এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপার বাংলা

  • সুন্দরীর রাজ্যে

    ইশরাত তানিয়া লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ২২ মে ২০২০ | ২৭৭২ বার পঠিত

  • আকাশ ফর্শা হয়ে এলে, রাস্তাগুলো দ্যাখে অগণন দ্বিধাযুক্ত মলিন পা নগরীর উপকন্ঠে।
    শহরতলীতে পায়ে পায়ে ধূলা ওড়ে। রোদে পোড়া রুক্ষ্ম-শুষ্ক চামড়ায় ধূলাবালুরও অস্বস্তি হয়। নিরাশা আর উদ্বেগে গোড়ালীর ফাটলে জমে থাকা অন্ধকারের সাথে পাগুলো হাঁটে। কারো পা খালি, কারো পায়ে প্লাস্টিকের ফেটে যাওয়া জীর্ণ স্যান্ডেল। ধোঁয়াটে সারি সারি পায়ের মাঝে, লাল ফিতার এক স্যান্ডেল ইটের ঢেলায় আটকায়। ওর শরীরে ঝাঁকুনি লাগে। সামলে নিয়ে আবার ঝিম ধরে চলা। প্রতিনিয়ত লড়াইয়ের জীবনে কোন নিরুদ্দেশ অঞ্চল থেকে আসে ওরা, যাবেই বা কোথায়?
    ওদের অগুন্তি ছায়া হাঁটে পীচ ঢালা রাস্তার বুকে।
    সত্যপীরের দরগা থেকে ফিরছে বুড়ো আনসার বাওয়াল। ছেলে মন্তেজ এর গায়ে ভর দিয়ে হাঁটছে। ক্লান্ত শরীর। হাতে ধরা লাঠিতে ভর দেয়ার মতো গায়ের জোর নেই। মন্তেজ শেখের হাতের মুঠোয় দরগার বাতাসা। ওর নাতি দুবছরের রাজু বাতাসা খেতে পছন্দ করে। ঘামে ভিজে কাগজে মোড়ানো বাতাসা নরম হয়ে গেছে।
    দরগায় মানত ছিল আনসার বাওয়ালের। ঘোর বিপাকে পড়ে দরগায় গিয়েছে সে। নইলে বাহাত্তর বছরের শরীর বয়ে অতদূর যাবার কথা নয়। দরগাতে প্রতিদিন আগরবাতি জ্বলে। মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে ভক্তরা রোগ মুক্তি আর সংসারের মঙ্গল কামনায় শিরনি দেয়। ফুল, ফল আর লুঠ দেয়।
    ‘হিন্দুর দেবতা আমি মোমিনের পীর, যে যাহা কামনা করে তাহারা হাসিল’- এই পাঁচালীর ভক্তিরসে বাওয়ালী, মৌয়াল, জেলেদের মনে আশা জাগে। সত্যপীরের দয়ায় যদি কোনো উপায় হয়!
    আঁধারে আঁধারে সয়লাপ এক আজাবের রাত। সাগর থেকে দানব উঠে এসেছিল উপকূলীয় এলাকায়। তছনছ করে দিয়েছিল লোকালয়, বাদার বন। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতভর তাণ্ডব দেখে ওই উঁচুর আকাশ পর্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত। সেও তো বছরখানেক পেরিয়ে গেল। এখনও সরকার গরান কাঠ কাটা নিষিদ্ধ করে রেখেছে। অন্যান্য বাওয়ালী পরিবারের মতো আনসার শেখের বাড়িতেও ঘোর দুর্দিন। মহাজনের দেনার টাকা দেয়া বাকী। কিছুদিন হলো গোলপাতা কাটার অনুমতি দিয়েছে তবুও আধপেটা খেয়ে অথবা না খেয়ে ওদের দিন কাটে।
    খুলনা জেলার কয়রা এলাকার জায়গীরমহল গ্রাম। শ’খানেক বাওয়ালী, মৌয়াল আর জেলের বাসভূমি। তাদের অবস্থান সমাজের প্রান্তিক সীমানায়। ওদেরই একজন আনসার বাওয়াল। আদি নিবাস সুন্দরবন। বংশ পরম্পরায় বাওয়ালী। চৌদ্দ পুরুষ ধরে ওরা সুন্দরবনের গাছ কেটে, মাছ ধরে, মধু যোগাড় করে জীবন ধারণ করে আসছে। দুই ছেলে নিয়ে আনসার শেখের সংসার। বড় ছেলের নাম মাহাতাপ শেখ আর ছোট ছেলে মন্তেজ শেখ।
    মাহাতাপের তিন মেয়ে, দুই ছেলে। তিন মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের এক ছেলে। মাহাতাপের ছোট ছেলে নিজাম। অবিবাহিত।
    এক চিলতে উঠান ঘিরে মুখোমুখি দুটি গোলপাতা ছাওয়া মাটির ঘর। একটিতে পরিবার নিয়ে থাকে মাহাতাপ শেখ। ওর ঘরের সাথে লাগোয়া ছাপরায় জাহাঙ্গীরের সংসার। উঠানের আরেক দিকে মাটির ঘরটি মন্তেজ শেখের।
    মন্তেজের ঘরে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মোমেনা। মোমেনা তার স্বামী লুৎফরের সাথে হরিণখোলায় থাকে। এক ছেলে আছে মোমেনার। নাম রাজু। মন্তেজের ছোট মেয়ে কমল। বেতের বেড়া দিয়ে আলাদা করা ঘর। ভেতরের দিকে থাকে মন্তেজের বউ এবং মেয়ে। বাইরের দিকে থাকে মন্তেজ শেখ আর তার বুড়ো বাবা।
    ঘরে ফিরে আনসার শেখ দাওয়ায় বসে। কালোরঙা মাটির কলসী থেকে পানি ঢেলে দেয় কমল। মন্তেজ পুরনো গামছা দিয়ে কপাল থেকে ঘাম মোছে।
    এদিক ওদিক তাকিয়ে কমলকে জিজ্ঞেস করে, ‘তর মায় কই?’
    ‘মা রানতিছে’, বলে কমল সামনে থেকে সরে যায়।
    কমল সদ্য কৈশোর পেরোলো। রান্নাবান্না তার ভালো লাগে না। বড়ো ছন্নছাড়া স্বভাব। সারাদিন বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে বনে যায় বাপ মন্তাজ শেখের সাথে। কেওড়া পাতা পেড়ে আনে। সমবয়সী মেয়েদের সাথে কমলের খুব মিলমিশ নেই। একা একা কাউকে না জানিয়ে সে গহীন বনে চলে যায়। নিবিড় ঘন বন। সেখানে সুন্দরী, গরান, গর্জন, গেওয়া, আর ধুন্দল গাছ লম্বা হতে হতে আকাশ ছেয়ে ফেলে। তাকিয়ে দেখতে ওর ভালো লাগে।
    বন জুড়ে মাটি থেকে ধারালো শ্বাসমূল বেরিয়ে আছে। হাঁটা কঠিন। মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। গা ছম ছম করে কমলের। পাশে এঁকেবেঁকে বইছে সরু খাল। খালের পাড়ে ছোট ছোট লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। কখনো বনের ভেতর পুকুর পাড়ে বসে থাকে কমল। মিঠা পানিতে মুখ ডুবিয়ে দেয় মায়া হরিণের ঝাঁক। ঘন গোলপাতার আড়ালে উঁকি দেয় হরিণ শাবক। পেটে ভাত নেই তবু হরিণের সাথে খেলতে যায় সে।
    মন্তেজ শেখের বড় মেয়ে মোমেনা ছেলে রাজুকে নিয়ে এক মাস হয় বাপের বাড়ি এসেছে। সবদিকেই আকাল। মোমেনার স্বামী লুৎফর আসবে কয়েক দিনের মধ্যে। মোমেনা আর রাজুকে নিয়ে হরিণখোলা ফিরে যাবে। রাজুর সাথে সারাদিন কাটে কমলের। মোমেনারা চলে গেলে রাজুকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে। তবু সংসার বলে কথা। মোমেনার তো যেতেই হবে। একদিন আসবে যেদিন কমলও এ বাড়ি ছেড়ে যাবে। বাবা-মা, ঘন জঙ্গলের দীর্ঘ গাছের সারি, আর চেনা হরিণদের ছেড়ে। এই হলো বিধান। জন্মাবধি এমনই দেখে আসছে সে। অন্যথা হলে অকল্যাণ হয়।
    ঘর থেকে বেরোয় কমল। রাজুকে কোলে নিয়ে মন্তেজ শেখের চোখের আড়াল হয়ে এক ছুট লাগায়। বাতাসের ঝাপটা লাগে রাজুর মুখে। রাজু খুশি হয়। জোরে হাসতে থাকে। কমলও গালে টোল ফেলে হাসে। তারপর সটান গিয়ে দাঁড়ায় রজব আলীর দোকানের সামনে।
    এক টাকা দিয়ে দুটো কদমা কিনে। একটা রাজুর মুখে দিয়ে অন্যটা নিজের মুখে পুরে। দোকানের নড়বড়ে বেঞ্চিতে বসে আছে ফিরোজ আর কাশেম চাচা। কমলকে দেখে পিরানের পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করল ফিরোজ।
    ফিরোজ শ্যামলা বর্ণের যুবক। বিশ বছরের ছিপছিপে গড়ন। টগবগে ঘোড়ার মতোই অস্থির। সোনালি স’মিলে কাঠ চেরাইয়ের কাজ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাড়ে তিন মাস প্রায় আটশ’ নৌকা গোলপাতা কাটার অনুমতি পায়। এ সময় ফিরোজের কাজের চাপ বেশি।
    ঘটনা হলো এ মৌসুমে প্রতিদিন কয়েকশ’ বাওয়ালী বনে ঢোকে। কাঠ কাটে। সুন্দরী, পশুর, কাকড়া, ধুন্দল, বাইন, কেওড়া ও গেওয়া গাছ টুকরো টুকরো করে কাটে। বিশেষ কায়দায় নৌকায় লুকিয়ে লোকালয়ে এনে বিক্রি করে। ফিরোজের জানা মতে প্রতি নৌকায় গোলপাতার নিচে লুকিয়ে ও নৌকার নিচে বেঁধে কম করে হলেও পঞ্চাশ থেকে আশি মন গাছের টুকরা আসে। জ্বালানী হিসেবে কাঠগোলায় বিক্রি হয়।
    গড়ে উঠেছে শত শত স’মিল। আইন উপেক্ষা করেই। এসব অবৈধ স’মিলের একটি সোনালি স’মিল। এখানে গাছ চেরাই করে বিভিন্ন শহরে কাঠ পাচার হয়।
    রজব আলী চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। ফিরোজ মোবাইল ফোন রেখে চায়ের কাপ ধরে।
    চায়ে চুমুক দিয়ে রজব আলীকে বলে, ‘সারা রাত কাট চির‍্যে শরীরের আর জুইত পাইনা।’ সাধারনত রাত দশটার পর শুরু হয় চোরাই কাঠ কাটা। কাঠ চেরাই চলে রাতভর।
    ‘জোয়ান মাইনষের এইতো কাজকামের বয়স। এহন কাটের দর কত?’
    ‘কুন কাট? ধরেন, এক সিফটি সুন্দরী কাটের দর চাইর থেকে সাড়ে চাইর হাজার টাকা হইব। পশুর আর ধুন্দলের বাজারদরও ভালো।’
    রজব আলীর সাথে কথা বলার সময় কমলের দিকে আড় চোখে তাকিয়েছে ফিরোজ। কমলকে দেখলেই তার চঞ্চলতা স্থিরতা পায়। সে মুহূর্তে ওর কি করা উচিৎ এ কথা ভাবতে ভাবতেই নিতান্ত বোকার মতো কিছু কাজ করে ফেলে। তাই কমলকে দোকানে দেখে ফিরোজ কথা থামায়। মোবাইল ফোনের দিকে মনোযোগ দেয়।
    কমলের জ্যাঠা মাহাতাপ শেখ দোকানের দিকেই আসছে। জ্যাঠাকে দেখে বাড়ীর দিকে হাঁটা দেয় কমল। সূর্য মাথার ওপর আগুন ঢালছে। কমল ভাবে পুকুরে গিয়ে কয়েকটা ডুব দিতে হবে। হাতে সময় বেশি নেই। রাজুকে ভাত খাওয়াতে হবে। ওর মুখে এখন কদমা দেয়াটা বোকামি হয়েছে।
    মাহাতাপ শেখ এসে ফিরোজের পাশে বসে। চায়ের পয়সা নেই, তবু চায়ের তৃষ্ণা। চায়ের গন্ধে তৃষ্ণা আরো বাড়ে।
    ফিরোজের দিকে তাকিয়ে মাহাতাপ বলে, ‘গরানের পারমিট কবে চালু হবি কোইতি পারবি? শুদু গোলপাতা কাটি খাওন জুটে না, সংসার চলবি ক্যামনে?’
    ‘শুনলাম কাগজ ঢাকা গ্যাছি। এহনো নিদ্দেশ আসেনি। কবে আসবি খোদাই জানে।’
    ‘সারা জন্মই বাদার মাছ মাইরে, কাট কাইটে বউ ছাওয়াল মাইয়াগো খাবাই পরাই মানুষ কোরিছি, এহন মুজুরগিরি কইত্তে হইবে।’
    দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহাতাপ শেখ। কাঠ কাটা নিষিদ্ধ থাকলেও বনের গাছ চুরি থেমে নেই। কাশেম বাওয়াল বৈধভাবে কাঠ সংগ্রহ করেও অনুমতির বাইরে কয়েকগুণ বেশি কাঠ কেটেছে। কিছু দিন আগে সে বড় নৌকা ও ট্রলারের দুপাশে পানির নিচে ডুবিয়ে কাঠ এনেছে। কাঠ এনেছে গোলপাতার নিচে নিচে সাজিয়েও। গ্রামের সবাই এ কথা জানে। বন কর্মকর্তারও জানা। তাকে খুশি রাখার ব্যবস্থা করতে হয়েছে নিম্নবিত্ত কাশেমকে।
    স্বগতোক্তি করে কাশেম, ‘পাশশ মণী গোলপাতার নৌকায় এহন পাচ-সাত হাজার ট্যাকা ঘুষ দিতি হয়। বাওয়ালেরা গাছ চুরি না করি কই যাবি? এই ট্যাকা পোষাবি ক্যামনে?’
    নিচু গলায় মাহাতাপ শেখ কাশেমকে কিছু বলে। ফিরোজ মাহাতাপের বিড়বিড়ানি শোনে কিন্তু কিছু বোঝে না। শুধু এতটুকু বোঝে, এ বছর গরানের পারমিট চালু না হলে, মহাজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে মাহাতপ যে নৌকা বানিয়েছিল, সেটি হয়তো আর কোনো কাজে আসবে না। নৌকা অকেজো হয়ে যাবে।
    ফিরোজ উঠে দাঁড়ায়। আশে পাশে কোথাও কমল নেই। কাঠের দোকানে এতক্ষণে ওর খোঁজ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। মাহাতাপের শূন্য দৃষ্টি পিছনে ফেলে সে সোনালি স’মিলের দিকে পা বাড়ায়।


    বৈশাখের ভোরের হাওয়া ছুটেছে। ঘুমিয়ে আছে চারদিক। মন্তেজ শেখ পাশ ফিরে শোয়। বাবা আনসার শেখের ঘুম খুব হালকা। মুখ খুলে শ্বাস নিচ্ছে বুড়ো। হাপরের মতো বুক ওঠা নামা করছে। রাত পোহাবার বেশি সময় বাকি নেই। টাকা পয়সার চিন্তায় রাতে আজকাল ঘুম হয় না মন্তেজের।
    চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দেয় মন্তেজ। দাওয়ায় পাটি বিছিয়ে নামায পড়ে। মন্তেজের বউ ফাতেমা মাটির সানকিতে রাতের পানিভাত ঢেলে দেয়, সাথে লবন আর শুকনো পোড়া মরিচ দিয়ে মন্তেজের দিকে তাকিয়ে থাকে। লম্বা-চওড়া মানুষটা অভাবের সাথে লড়তে লড়তে কেমন কুঁজো হয়ে গেছে। বয়স দুবছরে বেড়েছে পাঁচ গুন।
    ফাতেমার কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। তার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। মোমেনা সন্তানসম্ভবা। মেয়ের কোনও যত্নআত্তি নেই। দুবেলা খাবার জোটানোর চিন্তায় ফাতেমাও অস্থির থাকে। এতো হ্যাপা এই বয়সে আর ভালো লাগে না। বয়সইবা কত ফাতেমার? বড়জোর চল্লিশ কি বেয়াল্লিশ। দুই মেয়ে, এক নাতিকে পেট পুরে একবেলা খাওয়াতে পারলে, ফাতেমা আল্লাহর কাছে শোকর গুজার করে।
    ভাত খেয়ে গুটুর গুটুর হুক্কা টানে মন্তেজ শেখ। এত অভাবের মধ্যেও তামাকপানের নেশা ছাড়তে পারেনি। কবে হুক্কা টানা শুরু করেছিল মনে নেই। মন্তেজ বাদায় মাছ ধরার কথা ভাবছিল এমন সময় লুৎফর এসে মন্তেজ এর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। মন্তেজ শেখ প্রসন্ন মুখে লুৎফরকে দেখে। বড় ভালো ছেলে। মোমেনাকে সুখে রেখেছে।
    লুৎফরের গলার আওয়াজ শুনে একে একে সবাই ঘরের বাইরে আসে। ছেলে কোলে নিয়ে মোমেনা দাওয়ার খুঁটি ধরে দাঁড়ায়। মুখে খুশির লালচে ভাব। রাজু মায়ের কোল থেকে নেমে বাবার দিকে এগিয়ে যায়। কোমরে বাঁধা কালো কাইতন। তিনটি ঘুঙুর বাজে টিং টিং করে।
    কাশেমের সাথে মন্তেজের কথা হয়েছে। মধু আর মোম সংগ্রহের জন্য কাশেমের দলের সাথে বনে যাবে মন্তেজ। কাঠ কাটার কাজ বন্ধ প্রায়। কাশেমের সাথে মাহাতাপের ছেলে জাহাঙ্গীরও যাবে। এখন মধুর মৌসুম চলছে। প্রায় দুই আড়াই মাস ধরে চলবে মধু সংগ্রহ। মন্তেজ জানে বৃষ্টি হলে মধুর পরিমাণ বাড়ে। এবার বেশি বৃষ্টি হওয়াতে মধুর ব্যাপারে সে আশাবাদী।
    সাত জনের দুটি ডিঙ্গি নিয়ে চৌদ্দ জনের বহর হবে। লোকজন এখনও সব ঠিক হয়নি। নরেন গুণিন নিশ্চিত যাবে। বংশ পরম্পরায় সে বাঘ সাধক। সিদ্ধ গুণিন। সাধনার জোরে বাঘ বশীভূত করতে পারে। কাশেমের সাথে কথা পাকা করেছে মন্তেজ। পাস-পারমিট পাবার পনের দিন পর রওনা হবে বহর।
    কাশেমের দল এর আগে একবার বনদস্যুদের হাতে পড়েছে। সে বহরে জাহাঙ্গীর ছিল। ডাকাতের দল নৌকায় কিছু না পেয়ে জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজনকে তুলে নেয়। ডাকাতদের নৌকায় প্রায় তিন মাসের মতো মাঝিগিরি করে জাহাঙ্গীর। মাহাতাপ শেখ দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনে।
    মন্তেজ এবার জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যাবার ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় ছিল। জাহাঙ্গীরের কোনো দ্বিধা ছিল না। অভাব অনটনে জীবন ধারণ করাই কঠিন। জান থাকলে তবে তো জান যাবার প্রশ্ন। লুৎফরও যেতে চায়। মন্তেজ মনে মনে খুশি হয়। দলে যত শক্তিশালী সামর্থবান পুরুষ থাকে তত সুবিধা।
    কাশেম মহাজনের কাছ থেকে প্রায় লাখ খানেক টাকা নিয়েছে। উপার্জনের প্রায় পুরো টাকাটাই মহাজনকে দিয়ে দিতে হবে। রাজস্বের টাকা দিতে হবে বন বিভাগকে। সুন্দরবনে জলে কুমীর আর ডাঙ্গায় বাঘের সাথে আছে বনদস্যু আর বনকর্তা। টাকা না দিলে এরা কাশেমদের অপহরণ করবে অথবা বন থেকেই বের করে দেবে। বাওয়ালী আর মৌয়ালদের কাছে এদের মধ্যে আচরণগত তেমন পার্থক্য নেই। দুটি দলকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিশ্রমের ভাগ দিতে হয়।
    ফাতেমা রঙ জ্বলা একটা প্লাস্টিকের বাটিতে মুড়ি খেতে দিল লুৎফরকে। শুধু মুড়ি। রাজু তার বাবার কোলে বসে মুড়ির বাটির দিকে হাত বাড়ায়। লুৎফর রাজুর হাত সরিয়ে দেয়। নিজের হাতে ছেলের মুখে মুড়ি ঢুকিয়ে দেয়। আনসার শেখ লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে আসে।
    মন্তেজ শেখ লুৎফরকে বলে, ‘মাছ মারতি বাদায় যামু। যাবি নাকি?’
    লুৎফর কিছু বলার আগেই ফাতেমা বলে, ‘এহনি কি যাবি? হবায় আইল।’
    ‘গেলেই পারি। কান মাগুর আর গুলশা ট্যাংরার ঝোল দিইয়ি ভাত খাতি পারব’, লুৎফর শাশুড়িকে বলে।
    মোমেনা মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। বাদার পুকুরে মাছ খেতে বাঘ আসে। তাই ওর ভয় লাগে। লুৎফর জানায় সপ্তাহ খানেক আগে। তাদের পাশের গ্রামের নিজাম, বাগদা রেনুপোনা ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে। নিজামের লাশ পাওয়া যায় দুকিলোমিটার দূরে বোষ্টমখালের মুখে।
    লুৎফর বলে, ‘শুকনা কাঠ আনার জন্যি বনে ঢুকছিলাম। সকালের দিকে বাঘ তারে ধরি বনে নিয়ে যায়। রক্তের ছাপ দেখি আমরা এলাকার লোকজনরে খবর দিই। পরে বনকর্মীরা খালের পারে লাশ পায়।’
    মন্তেজ শেখ হুক্কা নামিয়ে বলে, ‘এ বছর ভর এট্টা বাঘ দেখা তো দূরের কোতা বাঘের ডাক শুনিনি, বাদারবনে বাঘের পা’র খোঁজও চোখি পড়িনি।’
    ‘কিছু হইবনি। বনবিবির দোয়া আছে আমাদির সাথে’, লুৎফর বলে। ওর এ কথায় মনে ভরসা পায় সবাই।
    সকালের বাতাস বিষণ্ণ হয়ে যায়। লুৎফর মুখে না বললেও সবাই জানে। নিজাম অবৈধভাবে ঝিনুক খুঁটে, মাছ আর কাঁকড়া ধরে। টহল ফাঁড়িতে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে নিজাম বনে ঢোকে। মাছ-কাঁকড়া-রেনুপোনা ধরে। বৈধ অনুমতি নেই। তাই বাঘের হামলায় প্রাণ গেলেও নিজামের পরিবার কোনো ধরনের সরকারী সাহায্য পাবে না।
    রাজুর চারপাশে মুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। বাবার কোল থেকে মাটিতে নেমে যায়। পাটির ওপর পড়ে থাকা মুড়ি খুঁটে খুঁটে তুলে মুখে দেয়।


    কাশেম মধু সংগ্রহের অনুমতির কাগজ পেয়েছে। মন্তেজের সাথে দেখা করে ও। বাজার ঘাট করে, লোকজন খবর দেয়, মহাজনের সাথে কথা বলে। একই সাথে দেড়-দুই মাসের যোগাড় যন্ত্র করা। এসব কী মুখের কথা!
    নির্দিষ্ট দিনে বনবিবি আর বড় গাজী খানের দোয়া নিয়ে নৌকা ছাড়ে কাশেম।
    তেরজনের জন্য দু’টি ডিঙ্গি নৌকা ঠিক করা। আরেকটা বড় নৌকায় দুমাসের বাজার থাকবে। বড় নৌকাকে ওরা ‘ভর’ বলে। ভর জঙ্গলের মুখে বন অফিসের আশেপাশে বাঁধা থাকবে। একজন ভর পাহারা দেবে। আমজাদকে ভরের দায়িত্ব দেয় কাশেম।
    মোমেনার নিষেধ অগ্রাহ্য করে লুৎফর শ্বশুর মন্তেজের সাথে মধু সুংগ্রহ করতে যায়।
    ভর থেকে এক সপ্তাহের খাবারের মজুদ নিয়ে ডিঙ্গি ছাড়ে কাশেম। সবাই মাথার পেছনে মানুষের মুখের মুখোশ পরেছে। মুখোশগুলো রঙ্গিন আর প্লাস্টিকের। বাঘ সবসময় অসতর্ক মুহূর্তে পেছন থেকে হামলা করে। মূলত ঘাড় লক্ষ্য করে। মুখোশ দেখলে বাঘ মনে করে এটাই সামনের দিক। তখন আর আক্রমণ করে না।
    নদী থেকে দুকিলোমিটার দূরে জঙ্গলের ভেতর খাল। খাল ধরে দুপাশে সবুজ নলখাগড়া। বেতের ঝোপঝাড় আর বনভূমি রেখে পানি চিরে চিরে ডিঙ্গি নৌকা এগোয়। ডাঙ্গায় যেমন রাস্তা, সুন্দর বনে তেমন খাল। আর একমাত্র বাহন নৌকা। ওপরে সাদা–ধুসর মেঘস্নিগ্ধ আকাশ। যত দূর চোখ যায় অবাধ খোলামেলা।
    খাল একবার বাঁক নিয়ে বহুদূর চলে গেছে। বড় খাল থেকে ডিঙ্গি ছোট খালে গিয়ে পড়ে। সরু সরু খালগুলো জঙ্গলের ভেতর বয়ে গেছে। মাঝে মাঝে এক হাত দিয়ে খালের ওপর ঝুঁকে থাকা গাছের ডাল সরিয়ে দেয় লুৎফর।
    জঙ্গলের কাছে সুবিধাজনক জায়গায় এসে সেলিম মাঝি নৌকা ভিড়ায়। নৌকা থেকে নেমে কাদা পানি পেরিয়ে, ডাঙায় উঠতে উঠতে সুর করে বনবিবির মন্ত্র পড়ে কাশেম। বন দেবীকে সম্মান জানায়। হিংস্র বাঘের কবল থেকে রক্ষা করবে বন দেবী। ধর্মের দোহাই দিয়ে টপাটপ মাটি ছোঁয় সবাই। তারপর কপালে আর মাথায় সেই মাটি বুলায়ে নেয়। বনের ভেতর ঢুকে পড়ে সবাই।
    ডিঙ্গিতে থাকে শুধু সেলিম। দুটো ডিঙ্গিই ও সামলাবে আর রান্না করবে। একটা নৌকার সাথে আরেকটা নৌকা বিশেষভাবে বেঁধেছে। খাল ধরে সঙ্কেত দিয়ে ডাঙ্গায় থাকা কাশেমদের অনুসরণ করবে।
    খালের ধার ঘেঁষে বনের দিকে হেঁটে যায় কাশেমের বহর। মৌচাকের খোঁজে দৃষ্টি ওপরের দিকে রেখে জাহাঙ্গীর, লুৎফর, মন্তাজ আর কাশেম হাঁটতে থাকে। বহরের বাকি লোকেরা শব্দ শোনা যায় এমন দূরত্বে মৌচাকের খোঁজে হাঁটছে। বড় মৌচাকের আশেপাশে বাঘ ঘুরে ফেরে।
    নিরাপত্তার জন্য নরেন ওঝা আছে। মন্ত্রমালার ওপর অগাধ আস্থা ওদের। নরেন ওঝা ধূপ-ধুনো জ্বালায়। এ গাছে ফুঁ দেয়, সে গাছের পাতা নাড়ে। বাঘের হাত থেকে মৌয়ালদের বাঁচাতে ধোঁয়া দেয়, মন্ত্র পড়ে। বাওয়ালী-মৌয়ালদের মনের জোর বাড়ে।
    কাশেমের পাশে সুন্দরী গাছে ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে। হলুদ বর্ণের। পাশের কিছু গাছে এখনো ফুল আসেনি। গাছের দিকে তাকিয়ে কাশেম বলে, ‘এই গাছটায় ফুল হলি কতো যে মধু হবি, আল্লাহ জানে আর মা বনবিবি জানে!’
    মন্তেজ উদাস গলায় বলে, ‘জোঙ্গলের জন্যি বাইচ্চে আছি। জোঙ্গলের ভিতর ঢুকলি সংসারের কথা কিছু মনে থাহে না।’
    ‘সিডর আমাগের পথের ফকির করলিও বাদাবন আমাগের বাঁচাই রাইখিছে। বাদা ধ্বংস হলি আমরা কনে যাব?’ জাহাঙ্গীর উত্তর দেয়।
    ‘বাদাবন মা’র মতো আমাগের প্রাণ রক্ষা কইরছে’, কাশেম বলে, ‘জঙ্গলরে ছেদ্দা করি।’
    মন্তেজ বাওয়াল নীরবে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেয়। জাহাঙ্গীর গাছের গোড়ায় কোপ দিতেই গাছ থেকে একটা কেউটে তার পায়ের সামনে পড়ে। লাফ দিয়ে সরে যায় ও। গাছ কেটে লাঠি বানায় জাহাঙ্গীর আর লুৎফর। এই লাঠি তাদের কাজে লাগবে।
    বড় কোনো চাক দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে ‘কুউউ’ শব্দ করে যোগাযোগ রাখছে দুটি দল। দিবাচর পাখিদের বিচিত্র কিক-কিক, টি-টি-টি, ক্রি-ক্রি, ট্রু-ট্রু-ট্রু ডাক বনকে জীবন্ত করে রেখেছে। পাখিদের মধ্যে গাঙ শালিক, টিয়া, হরিয়াল, ঘুঘু, কাক, চিল, কুরাল বেশি।
    মন্তেজ দ্যাখে, কেওড়া গাছের কোটর থেকে জলপাই সবুজ পালক ফেলে ‘উইয়ু-উইয়ু’ ডাকতে ডাকতে উড়ে গেল একটা ছোট হরিয়াল। কী জোরে ডাকে এই পাখি! একটা রাঙ্গাউল্টি ঠোঁট ঘষছে সুন্দরীর ডালে। বড় লাজুক। খেজুরের মতো এক ধরনের ফল হয় হেতাল গাছে। হেতাল ফল ছিঁড়ে খাচ্ছে বানরের দল। এ ডাল থেকে সে ডালে বানরদলের ঝাঁপাঝাঁপিতে বনভূমি চঞ্চল।
    গরান গাছে বড় একটা মৌচাক দেখে মন্তেজ ‘আল্লাল্লা’ হাঁক ছড়ে। সবাই জড়ো হয় গাছের কাছে। প্রায় মিনিট দশেক উল্লাস করে। লম্বা ঘাস দিয়ে আঁটি বানায় কাশেম। ঝাড়নীর মতো। মন্ত্র পড়তে পড়তে আঁটিতে আগুন ধরায়। সবুজ ঘাস পুড়ে ঘন ধোঁয়ায় চারিদিক ভরে যায়। ধোঁয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় লুৎফর। ঘাসের আঁটি নিয়ে গাছে উঠে যায়। মধুর চাকের কাছে ধোঁয়া দেয়। দড়ি টেনে বালতি গাছে ওঠায়। চাক কেটে কেটে বালতিতে রাখে।
    মন্তেজ চাক থেকে এক টুকরো কাটে। সেটি গাছের নিচে রেখে জঙ্গলের দেবীকে উৎসর্গ করে। তারপর মৌচাকের টুকরো চিপে মধু বের করে। সিলভারের পাতিলের মুখে পাতলা কাপড়ের ওপর মধু ঝরে। কাপড় চুইয়ে বিশুদ্ধ মধু পাতিলে জমা হয়।
    পবিত্র মধু! মৌয়ালদের কাছে এক ফোঁটা মধু এক বিন্দু রক্তের চেয়ে বেশি মূল্যবান। এই মধুতে ভাগ বসায় বনরক্ষী, বনদস্যু, মহাজন। তবু এই মধুই ওদের বাঁচিয়ে রাখে। এক সপ্তাহ পর মধু নিয়ে ভরে ফিরে যাবে ওরা। খাবার নিয়ে আবার জঙ্গলে ঢুকবে।
    ফেলে দেয়া চাকের অবশিষ্ট অংশে কিছু মৌমাছি উড়ে এসে বসে। মন্তেজ আলতো হাতে মৌমাছি উড়িয়ে দেয়। সেদিন আর তেমন মধু পাওয়া গেল না। সূর্যাস্তের সময় ডিঙ্গিতে ফেরত এলো সবাই। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে সুন্দরবনের বুকে। রাতজাগা পাখি ডঙ্গ আর নানান জাতের প্যাঁচার ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। হারিকেন আর মোমবাতি জ্বালায় কাশেম। রাতের খাওয়া শেষ করে দ্রুত।
    বড় খাল থেকে ওরা ডিঙ্গি নিয়ে ছোট খালে চলে যায়। ডিঙ্গিতে ছৈ তুলে এর চারপাশ গোলপাতা দিয়ে ঘিরে দেয়। বাতি নিভিয়ে ফেলে। রাতে বাঘের চেয়েও বেশি ভয় বনদস্যুদের। ডিঙ্গির ভেতর কোনো রকমে রাত কাটায় ওরা। সকাল সকাল মধুর খোঁজে জঙ্গলে ঢুকতে হবে।


    আনসার শেখের কাছে বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এই বাড়ির তিনজন পুরুষ মধু সংগ্রহ করতে গেছে সপ্তাহ খানেক হলো। ঘরের সাথে লাগোয়া দাওয়ায় পাটি পেতে আনসার শেখ বসে। উঠানের সামনে এক মানুষ সমান উঁচু গোলপাতার বেড়া। তারপর রাস্তা। রাস্তার একদিকে মাঠ। মাঠের পাশে জঙ্গল। জঙ্গল দিয়ে সন্ধ্যা আসে। ধীরে মাঠ পেরিয়ে বাওয়ালীদের ঘরের উঠানে সন্ধ্যা নামে। লালচে আভা মিলিয়ে অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক।
    কমল তার দাদার ঘাড়ে আর হাতে তেল ঢেলে ঘষে দিচ্ছে। কালি জিরার তেল। আজকে আবার আনসার শেখের ব্যথা শুরু হয়েছে। রাতভর কষ্ট পাবে।
    প্রায় ত্রিশ বছর আগের চৈত্র মাসের একদিন। আনসার শেখ নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল। সাথে ছিল বড় ছেলে। আঠার বছরের মাহাতাপ। সকাল হয়ে আসছে। ঝাপসা অন্ধকার চারদিকে। বন থেকে আচমকা একটা বাঘ আনসার বাওয়ালের শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মাহাতাপ সাথে সাথে বৈঠা হাতে নিয়ে বাঘের মাথায় বাড়ি দেয়। বাঘ আনসার শেখকে ফেলে চলে যায়।
    থাবা আর নখের আঘাতে তার সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় কয়েক মাস পর আনসার শেখ সুস্থ হয়ে উঠল। তবে ঘাড় উঁচু করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এখনো বাম হাত মাঝে মাঝে অবশ লাগে। অমাবস্যা–পূর্ণিমার গোন এলে সারারাত যন্ত্রণায় কষ্ট পায়।
    আনসার বাওয়ালের সবচেয়ে কাছের আর প্রিয় কমল। ভাসা ভাসা চোখের নাতনির দিকে তাকালে মন কেমন করে। কমলের চোখে আলোর ঝিলিক খেলে যায়। দুচোখের বাইরের কোণ থেকে ভেতরের দিকে। তারপর হঠাৎ মিলিয়ে যায়। আলোর ঝিলিক শুধু আনসার শেখ দেখে আর কেউ না। দাদা ছাড়া আর সবাই কমলের ওপর বিরক্ত। গোসল করতে গেল তো পুকুরের দিকে তাকিয়ে কমল কাটিয়ে দিল আধ ঘণ্টা। তড়িঘড়ি করে দুতিন ডুব দিয়ে হনহন করে হেঁটে বাড়িমুখো। কাপড় চিপে দড়িতে শুকাতে দেয়। ঢেউ খেলানো কোমর সমান ভেজা চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা ঝরে। সে পানিতে ভিজে যায় কমলের কাঁধ-কোমর।
    ফাতেমা মেয়েকে বলে বলে ক্ষান্ত হয়েছে। বলেও লাভ নেই। বেখেয়ালি কমল কখনো গা মোছে না, চুল ঝাড়ে না। ঘোর শীতেও গায়ে-মাথায় তেল দেয় না। তবু কমলের সর্বাঙ্গে বুনো সৌন্দর্য ফোটে। বাদা বনের আলো–হাওয়া-জলের ছোঁয়ায় কমল সতেজ সজীব।
    কমল যেন সত্যিকারের বনের মেয়ে। সারাক্ষণ মন পড়ে থাকে বাদার বনে। কমলের কাজকর্ম এলোমেলো হয়ে যায়। পাতা আর লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে শঙ্খচূড়ের নিঃশ্বাস শুনে সে। ভয়ে আর বিস্ময়ে গা শিরশির করে। লাকড়ি আর পাতার কথা মনে থাকে না। জঙ্গলের খালে মাছ ধরতে গিয়ে মাছের কথা ভুলে জোয়ার-ভাটার পিছুপিছু ঘুরে ফিরে।
    খালের দুই পারে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ গাছের সারি। অনেক ওপরে আকাশের কাছাকাছি গিয়ে দু’পাশের গাছগুলো ঝুঁকে থাকে। খালের ওপরটা যেন সবুজ ছাউনী দেয়া ঘেরা। সেই ডাল পাতার ছাউনীর ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আলো এসে পড়ে পানির বুকে। আলো পাতার সবুজ রং মিশিয়ে দেয় খালের পানিতে।
    ঝাঁক ঝাঁক হরিণ খালের ওপর দিয়ে এক দৌড়ে এক প্রান্ত পেরিয়ে আরেক প্রান্তে চলে যায়। খালের হালকা সবুজাভ পানিতে প্রবল ঢেউ ওঠে। পানির ফোয়ারা ছিটকে জলকণায় ভিজে যায় হরিণেরা। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে কমল।
    রাজু ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে। মোমেনা হালকাভাবে পিঠ চাপড়ায়। মাই মুখে দিলে ছেলে কান্না থামায়। কুপি হাতে ফাতেমা ঘরে ঢোকে। কুপির আলোতে ঘন আঁধারের কিছুই হয় না। কালো ধোঁয়া নিয়ে পোড়া তেলের গন্ধ হাওয়ায় মেশে। দাদার বাঁ হাতে তেল ঘষে কমল। চোখ দূরে মগ্ন। পাটখড়িতে আগুন নিয়ে কেউ যাচ্ছে। এত দূর থেকে ঠিক ঠাহর করতে পারে না কমল। দাদাকে রেখে সে উঠে যায়। বেড়া পার হতেই দেখে ফিরোজ দাঁড়িয়ে। হাসির আভাস ভাসে কমলের ঠোঁটে।
    এক হাতে আচমকা টান দিয়ে কমলকে জাম গাছের নিচে নিয়ে যায় ফিরোজ। জাম গাছ ধরে কোনো মতে টাল সামলায় কমল। নিকষ কালো রাত। কেউ কালো রঙ গুলিয়ে বাটি উল্টিয়ে সবটুকু রঙ সারা আকাশ জুড়ে ঢেলে দিয়েছে। সেই রঙ গলে পড়ছে পৃথিবীর ওপর। জঙ্গল আর মাঠ প্রান্তর ছেয়ে গেছে অন্ধকার আবরণে। ফিরোজের এক হাতে পাটখড়ির মশাল। অন্য হাতে কমলের হাত।
    ফিরোজ জামগাছের সাথে কমলকে সামান্য চেপে ধরে, ‘তুই আমার জামতলার রানি।’
    কমল মৃদু হাসে, ‘রানি না, তোমার মাথা!’
    কমল কথা শেষ করতে পারে না। জাম পাতার গাঢ় ছায়া গড়িয়ে নামে ঠোঁটে। আগুনের আভায় কমলের মুখের রেখা তীক্ষ্ণ। কেশচূর্ণ এসে পড়ছে চোখে-মুখে। পাটকাঠির আগুন বাতাসের স্পর্শে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়। সোনালি আগুনকণা ভাসছে। রূপালি জোনাকির ফোঁটা উড়ে বেড়াচ্ছে। ফিরোজ আর কমল। আর সোনালি-রূপালি বিন্দুর ঝিকমিক।


    পরদিন দুপুর বেলা এজমালি উঠানের এক প্রান্তে জাল বুনছে মাহাতাপ। মন্তেজের ঘরে প্রাত্যহিক কাজ শেষ। আনসার শেখ এই সময়টা ঘুমায় না। এমনিতে তার ঘুম কম। দুপুরে ঘুমালে রাতে আর ঘুম আসে না। সে দাওয়ায় পাটি পেতে বসে মাহাতাপের জাল বোনা দেখছে।
    ফিরোজ এসে মাহাতাপকে জানাল খবর ভালো না।
    মাহাতাপ ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে বিপদের কথা বলল। লোকের মুখে ফিরোজ শুনে এসেছে মন্তেজ আর লুৎফরকে বাঘ নিয়ে গেছে।
    পুরো ঘটনা সম্পর্কে এখনো কেউ নিশ্চিত নয়। তবু বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কান্নার শব্দে। আনসার শেখের প্রবল শ্বাস টান ওঠে। কমল বার বার চোখ মোছে। কী করবে ও? বুঝতে পারে না। রাজুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। উঠানে নারী-পুরুষের ভিড় বাড়তে থাকে। আশেপাশের বাড়ির মেয়েরা এসে ফাতেমা আর মোমেনার বিলাপ শুনতে পায়।
    সন্ধ্যার মুখেই আনসার শেখের বাড়িতে মাহাতাপ, ফিরোজ, জাহাঙ্গীর এবং কাশেমসহ আরো অনেকে দুটো লাশ নিয়ে ঢোকে। কান্নার স্বর উঁচুতে ওঠে। বহুদূর থেকে সে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। বিভিন্ন মানুষের মুখে শোনা খণ্ডিত অংশগুলো জুড়লে ঘটনার পরম্পরা কিছু বোঝা যায়।
    মধুর চাক খুঁজতে মন্তেজ আর লুৎফর বেশ খানিকটা দূর এগিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একটা বাঘ মন্তেজের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। লুৎফর কাছেই ছিল। সে বাঘের মুখে লাঠি ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। বাঘের থাবার আঘাতে ওর ঘাড় ভেঙ্গে যায়। তারপর বাঘ মন্তেজ শেখের ঘাড় কামড়ে ধরে নিয়ে যায় জঙ্গলের ভেতর। জাহাঙ্গীর আর কাশেম গিয়ে বন কর্মকর্তাদের খবর দেয়। গভীর বন থেকে মন্তেতেজের আংশিক লাশ নিয়ে আসে ওরা।
    নানান কথা বলে একেকজন। ওরা শত্রু-মিত্র, ঈর্ষা-ক্ষোভ-সুখ-দুখের ভাগীদার। আত্মীয়-প্রতিবেশী বিভিন্ন ধরনের লোকজনের কান্না, মতামত, আফসোস, কার্যকারণের আলাপচারিতায় আনসার শেখের বাড়ি শোকাবহ হয়ে ওঠে।
    -‘মোমেনার কি হবি? এই বয়সের বিধবা। ছোড সাওয়াল নিয়ি কই যাবি?’
    - ‘ভালো মানুষ মন্তেজ বাওয়াল চলি গেলো। এখন কে আমাগের দেকবি!’
    - গুণিনের মন্ত্রে ভুল ছিল। নইলে বাঘ বশ করা নরেন গুণিনের জন্যি কোনো ব্যাপার না।’
    -‘ফাতেমার কি হবি? দিন চলবি ক্যামনে?’
    -‘বাঘ সামনে দি ধরলি কিছু করা যেত। পিছন থেইকে ধরলি রক্ষা নাই।’
    মোমেনার অনাগত সন্তানের কথা কারো মনে থাকে না কিংবা থাকলেও এত বড় দুর্যোগের কথা কেউ মুখে আনে না। যেন এই নির্মম সত্য কথাটি অনুচ্চারিত থাকলে একদিন মিথ্যায় পরিনত হবে। হরিণখোলা থেকে লোকজন আসে। লুৎফরের মৃত্যু এবং মোমেনার দুর্ভাগ্য দুটোই তাদের কাঁদায়। দাফন-কাফনের দ্রুত ব্যবস্থার জন্য কয়েকজন মাহাতাপকে ডেকে আনে। কাজ শেষ করে যে যার ঘরে ফিরে যায়।
    কী থেকে কী হলো এটা বুঝতে বুঝতেই বেশ কিছুদিন কেটে গেল। মন্তাজ শেখ নেই একথা ফাতেমা ভাবতে পারে না। মোমেনা হরিণখোলায় ফিরে যায়নি। ওর মাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে। কথাবার্তা প্রায় বন্ধ। বললেও অসংলগ্ন কথা বলে। নিজেকে সামলায় ফাতেমা। সবার কাছে চেয়েচিন্তে, হাত পেতে কয়েকটা দিন গেছে। আর কত? সবার একই হাঁড়ির হাল। রাজুকে কোলে নিয়ে মহাজনের কাছে যায় ফাতেমা। যদি কোন উপায় হয়।
    ইতিহাস সাক্ষী, কোনো দিন, কোনো মহাজন, কোনো দাদন ব্যবসায়ী তাদের মাঝি, বাওয়ালী বা মৌয়ালদের জন্য দয়া দেখায়নি। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।
    ব্যক্তিগত সাহায্য দূরের কথা মহাজন জানিয়ে দিল, ‘মন্তেজ বা লুৎফর কারো জন্যি সরকারী সাহায্য পাওয়া যাবি না। ওদের কারো নাম সরকারী লিস্টে নেই।’
    জঙ্গলে গেলে বাঘ খেতেই পারে। মহাজনের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
    এগিয়ে এলো পাশের বাড়ির রহিমা চাচি। কমলকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দিল। মানুষের বাসা-বাড়িতে কিংবা গার্মেন্টস-এ রহিমা নিজ দায়িত্বে ঢুকিয়ে দিবে। এটুকু সুযোগই বা আজকালকার দিনে কে কাকে দেয়। তাছাড়া রহিমাকে বিশ্বাস করা যায়। গ্রামের অনেক মেয়েকেই সে ঢাকায় ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
    ফাতেমার মুখে এসব কথা শুনে কমল কাঁদতে থাকে।
    মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে, ‘আমি যাতি চাই না। তোমাগের রাইখে আমি ঢাকা যামু না।’
    ফাতেমা তার এই ক্ষ্যাপা মেয়েকে নিয়ে এমনিতেই চিন্তায় থাকে। কিন্তু এখন আর এসব ভাবনা চিন্তাজনিত বিলাসিতার সুযোগ নেই। মোমেনাকে এই অবস্থায় রেখে ফাতেমা কোথাও যেতে পারবে না। কমল ঢাকা না গেলে এই পরিবারের টিকে থাকা সম্ভব না। উপায়হীন, সহায়হীন ফাতেমা মেয়েকে ধরে কাঁদতে থাকে।
    করাতকল বন্ধ করে ফিরোজ। স’মিলের সামনে কাটা গাছের খণ্ডিত গোল অংশের ওপর বসে থাকে। বিড়ি ধরায়। কমলকে বিয়ে করলেও সমস্যার সমাধান হবে না। নিজের পরিবারই অস্বচ্ছল। আরেকটা পরিবারের দায়িত্ব নেবার মতো উপার্জন কই?
    কয়রার ভাত উঠে গেল কমলের কপাল থেকে। ঢাকা শহরের বিরাট গহ্বরে কমল কোথায় তলিয়ে যাবে, কে জানে? ঝকমকে শহর বড় সুবিধার না।
    বিড়িতে টান দিতে ভুলে যায় ফিরোজ। কষাটে লাগে মুখের ভিতরটা। নিভে যাওয়া বিড়ি আর ধরায় না। ছুঁড়ে ফেলে দেয়। শুকাতে দেয়া কাঠের তক্তার ফাঁকে পড়ে থাকে অসমাপ্ত বিড়ির টুকরো।
    জঙ্গলের দিকে হাঁটতে থাকে কমল। লালফিতার ছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যায় রূপকথার রাজ্যে। একটা গরান গাছ জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফিরোজের কথা ভাবে না, হরিণও না। আগামীকাল সকালে খুলনা রওনা হবে রহিমা আর কমল। সেখান থেকে ঢাকা। বুক ভরে শ্বাস নেয় কমল। অস্তিত্ব জুড়ে বনজ গন্ধ। বাতাসের শব্দ।
    কমলকে ভালোবেসে পাতা ঝরায় গরান, কেওড়া, সুন্দরী। ওর চোখ টলটলে। আশ্চর্য স্মিত হাসি ঠোঁটের কোণে। কমল বাওয়ালীর ওপর দিয়ে বয়ে যায় বুনো হাওয়া।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপার বাংলা | ২২ মে ২০২০ | ২৭৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ২২ মে ২০২০ ২২:২৫93570
  • সত্যিকারের বনের মেয়ের কাহিনী। শেষটা বড় মোচড়-দেওয়া ! 

  • ইশরাত তানিয়া | ২২ মে ২০২০ ২৩:১৬93571
  • গল্পপাঠের জন্য ধন্যবাদ, প্রতিভা দি! বন আর বনের মেয়ে লড়াই করে বেঁচে আছে। বাদাবন এবারও বুক পেতে সাধ্যমত আমফান সুপার সাইক্লোন ঠেকিয়েছে। 

    শুভেচ্ছা! 

  • বিপ্লব রহমান | ২৩ মে ২০২০ ২১:২৭93582
  • ইশরাত,  

    এ এক বার বার পড়ার মতো জীবন্ত সুন্দরবনের গল্প কথা। 

    তথ্য সাংবাদিকতার পেশাগত কারণে  এপারের বাদা বন, খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাটের বাওয়াল জীবন খুব কাছ থেকে দেখা। তাই ঘটনা পরম্পরা যেন আরও আপন, এমন কী বনদেবী, জলদস্যু, বাঘ, কাঠচুরি, অবৈধ স'মিল, মাছের রেনু ইত্যাদি। 

    শুধু অনু-নোক্তা -- ফিরোজের মোবাইল ফোনের সাথে মন্তাজের গুটুর গুটুর হুক্কায়।  শেষোক্ত বস্তুটি বোধহয় আরও দুই দশক আগে বিদায় হয়েছে।

    প্রসংগত, বাওয়াল বিনোদন গোলপাতার রস ও অবৈধ বিষ টোপে (বেশীর ভাগ সময়ই কীটনাশক) মাছ শিকার রাখতে পারতেন।  অবশ্য সবই লেখকের অভিরুচি।              

    আর দেখুন, সিডরের মতো এবারো আম্ফান বুক দিয়ে আগলেছে বাংলাদেশের দক্ষিণের জনপদ। আর সেই বন মাতাকেই জীবনের তাড়নায়, কখনো উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্পে দিনের পর দিন উজাড় হতে হচ্ছে! 

    কী আয়রনি!!              

  • একলহমা | ২৬ মে ২০২০ ০২:৩৪93688
  • সুলিখিত।

    বাদার জীবনে শোষণের এ ছবি বোধহয় বদলাবে না কোন দিন।  

  • Rajkumar Raychaudhuri | ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩৯98754
  • দারুণ লাগল। গল্পটা বেস উপভোগ্য।  সুন্দর বলের মানুঢের লড়াই টা স্পষ্ট  দেখতে পেলাম

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন