে ৫৪,৫০৩ (১৬.৪৬%) জন তপসিলি জাতি ভুক্ত। আর মুসলিম জনসংখ্যা ৮৫,৬৯৬, বা ২৫.৮৮%। ... ...
৫০০ সংগঠনের যৌথ মঞ্চ 'সংযুক্ত কিষাণ মঞ্চ'-এর নেতৃত্ব বাংলার নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলায় বিজেপি-কে একটিও ভোট না দেওয়ার আবেদন করছেন, তাঁরা বলছেন এই ভোটে বিজেপি-কে উচিৎ শিক্ষা দিন। সিঙ্গুরে অনুষ্ঠিত কৃষকদের এই মহাপঞ্চায়েতের সভা পরিচালনা করেন পশ্চিমবঙ্গ কৃষি কো-অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক তেজেন্দ্র সিং বল। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটির কর্মী-সমর্থকেরা। ... ...
কৃষক নেতারা স্পষ্টভবে জানান, কোনও নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে কোথাও যাচ্ছেন না তাঁরা। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কতটা কৃষক আন্দোলন নিয়ে ৫০০ সংগঠনের যৌথ মঞ্চ 'সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা'র অনেকেরই মতপার্থক্য থাকতে পারে। অনেকে অনেক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন, কিন্তু এই আন্দোলনগুলিতে ঐতিহাসিক ভাবে কৃষকরাই অংশ নিয়েছিলেন এবং প্রাণ দিয়েছেন। তাই 'সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা' বাংলার এই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে যাবে। ... ...
"সারা বাংলা জুড়ে যেভাবে ফ্যাসিস্ত আগ্রাসন শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই আমাদের এই লড়াই। আগামী দিনে এই আন্দোলনকে আমরা কলকাতার বাইরে অন্যান্য জেলা ও গ্রামে পৌঁছে দিতে চাইছি প্রবলভাবে। এই দুঃসময়ে আমরা গুটিকয়েক সাংস্কৃতিক কর্মী ফ্যাসিবাদী হামলাকে প্রতিহত করতে পথে নেমেছি।" ... ...
পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার বক্তব্যে প্রাধান্য পায় দাঙ্গা এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা। এই দেশের রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের সচেতন ব্যবহার যে কতটা জরুরি এবং সেই সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সৎ স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কতটা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সে প্রসঙ্গও উঠে আসে। ... ...
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষা রক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষা, আসন্ন নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া গ্রহণসহ বাংলার সংস্কৃতিকে যেভাবে বিষাক্ত করে দেওয়া হচ্ছে তার প্রতিবাদে শহর কলকাতার বুকে এক মিছিলের আহ্বান জানানো হয়েছে মঞ্চের তরফ থেকে। ... ...
সাদা চোখে তথ্য হিসেবে যেটুকু এখনও দেখা যাচ্ছে, বাংলায় যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশ খরচ হবে কলকাতা-শিলিগুড়ি সড়কের জন্য। ... ...
সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওয়ার পত্রিকায় ২৬ জানুয়ারি আইটিও-র কাছে কৃষকমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে সরকারি বয়ানের বিপ্রতীপ এক বয়ান প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদনে, মৃত কৃষকের পরিবারের লোকজনের বয়ান উদ্ধৃত করা হয়, যাঁদের অভিযোগ, মৃতদেহের শরীরে বুলেটের চিহ্ন রয়েছে। ... ...
সিংঘু সীমান্তে কী চলছে আজ, এখন? অকুস্থল থেকে জানাচ্ছেন ছন্দক চ্যাটার্জি। ... ...
যদিও একেবারে মধ্যখানে অটুট জাতীয় পতাকার উড়ান, আর হাজার হাজার হাতে উড়ছে অগুন্তি জাতীয় পতাকা, তবুও পুলিশ লালকেল্লার ঝান্ডা নামাতে আবার তৎপর হল। কিন্তু পতাকাদণ্ডে চড়া কি অতো সহজ ! আদর্শ আর মরণপণ প্রতিজ্ঞা যা পারে, বেতনভুক তা অতো সহজে পারে না। সে চেষ্টায় তাই জলাঞ্জলি দেওয়া হল অল্প সময়েই, আবার সাহায্য এসে পৌঁছবে এ-ই আশায়। ... ...
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ফিরতে হবে এবার। এই আন্দোলন কোনও ভাবেই যে কুলাকের আন্দোলন, বা শিখেদের আন্দোলন নয়, তা এতক্ষণে নিশ্চিত জেনেছি। দেখেছি বিপুল সংখ্যায় ক্ষেত-মজদুররা এসে পৌছেছেন এই আন্দোলনে। কৃষক-ক্ষেতমজদুরদের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন দিল্লির আশে পাশে থাকা শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা। এছাড়াও এঁদের পাশে রয়েছেন পাঞ্জাব-হরিয়ানার গোটা সমাজ, যাঁদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছাড়া এই আন্দোলন চালানো সম্ভব নয়। ... ...