১৩
বিতান “একান্ত সহায়”-এ চলে গেছে প্রায় মাস চারেক হতে চলল। প্রথম প্রথম শুভময়ীদেবী খুব দুশ্চিন্তা করতেন। কে জানে ওরা কিভাবে ট্রিট করবে তাঁর বিট্টুকে। আজকাল মার্কেটিংযের যুগ, অ্যাডমিশানের সময় সকলেই বড়ো বড়ো প্রমিস আর স্বপ্ন বিক্রি করে, কিন্তু আসল সময়ে বেরিয়ে পড়ে লুকিয়ে রাখা নখ আর দাঁত। ভাগ্য ভালো “একান্ত সহায়”-এ সে রকম কিছু ঘটেনি। এই মাস চারেক ওদের অ্যাটিটিউড আর পারফর্ম্যান্সে শুভময়ী দেবী খুশি। তিনি খুশি বিট্টু এখন অনেকটাই ভালো আছে, বাড়িতে সে যেরকম খুব ইরিটেটেড থাকত কিংবা মাঝে মাঝেই অস্থির হয়ে উঠত, সেটা এখন আর নেই। তার মতো আরো যে নানান বয়সের ছেলে মেয়েরা ওখানে থাকে, তাদের সঙ্গে গড়ে তুলতে পেরেছে সখ্যের সম্পর্ক।
তিনি আরও খুশী এই ভেবে যে, বিট্টুর ব্যাপারে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তে কোন ভুল হয়নি। তিনি শুনেছেন বিট্টুর বাবা মাস খানেক আগে বিট্টুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল “একান্ত সহায়”-এ। বিট্টুর বাবা কলকাতায় এসেছিল, কিন্তু বাড়িতে আসেনি, কোন খবর দেওয়ারও প্রয়োজন অনুভব করেনি। তাঁর একার দায়িত্বে নেওয়া সিদ্ধান্তে যদি বিট্টুর কোন ক্ষতি হতো, বিতানের বাবা তাঁকে ছেড়ে কথা বলতো না। তাঁর এই সিদ্ধান্ত তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে দু-দুটো সত্যের মুখোমুখি। এক, তাঁর বিট্টু ভালোই থাকবে। দু্ই, বিট্টুর বাবার সঙ্গে তাঁর শীতল সম্পর্কের দূরত্ব বহু যোজন বেড়ে এমন জায়গায় পৌঁছোলো, যেখান থেকে ফেরার রাস্তা আর না খোঁজাই ভাল।
আর কেনই বা ফেরার রাস্তা খুঁজতে যাবেন শুভময়ীদেবী? আজ তিনি জীবনের এক সন্ধিক্ষণে এসে উপস্থিত। যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন তাঁর জীবনের নতুন অর্থ। মনের সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এতদিন যে সম্পর্কটাকে বহন করে চলছিলেন, সেটা একটা অভ্যেস ছাড়া কিছুই ছিল না। মূল্যহীন বদভ্যেস। দায়হীন এক পলকা সুতোয় বাঁধা সেই সম্পর্ক ছিঁড়ে যাওয়াতে তিনি আজ মুক্ত, ভারহীন। তিনি অনেক দিন পর, নতুন করে চিনছেন নিজেকে। এক বদ্ধঘরের সব বন্ধ জানালা হাট হয়ে খুলে গিয়েছে দীর্ঘদিন পরে, তাঁর ঘরের মধ্যে ঢুকছে দমকা বাতাস, প্রচুর আলো আর রোদ্দুর।
সেদিন তিনি স্কুলে বেরোতে পারলেন না। গতরাত থেকে টানা প্রবল বৃষ্টি চলছে, খবর পেলেন এই কম্পাউণ্ডের বাইরে কলকাতার পথঘাট জলে ভাসছে। সকালে টিভি খুলেও দেখলেন, একই খবর, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত এখন হাঁটুভর জলের তলায়। গাড়ি চলছে না। রাস্তায় লোকজন নেই বললেই হয়। স্কুলে বার চারেক ফোনে চেষ্টা করলেন যোগাযোগ করার, রিং হয়ে গেল, কেউ ওঠালো না। তিনজন সহশিক্ষককে ফোন করে জানলেন – কেউ বের হতে পারছে না, কারণ বের হওয়া অসম্ভব। হাল ছেড়ে দিয়ে সোফায় এসে ধপাস করে বসলেন শুভময়ীদেবী। কি করা যায় এখন সারাটা দিন? ছবি এতক্ষণ লক্ষ্য করছিল শুভময়ীদেবীকে, তাঁকে সোফায় বসতে দেখে বলল, “এমা, মামীমা, এখন আবার বসলে কেন? স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাবে না”?
প্রথমে শুভময়ীদেবী বুঝতে পারেননি, সরল মনে উত্তর দিলেন, “এই বৃষ্টিতে যাই কী করে বলতো”? বলার পরই তাঁর মনে হল, ছবির গলায় যেন একটু ঠাট্টার ছোঁয়া! ছবির চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি বলে উঠলেন, “ওরে, মেয়ে আমাকে নিয়ে মজা হচ্ছে”?
ছবি অল্প হেসে উত্তর দিল, “সকাল থেকে উঠে যা করছো, একবার বারান্দা, একবার জানালা। এই টিভি দেখছ। এই ফোন করছো। একটা দিন ইচ্ছে হয় না একটু বেনিয়মে চলতে? বিশেষ করে আজকের মত দিনে? এই বৃষ্টির দিনে কেউ বাইরে বেরোনোর কথা ভাবতে পারে”?
শুভময়ীদেবী অবাক হয়ে ছবির কথা খুব মন দিয়ে শুনছিলেন। এই মেয়েটি তাঁর সংসারে আজ কত বছর ধরে রয়েছে, বছর ছয়েক তো হবেই! অথচ এই মেয়েটি সম্পর্কে তিনি খুব সামান্যই জানেন। কোনদিন মনেও হয়নি, ওর বয়সি একটা মেয়ে, একটা অসুস্থ ছেলের সেবা করে চলেছে রাতদিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। কি বৈচিত্র্যহীন সে জীবনযাপন। হতে পারে, এর বিনিময়ে সে যথেষ্ট অর্থ পেয়েছে, কিন্তু এতদিনেও কি সে তাঁর জীবনের একটা অংশ হয়ে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করে উঠতে পারেনি? আর কেউ না জানুক, শুভময়ীদেবী জানেন, এই মেয়েটি কোনদিন, কোনভাবেই তাঁর বিট্টুর অযত্ন বা অবহেলা করেনি। এই নিষ্ঠার মূল্য কি শুধুই মাস গেলে কিছু টাকা? ছবির পরবর্তী কথায় তাঁর চিন্তায় ছেদ পড়ল।
“কি খাবে বলো, অন্যদিন তো এ সময়ে রুটি সব্জি খেয়ে, স্কুলে দৌড়োও। আজ দুটো পরোটা ভেজে দি? সঙ্গে আলুভাজা? তোমার তো খুব প্রিয়”?
“কেন? তুই রুটি তরকারি বানাস নি? তুই কি করে জানলি যে আজ আমি স্কুলে যাবো না”?
“ভোরে উঠে বৃষ্টি আর মেঘের অবস্থা দেখেই আমি বুঝেছিলাম, আজ কোনমতেই তোমার যাওয়া হবে না”।
“বাবা, তুই তো অনেক কিছু বুঝে ফেলতে পারিস! তবে আর কি? তোর বেনিয়মের পাল্লায় যখন পড়েছি, তাই কর। যা তোর প্রাণ চায় বানা, আর আমাকে খাওয়া”। তাঁর কথা শেষ না হতে, ছবি রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল।
শুভময়ীদেবী তার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলেন – এই মেয়েটি এতদিন ধরে তাঁর চোখের সামনে থেকেও, দৃষ্টি এড়িয়ে গেল কী করে এবং কেন? আমাদের চোখের পিছনে থাকে বোধ। তাঁর সেই বোধ কি আবৃত ছিল? এই যে আজ আকাশ জুড়ে মেঘ আর বৃষ্টি। আকাশের নীল কি নেই? নেই দিনের উজ্জ্বল আলো? আছে। সব আছে, চোখে পড়ছে না, কারণ তারা ঢাকা আছে ঘন মেঘের আবরণে। এতদিন তাঁর বোধ, তাঁর মন ঢাকা ছিল অদৃশ্য কিন্তু ভারি এক পাথরের দেওয়ালে। সে দেওয়াল তাঁর হার না মানা জেদ। অসুস্থ সন্তানকে নির্বিঘ্নে বাঁচিয়ে রাখার জেদ। তাঁর একমাত্র সন্তানের পিতার এবং তাঁর স্বামীর চরম ঔদাসীন্যকে নির্বিষ করার জেদ। বাইরের জগতে নিজের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করার জেদ। অন্য আর কোনদিকে তাকানোর, মনোযোগ দেওয়ার অবকাশই হয়নি তাঁর। আজ যেন সেই দেওয়াল সরে গেল।
দেওয়ালটা সরে গেছে, তিনি এখন মুক্ত। সামাজিক নিয়মে বাঁধা তাঁর চিরজীবনের সঙ্গী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে বহুদূরে। তাঁর সন্তানকেও তিনি নিজের হাতে মুক্তি দিয়েছেন অবুঝ স্নেহের
শিকল ছিঁড়ে। একদিক থেকে দেখলে তিনি কি আজ ভীষণভাবে একা আর নিঃসঙ্গ নন? কিন্তু তাই বা কী করে ভাবছেন তিনি? এই যে আজ ভরা বাদলের সকালে, একটি মেয়ে, তাঁর কথা নিরন্তর ভেবে চলেছে, তার চেয়ে বড়ো সঙ্গী কে হতে পারে আর? যে মেয়েটি তিনি বলার অনেক আগেই বুঝে ফেলেছে, তিনি আজ স্কুলে বেরোতে পারবেন না। কর্মহীন অলস দিনটাকে উদ্যাপনের জন্যে যে মেয়েটি তাঁর ভালো লাগার কথা ভেবে সকাল থেকে ঢুকে পড়ল রান্নাঘরে। এই সবের পিছনে মেয়েটির নিখাদ ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুর কথা তাঁর মনে এল না।
ছবির মুখেই তিনি শুনেছেন, ভীষণ স্নেহশীল ওর বাবার কথা। যার কথা বলতে গেলেই ওর গলা কেঁপে ওঠে। ওর মুখখানা হয়ে ওঠে ছোট্ট এক শিশুর মতো। এই বিশাল জীবনের মেলায় বাবাকে সে হারিয়ে ফেলেছে সারাজীবনের মতো, কিন্তু তাও যেন তাকে খুঁজে চলেছে নিরন্তর। সেই মেয়ে বাল্যের শেষ থেকে আজ যৌবনের পথ চলা শুরু করা পর্যন্ত পরের বাড়িতে কাজ করে চলেছে, নিরাপদ আশ্রয় আর নিত্য আহারের জন্যে। তার এই অসহায়তার সুযোগে তিনি এই মেয়েটিকে নিংড়ে নিয়েছেন প্রত্যেকদিন। বাধ্য করেছেন ওর মন থেকে সমস্ত স্বপ্ন, সমস্ত ইচ্ছেকে নিকিয়ে ফেলতে। বিনিময়ে ছুঁড়ে দিয়েছেন মাসান্তের নির্দিষ্ট টাকা। কাছে বসিয়ে কোনদিন দুটো কথাও কি বলেছেন ওর সঙ্গে? বলেননি। আচমকা মনে পড়ল বলে, তিনি ছবিকে ডেকে বললেন, “হ্যারে, ছবি তোর মাকে বলে দিয়েছিস তো, আজ এই বাদলায়, যেন আর না বের হয়”?
“মা ভোরে বেরিয়েছিল। ট্রেন চলছে না বলে, স্টেসান থেকেই ফিরে গেছে। আর তোমাকে বলা হয়নি মামী, এ বাড়ির কাজ মা আর করে না। আমি ছাড়িয়ে দিয়েছি”।
অবাক শুভময়ীদেবী জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন”?
“বিট্টু চলে গেল তার বোর্ডিংয়ে। মামাও আর থাকে না। রয়েছো তো একমাত্র তুমিই, কি এমন কাজ আছে বলো তো, যে দুজন কাজের লোক রাখতে হবে? আমিই তোমার সব কাজ করে দেব, মাকে তাই বললাম অন্য বাড়ি দেখতে, মা কাজ খুঁজে নিয়েছে। সে বাড়িতে কাজ শুরু করে দিয়েছে। নাও গরম গরম খেয়ে নাও”।
দুটো পরোটা আর গরম আলুভাজা একটা প্লেটে নিয়ে এসে ছবি সোফার সামনের টেবিলে রাখল। খাবারের গন্ধে বড়ো আনন্দ পেলেন শুভময়ীদেবী। পরোটার একটা কোনা ভেঙে কালোজিরে আর কাঁচালংকার ফোড়ন দেওয়া আলুভাজা সমেত মুখে নিয়ে তিনি যেন শুধু জিভে নয়, জীবনেরও নতুন স্বাদ পেলেন। তাঁর চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল। তাঁর মনে হল, কে বলেছে তিনি নিঃসঙ্গ? এমন সঙ্গী থাকলে অনেক দূর লড়ে যাওয়া যায় অনায়াসে, তিনি লড়ে যেতে প্রস্তুত বাকি জীবনটা, যদি ছবি তাঁকে ছেড়ে না যায়।
খুব তৃপ্তি করে, বলা ভাল, তারিয়ে তারিয়ে পরোটা আর আলুভাজা শেষ করলেন শুভময়ীদেবী। ছবি প্রথমে দুটো দিয়েছিল, পরে তাঁর আগ্রহ দেখে আরো একটা পরোটা আর অনেকটা আলুভাজা দিয়ে গেল। খাওয়া শেষে বেসিনে মুখ-হাত ধুয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন আরেকবার। বৃষ্টি চলছে একটানা, মেঘের অবস্থাও একইরকম – ভেজা তুলোর তোষকের মতো ছড়িয়ে আছে গোটা আকাশ জুড়ে। তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে ভাবলেন, ওই মেঘ আজ আর কাটবে না, বৃষ্টিও আজ থামবে বলে মনে হয় না। কিন্তু স্কুলে যেতে না পারার জন্যে তাঁর মনের কোনে যে একটা উদ্বেগের মেঘ জমে উঠেছিল – সেটা কেটে গেল। ভাবলেন, এমন আকস্মিক এক অবকাশের দিনে, মনের মধ্যে অকারণ উদ্বেগ পুষে রাখার কোন মানে হয় না। বরং বারান্দায় একটা চেয়ার টেনে বসে, সারাটা বেলা অলস কাটিয়ে দেওয়া যায়, বাইরের দিকে তাকিয়ে। এ সময় যদি এক কাপ গরম কফি পাওয়া যেত...।
ভাবলেন ছবিকে জিজ্ঞেস করবেন, ঘরে কফি আছে কিনা। আবার ভাবলেন, নাঃ যদি না থাকে, তাহলে এখনই হয়তো এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মেয়েটা বাইরে বেরোবে কফি কিনতে। দরকার নেই ছবিকে ব্যতিব্যস্ত করে। শুভময়ীদেবী ঘর থেকে একটা হাল্কা পিভিসি চেয়ার নিয়ে এলেন। পা ছড়িয়ে আরাম করে বসলেন। আর তখনই তাঁর নাকে এল কফির সুবাস। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, কফির মাগ হাতে দাঁড়িয়ে ছবি।
“তুমি এখন বারান্দাতেই বসবে? তাহলে ঘর থেকে চায়ের টেবিলটা নিয়ে আসি। কফির মাগটা একটু ধরো তো...”। কফির মাগটা হাতে নিয়ে শুভময়ীদেবী যেমন আশ্চর্য হলেন, তেমনি আরও একবার অদ্ভূত ভাল লাগায় তাঁর মনটা ভরে গেল। এক চুমুক কফি খেয়ে তিনি বললেন, “বাঃ পারফেক্ট”। ছবি ঘর থেকে ছোট্ট টি-টেব্লটা আনতে, কফির মাগটা সযত্নে রাখলেন তার ওপর। বললেন, “পড়ে পাওয়া উটকো এই ছুটির দিনটা সত্যিই তুই জমিয়ে দিলি”।
“তুমি যে বলো – সামান্য তেঁতো স্বাদ না থাকলে কফি তোমার পানসে লাগে - লিকার ঠিক আছে তো?”
উজ্জ্বল তৃপ্ত হাসিমাখা মুখে শুভময়ী দেবী বললেন, “বললাম যে, পারফেক্ট”?
ছবি হাসল বলল, “সে তো বললে। তাতে কি আর বোঝা যায়? বোঝা যায় মুখ দেখলে...”।
“আচ্ছা? কী বুঝলি?”
“সে আর তোমার শুনে কাজ নেই”।
“আচ্ছা, বেশ। কিন্তু তোর খাওয়া হয়েছে? পরোটা-আলুভাজা - দুটোই দারুণ হয়েছিল, তাই না?” শুভময়ীদেবী হাসতে হাসতে বললেন।
“পরোটা আমার একদম ভাল্লাগে না। তোমায় কফিটা দিলাম, এই বার খাবো - রুটি-আলুভাজা...”।
“কেন? পরোটা ভাল লাগে না কেন?” অবাক হয়ে শুভময়ীদেবী জিজ্ঞেস করলেন।
“এমনিই...। দুপুরে কী খাবে? আজ বাদুলে দিন – ভেবেছিলাম, মুসুরি ডাল দিয়ে বেশ খিচুড়ি বানাবো…”।
“ভালই তো। বানিয়ে ফেল”।
“নাঃ, ভাজা পাঁপড় আর ডিমভাজা ছাড়া খিচুড়ির মানায়? ঘরে একটাও ডিম নেই”।
“তাতে কি? তোর হাতের রান্নায় ডিমভাজা ছাড়াই খিচুড়ি জমে যাবে”।
ছবি ম্লান হেসে বাইরের দিকে তাকিয়ে লল, “পাঁচমিনিটের জন্যেও বৃষ্টিটা যদি ধরতো – ঝপ করে নিয়ে চলে আসতাম…”,
শুভময়ীদেবী বেশ ধমক দিয়েই বললেন, “চারদিকে জল জমে আছে, ঝমঝমিয়ে টানা বৃষ্টি হচ্ছে… এক পাও বেরোবি না বাড়ি থেকে – বৃষ্টি ভিজে জ্বর বাধালে – কাল থেকে এমন সেবা যত্ন কে করবে আমার?” কফির মাগে হাল্কা চুমুক দিয়ে তিনি তৃপ্তি পেলেন খুব, কপট রাগত স্বরে বললেন, “ভাবছিলাম কফিটা বেশ মৌজ করে খাবো – তা নয় - দিলি মেজাজটাকে বিগড়ে…”। ছবি ভয় পাওয়া ম্লান মুখে তাকাল শুভময়ী দেবীর মুখের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন শুভময়ী দেবী, বললেন, “আরেঃ তোকে বকিনি রে, বোকা মেয়ে – এই দুর্যোগে কাক-পক্ষীও বাসার বাইরে বেরোয় না, আর তুই পাকামি করে যাচ্ছিলি ডিম কিনতে…! বেলা হল, যা খেয়ে নে – তারপর ঘরে যা আছে তাই দিয়েই খিচুড়ি কর – সোনামুখ করে খেয়ে নেব, দেখে নিস”।
.....চলবে...
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।