সাংঘাতিক ঘরকুনো হওয়ার সুবাদে মিছিল নগরীর বাসিন্দা হলেও মিছিলের পাশ দিয়ে হাঁটা এই প্রথম, তাও তালেগোলে ঘটে গেছে। খিদে টিদে ভুলে গেলাম। এদিক ওদিক করে গুচ্ছের ছবি, ভিডিও তুলতে তুলতে এলাম। এবং বুঝলাম দলবদ্ধ হওয়ার কি মহিমা! মিছিলের উন্মাদনার অনুভূতি নিয়ে বাংলায় গাদা গুচ্ছ লেখা আছে। লেখা পড়ে অনেকেই নিশ্চই বোঝে, অনুভব করে। স্পষ্টত, আমি একেবারেই বুঝিওনি, অনুভবও করিনি। ফলে, আজকেই আমি বুঝলাম খুব ধীরে হেঁটেও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া কেমন করে ঘটে। হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম হাসি মুখের মানুষদের। ভুভুজেলা, সেই ছেলেবেলার মেলার ঝুমঝুমি জাতীয় অনেক কিছুই বাজছে। স্লোগান নেই। কারণ প্রতিবাদ মুখে নয়, হাতে উঁচিয়ে ছিল। স্লোগান ব্যাপারটা আমি একটু কমই শুনেছি এখানে। বেশি দেখেছি মাইক নিয়ে গান, বাজনা বাজানো। ... ...
১৯৪৬ সাল। আমার মা তখন ভিক্টরিয়া ইনস্টিটিউশন এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কলেজ ছাড়া বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক অল্পই। তাও যাতায়াত পর্দা ঢাকা ঘোড়ার গাড়িতে। আগের বছর মেজ মামা বিয়ে করেছেন এক বাঙালি ক্রিশ্চিয়ান মহিলাকে। চিঠি মারফত শুধু ওই খবরটুকুই দিয়েছেন বাবা মাকে, এবং এ তরফ থেকে "বউ নিয়ে তুমি বাড়ি এসো" জাতীয় কোন চিঠি যায়নি। এর মধ্যে ১৯৪৬ এর আগস্ট মাসে নৌ সেনা মেজো মামার কন্যার জন্মের দশ দিনের মাথায় হঠাৎ যুদ্ধে ডাক পড়ল। স্থির করল কচি মেয়েকে নিয়ে খিদিরপুরে মেজ মামিমার বাপের বাড়িতে ওদের রেখে আসবে । কিন্তু হাওড়া স্টেশনে আসতেই সমস্ত ট্যাক্সি বলল লক্ষ টাকা দিলেও ওদিকে যাবে না। দাঙ্গাকারীরা শুধু ওদের নয়, দুধের শিশু, তার মা কাউকেই ছাড়বে না। মেজমামা তখন "আমার মা কিছুতেই ফেরাবেন না" দৃঢ় বিশ্বাসে শ্যামপুকুরে দাদুর বাড়িতে এসে মেয়ে বউকে রেখে গেলেন। নতুন বউ, নতুন নাতনি সবকিছুর আনন্দ খুবই ক্ষণস্থায়ী হলো, কারণ পরদিনই সকালে বাড়ির সামনে দেখা গেল পাড়ার ছেলেরা, যাদেরকে বড়জোর মস্তান বলা যায়, এতদিন পর্যন্ত গুন্ডা বলা যেত না, তারা একটা মুসলমান মজুর কে পিটিয়ে মারছে। বেচারি লুকিয়ে ছিল তিন দিন, পেটের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে খাবার খুঁজতে বেরিয়েছিল। এই বীভৎসতা সহ্য করতে না পেরে দাদু বললেন অন্তত আমার বাড়ির সামনে থেকে সরে যা তোরা। ... ...
বেশির ভাগ এক তলা বাড়িতে ভরা দিঘড়ি পাল পাড়া আর আগের মতো স্বাভাবিক নয়। এই অঞ্চলটায় আর্থিক অসাচ্ছল্যের চিন্হ চারপাশে। পাল পরিবার বারোই এপ্রিল সন্ধে বেলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে , বাড়ি চড়াও হবার ঘটনার ঘন্টা পাঁচেক বাদে বি এস এফের লোকজন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ফাঁকা বাড়িগুলোর জন্যেই যেন এলাকায় থমথমে ভাব। লোকে ভয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। জেলাটার নাম মুর্শিদাবাদ , জেলাওয়ারি মুসলিম জনসংখ্যায় দেশে বৃহত্তম - দুহাজার এগারোর জনগণনা অনুযায়ী সাতচল্লিশ লক্ষ। এই সংখ্যাটা জেলার মোট জনসংখ্যার দুইতৃতীয়াংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকে ওয়াকফ ( সংশোধনী ) বিল ২০২৫ পাশ করে পাঁচই এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই দেওয়ার পরই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিল। প্রতিবাদীরা পথে - রাজপথে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায় আর সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি করে। আগের দিন সন্ধেতে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুলিশের গুলিতে দুজন মুসলিম যুবক মারাত্মক আহত হয়। তা বলে দিঘড়ি , জাফরাবাদ, রানিপুল আর বেদবনাতে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে বাড়ি আক্রমণ হতে পারে । এখানে , হিন্দু আর মুসলিম এতো গা ঘেষাঘেষি করে থাকে যে না জানা থাকলে বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল কোন বাড়ি হিন্দুর আর কোনটা মুসলিমের । সবাই শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু এই সব বসতিতে বারোই এপ্রিল উন্মত্ত জনতা এসে বেছেবেছে হিন্দু বাড়িগুলোতেই চড়াও হলো। ... ...
আসল কথাটা হলো দৃশ্যগতভাবে রাজনৈতিক ভাবে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দল ঠিক এক ভঙ্গিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা লঙ্ঘন করে মেতে উঠল সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের মন্দির নির্মাণে। অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী, আর দীঘায় মুখ্যমন্ত্রী— কেউ নিজের হাতে পুজো করে, আর কেউ যজ্ঞে আহুতি দিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে— নিজের হিন্দুত্বের প্রমাণ পেশ করলেন। কে কত বড় হিন্দু এ যেন তার প্রমাণ দেওয়ার প্রতিযোগিতা। ভারতের সংবিধান যে রাষ্ট্রকে এইরকম কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দেয় না, দেখা গেল যে, সে কথাটি মনে রাখার দায় কোনও তরফেরই নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মাচারণ করতেই পারেন, কিন্তু সেটা কী প্রকাশ্যে করতে পারেন? অবশ্য এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলতেই পারেন, তিনি শুধু অনুকরণ করেছেন মাত্র। দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যদি করতে পারেন, একই ধরনের কাজ, তিনি তো চুনোপুঁটি মাত্র। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে। যদি সেটাও সত্যি হয়, তাহলেও কিছু বদল হয় কি? অনুষ্ঠানটির ধর্মীয় চরিত্র তাতে পাল্টায় কি? হিন্দু ধর্মের মন্দির কোনও মন্ত্রবলে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন পহেলগাঁও তে ধর্ম দেখে দেখে সন্ত্রাসবাদীরা মানুষকে মেরেছে, যখন তার পরবর্তীতে পুরো দেশ জুড়েই নতুন করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ তীব্র হয়ে উঠছে, যখন ওয়াকফ আইন নিয়ে বিরোধিতা এবং তারপরে মুর্শিদাবাদে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে মুসলমানরা অতি বিপন্ন বোধ করছেন, ঠিক সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্দির উদ্বোধন করে কী বার্তা প্রেরণ করলেন, তা বোঝার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁর নিশ্চিত ভাবেই আছে। যে মুসলমানরা এতদিন তাঁকে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কী মনে হয়েছে, তা একবারও তিনি কি ভেবেছেন? ... ...
অপরাধীকে মহিমান্বিত করার এই প্রবণতা স্বাধীন ভারতের অন্যতম জঘন্য অপরাধ, গান্ধী-হত্যা দিয়েই শুরু হয়েছিল। এটা সর্বজনবিদিত যে তাঁর হত্যার পর সঙ্ঘীরা বাজি ফাটিয়ে উল্লাস করেছিল, মিষ্টি বিতরণ করেছিল। স্বাধীনতার পর কয়েক দশক চুপচাপ থাকার পর নব্বইয়ের দশকের পর থেকে তাঁকে বরেণ্য করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রজ্ঞা ঠাকুর, সাক্ষী মহারাজের মতো বিজেপি সাংসদরা গডসেকে দেশভক্ত বলে অভিহিত করার পরেও দল তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে তারপরেও তাঁরা পার্টির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং বিপুল ভোটে জিতেছেন। ... ...
মুসলিম ধর্মীয় আইন অনুসারে ধর্মীয় কারণে ( মসজিদ ইত্যাদি তৈরির জন্য ) বা জনহিতকর কাজে ( স্কুল, হাসপাতাল তৈরি বা দরিদ্র আতুরের সেবার জন্য ) দান করা সম্পত্তিই হল ওয়াকফ। লিখিত ওয়াকফনামার মারফৎ তো সম্পত্তি দান করাই যায়, এছাড়াও দীর্ঘকাল ব্যবহারের দরুণ ওয়াকফ (বা ওয়াকফ বাই ইউজেস ) এবং ওয়াকফ-আলাল-আউলাদ ( যা কিনা প্রাইভেট ওয়াকফ যার থেকে অর্জিত অর্থ বংশধরদের কাজে লাগবে এবং বংশলোপ পেলে সেই সম্পত্তি ওয়াকফের হাতে চলে যাবে। ) ও মান্য হত। যিনি সম্পত্তি দান করতেন তিনি হলেই ওয়াকিফ। ওয়াকফ ছিল চিরস্থায়ী ব্যবস্থা, তার মালিক হলেন আল্লাহ স্বয়ং। বোঝার সুবিধার জন্য ধরা যায়, এটা অনেকটা আমাদের দেবোত্তর সম্পত্তির অনুরূপ। দেবোত্তর সম্পত্তির ক্ষেত্রে যেমন সেবাইত থাকেন ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা করেন মুতওয়ালি। খালি বিবাদ বিসম্বাদ উপস্থিত হলে দুই আলাদা আলাদা আইনের মাধ্যমে দেবোত্তর ও ওয়াকফ সম্পত্তির মীমাংসা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির পঞ্জীকরণ ও পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের। এটা মুসলমান পার্সোনাল আইনের অংশ। ... ...
ভুয়ো এপিক নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, নির্বাচন কমিশন তখন তাঁদের গাফিলতি ঢাকার উদ্দেশ্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে মিটিং করে ঘোষণা করলো, তাঁরা আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ করিয়ে এই ভুয়ো ভোটার কার্ড সমস্যার সমাধান করতে চায়। প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সমাজ মাধ্যমে এই বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হলো। সংসদের বিরোধী দলনেতা নিজে টুইট করে লিখলেন, অবশেষে নির্বাচন কমিশন তাঁদের অভিযোগকে মান্যতা দিল এবং আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ ঘটানোর মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয়। সঙ্গে অবশ্য তিনি আরও একটা কথা যুক্ত করলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোনও ভোটার যেন বাদ না পড়েন, তা দেখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের এই সংযোগ প্রক্রিয়ায় কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে। ... ...
যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে মহম্মদবাজারের এই কয়লা খনি এলাকা ধরা হচ্ছে, সেখানে আদিবাসী, তফসিলি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস বেশি শুধু নয়, তারাই প্রায় ৯০ শতাংশ। দেওয়ানগঞ্জ, হরিণসিঙ্গা অঞ্চলের তিন হাজার পরিবারের প্রায় ২১ হাজার মানুষ প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্য নিজের এলাকা থেকে উৎখাত হবেন। যদিও তাঁরা বিকল্প বাসস্থান এবং খোলা মুখ খনিতে কাজের সুযোগ পাবেন বলে সরকার জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আবার জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি পাবেন - সরকার এমনও ঘোষণা করেছে। বিবাদ বেঁধেছে এখানেই। সরকারের এই প্রতিশ্রুতিতে গ্রামবাসীদের অধিকাংশের সায় নেই। তাঁরা কোমর বেঁধে নেমেছেন। খোলা মুখ খনিতে কতটা দূষণ হবে, কয়লা উত্তোলন ও পরিবহনের ফলে যে দূষণ হবে, তার জন্য কতটা জমির ফসল নষ্ট হবে, সে তো পরের কথা। মমতার সিঙ্গুর আন্দোলনের যে মূল কথা ছিল, মানুষ না চাইলে সরকার কোনও শিল্প প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না, সেই আপ্তবাক্যই এখন মমতা সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, বিকল্প বাসস্থান - কোনও কথাতেই চিঁড়ে ভিজছে না। মহিলারা সামনে এগিয়ে এসে পুলিশের সামনেই বলছেন, আমরা ভিটে জমি দেব না। তার জন্য দরকারে প্রাণ দেব। এটা আসলে আদিবাসী গাঁওতার সিদ্ধান্ত। ... ...
অনেকে হয়তো ভাবছেন, ভারতের স্থান কত? ২০২৩ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৬২ আর ২০২৪ সালে ভারত ১৫৯তম স্থান পেয়েছে ১৮০টি দেশের মধ্যে। আসলে কোনও দেশের সরকারই গণতান্ত্রিক নয়। ভারতে যদি হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান হয়ে থাকে, তুরস্কে তেমনি মুসলমান মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় আছে, এই সূচকে যাঁদের স্থান ভারতের একটু আগে- ১৫৮। এ যেন কে কত খারাপ হতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্বের বেশীরভাগ সরকার সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে, সেই ইন্টারনেট কারা ব্যবহার করবেন তার সীমা নির্ধারণ করেছে, অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে এবং সংবাদ ও তথ্য বহনকারী বার্তাগুলিকে দমন করেছে। ভিয়েতনামের সাংবাদিকদের বক্তব্য যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে তাকে পদ্ধতিগতভাবে বন্ধ করা হয়েছে৷ চীনে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি সাংবাদিককে আটক করার পাশাপাশি, সরকার বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা চ্যানেলের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ করেছে। অনলাইন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য সেন্সরশিপ এবং নজরদারি নীতি প্রয়োগ করে এবং সংবেদনশীল বা দলীয় লাইনের বিপরীত বলে বিবেচিত তথ্যের বিস্তার সীমিত করেছে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী সাংবাদিকদের অপমান, অসম্মান এবং হুমকি দিয়ে তাদের প্রতি ঘৃণা ও অবিশ্বাসকে উস্কে দেওয়ার কাজটাও করে চলেছে। অন্যরা মিডিয়া ইকোসিস্টেম দখলের আয়োজন করছে, তা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়ার মাধ্যমে হোক, বা বেসরকারি মালিকানাধীন মিডিয়া বন্ধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা অধিগ্রহণের মাধ্যমে হোক। জর্জিয়া মেলোনির ইতালি (৪৬ তম) - যেখানে ক্ষমতাসীন সংসদীয় জোটের একজন সদস্য দ্বিতীয় বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা (এজিআই) অধিগ্রহণ করার চেষ্টা করছেন – তার ফলে ঐ সূচকে এই বছর পাঁচটি স্থান নেমে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই প্রচারের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে চলেছে, এমনকি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার উসকানিও দিচ্ছে। সূচকে মূল্যায়ন করা দেশগুলির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি (১৩৮টি দেশ) বেশিরভাগই রিপোর্ট করেছেন যে তাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা প্রায়শই প্রচার বা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার সাথে জড়িত ছিল। এই সম্পৃক্ততাকে ৩১টি দেশে "পদ্ধতিগত বিষয়" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ... ...
১২ সেপ্টেম্বর, রাত আটটা ছত্রিশ মিনিটে হায়দ্রাবাদের ‘নিজামস ইন্সটিটিউট অফ মেডিকাল সায়েন্সেস’ হাসপাতালে জি এন সাইবাবা প্রয়াত হলেন। শোনা যাচ্ছে গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারের পরবর্তি জটিলতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আপাত ভাবে এটা একটি স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু সত্যিই কি তাই? মাত্র সাত মাস আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় নয় বছরের কারাবাসে নির্মম, অমানুষিক নিপীড়নের কারণে তাঁর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রায় বিকল হয়ে গেছিল। এটা বিস্ময়কর যে ধারাবাহিক এই যন্ত্রণাভোগের পরেও তিনি জীবিত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, “কারাগারে অমানুষিক নিপীড়নের কারণে আমার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। বারবার চিকিৎসার জন্য আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আমার শরীর আজ এক ধ্বংসাবশেষ মাত্র। আপনাদের সম্মুখে আমি জীবিত কিন্তু আমার অঙ্গপ্রতঙ্গ চুরমার হয়ে গেছে।” ... ...
সামগ্রিকভাবে, এদেশের নারী, বিশেষত রূপান্তরকামী, ভিন্ন যৌনতার মানুষদের প্রতি ঘৃণ্য সামাজিক বিরূপতা তথা পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা, নির্যাতনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই সামগ্রিক সামাজিক কণ্ঠস্বর অবশ্যই নতুন রাজনৈতিক বোধের জন্ম দেয়, যা ঠিক ক্ষমতাসীন কোনও দল বিশেষের বিরুদ্ধে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক পরিসরের সমস্ত ক্ষমতান্ধ দলগুলো এবং প্রচলিত পুরুষ আধিপত্যবাদী সমাজ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক, সর্বনিয়ন্ত্রক ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে এক গণ প্রতিবাদ। প্রথাগত রাজনৈতিক দলের বাইরে অজস্র সামাজিক সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার আন্দোলনের সংগঠন, বিশেষত চিকিৎসকদের সংগঠন, এমন কি প্রান্তিক মানুষের আওয়াজ, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে, প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে, সর্বোপরি প্রচলিত সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্বর তুলেছে, প্রায় প্রতিদিনই মিছিল নিয়ে পথের দখল নিচ্ছে। এমন বিসদৃশ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলা গণ বিক্ষোভের আঁচে দিশেহারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে, ধর্ষকের কঠোর শাস্তির জন্য বিধানসভায় বিশেষ একটি বিল (Aparajita Woman and Child (West Bengal Criminal Laws Amendment) Bill, 2024) পাশ করালেন ৩রা সেপ্টেম্বরে। মজার ব্যাপার, তিলমাত্র বিতণ্ডা না করে সভার উভয় পক্ষই সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ করেছে। বিরোধী বিজেপিরও দেখানো দরকার ছিল ধর্ষণ অপরাধ কমাতে তারাও কতো উদগ্রীব। কারণ, সম্প্রতি অসরকারী সংস্থা এডিআর-এর প্রকাশিত তথ্যে, সারা দেশের নিরিখে বিজেপির এমএলএ, এমপিরাই (১৩৪ জনের মধ্যে ৪৪ জন) যে সর্বাধিক নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত। মোদীর সময়কালে (২০১৪ থেকে ২০২২), সারা দেশে নারী নির্যাতনের হার ৩১% বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিলটির প্রয়োজন কি ছিল? ধর্ষণ অপরাধীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না প্রচলিত আইনে, নাকি কঠোর শাস্তির আইনের অভাবেই নিত্য নারী নির্যাতন হচ্ছে রাজ্যে? এর অভাবেই কি সরকারের প্রশাসন নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিরোধে, প্রতিবিধানে সেভাবে কাজ করতে কাজ করতে পারছিল না? প্রশ্নগুলোয় যাওয়ার আগে দেখে নিই কি বিশেষত্ব রয়েছে এই বিলে। ... ...
অভিযোগটা যদি দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোন ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে হয়; কিংবা দেশের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে খেপিয়ে তোলার প্রসঙ্গে হয়, নিঃসন্দেহে তা গুরুতর এবং তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোরভাবে দণ্ডনীয়ও বটে। সুতরাং, দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্র যদি কোন বিষয়কে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসে, তা রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু অনিবার্যভাবে প্রশ্ন উঠবেই, যদি দেখা যায় যে, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার খোলসের আড়ালে রাষ্ট্র যদি দেশের নাগরিক সমাজের বাক্ স্বাধীনতা ও অবাধ মতপ্রকাশের অধিকারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খর্ব করতে উদ্যত হয়। ... ...
আশার কথা, এই মিছরির ছুরির থেকে এবার রাষ্ট্র বেরিয়ে পড়েছে। ন্যায়, অন্যায়, ধর্ম, খাদ্য নানান সংহিতা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্র আর মুখ লুকিয়ে থাকতে রাজি নয়। দেশদ্রোহীদের কড়া হাতে শায়েস্তা করা হবে। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে দেশবিরোধিতার জন্য টেনে নিয়ে চলে যেতে পারে। কারণ রাষ্ট্র মানেই লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট। কিন্তু আগামীদিনের ভারতবর্ষ ঠিক কেমন হয়ে উঠতে পারে? ধরুন আমাদের বুকশেলফ ভরে উঠতে পারে বিভিন্ন সংহিতায়। কী খাব? তার জন্য খাদ্যসংহিতা। কী পরব? তার জন্য পোশাকসংহিতা। কী রকম চুল কাটব? তার জন্য কেশসংহিতা (পুরুষের জন্য একরকম, মেয়েদের জন্য আরেকরকম), কাকে বিয়ে করব? তার জন্য সংহিতা (বিবাহসংহিতা), কার সঙ্গে প্রেম করব? তার জন্য সংহিতা (প্রেমসংহিতা)। এর পর ধীরে ধীরে বেরোবে কাশিসংহিতা, হাঁচিসংহিতা, পাদসংহিতা, মিলনসংহিতা, কন্ডোমসংহিতা, ইত্যাদি প্রভৃতি। ... ...
এবার আমরা দেখে নেই কিভাবে চালু হতে যাওয়া নতুন আইন বিধিতে পুলিশ রাজ কায়েম করা হয়েছে। একটা উদাহরণ নেওয়া যাক, ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বাক স্বাধীনতা, সভা, সমিতির অধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। এই দিকে নজর রেখে সুপ্রিম কোর্ট বারবার ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইন বাতিল করতে বলেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছেন, সরকারের বিরোধিতা মানে রাষ্ট্রের বিরোধিতা নয়। পুরানো আইন অর্থাৎ আইপিসি ১২৪(এ) ধারায় স্থগিতাদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন কাউকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত করা যাবেনা। কিন্তু নতুন আইন অর্থাৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৫০ ও ১৫২ ধারায় কৌশলে রাষ্ট্রদ্রোহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে বক্তব্যে অথবা লিখিত, বা সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দ্বারা, বা বৈদ্যুতিন যোগাযোগ দ্বারা, অথবা আর্থিক উপায় ব্যবহার করে বা অন্যভাবে উত্তেজিত বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করে যাতে বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বা কেউ যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে উৎসাহিত করে যার দ্বারা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা বা অখণ্ডতাকে বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তবে তা উক্ত ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে শাস্তির যেখানে আগে নূন্যতম ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ছিল তা নতুন আইনে নূন্যতম ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে। ... ...
জাতি ও ধর্মের নামে বিভেদ, অত্যাচার আর নৃশংসতা মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোনো নতুন কথা নয়। এরই এক জ্বলজ্যান্ত নজির স্থাপন করেছে মিয়ানমার (সাবেক বার্মা)। সংখ্যাগরিষ্ঠ এই বৌদ্ধ রাষ্ট্র থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঝেঁটিয়ে খেদানোর বর্বরতাও কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এর মূল প্রোথিত আছে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিগত বেশ কয়েক দশকের রাষ্ট্রীয় দমন, বৈষম্য এবং সহিংসতার প্রলম্বিত ইতিবৃত্তে। সর্বহারা রোহিঙ্গাদের পরভূমে পলায়নের সুদীর্ঘ সময়চক্রের ঐতিহাসিক পযালোচনা বড়োই মর্মন্তুদ, বড়োই আতঙ্কময় এবং হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার বর্তমান দশা জানতে গেলে সেই ইতিহাস পর্যালোচনা না করলেই নয়। মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গা প্রস্থানের মর্মান্তিক ঘটনাটি ২০১৭ সালে সংঘটিত হয়েছিল যখন এক ধাক্কায় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল, কিন্তু সেটা আরাকান রাজ্য থেকে ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতাকেই মাত্র চিহ্নিত করে, যখন সামরিক অধিকর্তা জেনারেল নে উইনের সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময় উত্তর আরাকানে তাতমাদো সর্ব প্রথম ‘’অপারেশন ড্রাগন কিং’’ ওরফে ''অপারেশন নাগা মিন'' শুরু করে l ... ...
২১শে অক্টোবর, ২০১০ দিল্লির এলটিজি অডিটোরিয়ামে ‘আজাদি দ্য ওনলি ওয়ে’ নামক আলোচনাসভায় অরুন্ধতী প্রধান বক্তা ছিলেন। সেখানে আরও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন হুরিয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, এসএআর গিলানি, প্রখ্যাত কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও এবং সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ কাশ্মীরের প্রাক্তন অধ্যাপক, শেখ সওকাত হুসেন। প্রথম দুজন ইতিমধ্যে প্রয়াত, ভারভারা রাও অসুস্থ, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জামিনে মুক্ত। সুশিল পন্ডিত নামে এক তথাকথিত সমাজসেবী ওই সভায় ‘প্ররোচনামূলক’ বক্তব্য রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং একটি এফআইআর দায়ের করেন। দীর্ঘ তেরো বছর বাদে দিল্লি পুলিশ ধারা ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৫০৪, ৫০৫ এবং ইউএপিএ ধারা ১৩ অনুযায়ী লেখিকা এবং অধ্যাপক হুসেন কে অভিযুক্ত করেন। তখন দিল্লির লেফট্যানেন্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা শুধুমাত্র আইপিসির অধীনে ধারাগুলি মোতাবেক বিচার শুরু করার অনুমতি দেন। ২০২৪এ বিজেপি/এনডিএ সরকারের তৃতীয় অবতার ভূমিষ্ঠ হবার পর নতুন উদ্যমে গভর্নর, অভিযোগ যিনি বিভিন্ন সময়ে শাসকের ‘হ্যাচেট ম্যান’ হয়ে কাজ করেছেন, ইউএপিএ ধারায় তাঁদেরকে বিচার করার অনুমতি প্রদান করেন। অনেকের মতে এটা একটা আইনি বাধ্যবাধকতা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬৮ ধারা অনুযায়ী যেহেতু তিন বছরের অধিক কোন অপরাধের বিচারের ওপর নিষেধ রয়েছে তাই ইউএপিএ ধারায় লেখিকাকে ফের কাঠগড়ায় টানার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ... ...
বাংলার উদ্বাস্তু প্রধান এলাকাগুলিতে কান পাতলেই শোনা যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে নানা গুঞ্জন। চব্বিশের লোকসভা ভোটে এই অঞ্চলগুলিতে জিততে বিজেপির মাস্টার্স স্ট্রোক এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)। বিজেপি বারবার করে বলছে, সিএএ নাগরিকত্ব প্রদানের আইন, নাগরিকত্ব হরণের নয়। আর সেই আশাতেই বুক বেঁধেছে এক বিরাট সংখ্যক উদ্বাস্তু মানুষ। সিএএ-র বিষয়ে সম্যক ধারণা ছাড়াই। তবে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত সাহ দেশবাসীকে যেভাবে ক্রোনোলজি বুঝিয়েছিলেন, তা থেকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে বিজেপির মনোবাসনা কেবল সিএএ -তে থেমে থাকবার নয়। প্রথমে সিএএ, তারপর এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জী)। আর যার পরিণতি হতে পারে উদ্বাস্তুদের জন্য ভয়ানক। ... ...
মার্চ ও এপ্রিল পরপর দু মাসে দুজন স্বনামধন্য সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী দীর্ঘ কারাবাসের নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৭ই মার্চ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা প্রায় এক দশকের কারাবাসের পর নাগপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। এর প্রায় এক মাস বাদে ভীমা কোরেগাঁও (বিকে) মামলায় ধৃত নারী ও দলিত অধিকার কর্মী, অধ্যাপক সোমা সেন জামিন পান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই দুজনের মুক্তি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, কিন্তু যা ঢের বেশি অস্বস্তিকর তা হচ্ছে তাঁদের গ্রেপ্তার, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিচার বা বিচার না-হওয়া পুরো বিচারব্যবস্থার স্বরূপকে নগ্ন করে দিয়েছে। সাইবাবার কাহিনি বহু চর্চিত, তবুও সেটাকে আমরা ফিরে দেখব এবং কোন কারণে অধ্যাপক সোমা সেন সহ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত অন্যান্যদের এতো বছর কারাবাস করতে হল, এবং কয়েকজনকে এখনো করতে হচ্ছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করব। ... ...
গোকারাকণ্ডা নাগা (জি এন) সাঁইবাবা। পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে শৈশবকাল থেকেই শারীরিকভাবে পঙ্গু। ফলস্বরূপ, পাঁচ বছর বয়স থেকেই হুইল চেয়ার ছাড়া চলাচলে অক্ষম। মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। বিদগ্ধ লেখক। রাষ্ট্রীয় দমন পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী। রাষ্ট্রীয় মদতে সংগঠিত ‘অপারেশন গ্রীনহান্টের’ কট্টর সমালোচক। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রামলাল আনন্দ কলেজের ইংরাজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। বর্তমান বয়স ৫৭ বছর। শারীরিকভাবে ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী এবং প্রায় চলৎশক্তি রহিত। আত্মগোপন করে থাকা মাওবাদীদের লেখাপড়া শিখিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী হিংসাত্মক কার্যকলাপে প্ররোচিত করার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৯ই মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ... ...
ভোটের ঠিক আগে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি কত টাকার ইলেকটোরাল বন্ড কিনেছে এ নিয়ে কয়েকদিন আগেও সর্বস্তরের (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রোনিক) সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে খবর হচ্ছিল। ইলেকটোরাল বন্ড এবং ওষুধ কোম্পানির নিবিড় যোগ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। শিক্ষিত জনতার একটি বড় অংশই, আশা করা যায়, এ বিষয়ে অবহিত। শুধু কিছু তথ্য প্রাসঙ্গিক হবার কারণে যোগ করা যায়। এবং, ভেবে দেখতে হবে, এর সাথে আমাদের দেশের ওষুধনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংযোগ আছে। ... ... হেটেরো গ্রুপসের মতো একই পরম্পরায় ইন্টাস, লুপিন, ম্যানকাইন্ড, মাইক্রোল্যাবস, টরেন্ট ফার্মা, জাইডাস ফার্মা, গ্লেনমার্ক, সিপলা ইত্যাদি কোম্পানির অফিসে প্রথমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের জন্য হানা দেওয়া হয় এবং এরপরে সবাই ইলেকটোরাল বন্ড কেনে কোটি কোটি টাকার। ওষুধের দামের ওপরে এর প্রভাব সহজেই অনুময়ে। দান-খয়রাতি করার জন্য এরা টাকা খরচ করেনা। ওষুধের মার্কেটিং (যার মধ্যে ডাক্তারকে দেওয়া উপঢৌকনও আছে) ইত্যাদির জন্য কোটি কোটি খরচ করে। না করলে হয়তো ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের আরেকটু নাগালের মধ্যে থাকতে পারত। ... ...