এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জার্মানী ডায়েরী - ৩

    Farha Kazi লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৪৫৪০ বার পঠিত
  • জুতোপর্ব:

    নতুন দেশ, ঝাঁ চকচকে রাস্তা... ছবির মতো শহর, সাজানো গুছানো এক্কেবারে সিনেমার মতো।
    আহা ইউরোপ শুনলেই DDLJ এর শাহরুখকে মনে পরে।
    “তুঝে দেখা তো এ জানা সনম”... আল্পস পর্বত, রাইন নদী, বরফ, টয়ট্রেন, নীল আকাশ, রাস্তাভর্তি টিউলিপ, ড্যাফোডিল! কি সুন্দর ভাবতে লাগে না?

    ক্লাস টেনে আমাদের ইংরাজী পাঠ্যবইয়ে কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থের একখান কবিতা ছিলো... ড্যাফোডিল!

    “When all at once I saw a crowd,
    A host, of golden daffodils;
    Beside the lake, beneath the trees,
    Fluttering and dancing in the breeze. “

    কবিতাখান পড়েই আমার ধারণা হয়েছিলো এই ফুল হলুদ রংয়ের না হয়ে যায়না... একে হলুদ হতেই হবে! নীল নদীর ধারে হলুদ ফুল, সবুজ ঘাস ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না।

    গতবছর মার্চে জার্মানী এসেই রাস্তার ধারে ধারে একগাদা হলুদ ফুল দেখে দৌড়ে গিয়ে বলেছিলাম ড্যাফোডিল!
    অথচ ফুলটাকে আমি কখনো এর আগে দেখিনি।
    লোকজন হাঁ করে বোধহয় ভাবছে মেয়েটা ফুল দেখে অমন আশ্চর্য হয়ে গেছে কেন?
    এদেশের বনে জঙ্গলে ড্যাফোডিল জন্মায়!
    ওয়ার্ডসওয়ার্থের ড্যাফোডিল! এসব দেখার জন্যই তো জীবন সার্থক।

    হাইডিকে মনে আছে , আর ক্লারা? আমি হাইডির শহরের খুব কাছে থাকি.. আমার বাস ফ্র্যাঙ্কফুর্টের খুব কাছে!
    আমি জীবনে কখনোই ভাবিনি যে আমি সত্যি সত্যি হাইডির আল্পস দেখবো !!!
    আচ্ছা, এটাকে আমার শহর বলা যায়কি? থাকছি যখন আপন করে নিতেই তো হবে। আমার এই নতুন শহরের বুক চিরে বইছে রাইন নদী। রাইনকে বড্ডো কাব্যিক নদী মনে হয় আমার... নীল, শান্ত, কবিতার মতো নদী।

    এখানে এসেই প্রথম দরকারি কাজ হলো জুতো কেনা।
    আমাদের ভারতের জুতো এখানে কার্যকরী না। ঠান্ডায় জমে যাবে ও জুতো পরলে! এখানের জুতোগুলো বুটের মতো.. লম্বা এবং ফ্যাশনেবল! এখানের ফ্যাশন বলতে ঐ জুতো , জ্যাকেট আর টুপি!
    এইগুলোকেই কায়দা করে পরতে হবে!
    ভারতের মতো রঙীন প্রজাপতি সেজে ঘুরে বেড়ানো জাস্ট স্বপ্ন!
    আমার সব শর্ট ড্রেসগুলো কলকাতায় আলমারী বন্দী হয়ে , আম্মু একটাও আনতে দিলো না! বললো শীতের দেশে তুমি এসব ছোটো পোষাক নিয়ে করবে কি? এখানেই থাকুক। এখানে এলে বরং পরবে! তুমি ওখানে গিয়ে কিনে নেবে দরকারী জিনিষপত্র!
    অগত্যা... শপিং করতেই হবে!

    তৌসিফের সাথে বাজার যাওয়া মানে নাইটমেয়ার!
    উনি দুদিন ধরে উইন্ডোশপিং করবেন... তিনদিন ধরে দাম দেখবেন। তারপর কোনো জিনিষ কিনবেন!
    চারদিন দোকান ঘোরার পরে একটা সাদা খাতা কিনেছিলো ! তাও আমি যখন খেপে গেছি তখন! এমন পাবলিক আমি আমার জীবনে দুটো দেখিনি!
    সাদা খাতা কিনতেও যে কারোর উইন্ডো শপিং লাগে আমার সত্যিই জানা ছিলো না!
    জুতোর ক্ষেত্রে উনি যে ভালোই জ্বালাবেন তা বুঝে গেছি... কতদিন লাগাবে কে জানে!
    তাই আমি আগেভাগে বলেই দিলাম ওসব উইন্ডো শপিং টপিং
    আমি করিনা! আমি ডাইরেক্ট শপিং করি! কিনবো তো ভারি একটা জুতো , তারজন্য পঞ্চাশ দিন ধরে দোকান ঘুরতে পারবো না! আর ঐ পাঁচশো ইউরো দিয়ে একটা জ্যাকেট , দুশো ইউরো দিয়ে একটা জুতো কিনে চারবছর কাটাতেও পারবো না!
    পাঁচশো ইউরোতে আমার দশটা জ্যাকেট হয়ে যাবে!
    মেয়েদের জীবনে দাম ম্যাটার করে না! ফ্যাশন আর সৌন্দর্য ম্যাটার করে! সস্তা এবং টিকাও যাকে বলে!
    জুতোর দোকানে ঢুকে নানারকম জুতো দেখার পরে আমার দুইখান জুতো পছন্দ হলো! তৌসিফের হাবভাব বাপ টাইপ হয়ে গেছে... দুইখানা জুতো ও কিনে দেবে না মনে হচ্ছে! আমারও সম্মানে লাগছে বলতে যে দুটোই আমার চাই... জীবনে প্রথমবার এইরকম কারোর কাছে কিছু কেনার জন্য নির্ভরশীল! এইবার মনে হচ্ছে শালা বিয়েটা কেন করলাম! একটা জুতোর জন্য এই অবস্থা! দিব্যি ছিলুম দেশে... চাকরি বাকরি করছিলাম, দেদার ফূর্তি, শপিং,মস্তি! কি চক্করে পরলাম মাইরি!
    তা এ ছেলের বোঝা তো উচিত যে আমার দুটো জুতোই পছন্দ হয়েছে! আমাকে মুখে কেন বলতে হবে যে দুটো জুতোই কিনবো!
    আশা করে আছি উনি বলবেন তোমার দুটোই যখন পছন্দ, দুটোই নিয়ে নাও! কিন্তু ঐ যে বললাম ছেলের হাবভাব কেমন বাপ টাইপের হয়ে গেছে! আমার থেকে সাড়ে তিনমাসের ছোটো ছেলের হাবভাব দ্যাখো!
    কোথায় সকালে উঠে গুরুজনকে পেন্নাম করবে তা নয় জুতোর জন্য হাবভাব নিচ্ছে!
    হুহ! আমারও সময় আসবে!
    নতুন দেশ, তাই আবার অচেনা... অতএব চুপচাপ একখানা জুতো নিয়ে গোমড়া মুখে রওনা বাড়ির পথে!
    খুব হাবভাব নিচ্ছিলে না? এবার দ্যাখো মজা!
    জাস্ট কথা বন্ধ করে দিলাম। এতো বড়ো হাঁদা, বাড়ি আসার পাক্কা দুঘন্টা পরে উনি বুঝলেন কেস গোলমাল!
    আমার মতো বাচাল মেয়ে কথা বলছে না দেখে দশমিনিটে যেখানে বুঝে যাওয়ার কথা, সেখানে ওনার লাগলো দুঘন্টা!
    মাথায় কোন মান্ধাতার আমলের প্রসেসর লাগানো কে জানে!
    ব্যস আমি তো স্পিকটি নট যাকে বলে সাইলেন্ট মোডে চলে গেছি!
    একে তো বউকে রাগানো মানে বাঘের বাসায় হাত দেওয়া, তাই আবার নতুন বউ! কত রথী মহারথী বউয়ের কাছে জব্দ হয়ে গেলো, সেখানে ইনি তো চুনোপুঁটি! যাইহোক ওষুধের ডোজ পড়ে ছেলে এক্কেবারে ঠান্ডা, বাপ মোড থেকে ভিজে ইঁদুর মোডে চলে গেছে!
    পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘর ফাঁকা, কেউ নেই! শনিবার ছুটির দিনে গেলো কোথারে বাবা!
    দরজা খোলার আওয়াজ... দেখি বাবুমশাই এক হাতে জুতোর প্যাকেট আর অন্য হাতে চকোলেট নিয়ে হাসি মুখে ঢুকছেন!!
    দেখেশুনে একটাই প্রবাদ মনে এলো “সেই যখন মল খসালি , তবে কেন লোক হাসালি?”
    অবশ্য এসব কান্ড না করলে লেখার রসদ পাবো কোত্থেকে... এটা ভেবে ক্ষমাসুন্দর চোখে চকোলেটটা খেয়ে ফেল্লুম!
    ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি আমি সব শেয়ার করতে পারি, কিন্তু চকোলেটের শেয়ার দিইনা কাউকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৪৫৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • paps | ***:*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১১:১৪64423
  • দেখুন এই লেখার উপজীব্য় বিষয় কিন্তু ফিমেল এমপাওয়ারমেন্ট বা glass ceiling barrier এর মত গ্রামভারী কোনো বিষয়বস্ত্তু নয়। এটি হালকা চালে লেখা একটি নববিবাহিত দম্পতির খুনসুটির কথা। সুতরাং এখানে 'বরে পোষা মহিলা', 'আসবাব' ইত্য়াদি বিশেষণ না ব্য়বহৃত হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। এই লেখাতে financial dependence অ্য়াঙ্গেল আসে কোথা থেকে?
    আর লেখিকার জুতার বাড়ি দেবার ইচ্ছাটিও খুব ভাল লাগেনি। কড়া কথা তো ফাউল ল্য়াঙ্গোয়েজ ব্য়বহার না করেও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা যায়, ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
  • pi | ***:*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:৩০64416
  • কতদিন বাদে আবার সাইটের লেখাপত্তর পড়া হচ্ছে! খাসা লাগল!

    কিন্তু এগুলো তো মণি পুরো পিএ করছেন! এই মণি নামে তো সাইটে কখনো কাউকে লিখতেও দেখিনি, পি এ করার জন্যই কেউ নাম লুকিয়ে এসেছেন মনে হয়। অন্য খারটার না থাকলে এই লেখা নিয়ে এরকম পিএ আসত না মনে হয়।
  • amit | ***:*** | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:৫০64417
  • লেখিকার কথা বলতে পারবো না , কারণ লেখাটা পড়ে আদৌ নির্ভেজাল মজা আর টাইম পাস ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এই মনি নাম নিয়ে যিনি কিছু নন-ইস্যুকে নিয়ে এক নাগাড়ে খিল্লি করতে ব্যস্ত, তার নিজের আসল চেহারাটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
  • paps | ***:*** | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:০৬64424
  • পিএ মানে কি?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন