ঈদ মুবারক সাদেক ভাই! কোলাকুলি করলাম। আমারও মন খারাপ। বিলাসপুরে প্রত্যেক বছর আমরা জড়ো হতাম বন্ধুবর শাকির আলীর বাড়িতে। সেদিন শহরের কোণে কোণে থেকে আসত ্যট্রেড ইউনিয়ন নেতা, সাহিত্যিক এবং অরাজনৈতিক বন্ধুরাও।
মাটিতে ফরাস পেতে আমরা বসতাম, একপাশে থাকত হাত ধোয়ার বদনা এবং পেতলের পিকদানি। বিরিয়ানির সঙ্গে পরিবেশন হত দই দিয়ে তৈরি স্পেশাল রায়তা। আমরা কেউ কেউ নিয়ে আসতাম মিষ্টির বাক্স।
ওর ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল হাসিমুখে হাঁটু জড়িয়ে ধরে আবদার করত --আংকল, ঈদি?
অর্থাৎ ঈদ উপলক্ষে পাওয়া সওগাত। সবাইকে দিতাম দশ দশ টাকা। ওদের চোখমুখ উজ্বল হয়ে উঠত।
আমরা একে অন্যকে আলাদা রাজনীতির কথা উল্লেখ করে চিমটি কাটতাম। দলে ছিল সি পি আই , সিপি এম, সমাজবাদী, আম্বেদকারবাদী ও কংগ্রেসি।
এরপর যাওয়া হত সত্যম টকীজের পানঠেলায়। সেখানে আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রায় পনের জনকে তাদের পছন্দ মত মশলাদার পান খাওয়ানো হত।
শাকির হিন্দিতে কবিতা লিখত। খুব বই কিনত। ওর কাছে ট্রাংক ভর্তি মন্টোর, রাহুল সাংক্রিত্যায়ানের , এবং মুক্তিবোধের রচনা সংগ্রহ। ওর নিজের তিনটি কবিতা ও গদ্যের বই প্রকাশিত হয়েছে।
ও ছিল আমার দেড় পেগিয়া ইয়ার। আমরা মেপে দেড় পেগ ভদকা খেতাম, না কম, না বেশি।
বিগত মার্চ মাসে ওকে হারিয়েছি অকস্মাৎ এক হার্ট অ্যাটাকে। পরে জেনেছি ওর ভাল্ব মাত্র ৩০% কাজ করছিল।
আজ খুব বেশি করে ওর কথা মনে পড়ছে। ও ছিল সর্বজনপ্রিয় নির্বিবাদ কিন্তু বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ মানুষ।
যাক সে সব কথা। আনন্দ করুন, আবারও ঈদ মুবারক।