১।
আজ ই-ম্যাগ দাপিয়ে বেড়ানো সুপ্রিয় পাখি সেন -এর ইন্টারভিউ নিতে হবে তাই রোব্বার হলেও চটপট উঠে গেল জয়ন্ত। গত ক বছরে যার চেহারা কেউ দেখেনি, সে কেমনটি হতে পারে ভেবে জল্পনা চলত প্রচুর।
উনি ফর্সা না কালো, লম্বা না বেঁটে আর বয়সটা! বেট লাগালেও শিওর হওয়া হত না। উনি তো একেবারে হাওয়া, কোনও ফটো-টটোও নেই। তাই ছেলেরা আন্তাবরি বকত, কেউ কেউ আবার তার গল্পের ধরণ দেখে বলত,
- এ আর উনিশ কুড়ির সেই ফুরুত পাখিটি নেই রে!
চুলে বেশ করে শ্যাম্পু লাগালো জয়ন্ত। তারপর ইস্ত্রি করা একটা ডুরে কাটা সার্ট। হাজার হোক সেই ওনার সামনে বসে তো বারোটা প্রশ্ন করতে হবে।
ছেলেদের তাক করে একবার পাখি সেন লিখেছিলেন,
- ছেলেরা সব পেঁয়াজের খোসার মত, যত ছাড়াই তত রহস্য ভেসে ওঠে।
এতে এক বেনামী ভদ্রলোক পাল্টা মন্তব্য ছুঁড়লে পাখি তাকে ডিগবাজি খাওয়ালেন পাক্কা তিনদিন। মন্তব্যের পর মন্তব্য – আবার কত প্রশ্ন হুটপাট এসে হাজির। শেষ বেলায় পাখি ইতি টেনে বললেন,
- ছেলেদের এইটাই দোষ, তারা হার মানতে চায় না।
২।
দেবুকে বলা আছে, ক্যামেরা নিয়ে সোজা চলে যাবে সেক্টর বারোতে। সময়ের হেরফের নাকি ম্যাডাম পাখি একেবারে পছন্দ করেন না। এই প্রজেক্টটা নিয়ে আবিরের আসার কথা ছিল, কিন্তু যেই শুনেছে পাখি সেন সে আর নেই। উল্টে জয়ন্তকে পরামর্শ স্বরূপ,
- দেখিস বাছা, ঘেমে নেয়ে যাস না।
তবে জয়ন্ত দমবার মানুষ নয়। আজ যে করেই হোক ইন্টারভিউটা সফল করতে হবে। এতে যদি প্রোমোশনটা এবারে উতরে যায়। রূপাদি সাহস করে এমনটাই বললেন কাল। তাই “জয় মাতাদি” করেই এ কাজটা হাতে নিতে হল।
ব্রততী ঠিক এই সময় এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে হাজির। তারপর একচোট যথারীতি দুজনের,
- তোমায় কতবার বলেছি, ইম্পর্টেন্ট কাজ থাকলে আমায় বিরক্ত করবে না।
রাগে দুধের গ্লাসটা টেবিলে রেখে ব্রততী বেরিয়ে যায় আর ফাইলের প্রশ্নগুলো আওড়াতে থাকে জয়ন্ত।
প্রথম প্রশ্ন ঠিক যেমনতর হয়,
জন্ম কোথায়, ছেলেবেলা – উনি অবশ্য মেয়েবেলা বললেই বেশি খুশি হবেন তাই ওই জায়গাটায় একটু কাটিং ছাটিং হল। তারপর বিবাহ ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবে কি করবেনা ভাবতেই সোজা লাল কালি ওটাতে। এটি কোন মতেই নয়। উল্টে যদি নিজেই বিপদে পরে! তবে মাঝের প্রশ্নগুলো এজ ইট ইজ।
ছেলেদের ঠোকেন কেন? আজ জানতেই হবে।
৩।
সেক্টর বারোতে এই প্রথম আসা। সেই একবার অবশ্য দূর্গা পুজোয়, বিশাল পুজো হয় এখানে। এলাকাটা বেশ নিরিবিলি, সাদামাটা ফ্ল্যাট সব, জাঁকজমক কম। ফোনে রূপাদি জানিয়েছিল মসজিদের গলি ধরে ঢুকে যাবি, তারপর বাঁদিক থেকে চার নম্বরে নীল রেসিডেন্সি।
এমনটাই হল। ড্রাইভারকে সোজা বাঁক নিতে বলল জয়ন্ত, মাঝে ঘড়িটা দেখে নিল একবার। সাড়ে দশটা টাইম, এখনও পঁচিশ মিনিট বাকি।
বাড়ি চিনতে অসুবিধা হল না। দেবু জয়ন্তকে দেখেই এক ঝলক হেসে নিল। গাড়িতেই টাইটা ঠিকঠাক করে ফাইল হাতে নেমে পড়ল জয়ন্ত। গেটে নেপালি দারোয়ানকে দেখে জিজ্ঞাসায়,
- পাখি মেমসাব হ্যেঁ?
ওর চাউনিটা অবাক করল আরো। জয়ন্ত বেশি কথা না বলে রেজিস্টার ভরল, কোত্থেকে আসার জায়গায় দিল পত্রিকার নাম – "কায়দা ডট কম"…
৪।
ঘরটা বেশ সাজানো গোছানো। টেবিলে দু বোতল বিসলারি চকচক করছে। দেবু ওর ক্যামেরার পজিশন নিয়ে ভাবছে, ঠিক কোত্থেকে শুটটা নিলে এপ্রোপ্রিয়েট হয়। আর জয়ন্ত ফাইল খুলে রেডি।
একদম সময় মত ঘরে ঢুকলেন পাখি সেন। এই সেই ভেবে জয়ন্ত আশ্চর্য হয়ে গেল। অতীব শান্ত সুরে উনি বললেন,
- আমি পাখি উর্ফ পাখি সেন। “কায়দা” কে আমার নমস্কার।
তারপর বেশ কিছু কথা হয়ে চলল। ফাইলের প্রশ্নগুলো পর পর তাও হয়ে গেল।
জয়ন্তের মাথা তখনও ওলোট হয়ে চলেছে, এই সেই পাখি সেন একদম রুমেলাদির মত দেখতে। পাড়ায় রুমেলাদি হলেও একান্ত রুমা ছিল জয়ন্তর। মনে পড়ল বহু কিছু, ইনিও নিশ্চয়ই তেমন কোন আঘাত যা শেষবার আমিও যা রুমাকে দিয়েছিলাম। নেহাত রুমা কবিতা লিখতে পারত না, না হলে আজ হয়তো সেও আরেক পাখি সেন হয়ে দাপিয়ে বেড়াত ই-পত্রিকার পাতাগুলোয়।
ভালো লাগলো
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ লিলি।
ধন্যবাদ লিলি।