এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • মিছিমিছি খেলারা

    π লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জুলাই ২০১৬ | ৫৮৮৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • মিছিমিছি খেলা।

    মিছিমিছি খেলা বোধহয় আমাদের সবারই ছিল। ছোটবেলায়।
    এই যেমন দরজার কড়া আর হুড়োকোতে টিউবওয়েলের মত ঘ্টাং ঘটাঁ করে জল বের করে কলসীতে জল ভরা , সেই কলসী কাঁখে নিয়ে, কত উঃ আঃ করে চলাফেরা করে রান্নাঘরে এনে তার থেকে গড়িয়ে বাড়ির সবাইকে জল দেওয়া, প্লাস্টিকের সবুজ স্টোভটাতে চা বসানো, প্লাস্টিকের লাল কাপ প্লেটে সবাইকে সেই চা দেওয়া, মা, বাবা , দাদা। ঠাকুমা, পিসি, মাসি, কাকা , মামারা এলে আবার প্লেট শর্ট পড়লে মেল থেকে কেনা কাঠের কাপের সেটটাও উদ্বোধন ক'রে ফেলা। সকালে আপিস যাবার অগে রান্না সারার তাড়ায় একসাথে আঅমার হলুদ রঙের ডাবল গ্যাসে রান্না বসিয়ে দেওয়া, এমনকি তাড়া থাকলে সবুজ স্টোভটাতে প্লাস ঠাকুমার ঐ মাটি দিয়ে বানিয়ে দেওয়া উনুনটাতেও গুল জোগাড় ক'রে আঁচ দেওয়া। সে কী ধোঁওয়া, সে কী পাখা করা, চোখ জ্বলে যায়।
    তারপরেও কি কাজ কম নাকি ? ছেলেপুলেদের জোর করে দলা করে করে খাওয়ানো, মাছ খাওয়ানো নিয়ে নিত্যি অশান্তি, টেনে টেনে চিলে বেণী করে দেওয়া, তারপর কোনোদিন বাবার মত ইস্কুলে পড়ানো, কোনোদি মার মত রোজ সকাল থেকে উঠে ঘেমে নেয়ে কাজ করে পাঁচ মিনিটে শাড়ি পরে লিপস্টিক লাগিয়ে ছুটতে ছুটতে আপিস যাওয়া, বাড়ি এসে ছেলেমেয়েদের পড়তে বসানো, ছন্দা সেন, কমলিকাদের মত আজকের বিশেষ বিশেষ খবর পড়া, ছোট্ট সোনা বন্ধুদের নিয়ে ইন্দিরাদি হয়ে যাওয়া, বাবার মতন সিগারেটে ধোঁয়া পাকানো, আইসক্রিমের কাঠির উপর চ্যবনপ্রাশ মাখিয়ে স্কুলের বাইরের আচারওয়ালা হয়ে যাওয়া, স্টেশনের প্লাটফর্মের ওমলেটওয়ালি হয়ে সারাদিন ধরে ওমলেট আর ডিম পাউরুটি বানানো, জানলা দিয়ে দিয়ে ছেলেমেয়েদের হাত দিয়ে সেই ওমলেট পাঠিয়ে টাকা নেওয়া, ঘুরে ঘুরে কাগজের কোণা বানিয়ে ট্রেনে ট্রেনে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে করতে ঐ ট্রেনেরই টিটি হয়ে যাওয়া। আর ভাবতে বসা, টিটি র পুরো নামটা কী? কিচ্ছু ভেবে বের করতে না পেরে টিটি কে টেবিল্টেনিস কাকু নাম দিয়ে দেওয়া, আর নিজেই কালো কোট পরে সেই টেবিল টেনিস কাকু হয়ে সারাদিন , সারা হপ্তা, সারা মাস, সারা বছর ধরে সারা দেশ ঘুরে বেড়ানো। আর সুন্দর সুন্দর জানলার ধারগুলো নিজের জন্য নিয়ে রাখা।

    কত্ত কত্ত মিছিমিছি খেলা।
    সারা দুপুর একলা আমার। কিন্তু একলা আর কই ?

    বাস ভর্তি লোক। এত লোক যে পাদানি থেকে ঝুলে ঝুলে প্রায় পুরো শরীর বের করে সমানে বাসের গায়ে মারতে মারতে হাওয়া খেতে খেতে যাওয়া ।।
    ব্যাগ ভর্তি জমানো টিকিট নিয়ে বাড়ির জানলার তাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শার্সি চাপড়ে চাপড়ে টবিন রোড, সিঁথিমোড়, চিড়িয়ামোড়, শ্যাম বা-জা-আ-আ-র চীৎকার করে কণ্ডাক্টর কণ্ডাক্টর ।।।

    সারা দুপুর একলা আমার। আর সারা দুপুর একলা বারান্দায়। কিন্তু একলা আর কই ?
    সব টবেই যদিও আমার ছেলে মেয়ে ছাত্র ছাত্রী কেউ না কেউ থাকত, কিন্তু পুষ্যি ছিল একজনই। অপরাজিতা। আমার পুষ্যি গিনিপিগ। টবের সেই গিনিপিগ অপরাজিতার মত আমার এক্ষপেরিমেণ্টের আর কাউকেই সহ্য করতে হয়নি। মূলতঃ, অপরাজিতাকে স্বাবলম্বী বানানোর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল, মানে ঐ যাকে এখন প্রোজেক্ট বলতে শিখেছি। বারান্দার রেলিং , কি কোন কাঠি, কি অন্য গছকে জড়িয়ে ধরেছে দেখলেই ছাড়াছাড়ি করিয়ে দিতুম। একটা ইন্জেকশন দিতাম। তারপর ভোকাল টনিক। অন্যকে অবলম্বন না ক'রে একা একা চলতে পারার উপযোগিতা নিয়ে। গোল সেট ক'রে দিতাম। কয়েক ঘণ্টা, কয়েক ঘণ্টা ক'রে। কয়েক ঘণ্টা একা একা থাকার চেষ্টা করতে। এমনি করতে করতেই আস্তে আস্তে ঘণ্টা বাড়াতে বাড়াতে একদিন করবে জয়, নিশ্চয় ইত্যাদি।
    কিন্তু হায়, আমার এবং ল্যামার্কের সব আশায় ছাই ঢেলে তিনি লবঙ্গলতিকাই রয়ে গেলেন।
    অপরাজতাকে ঐ ইন্সপায়ারিং লেকচার ঝাড়ার সময় বলতুম, তুমি পারবে, মনে রাখবে, অপরাজিতা, তুমি। ঐ ভাটের সিনেমাটা দেখতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সেদিন।

    তবে আমার এই সুখের সংসারের শত্রুর নজরও পড়েছিল। সামনের বাড়ির জেঠিমার। লোক এমনিতে ভালোই ছিলেন, আমার শত্রু ছিলেন একথা আমার চরম শত্তুরেও বলবে না। কিন্তু সেই তিনিই যে কী বলে মায়ের কাছে তুমুল চিন্তিত মুখে জানালেন, তোমার মেয়ের কি অসুখ বিসুখ কিছু আছে ? নাকি তোমাদের বাড়ি আর কেউ আসে ? কেউ তো থাকোনা তোমরা। সারাদুপুর মেয়ে কাদের সাথে এত বকরবকর করে চলে ?
    মায়ের প্রবল জেরার মুখে আমার সংসারের লোকজনের সাথে মাকে আলাপ করাতে বাধ্য হয়েছিলুম বটে কিন্তু তারপর বহুদিন আর শান্তিতে তাদের সাথে, আমার টবের লোকজনের সাথে আমি বকবক করতে পারিনি।

    ছুটির দিনগুলো সারাদিন একা একা। সারা দুপুর।
    কিন্তু একা থাকা নিয়ে কোনদিনই দুঃখ, অভিযোগ ছিলনা। উলটে এ এক মস্ত পাওনা ছিল। এই একা থাকতে পারা। একা থাকার নেশা।
    সারা দুপুর একলা আমার। আর সারা দুপুর একলা বারান্দায়। কিন্তু একলা আর কই ?
    একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম তো আরো একজন আমার সাথে সাথে বাড়ছিল। আমার সব কথাবার্তাও তখন সেই একজনেরই সাথে। আর আমাতে মিলে ছকও কষেছিলাম। পালাবার।
    হাওয়া যেদিন খুব বেশি দিতো, আর খুব এলোমেলো , খুব ঘন ঘন আসতো আমার কাছে, আর এদিকে এসেই আবার পালাই পালাই করতো ও করতো, এমন না। কিন্তু হাওয়া অমনি করে টানাটানি করলে ও বেচারাই বা আর কী করে ! হাওয়া দিলেই গ্রীলের ফাঁক দিয়ে দিয়ে ঢুকে পড়তো ও । চুলগুলো যখন আরো একটু ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া হলো, তখন, আমি গ্রীলের জানলাটা পুরো খুলে দিতাম। বাস। পুরোপুরি ও আমার ঘরে। আমার বুকে। নাকে। চোখে। মুখে। মাখামাখি ওর গন্ধ।
    আমি দুহাত দিয়ে জাপটে ধরতাম ওকে। চোখ বুঁজে গন্ধ নিতাম। হাওয়া দিতো, ফিসফিসিয়ে ।
    আর, অমনি অবস্থায় ওর সাথে বকবক বকবক করে যেতাম। আমার সারাদিনকার গল্প। আমার ইস্কুলের নতুন সাজুনি দিদিমণির গল্প। আমার সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে জামাইয়ের গল্প। সেইযে কেমন বুদ্ধি করে আমার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই করে নিলুম, নিজেরটি তো রইলোই, সাথে টুক করে একটা এক্স্‌ট্রা পুতুল জুটে গেল! বলতাম, আমার অকালে পরিপক্ক হয়ে ওঠা বান্ধবীদের সাথে পাড়ার তিন চার ক্লাস উঁচু দাদাদের চিঠি চালাচালি নিয়ে কানাকানি হওয়া গপ্পো, ফিসফিসিয়ে।
    তবে বাবার মতন ও আমায় তুবড়ি কিম্বা বকবকী সিং নাম দ্যায়নি। নাম বরং আমিই একপিস দিয়েছিলুম। লগবগি সিং। জিম স্লিম টি্‌লমের অত চল টল হয়নি তখনো, পুরানো দিনের মানুষ আমি, ওর ঐ লিকপিকে ডালপালা আর লতপতানো পাতা দেখে ঐ নামটাই মনে এসেছিল।
    বেশ দেখতে ছিলো। লম্বা, ছিপছিপে। তবে, সকলের থেকে যেটা আমাকে টানতো, সে ছিল ওর রং। সকলের থেকে আলাদা। চোখকাড়া ঔজ্জ্বল্য নেই তাতে, মনকাড়া ত্বক ও মোটে মসৃণ নয়। তবে,উজ্জ্বল, মসৃণ হলে, তবেই সে সুন্দর, একথা ঐ লাক্স সাবানের অ্যাডের কপিরাইটার লিখে গেছে বলেই মানতে হবে নাকি!
    হ্যাঁ, সকলের থেকে আলাদা ছিল ওর পাতার রং। ইউক্যালিপটাস পাতার রং টা কী সুন্দর না! আমার ইউক্যালিপটাসের পাতার। আমার ছোটবেলার সেই ছোট্ট ফ্ল্যাটবাড়ির ছোট্ট বাগানে বড় হওয়া ইউক্যালিপটাসের, আমার সাথে বড় হওয়া। হাওয়া, একটু জোরে হাওয়া দিলেই লগবগে মাথা নিয়ে ঢুঁ মারতো বারান্দার গ্রিলে। পুরো একটা ছাগলছানা। শিং টাই যা গজায় নি।
    তো, আমরা ফন্দি আঁটলাম, এরপর যেদিন খুব হাওয়া হবে, ও আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। আমি তো একপায়ে খাড়া! মানে, আমাকে এরপর খালি দ্বিতীয় পায়ের ভারটাও মাটি থেকে তুলে নিতে হবে। বাস। তারপর ই হাওয়া কি সাথ সাথ, হাওয়া কি সঙ্গ সঙ্গ , ও সাথী চল ,মুঝে লিকে সাথ চল তু , ইউহি দিন রাত চলতু! পুউরো ঐ সীব-হেমা আকা সীতা কেস। সে সেভাবে দেখতে গেলে আমিও তো সীতা ই। ঈপ্সিতা।
    আমরা কোথায় কোথায় যাবো , তারও প্ল্যান হয়েছিল। এক তো, আমার নেমন্তন্ন ছিলো কাকের বাসায়, ঐ পাঁচ খানা ছানা ঐ পুঁচকি বাসায় কিকরে যে ফিট করে , সে চাক্ষুষ করার শখ আমার অনেকদিনে। তার পরের গন্তব্য , ওপাশের কৃষ্ণচূড়া গাছ। ওর ঐ মধ্যিখানের শ্যাওলা শ্যাওলা অন্ধকারের রহস্য এক্সপ্লোরেশানটা আমার এজেণ্ডায় অনেকদিন।
    আর তার্পর, স্যাট করে আমি নেমে পড়বো , হাউসিং এর পাঁচিলের লাগোয়া ঐ পাবীদের বাড়ির ছাদে। অনেকদিন ধরে ওদের বাড়ি যাবার শখ আমার। আমার খুব ধারণা, ওদের পাগড়ির নীচে টাক থাকে। সেইটি ভেরিফাই করা দরকার।
    তা, এক ঝড় বাদলের দিনে, যেরকম দিনে কবি বলে গেছেন , তারে বলা টলা যায়, আমি তার সাথে গৃহত্যাগ করবার মনস্থ করলাম। মোটামুটি রেডি। টেক অফ হবো হবো। রেডি, স্টেডি , অনিমা ( ওটা যে অন ইওর মার্ক, সে আমি জেনেছিলুম অনেক বাদে, তদ্দিনে ট্রেনের টিটি র ফুল ফর্ম ও জেনে গেছি আমি ) ।।।।গো ।।।বলার সাথে সাথে ই আমার শিংএ টান। । দাদা , বারান্দায় ।
    আমাকে ঐ রেডহ্যান্ডেড পাকড়ানোর পর, আর যা যা হবার হলো। মার মাথায় পড়লো বাজ,বারান্দার গ্রীলে পড়লো তালা, আর আমার পিঠে পড়লো আট দশ ঘা। এবং একা একা বারান্দায় যাওয়া নিয়ে জারি হল নিষেধাজ্ঞা। সামনের বাড়ির জেঠিমা নিযুক্ত হলেন পেয়াদা।

    তারপর একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি ওকে কাটা হচ্ছে। সে অবশ্য অন্যদের 'অসুবিধে' র জন্য। গাছ থাকলেই কিছু লোকজনের ভারি 'অসুবিধে' হত। স্কুল থেকে ফিরেছি যখন তখন অলরেডি দোতলা অব্দি কাটা শেষ। কেঁদে কেটে হাত পা ছড়িয়ে বসে নিজের জ্বর আনা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। গাছটা পুরো কেটে দিয়েছিল।

    বারান্দায় যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছিল। কিন্তু যেতেই ইচ্ছে করত না আর ! ঘরে বসে বসে কার্ডের দোকান দিতাম ! একদম ছোটবেলায় তো কার্ড বলতে ছিল বিয়ের কার্ড। তারপর একটু একটু করে হাজির হল কার্ডের হুজুগ। হ্যাপ্পি বার্থডে কার্ড, নিউ ইয়ার কার্ড, মেরি ক্রিস্টমাস কার্ড। সব যখের ধন ছিল। শুধু নিজের না, আশেপাশে কেউ পেলে সেও সব আমার হয়ে যেত। অন্য কার সব বিয়ের, যাদের চিনিও না, হয়তো মামার আপিসের কলিগের মেয়ের বিয়ের কি পিসির জায়ের ভাইয়ের বিয়ের কার্ড, সেও আমার জিম্মায়। মায়ের আপিস কলিগ, বাবার ইস্কুল কলিগ, সবার ছেলেপুলের পুরো ম্যারেজ রেজিস্ট্রি আমার সে কার্ডের বাণ্ডিলে। মায়ের ছেঁড়া পরিত্যক্ত আপিস ব্যাগে জমানো কার্ডের ঝাঁপি তো না, সে পুরো পুরোনো গপ্পের ঝাঁপি । কেউ কার্ডের দোকান কার্ডের দোকান খেলতো না ? আমি যখন খেলতাম, তখন কিন্তু জানতামই না,মধ্য কোলকাতার কার্ড বানানে ও বেচনেওয়ালা দোকানগুলোর কথা। হাউসিং এর আশপাশের গ্রিটিংস কার্ড বেচনে ওয়ালা দোনানই দেখেছি কেবল তখন। তাই সেই মডেলেই তৈরি হত আমাদের দোকান। কিন্তু একটু বদল ক'রে। না ক'রে উপায় কী ? আমার কার্ডের ঝাঁপিতে তো অর্ধেকই বিয়ের কার্ড। তাদেরকে তো ছাপাতেই হবে। স্কুলের এক্সজিবিশন থেকে কেনা কার্ডবোর্ডের ভাল্লুক পেনস্ট্যাণ্ডটা ক'দিনের মধ্যেই ভেঙে গেছিলো। এবং সব ভাঙা জিনিসের মতই তার ও স্থান হয়েছিল আমার খেলনার ঝাঁপিতে। এবং পেনস্ট্যান্ডের পদ থেকে রিটায়রমেন্টের পর সেই ভালুকের নতুন কাজ জুটলো। সে হল আমার বিয়ের কার্ড ছপানোর মেশিন। খদ্দেররা এসে পছন্দ ক'রে গেলেই ভালুক খটাখট খটাখট ২০০, ৫০০ কার্ড ছাপিয়ে ফেলতো ! এমনকি আমাদের দোকানে কার্ডের ইম্প্রোভাইজেশনের স্কিমও রেখেছিলুম। বিয়ের কার্ডের ডিজাইনেই শুধু মিক্স & ম্যাচ নয়। জন্মদিন, নিউ ইয়ারের কার্ডেও। এমনকি বিয়ের কার্ড, জন্মদিনের কার্ডের হাইব্রিড চাইলে তাও আমাদের দোকান সাপ্লাই করতো। জন্মদিন, ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারেরও । এই প্রয়োজনীয়তাটা উপলব্দি ক'রে আমার বন্ধু। আমার জন্মদিনের কার্ড কিনতে গেছে পাড়ার দোকানে। তো, দোকান ভত্তি তখন মেরি ক্রিসামাস আর নিউ ইয়ারের ফুলে ফলে পল্লবিত কিম্বা সান্তার হিমায়িত শুভেচ্ছায়। জন্মদিনের কার্ড চাইতে, অন্য কার্ড বেচতে বেচতে হিমশিম খাওয়া কাকু অম্লান বদনে নাকি বলে দ্যান, এখন জন্মদিনের কার্ড কোত্থেকে পাবে ? এখন তো জন্মদিনের সিজন নয় !

    যাহোক , বকতে বকতে হাঁপিয়ে গেলাম। আরো এত্ত এত্ত মিছিমিছি খেলারা হুড়মুড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যে ঝাঁপ বন্ধ করাই ভাল।
    সকল আদর্শ স্মৃতিচারণ রচনার মত শেষ করে দেওয়াই ভাল, হয় সেই নানা রঙের দিনগুলো কোথায় হাঁটা দিল, কোন সোনার খাঁচা থেকে কারা কেন ফুরুত হল, এইসব বিধিসম্মত ঘ্যানঘ্যান করে।

    কিন্তু কেন করব?
    সেই যে সেই কোন ছোটবেলা থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছি, দাদা আমি কন্ডাকটর হতে চেয়েছিলুম ! বাস কষ্ট করে চালাচ্ছে ড্রাইভার আর কন্ডাকটর কেমন হাওয়া খেতে খেতে চলেছে আর হাওয়া খাওয়ার জন্য সবাই টাকা দিয়ে চলেছে তাকে, এ নাহয় আজ আর নাই বা ভাবলুম, কিন্তু গলায় কন্ডাকটরের ব্যাগ ঝোলানোর লোভ তো আজো কাটে নাই। আমার সেই ছোটোবেলার লেক্সপো থেকে বায়না ক'রে কেনা ক্লোজেস্ট টু কন্ডাক্টর্স ব্যাগ, অমনি লম্বা হাতল আর অর্ধবৃত্তাকার ব্যাগ। বাড়ি গিয়ে দেখে এসেছি, মা যত্ন করে রেখে দিয়েছে। কেবল তোড়ায় বাঁধা পাঁচ , দশ , কুড়ি পয়সা আর আটানি টিকিটগুলো আর নাই। পেয়ে গেলেই হয়ে যাবো। মিছিমিছি কিম্বা সত্যি সত্যি।

    আমার সেই বারান্দার সংসারকেও পুরো উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। আমার পুরো বাগান জুড়ে। এত লোকজন, এত বড় সংসার সামলাতে সামলাতে মুখের ফেনা উঠে যায়।

    ইউক্যালিপটাসটাকে খুঁজছি।

    এখনো সারাদিন ধরে মিছিমিছি খেলা। অনেক বড় হয়ে গেছি, তাই সেসব গল্প করতে নেই।

    পুনশ্চঃ একটাও কোন ঘ্যানঘ্যান না করলে স্মৃতিচারণ করা নিয়ে খুঁতখুঁতানি থেকেই যাচ্ছে। তার চেয়ে করেই ফেলি বরং। আর জেনুইনলি আছেই যখন।
    ছোটবেলাটা রিক্রিয়েট ক'রে ফেলার প্রোজেক্টে আর সব মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছে।শুধু যদি ওই মিছিমিছি রান্নাবান্না আর আপিসের বোরিং কাজগুলোও মিছিমিছি ক'রে ফেলা যেত !
    আর ঝগড়াঝাঁটিগুলো ! ;)

    আর, আর.. পুঃ পুঃ - কয়েকটা লোক, যাদের মিছিমিছি নিয়ে আসি খালি, তাদের যদি সত্যি সত্যি নিয়ে আসা যেত !


    আমার বাগানে চাষবাসের একটা মূল ইন্সেন্টিভ ছিল কে ছোটবেলায় কেমন দেখতে থাকে, কোথায় জন্মায় এসব দেখব টেখব। বাজারের সব্জিগুলো গাছে ঝুললে কেমন লাগে, কেম্ন করেই বা ঝোলে টোলে। সত্যিই ঝোলে! সত্যিই জন্মায়, বড় হয়? এইসব সব্জিও নাকি ফুল থেকে হয়! এ আবার কেমন ম্যাজিক?
    ফুল্কপিকে যেমন বড়বেলায় খেত আলো আর ফুল করে ফলে থাকতে দেখেছি, কিন্তু চারাগাছগুলো দেখলে বুঝতেই পারতামনা, কপিটা ধরে কোদ্দিয়ে। কোন ম্যাজিকে। নিজের বাগানে যখন একটু একটু করে বড় হয়া পাতাগুলো দেখতাম, তখনো বুঝতাম না কোথায় ধরবে কপিটা। কোন ম্যাজিকে। বটানির বই ঘেঁটে বা গুগল করে এই কৌতূহলের চার্মটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করেনি আর।
    ম্যাজিক কেউ গুগল করে?
    তারপর পাতাগুলো যখন একটু একটু করে চক্রব্যূহ বানাতে শুরু করল, তখন সন্দেহ হল, কিছুতো গোল আছে এর মধ্যে। রোজ গিয়ে পাতাগুলো খোঁচাখুচি করে খুলে দেখার চেষ্টা করতাম, ভিতরে কাকে লুকোচ্ছে। পাতাগুলো খুবই বিরক্ত হত এসবে আর আমাকে মোটেই এন্ট্রি দিতে চাইত না। তবু, এসব করেই একটা কুচি হলুদ দেখেই ফেললাম যখন, তখনো বিশ্বাস হয়নি এই নাকি ওই রকম ফুলোফালা ফুলকপি হবে! ম্যাজিক নাকি? যতদিন না সত্যিই পাতা ফুঁড়ে তিনি দর্শন দিলেন।
    যাহোক, ফুলকপির কথা পরে। আবার সুপর্ণা যখন তার আসার কথা জানাবে, তখন নাহয়।
    আজ আপাতত আজকের কথা। অনেক তক্কে তক্কে থেকে, অনেক সাধ্যিসাধনা ক'রে এই ব্যাটাকে মোটমুটি
    কচি দশাতে পাকড়েছি। অন্তত ফুল জোড়া দশাতেই। নইলে তো কেবলি চুক্কি দিয়ে একেবারে বড় কিম্বা বুড়ো হয়ে ধরা দিচ্ছিলেন। এনার জন্মের আরো কাছাকাছি সময়ে যেতে হবে, আর তারপর সেই জন্মের ম্যাজিক সময়ে। আপাতত এইই ঘোলেই অবশ্য খুশি।
    অনেক ছোটবেলায় মা একটা নাটক করিয়েছিল। স্বপনবুড়োর বোধহয়। ফুল ফোটার ছন্দ। সেই যেখানে খুকু বায়না ধরে নাওয়া খাওয়া ফেলে রাতউপোসি হয়ে, ঘুমপাড়ানি মাসিপিসিদের ঘোল খাইয়ে দিয়ে, যাতে তার টবের ফুল ফোটার ম্যাজিক ব্রাহ্মমুহূর্তটা মিস না করে।
    মনে হচ্ছে তেমনি সাধনাই লাগবে, ফুল না, এখানে ফল ফোটার ছন্দ, সেই ম্যাজিক মোমেন্টটা ধরতে।
    ধরে ফেলব নিশ্চয়।
    ম্যাজিক মোমেন্ট।
    ম্যাজিকটাও।
    কিম্বা ধরব না। ম্যাজিক ধরতে নেই বলে।


    আমাদের পড়শি হর্নবিল দম্পতি হম দো থেকে হমারা দো হয়েছেন।
    কার্বি আন্গ্লঙ্গ এ সেই ভোররাতে ঘন জঙ্গলে প্রথম দেখে সে কী উত্তেজনা, আর এখন ল্যাবের বাইরের কার্নিশেই বসে থাকে মাঝেসাঝে।
    তবে বড় বাজে চে`চায়। হাঁড়িচচ্থেকে অনেক বাজে। বেচারার কেন এমন বাজে নাম কেজানে। সত্যিকারের বাজে ক্যাঁচোড়ম্যাচোড় ক্যালোরব্যালোর করা পাখিদেরও এর থেকে ভাল নাম জুটেছে। ছাতারে নাম অন্ততঃ হাঁড়িচাচার চেয়ে ভাল। এমনকি আমার এত বাজে ডাকনামও এর থেকে ভাল।

    । কুব কুব করে গরমের দুপুরে ঝিম ধরিয়ে রাখে, কুবো পাখি নামই তো ভাল! আমার ছোটবেলার বাগানের সেই কুবোপাখি দেখি এই বুড়োবেলার বাগানে হাজির, কোল্কাতা থেকে সেই ত্রিপুরা। হেঁটে বেড়াচ্ছে আবার মাচার উপরে। মাচার উপরে কী হাঁটার দরকার বুঝিনি যদিও, আছে তো কিছু শিম আর ঝিঙ্গে পাতা। বারান্দা থেকে দেখি, বুলবুলি খালি পেঁপের ছাতার মত মাথায় ছোঁ মারে আর পালায়। এমনি ছোঁ তো আমার ছোটবেলার কচুরিপানার পুকুরে মাছরাঙ্গারা মারতো। পরে বুঝলাম বাসা বানাচ্চে। পেঁপে গাছে বুলবুলি বাসা বানবে মাথাতেও আসেনি। যদিও এখন দেখছি পেঁপে গাছে বাসা নেওয়া বেশ ইকনমিকাল ব্যাপার, তা দেবে আর পাখি পাকা পেঁপে খাবে। খাচ্ছেও। পালে পালে পাকা পেঁপে পাখিরাই প্রায় পাচ্ছে।
    কিন্তু কথা হল, এই কথা মাথায় আসেনি, কারণ কেউ লিখেই যায়নি। লিখে গেছে বলেই বেগুনগাছ হয়া ইস্তক টুনটুনির বাসা খুঁজতাম, আর এত বাঁটকুল গাছ, যাতে কিনা বেগুন ধরলেই মাটিতে ঠেকে যাওয়ার ভয় ধরত, তাতে বাসা হবে কীকরে বুঝতাম না। আর ওতে বাসা করলে বেড়ালের ও পোয়াবারো। নাকি বেড়াল কাঁটা বেছে চড়ে? কাঁটা টুনটুনিকে ফোটে না? আমার তো বাসা হয়েছে কিনা দেখতে আর বেগুনকে মাটি থেকে ওঠাতে গিয়েই কাঁটায় কেটে একসা।
    তবে গোটবেগুন গাছ হওয়ার পরে, আর তাকে বিশাল লম্বা চওড়া হতে দেখে মনে হয় কবি গোটবেগুন গাছেই টুনটুনির বাসার কথা বলে গেছিলেন। গোট বেগুন চিনল না কেউ তো? আমিও চিনতাম না। নিউট্রিশনের ডায়েটারি রিকল সার্ভে করতে গিয়ে দেববর্মা ত্রিপুরী মলসম গ্রামে সিদলের সাথে গুটবেগুন শুনে সে আর বুঝিনা কী। এদিকে সে কেমন, তার ইউনিট ওজন কেমন, সে আসলে কে, এক চামচ সিদল খেলে কত গোট বেগুন গিয়ে শরীরে কোন কোন পুহ্টি কোন কোন ভিটামিন খনিজ কতটা ঢুকবে সে ক্যালকুলেশনই বা কী করে ঠিক হবে? তাই মাপার ঘটি বাটি ফেলে ওঁদের
    বাগানে গোটবেগুন দেখতে যাই। সবুজ সবুজ গুলি বল দেখে কে বলবে বেগুন, যদি না পাতা দেখে! সে পাতাও আব্বার বেগুন পাতার শেপে হলে কী হবে, হাতির কানের মত, কুলোর মত একেবারে। তারপর তো ছবি দিয়ে মিলিয়ে আর ট্রাইবাল খাবারদাবারের বই খুঁজে তাকে বের করা গেল, আফ্রিকার পেপার খুঁজে তার দারুণ সব খাদ্যগুণও। অঙ্গনওয়ারি সাবসেন্টারের পোস্টারের জন্য এখন গোটবেগুনের ছবি দিয়ে এসেছি, আয়রন বড়ি কিছুতে না খেলে এই গোটবেগুন তো খাক!
    কিন্তু কথা হল, সেই যে গোটবেগুন নিয়ে এলাম, কটা স্যাম্পল, তারপরেই বাগানে গোটবেগুন গাছ জন্মে গেল। এসব কেউ বিশ্বাস করুক কি না করুক, আমার জঙ্গলে আমার ইচ্ছেমতন গাছ জন্মেই থাকে আর তারপর তারা নিজেদের ইচ্ছেমত জায়গায় চলেও যায়, এক হপ্তায় এক জায়গায় এক গাছ দেখে আসি তো একমাস পরে গিয়ে তাকে অন্য়্ত্র আবিষ্কার করি, বা একগাছের চারা অন্য প্রান্তে। সে যাগ্গে। এ নিয়ে তর্ক করব না। গাছেরা পছন্দমতন পাড়াপ্রতিবেশী নেইবারহুড লোকালিটি বাছে এ নিয়ে আমার স্থিরবিশ্বাস কোন তর্কেই টলবে না।
    কিন্তু কথা হল, সেই যে হল, ঐ হাতির মত পাতার গোটবেগুন আমার বাগান জুড়ে। আর আমি জগত জোড়া লোককে এই খেতে উত্সাহিত করার চেষ্টা করছি। ত্রিপুরা গেলে এ দিয়েই নিরামিষ গোদক খেয়ে যাই রোজ। কিলো কিলো কোলকাতায় নিয়ে গেলাম। মা বাবা গোটবেগুনের অত্যাচারে জর্জিত হয়ে বলেছে ক্ষ্যামা দে, আর না। তবে নিয়ে যাওয়া সার্থক কারণ শাশুড়ি এটা বেটে চিংড়ির ভর্তার রেসিপি বানিয়েছে, সে নাকি অমৃত হয়। এর প্রচার আর না হয়ে যায় কোথায়। করেই ছাড়বখন কখনো, ভাল করে।

    তো, কথা হল, এই এত বড় বেগুন গাছে, হাতির মত পাতার তলায়, ও মজা হল, আসামে এই ফল দেখানোর পর যাঁরা চিনলেন, বললেন অসমিয়াতে বলে হাথিভাখোরি। এর মানে হাতির কানের মত পাতাই হবে নিশ্চিত, আমি আর জিগেশ করিনি।
    তো এই হাতির কানের মত পাতার গাছে টুনটুনি তো আসতেই পারে। আসেনা কেন? খুব চাইলে আর সেরকম করলে এসে যাবে তাও জানি।

    যেমন, এই ত্রিপুরায়, পাখি কী কম কম লাগত। এত জঙ্গলে। কত জঙ্গলে ঘুরিও
    তাও তুলনায় পাখি কম। বলে লোকজন সব খেয়েই নেন। কিন্তু শহর কি আমাদের ওখানে তো আরো আসতে পারত। শীতে সাইবেরিয়ার অতিথিরা লেক ভরিয়ে দেন যদিও। তবে আমার জঙ্গলাটা হওয়ার পর থেকে অনেক পাখি আসছে মনে হয়। তাও। অসমের ক্যাম্পাসের মত না, সে তো ভরপুর পাখিতে। সারারাত কোকিলের চিৎকারে ঘুম ভেংগে যাওয়ার কানপুর বম্বের স্মৃতি এখানে ফিরে আসে, সারা রাত চোখ গেল চোখ গেল শুনে শুনে। গেল গেল দশা, ঘুম গিয়ে। সারা রাতই চোখ গেল আর গেল। সেদিন কোথায় যেন চোখ গেল নাম কেন তাই নিয়ে ভারি সুন্দর কী এক রূপকথা পড়ে খুব সুন্দর ছাড়া প্রায় পুরো গল্পটাই ভুলে গেছি দেখি, মনে করতে গিয়ে মনে হল আসলে নিঘ্ঘাত এও বেগুন গাছে বাসা করতে গিয়ে চোখে খোঁচা খেয়েছিল! তারপরেই মনে হল, আমার ত্রিপুরার গোট বেগুন জঙ্গলে চোখ গেল বাসা বাঁধতে পারে তো। চোখ যখন গেছেই তো অন্ধের আর কী বা ভয়। ওমা, নেট ঘেঁটে চোখ গেল খুঁজে দেখি, সেও কিনা কোকিলের মত পরভৃত, উফ, ত না খণ্ড ত, গুলিয়ে গেছিল, গুগল করতে হল। সেঈ পরভৃত আর পরভৃৎ এর পার্থক্য কর, মাধ্যমিকে যেন কত নং এর প্রশ্ন থাকত। গুগলসহায় জীবনে আবার মাধ্যমিকের পড়াশুনা করতে কেমন লাগত জানতে ইচ্ছে করে। না, উচ্চমাধ্যমিক কখনো না, ও পরীক্ষা আর জন্মে দিতে চাইনা। কী চাপের জীবন, অনেক চাপ ছাঁটকাট করেও যা পড়েছিল, তা আর চাইনা।
    যাহোক, তাহলে তো বাসা বাঁধার চান্সই নেই, পরভৃৎ এর বাসায় ডিম পেড়ে যাবেন, সে সুযোগ ও কম। কারণ আশ্চর্যভাবে ত্রিপুরায় কাক বড় কম, আমাদের এলাকা তো বায়সশূন্য! তবে গুগল করার আরেলটা সুফল পেলাম। চোখ গেল কে কেন জানি আমি পাপিয়া ভাবতাম। ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। নজরুলের জন্য। গুগল করে কনফার্মড ও হলাম, চোখ গেল চোখ গেল কেন ডাকিস রে তে জুড়ে দিয়েছেন, তার চোখের জ্বালা বুঝি নিশি রাতে বুকে লাগে,
    চোখ গেল ভুলে রে, পিউ কঁহা পিউ কঁহা বলে তাই ডাকিস অনুরাগে রে। উফ্হ, ঐ লাইনটা গাইতে আবার গায়ে কেমন কাঁটা দিত। কথা নাকি সুরের জন্য। গাইতে গেলে অনুরাগ আপনি আপ ঘাই মারত। এখন গুগল কাকু বলছেন, চোখ গেল আর পিউ কঁহা আলাদা। কাছাকাছি হলেও আলাদা। বোঝো। আগে জানলে নজরুলের জন্মদিনে এত অনুরাগ ঢেলে নজরুলগীতি নিয়ে লেখার সময় নজরুলকে একটু ঝেড়েও দিতাম। চোখ গেল চোখ গেলর সাথে পিউ পিউ বিরহী পাপিয়াকে এই একই আত্মায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য।

    কিন্তু কী সব বকছি। যা বলার ছিল, এবার ত্রিপুরায় সেদিন, অনেক ঝড়বাদলের পর মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে শুনি, হুম, বুঝতেই তো পারা যাচ্ছে, চোখ গেল, চোখ গেল। কিন্তু শুধু কি তাই?
    চোখ গেল চোখ গেলর পরে পষ্ট শুনেছি, পিউ কঁহা, পিউ কঁহা।

    গুগল বিলকুল ভুল। বেঁচে থাকুন বাবা আমার পিউ পিউ বিরহী পাপিয়া কবি, রাতভোরের ললিতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২০ জুলাই ২০১৬ | ৫৮৮৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    সুর অ-সুর - π
    আরও পড়ুন
    ইমন - π
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • pi | ***:*** | ২১ জুলাই ২০১৯ ০৬:০৩58384
  • একটু লেখা জুড়ব ভেবে দেখি, আমার ব্লগ আকসেসই হাওয়া ! ঃ(
  • Ipsita Pal | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৯ ০৬:৪০58385
  • ব্লগ তো হাওয়া, এখানেই লিখি।

    দেখি, এই ফুল চেনেন নাকি কেউ? আমিও চিনতাম না কালকের আগে। দেখিইনি!
    কতকটা এঁ্র মত দেখতে একজনকে চিনতাম, পুকুরপাড় থেকে নিয়ে এসে লাগানোর পরে আমার জংগলেও ফুটেছিলেন, পরে জানলাম শটিফুল। কিন্তু শটিসুন্দরীর রং ছিল দুধে আলতায়, ইনি কেবলই দুধ। হ্লুদ হলুদ ছোট্ট ঘটিগুলো যে বেরিয়ে আছে, সেও ইনিস্পেশাল। পাতায় মনে হয় মিল আছে খানিক, মনে হয়, কারণ এবারে শটিদেবূ আর দেখি নাই। যাহোক, ইনি মামাতো পিস্তুতুতো বোন হবেন, ভাবছিলাম। কোথা থেকে কী এনে কখন কী পুঁতে রাখি, নিজেরই খেয়াল থাকেনা, খুব রাখতে চাই, এমনো না অবশ্য। সব মনে থাকলে আর চমকে যাবার মজা কই! এছাড়াও আমি দেখেছি, যেখানে যাকে পুঁতি, সে যে সেখানেই উঠবে এমনটা নয়, যার যেখানে ইচ্ছে, সেখানে ওঠে, মনে হুয় যে গাছের যে প্রতিবেশী পছন্দ, যার সংগে বন্ধুত্ব, সেখানেই সে গিয়ে ওঠে। ওঠেই নিগঘাত। মানে চলে যায়। আমার তো ভারি পোক্ত বিশ্বাস, সন্ধের অন্ধকার ঝুপুস করে উপুড় হলেই, আর আজেবাজে মানুষজন বেনাগাল হলেই জংলে মোচ্ছব শুরু হয়ে যায়। ছানাগাছ, কিশোরকিশোরী, যুবকযুবতী বুড়োবুড়ি সব গাছ, এমনকি পুঁতে দেওয়া বীজেরাও সান্ধ্যভ্রমণে বেরয়, ফুরফুরে হাওয়ায়, জ্যোতস্না টোতস্না মেখেটেখে! এর ওর সংগে দেখাসাক্ষাত, কুশলবিনিময়, গপ্পোগুজব, পিএনপিসি, প্রেমালাপ টাপ সেরে যে যার জায়গায় স্ট্যাচু, আর যার অন্য কারুর সংগে ঘর বাঁধার শখ, তাদের সেইমত নতুন ঠিকানা!
    সেজন্যই অন্ধকারে বাগান জংগলে মানুষজনের যাওয়া বারণ! সকালের আলোয় এর জায়গায় ওকে দেখে চমকে উঠতে হয়!
    এছাড়াও, যে বীজ পুঁতব, সেই গাছই যে বেরবে, ব্যাপারটা ঠিক এমনো না। কিন্তু সে অন্য গল্প।
    আপাতত এই শুভ্রাসুন্দরীর কথা হচ্ছিল। তো,
    ইনি কে, মালিবাবুর কাছে জানার পরে তো আরোই চমকালাম!
    হঠাত পশ্চিমের ঢলা আলো এসে পড়ল কনের মুখে, তো, সে কন্যে আমার বাগানআগান আলো করে রইলেন!
    যদিও আমি এখন এঁ্র নাম জানি, তবুও আমি এঁ্র নাম দিলাম, আলোফুল, হলুদআলোফুল।

  • π | ১৫ মার্চ ২০২০ ১৪:০১91470
  • লেখায় জোড়ার অপশন পাচ্ছিনা।
  • π | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৮:১৬91492
  • সম্পাদনা করতে গেলে সাদা পাতা আসছে। উপরে লেখা
    Wrong invocation, empty topic name
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ১৫:০২506510
  • ব্লগে জুড়তে পারছিনা কেন?? 
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ১৫:১৭506512
  • যাহোক, বাগানের কথাই যখন লিখছিলাম, বহুদিন বাদে এসে এসে লোকজনকে আর চিনতেই পারিনা।
    রাস্তাঘাটে বনে বাঁদাড়ে ঘুরতে ঘুরতে যেখানে যা বীজ পাই, ব্যাগে সিঁধাই। কেউ কেউ সেখানেই আমার এজন্মের মত থেকে যান, কেউ কেউ মা কি শাশুড়ির বা  দিদির ব্যাগ ঝাড়াঝুড়ি করে পরিষ্কারের ঠ্যালায় জঞ্জালে স্থান পান, আমার সামনে হলে পুনরদ্ধৃত হন, বা কপাল ভাল থাকলে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই টব কি বাগানের মাটিতে সমাধিস্থ হন।  কেউ কেউ উড়ে উড়ে নিজেই চলে আসেন।  কেউবা পাখির ঠোঁঁটে চেপে। তারপর  কোন এক প্রভাতে তেড়েফুঁড়ে উঠে রবির কর দর্শন করে প্রাণে পশিয়েও ফেলেন!  
    মোদ্দা কথা হল, কিছুদিন বাদে এসে এসে দেখি সব অচেনা অতিথি।  বা বলা ভাল, ওঁরাই আমাকে ভাবেন নিশ্চয় অচেনা অতিথি। ওঁদের বাড়িতে বেড়াতে আসা।
     
    সে যা হোক, আজই যেমন পেলাম, এঁকে।
     
     
    এই গাছের নাম জানেন কেউ? ভুট্টা আর আখের রেসোনেন্স হাইব্রিড মনে হচ্ছিল প্রথমে! 
     তা শুনলাম, এই শুকনো ফুল নাকি খায়!  খেলে কীভাবে?  আর কোন তথ্য আপাতত পাচ্ছিনা। 
     
    এই গাছের নাম জানেন কেউ?  এই শুকনো ফুল নাকি খায়!  খেলে কীভাবে? 
     
  • kk | 50.224.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২২ ০১:৪২506625
  • বাঃ, এই লেখা আর ছবি খুব সুন্দর তো! দেখো, আমি এই গাছটা চিনি। মানে আগে দেখেছি অনেকবার। কিন্তু এর নাম জানিনা। ঐ ফুলের মঞ্জরী দেখলে কেমন হপ ফলের কথা মনে হয়। শুকনো ফুল গুলো ছাড়িয়ে নিয়ে শুকনো তাওয়ায় টোস্ট করে খেলে ভালো লাগবেনা? কুসুমবীজের মত?
  • π | ১৯ এপ্রিল ২০২২ ১৯:১৩506708
  • থ্যানকু কেকে! 
    অনেকে বলছেন জোয়ার, দেখি শুকনো রোস্ট করে আর জোয়ারের মত করে খেয়েও। যদি কোনদিন করে উঠতে পারি। জোয়ারই বা কীকরে খায়, নেটে দেখতে হবে। সেই তো ভূগোলে পড়তাম জোয়ারের রুটি। তা এই ফুল পিষলে কি আঠা হয় নাকি? 
  • kk | 50.224.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২২ ২০:৫৮506712
  • জোয়ার নাকি? জোয়ারের আটা তো আমি খুবই খেয়ে থাকি, গ্লুটেন ফ্রী বলে। তাহলে এই শুকনো ফুল গুঁড়ো করলে হয়তো আটা হবে। জোয়ারের দানা পপ কর্নের মতোও করা যায়। 'জোয়ার ধোনি' বলে বিক্রি হয় দেখি ইন্ডিয়ান গ্রোসারীতে।
  • যদুবাবু | ২০ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২১506721
  • এই লেখাটা সত্যিই বড্ডো ভালো। বড্ডো বড্ডো ভালো। একটা ছবিও এঁকেছি, লেখাটা পড়েই। এখানে রেখে গেলাম। 



     
  • প্যালারাম | ২০ এপ্রিল ২০২২ ০৯:০২506725
  • যদুবাবুকে ধন্যবাদ, লেখাটার কথা জানানোর জন্যে। 
    বেশ কিছুক্ষণ ওই বারান্দায় কাটিয়ে কিছু পাকা চুল কাঁচা হয়ে গেল।
    আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল - পাইলটরা প্লেনের উপরে(বাইরে) বসে, আর গাড়ির মত করে প্লেন চালায়।আমি সেইমত চালাতাম - যখনই সুযোগ মেলে। লোকে ভাবতো গাড়ি চালাচ্ছি। বোকা লোক সব।
  • π | ২২ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩১506759
  • আরে আরে, যদুবাবু, কী বলে যে থ্যানকু দেব,!  দারুণ পছন্দ হয়েছে!  ঃ)
     
    কেকে, পপকর্ন মানে মাইক্রোতে দিয়ে দেখব? 
     
    প্যালারাম, laugh
  • aranya | 2601:84:4600:5410:852d:d198:30c4:***:*** | ২২ এপ্রিল ২০২২ ০৯:০৫506762
  • পাই এর লেখা তো দারুণ, যদুবাবু-র ছবিটিও অসা :-)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন