আমার বলা কাহিনীর সূত্রপাত প্রায় ৪৫ বছর আগে, ১৯৭৮ সালে। বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি Merck-এর তদানীন্তন প্রধান কর্মকর্তা Henry Gadsden বিখ্যাত Fortune পত্রিকাকে জানিয়েছিলেন (Forune, March, 1976)। প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন W. Robertson) – I want us to be like Wrigley’s and sell to everyone.
তুলনাটি বড়ো কৌতুকপ্রদ। Wrigley কোম্পানি, আমাদের অনেকেরই জানা, আমেরিকার একটি বিখ্যাত বাবল গাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি। Gadsden-এর আক্ষেপ হল যে বাবল গাম-এর মতো ওষুধকেও সবার কাছে বিক্রী করতে পারলেন না।! অতঃ কিম্? এরপরে শুরু হল সুকৌশলী এবং প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে রোগ বা অসুখ বিক্রী করার নিরন্তর, ধারাবাহিক ও হিংস্র একটি উপাখ্যান লেখার ইতিহাস। সে ইতিহাসের সানুপুঙ্খ বিবরণ ধরা আছে Ray Moynihan এবং Alan Cassels-এর লেখা Selling Sickness: How Drug Companies Are Turning Us All Into Patients (Allen Unwin, 2008) পুস্তকে। আগ্রহী পাঠকেরা নিশ্চয়ই বইটি দেখবেন। আমরা সে সময়ের ও তার একটু আগেকার সময়ের আরো দু-একটা ঘটনায় দ্রুত দৃষ্টিপাত করবো।
১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হচ্ছে ইভান ইলিচ-এর লেখা সাড়া জাগানো এবং অতি বিতর্কিত পুস্তক Medical Nemesis: The Expropriation of Health (Marion Boyars, 1976)। এ পুস্তকে আধুনিক চিকিৎসার ধরণ এবং বৈজ্ঞানিক বীক্ষাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইভান ইলিচ দেখিয়েছেন মানুষের বিশেষ সংকৃতি-স্থিত বেদনা বহনের ধরণ, ক্ষমতা ও চরিত্রের কিভাবে ক্রমাগত পশ্চিমায়ন বা Westernization হয়ে চলেছে। একটু দীর্ঘ উদ্ধৃতি দিচ্ছি প্রেক্ষাপটটি বোধগম্য হবার জন্য – Wherever the metropolitan medical civilization has penetrated, a novel image of death has been imported. In so far as this image depends the new techniques and their corresponding ethos, it is supranational in character. But these very techniques are not culturally neutral; they assumed concrete shapes within Western cultures and express a Western ethos. The white man’s image of death has spread with medical civilization and has been a major force in cultural colonization. (পৃঃ ১৭৯-১৮০; নজরটান আমার)
এখানে উল্লেখযোগ্য, ইভান ইলিচের মূল সমালোচনা ছিলো যে আধুনিক বৃহৎ প্রযুক্তি-নির্ভর চিকিৎসা বিজ্ঞান জনসাধারনের জীবনের বিনিময়ে এর পরিধিকে ক্রম-বিস্তৃত, ক্রম-প্রসারিত করতে চাইছে। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র medicalized হয়ে উঠছে অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, রোগা হওয়া থেকে মোটা হওয়া, বিবাহ থেকে সন্তান ধারণ করা সবকিছুই চলে আসবে মেডিসিনের নজরদারিতে – সবকিছুর শেষ কথা হবে মেডিক্যাল ওপিনিওন, পরিচালজের স্থানে থাকবে মেডিসিন। কিভাবে ঘটে এই medicalization? সে এক মর্মন্তুদ, অতি আগ্রাসী যুদ্ধ – বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর তরফে। অতি বিস্তৃত এর জাল – পৃথিবীর প্রতিটি দেশে, ব্যতিক্রমহীনভাবে। ফুকো তাঁর “The Crisis of Medicine or the Crisis of Anti-Medicine” (2004) প্রবন্ধে ইংল্যান্ডে গৃহীত Beveridge Scheme (এবং ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) নিয়ে মন্তব্য করছেন – “At a time when the War was causing large-scale destruction, society assumed the explicit task of ensuring its members not only life, but also a healthy life – একটা সময়ে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রকাণ্ড ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তখন সমাজ প্রত্যক্ষভাবে দায়িত্ব নিল এর সদস্যদের জীবনের সুরক্ষা শুধু নয়, অধিকন্তু একটি স্বাস্থ্যময় জীবনের।” মেডিসিন প্রবেশ করতে শুরু করলো জীবনের প্রতিটি স্তরে।
এখানে একটা নজর করার মতো পরিবর্তন হল – এতদিন নাগরিকের প্রধান দায়িত্ব ছিলো রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখা, এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ালো প্রতিটি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখা। একইসাথে পরিচ্ছন্নতা একটি বাতিক হয়ে দাঁড়ালো – পরিচ্ছন্ন, কম-পরিচ্ছন্ন, অ-পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি বর্গ বা ক্যাটিগরি নাগরিক হায়েরার্কির সূচকও হয়ে উঠলো দ্রুত। এবং হাঙ্গর-সদৃশ বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি এবং এর এজেন্ট “ইকনোমিক হিট ম্যান”-রা এরকম প্রতিটি স্তরে প্রবেশ করে মেডিসিনকে Wrigley কোম্পানির চিউয়িং গামের মতো বিক্রির মতো উপযোগী করে তুলতে সদা তৎপর, সাথে আছে বিজ্ঞাপন দুনিয়ার মায়াজাল।
২৯শে জুন ২০১৪-র Times of India-র কলকাতা সংস্করণের শিরোনাম ছিলো – AIIMS doctors lead the way, wage war on unnecessary medical tests. AIIMS-এর চিকিৎসকেরা ভূমিকা নিয়েছেন বলে খবরটি শিরোনাম হয়েছে। তবে বিষয়টি অভিনব কিছু নয়। এখনো ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিবেকী এবং সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন বেশ কিছু চিকিৎসক আছেন যারা এ কাজটি নিয়মিত করে থাকেন। পশ্চিম বাংলায় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা বেলুরের শ্রমজীবী হাসপাতালের মতো বেশ কিছু সংগঠন আছে যারা নিষ্ঠাভরে এ দায়িত্ব পালন করেন। বিনায়ক সেনের মতো মানুষেরা আছেন যারা এভাবেই চিকিৎসার ধারা রক্ষা করেন। ফলে war on unnecessary medical tests-এর একটি ধারা – বিরুদ্ধ ধারা হিসেবে – আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত। AIIMS-এর চিকিৎসকেরা এতে সামিল হলেন।
কিন্তু মূল সমস্যা শুধু অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিহার করাতে নয়, বরঞ্চ আরো গভীরে। অধুনা একটি অতি জনপ্রিয় চালু বিষয় হল “whole body check-up”। যে বিশাল সংখ্যক রোগী প্রধানত দক্ষিণ ভারতে পাড়ি জমান চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য অ্যাপোলো হাসপাতাল সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক এরকম একটি প্যাকেজ চালু করে। রোগীদের চিন্তায়, মননে এবং বোধে ধীরে ধীরে সংক্রামিত হতে থাকে একবার whole body check-up করে ফেলতে পারলে রোগ নিয়ে আর দুর্ভাবনার বিশেষ কিছু থাকে না। একটু নজর করলে বুঝবো মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতার মাঝে একটি পরিহার্য বিপন্নতা বোধের জন্ম হচ্ছে, মানুষ নির্ভর করতে শুরু করছে আরো বেশী বেশী পরিমানে মেডিসিনের জগতের ওপরে, যাকে আমরা বলছি medicalization of life। এ প্রসঙ্গে British Medical Journal-এ (9 June 2014) প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় এবং আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পত্রের উল্লেখ করা যেতে পারে। সম্পাদকীয়-র শিরোনাম – General health checks don’t work: It’s time to let them go. এতে বলা হয়েছে – People who accept an invitation to a health check tend to have higher socioeconomic status, lower cardiovascular risks, less cardiovascular morbidity, and lower mortality than others. অর্থাৎ সচরাচর যারা এ ধরণের চেক-আপ করাতে যান তারা অর্থনৈ্তিকভাবে সুস্থিত অবস্থায় থাকার ফলে বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার সম্ভাবনা সাধারণভাবে কম। Danish Inter99 Trial-এর একটি বড়ো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের এক-ই সংখ্যায়। ১৯৯৯-২০০৪ পর্যন্ত ৩০-৬০ বছর বয়সী ৫৯,৬১৬ জন মানুষের ওপরে এ সমীক্ষা করা হয়েছিলো। সমীক্ষার সিদ্ধান্ত - A community based, individually tailored intervention programme with screening for risk of ischaemic heart disease and repeated lifestyle intervention over five years had no effect on ischaemic heart disease, stroke, or mortality at the population level after 10 years.
কি বলবেন একে? সমগ্র দেহ চেক-আপের ফানুস কি অক্ষত থাকলো? প্রসঙ্গত মাথায় রাখতে হবে সাম্প্রতিক সময়ে “risk factor” বলে একটি শব্দ-বন্ধ যথেষ্ট জনপ্রিয়তা শুধু নয় রীতিমতো জনগ্রাহ্যতাও পেয়েছে। খুব মজার ব্যাপার হল যে risk factor দেহ-অতিরিক্ত পরিসরে অবস্থানকারী প্রায় মহাজাগতিক একটি বিষয়ের মতো। এটা মূলত বোধে বিরাজ করে, দেহে নয়। যেমন কোলেস্টরল সংক্রান্ত ভীতি, যেমন ভারতীয় তথা এশিয়া মহাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে স্বাভাবিক নুন গ্রহণের পরিমাণ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। এগুলো যে রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সবসময়ে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে না এ বিষয় নিয়ে অনেক সংখ্যক গবেষণা হয়েছে সাম্প্রতিককালে। রিস্ক ফ্যাক্টর থাকা মানেই অসুস্থতা নয় বা জীবনের সমস্ত স্বাভাবিক ছন্দ বিনষ্ট হয়ে যাওয়া নয় এরকম মতামত যথেষ্ট গুরুত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। (risk factor নিয়ে আলোচনার জন্য অন্তত তিনটি লেখার উল্লেখ করা যেতে পারে – (১) Geoffrey Rose, “Sick Individuals and Sick Population”, IInternational Journal of Epidemiology, 1986, 14.1, pp. 32-38; (২)David Armstrong, “The rise of surveillance medicine”, Sociology of Health and Illness, 1995, 17.3, pp. 393-404; এবং (৩) জয়ন্ত ভট্টাচার্য, বায়োমেডিসিন থেকে নজরদারি মেডিসিন, হাওয়াকল, ২০১৮)
প্রপঞ্চময় এ বিশ্ব
চিকিৎসক সমাজে সর্বজনমান্য জার্নাল New England Journal of Medicine-এর ২৮শে অক্টোবর, ২০০৪-এর সংখ্যায় ডেভিড ব্লুমেন্থাল একটি বিশেষ প্রবন্ধ লিখেছিলেন – Doctors and Drug Companies. প্রবন্ধের শুরু হয়েছিলো এরকম এক পর্যবেক্ষণ দিয়ে – when a great profession and the forces of capitalism interact, drama is likely to result. কি সে নাটক? “On the display in the relationship between doctors and drug companies are the grandeur and weaknesses of the medical profession – its noble aspirations and its continuing inability to fulfill them … The interaction of doctors and pharmaceutical companies is also extremely consequential for patients, doctors, and the larger society.”
Ray Moynihan দেখিয়েছেন মোট ১৬ রকমের পদ্ধতিতে ডাক্তারেরা ওষুধ কোম্পানির সাথে জড়িয়ে যায়। এর মাঝে রিপ্রেজেন্টেটিভদের মুখোমুখি সাক্ষাৎ বা ভিজিট যেমন রয়েছে, তেমন-ই রয়েছে কনফারেন্সে যাওয়া, বিভিন্ন স্পনসরড জার্নালে লেখা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, অ্যাডভাইসরি বোর্ড-এ রাখা ইত্যাদি (Ray Moynihan, “Who pays for the pizza? Redefining the relationship between doctors and drug companies. 1.: Entaglement”, British Medical Journal, 31 May 2003, pp. 1189-1192)।
পূর্বালোচিত risk factor নিয়ে ভীতি জন্ম দেবার সহজ চালু প্রক্রিয়া হল চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, কোন একটি বিশেষ রোগকে টার্গেট করা এবং সে সম্বন্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় লাগাতার প্রচার চালিয়ে একটি অনিশ্চিতির আশঙ্কা তৈরি করা, যে নতুন ওষুধ বাজারে আসবে তার কার্যকারিতা নিয়ে স্থির প্রত্যয়ের জন্ম দেওয়া এবং সবশেষে ওষুধটিকে বাজারে বিক্রী করা। একটি সঙ্গত প্রশ্ন উঠবে - Does the pharmaceutical industry manufacture diseases as well as drugs? এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য - Ray Moynihan, Iona Heath and David Henry, “Selling sickness: the pharmaceutical industry and disease mongering”, British Medical Journal, 13 April, 2002, pp. 886-891; Howard Wolinsky, EMBO reports, July 2005, 6.7, pp. 612-614.
ময়নিহান যা বলেছেন তার একটি সাক্ষাৎ প্রমাণ আছে আমেরিকার যে সংস্থা বা বডি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে heart, lung, blood pressure, cholesterol সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরি করে (National Heart, Lung, and Blood Institute) তাদের তরফে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি Third Report of the Expert Panel on Detection, Evaluation, and Treatment of High Blood Cholesterol in Adults (Adult Treatment Panel III – বা ATP III)-এ ৯ জন ওয়ার্কিং গ্রুপ মেম্বার ছিলেন যারা ATP III-র ড্র্যাফট তেরি করেছেন। এরা হলেন – Drs. Grundy, Cleeman, Brewer, Clark, Hunninghake, Pasternak and Stone. আর দুজন হলেন American College of Cardiology-র Dr. Bairey Merz এবং American Heart Association-এর Dr. Smith. দানবীয় বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির সাথে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ মেম্বারদের কি ধরণের যোগাযোগ ছিলো সে তথ্য আমি হুবহু National Heart, Lung, and Blood Institute-এর ওয়েবসাইট থেকে তুলে দিচ্ছি ইংরেজিতে। এর বাংলা করার কোন প্রয়োজন অনুভব করছি না, এতোই প্রাঞ্জল এ বিবরণ –
Dr. Grundy has received honoraria from Merck, Pfizer, Sankyo, Bayer, Merck/Schering-Plough, Kos, Abbott, Bristol-Myers Squibb, and AstraZeneca; he has received research grants from Merck, Abbott, and Glaxo Smith Kline.
Dr. Cleeman has no financial relationships to disclose.
Dr. Bairey Merz has received lecture honoraria from Pfizer, Merck, and Kos; she has served as a consultant for Pfizer, Bayer, and EHC (Merck); she has received unrestricted institutional grants for Continuing Medical Education from Pfizer, Procter & Gamble, Novartis, Wyeth, AstraZeneca, and Bristol-Myers Squibb Medical Imaging; she has received a research grant from Merck; she has stock in Boston Scientific, IVAX, Eli Lilly, Medtronic, Johnson & Johnson, SCIPIE Insurance, ATS Medical, and Biosite.
Dr. Brewer has received honoraria from AstraZeneca, Pfizer, Lipid Sciences, Merck, Merck/Schering-Plough, Fournier, Tularik, Esperion, and Novartis; he has served as a consultant for AstraZeneca, Pfizer, Lipid Sciences, Merck, Merck/Schering-Plough, Fournier, Tularik, Sankyo, and Novartis.
Dr. Clark has received honoraria for educational presentations from Abbott, AstraZeneca, Bristol-Myers Squibb, Merck, and Pfizer; he has received grant/research support from Abbott, AstraZeneca, Bristol-Myers Squibb, Merck, and Pfizer.
Dr. Hunninghake has received honoraria for consulting and speakers bureau from AstraZeneca, Merck, Merck/Schering-Plough, and Pfizer, and for consulting from Kos; he has received research grants from AstraZeneca, Bristol-Myers Squibb, Kos, Merck, Merck/Schering-Plough, Novartis, and Pfizer.
Dr. Pasternak has served as a speaker for Pfizer, Merck, Merck/Schering-Plough, Takeda, Kos, BMS-Sanofi, and Novartis; he has served as a consultant for Merck, Merck/Schering-Plough, Sanofi, Pfizer Health Solutions, Johnson & Johnson-Merck, and AstraZeneca.
Dr. Smith has received institutional research support from Merck; he has stock in Medtronic and Johnson & Johnson.
Dr. Stone has received honoraria for educational lectures from Abbott, AstraZeneca, Bristol-Myers Squibb, Kos, Merck, Merck/Schering-Plough, Novartis, Pfizer, Reliant, and Sankyo; he has served as a consultant for Abbott, Merck, Merck/Schering-Plough, Pfizer, and Reliant.
একমাত্র ডঃ ক্লিম্যান ছাড়া বাকী সবার financial interest-এর disclosure দেখলে চোখ কপালে উঠে যাবার কথা। সুকুমার রায়ের ভাষায় বলতে হয় – আকাশের গায়ে যেন টক টক গন্ধ !
একটি অতি শক্তিশালী মেডিক্যাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স গড়ে উঠলো, কোথাও বা মিলিটারি-মেডিক্যাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স।
আন্তর্জাতিক গাইডলাইন নির্দ্ধারক কমিটির ক্ষেত্রে যদি এ ঘটনা অবলীলায় ঘটতে পারে তাহলে সাধারণ স্তরের চিকিৎসক বা আর পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কি করতে পারেন সহজেই অনুমান করা যায়।
এরকম একজন চিকিৎসকের কাহিনী হল Daniel Carlat-এর আখ্যান বা একটি সৎ স্বীকারোক্তি। Daniel Carlat একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাইকিয়াট্রিস্ট এবং Tufts Medical School-এর ফ্যাকাল্টি। ২৫শে নভেম্বর ২০০৭-এর নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় তাঁর দু পাতা জোড়া লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো। কিভাবে Wyeth কোম্পানির আমন্ত্রণে তিনি বিলাসবহুল Millennium হোটেল-এ পৌঁছোন এবং তাঁর শাখার একজন নামী গবেষকের সাথে আলাপ হয়। Wyeth কোম্পানির তৈরি একটি নতুন anti-depressant ওষুধ venlafaxin (Effexor) নিয়ে Carlat-এর বক্তব্য রাখার কথা ছিলো এবং দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি এ কাজটি করেওছিলেন। তাঁর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী নিজের প্র্যাক্টিস থেকে তাঁর ১,৪০,০০০ ডলার বা এর বেশি আয় ছাড়া Wyeth কোম্পানির বক্তা হিসেবে আয় ছিলো ৩০,০০০ ডলার। একবার একটি সেমিনারে বক্তা হিসেবে বলার সময় Effexor যে রক্তচাপ বাড়ায় সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে করেন নি। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এই পার্শ্ব–প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে নিতান্ত বিরক্তি প্রকাশ করেন। Carlat-এর বয়ানে – I wondered if he saw me for what I feared I had become – a drug rep with an M.D. I began to think that the money was affecting my critical judgement. পরবর্তীতে তাঁর এ উপলব্ধি আরো দৃঢ় হয় যে তাঁকে শুধু Effexor-এর বিক্রী বাড়ানোর জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে, এতো যত্ন-আত্তি করা হয়েছে – Once I stopped doing that, I was of little value to them, no matter how much “medical education” I provided. এবং সে মুহূর্ত থেকে তিনি এ যোগসূত্র ছিন্ন করেন, স্বাধীন সত্তা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন আবার।
অসুস্থতা বিক্রীর (selling sickness) ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি জায়গাকে soft target হিসেবে নেওয়া হয় – সাইকিয়াট্রিক এবং লাইফস্টাইল ড্রাগ। সাইকিয়াট্রিক ওষুধের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে American Psychiatric Association-এর তত্ত্বাবধানে তৈরি Diagnostic and Statistical Manual (DSM), যা সাইকিয়াট্রির জগতে বাইবেলতুল্য। ১৯১৭ সালে প্রথম প্রকাশিত DSM-এ রোগের সংখ্যা ছিলো ৫৯টি। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে DSM-V. এতে ৩৭৫টি মতো অসুখের ক্যাটিগরি বলা হয়েছে। এরকম একটী সাম্প্রতিককালে জন্ম নেওয়া অসুখের নাম “shyness syndrome”। এই নতুন নামকরণে আসার আগে মাসের মাসের মাস DSM-এর বিশেষজ্ঞরা সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন নতুন নাম ঠিক করা নিয়ে – “chronic complaint disorder” বা “chronic undifferentiated happiness” প্রভৃতি নামকরণকে পরিত্যাগ করা হয়, গ্রহণ করা হয় “shyness syndrome”।
আজ থেকে ১৯ বছর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ২৪শে জুন ২০০১ সংখ্যায় মার্গারেট ট্যালবট একটি প্রবন্ধ লেখেন – The Shyness Syndrome. এ প্রবন্ধে তিনি দেখান ডেভিড বেকহ্যাম, স্পাইস গার্ল বা রিকি উইলিয়ামস-এর মতো সেলিব্রিটিরা ওষুধ কোম্পানির টাকায় মিডিয়ার সামনে কেমন করে নতুন ধরণের social phobia-র শিকার হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন। একটি নতুন anti-depressant ওষুধ তৈরি হচ্ছে social phobia-র জন্য। যে বিশেষ বৈশিষ্ট মানুষের ভিন্নতার জন্ম দেয়, সেরকম একটি বৈশিষ্ট স্বল্পবাক বা লাজুক চরিত্রকে medicalize করে ফেলতে পারলে তা ওষুধের ও চিকিৎসার আওতার মধ্যে চলে আসবে। নতুন ওষুধ তৈরি হবে। কয়েক মিলিয়ন বা বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হবে। ক্রিস্টোফার লেন মন্তব্য করছেন – Treat someone for shyness, and the insurance companies will laugh at you. Treat someone with social phobia, with its DSM seal of approval as disorder 300-23, and the bill will be paid. (Christopher Lane, Shyness: How Normal Behavior Became a Sickness, Yale University Press, 2008)
ট্যালবট আশঙ্কা বোধ করেন এমন কোন দিন হয়তো আসবে যখন পৃথিবীতে মৃদুভাষী, স্বল্পবাক বা স্বভাব ভীরু বলে কিছু থাকবে না - Maybe in another generation or so, we'll find ourselves sorely missing the meek and the mild, the stoic and the taciturn among us. Is somebody out there inventing the drug to treat excessive perkiness? এ আশঙ্কার বাস্তব ভিত্তিতে আছে অর্থনৈতিক মুনাফা। আমেরিকাতে ওষুধ কোম্পনিগুলো বছরে ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে “on promoting their products.” (Lancet, “Dealing in drugs”, November 6, 2004, pp. 1655-56) অন্য আরেকটি প্রসঙ্গে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, কিভাবে মহিলাদের কিছু স্বাভাবিক স্বভাবকে একটি বিশেষ রোগের নামে নামাঙ্কিত করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা হয়। (Ray Moynihan and Barbara Mintzes, Sex, Lies + Pharmaceuticals: How Drug Companies Plan to Profit from Female Sexual Dysfunction, Allen & Unwin, 2010).
শেষ কথা
এখানে একটি ভিন্নতর এবং গভীরতর সত্য নিহিত আছে। মুক্ত বাজারের অর্থনীতি এবং এর হিংস্রতা ওষুধের বাজার, মুনাফা এবং এর জনগ্রাহ্যতা তৈরির সমগ্র প্রক্রিয়ার পেছনে কাজ করছে। এখানে নিতান্ত স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয় – (১) মানুষ চির-অতৃপ্তির ধারক একটি জীব এবং সে সবসময়ে অতৃপ্তিকে তৃপ্তিতে এবং সুখে রূপান্তরিত করার জন্য সবকিছু বাজি রাখতে পারে, (২) ধরে নেওয়া হয় মুক্ত বাজার হল সে স্থান যেখানে মানুষ free choice-এর সাহায্যে তার প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে, (৩) “unfettered competition in the market” হল সমস্ত আবিষ্কারের চালিকা শক্তি। Marshall Sahlins দেখিয়েছেন পশ্চিমী দুনিয়ার “satisfaction”-এর জন্য এই সুতীব্র আকাঙ্খা কিভাবে মানব সভ্যতা সম্পর্কে একমাত্রিক এবং একটি মাত্র ধারণাকে চরম ও পরম সত্যি বলে গ্রহণ করে ও সমগ্র পৃথিবীতে সে ধারণা প্রাধানা বিস্তার করে। তাঁর মতে – I believe, disastrous for the study of non-Western societies. (“The Sadness of Sweetness: The Native Anthropology of Western Cosmology”, Current Anthropology, 1996, 37.3, pp. 395-428.)
ওষুধের বাজারকে এই অর্থনৈতিক-সামাজিক দর্শনের সামগ্রিক প্রভাবের সাহায্যে ক্রমাগত আর পাঁচটা পণ্যসামগ্রীর মতো consumer market-এ পরিণত করা হচ্ছে। এর হাত ধরেই lifestyle product –এর বাজার ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। এবং এ সমস্ত প্রোডাক্ট বিক্রী করার জন্য চিকিৎসকদেরও হয়তো আর আলাদা করে প্রয়োজন পড়বে না। আমেরিকাতে একজন মানুষ গড়ে জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপণ দেখার পেছনে ব্যয় করে। আমরা ভারত বা বাংলাদেশকে এখানে মিলিয়ে নিই! এক নতুন ধরণের সামাজিক মানসিকতার নির্মাণ হয় যা কেবল পণ্যের সন্ধান করে, এক নতুন ধরণের medical consumer তৈরি হয়, বাজার বেঁচে থাকে, ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে। জন্ম নেয় medical tourism. (এ বিষয়ে ভালো আলোচনা রয়েছে – Kalman Applbaum, “Pharmaceutical Marketing and the Invention of Medical Consumer”, PLoS Medicine, April 2006, 3.4, pp. 445-448.)
এখানে কোথাও একটা আমাদের অবস্থান গ্রহণ করা নিতান্ত আবশ্যক, গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকে সুখ কেনার প্রধান উপায় হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটিকে আমাদের এবার থামানো দরকার – বিশেষ করে আমরা যারা চিকিৎসক। সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তকে সমসত্ব medical consumer করে তোলার মুখোমুখি হয়ে অসমসত্ব অঞ্চল (heterogeneous space) গড়ে তোলার লড়াই তো চালিয়ে যেতেই হবে।