এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • “আপনাকে বলছি স্যার” – ফিরে দেখা (৩)

    Salil Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ আগস্ট ২০১৬ | ২০৫৪ বার পঠিত
  • “আপনাকে বলছি স্যার” – ফিরে দেখা (৩)
    হালিসহর সভা

    সেই সভায় আলোচনার বিবরণ। প্রায় সম্পাদনা না করে। এটা তৃতীয় ও শেষ অংশ।
    ওখানে বলা হয়নি এরকম কয়েকটা কথা এখানে যোগ করেছি।

    এই ভোকেশানাল ট্রেনিং ব্যাপারটা, যেটা ভোকেশানাল শিক্ষা, এটা তো নিশ্চিত ভাবে শিক্ষাকে সংকুচিত করে। এবিষয়ে হেনরি জিরু-র কিছু মন্তব্য অবশ্যই প্রনিধাণযোগ্য। (Henry A. Giroux : On Critical Pegagogy (Critical Pedagogy Today Series). Bloomsbury, London; New Delhi.) এছাড়া আরও বিভিন্ন জায়গাতে এনিয়ে আলোচনা আছে।
    তাহলে ওই যে আমি একটা এক-এক-দুই বছরের শিক্ষাক্রম তৈরি করে দিচ্ছি একটা ব্রিজকোর্স করে দিচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি করে একটা বিশেষ দিকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছি, সেটার মধ্যে একটা কিছু বিপদের জায়গাও আছে। যাকে আমরা লিবারেল এডুকেশান চিরদিন বলে এসছি, যার খারাপ দিক ভাল দিক দুটোই আছে, সেই লিবারেল শিক্ষার জায়গাটা কিন্তু আমি আটকে দিলাম। তাহলে সে দর্শন পড়বে না, সে ইতিহাস, ভূগোল এগুলো পড়বে না? অবশ্য ব্রিজ কোর্স এর যে সিলেবাসটা, আমি দীপাঞ্জন আমরা মিলে তৈরি করেছি তাতে অবশ্য সেটা আমরা করিনি। সেখানে ভাষা ইতিহাস ভূগোল এই গুলো শেখানো হবে, এইভাবে সিলেবাসটা করা হয়েছে। পরীক্ষিত নয় এখনো। একটা কোর্স তো করতে হয়, ফ্রেম না করলে হয়না। সেইটা দেখা যাক কি হয়, সেটা এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু ঐ বিপদটা আছে কিন্তু। ভোকেশানাল করে দিলাম, তুমি শুধু ফিটার হবে তুমি শুধু ইলেকট্রিসিয়ান হবে বা তুমি শুধু প্যাথোলজিস্ট হবে, তো তার তো আন্টার্কটিকা সম্পর্কে কিছু জানার দরকার নেই। দরকার নেই কি? এই প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ডাক্তারবাবুরা বলবেন (বলছেন) এই সমস্ত পড়ান, আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু এগুলো উপরি, দরকারি নয়। ইংরেজি শব্দ জানলেই হবে, বাক্য গঠন করতে না জানলেও চলবে। অন্যান্য বিষয়, সব উপরি। বরং, এসব পড়িয়ে আমরা হয়ত ছাত্রদের উপর বোঝা চাপাচ্ছি। কেউ কেউ আবার বলছেন, ভাষার অংশে বাংলা রাখার দরকার নেই। বাংলা তো ছাত্ররা জানেই। (ঠিক জানা আছে, ছাত্ররা বাংলা জানে?) আর ইতিহাস ভূগোল থেকেও তো বাংলা শিখে যাবে। শেষোক্ত যুক্তিটি আমার মতে একেবারেই যাকে বলে ‘স্পীশাস’ Specious, মানে আপাত-সঠিক, কিন্তু আদতে ভুল। আমি কিন্তু শ্রমজীবী পাঠশালায় ডাক্তারিবিদ্যা শেখাবার পক্ষে, বিরাট ভারি পাঠক্রম তৈরি করে ছাত্রদের ঘাড়ে পাথর চাপাবার বিপক্ষে, ইংরেজিতে “বিদ্যাবোঝাই বাবুমশাই” বানাবার বিপক্ষে, ইংরেজি ব্যাকরণে কিঞ্চিৎ ভুল হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় বলে মনে করিনা। আমি ছাত্রের ইচ্ছাকে সম্মান না করার বিপক্ষে, যে যা হতে চায় তাতে তাকে সাহায্য করার পক্ষে। তোমার নিয়োগ-উপযুক্ততা কমে যাবে, বা থাকবে না, এই যুক্তিতে কারো ইচ্ছাকে বাধা দেবার বিপক্ষে। আমি মনে করি, ছাত্রের চিত্তবৃত্তি, আগ্রহ, ঝোঁক, এগুলোকে পরিমাপ করে সেদিকে এগোতে সাহায্য করা জ্ঞানার্জন-সহায়কের (চলতি কথায় শিক্ষকের) দায়িত্ব, যে দায়িত্ব পালন না করলে হয়ত আমি ঠিক কাজ করব না।
    আচ্ছা আমরা এবার একটু বারবিয়ানায় ফিরি।
    একজন শ্রোতাঃ (সরি, আপনার নামটাও পাইনি।) আচ্ছা আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি?
    সলিলদাঃ নিশ্চয়।
    শ্রোতাঃ শ্রমজীবী যে কোর্সটার কথা বলা হচ্ছে এই জায়গাতে। কিন্তু বাইরে তার অ্যাকসেপ্টিবিলিটি কোথা থেকে আসবে?
    সলিলদাঃ বাইরে অ্যাকসেপ্টিবিলিটির জায়গাটা উদাহরণ দিয়ে বলি। এই মুহুর্তে সাউথ ইন্ডিয়াতে প্রচুর ইন্সটিটিউশান এই ডক্টর্স অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সটা করাচ্ছে। তার এনট্রি পয়েন্ট কিন্তু মাধ্যমিক পাশ। জোর, উচ্চমাধ্যমিক। যাদবপুর ইউনিভার্সিটির এখানে একটা অ্যাফিলিয়েশান দেবার সম্ভাবনা আছে। যদি দেয় ভাল কথা, না দিলে শ্রমজীবীই করবে। এখন আমরাই করব, তারপরে সেটার অ্যাকসেপ্টিবিলিটি কী হবে সেটা এক্ষুনি বলা যাচ্ছে না। অ্যাকসেপ্টেবল না হওয়ার কিছু নেই। কেননা এটা ঘটনা যে, শ্রমজীবী হাসপাতাল তার অজস্র ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়েও একটা অলরাউন্ড শিক্ষা দেয়, সেখানে যারা শেখাতে যায় বা এরকম আরও, যেমন চেঙ্গাইলে পুণ্যদের, সেখানেও তো একটা শিক্ষা হয়, সেটা থেকে যদি সার্টিফিকেট নাও আসে।
    যেমন আমাদের ছাত্রদের মধ্যে মাধ্যমিকে যে ফেল করেছে তার কী হবে? মাধ্যমিকে যে ফেল করেছে সে যাদবপুরের ডিপ্লোমাটা (যদি অ্যাফিলিয়েশন পাওয়া যায়) পাবেনা। যাদবপুরের সার্টিফিকেটটা পাবে না। কিন্তু আমাদের সার্টিফিকেটটা পাবে। এবং শ্রমজীবী হাসপাতালে কাজ করেছেও অনেক ছেলেমেয়ে যারা বিভিন্ন জায়গায় অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করছে। তাদের কাছে কিন্তু শ্রমজীবীতে কাজ করেছে এটাই একটা সার্টিফিকেট। ডেফিনিটলি চেঙ্গাইলে কাজ করেছে সেটাও একটা সার্টিফিকেট হবে। এখন, এই জায়গাগুলো এখনো খুব হেজি। আবছা। খুব স্পষ্ট পরিস্কার নয়। তবে যেটা নতুন করে শুরু হচ্ছে সেইটা সবসময় প্রথম থেকেই, সর্বাংশে ঝরঝরে থাকে না। বিতর্ক থাকে, কী করা হবে তা নিয়ে দ্বিমত থাকে। আস্তে আস্তে সব তৈরি হতে থাকে।
    ফ্রেইরির একটা বই আছে, তিনি কতগুলো চিঠি লিখছেন শিক্ষকদের। চিঠির বইটার নাম হচ্ছে , “টিচারস অ্যাজ কালচারাল ওয়ার্কারসঃ লেটার টু দোজ হু ডেয়ার টিচ”, যাদের শিক্ষকতা করবার সাহস আছে তাদের প্রতি। (Paulo Freire. Teachers as Cultural Workers: Letters to Those Who Dare Teach. Westview Press, Boulder:Colorado. 2007) এটা ঘটনা যে, শিক্ষকতাকে যদি আমি এ,বি,সি,ডি আর অংক আর ভুগোল আর ইতিহাস, এই করে ধরি, তাহলে ঠিক আছে, কোন ব্যাপার না। আমি যদি বলি আমি নাশকতা (যে বইটার কথা তীর্থ একটু আগে বললে, সেখানে এই ব্যাপারটা বলা আছে। দেখো আবার স্পেস্যাল ব্রাঞ্চ থেকে আমাদের না ধরে। এই নাশকতাতে বোমা বন্দুক লাগে না। বইটার নাম হল - Neil Postman & Charles Weingartner: Teaching as a Subversive Activity (Dell Publishing Co. Inc. New York, 1969) শেখাব, তাহলেই তো প্রবলেম হয়ে গেল। অনেক সমস্যা চলে এল। তখন আমাদের চলে যেতে হবে “ডেঞ্জার স্কুল”-এ। ইন্টারনেটে গিয়ে দেখুন। বইটা পেয়ে যাবেন এখানে। (http://gyanpedia.in/Portals/0/Toys%20from%20Trash/Resources/books/Danger_schoo.pdf) এটা ছাপা বই হিসেবেও পাওয়া যায়। এই স্কুল হল নাশকতা স্কুল যেখানে ছেলেমেয়েরা আর শিক্ষকরা বিরাট অচলায়তনটিকে ছেনি-হাতুড়ী দিয়ে একটু একটু করে ভাঙছেন। এই ভাঙা ছাড়া কিন্তু কোনো গতি নেই।

    একজন তরুণ শ্রোতাঃ (সরি, আপনার নামটাও পাইনি।) স্যার, আপনি খানিকক্ষণ আগে লিবারেশান থিওলজির কথা বলছিলেন, তা আপনি আর একটা বই, হাওয়ার্ড ফাস্ট-এর লেখা “সাইলাস টিমবারম্যান” বইটা অনুবাদ করেছিলেন সেখানে দেখা গেছে যে মার্ক টোয়েন-এর গল্প (গল্পটার নাম ছিল “দ্য ম্যান হু করাপ্টেড হ্যাডলিবার্গ”) পড়ানোর জন্য সাইলাস টিমবারম্যান নামে একজন অধ্যাপককে রাষ্ট্রীয় রোষানলের সামনে পড়তে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যে ধরণের শিক্ষার কথা বলছিলেন এই রকম ধরণের শিক্ষাও কি রাষ্ট্রের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে?
    সলিলদাঃ অবশ্যই। হতেই পারে। মানে আমাদের ওখানে ভেতরে ভেতরে কী পড়ানো হচ্ছে, লোকে জানেনা তাই। আমরা ভেতরে ভেতরে কী পড়াচ্ছি কীভাবে পড়াচ্ছি জানলে ওরা আমাদের পড়াতে দিত না। ডেফিনিটলি। অন্তত আমাকে তো মোটেও দিত না। অবশ্যই এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেবে, যখন দেখবে সামাজিক ভাবে এই পড়ানোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। কোন শ্রীরামপুরের কোন কোণায় একটা বাড়িতে কটা ছেলে নিয়ে কেউ কি পড়াচ্ছে এই নিয়ে কেউ বদার্ড নয়। এটা যদি একটা আন্দোলনের চেহারা নেয় তখন বদার্ড হবে। ডেফিনিটলি হবে। ফ্রেইরিকে তো বিতাড়িত হতে হয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এবং লরেঞ্জো মিলানির কী হয়েছিল, সেটা আমি এখুনি বলব।
    সুমিতাঃ স্কুলে যা পড়ানো হয় তার কি কোনো সামাজিকীকরণ হতে পারে না?
    সলিলদাঃ আমাদের এখানে কোন সামাজিকীকরণ-টরণ কিছু হয়না। সোজা কথা হল একটা জিনিস পড়িয়ে বলা হয় মুখস্থ করে যাও, মাধ্যমিক পাশ করো। এবং মাধ্যমিকে কত জন পাশ করবে সেটা গভর্নমেন্ট ঠিক করে দেয়। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের একটা মারাত্মক কথা আছে। মুখস্ত করে পাশ করা আর চোথা লিখে নিয়ে গিয়ে টুকলি করার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।
    সরকারী রোষের হাতে আমাদের পড়তে হতেই পারে। তবে আবার আমাদের এখানে কতগুলো সুবিধা আছে। নজরদারী এদেশে খুব কাজ করে না। এই যে সিসিটিভি বসিয়েছে, কটা কাজ করে? আমি সেদিন একটা নার্সিং হোমে গেলাম, সেখানে দেখি খুব হট্টগোল হচ্ছে। কী হয়েছে? না, ছটা সিসিটিভি চুরি হয়ে গেছে। বুঝুন, সিসিটিভি চুরি হয়ে গেছে। এইরকম দেশে কতগুলো সুবিধেও আছে। এই যে গল্প বলে না, আমাদের সবাইকে প্রায় এই যে আমেরিকা নাকি আকাশ থেকে আমাদের দেখতে পায় আমরা কী করছি দেখতে পায়। এগুলো হয়, হয় না তা নয়। এর জন্য প্রযুক্তি আছে। আমি নিজে খুব টেকনোলজির ভক্ত। কিন্তু ওর অনেকটাই আমাদের ভয় দেখানো। যে এই আমি, তোমাদের “বড়দা”, কিন্তু তোমার উপর নজর রাখছি। রাখছে ঠিকই। আমাদের ছোটবেলায় পড়া দুটো বইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। জর্জ অরওয়েলে-র “নাইন্টিন এইট্টিফোর” আর আলডুস হাক্সলি-র “ব্রেভ নিউ ওয়র্ল্ড”। যখন প্রথম পড়ি তখন মনে হয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীলদের মিথ্যা প্রচার। এমন হতে পারে নাকি! কিন্তু আজ তার সবগুলোই বাস্তবায়িত। আজ তো আমরা তথাকথিত “নিরাপত্তার”র নামে আমাদের ব্যক্তিগত স্পেসে সমস্ত অনুপ্রবেশ মেনে নিয়ছি। এই যে আধার কার্ড এর মধ্যে আমার বায়োমেট্রিক্স আছে। বিদেশে গেলেই ভিসা দেবার সময় আঙুলের ছাপ, রেটিনার ছবি তুলে রাখে। তা, আমার বায়োমেট্রিক্স সরকারের কাছে থাকল কি থাকল না তাতে কিছু আসে যায় না। যাদের বায়োমেট্রিক্স থাকলে পৃথিবীর কিছু আসবে যাবে ফরচুনেটলি তাদের বায়োমেট্রিক্স সরকার পাবে না। এটা একটা মস্ত সুবিধে আমাদের মত দরিদ্র অনগ্রসর করাপ্ট দেশে। যেটা তুমি বলছ সামাজিকীকরণের কথা, এটা অন্যভাবে হয়। সব কিছুকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনে “সাম্য” আমদানী করা হয়। সমাজ নামক বস্তুটিতে তখন সবাই সমান। আমি অনেক সময় বলি, সাম্য মানে, চলুন সবাই এক রকম নোংরা পায়খানায় যাই। কেবল, পয়সাওয়ালা লোকেরা ছাড়া। তাদের ঘরের ছেলেরাই হচ্ছে বারবিয়ানা-র পিয়েরিনো।
    এমন নয় যে আজকে যে শিক্ষাব্যবস্থা এদেশে চালু আছে সেটা তৃণমূল বা সিপিএম বা কংগ্রেস বা বিজেপি ইচ্ছে করলে পালটাতে পারে। এটা একটা ইডিওলজিকে রিপ্রেজেন্ট করে। সেটা সব সময়েই ডমিন্যান্ট ইডিওলজি। এবং যারা এক্সপ্লয়টার, যারা শোষক, যারা নিপীড়ক, তাদের ইচ্ছেমত এগুলো তৈরি হয়। এবং তাদের ইচ্ছেটা ব্যক্ত হয় পরিস্কারভাবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থা, আমি বলি বিদ্যায়তন ব্যবস্থা, আদত শাসকের একটা অস্ত্র, শাসকের মতাদর্শ শক্তিশালী রাখা ও মানুষের মনে স্থায়ী রাখার অ-নিগ্রহী শস্ত্র ব্যবস্থা, পুলিশ বা সেনাবাহিনী বা সরকারী বিভিন্ন ধরণের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীগুলি হল নিগ্রহ-মূলক শস্ত্র-ব্যবস্থা। প্রায় সব সমাজ দার্শনিক একথা বলেছেন। বিশেষ করে উল্লেখ করা যায় আলথুসার-এর (Louis Pierre Althusser) নাম, পড়তে হবে তাঁর মতাদর্শ ও রাষ্ট্রীয় প্রচার ও রক্ষী বাহিনী (Ideology and Ideological State Apparatuses) সংক্রান্ত বিভন্ন রচনা। একই কথা নানা ভাবে বলেছেন অ্যান্তোনিয় গ্রামশ্চি, মিশেল ফুকো, এমনকি ফ্রেদেরিক নীটৎসে। একটু যদি তলিয়ে দেখা যায়, একটু যদি বিভিন্ন লেখা-টেখাগুলোতে যে বক্তব্যগুলো বের হয়, সেগুলো যদি একটু গভীরে বিচার করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে একটা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত থাকে। অবশ্যই থাকে। এবং আর একটা ঘটনা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বিভিন্ন দেশ থেকে টপ কিছু ইনডাসট্রিয়ালিস্ট – ইন্ডাসট্রিয়ালিস্ট বলার থেকে বলা ভাল ক্যাপিটালিস্ট – তাদের একটা সংগঠন আছে। তারা বছরে একবার মিট করে। এবং সেইখানে বসে তারা ঠিক করে কোন দেশে কোন তন্ত্র তারা চালাবে। এটা কোনো কনস্পিরাসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়। এটা সত্যিই হয়! অ্যাবসলিউটলি সত্যি। কাজেই তৃণমূল বা সিপিএম বা কংগ্রেস বা বিজেপি জাতীয় তল্পিবাহকরা শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে, সে আশা বা তাদের “ইচ্ছা” দুরাশা মাত্র।

    দুজন শ্রোতার যৌথ প্রশ্নঃ আপনার কি মনে হয় না যে একটা ইডিওলজি, মানে শিক্ষার একটা ইডিওলজিক্যাল স্টেট (আপনার কথা মতই) আছে, সেই অবস্থা একেবারে যে ছাত্রদের মধ্যে একটা ফ্যাসিস্ট মনোবৃত্তি শিক্ষার মাধ্যমে জারিত করে, সেটা তাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই তৈরি করা হয়? আর কেবল যদি তাকে ফ্যাসিস্ট বলা হয় তাহলেও কি তাকে কম বিপদজনক মনে করে নেওয়া হয় না?
    সলিলদাঃ অবশ্যই। ডেফিনিটলি হয়। যেই মুহুর্তে একটা ছেলে বলল, যে আমি ফার্স্ট হবো, সেই মুহুর্তে সে কিন্তু একটা ফ্যাসিস্ট বীজ তার মনের মধ্যে বপন করল। তাকে যেই আমি আলাদা করে দেখা শুরু করলাম, আমিও সেই বিষ তার মধ্যে ঢেলে দিলাম। আমরা এই কাজেই শিক্ষিত। আমাদের মধ্যে যাঁরা সে অর্থে “খুব ভালো শিক্ষক” আমরাই কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রচার ও রক্ষী বাহিনীর স্তম্ভস্বরূপ। আর ফ্যাসিস্ট কথাটা অতি-ব্যবহারে জীর্ণ ও প্রায় অর্থহীন হয়ে গেছে। অত সোজা নয় ব্যাপারটা। অনেক গভীরে দেখতে হবে এটা।
    আমাদের স্কুলের যে ছেলেটি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে, ভালো করে পড়াশুনা করেছে, খুব দুঃখের কথা যে সেই ছেলেটি আমাদের ক্লাসের সবথেকে খারাপ ছেলে। সব দিক থেকে। সে তার ক্লাসমেটদের চক্রান্ত করতে শিখিয়েছে। সে তার ক্লাসমেটদের নেশা করতে শিখিয়েছে, সে তার ক্লাসমেটদের বলেছে এখানে কারুর কথা শোনার দরকার নেই। এরা সব বাজে কথা বলছে। ......। মজার কথা হল, তার সঙ্গে কথা বলে এসব কেউ বুঝতে পারবে না। এবং আরও মজার হচ্ছে, তার যে শ্রেণীভিত্তি সেটা একদম আমরা যেটাকে বলি ওই জোতদারের ছেলে। ঘটনা এটা। আর ওই যে ছেলেটির কথা বললাম যে বলেছে আমি যাব না, যে মেয়েটি যেতে চাইছে না, কিন্তু পারিবারিক চাপে তাকে যেতেই হচ্ছে (তোর বিয়ে দিতে হলে তোকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতেই হবে) তারা কিন্তু একেবারে ঠেকে শিখে বলছে। এখন অনেকে বলবে, তুই যাব না বলছিস, তুই তো বাড়ি গিয়ে খেতে পাস না, তুই যাবি কোথায়? আমি যদি খারাপ করে ভাবি তাহলে এটা বলা হয়ত যায়। কিন্তু আমি তো ছেলেটাকে চিনি। আমি তো মেয়েটাকে চিনি। সে কিন্তু এই সেন্স-এ এই কথা বলেনি। তারপরে শ্রমজীবী তাকে কী দেবে আমি তাকে কী দিতে পারব এগুলো আমি জানিনা। কিন্তু এটা ঘটনা। এবং আরেকটা খুব ভালো আমার অভিজ্ঞতা, সেটা হচ্ছে একটা ছেলে, সেই ছেলেটা নিজেকে বাকুম বলে ডাকে। কাল সে আমাকে একটা কার্ড বানিয়ে দিয়েছে আমার পকেটে আছে। তাতে সে লিখেছে সৌরভ (বাকুম)। বেশি কথা বলে, বেশি ফাজলামি করে। এক এক সময় বিরক্তি ধরে যায়। সেই সৌরভকে আমি বলেছিলাম, যে তোরা যে ছবি আঁকিস তার একটা প্রতিযোগিতা করা যাক। একজন ফার্স্ট হবে, একজন সেকেন্ড হবে, একজন থার্ড হবে। সৌরভ আমাকে বলেছিল, স্যার এটা করবেন না। আমাদের মধ্যে কেউ ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড হবে না। সেটাও আছে। দুটোই আছে। আমি তাকে কী করতে পারব, কতটা কী দিতে পারব, সেটা আমি সত্যিই জানিনা। কিন্তু এটা শুরু করতেই হবে। শুরু তো করতে হবে। শুরু করতে গিয়ে ভুল-টুল হবে, ফেল করব। আমাকে একজন বলেছিল এই শ্রমজীবী স্কুলের পরীক্ষাটা যদি ফেল করে? কী আর হবে। আমি সামাজিক ভাবে তো পরাজিতের দলে আছি। কটা আর জয়লাভ করেছি। জয়লাভ তো প্রায় একটাও করিনি। করিনি ঠিক আছে। পরবর্তীকালে আরেক জায়গায় গিয়ে যুক্ত হবো, দেখা যাবে কী হয়।
    আর এক জন শ্রোতাঃ সলিলদা আপনার একটা কথায় একটু প্রশ্ন আসছে মনে, বললেন যে ছেলেটা ফার্স্ট ডিভিশানে পাশ করেছে সেই ছেলেটা সব দিক দিয়ে খারাপ। এটা হয়ত একজন বা দুইজন এর ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। সব ক্ষেত্রেই কি সেটা হয়? পাশ করে যারা তারা কি সবাই জোতদারের ঘরের ছেলে? তাহলে? এইটাকে সরলীকরণ করা কি যায়?
    সলিলদাঃ সরলীকরণ আমি করছিনা। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতাটা বললাম। আমি যেটা দেখেছি সেটা বললাম। এখন সেখান থেকে আবার অ্যাট দা সেম টাইম, আরেকটি ছেলে, সেও একই, কিন্তু সে জোর করে বাড়িতে গেল না। তার বাড়ির থেকে নিয়ে যেতে এসেছিল। সে কিন্তু জোতদারের ঘরের ছেলে নয়। কিন্তু উচ্চ মধ্যবিত্ত। গ্রামীন উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। সে যখন প্রথম এসেছিল খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেত। আমি বলেছিলাম, হ্যাঁরে, তুই খাবার ছড়িয়ে ফেলছিস, পরিস্কার করবে কে? বলল, মাসি করবে! এখানে কোন মাসি আছে? তখন সে আর কিছু বলেনি। কিন্তু এখন সে আর খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে না। সে কিন্তু, ক্ষেত মজুরের ছেলে নয়। সে “ভালো” ঘরের। আমি যা দেখেছি তাই বললাম। ঘটনাচক্রে বলো আর সত্যি শ্রেণীভিত্তি থেকে বলো, যে ক’টি ছেলে ওখানে গণ্ডগোল করেছে, সকলেই না হলেও, অনেকেই গ্রামীন জোতদারদের ছেলে। দেখেছি। এখন এটা নিয়ে আমি কোন জেনারালাইজ করতে বলছি না। ভুল হতেই পারে। কিন্তু এটা আমি দেখেছি।
    সুদীপ দস্তিদারঃ ৯৯% স্টুডেন্টস, আমরা কিন্তু আমাদের পেট ব্যথা করত, ঘাম ঝরত পরীক্ষা দিতে গেলে, এবং কান্নাকাটিও করতাম। কারো কথা তখন শুনতে ইচ্ছে করছে না। এবং পড়াটা অনেক সময়ই হত মুখস্থ করে নিয়ে ওটা উগরে দেওয়া। কয়েকমাসের মধ্যেই ভুলে যেতাম। এখনো অনেকটা সেরকম অভ্যাসই রয়ে গেছে, তো এইটা কিন্তু আমার মনে হয় যে এই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাতে একেবারে অবশ্যম্ভাবী। মানে এখানে যেরকম ওই পাশ ফেল শুধু নয়, ওই মান অপমানের ব্যাপারটাও আছে। যেটা আপনার ওই নিপীড়িত ছাত্র-ছাত্রীদের যদি বলি , যারা স্কুলছুট হয়ে গিয়ে জানার আগ্রহে পড়ছে, সেখানে মনে হয় শুধুমাত্র জানার আগ্রহটা থেকেই তারা কিন্তু একের পর এক বাধা টপকায়। মানে তাদের জীবনের বাধাগুলিই তারা মনে আনছে বেছে নিচ্ছে তাদের পাঠ্যসূচী হিসেবে। আপনাদের এই স্কুলেই, শ্রমজীবি হাসপাতালে আপনারা বই রচনা করেছেন, যেগুলোকে সিলেবাস বলি বা পাঠ্যবস্তুও বলি, সেরকম কি কোন ব্যাপার আছে? না কি একটা বিষয়কে ধরে অনেক দূর পর্যন্ত যাওয়ার একটা সুযোগ আছে।
    সলিলদাঃ আমরা ক্লাসে বই ব্যবহার করি না ক্লাস এইট আর নাইনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আমরা ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে শব্দ / বাক্য / ধারণা বেছে নিয়ে সেখান থেকে ভাষাতে যাই। তৈরি করা হয় কর্মপত্র বা ওয়ার্ক শীট। সেগুলোকে বই ধরে নেওয়া হয়। এটা যে সক্লে করেন তা নয়, অনেকে সারা জীবনের বিশ্বাস ছাড়তে পারেন না। এটা একটা সমস্যা।
    আর একটা কথা। এইটা একটু বলি, সেটা বলব নাই ভেবেছিলাম, সেটা হচ্ছে যে আমাদের ওই স্কুলে যারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে তারা ১৯ জন, পরীক্ষায় তিন জন ফেল করেছে। বাকিরা সবাই পাশ করেছে। একজন তো ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েইছে, একজন একটু কম পেয়েছে। যে ছেলেটি ফার্স্ট ডিভিশান পেয়েছে, সে কিন্তু একেবারে ওই সাবেকী পদ্ধতিতে নোট মুখস্থ করে পেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে নোটগুলো সে পেল কোথায়? আমরা তো দিইনি। নোট, জানেন তো, পেয়েই যায়। আমাদের ওই স্কুলের পরে জেনেছি, আমাদের স্কুলের সামনে একটা বাড়ি আছে, যেটা আমাদের এই হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই, সেই বাড়ির দোতলায় একটি ছেলেকে সবাই দেখে যে ছেলেটি প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে। সে এদের নাকি সমস্ত নোটগুলো দিয়েছিল। সবাই সে নোটটা ব্যবহার করেনি আমাদের এই কথা শুনে। যারা সেটা ব্যবহার করেনি তারা কম নম্বর পেয়েছে। ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া ওই ছেলেটি বাড়িতেও চলে গিয়ে পড়াশুনা করেছিল, এবং ওখানেও নোট-টোটগুলি পড়েছিল। সে ফার্স্ট ডিভিশান পেয়েছে। কিন্তু বাকিরা ভালো নম্বর পায়নি। তাহলে সিলেবাস ব্যাপারটা যেটা আপনি বললেন সেইটা আমাদের মতে মুখস্ত করায় শুধু। যদি নম্বর ভালো পেতে হয়। আমাদের কারুর কারুর মতে সেই সিলেবাসটিকে ত্যাগ করা দরকার। আমি আমাদের স্কুলে বলেছি, একদম পরিস্কার কথায় বলেছি, যে আমি পরীক্ষায় পাশের পড়া পড়াব না। পড়াব না তার কারণ হচ্ছে আমি সারাজীবন আমার ছাত্রদের পরীক্ষা পাশ করার ট্রিক শিখিয়েছি। আর না। যথেষ্ট হয়েছে। আমার এখন পড়ানোটা একটা সামাজিক কর্তব্য, না পড়ালে, মাইনে পাব না, এমনতো নয়। ভালোই পেনশান পাই। সুতরাং আমার মনে হয় আমি কেন ওর মধ্যে যাব, আমি আমার মত করে পড়াব। এবং যে বইটা আমরা তৈরি করছি, সেটা কোন সিলেবাস নয়। সেটার একটাই উদ্দেশ্য হবে, যে ছেলেমেয়েরা যাতে সহজে ওটা পড়তে পারে। ইংরেজী যদি না পড়ে, সেতো কোনদিন ইংরেজী শিখবে না। ইংরেজী যদি না বলে কোনদিন ইংরেজী শিখবেনা। সেইজন্যে ছড়াগুলো, যেগুলো তৈরি করা হচ্ছে, তার কতগুলো হচ্ছে নার্সারি রাইম যেগুলো ইংরাজীতে আছে তার থেকে বাংলায়িত (শব্দটা বানালাম) করা হচ্ছে, বিষয়টা একটু পালটে নিয়ে ভাষাটা পালটে নিয়ে। আবার বাংলা নার্সারি রাইমগুলোকে ইংরেজীতে অনুবাদ করা এবং ওই ছেলেমেয়েদের দিয়ে কিছু কিছু ছড়াও ওরকম লিখিয়েছি। এখন সমস্যা হচ্ছে, সেটা আমার ব্যক্তিগত সমস্যা, সেটা হচ্ছে, ... আমি ওদের ছড়া লেখাতে গিয়ে একজায়গায় লিখলাম ছন্দ মেলাবার জন্য কিছু শব্দ খুঁজে না পেয়ে লিখলাম, চকোলেট টার্ট। এখন তারা তো চকোলেট টার্ট কোনদিন খায় নি। কেউ দেখেইনি, জিনিসটা কী তাই জানেনা। তাহলে এই শব্দটা আমি ওখানে দেব কেন। কথা হচ্ছে, যে ইংরেজী ভাষাটা যাদের ভাষা, তাদের কিছু কিছু জিনিস যদি আবার আমি না আনি তাহলে তো ছেলেমেয়েরা কোনদিনই শিখবে না ইংরেজি জীবনধারা। তাদের সংস্কৃতিটার একটু আইডিয়াও তো পেতে হবে, আর চকোলেট টার্ট এখন এমন একটা জিনিস যেটা কলকাতার সর্বত্র পাওয়া যায়। আমার যেটা ব্যক্তিগত সমস্যা, আমি ওদের বলেছি, তোরা যেটা জানিস না সেটা লিখবি না। তাহলে এবার চকোলেট টার্ট কী সেটা তো তাদেরকে জানাতে হবে। আপনারা সকলেই জানেন এক একটা চকোলেট টার্টের ত্রিশ চল্লিশ টাকা করে দাম। সেটা ত্রিশটা পঁয়ত্রিশটা ছেলেমেয়েকে আমার দিতে হবে। নয়ত ওরা শিখবে কী করে? এইটা হচ্ছে আমার একটা ব্যক্তিগত সমস্যা। এখন যেটা আসল ব্যাপার সেটা হচ্ছে এই ছড়াগুলোতে প্রায় একটাও ওদের অপরিচিত শব্দ নেই। আমি একদিন ওদের বললাম, যে তোরা গুনে দেখ তো, এই যে “পিস”টা (এই শব্দটা ওরা চেনে) তার মধ্যে কটা শব্দ তোরা জানিস। দেখা গেল দুটো কি তিনটে জানে। একজন জিজ্ঞেস করল স্যার, ‘ইজ’টাকে কি জানা ধরব? আমি বললাম, তাই ধর, ধরে বল। তো দেখা গেল যে খুব একটা বিশেষ জানে না। এবং ওরা বলছে যে স্যার এই শব্দগুলো যদি আমরা জানতাম তাহলে আমাদের পড়তে ভাল লাগত। এবারে যে ছড়াটা আমরা তৈরি করলাম সে ছড়াটার প্রত্যেকটা শব্দ ওরা জানে। ওরা তো সহজে ছড়াটা শিখে যাচ্ছে। এবং আশা আমাদের যে আমাদের যৌথ ভাবে রচিত ওই ছড়াগুলো ওরা বুঝতে পারবে আর পড়তে ভয়ও পাবে না।
    কোনো একজন শ্রোতা চ্যারিটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, মিড-ডে মিল ব্যবস্থা ভালো কিনা তাই নিয়ে। প্রশ্নটা মনে নেই। তা নিয়ে আমোচনাটা দিলাম।
    সলিলদাঃ সত্যি বলতে কি মিড-ডে মিল দিয়ে ছাত্র টানা আমার মনে হয় একটা পিছনে হাঁটা পদক্ষেপ। কিন্তু এটাও সত্যি যে অনেক শিশুই, এবং তাদের পরিবার, ওইটুকু খাবারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এতে তাদের আত্মসম্মান বাড়ে এমন নয়। কিন্তু ওই যৎসামান্য নিউট্রিশন ওখান থেকেই পায় ওরা। সেটুকু থেকে ওদের বঞ্চিত করতে কারোরই মন চাইবে না। ওদের যদি বোঝানো যায়, ওই খাবার তাদের প্রাপ্য, তাহলে অন্য রকম হতে পারে। প্রাপ্য তো বটেই। রাষ্ট্রের তো দায়িত্ব শিশুর মুখে খাদ্য তুলে দেওয়া। একটা ঘটনা মনে আছে। বেহালাতে ঘটেছিল এটা। স্ক্যান্ডালই বলব।
    একটা কর্পোরেশন স্কুলে দুপুরে (তখনো মিড-ডে মিল চালু হয়নি।) দু টুকরো পাউরুটি, দু চিমটে ধূলোছিনি, আর এক কাপ দুধ নামক একটি জলীয় পদার্থ দেওয়া হত। সে খাবারের জন্য বাচ্চাগুলো হুড়োহুড়ি করত বলে কোনো একজন টিচার ওদের হ্যাংলা বলেছিলেন, হাঘরে বলেছিলেন। তার প্রতিবাদে ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভের বাচ্চারা খাবার বয়কট করেছিল, এবং তাদের শান্ত করতে অনেক সময় লেগেছিল। এই ঘটনাটার কথা আমাকে বলেছিলেন শ্রদ্ধেয় গীতাদি, গীতা দাস, কর্পোরেশন স্কুলে কাজ করয়েছেন, আজীবন অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা। এই স্মৃতি আমাকে অনেক হতাশার মুহূর্তে স্বস্তি দেয়।
    আবার এমন অনেকে আছেন, যাঁরা মনে করেন যে শিশু, তার কোন আত্মসম্মানবোধ নেই। আমাদের মধ্যে একবার একজন শিক্ষক বলেছিলেন, তোদের খাওয়াদাওয়া দেওয়া হচ্ছে, থাকতে দেওয়া হচ্ছে, তাও তোরা পড়াশুনা করছিস না। তাতে ছেলেমেয়েরা ভীষণ অফেন্ডেড হয়েছিল, এবং সেটাকে শুধরে নিতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল, অনেক দিন গেছিল ওদের মন থেকে ওইটা সরিয়ে দিতে। এছাড়া, আমাদের স্কুলে অনেক সময় অনেকে বই দিতে আসে, মিষ্টি দিতে আসেন, আর তারা চায় মিষ্টি দানরত ছবি তুলতে। তো সেটা আমরা অ্যালাও করি না। একদমই করিনা। তুমি মিষ্টি আমার থেকে নিচ্ছ, আমার সঙ্গে তুমি ছবি তোলো। মানে আমি সলিল বিশ্বাস ভা শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্য কারো কথা বলছি। আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেওয়া যাবেনা। এই সমস্যা তো আছেই।
    এটা যে ধরণের মানসিকতা তা ফেলে না দিলে কিছুতেই কিছু হবে না। তবে আবার অন্যদিকও আছে। একদিন কোনো কারণে খুব মন খারাপ করেছিলো আমার, খালি মনে হচ্ছিল কিছুই হচ্ছে না, এই পড়ানোর কাজই বৃথা। তখন আমার একজন বন্ধু বাসুদেব ঘটক আমাকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিল, সলিলদা, আপনি তো বলেন, যে শিক্ষকের আসল কাজ হচ্ছে নাশকতা। সাবভার্সান। তো সেইটাই যদি আপনি করবেন ভাবেন, তাহলে তো মন খারাপ করলে চলবে না। ঘটনা তাই। কেন শিক্ষকতা হচ্ছে সাবভার্সান, তা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব। তবে সে আলোচনা স্বতন্ত্র। সেটা অন্যত্র করতে হবে। ছাত্রদের মনের মধ্যে সাবভার্সান করতে হবে, যত রাজ্যের দুষ্টবুদ্ধি আমি ছাত্রদের মাথায় ঢোকাবো। হ্যাঁ। এইটা আমি ছাত্রদের বলেছি। তোদের না আমি সব ভুলভাল জিনিস শেখাবো। তাতে ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি।
    রঞ্জন সরকারঃ (আজ বহু বছর ধরে রঞ্জন খুব দরকারি কাজ করছেন কামারহাটি অঞ্চলে, নীরবে এবং কোনো ঢাকঢোল না পিটিয়ে।) আসলে এই জায়গাটায় এসে অনেক কথা বলার এমনিতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আজকে অনেকে আছেন এবং সবচেয়ে বড় কথা যে সলিলদা নিজে আছেন,............আমরা শব্দটাকে সকলের চেয়ে আলাদা করে নিয়ে বলছি এখানে আমরা বলতে বলতে চাইছি যারা যাদের কথা বলছি, তারা আমার সঙ্গে এসেছেন। তাদের কথা বলছি। তো এবারে আমার সঙ্গে যারা এসছে তারা হচ্ছে আমি বেলঘরিয়া তে থাকি, ওখানে কামারহাটি বলে একটা এলাকা আছে , সেই এলাকার কাছাকাছি একটা মানে কি বলব, একদল মানুষ থাকেন, যারা সেই অর্থে ... প্রান্তবাসী। তো এইরকম ... এই অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ সুবিধে একবার আমার এসেছিল, তার ফলে গত আট বছর আমি একভাবে তাদের সঙ্গে থেকে গেছি। এবং কখনো কখনো আমার কিছু কিছু বন্ধু-বান্ধব, এবং এখনো পর্যন্ত আমার কিছু কিছু বন্ধু-বান্ধব মাঝে মাঝেই তাদের সঙ্গে থাকছেন। এবার এখানে যে মানুষদের কাছে আমরা এসছিলাম, যে মানুষদের সকলের কাছে আসার চাইতেও বড়দের কাছে আসার চাইতেও ছোটোদের সঙ্গে মেশার আমার সুযোগটা হয়েছিল, বা আমি সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ... ছোটোদের সঙ্গে মেশা। এবং ছোটোদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে আমি ওখানে শুধুমাত্র খেলাধুলা করতাম। এবং তারপরে কিছু কিছু অনুষ্ঠানও করতাম, তারপরে একটু পড়াশুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি, তো সেই পর্ব টা আজ প্রায় আট বছর ধরে চলছে। এবং এই আট বছরে আজকে মানে সত্যি কথা বলতে কি, মানে সলিলদা যখন বলা শুরু করেছিলেন, বা তারও আগে, তীর্থদা, বা অন্যরা যা বললেন তাতে একটা কথা ফুটে উঠছিল যে, অনেক অভিজ্ঞতাই শেষ পর্যন্ত একটা তলানিতে ঠেকে, আমাদেরও প্রথম দিকে প্রেরণা পরের দিকে তলানি এরকম একটা জায়গার ভেতর দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে, বা যাচ্ছি এখন। তো তার অন্যতম একটা প্রধান কারণ ছিল আমি জেনে বা না বুঝে আমি যেটা চেষ্টা করেছিলাম, সেটা হয়ত কিছুটা সলিলদারা যেরকম বলছেন বা সলিলদার বইটা আগে একটু পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল বলে আমার যা মনে হয়েছিল সেইটাকে কিছু করা যায় কিনা সেই জায়গা নিয়ে কিছু ভাবা যায় কিনা এটাই আমরা প্রয়োগ করতে সেখানে আমরা চেষ্টা করেছিলাম। এর একটা অন্যতম কারন, অন্য অনেকগুলো কারণ এর সঙ্গে মনে হয়েছে আমার, যে আমাদের যে প্রেরণা যতজনের উৎসাহ, যত ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম, সেটা এখন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে, কিন্তু সেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি আজকে এসেছি, এদের মধ্যে মাধ্যমিক দেওয়ার বয়সী আছে, মাধ্যমিক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়েছে এরকম ও একজন আছে, আর আছেন তাদের মায়েরা। তারা সকলেই যে খুব শিক্ষিত বা স্কুল যাওয়ার অভিজ্ঞতা যে সকলের হয়ে আছে, এরকম হয়ত নাও হতে পারে বা খুব উচ্চ শিক্ষিত তো নয়ই। এরকম একটা জায়গার মানুষদের আমি সঙ্গে নিয়ে এসছি। আমি তাদের সঙ্গে আছি। এবারে আমাদের আসার পিছনে কিন্তু ওইটাই যে আমরা এই তলানি থেকে আবার কোনো ভরাটতর জায়গায় পৌঁছাতে পারব কিনা তার কোন দিশা এখানে মেলে কিনা। একটা কথা এটাই যে আমি আসলে নিজেই কোন পড়াশুনা করিনি। আমি কোন স্কুলের টিচার নই। আমি একটা সময় ছাত্র হিসেবে ছিলাম কোন একটা কলেজে গেছিলাম। কিন্তু সেখানে শিখেছিলাম যেটা যে এই শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলতে হবে, এইখান থেকে আমার লেখাপড়া শুরু। আমি নিজেই আমার নিজের শিক্ষাব্যবস্থা সেদিন পুড়িয়ে দিয়েছিলাম ... মানে আমি যেটা পড়তে এসেছিলাম আর পড়িনি। ভালো বা মন্দ এই তর্ক উঠতে পারে, কিন্তু আমার তো ভালো লাগেনি। আমার নিজের বাড়ির অভিজ্ঞতা বারবার আমায় বাচ্চাদের সাথে খানিকটা আলোচনা করি আর খানিকটা আমার এখানেও না বলে পারছিনা, আমার মা কখনো স্কুলে পা দেননি, যাননি, কিন্তু মা আমাকে সমস্ত রকম গল্পের বইয়ের নেশা ধরিয়েছিলেন। আর মা তিনটে লাইব্রেরির মেম্বার ছিলেন। কোনদিন স্কুলে যাননি। আমার বাবা বিভিন্ন কলেজ স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা পেয়ে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি রিটায়ারমেন্ট-এর পর একদিনও একটা বই-এর পাতা খুলে দেখেননি। তাই বাবাকে অশিক্ষিত আর মাকে শিক্ষিত বলে আমি সব জায়গায় প্রচার করি। তো শিক্ষা যদি আমার শিক্ষার আগ্রহই না জাগায় যদি বলি ওটাই শিক্ষা মানে আমার এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে যে আসলে যেটা স্কুলে পড়তে যেতে হয় সেটাই শিক্ষা কিনা। আমার বাড়িতে আমার বোন আছে ও শুধুমাত্র রান্নাবান্না করে, ও একপাতাও পড়েনি। আমি কিন্তু একটা রান্নাও করতে পারিনা। ও কেন শিক্ষিত নয় আর আমি কেন শিক্ষিত এটা আমি বুঝিনি। আমার ভাত আমি বানাতে পারিনা কিন্তু আমি শিক্ষিত, কিন্তু একজন চাষি অশিক্ষিত, এটা কেন আমি বুঝি না। কেন আমাকে এই বইগুলোই পড়তে হবে এই বিজ্ঞানটাই পড়তে হবে, এগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে এটা আমি বুঝি না, এবং বুঝতে খুব চাইও না। সত্যি কথা বলতে কি বুঝতে চাইনা। মানে আমার সঙ্গে যারা আছে তারা খুব দ্বন্দ্বে দোটানায় পড়ে আছে। আমার সঙ্গে যে বাচ্চারা আছে তারা খুব মুশকিলে পড়ে আছে যে আমাদের একসঙ্গে বসে আমরা যা করি যাতে আসলে কি করছি আমরা যে জায়গাটায় যাই সেখানকার মানুষদের কাছে প্রশ্ন আছে যে ঐ বাড়িতে কী হয়? তো ব্যাপারটা হচ্ছে যে আমরা ওদেরকে অসৎ কোন পথে হয়ত নিয়ে যাচ্ছি না এইটুকু বলতে পারি। কোনভাবে রোজগারের ধান্দা শেখাচ্ছি এমনও নয়, আমি সাহস থাকলে এটাও বলতাম ওদেরকে যে রোজগার করার কোন চেষ্টাই না করতে, ভিক্ষা করার কথা বলতাম, তাতে অহংকার চূর্ণ হত। তো এবারে আমাদের কাছে সেইজন্যই এখানটায় আসার উদ্দেশ্য এটাই যে এই যে মানুষগুলো এসেছেন যারা কিন্তু ওই দোটানাটায় পড়ে আছেন। মাধ্যমিক? নাকি না। এখানে গিয়ে একটু বাংলা পড়ানো একটু বিজ্ঞান পড়ানোর একটু ইংরাজী পড়ানো পাশাপাশি আসলে গোটা দেশটাকেই জানতে হবে। একটা চোর ধরা পড়লে তাকে মারা উচিৎ কিনা চারদিকেই যে ফাঁসী দিয়ে দেওয়া হয় কোন অন্যায় করলে এটা ঠিক কিনা বেঠিক, আমরা দেশের সমস্ত মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে সেটা নিজের করে জানব কিনা, আমরা গাছপালা কেটে এই যে পৃথিবীটা শুধু মানুষের ভোগের জন্য করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিছিল করব না পড়া করব, এই যে কথা গুলো এখানে বলা হয়, সেই কথা গুলোর মধ্যে এবং সেই জীবনযাত্রার অভ্যেসের মধ্যে থাকব, নাকি মাধ্যমিক। মাধ্যমিক এর পরে উচ্চ মাধ্যমিক। তারপরে গ্রাজুয়েশান কেননা এটা হচ্ছে। একেবারে থার্ড ডিভিশানে পাশ করার পরেও কেননা আমাদের এখানে শুধু পড়া হয়না। এরা অনেকেই কোচিং-এ পড়ে, সেখান থেকে যা শেখে সেই অনুযায়ী তারা লিখে আসে উত্তর, এবং তারপর হয়ত এই কোচিং এর গুণেই আমি বলব, আমার গুণে নয়, বা আমাদের চেষ্টার গুনে নয়, তারপর তারা থার্ড ডিভিশানে পাশ করে। তার পরেই তাদের নেশা চেপে যায়, যে তারা উচ্চ মাধ্যমিকটা পড়বে। তারা চা-এর দোকানটা করবে না। আমি একজন চা-এর দোকানদার এর কাছে নিয়ে গেছিলাম এদেরকে সেই চা-এর দোকানদার চারজনের সংসার মেন্টেইন করার পর অসাধারণ কিশোর কুমারের গান গান। সব লোককে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। তো কেন ওই জীবনটা নেব না, কেন উচ্চ মাধ্যমিকের জীবন নেব, এইটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সকলের কাছে পরিষ্কার নয়। আমাদের মায়েরাও এখানে এসেছে, মায়েদেরকে আমরা আমাদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে চাইছি, কেননা আমরা বুঝেছি যে আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সেইখান থেকে আমাদের সরাতে গেলে মানে একটুখানি জায়গা দিতে গেলে শ্বাস নেবার মত মায়েরা যদি বোঝেন যে আমরা খুব ভুল কিছু করছি না। অন্য কোন ভাবে কিছু করা যায় অন্য কোন ভাবেও রুটি রুজির জন্য লেখাপড়া না হোক, রুটি রুজির জন্য যা শেখার তা শিখে ফেলা যায়, আর জ্ঞানার্জনের জন্যও যদি কারো কিছু শিখতে ইচ্ছে করে, তাও অন্য রকম ভাবে শেখা যায়, এইটা একটু পরিস্কার হলে, কেননা এখানে যারা এসেছেন আমার সঙ্গে তারা বারবিয়ানা পড়েননি, বা অন্যান্য বইও আমি যে গুলোর ভিতর দিয়ে গিয়ে এ সমস্ত ভেবেছি সেই জীবনের মধ্য দিয়ে তাদের যাওয়া ছিল না। আমার খুব মনে আছে একটু মনে পড়ছে , এটাই বলে শেষ করছি, ১৯৭০ / ৭১ সালে আমার বাবার ছাত্ররা অনেকেই স্কুলে ছিল বা কলেজে ছিল এবং তারা, আরও আগে বলছি ৬৫/৬৬ আমি যেখানে বড় হয়েছিলাম সেখানে খাদ্য আন্দোলন বলে একটা ঘটনা ঘটেছিল। এবং ৭০/৭১ সালে বাবার ছাত্ররা আমাদের স্কুলে বোম ফেলেছিল, এবং আমাদের স্কুলে বোম ফেলাই শুধু নয়, ওখানকার কলেজের নিজেদের বন্ধুদেরকে বলেছিল এই পরীক্ষা বয়কট করতে হবে, তোরা কেউ কোন পরীক্ষা দিতে যাবি না। এই শিক্ষা বয়কট করতে হবে, বেরিয়ে আসতে হবে, তোরা কেউ যাবি না। আমি ভুলতে পারিনি। তো এইবার, সেইটা আমি বলছি কিন্তু তবু আমার সঙ্গেও এমনকি যারা আমাদের সাহায্য করছেন তারাও অনেকটা সেরকম ভাবেই বলছেন আমাদের , তারাও হয়ত মাধ্যমিকের কথাই ভাবছেন। তো তাহলে আমরা ঠিক কোন পথে হাঁটলে কোন দিকটায় পৌঁছব সেটা র উপরে যতটা পারা যায় আলো নেওয়ার জন্য এসেছি, সেটা সলিলদার কাছ থেকে আরও শুনব। একটা উত্তর আমি এক্ষুনি পেয়েছি, পরে হয়ত আমার ছেলেদের বলব, কিন্তু আপাতত এইটুকুই।
    সলিলদাঃ আবার বারবিয়ানাতে ফেরা যাক।
    বারবিয়ানা স্কুলের পত্তন করেছিলেন লোরেঞ্জো মিলানি...এঁকে পাঠানোই হয়েছিল একটা স্কুল করবার জন্য। সেই স্কুলটাতে ওকে সবাই প্রায়র বলে ডাকত। এবং ওখানে যে ‘প্রায়রি’ সেখানে ওই পড়াশুনাটা হত। এবং কালক্রমে উনি ওই স্কুলটাকে বাদ দিয়ে বারবিয়ানার যে স্কুলটা সেই স্কুলটা প্রতিষ্ঠা করেন, ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। বা তার একটু পরে। তারিখটা আমার ভাল মনে নেই, এবং সেই স্কুলটা করার পেছনে তার বক্তব্য ছিল যে আমার এই স্কুলটাকে সেকিউলার স্কুল করতে হবে। কেন করতে হবে? তার তখনকার বক্তব্য ছিল যে বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, এমন একটা জিনিস যেটা কারোর কাছে ট্র্যান্সমিট করা যায়না। ধর্মবিশ্বাস যার আছে তার আছে। এটা আমি শেখাতে পারব না। সুতরাং আমি ওই ধর্মের স্কুলের মধ্যে যাব না, আমি সেকুলার স্কুলের মধ্যে কাজ করব। এখন, উনি বলেছিলেন বটে শেখাতে পারব না, কিন্তু আমার ধারণা সেই কারণেই শুধু নয়, উনি গরীব মানুষের ছেলেমেয়েদের সংস্পর্শে এসে দেখলেন যে যে পদ্ধতিতে ওই ধর্মীয় স্কুলের শিক্ষাটা হয়, সেই শিক্ষায় এরা শিক্ষিত হতে পারবে না। তাই উনি বারবিয়ানা স্কুলটা শুরু করেন।
    বারবিয়ানা স্কুলের সে অর্থে প্রতিষ্ঠাতা আমাদের ফাদার লোরেঞ্জো মিলানির বাবা-মা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ ছিলেন। এবং বিশেষ রকম নন-কনফর্মিস্ট ছিলেন। মানে কেউ বলবে ওরা এথিস্ট ছিলেন, কেউ বলবে ওরা অ্যাগনস্টিক ছিলেন। সেটা খুব পরিষ্কার নয়। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার, যে লোরেঞ্জো মিলানি এবং তার দুই সিবলিং যখন জন্মায় তখন তার বাবা-মায়ের বিবাহ হয়নি। এবং একটা পার্টিকুলার দিনে, তারিখটা আমার এখুনি মনে নেই, এই তিন ভাই-বোনের ব্যাপ্টিজম হয়। হয় না, খ্রীস্টানদের, চার্চে গিয়ে নামকরণ হয়, সেই একই দিনে তিন ভাইবোনের সেটা হয় এবং সেই একই দিনে তার মা-বাবার বিবাহও হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে যতই তিনি ধর্মযাজক হন না কেন, তার ব্যাকগ্রাউন্ডটা এমন ছিল যেখানে একটা সেকুলার চিন্তা তার মনের মধ্যে ছিল। এবারে আমি বিশেষ একজনের কথা বলছি। আমি যখন বইটা অনুবাদ করতে শুরু করি তখন একটা কপিরাইটের প্রশ্ন উঠছিল। তখন আমি চিঠি লিখেছিলাম ওদের কাছে, সে চিঠির উত্তরে যে চিঠি তারা লিখল, সেটা বইটার ভেতরে আছে। চিঠির উত্তরটায় সই করেছিলেন, একজন আমার মনে আছে, ফ্র্যাঙ্কো জেসুয়াল্ডি বলে একজন। তার নাম খুঁজে পালাম না। তা তারপরে আমি আরও খুঁজতে খুঁজতে জানলাম, যে ৬৭ সালের পরে যখন এরা বড় হল, যখন ফাদার মিলানি আর নেই, তখন ওরা একটা ভিডিও তৈরি করেছিল, যে ভিডিওটাতে বারবিয়ানা স্কুল সম্বন্ধে এবং বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে কীভাবে পড়া হত, কী হত না হত এগুলো আছে। আমি অনেক খুঁজেছি। পাইনি। আপনারা যদি পেয়ে যান ভালো হয়। পেলে ওটা দেখতে খুব ইচ্ছে করবে। কিছু ছবি আমার কাছে আছে, আর আনফরচুনেটলি আমি আজকে বাড়ি থেকে আসছি না। আমি ক’দিনই বাড়িতে নেই। সেইজন্য ছবিগুলো আমি আনতে পারিনি। আমি ছবিগুলো প্রিন্ট করে অভিজিতকে দিয়ে দেব। ওর কাছে সেই ছবিগুলো দেখতে পাবেন। সেখানে ফাদার লোরেঞ্জো মিলানীর ছবিও আছে। এবং আছে কীভাবে স্কুলটা হত কী ভাবে ছাত্ররা বসে পড়ত, কারা ওখানে এসেছিল, এইসব অনেক কিছু। এখানে একজনের ইনটারভিউ (http://www.barbiana.it/interview.html) পড়লাম আমি, তার নাম হচ্ছে, এদোয়ার্দো মার্টিনালি, সে ওই অরিজিনাল যে বারবিয়ানার ছাত্ররা বইটা লিখেছিল, তাদের একজন। ও ছাড়া আরও যারা ওখানে পড়ত তাদের কয়েকজনের নাম আমি বলছি। আদেল। এদা। জিনা। বারবারা। প্রফেসর আমান্নাতি। জিওর্জিও ফেদারার। মারিও রসি। লুয়ানা। ফেরেরো। মিশেল জেসোয়াল। ফ্র্যাঙ্কো নামটা আমি ওর মধ্যে পাইনি। যে ওখানে আমার চিঠিটার উত্তর দিয়েছিল।
    আমার মনে হয় মিশেল হয়ত ফ্র্যাঙ্কো হলেও হতে পারে। বা আর কেউ। এবং ওখানে এদোওয়ার্দো বলছে আমি যেদিন প্রথম স্কুলে গেলাম, গিয়ে দেখি ছেলেমেয়েরা টেবিলের ওপর বসে কতগুলো হাড় দেখছে। হিউম্যান বোনস দেখছে। কেন দেখছে, না ঐ অ্যানাটমি শিখবে টিখবে ইত্যাদি। ওই বোনগুলো কোত্থেকে এসেছে? পাশে একটা গির্জা ছিল। সেই গির্জার একটা অংশ ভেঙ্গে পড়ে গেছে, ভেঙ্গে পড়ে যেতে সেইখান থেকে নাকি ঐ হাড়গুলো পাওয়া গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফাদার মিলানি ওই হাড়গুলো নিয়ে এসেছেন। এবং সেই হাড়গুলোকে একটা শিক্ষার মাধ্যম করে তুলেছেন। এবং এদোয়ার্দো বলছে একজায়গায় যে মিলানি বারে বারে বলতেন যে বই-এর পাতার দিকে না তাকিয়ে থেকে বাইরে দেখতে। প্রথমে তো দু ঘণ্টা খবরের কাগজ পড়া হয়ে গেছে। এবারে বইয়ের পাতার দিকে তাকিও না। জানলা দিয়ে বাইরে তাকাও। বাইরে কী দেখছ দেখ। বাইরে যেটা দেখছ সেইটাকে ফ্রন্ট অফ দি পেজ বা পাতা, মানে শুরুর জায়গা করো। দেখো সেইখান থেকে কোথায় যাওয়া যায়, আরেকটু এগিয়ে কী আছে সেটা দেখা যায় কিনা। এখন আমি যখন জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে বলছি আমার হয়ত মাথায় আছে যে দূরে ওই শিমুল গাছ যেটা দেখা যাচ্ছে সেইটা আমি ওদের ...আজকে এখানে বসে কথা হচ্ছিল... যে ওই সুপুরি গাছটা আমি ওদের দেখাতে চাইছি, এবং সুপুরি গাছ নিয়ে আমি একটা কিছু বলব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেমেয়েরা সুপুরি গাছটা দেখলই না। তারা দেখল সামনে একটা গাছে শুকনো পাতা। তারা সেইটে বলল। তাহলে আমাকে তো শুকনো পাতা থেকে শুরু করতে হবে, পড়ানো। এবং এইটা আমাদের শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে আমরা মানি, আমরা করি। বলি, জানলা দিয়ে বাইরে দ্যাখো, জানলা দিয়ে বাইরে একটা কোল্ড স্টোরেজ আছে। কোল্ড স্টোরেজ নিয়ে আমরা খানিকটা আলোচনা করলাম। একটা বড় বাড়ি হচ্ছে, বাড়িটা নিয়ে আলোচনা করলাম। অনেক দূরে একটা বনরেখা দেখা যাচ্ছে, তার মাঝে সেখানে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। স্যার ওই গাছটা দেখতে যাব। তা আমি ছেলেমেয়েদের বললাম, চল। আমরা চলে গেলাম সেই কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখতে। আমার অবশ্য গিয়ে কান্নাকাটি অবস্থা। সে কি গরম। কি বলব। যাই হোক। তারপরে, এরকম, কোথায় যে কি হবে জানিনা। যেমন একদিন খাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে। স্যার, আপনি সবকিছু খান? আমি বললাম হ্যাঁ, সব খাই। আপনাকে যদি ব্যাঙ খাওয়াই খাবেন? আমি বলছি হ্যাঁ, খাবো। যদি ইঁদুর খাওয়াই খাবেন? আমি বললাম হ্যাঁ খাবো। অনেকে সাঁওতাল ছেলেমেয়ে, তাদের মধ্যে একটা মেয়ে ছিল সে আমাকে ইঁদুর রান্নার বিষয়ে বলল, এবং বলল যে আমি যেদিন পারব আমি সেদিন রেঁধে খাওয়াব। ঠিক আছে। ক’দিন আগে মাসখানেক আগে একটা ছেলে পেছনে হাত লুকিয়ে নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়েছে। স্যার, তুমি বলেছ কিন্তু খাবে। খাব। কি? ... অ্যাতো বড় একটা ব্যাঙ ধরে এনেছে। এ কি? পুলিশে ধরবে। ব্যাঙ ধরা নিষেধ। না স্যার। কিছু হবেনা। কী হবে? আমি এখন রান্নাঘরে যাচ্ছি, ব্যাঙটা কেটে রান্না করব, তুমি এসো, তুমি খাবে। তো ঠিক আছে যাব। ব্যাঙ তো আমি আগেও খেয়েছি, ফলে অসুবিধা হল না। গিয়ে দেখলাম একটা ফার্স্ট ক্লাস ব্যাঙ রান্না করল। আমরা ওখানে বসে খেলাম। (শ্রমজীবী হাসপাতালের রান্নাঘরে?) হ্যাঁ। ( হাসপাতালের রান্নাঘরে ব্যাঙ রান্না করতে দিল?) হ্যাঁ, হ্যাঁ। দেয়। ( ওটা কুনো ব্যাঙ তাই) না কুনো ব্যাঙ নয়। সোনা ব্যাঙ । এবং খুব ভালো খেতে। তারপর সেই ব্যাঙ আমরা খেলাম। ইঁদুরও ওখানে অনেক আছে। কিন্তু ইঁদুর যে রান্না করবে, সে এখন নেই। ফলে ইঁদুরটা এখনো খাওয়া হয়নি। তো রান্না হলে খাবো। এখন এই যে ব্যাঙটাকে নিয়ে এসে ও রান্না করল, এটার সঙ্গে হায়ার সেকেন্ডারির বা মাধ্যমিক-এর ওই কি যে প্রসেস রাইটিং আছে, সেই প্রসেস রাইটিং-এ চলে গেলাম আমি। কি করে ব্যাঙ রান্না করে? বলল স্যার, এটা প্রসেস রাইটিং কি করে হবে? আমি বললাম, হবে মানে? ফরাসী দেশে সারাক্ষণ লোকে ব্যাঙ ভাজছে। তুই ব্যাঙ রান্না নিয়ে লিখলে লোকে নেবেনা মানে?
    একমাত্র যদি আমরা জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতে পারি, একমাত্র যদি আমরা বাক্সের বাইরে ভাবতে পারি, তাহলেই এটা করা সম্ভব। এখন অ্যানার্কির কথা আমি বলছি না, কিন্তু না ভাঙলে তো হবেও না। তৈরিটা হবে কি করে? অনেকেই বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতির উর্ধ্বে থাকতে হবে। রাজনীতি শিক্ষকরা কেন করবেন? শিক্ষক কেন কোন রাজনীতির মধ্যে যাবেন? তা আমার বক্তব্য হচ্ছে যে রাজনীতি তো করতেই হবে, মানে শিক্ষকতা ডেফিনিটলি একটা পলিটিক্যাল টাস্ক। এই পলিটিক্যাল টাস্ক হিসেবে যদি না দেখা হয় তাহলে শিক্ষকতা করা প্রায় ব্যর্থ।
    একজনের এলোমেলো প্রশ্নঃ একজন শিক্ষক রাজনীতি করবে কি করবে না তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার আগে সেই শিক্ষককে জানা উচিত যে সে একজন সমাজকর্মী। সমাজের ভালো কিছু কাজ করে। আর ভালো একটা সমাজ বা উন্নত মানের সমাজ বা দেশ গড়বার জন্য একটা কারখানা, সেটা স্কুল। সেখানে মানুষরা যায় সেখানে একটা ভালো সমাজ বা একটা উন্নত সমাজ গড়বার জন্য যে মানুষগুলোর প্রয়োজন হয়, সেই মানুষগুলো হচ্ছে ছাত্ররা। তো সেই শিক্ষক ওখানে একজন কর্মী। কারখানার কর্মী। সে একটা ভালো সমাজ বা উন্নতমানের সমাজ বা দেশ গঠন করেন, সাহায্য করেন। যদি আমি ধরি একেকটা স্টুডেন্ট একেকটা পার্টস, সমাজে একেকটা পার্টস, তো সেই পার্টসগুলো এক এক করে নিয়ে একটা বড় যখন কিছু হয়ে যায় সেটা হচ্ছে সমাজ। অনেক মানুষ নিয়ে একটা সমাজ তৈরি হয়। যে সমাজটা কত উন্নত হবে পরবর্তীকালে, সেটা একজন শিক্ষকের হাতে তো অবশ্যই দায়িত্ব থাকেই। এইবার হচ্ছে বিষয়টা যে সে শিক্ষক কি করে ছাত্রদেরকে তৈরি করবে। কেমন করে সমাজটাকে দেখতে শেখাবে। এই জীবনটাকে কীভাবে যাপনটাকে কীভাবে সে গ্রহণ করবে এবং জীবনটাকে সে কিভাবে দেখবে, চলার পথটা, একটা আমগাছ, যদি আমি ধরি, সে আমগাছটা অনেক আম হয়েছে, যে টিচারটা চাইলেই একটা স্টুডেন্টকে হয়ত একটা পার্টিকুলার বা দুটো বা তিনটে বা চারটে আম দেখাতে পারে এক টাইমে। কিন্তু সে টিচারটা এরকমও করতে পারে যে একসঙ্গে সব আমগুলোকে দেখব। এইবারে তারপরে আস্তে আস্তে কয়েকটা আম-এর কথা বলল এবং সে আমগুলোকে দেখতে সাহায্য করল। ছাত্রদের কাছে। তো আমি যদি ধরি যে সমস্ত বিষয়ে সমস্ত যে সাবজেক্টগুলো আছে একজন টিচারের কাছে আমগাছটার মত। টোটালটাকে নিয়ে একটা আমগাছ। সেখানে প্রচুর সাবব্জেক্ট রয়েছে। অনেক আম রয়েছে। তো সেগুলোকে একটু বড় করে দেখা, মানে একটু আগে কথা হচ্ছিল যে কীভাবে নাম্বার পেতে হয় নাম্বার পেয়ে পাশ করতে হয় সেটাই আমরা শেখাই। স্টুডেন্টসদেরকে। সেরকম করে না দেখে স্টুডেন্টসটাকে এরকম করে আমরা দেখতে শেখাতে পারি যে একটু বড় করে দেখো সিলেবাসটাকে একটু বড় করে দেখো, একটু উপর থেকে দেখো, তাহলে তুমি অনেকদূর দেখতে পাবে। আমি যদি নীচ থেকে দেখি তাহলে আমি অর্ধেক দেখতে পাব, যদি আমি ছাদ থেকে দেখি, দশ তলার ছাদ থেকে দেখি তাহলে আমি অনেকটা বেশি দেখতে পাচ্ছি। এইভাবে দেখতে শেখানো। বইটাকেও ওইভাবে দেখতে শেখানো। অ্যাজ এ হোল। একটা পার্টিকুলার জায়গায় কনসেনট্রেট করতে না করা আর কি। একটা মানুষের নেওয়ার ক্ষমতা আর দেওয়ার ক্ষমতা কতটা আছে এটা পরিমাপ করা যায় না। কখনোই। আমরা কখনোই তা করতে পারি না। তো একটা বাচ্চাকে তিনবছরের বাচ্চাকে আমরা চাইলে দু তিনটে ভাষা শেখাতে পারি। তার নেবার মত ক্ষমতা থাকে সেই সময়। কিন্তু বড় মানুষরা পারে না। তো এরকম আমি দেখেছিও এবং আমাকে আমার সামনেও এসেছে সেরকম একজন যে একসঙ্গে চারটে পাঁচটা ভাষা শিখে ফেলেছে। তার বাবা-মা-রা কিছু জানে না। তারা দুজনেই আর্টিস্ট। ছবি আঁকে। তো তারা বিভিন্ন দেশে ঘোরে, ঘোরার ফলে তারা দু একটা ভাষা শিখেছে। বাবাও শিখেছে মাও শিখেছে। এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও থাকে। একজন গুজরাতি একজন থাকে কেরালিয়ান। এরকম। তো স্বাভাবিকভাবে গুজরাটি-টাও বাচ্চাটা শিখেছে। আবার কেরালিয়ানটাও শিখেছে, আবার ইটালিতে যেমন ইটালিয়ান ভাষাতেও কথা বলে তো সেটাও শিখেছে। একজন ছাত্রের যে কতখানি নেওয়ার ক্ষমতা এটা একজন মানুষ জানে না। কিন্তু শিক্ষককে সেই বাচ্চাদের বা সেই ছাত্রদের সাইকোলজিটা বোঝার দরকার তার আছে, সেটা শেখার দরকার আছে। এই জন্যই চাইল্ড সাইকোলজি পড়ানো।
    তীর্থদাঃ কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে বলুন।
    না, জিজ্ঞাস্য নয় আমি এইটুকু কথা বলতে চাই যে, একজন শিক্ষক রাজনীতি নাও করতে পারেন। কিন্তু সমাজটাকে বড় করে দেখার মতন মানসিকতা থাকতে হবে। একজন শিক্ষক এরকম একটা রোল প্লে করেন সমাজে। সবাই তো আমরা রোল প্লে করছি, সবাই অভিনয় করছি। এটা একটা বিশাল বড় মঞ্চে। একজন শিক্ষক ও ........।
    সলিলদাঃ আমার মনে হয় ওর প্রশ্নের উত্তর যদি আপনারা দেন তাহলে ভালো হয়। আমি শুধু একটা কথাই বলি, একটা কথা শুধু আপনাকে উলটে বলছি, আপনি একটু ভেবে দেখবেন যে আমি ইংরেজী পড়াই বলে ইংরেজী কথা বলছি, ইংরেজীতে একটা কবিতা পাঠ্য ছিল রবার্ট ফ্রস্ট-এর, “স্টপিং বাই দ্য উডস অন আ স্নোই ইভিনিং”। এটা ক্লাস নাইনের বইতে পাঠ্য ছিল। আমি যেহেতু ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছি সারাজীবন রবার্ট ফ্রস্ট-এর একটা কবিতা অনার্স লেভেলে বা এম এ লেভেলে পড়াতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। এখানে বোঝার জায়গায় অনেক ব্যাপার আছে। তাহলে এই কবিতাটাকে, আপনি যেটা বলছেন সিলেবাসটাকে বৃহত্তর জায়গা থেকে দেখুন, আপনি একটু ভেবে দেখবেন যে এই কবিতাটা যে সিলেবাস-এ যে বইতে আছে, সেটা একজন ছাত্র বৃহত্তর জায়গা থেকে কি করে দেখবে।
    তবে, এটা বলা যায়, ব্যাঙ রান্না কেউ জিজ্ঞেস করবে না। এইরকম কোথা থেকে কোথায় যে কি চলে যায় সেটা বলা খুব মুশকিল হয়। এখন মিলানি সম্পর্কে আরেকটি কথা ওখানে আছে। যেটা ফ্রেইরি সম্পর্কেও খাটে। প্রসঙ্গত, ফ্রেইরির বইটা ও মিলানির বারবিয়ানার এই বইটা দুটো কাছাকাছি সময় বেরিয়েছিল। এবং এই যে চিন্তা-ভাবনাগুলো সেই চিন্তা-ভাবনাগুলো দিয়ে বলা হচ্ছে যে কৃষককে শ্রম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে, লিবারেট করার চেষ্টা। শ্রম থেকে। কিন্তু মিলানির বক্তব্য হচ্ছে, শ্রম থেকে লিবারেট ফারমারকে আমি করব না। আমি এমন একজন ফারমারের কথা ভাবি যে লিবারেটেড ফারমার। নট লিবারেশান ফ্রম লেবার। বাট লিবারেশান অফ দি ফারমার হিম/হারসেলফ। যেটা ফ্রেইরিও বলছেন। যে সে পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে জানবে, এবং একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে, সে পারিপার্শ্বিককে পরিবর্তন করতে শিখবে। এই শিক্ষাটাই, এই কথাটাই ফ্রেইরি বারে বারে বলছেন। খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, মিলানিও সেই কথাই বলছেন।
    সুদীপ দস্তিদারঃ এই বইটা পড়তে গিয়ে আমি এক জায়গায় পেয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে যে চাষ ব্যাপারটা শুনলে মানে আমাদের যেরকম ভাবে আর কি শেখানো হয় কৃষকরা সারাদিন রাত পরিশ্রম করেন, ফসল ফলান। হ্যাঁ্, এবং তার মধ্যে একটা মহত্ব এমনভাবে জড়িয়ে দেওয়া হয়, তাদের শ্রমটা মানে তাদের যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় যে কোন সময় তাদের প্রকৃতির মধ্যে যেতে হয় খুব প্রতিকূল অবস্থাতেও এটা একটা মানে তাদের কাছে অন্ততপক্ষে বেশ বাজে কাজ। সে জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে মানে একজন কৃষক, কৃষকের ছেলে যেভাবে তার কাজটাকে দেখে আর কি, আর আমাদের সাধারন মানুষের কাছে যেভাবে আর কি কৃষক সম্পর্কে কবিতার মাধ্যমে, অন্যান্য গানের মধ্য দিয়ে আসে, তা এই দ্বন্দটা এখানে কিভাবে অ্যাড্রেস করা হবে। যদি আমাদের শ্রমজীবী হাসপাতাল বা এখানে যারা আসছে তারা আমরা যখন বলছি তাদেরকে এ কাজটা শিখতে হবে, কাজটা করতে হবে, তখন তাদের পাশাপাশি কি এটাও একটা ব্যাপার যে শুধু সেই কাজটার মধ্যেই তারা আটকে থাকবে, না হলে তো আমাদের একটা যন্ত্রণা হবে, এই যন্ত্রণার জায়গাটা লাঘব করার জায়গাটা, সেটা কিভাবে হ্যান্ডল করা হবে? এ বিষয়ে যদি একটু আলোকপাত করেন।
    সলিলদাঃ সে বিষয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা বিতর্ক আছে। আমি মনে করি যে এটা শুধু ওই এক জায়গায় একবজ্ঞা ব্যাপার হলে হবে না। এবং শিক্ষার যদি একটা প্রায়র ইন্টারেস্ট থাকে, আগে থেকে যদি ভেবে নিয়ে থাকি, আমি এটা করব, তাহলে তো শিক্ষার পারপাসটাই ডিফিটেড হয়ে যায়, যার জন্য একটা কথা আমি বারে বারে বলি। আমেরিকানরা অনেক খারাপ কাজ করে কিন্তু আবার দু’একটা ভালো কথাও বলে, যেমন আমেরিকানদের একটা কথা আছে, ‘থিংক আউট অব দা বক্স’ – বাক্সের বাইরে চিন্তা করো। ওই জানলা দিয়ে বাইরে তাকাও, এটা যেমন আমি ছাত্র-ছাত্রীদের বলি, তার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলি যে বাক্সর বাইরে চিন্তা করো। তোমার চিন্তাটাকে একটা বাক্সের মধ্যে বন্দি করে রেখো না। চারপাশটা খুলে ফেলো, বাইরে দেখো। যদি তুমি বাইরে না ভাবো, তোমার চিন্তাটাকে যদি বাইরে না নিয়ে যাও তাহলে তুমি কোনদিনই তুমি পারিপার্শ্বিকের বিচার করে সেটাকে বুঝবার জায়গায় যেতে পারবে না। চিন্তাটাকে তোমার বাইরে আনো। কুয়োর ব্যাঙ হয়ে না থাকাটাই ব্যাপার। এবং ফ্রেইরি যেভাবে কথাটা বলছেন, বারবিয়ানা স্কুল কিন্তু একই ভাবে কথাটা বলছেন। কী শিখবে কী শিখবে না। এই জায়গাটা। আমার বক্তব্য আজকে যেটা বলে আমি শেষ করব, সেটা হচ্ছে যে এই যে লেটার টু এ টিচার, লিখেছিল বারবিয়ানার স্কুলের ছেলেমেয়েরা সেরকম তারা আরেকটা চিঠি লিখেছিল, লেটার টু দা জাজেস অ্যান্ড প্রিস্ট। সেইটা ১৯৬৫ সালে কম্পালসারি মিলিটারিতে ট্রেনিং নেবার ব্যাপারে আর্মির কিছু ধর্মযাজক, রিটায়ার ধর্মযাজক তারা একটা কমিউনিকে বা বার্তা প্রচার করেছিল। সেখানে তারা বলেছিল যে কেউ যদি বলে যে আমি যুদ্ধ শিক্ষা নিতে চাইব না কেননা আমি একজন কন্সিয়েন্সাস অবজেকটার মানে আমার বিবেক বলছে যুদ্ধ করা উচিৎ নয় সেইজন্য আমি যুদ্ধের শিক্ষা নেব না তবে তাদের দেশদ্রোহী বলে ধরা হবে। এবং তারা সব ফাদারল্যান্ড-এর বিরোধী। এই কম্যিউনিকে-টা বেরোবার পরে এই যাজকদের কাছে মিলানি একটা চিঠি তৈরি করতে বলেন, ওই স্কুলের ছেলেমেয়েদেরকে, এবং লেটার টু এ টিচার, যেভাবে লেখা হয়েছিল, এই চিঠিটাও সেইভাবেই লেখা হয়। এবং সেখানে পুরোটা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে যে ফাদারল্যান্ড শব্দটা কি রকম একটা মিসনোমার। ভুল বাজে শব্দ। কেননা আমি বলবই অনেক ফাদারল্যান্ড আছে। আমি ইটালিতে থাকি আমার ফাদারল্যান্ড যদি ইটালি হয় তাহলে অস্ট্রিয়ার ফাদারল্যান্ড তো অস্ট্রিয়া, তা আমি যদি অস্ট্রিয়াকে আক্রমণ করি, তাহলে তো আমি তার ফাদারল্যান্ড-এর বিরুদ্ধে গেলাম, এবং অস্ট্রিয়ার যে মানুষটা তার ফাদারল্যান্ড এর পক্ষে লড়ছে, তার বিরুদ্ধে আমি লড়ব? তাহলে তো আমি ফাদারল্যান্ড-এর কনসেপ্টটাকেই আক্রমণ করলাম। (সুদীপঃ মানে যুদ্ধ হলে আমাদের গ্রামটাই ধ্বংস হয়ে যায় ...) ফাদারল্যান্ড এর কনসেপ্ট টা কি? এই যে ফাদারল্যান্ড-এর কনসেপ্ট, ন্যাশানালিজ-এর কনসেপ্ট, এই কনসেপ্ট-এর চেহারা আমরা সবাই দেখছি, এবং বহু লোক বলেছে বহু মানুষ বলেছে, রবীন্দ্রনাথ তো বলেইছেন যে, এই ন্যাশানালিজম জিনিসটা খুব বাজে জিনিস। এটা চলবে না। সেটাই মিলানি বারে বারে বলছিলেন, যে আপনি / আমরা যদি এই ন্যাশেনালিজম এর কথা বলতে থাকি, ফাদারল্যান্ড-এর কনসেপ্ট-কে তুলে ধরি তাহলে কী হবে? যে যুদ্ধ করতে চায়না, তাকে তুমি জোর করে যদি যুদ্ধ করাও তাহলে তুমি শুধু গণতন্ত্র নয়, মানবিকতার সমস্ত উদাহরণকে তুমি অস্বীকার করছ। সেটা তুমি করতে পারো না। এই চিঠি লেখার জন্য মিলানীর বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়। সরকার থেকে মিলানির বিরুদ্ধে একটা মামলা করা হয়, যে তুমি দেশদ্রোহী। যেরকম এখন চতুর্দিকে ঘন ঘন অনেক দেশদ্রোহী বেরোচ্ছে। তো সেই দেশদ্রোহিতার মামলাটা হয়, সেই মামলাটা, প্রথম এটা কোর্টে যায় ১৯৬৫ সালে। এবং যখন এই চিঠিটা কোর্টে পাঠ করা হয় এভিডেন্স হিসেবে তখন জজ বলেন যে এটা মিলানি ঠিকই বলেছেন, এটা ওই যে ফাদার লিখেছেন যে দেশদ্রোহী, এটা ভুল, এবং উনি যেটা লিখেছেন সেটা মানবিকতা আর আইনের জায়গা থেকে এটাকে অ্যালাও করতে হবে। মিলানিকে মুক্ত করতে হবে। কিন্তু তার দুবছর পরে সরকার থেকে বিচারটা আরেকবার করা হয়, আমরা সবাই জানি একই জিনিসের দুবার বিচার হয়না। কিন্তু আবার বিচার করা হয়, এবং সেখানে মিলানিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই যে দোষী সাব্যস্ত করা হয় যে বছর, সেটা ছিল ১৯৬৭ সাল। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার অল্প আগে, মিলানি মারা যান। মিলানির ক্যান্সার হয়েছিল। এবং মিলানির ক্যান্সার ধরা পড়েছিল ১৯৬০ সালে। তখন তো বারবিয়ানার স্কুল চলছে। তখন ওই ক্যান্সার, তখনও ক্যান্সার বলে ধরা পড়েনি, তখন ওটা ব্লাড ডিজিস বলে ধরা পড়েছিল, যেটা পরবর্তীকালে ক্যান্সার হয়, লিউকোমিয়া হয়। তাতে মিলানির রি-অ্যাকশানটা ওই একই রকম ছিল। যে উনি সঙ্গে সঙ্গে ওই ক্যান্সার বা ওই ব্লাড ডিজিসটাকে একটা শিক্ষার পয়েন্ট অব ডিপার্চার বলে ধরে নিয়ে ছেলেমেয়েদের বলেন তোমরা এইটা নিয়ে রিসার্চ করো। তারা তখন চতুর্দিক থেকে বই-পত্তর যোগাড় করে এবং তারা সবাই একেকজন এই বিষয়ে প্রায় বিশেষজ্ঞ হয়েছিল। মানে এই যে, যেকোন বিষয় নিয়ে একটা জ্ঞানার্জনের পথ করে নেওয়া যায়, সেটা কোনদিন করা যাবে না, যদি না আমরা ওই আমরা জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতে পারি, একমাত্র যদি আমরা বাক্সের বাইরে ভাবতে পারি, তাহলেই এটা করা সম্ভব। অ্যানার্কির কথা আমি বলছি না, কিন্তু না ভাঙলে তো হবেও না। তৈরিটা হবে কী করে? অনেকেই বলেন শিক্ষকদের রাজনীতির উর্ধ্বে থাকতে হবে। রাজনীতি শিক্ষকরা কেন করবেন? শিক্ষক কেন কোন রাজনীতির মধ্যে যাবেন? তা আমার বক্তব্য হচ্ছে যে রাজনীতি মানে, তিনোমুলের মেম্বার হওয়া নয়, জীবনকে অনুধাবন করা শেখানোর যে শিক্ষকতা সেটা ডেফিনিটলি একটা পলিটিক্যাল টাস্ক। এই পলিটিক্যাল টাস্ক হিসেবে নিজের কাজকে যদি না দেখা হয় তাহলে শিক্ষকতা করা প্রায় ব্যর্থ।
    শ্রোতার প্রশ্নঃ একজন টিচার যদি কনফিউজড থাকেন যে আমি কী ভাবে পড়াব, আমি হোল সিলেবাসটাকে পড়াব, নাকি শুধু নাম্বার পাওয়ার জন্য, সে বাচ্চাটাকে নাম্বার পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র পড়াব, জীবনে কি হল কি হল না , ডাক্তার হল, না উকিল হল, না চোর হল, ইট ডাজনট ম্যাটার, আমি শুধু নাম্বারটুকু পাওয়াতে চাই। এই জায়গায় কনফিউজড যে আমি একজন প্রকৃত মানুষ তৈরি করতে চাই, না শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত শুধু একজন ব্যক্তি তৈরি করতে চাই।
    সলিলদাঃ আচ্ছা। তো মানুষ তৈরি করার ব্যাপারটা না খুব মুশকিলের। মানে কোন স্কুলে কি মানুষ তৈরি করা হয়? মানে এটাও একটু ভেবে দেখবেন।
    সুচেতনা চন্দঃ আমি বলছিলাম যে একজন শিক্ষক রাজনীতি করবেন কিনা সেটা অবশ্যই তার ব্যক্তিগত ডিসিসান নিতে পারেন। আমি একটা কথা বলতে চাই যে আমি যে কলেজে পড়তাম সে কলেজে কোনরকম ইলেকশন হোতো না। কোনরকম, কোনোরকমেই কিছু হোতো না, এবং পুরো কলকাতা শহরে যখন নানান বিষয় নিয়ে তান্ডব হচ্ছে তখন আমার কলেজ খুব নিরিবিলি এক কোণায়, এবং ছাত্রদের পড়াশুনা দিব্যি চলছে। এবং আমাদের একজন দিদিমনি ছিলেন তিনি খুব গর্বিত ভাবে বলতেন যে যখন নকশালবাড়ি আন্দোলন চলছে সারা কলকাতার সব কলেজ বন্ধ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কিন্তু চলছেই। এবার সেটা উনি মনে করছেন যে সেন্ট জেভিয়ার্স একটা খুব গৌরবময় ব্যাপার আর কি। অন্যান্যদের অন্যরকম মত থাকতেই পারে। সেইখানে পড়ার সুবাদে আমার একটা অনুভুতি হয়েছিল যে, আমি রাজনীতি করব না এই সিদ্ধান্তটাও একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মানে একজনকে বেঁচে থাকতে গেলে দলগত রাজনীতি না হোক, কোন না কোন ভাবে রাজনীতি করতেই হয়। এবং সেখানে বড় ভাবে যদি আমরা সমাজটাকে দেখি তাহলে আরও বেশি করে সেটা চোখে ধরা পড়ে।
    সলিলদাঃ ঠিক। আর তাছাড়া রাজনীতি করব কি করব না এই চয়েসটা আমাদের নেই। মানে রাজনীতি বলতে আমি তৃণমূল করব না সিপিএম করবে সেটা নয়।
    তীর্থদাঃ আমরা একটা বিষয় জানতে একটু আগ্রহী সেটা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে বারবিয়ানা অনুবাদ করা বা বইটা হাতে পাওয়া একটা প্রায় রহস্যজনক পদ্ধতিতে ... সেইটা আমরা অনেকেই জানিনা, সেইটাই একটু জানার। আর দ্বিতীয় কথা যেটা হল যে এই বইটা লেখার পর তথাকথিত শিক্ষক মহল থেকে আপনার কাছে কি কি ধরনের প্রতিক্রিয়া এসছে। যারা এবারে মানে যাঁন সচেতন শিক্ষক, তারা কি, মানে তাদের কি কোন অসহায়তা আছে, যে সলিলবাবুর বইটা ভালো লেগেছে কিন্তু আমরা পারছি না অথবা আমরা চেষ্টা করিনি কিছু, অথবা এটা অবাস্তব, এরকম কিছু যদি থাকে। কারণ আমাদের এখানে দু একজন শিক্ষক আছেন যারা স্কুলে চেষ্টা করেন প্রায়শই অন্য কিছু করতে। সেইটা সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা কিছু একটু বলে তারপর যদি শেষ করেন।
    সলিলদাঃ আচ্ছা, আমি বইটা কি করে পেয়েছিলাম সেটা বলি। ঘটনাচক্রে আমি একদিন ওয়েলিংটন স্কোয়ারে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফেরার পথে ওখানে পুরনো বই ফুটপাথে বিক্রি হত সেগুলো দেখছিলাম। দেখতে দেখতে এই বইটা পাই। ‘লেটার টু এ টিচার’ নামটা দেখে মনে হল যে আমিও তো একজন শিক্ষক, কী লিখেছে দেখি। তারপরে বইটা বাড়িতে কিনে নিয়ে গেছি। এরকম অনেক বই তো আমরা কিনি, সঙ্গে সঙ্গে পড়া হয় না। ওটাও এরকম সঙ্গে সঙ্গে আমার পড়া হয়নি। প্রায় ছয় মাস বইটা পড়েছিল, তারপরে আমি বইটা পড়ি। বইটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বন্ধুদের উত্তেজিত হয়ে বলি এরকম একটা বই পড়লাম। এবং বইটা পড়ে আমার প্রথম যেটা মনে হয়েছিল সেটা হচ্ছে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তো একদম ফালতু এবং আমার তো এক্ষুনি চাকড়িটা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে প্রকৃত শিক্ষকতার জায়গায় যাওয়া উচিৎ। তো সেটা হয়নি। খাওয়া টাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। চাকরিটা ছাড়তে পারিনি। খানিকটা মজবুরি তো থাকেই। কিন্তু আমরা ঠিক করলাম, এই বইটাকে কেন্দ্র করে আমরা আরও কিছু অন্যভাবে কাজ করব। শিক্ষক আন্দোলন করে যে কিসসু হবে না তা আমরা বুঝে গেলাম। ঠিক করলাম এবার তাহলে আমরা অন্য কিছু করার কথা ভাবি। কিন্তু আমি জানতাম না তখন যে কলকাতায় এই বইটা আরো কিছু মানুষের কাছে আছে। সেটা হচ্ছে সায়েন্স কলেজের রবীন মজুমদার, রবীন চক্রবর্তী ওদের কাছে। এই বইটা ওদের কাছে ছিল এবং ওটা ওরা মিমিওগ্রাফ করে বিভিন্ন জায়গায় অনেককে দিয়েছিলেন। খুব ছোটো পরিসরে। এবং তখন আমার যতদূর মনে পড়ছে রবীন মজুমদারের কাছে বোধ হয় শুনি যে ওই বইটার একটা গুজরাতি সংস্করণ আছে। ভারতীয় ভাষায় গুজরাতিতে এটা প্রথম অনুবাদ হয়, এবং ওই গুজরাতি সংষ্করণটাও বোধ হয় ওনাদের কারো কাছে ছিল। আমার ভালো মনে নেই। তারপরে তো ওদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়।
    এবারে বইটা বেরোবার প্রক্রিয়াটা একটু অদ্ভুত হয়েছিল। বইটার অনুবাদ হয়ে গেছে। আমি উলটে পালটে দেখেছি, আবার পুলকরাও ছিল, ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছে কে ছাপবে বইটা। এখন এক হতে পারত তখন আমরা কথাশিল্পে বসতাম, পত্রিকা বের করতাম, কথাশিল্প যদি বইটা বার করে। কিন্তু কথাশিল্প-এর তখন বই বার করার মত পরিস্থিতি খুব একটা ছিল না। এবং কথাশিল্পের বই ছাপা হলে সে বই প্রচার-ট্রচার ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের সবারই একটু সন্দেহ ছিল। তখন আমাকে একজন বলল যে এটা অনুষ্টুপকে দিন। সে তো আমাদের অনিল আচার্য। অনিল আমাদের সবার বন্ধু মানুষ। অনিলের সঙ্গে একদিন দেখা হল, অনিলকে বললাম, অনিল, এরকম একটা বই তুমি কি ছাপবে ? তো অনিল তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে আমাকে বলল, আমাকে পড়ে দেখতে হবে। আমাকে একটু ভাবতে হবে। এটা আরও কয়েকজনকে পড়াতে হবে, আমি বললাম ধুত্তোর! বলে চলে এলাম। তখন ভাবলাম যে আমি নিজেই ছেপে নিই। তো সেটা আর হল না, ইতিমধ্যে দীপাঞ্জন রায়চৌধুরী, আমাকে বললেন যে সতুবদ্যির কাছে চলো। শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত। বাউলমন প্রকাশনের মালিক। তো শত্রুজিৎ বাবুর কাছে গেলাম, উনি বললেন যে দেখুন আমাদের এখানে কেউ বাংলা লিখতে পারেনা। দিয়ে যান বই। দেখব পড়ে। বইটা আর অনুবাদটা রেখে এলাম। তারপরে একদিন উনি ফোন করে আমাকে খবর দিলেন যে আপনি আসুন। তো আমি গেলাম। আমি বাংলা তো লিখতে পারি না, সুতরাং কি দাঁড়িয়েছে ব্যাপারটা কে জানে? তো উনি বললেন যে দেখুন, বাংলা এখানে একজনই লিখতে পারে সে হচ্ছে আমি। এবং আপনাকে আমি বলতে রাজি আছি যে, যে দ্বিতীয়জন বাংলা লিখতে পারে সেটা আপনি। এটা আমি বলতে রাজি আছি। আমি বললাম ভালো কথা। এবং উনি, আমি রসিকতা করে বলছি, কিন্তু উনি না থাকলে বইটা বের হত না, মানে অন্তত তখন বের হত না। তারপর তো উনি বার করলেন বইটা অসম্ভব খারাপ ছাপা-টাপা এবং আমি প্রুফ দেখেছিলাম কাজেই ভুলে ভর্তি ছিল। পরবর্তীকালে সেগুলো ঠিক করা হয়। এবং সেই বই বেরোলো। এবারে বিভিন্ন লোক বই পড়ছে। আমার কলেজের বিভিন্ন লোককে আমি একটা করে উপহার দিয়েছি। তখন তো তিরিশ টাকা দাম ছিল। যাদের উপহার দিয়েছি, তাদের আমার ধারণা বেশির ভাগই পড়েননি। একজন দুইজন ছাড়া। আমাদের একজন ছিলেন, তিনি আকাউন্টেন্সির অধ্যাপক ছিলেন আকাউন্টেন্সিতে তাঁর যে বই ছিল, আপনারা আকাউন্টেন্সির বই কেউ দেখেছেন কিনা জানি না, সে বই আকাউন্টেন্সির বই যেমন হয় তেমন। তো শংকরদা আমাকে বললেন, কি কারনে আমার একটা অপারেশান-টপারেশান হয়েছিল, আমি নার্সিং হোমে ভর্তি ছিলাম, তো শংকরদা আমাকে দেখতে এসেছেন, এসে বললেন যে তুমি তো হোমিওপ্যাথি খাইবা না, ঐজন্য এগুলো হয়। আমি বললাম, শংকরদা বইটা পড়েছেন? শংকরদা বললেন, হ্যাঁ, পড়েছি। তুমি কি বলো, মুড়ি মিছরির এক দর? আমার মনে আছে। বইটা সম্পর্কে একটা লাইনের বক্তব্য, ‘মুড়ি মিছরির কি এক দর?’ আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, শংকরদা বললেন, তুমি কি করবে? তুমি তো অনুবাদ করেছ। সবাই ভালোই বলেছে, খুব একটা খারাপ বলেনি। এইটা। তারপর থেকে যার সঙ্গেই কথা হয়েছে তিনিই বলেছেন বইটা অসাধারণ। এবং অসাধারণ বলার পরে আমি কি বলেছি সেটা আমি আপনাদের আগেই বললাম। এবং ওই বসতে হবে, ইডিওলজিক্যাল আলোচনা করতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি কথায় কাজ চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে অচিন্ত্য কি যেন? রামকৃষ্ণর জীবনী লিখেছেন, অচিন্ত্য সেনগুপ্ত। অচিন্ত্য সেনগুপ্তর যে বইগুলো রামকৃষ্ণকে নিয়ে সেগুলো বেরোবার পর একটা ছড়া ছিল আপনারা জানেন কিনা জানিনা, ‘ঠাকুর তোমায় কে চিনত, যদি না থাকত অচিন্ত্য’। এখনো আছেন। তো সেরকম ‘আপনাকে বলছি স্যার’ না বেরোলে আমাকে কেউ চিনত না। এটা ঘটনা। না, সত্যি সিরিয়াসলি। এই বইটা লিখে, বইটা পড়ে, অনুবাদ করে এবং এই সংক্রান্ত আরও অনেক বই পড়ে আমার যে আনন্দ হয়েছে কাজটা করে তা আমাকে খুবই পরিপূর্ণতা দিয়েছে অনেকক্ষেত্রে। এবং তার পরবর্তীকালে আরও অনেকে বইটা পড়েছেন, অনেকবার বইটা ছাপা হয়েছে, কেউ কেউ বলে আরও ছাপা হবে, আমি জানি না। তো সেটা বাংলা বই হিসেবে ভালোই। এ ধরনের বই মানে অখ্যাত লোকের অনুবাদ করা বই, তার এত খাতির, সেদিক থেকে খুবই খুশির ব্যাপার। এবং ‘আপনাকে বলছি স্যার’ এই বইটা নিয়ে না আরো বহু কিছু আলোচনা হওয়া উচিত। কারণ এই বইটার মধ্যে অনেক কথা আছে যেগুলোর সঙ্গে অনেকেই একমত নন। যদিও বইটাকে ভালোই বলছেন তাঁরা। পজিটিভ তাদের বক্তব্য, কিন্তু অনেক বক্তব্য আছে, অনেক কথা আছে। ফ্রেইরি সম্পর্কে যেমন অনেক কথা আছে। ফ্রেইরিকে অনেকে বিপ্লব বিরোধী বলে, এই বইটাকেও অনেকে মনে করেন যে খুব অসুবিধেজনক ব্যাপার, বিশেষ করে মার্ক্সবাদের দিক থেকে খুবই সমস্যার, এইসব, ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব আছে। কিন্তু অ্যাট দা সেম টাইম আমি বলব, এই বইটা, বা ফ্রেইরির লেখা যে কথাটা মূলত বলে, যে শিক্ষককে একজন নাশকতামূলক ব্যক্তি হতে হবে, উনি যদি সাবভার্সিভ অ্যাক্টিভিটি না করেন তাহলে উনি কিছুই শিক্ষার কাজ করেননি। এবং শিক্ষক নয়, আমি আবার বলব, বলা উচিত জ্ঞানার্জন সহায়ক। কাউকে কিছু শেখানো যায় না।
    ত্রিদিব দস্তিদারঃ সলিলদা আপনি এতক্ষন যা বললেন তার মধ্যে আমি সংযোজন করব না, কিন্তু আপনার একটা কমেন্ট মনে পড়ল, (এখানে নাম-টাম বাদ দিলাম ত্রিদিব বাবু) মূলত ফেসবুকে, উনি বলেছিলেন যে এর ইংরেজী বইটা এত সুন্দর একটি বই এত চমৎকার লেখা, বাংলা ভাষান্তরটা একেবারে যা-তা, কিছুই পড়ার মত না। এবং তার প্রত্যুত্তরে একজন মন্তব্য করেছিলেন, যে বইটি কতটা ভালো কতটা মন্দ আমি জানিনা, তবে আমার মত অল্প শিক্ষিত মানুষের পক্ষে বইটা যথেষ্টই ভালো। তো সুতরাং আমি ওই কোন মন্তব্য করিনি, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে অনুবাদ কারো কাছে অত্যন্ত খারাপ লাগতে পারে, অনুবাদ কারোর কাছে অত্যন্ত ভালো লাগতে পারে, এমনকি মূল বিষয়টা যিনি করেছেন তার কাছে জঘন্য লাগতে পারে, কিন্তু আমি যেটা বলতে চাইছি সেটা হচ্ছে যে এই যে প্রয়াসটা এতগুলো মানুষের মধ্যে এই যে বইটা ছড়িয়ে গেল, তার লেখার মধ্যে দিয়ে সেই লেখার মান নিয়ে চর্চা করুন বা না করুন বইয়ের বিষয়বস্তুটা যে এতগুলো মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষার মাধ্যমে এত বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে পৌঁছে গেল, আমরা অনেকেই ইংরেজী পড়তে পারিনা, হয়ত বুঝতেও পারিনা, সেই দিক থেকে আমি বলব, যে অনুবাদটার মূল্য কিন্তু অসীম। তার মান যাই হোক না কেন। আমি প্রয়াসটাকে আমরা সকলেই মনে হয় এখানে যারা উপস্থিত আছি এই প্রয়াসটাকে আমাদের অন্তত আমরা আপ্রেসিয়েট অন্তত ব্যক্তিগতভাবে আমি করব, কোন দুজন বা তিনজন বক্তার বক্তব্যে কথা চালাচালির মাঝখানে ঢুকে কিছু বলাটা অসমীচিন বলে আমার মনে হয়েছে। আমি বলব যে এই প্রয়াসটা সার্থক প্রয়াস। এই অনুবাদটা আমার মনে হয়েছে সকলের পড়া খুব দরকার।
    সলিলদাঃ আর এখানে একটু বলি, তার সঙ্গে সঙ্গে নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞান বইটা পড়বেন।
    সুদীপ দস্তিদারঃ এক কথায় কি কিছু বলা যায় বইটা নিয়ে?
    সলিলদাঃ অনেক কথা বলার আছে এটা নিয়ে। এক কথায় যেটা বলে দিচ্ছি, সেটা হচ্ছে যে গত চার বছরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা হচ্ছে আম এবং দুধে মিশবে না। আলাদা থাকবে। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের চক্কর থেকে না বেরোলে, কোথাও কোন প্রকৃত জ্ঞানার্জন হবে না। এটা নিয়ে আমি এখন কনভিনসড। এবং আরেকটা ব্যাপারে কনভিনসড যেটা আমি বারে বারে বলছি যে শিক্ষক যদি নাশকতা, চিন্তার জগতে, শিক্ষায়তনের দেওয়াল ভাঙার কাজে না করেন তাহলে তার শিক্ষকতার কোনো দাম নেই। হালিশহর বিজ্ঞান পরিষদের কাছে আমার একটা সাজেশান আছে, সেটা হচ্ছে যে, এই বিষয়ে প্রচুর বই আছে, প্রচুর আলোচনা আছে, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, সেই বইগুলোর সাংঘাতিক দাম। আড়াই হাজার তিন হাজার চার হাজার টাকা দাম। সেইসব বই আমরা সবাই কিনে পড়তে পারব না। আমি খুব কষ্টেসৃষ্টে কয়েকটা সংগ্রহ করেছি, আপনারা যদি বলেন, সেইগুলোকে জেরক্স করে আপনাদের এই লাইব্রেরিতে রাখুন। বইগুলো পড়া খুব দরকার।
    তীর্থদাঃ আমরা বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে অবশ্যই চেষ্টা করব। ... আবার সলিলদাকেই আসতে হবে। আর আজকে যারা এসছেন সলিলদার সঙ্গে তাঁদের সবাইকে আমরা আমাদের বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাই, সত্যি সত্যি এতগুলো মানুষকে আমরা আমাদের এই সামান্য আয়োজনে পেতে পারব এটা আমাদের আশাতীত ছিল। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আমরা আবার পরবর্তী আলোচনার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ আগস্ট ২০১৬ | ২০৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • π | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৬ ০৩:১৭55776
  • খুব ভাল লাগল। আরো ভাল করে ধরে পড়তে হবে। এই বিক্ল্প শিক্ষা নিয়ে হয়তো আপনাদের কাজ , চিন্তাভাবনা একদিন মূলধারায় আসবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন