এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • আমি ডানদিকে রই না আমি বামদিকে রই? 

    Anirban M লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৫৭১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • বামপন্থী কে? একটি দার্শনিক সংজ্ঞা

    গল্পটা শুনেছিলাম বেশ কয়েকবছর আগে, সদ্যপ্রয়াত অধ্যাপক অশোক কোতওয়ালের কাছে। অনেককাল আগে একটা আলোচনা হয়েছিল ইউনিভার্সিটি অফ বৃটিশ কলাম্বিয়াতে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বামপন্থার একটি ন্যূনতম দার্শনিক সংজ্ঞা নির্ধারণ। কারণ মার্ক্সিস্ট বা কমিউনিস্টের সংজ্ঞা অনেক বেশি নির্দিষ্ট করে বলা গেলেও বামপন্থার সংজ্ঞা অনেক বেশি বিস্তৃত এবং সমাজ-সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন। যেমন আমার এক অগ্রজ অর্থনীতিবিদ একবার আমাকে বলেছিলেন যে ভারতে তাঁর অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণকে সবাই দক্ষিণপন্থী বলে ভাবে, কিন্তু আমেরিকা গেলে সেই দৃষ্টিভঙ্গিই হয়ে যায় বামপন্থী। সাধারণভাবে বামপন্থার সঙ্গে লোকে বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, পুনর্বন্টন, এরকম নানাকিছুকে জুড়ে নেয়। এর কোনটাই ভুল নয়। কিন্তু এগুলো সবই হল বামপন্থী দর্শনের ব্যবহারিক প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন কোন সংজ্ঞা কি ভাবা যায় যার থেকে এই ধরণের ব্যবহারিক নীতিগুলিকে বামপন্থী ছাতার তলায় আনা যায়? এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, এই ধরণের সংজ্ঞা নির্ধারণের সমস্যা হল যে সংজ্ঞাটি যত নির্দিষ্ট হবে তত কম লোক তার আওতায় আসবে এবং সামাজিক ভাবে বামপন্থী বলে ভাবা হয় এরকম লোকজন তার আওতার বাইরে চলে যাবে। অন্যদিকে, সংজ্ঞাটি যত প্রশস্ত হবে তত সামাজিক ভাবে দক্ষিণপন্থী মনে করা হয় যাদের তারাও এর আওতায় এসে যাবে। এর কোনটাই কাম্য নয়।
           এই আলোচনার ফলে যে সংজ্ঞাটি বেরিয়ে আসে সেটির তাৎপর্য বেশ সুদূরপ্রসারী। সেই সংজ্ঞায় বলা হয় যদি আপনি মনে করেন যে কোন মানুষের শিক্ষা, রোজগার (অর্থাৎ জীবনে তার সাফল্য বা ব্যর্থতা) ইত্যাদি মোটের ওপর এমন সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাহলে আপনি বামপন্থী। অন্যদিকে আপনি যদি মনে করেন যে একজন মানুষর সাফল্য বা ব্যর্থতা মূলত তাঁরই কর্মফল, তাহলে আপনি দক্ষিণপন্থী। ব্যাপারটা আরেকটু ভেঙ্গে বলা যাক। যদি কেউ মনে করেন যে গরিব লোক গরিব কারণ তাঁর জন্ম হয়েছিল আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারে (বা সেরকম সামাজিক পরিস্থিতিতে) তাহলে তিনি বামপন্থী। এক্ষেত্রে গরিবরা গরিব কারণ তারা দুর্ভাগ্যের শিকার – তাঁদের জন্ম হয়েছে খারাপ আর্থ-সামাজিক অবস্থানে। তাই ভর্তুকি মানে হল সৌভাগ্যবানদের (অর্থাৎ ধনীদের) টাকায় দুর্ভাগাদের সাহায্য করা যার একটা নৈতিক আবেদন আছে। অন্যদিকে কেউ যদি মনে করেন যে গরিব লোক গরিব কারণ সে অলস, সেক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে গরিবলোককে সাহায্য করার মানে হল পরিশ্রমী লোকেদের টাকায় অলসদের সাহায্য করা যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। একটু ভেবে দেখলে বুঝবেন এই সংজ্ঞা শুনতে যতই সরল লাগুক না কেন তার তাৎপর্য আসলে বেশ গভীর। ভর্তুকি থেকে মুক্তবাণিজ্যের বিরোধিতা – বামপন্থী বলে পরিচিত সব নীতিই আসলে এই দার্শনিক অবস্থান থেকে পাওয়া যেতে পারে। এখন চারদিকে যে ফ্রিবিস (Freebies) বিরোধিতা চলছে তার পেছনেও অন্তঃসলিলা হয়ে রয়েছে এই দক্ষিণপন্থী দর্শন যে যারা ভর্তুকির সুবিধাভোগী তারা আসলে অলস এবং সরকারি অনুদান তাদের সেই আলস্যকেই উৎসাহ দিচ্ছে।

    বামপন্থী কে? একটি ব্যবহারিক সংজ্ঞা

       ওপরের গল্পটা শুনেছিলাম বেশ কিছু বছর আগে। কিন্তু আবার মনে পড়ে গেল আমার কলেজের এক বন্ধুর সঙ্গে একটি আলোচনা প্রসঙ্গে। আমরা আলোচনা করছিলাম ভারতীয় রাজনীতিতে কাদের বামপন্থী বলা যায় তাই নিয়ে। সেক্ষেত্রে উপরে আলোচিত দার্শনিক সংজ্ঞাটি খুব সুবিধেজনক নয়। কারণ কোন রাজনৈতিক দল কী ভাবছে সেটা জানা সহজ নয়, আমরা কেবলমাত্র তাদের ঘোষিত নীতিই দেখতে পারি। সেই প্রসঙ্গে ভাবার চেষ্টা করছিলাম কী হতে পারে বামপন্থার ব্যভারিক সংজ্ঞা। বামপন্থার একটা সহজ সংজ্ঞা হতেই পারে যে শুধুমাত্র কমিউনিস্ট পার্টিরাই বামপন্থী। কমিউনিস্টরা যে বামপন্থী সে নিয়ে কারোরই দ্বিধা নেই। কিন্তু এই সংজ্ঞার সমস্যা হল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট জাতীয় দলগুলিকে বামপন্থার আওতা থেকে বাদ দিতে হবে। সুতরাং লাতিন আমেরিকাতে বামপন্থা ফেরত আসছে বলে আর হইচই করা যাবে না কারণ সেখানে সাম্প্রতিক অতীতে ক্ষমতাসীন যে সব দলকে বামপন্থী বলে চিহ্নিত করা হয় তার প্রায় কেউই কমিউনিস্ট পার্টি নয়। সেই জায়গা থেকেই এই ব্যবহারিক সংজ্ঞা খোঁজার প্রয়াস। যদি ভালো করে খেয়াল করেন বামপন্থী নীতি মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় – পুনর্বন্টন এবং ব্যক্তি মালিকানার বিলোপ। এর মধ্যে কমিউনিস্টরা এই দুই নীতিই মেনে চলেন – সোভিয়েত রাশিয়া বা গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হবে। কিন্তু তুলনায় নরমপন্থী যে বামপন্থীরা, যেমন ইউরোপের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বা ব্রাজিলের লুলা, তাঁরা পুনর্বন্টনের পক্ষে দাঁড়ালেও ব্যক্তি মালিকানার সম্পূর্ণ বিলোপ চান না। ভারতের সংসদীয় কমিউনিস্টদের ব্যাপারটা আরেকটু জটিল। তাঁরা খাতায় কলমে অবশ্যই ব্যক্তি মালিকানার বিলোপ চান। কিন্তু যে দাবী সামনে রেখে তাঁরা নির্বাচন লড়েন তা শুধুই পুনর্বন্টনের। যাই হোক, আমার প্রস্তাবনায় বামপন্থার একমাত্র নির্ধারক নিয়ম হল পুনর্বন্টনের নীতি। কোন দল বা ব্যক্তি যদি পুনর্বন্টনের নীতি গ্রহণ বা সমর্থন করেন আমার কাছে তিনি বামপন্থী। আমি এটা বলতে পারিনা যে এটাই সব থেকে যুক্তিযুক্ত সংজ্ঞা কারণ সংজ্ঞার ভালো খারাপ বিচারের কোন মাপকাঠি নেই। আমরা শুধু বিভিন্ন সংজ্ঞার সাপেক্ষে কে বামপন্থী থাকে আর কে বাদ যায় সেটা একবার ভেবে দেখতে পারি।

    যে জন আছে বামদিকে

        পুনর্বন্টনের সংজ্ঞা ধরলে তৃণমূল কংগ্রেস বামপন্থী। এতে আমার কোন আপত্তি নেই। শুধু আমার যে আপত্তি নেই তা নয়, সাম্প্রতিক কিছু অর্থনীতিবিদের মূল্যায়ণেও কমিউনিস্ট পার্টিদের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল বা বহুজন সমাজবাদী পার্টির মত দল বামপন্থী বলেই বিবেচিত হয় (Banerjee et al., 2019 দ্রষ্টব্য)।  কিন্তু আমার বন্ধুটি, যিনি নিজেকে বামপন্থী মনে করেন এবং ঘোরতত তৃণমূল বিরোধী, তাতে বেজায় আপত্তি করে উঠলেন। আমি তাতে বললাম, “ঠিক আছে, তুমি তবে বামপন্থার সংজ্ঞা দাও”। তিনি বললেন, “তৃণমূল বামপন্থী হতে পারে না কারণ তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না এবং তারা দুর্নীতিগ্রস্ত”। অর্থাৎ, আমার বন্ধুটি বলতে চাইছেন বামপন্থার সংজ্ঞায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দুর্নীতিবিরোধিতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমার বন্ধু যে বামপন্থীদের গণতান্ত্রিক এবং নৈতিক বলে ভাবছেন তার একটা সামাজিক ভিত্তি আছে। আমরা সকলেই কম বেশী এমন অনেক বামপন্থী মানুষকে চিনি যাঁরা সৎ এবং সারাজীবন গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। সমস্যা হল, ব্যক্তির জন্য যা সত্যি, ক্ষমতায় আসা সংগঠিত শক্তির জন্য তা সত্যি নাও হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, দুর্নীতি আর গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে বিচার করলে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চিন দক্ষিণপন্থী আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বামপন্থী  হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিঃসন্দেহে চিন বা সোভিয়েতের তুলনায় গণতন্ত্র বেশী এবং দুর্নীতি কম।

    দুর্নীতি ব্যাপারটা আসলে কী?

             এই যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি বেশি এটা কিন্তু কাকতালীয় কিছু নয়। মানে এরকম নয় সোভিয়েত রাশিয়াতে হঠাৎ করে কিছু খারাপ লোক এসে গেছিল তাই সেখানে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই বিষয়টা বোঝার আগে দুর্নীতি ব্যাপারটা কি সেটা একটু বোঝা দরকার। দুর্নীতি নানারকমের হতে পারে। ব্যাঙ্কের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়াও একধরণের দুর্নীতি নিশ্চয়ই। কিন্তু সামাজিক ভাবে লোকে দুর্নীতি বলতে আসলে ঘুষ বোঝে।  আমরাও এখানে ঘুষ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে কথা বলব। মূল বিষয়ে ঢোকার আগে আমাদের একটু চাহিদা যোগানের ব্যাপারটা বোঝা দরকার। চাহিদা যোগানের থেকে বেশি থাকলে বাজার সেই অতিরিক্ত চাহিদার সমস্যা মেটায় দাম বাড়ানোর মাধ্যমে – দাম বাড়লে চাহিদা কমে আর যোগান বেড়ে চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য তৈরি করে। কিন্তু সরকার যদি বাজারকে আটকে দেয়? তাহলে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর দুটি উপায় আছে – ১) রেশন ব্যবস্থা যেখানে কাউকেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি দেওয়া হবে না এবং ২) লাইনে অপেক্ষা করা। একবার সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা তুলনা করলেই সমস্যাটি বোঝা যাবে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সবসময়েই অতিরিক্ত চাহিদার একটা সমস্যা থাকে। এবার বেসরকারি হাসপাতালগুলি চিকিৎসার খরচ বাড়িয়ে সেই সমস্যাটা সামলায়। কারণ অত খরচ করে চিকিৎসা করানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়, তাই তারা বাজার থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাজার চাহিদা কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে, সরকারি ব্যবস্থায় দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই সেখানে হয় পণ্য বা পরিষেবা রেশন করা হয় (ওষুধের ক্ষেত্রে) বা রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় (পরীক্ষা বা অস্ত্রপচারের ক্ষেত্রে)। অর্থাৎ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাজারের নিয়মকে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু বাজার বেজায় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। সামনের দরজায় বাজারের জন্য প্রবেশ নিষেধ বোর্ড লাগালে সে ঢুকে আসে পেছনের দরজা দিয়ে – বাজার মূল্যের জায়গা নেয় ঘুষ। ঘুষ আসলে বাজারের দামের মতই কাজ করে – যে দাম বা ঘুষ দিতে পারে সেই পণ্য বা পরিষেবা পেতে পারে। ঘুষ জাতীয় দুর্নীতি তাই সেখানেই থাকতে পারে যেখানে যোগানের থেকে চাহিদা বেশি এবং বাজারকে আটকে দেওয়া হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেহেতু বাজারকে সামনের দরজা দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না, তাই সে পেছনের দরজা দিয়ে ঘুষের আকারে ঢুকে পড়ে। যেখানে বাজার সামনের দরজা দিয়ে ঢোকে সেখানে ঘুষ জাতীয় দুর্নীতি ঢুকতে পারে না। তার মানে কিন্তু এই নয় যে পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় দুর্নীতি নেই। কিন্তু সেটা সেই সব ক্ষেত্রেই থাকে যেখানে পণ্য-পরিষেবা বন্টনের দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রের ওপর। যেমন আমেরিকাতে বিভিন্ন শহরে রেন্ট কন্ট্রোলের আবাসন বন্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা জানা যায়। মোদ্দা কথা হল, যেখানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ যত বেশি, সেখানে ঘুষ জাতীয় দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।

       এক্ষেত্রে একটা কথা বলে নেওয়া ভাল। আমি কিন্তু এটা কখনই বলছি না যে ঘুষ খারাপ আর বাজার ভাল, বা উল্টোটা। আমি এটুকুই বলছি যে ঘুষ আর বাজার আসলে একই নিয়মে কাজ করে। ঘুষ বেআইনি আর বাজার আইনি – ঘুষ আর বাজারের মধ্যে পার্থক্য এটাই। কিন্তু তাহলে লোকে বাজারকে নৈতিক আর ঘুষকে অনৈতিক মনে করে কেন? কারণ ঘুষ এমন ক্ষেত্রেই থাকে যেখানে বাজারকে ঢুকতে দেওয়া হয় না আর বাজারকে এমন ক্ষেত্রেই ঢুকতে দেওয়া হয় না যেখানে বাজারকে অনৈতিক মনে করা হয়। তাই ঘুষ হল অনৈতিক (এবং অবশ্যই বেআইনি) কিন্তু বাজার নৈতিক (এবং আইনসিদ্ধ)। কিন্তু এই আইন এবং নৈতিকতা পরিবর্তনশীল। যেমন ধরুন, আমাদের ছোটবেলায় সিনেমা হলে টিকিট ব্ল্যাক হত। কারণ, হলগুলি ইচ্ছেমত দামে টিকিট বিক্রি করতে পারত না। শোলে যখন বেরোয় তখনও আমার জন্ম হয় নি। কিন্তু আমি  টাইটানিকের টিকিট ব্ল্যাক দেখেছি। টাইটানিকের টিকিটের দাম, ধরা যাক, ৩০ টাকা। ওই দামে ২০০ জন টিকিট কিনতে চায়, কিন্তু হলে আসন সংখ্যা ১০০। তার মানে একটা অতিরিক্ত চাহিদা আছে। কীভাবে এই চাহিদার সমস্যা মিটবে? একটা উপায় হল লোকে লাইন দেবে এবং আগে -এলে-আগে-টিকিট এই ভাবে টিকিট দেওয়া হবে প্রথম ১০০ জনকে। এক্ষেত্রে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ বা রেশনিং-ও হতে পারে। যেমন, মাথাপিছু দুটির বেশি টিকিট দেওয়া যাবে না। এখানে, টিকিটের দাম বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমে, বাজারকে আটকে দেওয়া হল। কিন্তু বাজার ঠিকই জায়গা করে নিত ব্ল্যাকারদের মধ্যে দিয়ে যারা পেছনের দরজা দিয়ে (বা লাইনের আগে দাঁড়িয়ে) টিকিট বের করে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করত। খেয়াল করুন লাইন দিয়ে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা বেকারদের বা স্বল্প আয়ের লোকেদের বেশি, কারণ তাদের সময়ের দাম কম। কিন্তু যে মুহূর্তে ব্ল্যাকারদের হাত ধরে বাজার ঢুকল, ধনীদের সুবিধে হল। কারণ তাঁদের লাইনে দাঁড়ানোর সময় নেই, কিন্তু বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কেনার স্বচ্ছলতা আছে। এখন কিন্তু মাল্টিপ্লেক্স ধরনের সিনেমা হলে বাজার আইনসিদ্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে যে সিনেমার চাহিদা বেশি তার দামও বেশি হয়, ছুটির দিন বা শনি-রবিবারও টিকিটের দাম বেশি হয়। তাই যা আগে ছিল ব্ল্যাক, তা এখন হয়ে গেল আইনসিদ্ধ বাজার। এবং তার একটা প্রতিফলন আছে আমাদের নৈতিকতার বোধেও। যা আইনসিদ্ধ আমরা তাকেই নৈতিক মনে করি, দুটি বিষয়ের মধ্যে পদ্ধতিগত ফারাক না থাকলেও। এই আলোচনাটি আরেকটু বড় আলোচনা, কিন্তু আমাদের মূল প্রশ্নের জন্য খুব প্রয়োজনীয় নয়। তাই মূল প্রশ্নে ফিরি।

     বিজেপি কি বামপন্থী হতে পারে?

      এই সব কথা প্রসঙ্গে আমার বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, বিজেপি যদি পুনর্বন্টন করে, তাহলে কি তাকে বামপন্থী বলা যাবে?” এই প্রশ্নটা নিঃসন্দেহে এই আলোচনার সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন। দু’ভাবে এর উত্তর দেওয়া যেতে পারে। একটা উত্তর হতে পারে বিজেপির বাস্তব নীতির ভিত্তিতে।  বলা যেতে পারে যে বিজেপি ঘোষিত ভাবে পুনর্বন্টনের বিপক্ষে। তারা ভর্তুকি তুলে দিচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেকোন ভর্তুকিকে ফ্রিবিস আখ্যা দিয়ে তারা পুনর্বন্টনের বিরুদ্ধে একটি নীতিগত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু তাত্ত্বিক সম্ভাবনা হিসেবে প্রশ্নটি আরো আকর্ষণীয় – সামাজিক ভাবে গোষ্ঠীভিত্তিক কোন দলের পক্ষে অর্থনৈতিক ভাবে বামপন্থী হওয়া সম্ভব? ধরা যাক কোন দেশে দুটি গোষ্ঠী রয়েছে – ক এবং খ। ধরে নেওয়া যাক পার্টি ক, ক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। সেক্ষেত্রে কি ক পার্টির পক্ষে যৌক্তিকভাবে বামপন্থী হওয়া সম্ভব? আমার মতে যৌক্তিক ভাবে তা সম্ভব না। কারণ ক পার্টি যদি পুনর্বন্টন করে বড়লোক থেকে গরিবের দিকে হবে না, হবে খ থেকে ক এর দিকে।  কারণ ক পার্টি, স্বাভাবিকভাবেই খ গোষ্টীর থেকে সম্পদ নিয়ে ক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে দিতে চাইবে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ নাৎসি জার্মানি। কিন্তু যদি, ক এবং খ, উভয় গোষ্ঠীতেই গরিব-বড়লোক দুরকম লোক থাকে, তাহলে এই বন্টন ব্যবস্থা বড়লোকদের থেকে নিয়ে গরিবদের মধ্যে পুনর্বন্টন নয়। কারণ এক্ষেত্রে খ গোষ্ঠীর গরিব লোকদের থেকেও ক পার্টি সম্পদ নিয়ে নেবে। অর্থাৎ, পুনর্বন্টনের সংজ্ঞায় কোন গোষ্ঠীভিত্তিক পার্টির পক্ষে বামপন্থী হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সমস্যা আরেকটু জটিল হবে যদি, ক গোষ্ঠীর প্রায় সবাই গরিব আর খ গোষ্ঠীর প্রায় সবাই বড়লোক হয়। সেক্ষেত্রে আন্তঃ গোষ্ঠী সংঘর্ষকে শ্রেণী সংগ্রাম হিসেবে দেখতে চাইতে পারেন।  তাহলে কিন্তু খ থেকে ক তে যে গোষ্টীভিত্তিক পুনর্বন্টন তা সম্পদভিত্তিক পুনর্বন্টনের রূপ নেবে।  এরকম একটা পরিস্থিতিতে ক পার্টিকে কেউ বামপন্থী হিসেবে দেখতে পারেন। এই সম্ভাবনাটি কিন্তু নিছক একটি তাত্ত্বিক সম্ভাবনা নয়। ভারতীয় রাজনীতিতে এই রকম  উদাহরণ আমরা দেখেছি আশির দশকে যখন জমির লড়াই চলেছে বিহারে। সেই লড়াইকেও (জমিদার) উচ্চবর্ণ ও (ভুমিহীন) নিম্নবর্ণের লড়াই হিসেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু সেই লড়াই-এর নেতৃত্বে ছিলেন বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টিরাই যাঁরা এখনও বর্ণ ও শ্রেণীকে এক করে দেখা যায় কিনা এই নিয়ে দ্বিধান্বিত। সুতরাং, সেক্ষেত্রে জাতি ভিত্তিক পুনর্বন্টনের দাবিটি অনেকটাই আপতিক – তাঁরা আসলে বড়লোক থেকে গরিবের দিকে পুনর্বন্টনের লড়াই করছিলেন। কিন্তু দলিত বা ওবিসি পার্টিগুলির ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি আরো প্রাসঙ্গিক। এই পার্টিগুলি একভাবে উচ্চবর্ণের থেকে নিম্নবর্ণের দিকে সম্পদ পুনর্বন্টনের দাবী জানায় এবং নিম্ন বর্ণের মানুষেরা গড় আয় ও সম্পদের বিচারে উচ্চবর্ণের মানুষদের থেকে পিছিয়ে থাকেন। তাই পুনর্বন্টনের সংজ্ঞা অনুযায়ী এই সব পার্টিকে বামপন্থী আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল করুন, Banerjee et al.,  (2019) এই সব পার্টিকে বামপন্থীই আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং, বামপন্থার পুনর্বন্টনভিত্তিক সংজ্ঞাটি কিন্তু বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় পাশ কর গেল।

    আমি কোন দিকেতে রই পরান জলাঞ্জলি দিয়া রে?

    আমি নিশ্চিত, আমার সংজ্ঞায় তৃণমূলকে বামপন্থী বলা হচ্ছে দেখে অনেক বাঙালি বামপন্থীই বেজায় রেগে যাবেন। আমার মতে, (সম্ভবত) দুভাবে আমার লেখার একটি দায়িত্বশীল সমালোচনা করা যেতে পারে। একটি তথ্যভিত্তিক এবং অন্যটি তত্ত্বভিত্তিক। তথ্যভিত্তিক সমালোচনাটি এরকম হতে পারে যে কেউ পরিসংখ্যান দিয়ে দেখালেন যে তৃণমূল আসলে পুনর্বন্টন করে না -- এই রাজত্বে বড়লোকরাই আরও বড়লোক হয়। আর তাত্ত্বিক উত্তরটি হতে পারে বামপন্থার একটি নতুন সংজ্ঞা। খেয়াল রাখবেন সংজ্ঞার ভালো-মন্দ বিচারের সেরকম কোন উপায় নেই। আপনি শুধু দেখতে পারেন যে আপনার সংজ্ঞায় কারা বামপন্থী আর কারা ডানপন্থী। যেমন, কেউ এটা ভাবতেই পারেন যে শুধু কমিউনিস্ট পার্টি বামপন্থী। তাতে নিশ্চিত ভাবেই তৃণমূল আর বামপন্থী থাকবে না, কিন্তু একই ভাবে লুলাও আর (ব্রাজিলের) বামপন্থী থাকবেন না। ভেবে বের করুন নতুন সংজ্ঞা, বা পুরোনো সংজ্ঞাকে ফিরিয়ে আনুন নতুন বোতলে, তর্ক চলুক, ভাবনাও। চরৈবতি!

    সূত্রঃ
    Banerjee, A., Gethin, A., Piketty, T., 2019. Growing cleavages in India? Evidence from the changing structure of electorates, 1962–2014. Other repository.

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৫৭১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
    আরও পড়ুন
    বটগাছ - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৩৭511710
  • অনির্বাণবাবু,
    দারুণ! দারুণ! 
    আমি প্রায় সব পয়েন্টেই আপনার সঙ্গে একমত।
    ১ বামপন্থা একটি বড় সেট, কমিউনিস্টরা তার সাবসেট।
    .২"আমি এটুকুই বলছি যে ঘুষ আর বাজার আসলে একই নিয়মে কাজ করে। ঘুষ বেআইনি আর বাজার আইনি – ঘুষ আর বাজারের মধ্যে পার্থক্য এটাই"। 
    --এই প্রেক্ষিত থেকেই বোধহয় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু একসময় ঘুষ বা সার্ভিস প্রোভাইডারদের কমিশন দেওয়াকে আইনি করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন বলে মনে পড়ছে।
    ৩ "তাই ঘুষ হল অনৈতিক (এবং অবশ্যই বেআইনি) কিন্তু বাজার নৈতিক (এবং আইনসিদ্ধ)। কিন্তু এই আইন এবং নৈতিকতা পরিবর্তনশীল।"
     --চমৎকার উদাহারণ দিয়েছেন --আইনক্সে ফ্লেক্সিবল টিকিটের দাম! আমার মনে পড়ছে ৯০ এর দশকে বোফোর্স বিতর্কের সময় জানতে পারলাম অস্ত্র বিক্রয়ে কমিশন দেওয়া ভারতে বে-আইনি, কিন্তু সুইডেনে এবং অনেক দেশে নয়। অতএব নৈতিকতার প্রশ্নে এ নিয়ে দুই দেশে পাবলিক পারসেপশন আলাদা। 
     
    ৪ কিন্তু আটকে গেছি এই জায়গাটায়ঃ
    আপনি বামপন্থার সাধারণ লক্ষণ নির্ধারণ করেছেন দুটোঃ
     ক) সম্পদের পুনর্বন্টন (এবং তাতে রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা)।
     খ) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে দাঁড়ানো।
     
    --এইখানে ভেবে দেখুন। কমিউনিস্ট বামপন্থীরা ক্ষমতায় নাথাকলে সব দেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্যে লড়াই করেন। তাত্ত্বিক সমর্থনে স্তালিনের বিখ্যাত কোটেশনটি ব্যবহার করেনঃ "গণতন্ত্রের পতাকা আজ ধূলায় লুন্ঠিত। শ্রমিকশ্রেণী ও তার সহযোগী বন্ধুরা ছাড়া কেউ নেই সেই পতাকা তুলে ধরার", ইত্যাদি।
      কিন্তু ক্ষমতায় এলে কোন কমিউনিস্ট পার্টি গণতন্ত্রের কথা বলে না। সে স্বয়ং লেনিন, স্তালিন বা মাও যাঁর দেশই হোক।
    অবশ্য যদি আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে অন্ততঃ বহুদলীয় এবং মতামত প্রকাশের খোলা মাধ্যম (পত্রিকা, জনসভা ইত্যাদি) ধরি
      কাজেই সেই অর্থে শুধুমাত্র সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসি বা ইউরোপের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার স্টেটগুলোই কি আপনার সংজ্ঞা স্যাটিস্ফাই করছে?
    * কমিউনিস্ট বন্ধুরা অবশ্য ওই গণতন্ত্রকে 'বুর্জোয়া গণতন্ত্র" বলে তিলক লাগিয়ে দেন এবং প্রলেতারীয় একনায়কত্বকে বৃহত্তর গণতন্ত্র বলে দাবি করেন। 
     
    আপনার বক্তব্য বুঝতে যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে নির্দ্বিধায় খেই ধরিয়ে দিন।
    আলোচনা চলুক, অন্যদের মত আসুক। 
  • Anirban M | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:১৪511712
  • রঞ্জন দা, আপনার বক্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শেষ পয়েন্টে আপনি যা বলেছেন, আমিও তাই বলেছি। আমার বন্ধু বলেছিলেন গণতন্ত্র বামপন্থার মাপকাঠি। আমি সেটার বিরোধিতা করেছি। আমি লিখেছি,
    "তিনি বললেন, “তৃণমূল বামপন্থী হতে পারে না কারণ তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না এবং তারা দুর্নীতিগ্রস্ত”। অর্থাৎ, আমার বন্ধুটি বলতে চাইছেন বামপন্থার সংজ্ঞায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দুর্নীতিবিরোধিতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমার বন্ধু যে বামপন্থীদের গণতান্ত্রিক এবং নৈতিক বলে ভাবছেন তার একটা সামাজিক ভিত্তি আছে। আমরা সকলেই কম বেশী এমন অনেক বামপন্থী মানুষকে চিনি যাঁরা সৎ এবং সারাজীবন গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। সমস্যা হল, ব্যক্তির জন্য যা সত্যি, ক্ষমতায় আসা সংগঠিত শক্তির জন্য তা সত্যি নাও হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, দুর্নীতি আর গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে বিচার করলে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চিন দক্ষিণপন্থী আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বামপন্থী  হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিঃসন্দেহে চিন বা সোভিয়েতের তুলনায় গণতন্ত্র বেশী এবং দুর্নীতি কম।"
    অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যেহেতু কেউ বামপন্থী বলে মানবে না, তাই গণতন্ত্রও বামপন্থার মাপকাঠি বলে ধরা যাবে না। আমার আরেকটু ভেঙ্গে লেখা উচিত ছিল সম্ভবত। আমি বলেছি, " বামপন্থী নীতি মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় – পুনর্বন্টন এবং ব্যক্তি মালিকানার বিলোপ।" কিন্তু এই দুটি যারা মানেন তাঁরা কমিউনিস্ট। প্রশ্ন হল, কমিউনিস্ট ছাড়া আর কে কে বামপন্থী। আশা করি আমার বক্তব্যটা পরিষ্কার করতে পারলাম। 
  • Ranjan Roy | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:০২511715
  • একদম  ::)))
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন