এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • এই শহর, সেই সময়, এই সময়

    বাইনারি
    আলোচনা | বিবিধ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৬৩৬ বার পঠিত
  • মেয়েদের গল্পে, সে প্রথম পুরুষেই হোক, বা উত্তম পুরুষে, সবসময়-ই একটা কবোষ্ণ ভাব থাকে। অন্তত আমার তো তাই লাগে।

    সুমনার ছেলেবেলা আর কৈশোর আর প্রথম যৌবন উত্তর কলকাতায়। ওদের বাড়ীটা একটা চৌরাস্তার মোড়ে। মানে, বাস-ট্রাম-লরি-টেম্পো এরকম হাঁসফাঁস করা চৌরাস্তা নয়। পাড়ার-ই চৌরাস্তা, তবে চব্বিশ ঘন্টা উত্তেজিত-হৈহট্টগোলের বিরাম নেই সেখানে। সুমনাদের বাড়ীটা দুইতলা। রাস্তারদিকে নীচতলায় গ্রীলের গেট, গ্রীল লাগানো লালমেঝের বারান্দা। গ্রীলের গেটের উপর লোহার তারদিয়ে বাঁধা কাঁঠালকাঠের লেটারবাক্স, হলুদরঙের, রংটা অবশ্য বর্ষায় ধুয়ে যেত, তারপর বর্ষা চলে গেলে, সুমনার দাদা, আবার সেটায় রং লাগাত, আর তার উপরে নীলতুলিতে লিখত 'শান্তিরঞ্জন চট্যোপাধ্যায়', ওদের বাবার নাম। এরকম-ই চলে এসেছিলো বহুদিন, এমনকি, হঠাৎ হ্‌দরোগের বাবার ম্‌ত্যুর পরেও। সম্প্রতি অবশ্য, সেই হলুদ লেটার বাক্সটা আর নেই, লেগেছে স্টীলের বাহারী বাক্স। নামটা-ও পরিবর্তন হয়ে বসেছে, দাদার নাম।

    উপরে দোতালায় রাস্তার দিকে, নীচের বারান্দার ঠিক উপরে-ও গ্রীল ঘেরা বারান্দা। সেই ছোট্টবেলা থেকে দোতালার এই বারান্দাটা ওদের খুব-ই প্রিয়, সুমনার আর ওর দিদিদের। রাস্তার সামনের বাড়ীটা যখন চারতলা হয়নি, শীতের সকালে মায়ামায়া রোদ্দুর আসত, পড়শীদের ছাদ পেরিয়ে, তখনো বেঁচেথাকা, সামনের বাড়ীর বাগানের শিউলি গাছ পেরিয়ে, থাকত সুর্য্যের তেজ মরে যাওয়া বিকেল পর্য্যন্ত। এখন আর আসে না, শীতের দুপুরে স্যাঁতস্যাঁত করে ছায়াছায়া বারান্দা। ফ্রক ইজের ছেড়ে সালোয়ার পড়া বয়সে এই বারান্দাটা ছিলো ওর দিবাস্বপ্নের জগত। অ্যানুয়াল পরীক্ষার পরের মিষ্টি দুপুর গুলো কেটে যেত এখানে, পিঠোপিঠি দিদিদের বা পাড়া-ইস্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে, কমলালেবুতে বা চৌরাস্তার উল্টোদিকের রোয়াকে বসা হরিলালের কাছথেকে কেনা ঝালমুড়ির ঠোঙায়। বৌবাজার থেকে অর্ডার দিয়ে বানান, কাঠের ফ্রেমে, বেতের কুশান দেওয়া চেয়ার ছিলো দুই-তিনটে বারান্দায়, সেগুলোতে সকলে না ধরলে, মাদুর। হরিলালের ঝালমুড়ি-আলুকাবলি-র কথা অবশ্য, রায়পাড়া থেকে সাতপুকুর, ঐ চত্তরে মুখে মুখে ফিরত তখন।

    তখন হরিলাল, রোয়াকটাতে বসত মাঝদুপুর থেকে, থাকত প্রায় রাত দশটা পর্য্যন্ত। প্লাস্টিকঢাকা বেতের ধামায় সাদাসাদা মোটামোটা মুড়ি, তেব্‌ড়ে যাওয়া অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ীতে খোসা না-ছাড়ানো আলুসেদ্ধ, আলুগুলো-র অবশ্য প্রায় সবগুলো-ই আধাপচা, সিকিদামে ঝরা বাজারে সব্জিওয়ালার কাছথেকে কেনা, নারকেল তেল বা ডাল্ডা-র মুখ কাটা পুরোনো টিনে, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, কুচিকরে কাটা ধনেপাতা, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, আর হাত কচলানো তেঁতুলজল, বীটনুন দেওয়া, তেঁতুল জলের হাঁড়িতে দড়ি বাঁধা আলু কাটার চাকু। হরিলালের বয়স হয় না। সেই কবেত্থেকে সুমনা সেই একই কদমছাঁট চুল, গালভত্তি খোঁচাখোঁচা আধপাকা দাড়ি, বোতামখোলা ফতুয়ার ভেতর হাড়জিরজিরে বুকে তুলসীকাঠের মালা, ক্ষারকাচা ধুতিতে হরিলাল-কে দেখে আসছে। হরিলালের ছেলেদুটো, ঐ রোয়াকে হামাগুড়ি থেকে কর্পোরেশন স্কুল থেকে আবছা দাড়ি আর বিড়িতে লায়েক হয়ে গেল, হরিলালের পোশাক আর বুড়োটে চেহারা বদলাল না। ছেলেদুটো অবশ্য বখে যায়নি। একজন ভাড়ার গাড়ী চালায়, আরেকজন, 'তারামা মোটোর গ্যারেজে' মেকানিক। হরিলালের রোয়াকটা অবশ্য আর নেই। একবার, বছরঘুরে যাওয়ার পরে মায়ের কাছে এসে সুমনা হঠাৎ আবিস্কার করে সেই রোয়াক ভেঙ্গে ঝা-ঁচকচকে কাঁচের দরজা হয়েছে, ভেতরে কাঁচের শো'কেসে কেক-প্যাস্ট্রী-চিকেনপ্যাটিস-এগপাফ, উপরে ঝলমলে সাইনবোর্ড 'সুগার-অ্যান্ড-স্পাইস'। বুড়ো হরিলাল অবশ্য এখোনো বসে, পাশের টিনের দরজাওয়ালা একচিল্‌তে দোকানঘরে, ঝালমুড়ি-আলুকাবলির ঝুরিটা তার একই রকম আছে, সুধু কমেছে খদ্দের। সুমনাদের দোতালার বারান্দার সেই পুরোনো চেয়ারে এখোনো মাঝে মাঝে বসে সুমনা, মায়ের কাছে এলে। তবে সন্ধ্যেবেলা, বারান্দাথেকে, 'সুগার-অ্যান্ড-স্পাইসে'র ঝলমলে আলোয়, হরিলালের ঝালমুড়ির ঝুরিটা দেখা যায় না ভাল করে।

    দোতালার বারান্দা লাগোয়া যে ঘরে বাবা শখ করে বাহারে শেডওয়ালা লাইট লাগিয়েছিলেন, আর দেওয়ালে পেতলের ফ্রেমের রাজস্থানী কাজকরা বড়সড় আয়না, সে ঘরটা আদতে ছোটো। এঘরটা সবসময়-ই বাবা কিম্বা বাড়ীর অন্যান্য বয়:জ্যেষ্ঠদের বিশ্রামের জায়গা ছিলো। বাবার ম্‌ত্যু-র পর, ক্রমে কমতে থাকে আত্মীয় পরিজনদের যাতায়াত, আর কমতে থাকে এই ঘরটার ব্যবহার-ও। সুমনার স্কুল জীবনের শেষথেকে এইঘরটা ব্যবহার হয়েছে, কম-ই। খালি মাঝে মাঝে সুমনা এখানে রাতে থাকত নিজের মত করে। খরখরিটানা পাল্লা আর রুপোলী রংকরা লোহার গারদের জানালাগুলো পরিস্কার করা হয়নি ভালকরে, বহুদিন। শীতে খরখরি ছাড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে হুহু করে। বাহারে শেডে আর আলো জ্বলেনা, ফিলিপসের ছাপোষা টিউবলাইট লাগানো থাকে। তবুও কেন যেন এই ঘরটা একটা ভালোলাগা নি:সঙ্গতা। বা ঠিক তা-ও নয়, এই ঘরটা ওর এই একান্ত নিজস্ব: চৌরাস্তার শব্দকোষ। সুমনাদের বাড়ীর বাঁদিকের কোনার রাস্তার উল্টোদিকে, পুরোনো দোতালা বাড়ীর নীচে, 'স্মার্ট ধৌতাবাস'। দাদু-ছেলে-নাতি চলমান মালিকের এই লনড্রি, সুমনা দেখে আসছে সেই কবে থেকে। লনড্রির রোয়াকে, ধোয়া কাপড় ইস্তিরি করে, দুজন দেহাতি ধোবী। লোহার ইস্ত্রি গরম হয় গনগনে কয়লার উনোনে। অনেক রাতে কাজের শেষে, পরে-থাকা উনোনের আঁচে, চাপাটি বানায় ওরা, আর কষে লঙ্কা দেওয়া সব্জী। উনোনের আগুনে বিড়ি ধরিয়ে ক্লান্ত শরীরে কথা বলে ওরা নীচু গলায়। রাস্তার কোনায় একটা করপোরেশনের কল। সেটা এখোনো আছে অবশ্য। কলের সামনে একটা সিমেন্টের চাতাল, তাতে ফাটল ধরেছে বহুকাল, চাতালটার আসেপাসে শ্যাওলা জমে আছে তখন থেকেই। বারোয়ারি কলের পাশে 'শ্রীগুরু মিষ্টান্ন ভান্ডার', লোকের মুখে পচা ময়রার দোকান। রাত বারোটার পরে, দোকান বন্ধ করে পচা ময়রা। কলের চাতালে ঘটাং করে রাখে সিঙারা ভাজার কড়াই, পেল্লায় চাটু, অ্যালুমিনিয়ামের গামলা, ঝাঁঝরি-হাতা, ডাবু-হাতা। পচা ময়রা, ঘামে চকচকে বিশাল বপু নিয়ে ঘষে ঘষে কড়াই মাজে, সঙ্গে বারো বছরের সিড়িঙ্গে বাচ্চা চাকর হুচো। কড়াই মাজার ঢংঢাং নীচুস্বরে অনর্গল, হুচো-র উদ্দেশ্যে বকুনি, নিশুতি রাতে গম্‌গম করে। এট্টু এগিয়ে, গৌর বন্ধ করে তার পান-সিগারেট-মনিহারি দোকান। গৌরের দোকানে আংটায় ঝোলে, সুৎলি দড়িদিয়ে বাঁধা ট্রানজিস্টার রেডিও, রোদে শোকানো ব্যাটারিতে ঘ্যাঁসঘেঁসিয়ে চলে বিবিধ ভারতীর রাতের শেষ অনুষ্ঠান, 'হাওয়া মহল', বা এফেম-এ বরুণ দাসের গলা।

    কালীপুজোর আগে পরে, মিহি শীতশীত রাতে, চৌকি-অ্যাসবেস্টাসের মঞ্ছ বানিয়ে সাংস্ক্‌তিক অনুষ্ঠান হয় রায়পাড়ার মাঠে, রাত বাড়লে হাওয়ায় ভেসে আসে লতাকন্ঠি-র গানের কলি। অনুষ্ঠান শেষে, বাড়ী ফিরতি জনতা ফেরে সামনের রাস্তাদিয়ে, কানে আসে তাদের গুলতানির শব্দ। রাতে কখনো-সখনো এয়ারপোর্টগামী ট্যাক্সি যায় হুস করে ডিজেলের ধোঁয়া উড়িয়ে। চৌরাস্তায় বহুদিন ছিলো নিয়ন লাইটের বাতিস্তম্ভ। সুধীন গুপ্ত, কাউনসিলার হওয়ার পরে, বসেছে, উজ্জ্বল হলুদ আলোর সোডিয়াম-ভেপার ল্যাম্প। গভীর রাতে বন্ধ হওয়া রাতের আওয়াজ, আবার সুরু হয় শেষরাতে। স্টেশন থেকে পাইকারী বাজারের মুটেরা, ঠেলায় আলু-সবজির বস্তা চাপিয়ে, ব্যস্ত হেঁটে যায় হঁহ-হাঁই শব্দে। সুমনাদের বাড়ীর পাশে, হরিণঘাটার ডিপোয়, দুধের গাড়ী আসে, দুধের ক্রেট আনলোড হয় ঘড়াং-ঝকাং আওয়াজ করে। বিয়ের পরে-পরে, যখন, সেই পুকুরধারের একলা জানালায় হাঁপিয়ে উঠত সুমনা, তখন মায়ের কাছে এসে এই ঘরটার দখল নিত ঘনঘন। বরটা ওর, সেই সন্ধ্যাপার করে দিয়ে তখন ফিরত এইখানে-ই। রাতে খাওয়ার পরে, ঐ খরখরির জানালাদিয়ে ওরা দুজনে উপভোগ করত, চৌরাস্তার শেষরাতের চলচ্ছবি। ঘন হয়ে বসা শরীরে শরীর, ভালবাসায় কুলকুল করত ওরা। ভোররাতের দুধের গাড়ীর শব্দে ভেঙ্গে যাওয়া ঘুম চোখে ঘনকরে চুমু খেত দুজন-দুজনকে । রাজস্থানীকাজ করা আয়নাটা ওদের সেই দাম্পত্যের সাক্ষী। সুমনার এখন মায়ের কাছে যাওয়া হয় প্রায় বছর ঘুরে গেলে, বা তার-ও পরে। আর এখন ওর বর, আর থাকতে চায়না দোতালার ঐ ঘরটায়, শব্দে নাকি ঘুম হয়না ওর, মাথাধরে।

    হরিলালের রোয়াকের পাশে, আরেকটা যে রোয়াকয়ালা অনেক পুরোনো দোতালা বাড়ী, সেটা কম্পাউণ্ডারবাবুদের। কম্পাউন্ডারবাবুর আসল নাম আর মনে নেই কারো। পাড়ার বাড়ীতে বাড়ীতে, বয়স্কদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে, দরকারে-জরুরীদরকারে ইঞ্জেকশন দিতে হলে হাজির হতেন কম্পাউন্ডারবাবু। যেবারে দাদার টাইফয়েড হয়, কম্পাউন্ডারবাবু রোজ আসতেন, দাদাকে ইঞ্জেকশন দিতে, মা, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, গ্যাসে ফুটিয়ে দিতেন, ডিজপোসেবল সিরিঞ্জ তখন ছিলো না। কম্পাউন্ডারবাবুর রোয়াকে, পাড়ার বুড়োদের আড্ডা বসত বিকেলে। রোয়াক ঝাড়ামোছা করা হত বিকেল নামার আগেই। সক্কলে সত্তরার্ধ,আসতেন এক-এক করে। রোয়াকে আরামচেয়ারে বসে থাকতেন কম্পাউন্ডারবাবু। যাঁরা বেশী সবল নন, তাঁরা লাঠি হাতে। যাঁদের পরিবার বেঁচে আছেন, এবং সক্ষম, তাঁদের ধুতি আর সার্ট বা পাঞ্জাবী, অপেক্ষাক্‌ত কেতাদুরস্ত। অনেকের চোখেই বাইফোকাল। ইন্দিরা-রাজীব-নরসিংহরাও-জ্যোতিবাবু-গাভাস্কার-কপিল-'জিনিষের বেজায় দাম'-'পুজোয় এবারে হিন্দী গান বাজান চলবে না'-'চৌরাস্তার নর্দমা পরিস্কার করার কথা, সুধীনবাবুকে বলতে হবে, চলুন একটা পিটিশন দেই' এই চলত রাত পর্য্যন্ত। এট্টু রাত হলে, যাঁদের পরিবারে কড়া শাসন, তাঁরা গুটিগুটি পায়ে বাড়ী ফিরতেন, যাঁদের বাড়ী ততটা কেয়ার করে না, তাঁরাও ফিরতেন, করিমে-র মুদি দোকান থেকে ছোটোখাটো সওদা করে। তারপর, কবে থেকে যেন পাতলা হতে সুরু করল, বুড়োদের সংখ্যা। কম্পাউন্ডারবাবু এখোনো বেঁচে আছেন, বুড়োদের মধ্যে খালি কুন্ডুবাড়ীর নতুনমেসো, যিনি আর নতুন নন, নব্বই পার করেছেন। দুজনের-ই এখন ঘোলাটে চশমা, দন্তহীন মুখ। নতুনমেসো এখনো কষ্টে হেঁটে এসে বিকালে বসেন রোয়াকে, কম্পাউন্ডারবাবু, আরামচেয়ারে থাকেন প্রায় সারদিন-ই। বিকাল সন্ধ্যের সময়টুকু চলে ওঁদের নির্বাক আড্ডা। বাড়ীটা এখোনো আছে, তবে প্রোমোটাররা-ও আছে, অপেক্ষা করে ।

    **
    উত্তর ইউরোপের যে শহরটায় থাকত সুমনারা কিছুদিন আগে, অন্যান্য পাশ্চাত্য শহরের সঙ্গে সেটার কোনো পার্থক্য নেই। শহরের প্রান্তে ছিম্‌ছাম দুকামরার ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্ট ছিলো ওদের। কিন্ত, এই শহরের, মানে এই পুরো দেশটার-ই নাগরিক বিশেষত্ব হল, বয়স্ক মানুষের আধিক্য। একলা একলা বুড়ো বুড়ি। সরকারি সাহায্য প্রচুর, মানসিক সাহায্য নামমাত্র। যে সব বুড়ো-বুড়িরা সঙ্গি-সঙ্গিনী জূটিয়ে নিতে পারে, তারা পুরোনো অস্টিন গাড়ীতে বেড়াতে যায়, যারা পারে না তারা একলা-ফোকলা। ওদের পাশের অ্যাপার্টমেন্টেই থাকত একটা বুড়ি, বয়স বেশী নয়, বড়জোর সত্তর হবে। কোনোদিন কক্ষনো কেউ দেখতে আসেনা বুড়ির ঘরে। দোরগোড়া থেকে নিয়ে যাওয়া সরকারি গাড়ীতে বাজার যাওয়া ছাড়া বুড়ি-ও যায়না কক্ষনো কোথাও। বেবাক মদ্যপান করে বুড়ি একাএকা, সঙ্গি একটা ছোট্ট প্স্যানিয়াল কুকুর, বুড়ির বে-খেয়ালে মাঝে মাঝে ছাড়া পেয়ে ঘুরে বেড়ায় সিঁড়িতে সিঁড়িতে। তো, শেষে বুড়িটা একদিন মরেই গেল। স্ট্রোক হয়েছিলো বোধহয়। কে খবর দিয়েছিলো জানেনা সুমনা, বুড়ির এক সৎভাই এসেছিলো, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে। তখনি জানতে পারে সুমনারা। কালো জ্যাকেটের উপর উজ্জ্বল হলুদরং-এর ফ্লোরেসেন্ট এমারজেন্সিভেস্ট পরা পুলিশ আর স্বাস্থ্যকর্মীরা, প্লাস্টিকের গানিব্যাগে ভরে, বুড়ির দেহ নিয়ে গেলে, নিজেদের ঘরে ঢোকে সুমনা। একটা চিন্‌চিনে মনখারাপ নিয়ে দুরভাষের বোতাম টেপে। মায়ের চোখের ছানিটা পেকেছে অনেকদিন, কবে যে অপারেশন হবে ?

    ** আগে টইপত্তরে লেখা 'এই শহরতলী' https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=9695 -র পরের সমান্তরাল।

    ফেব্রুয়ারী ১, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৬৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন