এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঈদবোশেখীর লেখা ১ : আরেক আমি দ্বিতীয় পর্ব

    Debanjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ এপ্রিল ২০২৫ | ৪৯ বার পঠিত
  • | |
    পাহাড়ের কোলে, পাইনের বনে, আছে যে আর এক আমার আমি

    তা পাহাড় চড়াই উৎরাই ভেঙে জিপটা যখন গ্রামটার কাছে পৌঁছে গেছে হয়তো আরো দশ পনেরো মিনিটের পথ খুব বেশী হলে তখন আবার খুব জোরে বমি পেয়ে গেলো আলমের। মেজরকে অনুরোধ করলো জিপ থামিয়ে একটু দাঁড়াতে যাতে সে বমি করে আবার জিপে উঠতে পারে। সেদিন সকাল থেকেই সূর্যের দেখা নেই একেবারেই, মাঝে মাঝেই মেঘ বৃ পাহাড়ের ষ্টি কুয়াশার লুকোচুরি চলছে। রোদ ঝলমল দিন না হলে আবার মেজরের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, তিনি আলম বমি করবার জন্যে জিপ দাঁড় করতে চায় শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। জিপ থেকে আলমকে সঙ্গে সঙ্গে নামিয়ে দিয়ে হুকুম দিলেন বমি করবার পর যেন আলম হেঁটেই খিড্ডাতে চলে আসে। এটাতে অবশ্য আলমের খুব একটা আপত্তি ছিলনা তখন, আসলে পাহাড়ের ওই চড়াই উৎরাই ভেঙে জিপে করে আসবার সময়েই আলমের প্রচন্ড বমি আসছিলো পুরো রাস্তাতেই। হেঁটে গ্রামে যেতে হবে শুনে তার খুব দুঃখ হলোনা। জায়গাটা ওর মোটামুটি চেনা, মেজরের সঙ্গে ও আগেও দুতিন বার এসেছে, পায়ে হেঁটে যেতে পারবে। তাছাড়া পায়ে হাঁটলে জিপের মত বমি আসছিলোনা আলমের। রাস্তায় পাশে একটা ছোট্ট পাহাড়ী পাইন বন ছিলো, সেদিকেই চললো আলম। পাইন বনটাতে ঢুকে ও বেশী দূর যেতে পারলোনা প্রচন্ড বমির বেগটা এসে গেলো ওর। বেশীক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা ও, একটা গাছের নিচেই হড়হড় করে বমি করে ফেললো। বমি করবার পরে কিছুক্ষন হালকা লাগবার কথা কিন্তু ওর মাথা ঘুরে গেলো হঠাৎ করেই। কোনোরকমে আরো কিছুদূর গিয়ে আর পারলোনা বনের মধ্যেই একটা গাছের নিচে বসে পড়লো। কষ্টে চোখ বুঝে এলো ওর।

    এভাবে কতক্ষন ও ছিলো আলম জানেনা কিন্তু যেন হঠাৎ করেই উঠে বসেছিলো ও। চোখ বন্ধ করেই মনে হয়েছিলো যে ওর দিকে কেউ যেন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। “কে তুমি” স্পষ্ট বাংলাতে নিজের নাম শোনে আলম। চোখ খুলেই সামনে যে লোকটাকে দেখলো তাকে দেখে শিরদাঁড়া দিয়ে একটা বিদ্যুৎ যেন খেলে গেলো আলমের। এই লোকটাকে আলম আগেও দেখেছে বেশ কয়েকবার ...... আয়নার সামনে !!! ওর সামনে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউনা ও নিজেই !!! একেবারে হুবহু নিজের মত দেখতে মানুষটার সঙ্গে মুখোমুখি হবার পরেই হয়তো আরো কিছুক্ষনের জন্যে আবার জ্ঞান হারিয়েছিলো আলম। তারপরেই কিছুক্ষন পরে মুখে জলের ছিটে পড়বার পরেই জ্ঞান ফিরে এলো আলমের। ওর সামনের বিলকুল ওর মত দেখতে লোকটাই জল ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফিরিয়েছে। মানুষটার কাছ থেকে আলম জানতে পারে যে বিলকুল ওর মত দেখতে মানুষটারও নাম অদ্ভুতভাবে আলম আর ওর মতোই এই লোকটাও মুর্শিদাবাদের ওর গ্রাম থেকেই এসেছে। তবে দুজনের মধ্যে আর কোন মিলই নেই।

    এই দুই নম্বর আলম পড়াশোনাতে খুব ভালো ছিলো, উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে কোলকাতা ও পরে সুদূর জার্মানী চলে যায়। এখন ওখানেই চাকরি করে সে। বিয়েও করেছে কয়েক বছর আগে দুটো ফুটফুটে বাচ্চাও আছে ওর। এখানে ও ওর পুরো পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে এসেছে। দুই আলম একসঙ্গেই বের হয়ে আসে ওই পাহাড়ী পাইন বন থেকে। বাইরে বের হয়ে এসে নতুন দু নম্বর আলমের পুরো পরিবারের সঙ্গেই আলাপ হয় আলমের। একটা বড় বিদেশী গাড়িতে সবাই বসে ছিলো। ওকে দেখে নতুন আলমের পরিবারের সবাই খুব অবাক হয়ে যায়। ওর সঙ্গে সবাই সেলফিও তোলে। ওরা ওকে একটা চকোলেট দিয়েছিলো তখন। আলম তার সিনিয়র কয়েকজন লেবারের কাছ থেকে হোয়াটস্যাপ আর ফেসবুকে একাউন্ট খুলতে শিখেছিলো। বাড়ির সঙ্গে কথা বলতেও খুব সুবিধা হত এতে। এই নতুন জার্মানীর আলমের সাথে মোবাইল নম্বর আর ফেসবুকের কন্টাক্ট বিনিময় করেও নেওয়া হয় আমাদের আলমের। তারপর দুনম্বর আলম আমাদের আলমকে গাড়ী করে খিড্ডার বাইরে ছেড়ে চলে যায়। খিড্ডাতে ঢুকে অবশ্য অন্য চমক অপেক্ষা করছিলো আলমের জন্যে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন