এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঈদবোশেখীর লেখা ১ : আরেক আমি - প্রথম পর্ব 

    Debanjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ এপ্রিল ২০২৫ | ৬৮ বার পঠিত
  • | |
    যাত্রা হলো শুরু

    এই যে গল্পটা আজকে বলতে চাইছি সেটার শুরুটা খুবই অদ্ভুতভাবে হয়েছিলো। আমার মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ করলে নিজের গাড়ী নিয়ে বেড়াতে বেরুবার খুব ইচ্ছে হয়। তো এভাবেই গত বছর অগস্টের শেষের দিকের একদিন বেড়িয়ে পড়েছিলাম। খুব বেশিদূর যাওয়া হয়নি সেবার অবশ্য। নিউটাউনের কাছে একটা বড় কন্সট্রাকশন সাইট আছে তার কাছে একটা চায়ের ঝুপড়ি দেখে খুব চা তেষ্টা পেয়ে গেলো। ওখানেই একটা বেঞ্চিতে বসে চা খেতে খেতে আলমের সঙ্গে আলাপ হলো আমার। আলম ওই কন্সট্রাকশন সাইটেই কাজ করে, মুর্শিদাবাদের একটা ছোট্ট গ্রামের ছেলে, বছর পঁচিশ বয়স হবে মনে হয়। এই গল্প ওর মুখেই শোনা। আলম মুর্শিদাবাদের এক ছোট্ট গ্রামের ছেলে। ওকে নিয়ে ওরা পাঁচ ভাই বোন। ওই সবচেয়ে ছোট। দাদারা কিছুটা পড়াশোনা করে এখন বাড়ির চাষ বাস দেখে, দুই দিদি কোনোরকমে মাধ্যমিক দিয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি, সবচেয়ে ছোট হবার জন্যে বাড়িতে বাবার ইচ্ছা ছিলো যে আলম আরো অনেক দূর পড়াশোনা করে কিন্তু আলমের খালি ভালো লাগতো দেশ ঘুরতে। কোনোরকমে মাধ্যমিকের গণ্ডিটুকু ডিঙিয়েই ওদের পাড়াতে এক কন্সট্রাকশনের ঠিকাদারকে ধরে ও একটা কন্সট্রাকশন লেবারের কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলো দিল্লিতে। সেই শুরু তারপর থেকে এ ঠিকাদারের সে ঠিকাদারের সঙ্গে বেশ কটা বছর বাইরে বাইরেই কাটিয়েছে আলম। বেশীদিন কোত্থাও থাকেনা ও। পাঁচ ছয় মাস বড়োজোর দশ মাস। তারপরেই অন্য কোন ঠিকাদার ধরে আবার অন্য কোন শহরে। বছরে বার দুয়েক দেশে যায়। একবার ঈদের সময়ে আরেকবার শীতের সময়ে। এখন নিউটাউনে একটা নামকরা মাল্টিন্যাশনাল টেলিকম কোম্পানীর ইস্টার্ন রিজিওন্যাল হেডকোয়ার্টারের কন্সট্রাকশনের কাজে আছে ও। এ কাজটা মোটামুটি বছরের শেষ পর্যন্ত করে তারপর দক্ষিণে পাড়ি দেবে। বেঙ্গালুরু বা চেন্নাই কোথাও একটা ওকে পাঠাবে ওর ঠিকাদার।

    তা আলমের কথা শুনে ওকে শুধোলাম যে এরকম ভাবে লেবারের কাজ না করে আরো পড়াশোনা করে কোনো ভালো কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তো নিজের ইচ্ছেমত ও দেশ ঘুরতে পারতো। এর জবাবে আলম প্রথমে কিছুক্ষন চোখ আকাশের দিকে করে তাকিয়ে থাকলো। তারপর আমার দিকে তাকালো আরো কিছুক্ষন। ভাবছিলাম ও বলবে, যে আর পড়াশোনা না করে ও কি ভুলই না করেছে। কিন্তু এসব না বলে আলম একটা অদ্ভুত রকম হাসি হেসে বললো, “পড়াশোনা তো করেছি। অনেক পড়েছি।” আমার কুঁচকে যাওয়া ভুরুর দিকে তাকিয়ে এবার সে এই গল্পটা বলেছিলো। সেটা এতই অদ্ভুত যে না লিখে পারলামনা। বছর খানেক আগে মোটামুটি জুলাই আগস্টের সময়ে আলম কাশ্মীরে যায়। পহেলগাঁওয়ের দিকে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এর একটা মিলিটারী ক্যাম্পে কিছু কন্সট্রাকশনের কাজ। জায়গাটা বেশ পছন্দ হয়ে গেছিলো আলমের। খুব খাটতে পারতো বলে ক্যাম্পের একজন উচ্চপদস্থ মিলিটারী অফিসার মেজর চৌহানের সুনজরে পড়ে গেছিলো ও। ক্যাম্পে কন্সট্রাকশনের কাজ ছাড়াও মেজরের ফাইফরমাশ খাটতে হতো লেবারদেরকেই। মেজরের কাজ ভালো করে করলে মাঝে মাঝে বকশিস জুটতো লেবারদের। কখনো ভালো বিদেশী চকলেট বা মেজরের মুড্ খুব ভালো থাকলে একটা আস্ত বিলিতি হুইস্কির বোতলও পেতে পারতো লেবারেরা। ভালো কাজ করতো এরকম কয়েকজন লেবারকে নিয়ে জিপে করে সপ্তাহে দুইতিন বার উপরের গ্রামগুলোতে গিয়ে সেখান থেকে প্রচুর আপেল পিচ খোবানী আখরোট এসব ঝুড়ি ঝুড়ি করে ক্যাম্পে নিয়ে আসতেন মেজর সাহেব। মাঝে মাঝে মেজাজ খুশ হলে তার লেবারদেরও বিলোতেন।

    তা একবার অনেক তাজা আপেল আর আখরোট পেয়ে লেবারদের ফলের সাথে একটা আস্ত ইমপোর্টেড বিলিতি হুইস্কির বোতল উপহার দিলেন মেজর চৌহান। সেবার জীবনে প্রথমবারের মত দুই পেগ হুইস্কি খেয়েছিলো আলম। এসব খাবার অভ্যাস একেবারেই ছিলোনা ওর। রাতের থেকেই বমি টমি করে পরের দিন খুব শরীর খারাপ ছিলো আলমের। পরদিন সকালে বিছানা থেকে মাথা তুলতেই ইচ্ছে করছিলোনা আলমের কেননা বিছানা থেকে মাথা তুললেই বমি আসছিলো। জোর করে একবার চা খেয়েই হড়হড় করে সব বমি করে দিলো। তাসত্ত্বেও উপায় নেই, মেজর সাহেব আবার ওকে নিয়ে জিপে করে চললেন আরো উপরে খিড্ডা না কি যেন নামের একটা গ্রামের থেকে ফল আনতে। সামান্য বমির জন্য আলমের মত একটা জোয়ান লেবার কাজ না করে বিছানায় পড়ে থাকবে, মেজরের এটা একেবারেই পছন্দ হয়নি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন