এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আমার শিক্ষকবেলা

    Sumita Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ জুলাই ২০১৫ | ২৩৫৫ বার পঠিত
  • আমার শিক্ষকবেলা


    ছবিটা দেখতে দেখতে সেই কতোদিন আগে ফিরে যাচ্ছি। ওই ছোট্ট ছোট্ট দুষ্টুমিষ্টি মুখগুলো আমার আর শর্বাণীদির চারপাশে ...... আচ্ছা, ওদের মধ্যে কি আমিও আছি? একই সংগে আমার শৈশব আর যৌবন পাশাপাশি?...... কেমন যেন ধাঁধা লেগে যাচ্ছে। আসলে স্কুলের ওই মাঠটা যেখানে ছবি তোলা হয়েছে, যে গাছটার নিচে, ঠিক ওইখানেই যে আমিও ছোটবেলায় খেলে বেড়িয়েছি! ওই গাছটার নিচে হত আমাদের প্রার্থনা, একদিন গাছের ডাল থেকে টুপ করে আমার মাথায় খসে পড়েছিল শুঁয়োপোকা আমারই অজান্তে। তখন আমি নার্সারি। হঠাৎ কখন মাথায় হাত দিয়ে হাতে শুঁয়ো ফুটে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে কেঁদে ককিয়ে বড়দিমণির ধমক খেয়ে সে এক কাণ্ডই হয়েছিল বটে। আবছা স্মৃতিতে সে দিনটা বোধহয় আমার স্কুলে পড়ার প্রথম দিন। বাড়ির গেটের গণ্ডি পেরিয়ে রাস্তার ঠিক উল্টোপাড়ে স্কুলের গেট পার হয়ে মাম্মা যখন আমার হাত ধরে বিশালকায় বড়দির সামনে হাজির করেছিল, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল ভয়ে। কী করব, অত মোটা আর বিশাল মানুষ আমার ওই ছোট্ট জীবনে আর কখনো দেখিনি যে! তারপর কথাবার্তার পরে মাম্মা যখন আমায় একাই ফেলে রেখে গেটের দিকে হাঁটা লাগিয়েছিল, সেই বিশ্বাসঘাতকতায় গলা বুজে এলেও বড়দির ভয়েই কাঁদতে পারিনি, কারণ তার আগে আমার সামনেই অন্য একজনের কান্নাকে একটি রামধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন উনি। সেই শুরু হল স্কুলবেলা...... নার্সারি থেকে কেজি ওয়ান কেজি টু তারপর ওয়ান টু...... টু- তে গিয়ে এক আশ্চর্য কাণ্ড ঘটল। ততদিনে স্কুলের মাঠে টিফিনবেলায় ছুটোছুটি, বড়দির গুরু সাইবাবার ভজনে যোগ দেওয়া ক্লাসশুদ্ধু, দিদিমণি এবং বন্ধুদের সংগে ভাবসাব, নন্দোৎসবে স্কুলশুদ্ধু ছেলেমেয়ের খিচুড়ি আর তালের বড়া খেয়ে নাচ “তালের বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিল”......এবম্বিধ বহু ঘটনায় স্কুলটা মনে বেশ একটা জায়গা করে নিয়েছিল। হঠাৎ ক্লাস টু-তে ভর্তি হতে হল বড় স্কুলে। বিদায়ের ঘণ্টা বাজল। ছোট্ট স্কুলটা তার ঘরোয়া ছোট্ট গণ্ডিতে যে মমতায় আমায় বড় করছিল, হঠাৎই সেই গণ্ডি পেরিয়ে আমাকে ঝাঁপ দিতে হল বাইরের জগতে। একলাফে বড় হয়ে গেলাম। সে গল্প অন্য।
    তারপর সেই বড়-হয়ে-যাওয়া আমি যখন কলেজে পড়ছি, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো একদিন বড়দির ডাক, “নিজের ছোটবেলার স্কুলে পড়াবি নাকি? তোর তো দুপুরে কলেজ, সকালের সেকশনে পড়াতেই পারিস, পড়াবি?” এর আগে পর্যন্ত পথে যেতে আসতে বড়দির সংগে দেখা হয়ে গেলে মাথা নিচু করে চলে আসতে আসতে অনুভব করেছি, ছোটবেলার সেই ভয় এখনো মিলিয়ে যায়নি, লুকিয়ে আছে বুকের মধ্যেই কোথাও। আর আজ সেই বড়দির স্কুলেই পড়াবো? মানে শিক্ষিকা? মানে বড়দির অত কাছে কাছে থাকতে হবে? যদি ভুল করি?...... দেখি বড়দির বরাভয় হাসি, “কোনো চিন্তা নেই, ধীরে ধীরে ঠিক শিখে যাবি।” কিন্তু আমি যে ভীষণ লেটরাইজার, অত সকালে ওঠা......... আর কলেজের পড়াশোনা ......? এবারে যথারীতি মুশকিলআসান মা আমাকে ভোরে ঘুম থেকে তুলে দেবার ভার নিলেন এবং যারপরনাই খুশি হলেন কাজটি করতে পেরে। আমার আজীবন-পড়ুয়া মা কিছুতেই আমার ওই দেরিকরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেসটি সহ্য করতে পারতেন না। ফলে শুরু হল আমার জীবনের প্রথম শিক্ষকতা।
    মনে পড়ে, মায়ের ডাকাডাকিতে প্রবল বিরক্তিসহ ঘুম থেকে উঠে কোনোরকমে চুল বাঁধতে বাঁধতে বাড়ির গেটের মুখোমুখি স্কুলের গেট পার হওয়া। পার হতেই একটা মাঠ, বেশ কিছু গাছ, আর একরাশ কচিগলার চিৎকার চেঁচামেচি। প্রতি বছরের শুরুতে শোনা যেত বহুকণ্ঠের ডাক ছেড়ে কান্না, আর গেটের বাইরে উদ্বিগ্ন বাবা-মা-দের সশঙ্ক পদচারণা। সময়ের সংগে সংগে সেই চিৎকারের চরিত্র বদল হতে থাকত। একসময় শোনা যেত ‘কু-ঝিক-ঝিক রেলের গাড়ি’ গান আর বিভিন্ন বিভঙ্গের নাচ। তখন কোথায় বাবা-মা আর কোথায়ই বা সেই রাসভবিনিন্দিতস্বরে কান্নাকাটি! মনে পড়ে, প্রথম দিনই কাঁদতে কাঁদতে একটি বাচ্চা আমার গায়ে বমি করে দিল। সেই মুহূর্তেই বাড়ির দিকে প্রায় ছুট লাগাতে যাচ্ছিলাম আর কি! হঠাৎ চোখ পড়ল বাচ্চাটার মুখের দিকে ...... চোখদুটি বোজা ...... প্রাণপণে হাঁ-করে আর্তনাদ করে যাচ্ছে। বেশ খানিকক্ষণ ওকে ভোলানোর চেষ্টা করলাম, কণ্ঠস্বরের বিন্দুমাত্র এদিক থেকে ওদিক হোল না, চোখদুটো ঠিক সেই রকমই বোজা। কেমন সন্দেহ হোল। খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম, চোখ খোলানোর একটু চেষ্টাও করলাম। তারপর ভয় পেয়ে, এখন ভাবতেও হাসি পায়, বড়দিকে গিয়ে বললাম বড়দি, এই বাচ্চাটা বোধহয় চোখে দেখতে পায় না! আমার কাঁদোকাঁদো মুখ দেখে বড়দি প্রথমে এক রামধমক আমাকে, তারপর বাচ্চাটাকে। ব্যস, কান্না বন্ধ! ওমা! সে দেখি পিটপিট করে তাকাচ্ছে! ধড়ে প্রাণ এল, তারপর সেটাকে কোলে নিয়ে অনেক অনেক আদর করলাম। ভয়ের চোটে গায়ে বমিটমি করা ভুলেই গেছি! তো সেই ক্ষুদে অনির্বাণ তারপর থেকে এমনই আমার ন্যাওটা হয়ে পড়ল যে কিছুতেই নিজের সিটে বসে না! আমি যখন যে-ক্লাসে যাব, ও আমার পিছুপিছু সেই ক্লাসেই যাবে। তাড়াতাড়ি হেঁটে পালিয়ে যেতে গেলে পেছন থেকে খপ করে আঁচল চেপে ধরে, কী জ্বালা বলো দেখি! অবশ্য ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের ভালবাসতাম বলে আমার খুব একটা মন্দ লাগছিল না। মুশকিল শুরু হোল অন্য জায়গায়। আমাকে কলেজ যেতে হয় বলে বড়দি আমাকে স্কুলছুটি হবার খানিক আগেই ছেড়ে দিতেন। কোনোরকমে বাড়ি এসে স্নান সেরে নাকেমুখে গুঁজে ঊর্ধ্বশ্বাসে বাস ধরতে ছুটতাম। এদিকে তখন অনির্বাণের নার্সারি ক্লাস ছুটি হলেও মাঝে মাঝেই ওর মা আসতে দেরি করতেন, আর তখন সে কিছুতেই আমাকে বাড়ি যেতে দেবে না। এ তো ভারি মুশকিল! এদিকে আমার কলেজের ক্লাস কামাই হয়ে যাবার জোগাড়! তিতিবিরক্ত হয়ে বড়দি একদিন বললেন তুই ওকে নিয়েই বাড়ি চলে যা, ওর মা এলে আমি তোর ওখানেই পাঠিয়ে দেব। অগত্যা কী আর করা! তিনি হেলতেদুলতে আমার হাত ধরে বাড়ি এলেন। একটি বিস্কুট খেলেন। তারপর তাকে রংপেন্সিল দিয়ে বসিয়ে আমি স্নানে ঢুকলাম। একবারের জন্যও মনে হোল না অনির্বাণ কোনও অপরিচিত বাড়িতে এসেছে। ভাগ্যক্রমে আমি কলেজে বেরোনোর আগেই ওর মা এসে ওকে নিয়ে যাবার সময় শুধু বলে গেলেন, এবার কিন্তু একদিন আমাদের বাড়িতে ধরে নিয়ে যাব।

    ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের ভালো লাগলেও তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে এর আগে আমার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না। এই প্রথম মুখোমুখি হলাম এবং জানলাম পড়ানো কী বিষম বস্তু! অবশ্য পড়ানোর আগে আমাকে বেশ কিছুদিন শিক্ষানবিশি করতে হয়েছিল বিভিন্ন ছড়া অর্থাৎ রাইম, অকল্পনীয় অঙ্গভঙ্গি এবং সুর সহযোগে, একরাশ রোরুদ্যমান শিশুকে শেখানোর কাজে। বস্তুতপক্ষে সেটাই আমার জীবনে প্রথম শিক্ষক-শিখন কর্মশালা। জীবনের প্রথম চাকরি বাঁচাতে মানুষ যে কী না করতে পারে তা সেদিন বুঝেছিলাম। কু-ঝিকঝিক-রেলের-গাড়ির ইঞ্জিন হয়ে, চা-এর কেটলি সেজে, আরও কত কী যে করে ক্ষুদে ছাত্রছাত্রীদের মন ভোলাতে হত, তা এখনকার নামীদামী ম্যানেজমেন্ট গুরুরা কল্পনাও করতে পারবেন না। এভাবেই চলছিল বেশ, কিন্তু মাসখানেক পরেই শিক্ষানবিশির সুসময়ের সমাপ্তি এবং শিক্ষকতার ঘোর দুঃসময়ের শুরু। যারা পেনসিল ধরতে পর্যন্ত পারে না, যাদের অধিকাংশেরই উচ্চারণ আধো আধো, তাদের কিনা মুখস্থ এবং লিখস্থ করাতে হবে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ ১-৩০ A-Z 1-30 পর্যন্ত। ভাবা যায়?! অথচ আজ ভাবলে অবিশ্বাস্য মনে হয়, আমাকে এই কাজ তাদের দিয়ে করাতে হত। না পারলে তাদের কপালে প্রবল তাড়না, আর আমাদের এবং তাদের হতভাগ্য বাবা-মাদের চরম টেনশন। এহ বাহ্য, এরপর তাদের আবার রীতিমত পরীক্ষাব্যবস্থা যাতে অবশ্যই পাশ-ফেল বর্তমান। মনে আছে, নার্সারির সবচেয়ে ছোটটির বয়স ছিল আড়াই, তার মা-বাবার প্রবল আগ্রহে তাকে স্কুলে নিতে হয়েছিল। সে বেশির ভাগ সময়ই আমাদের কোলে কোলে ঘুরত, কিন্তু পড়তে- লিখতে তার কোনও ছাড় ছিল না। তার মা এসে যখন কেঁদেকঁকিয়ে শোনাতেন অরিন্দমের না-লিখতে পারার কথা, ওই অল্পবয়সেই আমার কেমন যেন একটা আক্রোশ হত! মনে হত একটা আড়াই বছরের বাচ্চার ছোটবেলাটা সবাই যেন ষড়যন্ত্র করে তার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে! সেসময় ‘চাইল্ড-এবিউজ’ শব্দটাও কেউ শোনেনি, বাবা-মায়েরাও বিশ্বাস করতেন গাধা পেটালে তবেই ঘোড়া হয়। তাই আড়াই বছরের এক শিশুকে গান-গল্প না বলে আসুরিক পদ্ধতিতে শেখাতে হত ওয়ান টু থার্টি বানান লেখা। খোলা মাঠের বদলে তার সারা সকালটা কাটত চারদেয়ালে বাঁধা ক্লাসঘরে। অরিন্দমের সেই চোখের-জলে-ভাসা মুখখানির দিকে তাকিয়েই বোধহয় সর্বপ্রথম আমার এই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বিরূপতা তৈরি হয়েছিল। কারণ আমি নিজেও যে তার মত একজনই ছিলাম!

    এই ছোট্ট স্কুলটা কী করে যেন আমার শৈশবকে ধরে রেখেছিল। গেট পেরিয়ে ঢুকলেই কচিকাঁচাদের ভিড়ে আমি যেন নিজের ছোট্টবেলাটাও দেখতে পেতাম। ওই তো মাম্মার হাত ধরে ঢুকছি ...... নাহ, নিজেকে আমার একেবারেই মনে পড়ছে না তো? পড়ছে অন্যদের। খুব আবছা মনে পড়ে 'দিদা দিদিমণি'কে, আটপৌরে করে সাদা ধবধবে শাড়িপরা চশমাচোখে হাস্যমুখী এক বৃদ্ধা। উনি কি আমাদের পড়াতেন? তখন নার্সারিতে কি লেখাপড়া ছিল? নাকি শুধুই গান আর খেলা আর মুখেমুখে অ আ ক খ? মনেও পড়ে না। শুধু একটু একটু মনে পড়ছে দিদা দিদিমণিকে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আমরা ক'জন মাঠের ওই শিউলি গাছটার নিচে( যেটা থেকে আমার মাথায় শুঁয়োপোকা খসে পড়েছিল), আর উনি মাঝখানে একটা চেয়ারে বসে গল্প শোনাচ্ছেন। স্কুলবাড়ির ভেতরের কোনও ক্লাসে ওনার কোনও ছবি কিন্তু আমার মনের মধ্যে নেই, জানিনা উনি শুধুই গল্পের দিদিমণি ছিলেন কিনা। আর ওনাকে ভালোবাসার আরও একটা কারণ হোল স্কুলের উল্টোদিকের বাড়িতে আমার দিদাও ছিলেন ঠিক ওনার মতোই সাদা শাড়িপরা আর ওনার মতোই গল্প বলিয়ে। তাই বোধহয় ওনাকে কোনোদিন ভয় করি নি, স্কুলটাকেও না। সেটা সম্ভবত আর একটা বাড়িই ছিল আমার কাছে। তো এরপরে আমার মাঠ থেকে ক্লাসরুমে প্রমোশন হোল। সেখানে মনে আছে বেয়ানদি, নীলিমাদি, পার্বতীদি, আরও দুজন...... একজন বেশ বয়স্ক রাগিরাগি আর একজন বেশ অল্পবয়সী সুন্দর দেখতে। বলাইবাহুল্য শেষের জনকে আমরা ছোটরা খুব পছন্দ করতাম। আর সবার উপরে ছিলেন মধ্যমণি বড়দি, তাঁর পানের কৌটো, সাইবাবা আর বিশালদেহ নিয়ে। বারবার ওনার চেহারার কথাটা এইজন্য বলছি যে, রোজ উনি একটা রিকশা করে স্কুলে আসতেন, আর সেই রিকশাওয়ালার হাঁসফাঁশ করা চেহারাটা ছিল বাবা-মায়েদের মুখরোচক আলোচনার বিষয়, যা মাঝেমাঝে আমাদেরও কানে আসত।

    আশ্চর্যের ব্যাপার হোল ওই স্কুলে পড়াশোনার ব্যাপারটা আমার কিছুই মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে বছরের শেষে প্রাইজ পাচ্ছি ফার্স্ট সেকেন্ড অনুযায়ী লাইন করে দাঁড়িয়ে। বড়দি সবার হাতেই প্রাইজ হিসেবে তুলে দিচ্ছেন কিছু বই, আর তার ওপরে কয়েকটি লজেন্স ও ছোটদের প্রিয় কয়েকটি হাতিঘোড়া বিস্কুট। সবাইকেই সমান, কেউ বেশি কেউ কম নয়। এখন ভাবলে আশ্চর্য লাগে, ওই অতবছর আগেই বড়দি শিক্ষকতার আধুনিক পাঠটি কেমন করে রপ্ত করেছিলেন, যেখানে মেরিট অনুযায়ী কোনও বৈষম্য না করে সব ছাত্রছাত্রীকেই সমদৃষ্টিতে দেখার কথা বলা হয়েছে? আরও মনে পড়ে নন্দোৎসবের কথা। সেদিন নতুন থেকে পুরনো সব ছাত্রছাত্রীর নিমন্ত্রণ থাকত খিচুড়ি আর তালের বড়া খাওয়ার। আমরা ছোট্টরা নিজেরা খেতে পারতাম না বলে দিদিমণিরা মায়ের মতন নিজেহাতে খাইয়ে দিতেন , চামচটামচের কোনও বালাই ছিল না। "সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।" আমি যখন দিদিমণি তখন আমি যে-যত্ন করতে পারছি আমার ছাত্রছাত্রীদের, তা ওই ছোটবেলায় শেখা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণের প্রভাব যে ছাত্রছাত্রীদের ওপর কতখানি পড়ে, নিজের জীবনই আমাকে তা শিখিয়েছে।

    [url=

    [url=

    [url=

    ওপরের ছবি তিনটি একই স্কুলের মাঠে একই গাছের তলায়। শুধু সময়টা বদলে গেছে। সাদাকালো দুটোয় আমি ছাত্রী, আর রঙিনটায় শিক্ষিকা।





    এখন যেখানে থাকি সেখানে ভোরবেলা চোখ খুললেই জানলা দিয়ে দূরে মোছামোছা হলুদ রঙের একটা তিনতলা বাড়ি চোখে পড়ে। মাঝে মাঝে ঘুমভাঙ্গা কানে কেমন অনুরণনের মত ভেসে আসে "ভবসাগর তারণ কারণ হে...."। ওতে ঘুম ভাঙ্গে না, বরং ভাঙ্গাঘুমের একটা রেশ থেকে যায়। ওটা একটা স্কুল। তিনতলার জানলায় ছোটছোট কিছু মুখ কখনো দেখি কখনো না। বুঝি, সকালের ছোটদের তিনতলায় সবসময় প্রবেশাধিকার নেই। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। আমাদের স্কুলটা একতলা ছিল শুধু তাই নয়, দোতলা তিনতলায় অন্যদের বাড়ি ছিল বলে ছাদে যাওয়ারও কোনও অনুমতি ছিল না। গরমকালে দুঃখদুঃখ মুখে উঁচু আমগাছটার দিকে চেয়ে থাকতাম সকলে মিলে। মাঝে মাঝে গুঁড়ি ধরে ঝাঁকাতেও যে চেষ্টা করিনি তা নয়, কিন্তু তাতে দিদিমণিদের হাসি ছাড়া আর কোনও ফললাভ হত না বলাই বাহুল্য। তবে অন্য একটা মজা হত। মনে আছে, বেয়ানদি বলতেন, যাও, বাগানে কতরকমের পাতা খুঁজে পাও নিয়ে এসো। ব্যস, শুরু হত আমাদের ছোটাছুটি, কে কটা পাতা আনতে পারে! গাছের পাতার যে এত রকমফের আছে তা সেই ছোট্ট বেলায় শেখা। আর শুঁয়োপোকার কারণে শিউলি গাছটা মনে গেঁথে গিয়েছিল ওই বয়সেই। শুধু মাথায় শুঁয়োপোকাই নয়, শিউলি ফুল কুড়োতে কুড়োতে কতবার যে শুঁয়োপোকাশুদ্ধু তুলে ফেলেছি! এখন বুঝতে পারি ওই গাছটা আমার প্রিয় ছিল আরও একটা কারণে। ওর ফুলগুলোই প্রথম জানিয়ে দিত যে...... পুজো আসছে রে.........!!!



    “ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা
    ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা
    ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না
    নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।“

    জীবনের ভোরবেলায় সেই যে ছোটদের নিয়ে দিন শুরু করতাম, দুপুর-বিকেলে এসেও সেটা কিন্তু ফুরয় নি। আর এই পড়ন্ত বিকেলে সেটা বুড়িয়ে উঠেছে বটে কিন্তু মুড়য় নি। তবে ওই কচিকাঁচাদের ছেড়ে আর একটু বড় অসংখ্য মুখ রোজ সামনে আসে, কথা বলে, হাসে, কাঁদে, গম্ভীর হয়, আবার রেগেও যায় অকারণ বকুনিতে। এখন যে স্কুলটিতে আমি পড়াই সেটি একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল খিদিরপুরে, আমার বেশির ভাগ ছাত্রী হিন্দি বা উর্দুভাষী, তাদের আমি বাংলা পড়াই।


    প্রথম ১৯৯৯তে যখন পড়াতে আরম্ভ করি তখন এই স্কুলে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রীর অনুপাত ছিল ৬০%-৪০%, আমার বয়স ছিল কম আর সংগে ছিল শিক্ষকতা সম্বন্ধে একরাশ অনভিজ্ঞতা। শুধু তাই নয়, প্রথমদিনেই স্কুলটার ভাঙাচোরা চেহারা দেখে ভীষণ খারাপ লেগেছিল। একচিলতে মাঠও নেই! মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের ছোটবেলার মাধ্যমিক স্কুলের কথা, সেখানে যে মাঠ ছিল দু-দুটো! পরবর্তীকালে কলেজও যে বেছে নিয়েছিলাম বিশাল ওভাল মাঠগুলো দেখেই! আর এখানে? একচিলতে উঠোন, তার সংগে আবার এদিক-নাই-তার-ওদিক-আছে একফালি স্টেজ! স্কুলশুরুর আগে আর টিফিনে ওখানেই দৌড়োদৌড়ি ধাক্কাধাক্কি করছে মেয়েগুলো। খুব মুষড়ে পড়েছিলাম, এইখানে পড়াতে হবে সারাজীবন?!
    আর আজ? গরমের আর পুজোর ছুটির শুরুর কদিন কাটতে না কাটতে মন খারাপ শুরু হয়ে যায় – কতোদিন দেখিনি মেয়েগুলোকে !!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ জুলাই ২০১৫ | ২৩৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Salil | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৫ ০৫:২৯69167
  • ব্রেশ ব্রেশ ...
  • utpal | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৬69168
  • নিজেদের স্কুল এর কথা মানে পড়ে গেল ।খুব ভালো লিখেছেন
  • madan mohan bose | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৫ ১০:৪৩69169
  • সুন্দর লেখা।
  • Sumita Sarkar | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৪৮69170
  • এই মুহূর্তে একজন অন্যরকম শিক্ষকের কথা বলব। বড়দা। রনজিত পোদ্দার।



    সেটা ১৯১৩। সলিল বিশ্বাস, যার সংগে পরিচয় করি 'আপনাকে বলছি স্যর -- বারবিয়ানা স্কুল থেকে' পড়ে মুগ্ধ হয়ে , যিনি 'অন্যরকম' এক শিক্ষকতায় বিশ্বাসী এবং ব্রতী, আমাকে ডাক দিয়েছেন শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য। বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে শিক্ষাব্রতীদের মিটিঙে গেছি ব্যাপারটা জানতে-বুঝতে। আমার ধারণা ছিল মিটিঙে উপস্থিত সবাই পাঠদানের সংগে জড়িত, তাই খুব কৌতূহল নিয়ে সবাইকে দেখছিলাম ও বক্তব্য শুনছিলাম। সলিলদা ছাড়া আর সবাই আমার অপরিচিত হওয়ায় কৌতূহলটা একটু মাত্রাতিরিক্তই হয়েছিল, কারণ শ্রমজীবীতে পড়ানো যে এক অর্থে আমার ক্ষেত্রে শেখারও জায়গা হবে সে আমি প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম। তো অনেকেই বক্তব্য রাখছিলেন, কিন্তু ওই সৌম্য বলিষ্ঠ চেহারার মাস্টারমশাই? উনি কী পড়ান? আহা কী ভালই হয় যদি বাংলা-ই ওনার বিষয় হয়! জানলাম শিক্ষক নন, উনি ছোটবড় সব্বার 'বড়দা'। মনে মনে বললাম, বড়দাদা হওয়ার মতোই চেহারা ভদ্রলোকের। সেদিন আমি শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের নতুন পদ্ধতিতে পড়ানোর ব্যাপারে নিজের অজ্ঞতা ও ভয় বেশ খানিকটা প্রকাশ করে ফেলেছিলাম। মিটিঙের শেষে বড়দা ডেকে একটা কথাই বলেছিলেন -- দেখো, পড়াতে পড়াতেই শিখে যাবে। ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে 'বড়দা' মানুষটির প্রতি সেই মুহূর্ত থেকেই কেমন একটা ভরসা জন্মে গেল। বড়দা তারপর থেকেই আমার বড় ভরসার মানুষ।

    এখন ভাবলে মনে হয় সত্যিই তো! পরবর্তীকালে বড়দা শ্রমজীবীর ছেলেমেয়েদের তো শুধু বাংলা নয়, ইংরাজি হিন্দি সাঁওতালি আরও কত যে ভাষা শিখিয়েছেন তার শেষ নেই। বড়দা, রনজিত পোদ্দার, এক অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা, ছাত্রছাত্রীদের প্রাণের 'দাদু', কোনও তথাকথিত শিক্ষক ছিলেন না, অথচ ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি শিক্ষা আর ভালোবাসা পেয়েছে তাদের এই প্রাণের 'দাদু'র কাছ থেকেই।

    শুরু হল এক নতুন অধ্যায় আমার জীবনে। প্রতি সোমবার খিদিরপুরে স্কুলের শেষে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং রাত দশটা অবধি ক্লাস নেওয়া। তারপর ছেলেমেয়েদের সাথে আড্ডাসহ রাতের খাওয়াদাওয়া ও হাসপাতালের প্রধান নার্স নন্দিনীর ঘরে রাতকাটানো। আর মঙ্গলবার ভোরবেলাটা ছিল আমার কাছে অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের! তখন যে ছেলেমেয়েদের 'দাদু' আসবেন তাদের খেলতে নিয়ে যেতে! আমিও সঙ্গী হতাম। গ্রামের মধ্যে খেলার মাঠ খুঁজে সেখানে হত ফুটবলের পাঠ, কোচ অবশ্যই দাদু অর্থাৎ বড়দা। সৈনিকজীবনের মতোই নিয়মানুবর্তী বড়দা প্রায়ই আমাকে ঠাট্টা করতেন দেরিতে উঠে সেই প্রাতঃভ্রমণ মিস করার জন্য, কিন্তু সেই ঠাট্টার কারণে নয়, বড়দার নেতৃত্বে ওই অভিযানের আকর্ষণ ছিল আমার কাছে অন্য জায়গায়। ওই বয়স্ক মানুষটি যেভাবে একইসঙ্গে বন্ধু এবং গুরুজন শিক্ষকের মতো ছোটদের সংগে মিশতেন, সেটি আমার কাছে বড় লোভনীয় দৃশ্য ছিল, শিক্ষণীয়ও বটে। আমিও ওনার কাছে ছিলাম স্নেহের পাত্র, সেই স্নেহ বেশ অনুভব করতে পারতাম। ওই অপরিচিত জায়গাটিকে পরিচিত করে তুলতে উনি যে আমায় কত সাহায্য করেছেন! আর আমি আশ্চর্য হয়ে যেতাম কী নিপুণভাবে উনি ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থের দিকে নজর রাখতেন তা দেখে। একটি সাধারণ দিনের কথা বলি।

    সেদিন বাদলা ছিল, খেলতে যাওয়া হয়নি। তখন আমি হাসপাতালের পাঁচতলায় নন্দিনীর ঘরের বদলে স্কুলের ক্লাসঘরের পাশেই গেস্টরুমে রাত্রিবাস করি। যথারীতি ঘুম ভেঙেছে দেরিতে, বন্ধ দরজার ওপার থেকে পাশের ঘরে বড়দার গলার আওয়াজ আর ছাত্রছাত্রীদের কলকাকলি শোনা যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে গিয়ে যোগদান করতেই বড়দার নেতৃত্বে সবার সমস্বরে তিন-চারটি ভাষায় শুভসকাল জানানো হল। দেখলাম কী সুকৌশলে বড়দা এক-একটি বাক্যবন্ধকে বিভিন্ন ভাষায় -- বাংলা ইংরাজি হিন্দি সাঁওতালি -- ছেলেমেয়েদের দিয়েই বলাচ্ছেন আর লেখাচ্ছেন। অবাক লাগছিল, পড়ানোও এমন আনন্দের হয়? বাবুলাল বলে একটি সাঁওতাল ছাত্র একেবারেই কথা বলতে চাইছে না, তাকে বারবার ডেকে জিজ্ঞেস করে অনায়াসে তার জড়তা ভেঙে দিলেন। আর ক্লাস শেষ হল "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো" দিয়ে। ভীষণ ভালো লাগছিল, কারণ আমিও ছেলেমেয়েদের কাছে প্রথমে গানের দিদি-ই ছিলাম। নিজের অজান্তে কখন যেন গলা মিলিয়েছি। কিন্তু সবার ওপরে বড়দার বলিষ্ঠ কণ্ঠ গমগম করছিল।

    সত্তর-ঊর্ধ্ব বড়দা রোজ ভোরে শ্যাওরাফুলি থেকে হেঁটে আসতেন বহুদূরের শ্রমজীবীতে, ছেলেমেয়েদের ওঠাতেন ঘুম থেকে, খেলা হত, গান হত, ভাষাশিক্ষার ক্লাস হত, তারপর নিচে নেমে গোটা হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার করতেন নিজের হাতে, ছেলেমেয়েরা তাই দেখে নিজেরাই হাত লাগাত। পরিবেশ দিবসে প্রতিটি ছেলেমেয়ে একটি করে গাছ লাগাত বড়দার তত্ত্বাবধানে, তারপর সারা বছর নিজের গাছটিকে যত্ন করার দায়িত্ব তার নিজের। বড়দা ছেলেমেয়েদের সেই শিক্ষা দিয়েছিলেন যা আমরা তথাকথিত শিক্ষকরা দিতে অক্ষম। তাই উনি ছিলেন ওই বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষক।

    প্রতি মঙ্গলবার সকালে যখন শ্রমজীবী থেকে শ্যাওরাফুলি স্টেশনের দিকে রওনা দিতাম, বড়দা সঙ্গী হতেন। তখন দেখতাম অদ্ভুতভাবে আমার মনের কষ্টের কথাগুলি কেমন অনায়াসে জেনে নিচ্ছেন আর একটা শান্তির প্রলেপ দিচ্ছেন। হাসিমুখ ছাড়া ওনাকে কখনো দেখিনি। সমস্যার মধ্যেও উত্তেজিত না হয়ে দেখেছি ধীরস্থির ভাবে আলোচনা করতে। ছেলেমেয়েদের 'দাদু' কখন যেন আমার শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন জীবনের ওঠাপড়া সামলানোর ক্লাসে। মঙ্গলবারের সকালটা আমার কাছে খুব প্রিয় ছিল তাই।

    বড়দাকে শেষ দেখেছি এক বিয়ের আসরে। সেদিন বড়দার আরেক রূপ! চুড়িদার পাঞ্জাবীতে খুব সুন্দর লাগছিল, ঠাট্টা করে বলেছিলামও সেকথা। ছিলেনও ঠাট্টার মুডে, সবার সংগে খুব মজা করছিলেন, পিছনেও লাগছিলেন কারো কারো। ভারি ভালো লাগছিল, অনেকক্ষণ কথা হচ্ছিল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। চলে যখন এলাম, স্বপ্নেও ভাবিনি সেই শেষ দেখা। গেটের কাছে এসে অটোয় তুলে দিয়েছিলেন, সেই দৃশ্যটি মনে পড়ছে।

    বড়দার কোনও ছবি নেই আমার কাছে। দরকার নেই। বড়দার কথা ভাবলেই তাঁর মুখটি মনে পড়বে এক দুর্লভ ভালোমানুষ হিসেবে। চোখ বুজলেই শুনতে পাব বড়দা গাইছেন "সকল দ্বন্দ্ববিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো সেই তো তোমার ভালো।"

    ভালো থাকবেন বড়দা
  • Salil | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১৫ ১২:৩১69171
  • এমন একজন নির্মল মানুষ খুব কম দেখা যায়।
  • sumita sarkar | ***:*** | ০২ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৬69172
  • আমার প্রথম শিক্ষকবেলার সেই স্কুলটি সম্বন্ধে শেষ কিস্তিটি আজ লিখব। তারপর চলে যাব জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে।
    ওই স্কুলে ছেলেবেলার কথা ভাবলেই মনে পড়ে শিউলির গন্ধ, মাঠে ছুটোছুটি আর ক্লাসের পরে বড়দির নেতৃত্বে সবার সাঁইবাবার ভজন গাওয়া (যদিও তা আমাকে পরবর্তী জীবনে নাস্তিক হতে কিছুমাত্র বাধা দেয় নি), যা আমার জীবনে প্রথম সংগীতশিক্ষা। মনে পড়ে পুজোর ছুটিতে ভোরবেলা পাড়ার মেয়েরা মিলে দলবেঁধে স্কুলের মাঠে শিউলিফুল কুড়িয়ে মালাগাঁথা। এইভাবে ভিতরেবাহিরে স্কুলটি আমার জীবনের প্রভাতবেলায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তা আরও প্রসারিত হয়েছিল ছাত্রী থেকে শিক্ষিকায়। এটুকু হলফ করে বলতে পারি, ছাত্রী সুমিতা যতখানি শিখেছিল ওই স্কুলে, শিক্ষিকা সুমিতা তার থেকে কম কিছু নয়। আর এই শিক্ষায় বড়দি ও অন্যান্য দিদিমণিদের সংগে সংগে ছোট্টমাঠসহ ওই স্কুলবাড়িটার ভূমিকাও কিছু কম ছিল না। এখনো পথে যেতে যেতে শিউলির গন্ধ পেলেই মনে পড়ে তার কথা। একরাশ ভালোলাগায় বুক ভরে ওঠে।
  • sumita sarkar | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৫ ০১:৪১69173
  • বড়বেলায় যে স্কুলে পড়াতে আরম্ভ করলাম তার প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসটা আমার কাছে চিরস্মরণীয়। এত ভয় আমি জীবনে পাইনি! তখন পর্যন্ত তো আমার পড়ানোর একমাত্র অভিজ্ঞতা ছোট্টছোট্ট ছেলেমেয়েদের, এত বড় মেয়েদের আমি কী পড়াব কীভাবে পড়াব কিছুই তো জানিনা! তারা কি আমার কথা শুনবে? আচ্ছা, কী বলে শুরু করব? ক্লাসে ঢুকলেই তো অতগুলো চোখ পরম কৌতূহলে আমাকে জরীপ করতে শুরু করবে, আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে না তো? কিচ্ছু তো জানি না কেমন করে পড়াতে হয়, যদি একটাও কথা না বেরোয় মুখ দিয়ে? তিনতলায় ক্লাস, এইসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে উঠছি আর আতঙ্কের ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে মেরুদণ্ড দিয়ে। সেই মুহূর্তে বুঝলাম শত স্মার্টনেস হাজার উপস্থিতবুদ্ধি থাকলেও এই মুহূর্তে তা আমার কোনই কাজে আসছে না। দুরুদুরুবক্ষে ক্লাসঘরের চৌকাঠ পার হলাম। তারপর.........?
    তারপর এক লম্বা ইনিংসের শুরু যা এখনো চলছে। তবে অত ভয় আগে কখনো পাইনি।
    একদিকে ছাত্রীদের অন্যদিকে সহকর্মীদের সামলাতে সামলাতে একসময় দেখি বাঃ, বেশ তো পারছি! তাহলে আর একটু ভালো করে পড়াই, আর একটু তৈরি হই নিজে! পড়ানোর জন্য ‘এই আর একটু তৈরি হওয়া’ আমার আজও শেষ হয়নি। ষোল বছর পড়ানোর পর আজও প্রত্যেকটি ক্লাসের শেষে দরজা দিয়ে বেরোতে বেরোতেই মন খুঁতখুঁত করতে থাকে, ওই কথাটা বলা হোল না তো! আচ্ছা, এভাবে না পড়িয়ে যদি ওভাবে পড়াতাম! নিজেই যেন বেশি বকবক করলাম, ওদের বলতে দিলাম না তো! আচ্ছা, ওদের কি ভালো লাগল বিষয়টা, ইন্টারেস্টিং লাগল কী? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই পরের ক্লাসের জন্য তৈরি হতে থাকি, মাথার মধ্যে ঘুরতেই থাকে কথাগুলো। ভাবতে ভাবতেই দেখি, এই ষোল বছর আমাকে এতকিছু শিখিয়েছে যা আমি স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতেও শিখে উঠতে পারিনি। আমার প্রকৃত পাঠ আমি পেয়েছি এই মেয়েগুলোকে পড়াতে পড়াতেই ।
  • Salil | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৩৯69174
  • পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
  • sosen | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৫ ১০:৫৩69175
  • খুব ভালো লাগলো দিদি!
  • sumita sarkar | ***:*** | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৪:১৩69176
  • ভোরবেলা জীবনকে যত ঝকঝকেভাবে মনে পড়ে, অন্য কোনও সময় আর তা হয় না। হয়তো নিস্তব্ধতার জন্য; হয়তো সদ্য-ঘুমভেঙ্গে-ওঠা মন ফাঁকা স্লেটের মত খালি থাকে; হয়তো খোলা আকাশ সবুজ গাছ বন্ধুর মতো জানলা দিয়ে ডাক দেয়, বলে -- বলো তোমার কথা বলো! বলতে ইচ্ছে করে তখন, বন্ধুর কাছে, জীবনকথা।
    আমার বড়োবেলার স্কুলে পড়াতে এসে প্রথম যে ব্যাপারটা আমার মনে দাগ কেটেছিল তা হল, বহু অহিন্দু নামের সংগে পরিচিত হওয়া। তখন এই স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম অনুপাত ছিল মোটামুটিভাবে ৬০%-৪০%। আমার যেহেতু এর আগে কোনও বাঙালি মুসলিম বন্ধু বা পরিচিত কেউ ছিল না, ফলে ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ নতুন এবং আগ্রহের ছিল (অবশ্য বলে নেওয়া ভালো, এর মধ্যে আমার জীবনে দুবছরের ঠিকানা ছিল আলীগড়ের একটি গোঁড়া উর্দুভাষী মুসলিম পরিবারের বাড়ির দোতলা। ফলে অবাঙালি মুসলমান রীতিনীতি আচারব্যবহার ধর্মাচরণ সম্বন্ধে খুব ঘনিষ্ঠভাবেই বেশ কিছু জ্ঞান আহরণ করেছিলাম ভালোবেসে)। তো সেই নামগুলি মুখস্ত করা আমার কাছে বেশ বড় ব্যাপার ছিল। করতে গিয়ে দেখি, আরে, হিন্দু নামগুলিও তো আমি মনে রাখতে পারছি না! অর্থাৎ সমস্যাটা স্মৃতিশক্তির, ধর্মের বা ভাষার নয়। আমি করলাম কি, প্রথমেই মেয়েদের কাছে সারেন্ডার করে দিলাম যে আমার কোনও নামই মনে থাকছে না, মাসখানেক লাগবে নাম এবং মুখ মেলাতে। ততদিন যেন তারা আমাকে ক্ষমা করে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল এক মজার খেলা। একজনের দিকে তাকিয়ে ডাকলাম, ফরজানা, সে হেসে উঠে বলল, আমি রীতা, আনটি! বললাম, এইরে, ভুল হয়ে গেছে! দাঁড়া, এইবার ঠিক নাম বলব। তুই নিশ্চয়ই ইপ্সিতা? এবারে গোটা ক্লাস খিলখিলিয়ে হাসি, না আনটি, ও তো রুকসার ! শেষে হাল ছেড়ে দিলাম, ওরাও। বেশ কিছুদিন লেগেছিল মুখ আর নাম মেলাতে। তবে ওদের আগ্রহে খেলাটা মাঝেমাঝেই খেলতে হত।
    পড়ানোর সংগে সংগে অবশ্যম্ভাবী দায়িত্ব এসে পড়ল খাতাদেখার। আর এই সুত্রেই বিভিন্ন মজার গল্প এসে জুটতে লাগল। পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানের বার্ষিক পরীক্ষায় জানতে চাওয়া হয়েছিল একটি নিরামিষাশী প্রাণীর নাম। সরল ও স্বাভাবিক উত্তর এসেছিল, ঠাকুমা!!! আর ষষ্ঠ শ্রেণির ভূগোলের প্রশ্ন, কয়লা কোথায় পাওয়া যায়? এ তো জানাই কথা, সিঁড়ির তলায় ! এমনি করে ধীরে ধীরে স্কুলটা যেন একটু ভালো লাগতে লাগল বাইরের মলিন চেহারা সত্ত্বেও। মেয়েদের সাথে সাথে সহকর্মীরাও কাছের হতে থাকলেন। মনে পড়ে, যখন চাকরি শুরু করি, তখন স্কুলের পঞ্চাশবছরপূর্তি অনুষ্ঠান চলছে, গান জানার সুবাদে সংগে সংগে সাংস্কৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাম। আর এখনো ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’ । পড়ানোর সূত্রে যতটা না, গানের সূত্রে তার চেয়ে অনেক বেশি ছোটবড় বহু ছাত্রীর সংগে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ হল। শিক্ষকদিবসের অনুষ্ঠান সেই পরিচিতিকে আরও বড় বৃত্তে বেঁধে ফেলল। এমনি করেই চলল ‘দেওয়া-নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’ মেয়েদের আর আমার মধ্যে।
  • সলিল | ***:*** | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৯69177
  • শিক্ষকরা আরো বেশি বেশি নিজেদের কথা লিখলে কত ভুল ভাবনা ভাঙতে পারে .. আরো অনেক লেখো সুমিতা।
  • sumita sarkar | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০২:৫৭69178


  • গতকাল। স্কুলে প্রথম পিরিয়ডে একাদশ শ্রেণির ভাষাতত্ত্বের ক্লাস। এই স্কুলে একাদশ দ্বাদশের ক্লাসগুলি হয় চারতলায়। এই চারতলাটি নিয়ে গল্প আছে। আমি যখন এখানে প্রথম পড়াতে আসি তখন এই ভাঙাচোরা স্কুলবাড়িটির একমাত্র যে জায়গাটি আমার পছন্দ হত, তা হল এই চারতলা। একপাশে তিনচারটি ঘর, লাইব্রেরি, আর বাকিটা খোলা ছাদ। সামনেটাও তখন এতোটাই খোলা ছিল যে দূরে ডকের অংশবিশেষ দেখা যেত। ভারি ভালো লাগত ওখানে ক্লাস নিতে যেতে তখন। বর্ষায় ঘনঘোর মেঘের ঘনিয়ে আসা দেখা যেত, শীতে কখনো কখনো ছাদে রোদ পোয়ানো চলত একই সংগে দিদিমণি ও ছাত্রীদের। সব থেকে মজা হত যখন অঝোর বৃষ্টিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজায় অসহায় দাঁড়িয়ে আছি, ছাদ পেরিয়ে ক্লাসে ঢুকতে পারছি না, মেয়েরা নিজে থেকেই ছুটে ছুটে ছাতা নিয়ে এসে যত্ন করে আমাদের মাথা ঢেকে ক্লাসে নিয়ে যেত। ওদের এই সস্নেহ ভালোবাসার প্রকাশটি আমি মনে মনে বড় উপভোগ করতাম।
    কিন্তু আজ সেই ছাদটি স্মৃতি হয়ে গেছে, সেখানে উঠেছে নতুন ক্লাসঘর। তারও ইতিহাস আছে। ছাদ থাকাকালীন সময়ে অনেকদিনই দেখা যেত, ঘরের অভাবে একাদশ-দ্বাদশের কোনও দিদিমণি যাযাবরের মত একটি ফাঁকা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছেন গোটা স্কুলবাড়িতে, পিছন পিছন গড্ডলিকাপ্রবাহের মতো মেয়েরা। সেই সমস্যা মেটাতেই ছাদে তৈরি হল ঘর। চারতলাটি হয়ে পড়ল শ্রীহীন। তারপর একসময় স্কুলবাড়ির গা ঘেঁসে তৈরি হল প্রমোটারের বহুতলও, সামনের আকাশটাও কাটা পড়ল, এখন আর ডক দেখা যায় না কোনোভাবেই।
    সেই চারতলাতেই গতকালের সকালে ভাষাতত্ত্ব। কঠিনস্যকঠিন সূত্রগুলি জলবৎতরলং করে সামনের গোমড়া মুখগুলির হৃদয়ে যদি এতটুকু প্রবেশ করানো যায়, আপ্রাণ সেই চেষ্টা করে চলেছি। এমন সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি, হুহুঙ্কার মেঘগর্জন, জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁটে ঘর ভেসে যাচ্ছে। এমন একটি ভিজেসকাল কি ভাষাতত্ত্বের মতো নীরস বিষয় নিয়ে কাটিয়ে দেবার? করুণ মুখগুলি দেখে ওদের জন্য বড় কষ্ট হল। নিজের জন্যও। আস্তে করে বই বন্ধ করলাম। বললাম, কে গান জানিস একটা গান কর তো?
    থতমত মুখে এই বক্তব্যটা বইয়ের পাতায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করল প্রথমে, তারপর অবিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন এল,
    গান, আনটি?
    হ্যাঁ রে, এমন দিনে কি পড়াশোনা করতে আছে?
    উদ্ভাসিত মুখগুলোই আমাকে বলে দিল আমি ঠিক কাজই করেছি। গানে গানে ভেসে গেল সময়, সংগে সঙ্গত করল বৃষ্টির ঝমঝম ছন্দ। ক্লাস শেষে একটি পূর্ণমন নিয়ে চলে যাচ্ছি যখন, সেই গোমড়া মুখগুলো তখন হাসিমুখে কলকাকলিতে মুখর।
    সারাদিন ওই মুখগুলোই আমার সঙ্গী ছিল এরপর।
  • সলিল | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০৪69179
  • বাঃ! ঠিক এই ভাবে এগিয়েই তো গভীরে ঢুকতে হবে।
  • sumita sarkar | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০৮69180
  • শিক্ষকদিবসে হয়তো কিছু লেখা উচিত ছিল। কিন্তু আয়লান কুর্দির উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা ছবিটা আমার হাত আটকে দিল। এখন মনে হচ্ছে, আয়লানের মত লক্ষ লক্ষ শিশুরা যে হাসিমুখে বইবগলে স্কুলে যেতে পারে না, পারবে না কোনোদিন, তার জন্য কি আমরা শিক্ষকরাই দায়ী নই? কী শেখাই আমরা ছাত্রছাত্রীদের? ভালো নম্বর পেতে, ভালো রেজাল্ট করতে পরীক্ষায়, সবাইকে টপকে ফার্স্ট হতে, ভালো চাকরি ভালো মাইনে ভালো খ্যাতি ভালো ভালো আরও ভালো ......... এই ই কি নয়? একবারও কি শেখাতে পারি দুর্বলের জন্য সাহায্যের হাত কেমন করে বাড়িয়ে দিতে হয়? আয়লানের ছবিটা কি আমার একজন ছাত্রীকেও দেখিয়েছি? বলেছি তাদের, যে এমন লক্ষ লক্ষ শিশু আছে পৃথিবীতে, তোমরা বড় হয়ে তাদের হাত ধোরো, বলেছি কি?...... না। বলিনি। তাই আজ যখন স্কুলে আমার ছাত্রীরা আনন্দ করে শিক্ষকদিবস পালন করবে, সেই মুহূর্তে আমার মনে হবে দিদিমণি হিসেবে আমি ব্যর্থ! সম্পূর্ণ ব্যর্থ!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন