অনেক সময় লেখক নিজের বিপরীত অবস্থানে গিয়েও তো আখ্যান লিখতে পারে। সেক্ষেত্রে লেখকের স্বর আর চরিত্রের স্বর কখনোই এক হবে না। একজন পুরুষ লেখকের কলম যখন নারীর জবানীতে আখ্যান লেখে কিংবা একজন নারী লেখকের কলমে পুরুষ যখন গল্পকথক (প্রোটাগোনিস্ট) হয়ে ওঠে তখন আলাদা করে লেখকের স্বর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। লেখক অভিজ্ঞতা, রুচি, আবেগ, পর্যবেক্ষণ, দর্শন, ইতিহাসসহ সংস্কৃতির অগণন সূত্র মিলিয়ে বিপরীত লিঙ্গের চরিত্রটিকে তৈরি করে। চরিত্রটি লেখকের স্বরে নয় ভিন্নস্বরে কথা বলে। আসলে তখন ভাষা কথা বলে। লেখক না। অটো রাইটিং বা স্বতোলিখনে যা রচিত হয় সেটাই টেক্সট হয়ে ওঠে। ভাষা পারফর্ম করতে থাকে, লেখা তৈরি হতে থাকে। অটোম্যাটিক রাইটিং শব্দটা পড়ে মনে হলো- সব লেখাই আসলে অটো রাইটিং। ... ...
রাজার বুঝিতে দেরী হইয়া গেল। দেরীতে হইলেও অন্তত সত্য বুঝিয়া পাইলেন। ভৌগোলিক বিভাজনে জাতি-ধর্ম-ভাষার বিবাদ মিটিল না। রাজার মনে দুঃখ জাগিল। প্রজাদের মধ্যকার ভিন্নতা আর বৈচিত্র্যকে মান্যতার ও শ্রদ্ধার শিক্ষা দিতে হইত। এই কথা কেন পিতৃপুরুষের ভাবনায় বিশেষ স্থান পাইল না? সহনশীলতা আর উদারতা প্রতিষ্ঠা পাইল না। তাই বিভেদ-বিবাদের উৎস বন্ধ হইল না। পরের রাত্রে রাজার ঘরেই- কাঁই মাঁই। চমকাইয়া রাজা তলোয়ার নিয়া উঠিলেন। দেখিলেন পৃথিবী উল্টাইল। চোখের সামনে রাক্ষসীরানি রাজপুত্রকে খাইতে লাগিল। ... ...
সত্যপীরের দরগা থেকে ফিরছে বুড়ো আনসার বাওয়াল। ছেলে মন্তেজ এর গায়ে ভর দিয়ে হাঁটছে। ক্লান্ত শরীর। হাতে ধরা লাঠিতে ভর দেয়ার মতো গায়ের জোর নেই। মন্তেজ শেখের হাতের মুঠোয় দরগার বাতাসা। ওর নাতি দুবছরের রাজু বাতাসা খেতে পছন্দ করে। ঘামে ভিজে কাগজে মোড়ানো বাতাসা নরম হয়ে গেছে। দরগায় মানত ছিল আনসার বাওয়ালের। ঘোর বিপাকে পড়ে দরগায় গিয়েছে সে। নইলে বাহাত্তর বছরের শরীর বয়ে অতদূর যাবার কথা নয়। দরগাতে প্রতিদিন আগরবাতি জ্বলে। মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে ভক্তরা রোগ মুক্তি আর সংসারের মঙ্গল কামনায় শিরনি দেয়। ফুল, ফল আর লুঠ দেয়। ‘হিন্দুর দেবতা আমি মোমিনের পীর, যে যাহা কামনা করে তাহারা হাসিল’- এই পাঁচালীর ভক্তিরসে বাওয়ালী, মৌয়াল, জেলেদের মনে আশা জাগে। সত্যপীরের দয়ায় যদি কোনো উপায় হয়! ... ...
রুমকিনের ছনছন ছাপিয়ে পৃথিবী আজও কান পেত শোনে ইহুদী ঘেটোর সেই আর্তনাদ—‘গিভ মি ইওর চিলড্রেন’। সেই আর্তনাদ যেন মিশছে বস্ত্র শ্রমিকদের ফজরের নামাজে... এটা কি তামাশার লকডাউন? সাধারণ মানুষের মাথায় ঢোকে না। করোনা ভাইরাসের বিস্তার আটকাতে সরকার সব ধরণের চেষ্টা করছে অথচ রাস্তায় মানুষের ঢল। গার্মেন্টস মালিক সংগঠনের সভাপতি জানালেন- রপ্তানীমুখী যেসব প্রতিষ্ঠানে অর্ডার আছে এবং উৎপাদন চলছে, কারখানার মালিকরা সেসব শিল্প কলকারখানা চালু রাখতে পারে। অবশ্যই শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার সাপেক্ষে। এ বক্তব্য শুনে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধে সাধারণ মানুষের মনে। নানা প্রতিক্রিয়া, মত-অমতে ফেসবুকের নিউজফীড উপচে পড়ে। জল্পনা কল্পনার কারুকাজ চলতে থাকে টিভির টক শো আর নিউজে। ... ...
ঐশ্বর্য নেই, গৌরব নেই। নেই ভাষা, ভাষ্য। তবু এক অধিকার থাকে। এমন এক অধিকার যা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়। এটি হলো ছেড়ে যাবার, বিলুপ্ত হবার একান্ত অধিকার। চলে যাবার এই একটি অধিকার আছে বলেই ভূমিস্পর্শ করে শুয়ে আছে কেউ। উপুড় হয়ে। ... ...
চোতমারানির পোলারা চুদতেও পারে না। আক্রোশটা খিস্তিখেউড়ে পরিণত হয়ে ঝনঝন করে ভেঙে পড়ছিল। ঘটনাটার ফলাফল তখন সবেমাত্র সে টের পায়। তলপেট থেকে যখন টক জলের ঘূর্ণি গা কাঁপিয়ে বাইরে এসে পড়ে। কলতলায় যাবার সু্যোগ দেয় না। দরজার বাইরে বসে সে হাঁপায় আর শরীরের সমস্ত শক্তি একাট্টা করে গালি দেয়। ... ...