এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • স্কটিশ ক্যাফে

    Ritwik Kumar Layek লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৯ জুন ২০১৬ | ৬৭০৮ বার পঠিত
  • স্কটিশ ক্যাফে
    *******************************
    (১)
    মহাযুদ্ধের ক্ষত তখনও ইউরোপের শরীরে শুকোয়নি, তার মধ্যেই বেজে উঠল আরো একটা যুদ্ধের দামামা। শক্তি বাড়িয়ে হিটলার তখন ইউরোপের সম্রাট হবার উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করছে। কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যাবে নয়-দশ কোটি মানুষ। কিন্তু সেই মহামৃত্যুমিছিলের পাশাপাশি একটা আলোর রেখাও ছিল। দুই যুদ্ধের সমসাময়িক সময়্টা সমস্ত দিক থেকেই ইওরোপে আইকনিক। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উর্বরতম সময়। গোটিঙ্গেনে তখন গাউসের সোনার তরী সোনার ফসলে ভরে ঊঠেছে। কেম্ব্রিজ-ইকোল পলিটেকনিক-কোপেনহেগেন-সেন্ট পিটাসবার্গে তখন জোর কদমে এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই গ্রেট পার্জ শুরু হবে। শুরু হবে ঈহুদীনিধন আর ঈহুদীদের ইউরোপ ছেড়ে চলে যাওয়া। সাজানো ইউনিভার্সিটি ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেবেন আইনস্টাইন-বোর-পাউলি-ফার্মি রা। প্রিন্সটন-হার্ভার্ডের স্বর্ণযুগ শুরু হবে। এসব গল্প সবারই জানা। তবে ইউরোপের পাওয়ারহাউসগুলোর বাইরেও যে কজন পাগল ভবিষ্যতের অংক কষছিলেন, স্কটিশ ক্যাফে তেমনই এক পাগলের গল্প।
    পোল্যান্ডের লোভভ শহরটা ইউরোপে উল্লেখযোগ্য শহর কিছু নয়। বহু হাতফেরতা এই শহরের নামও বদলেছে বারে বারে। ১২৭২ থেকে রুথেনিয়ার রাজধানী এই শহর ১৩৩৯ খ্রীস্টাব্দে পোল্যান্ডের অধীনস্ত হয়। ১৭৭২ সালে গ্যালিসিয়া-লোডোমেরিয়ার (অস্ট্রিয়া) রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে লোভভ। নতুন নাম হয় লেমবার্গ। মহাযুদ্ধের পর আবার পোলিশ রিপাবলিকের অধীনে, ফিরে আসে পুরোনো নাম। সোভিয়েতরা লোভভ দখল করে ১৯৩৯ এ। ওপারেশন বারবারোসা শুরু হতে সোভিয়েত ফিরে যায়, জার্মানরা কচুকাটা করে লোভভে। হিটলারের পরাজয়ের পর আবার সোভিয়েত, তারপর গ্লাস্তনস্তোত্তর পৃথিবীতে লিভিভ হল ইউক্রেনের সপ্তম বৃহত্তম শহর।
    ***************
    (২)
    ১৯৩৯ এর জুনের এক সকাল। স্ট্যান উলাম আর স্ট্যান মজুর, দুই বন্ধু স্কটিশ ক্যাফেতে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। লোভভ শহর তখন শান্ত, কোনও তাপ উত্তাপ নেই। সকাল বেলায় সবাই কাজে বেরিয়েছে। স্টেফান বানাক তখনও এসে পৌঁছান নি। আজ আড্ডার বিষয় ফাংশানাল অ্যানালিসিস নয়। আজ কথা হচ্ছে ভবিষ্যত নিয়ে। উলাম লোভভেরই ছেলে, কিন্তু বছর তিনেক হল ফন নয়ম্যানের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। হার্ভার্ডে সেমিস্টারগুলো কাটিয়ে গ্রীষ্মে চলে আসেন লোভভে। বন্ধুদের সাথে অংক কষতে।
    উলাম একটু ইতঃস্ততঃ করে বললঃ 'মজুর, বোঝাও না তোমার ঐ খড়ুশ অ্যাডভাইসার কে। চল সবাই মিলে চলে যাই হার্ভার্ডে। অসুবিধে হবে না কিছু। নয়ম্যানের সাথে আমি কথা বলে ব্যবস্থা করবো। অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ওনার অনেক ক্ষমতা। '
    মজুর বললঃ 'তুমি কি জানো না বন্ধু লোকটাকে? আর এই স্কটিশ ক্যাফে ছেড়ে উনি কোথাও যাবেন না। কিন্তু যুদ্ধ যে আসছে সেটা বুঝতে পারছি।' উলাম বলল 'কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কি আবার একটা যুদ্ধ হবে? মনে হয় না। জার্মানী হার সহ্য করতে পারছে না তাই লাফাচ্ছে। তবে ওতটাও ভয়ের হয়ত কিছু নেই। মিউনিখ বা চেকোস্লোভাকিয়ার মত ঘটনা কিছু ঘটবে। কিন্তু তার বেশী কিছু হবে না বলেই মনে হয়।' ঘন ঘন মাথা নেড়ে মজুর বলল 'যুদ্ধ অনিবার্য। তবে খাতাটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। জার্মান বাহিনী বা অন্য কোনও বাহিনী ঢুকে পড়ার আগেই খাতাটা লুকিয়ে ফেলতে হবে। যাতে ঐ মণিমুক্তোগুলো হারিয়ে না যায়।' উলাম সায় দিল। দুজনে মিলে ঠিক হল ইউনিভার্সিটির ফুটবল মাঠের উত্তর দিকের গোলপোস্টের নিচে পুঁতে দেওয়া হবে। বিশ শতকের সেরা অংকগুলো তো আর হিটলারের হাতে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।
    খড়ুশ প্রফেসরের গলার আওয়াজে দুই বন্ধু চমকে উঠল। স্টেফান বানাক দুষ্টুমিভরা গলায় বলে উঠলেন, 'কি উলাম, অ্যামেরিকার লোকজন অংক করতে পারছে না নাকি? নাকি তোমার ওখানে মন বসছে না?'
    উলাম হাসে। বানাক গম্ভীর গলায় বলেন 'হাসিঠাট্টা অনেক হয়েছে। এবার কাজ শুরু করা দরকার। মজুর, তোমার সেপারেবিলিটির অংকটার কি খবর? অ্যাই ব্যাটাচ্ছেলে জোসেফ, খাতাটা দিয়ে যা তো।'
    ক্যাফের ওয়েটার গুটি গুটি পায়ে নিয়ে আসে তিনটে গরম কালো কফির কাপ আর দোকানের এক গোপন কুঠুরী থেকে বের করে আনে বাঁধানো খাতাটা। তিনজন রাগী যুবক কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ডুবে গেলেন বানাক স্পেসের গোলকধাঁধায়। এখন ঘন্টা তিনেক ওঁদের ঘাঁটানো মানা। ক্যাফের কর্মচারীরা সেটা জানে।
    **********************
    (৩)
    লোভভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটা যেখানে শেষ হচ্ছে তার সামনের রাস্তাটা পেরোলেই তিনশ ফুটের ব্যবধানে দুটো ক্যাফেটেরিয়া, ক্যাফে রোমা আর স্কটিশ ক্যাফে। প্রফেসর আর ছাত্রদের ভিড় লেগেই থাকতো সারাদিন। রোমা বেশী নামী ছিল। ডাকসাইটে প্রফেসররা ওখানেই বসতেন। প্রতি শনিবার পোলিশ ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটির লোকাল চ্যাপ্টারের সেমিনার হয়ে যাবার পর ওখানেই বসত তারকাদের সমাবেশ। সেমিনারগুলো ছিল ফর্মাল রিপোর্টিং। আসল আলোচনা হত রোমায়। ১৯৩০ এর আগে লোভভের খ্যাতির বিড়ম্বনা তখনও শুরু হয়নি। উলাম তখনও ছাত্র। গুটিশুটি হয়ে শুনতে যেত সেমিনার। স্তজেক, রুজিউইক, লোমনিকি, কুরাতৌস্কি, স্টেনহৌস, সিয়েরপিনস্কি, বানাক, আউয়েরবাক, নিকলিবর্ক রা কথা বলছেন। আর উলাম শিখছে অংকের নানান দিক। লজিক, সেট থিওরী, রিয়েল অ্যানালিসিস, ফাংশানাল অ্যানালিসিস, টোপোলজির দিকচিহ্ন গুলো তৈরী হচ্ছে। ফ্রান্স-জার্মানী-রাশিয়ান স্কুলের বাইরে তৈরী হচ্ছে পোলিশ স্কুল। ঐতিহ্য কম হলে কি হবে, জিনিয়াসের অভাব নেই পোল্যান্ডে।
    রোমায় দাবাও চলত খুব। আউয়েরবাক, স্তজেক, নিকলিবর্ক রা সবাই দাবাতে অভিজ্ঞ ছিলেন। বানাক খেলতেন না। তবে খেলা দেখতেন আর খেলার মাঝেই নানান দান বা বোর্ডের অবস্থার অ্যানালিসিস করতেন। খেলোয়াড়রা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষেপে যেতেন। বানাকের তাতে থোড়াই কেয়ার। কেও কিছু বললে টাইমস ম্যাগাজিনে বেরোনো একটা চিঠির রেফারেন্স দিতেন। একজন বৃটিশ ঐ একই জিনিস করায় লন্ডনের এক ক্লাব থেকে তেনাকে বের করে দেওয়া হয়। তখন তিনি টাইমস ম্যাগাজিনে চিঠি লিখেছিলেন যে 'স্বাধীন ইংলিশম্যান হিসেবে আমার বাকস্বাধীনতা আছে। আর সেই বাকস্বাধীনতা আমাকে ক্লাবে দাবা খেলা দেখতে দেখতে বোর্ডের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার অধিকার দেয়।' চিঠির সুবাদে নাকি ক্লাব দুঃখপ্রকাশ করেছিল।
    সুতরাং বানাকেরও স্বাধীন পোল হিসেবে বাকস্বাধীনতা আছে।
    পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব লোভভকে প্যারিসের মত মুক্তচিন্তার পীঠস্থান করে তোলে খুব কম সময়ের মধ্যে।
    রোমার সুদিন বেশীদিন রইল না। এই অংকের পাগলগুলোর অধিকাংশ সময় সঙ্গে টাকা থাকতো না। তাই সব ধারের খাতায় লিখতে হত। রোমার মালিক একদিন কড়াভাবে বললেন প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন মেটাতে। ধারের স্বাধীনতার প্রতীক স্টেফান বানাক রোমাকে ত্যাগ করলেন। স্কটিশ ক্যাফে হল নতুন আড্ডাস্থল।

    ******************
    (৪)
    ক্রাকো শহরে (তখন অস্ট্রিয়াতে) স্টেফানের জন্ম ১৮৯২ সালে। মা-বাবার বিয়ে হয়নি ও তাঁরা একসাথে থাকেনও নি। স্টেফান মানুষ হতে থাকে দিদিমার কাছে অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে। ক্রাকোর জিমনাসিয়ামে স্কুলের পড়া শেষ করে ১৯১০ এ লোভভের পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় স্টেফান। গ্র্যাজুয়েশনের আগেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পরীক্ষা আর দেওয়া হয় না। ডিগ্রী ও না। শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় মিলিটারীতে যোগ দিতে হয়নি স্টেফানকে। ১৯১৪ তে ক্রাকোতে ফিরে গিয়ে জাগিলোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়। কিন্তু এ কদিনে পরীক্ষা জিনিসটার উপরই একটা ঘৃণা জন্মেছে। কোনও ডিগ্রীই হয় না। তবে গণিতে পারদর্শিতা ততদিনে জন্মে গেছে। ১৯১৭ তে ক্রাকোর এক পার্কে ঘটে গেল একটা ম্যাজিক। সদ্য প্রফেসরি পাওয়া হুগো স্টেনহৌস পার্কে জগিং করতে গেছ্লেন। শুনলেন বেঞ্চে বসে একটি বছর পঁচিশের ছেলে অন্য একজনকে লেবেগ ইন্টিগ্র্যাল বোঝাচ্ছে। লেবেগ ইন্টিগ্র্যাল তখন নতুন থিওরী। খুব বেশী লোক বোঝে না। ডেভির ফ্যারাডেকে আবিষ্কারের মত স্টেনহৌস আবিষ্কার করলেন স্টেফান বানাককে। সঙ্গে নিয়ে গেলেন লোভভে। যুদ্ধশেষে শুরু হল আবার পড়াশুনা। কোনও পরীক্ষাই পাস ছিল না। সরকার থেকে বিশেষ অনুরোধ করে মাস্টার্সের প্রথাগত ডিগ্রী ছাড়াই শেষ হল ডক্টরেট। স্টেনহৌসের কাছেই কাজ করে ডক্টরেট ও হ্যাবিলিট্যাট পেলেন স্টেফান ১৯২০ ও ১৯২২ খ্রীস্টাব্দে। ১৯২০ তে বিয়ে হল লুসিয়ার সাথে। উইনিভার্সিটি অফ লোভভে চাকরীও ঐ ১৯২২ এ।

    **************
    (৫)
    স্কটিশ ক্যাফের মালিক ছিল খুব দিলদরিয়া। টাকা পয়সার মত তুচ্ছ জিনিসে ঝামেলা তো করতই না, এমনকি মার্বেল টেবিলের উপরে রঙিন চক দিয়ে অংক করলেও আপত্তি করত না। আর প্রফেসররা ৩-৪ ঘন্টা বসে এক কাপ কফি খেলেও আপত্তি ছিল না। এরকম পরিবেশে অংক না হয়ে পারে। কিন্তু মুস্কিল ছিল একটাই। টেবিল প্রতিদিন রাত্রে জল দিয়ে ধোয়া হত। অমূল্য অংক রাশি প্রতিদিন ধুয়ে ড্রেনে চলে যেত। এই মহাসমস্যা নিয়ে স্টেফান একদিন বাড়িতে দুঃখ করছিলেন। লুসিয়াকে বলছিলেন, 'ব্যাটাচ্ছেলেগুলোর আক্কেল দেখো। অংকের মূল্য বোঝে না, শুধু ক্যাফে ঝকঝকে রাখতেই শিখেছে।' লুসিয়া বুঝলেন ভয়ানক সমস্যা। ক্যাফের টেবিলগুলো ধুয়ে মুছে সাফ করা যে কত ক্ষতিকর তা ঐ মহামূর্খ ওয়েটারেরা কি করে বুঝবে? লুসিয়া উপায় বের করলেন। একটা বাঁধানো মোটা খাতা আর কলম কিনে নিয়ে গেলেন ক্যাফেতে। একজন ওয়েটারকে ডেকে বললেন যে প্রফেসররা এলেই এই খাতা আর কলম বের করে দিতে। আর ওনারা উঠে গেলেই আবার যত্ন করে তুলে রাখতে। আর খাতার যেন কোনও ক্ষতি না হয়। ওয়েটার কাঞ্চনমূল্যে রাজি হল। সফল পুরুষের সাফল্যে নারীর ভূমিকার স্টিরিওটাইপে আরো একটি গল্প নিজের অজান্তেই জুড়ে দিলেন লুসিয়া।

    ***********

    (৬)
    মার্ক ক্যাক স্কটিশ ক্যাফের কনিষ্ঠতম সদস্য। ওর উপর ভার পড়ত ক্যাফের বিদেশী অতিথিদের আপ্যায়নের। বিদেশী অতিথিরাও ততদিনে জেনে ফেলেছিলেন এই ক্যাফের নাম। হ্যাডামার্ড, টোয়েপলিজ, নয়্ম্যান সবাই চিনতেন এই ক্যাফে। ১৯৩৮ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাররি ডক্টরেট নিতে এসে ক্যাফেতে হাজির হলেন স্বয়ং অঁরি লেবেগ। পোলিশ ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটির লোভভ চ্যাপ্টারের সেক্রেটারী স্ট্যান উলাম তখন যুক্তরাষ্ট্রে। কার্য্যনির্বাহী হিসেবে মার্ক এর উপর দায়িত্ব পড়ল লেবেগ কে শহর, ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখানোর। মার্ক খুব উত্তেজিত। বানাকও মার্ককে বলে দিয়েছেন যে বুড়োর কাছে ইন্টিগ্রেশন শিখে নিতে। কিন্তু লেবেগের আবার তখন আবার মেজার, ইন্টিগ্র্যাল, প্রজেকশন, বোরেল সেট ইত্যাদিতে আগ্রহ নেই। উনি এখন ক্লাসিক্যালে মগ্ন। উনি এখন লেকচার দেন রুলার আর কম্পাস দিয়ে কিকরে নানান জটিল জ্যামিতিক নক্সা বানানো যায় তাতে। মার্কের অনুরোধ অবজ্ঞা করে বুড়ো গোটা রাস্তা শহরের প্রাচীন গীর্জা গুলোর ইতিহাস নিয়ে কথা বলে গেলেন। ওনার ইতিহাসে খুব উৎসাহ। আর লোভভ শহরটা পাশ্চাত্য বলতে যা বোঝায়, তার পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় এখানে একটা এশীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে। ক্যাথলিক মতের তিনটে মূল শাখা অর্থাৎ গ্রীক, রোমান আর আর্মেনিয়, তিন মতেরই গীর্জা ছিল লোভভে। অঁরি তো বাচ্চাদের মত লাফাতে লাগলেন। পোল মার্কের কাছে ফরাসী গণিতজ্ঞের ইতিহাসপ্রীতি যেমন অদ্ভুত লাগছিল, অঁরি কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না, যুবক মার্ক কিকরে ইতিহাসে এতো নির্বোধ। যাই হোক শহর দেখা সাঙ্গ করে পাঁচটার সময় অঁরি হাজির হলেন ক্যাফেতে। জনা পনেরো মানুষ হাজির অঁরিকে সম্বর্ধনা দিতে। ওয়েটার এসে মেনুকার্ড দিয়েছে। অঁরির ফরাসী গরিমা আবার চাড়া দিয়ে উঠল। মেনু ফেরত দিয়ে বললেনঃ 'ধন্যবাদ, আমি শুধু সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত খাবার খাই।' ফরাসী স্টাইল বলে কতা!
    উদ্ধারকর্তা হয়ে দেখা দিলেন স্টেফান বানাক। আর এক ফরাসী অঁরি পঁকারের কথা উদ্ধৃত করে বললেনঃ 'কখনও সেই খাবার খাবেন না, যা সীমিত সংখ্যক শব্দে সংজ্ঞায়িত করা যায় না'। পঁকারের দর্শণের সাথে পরিচিত লেবেগ খুশী হলেন।
    সীমা-অসীমের সেই কূট সংজ্ঞার মধ্যে আর কনিয়াক, কফি ও সিগারের ধোঁয়ায় এ যুগের দ্রোণাচার্য্য আর একলব্যের দেখা হল।

    ***********
    (৭)
    গোটিঙ্গেনে কার্ল ফ্রেডেরিখ গাউসের মত পোল স্কুলের মেন্টর ছিলেন হুগো স্টেনহৌস। টোয়েপলিজের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু পড়াশুনা করেছিলেন ফ্রান্স ও জার্মানীতে। তারপর দেশে ফিরে আসেন। মহাযুদ্ধের অবসানে পোল্যান্ডের দুই শহর ওয়ারশ ও লোভভে গড়ে ওঠে গণিতের দুই মহাকেন্দ্র। ওয়ারশ তে টোপোলজি, লজিক আর লোভভ এ অ্যানালিসিস আর প্রোবাবিলিটি। আর গোটিঙ্গেনের ডেভিড হিলবার্টের পরের পর্যায়ে অ্যানালিসিসের সেরা রত্নটিকে ঘষে মেজে তৈরী করেছিলেন স্টেনহৌস।
    হিলবার্ট আর বানাকের সম্পর্ক তো শুধু দুজন মানুষ হিসেবে নয়। আমাদের পরিচিত ইউক্লীডিয় স্পেসের ধারনাকে অ্যাবস্ট্রাক্ট স্পেসে নিয়ে গেছেন এই দুজন মানুষ। আমরা পেয়েছি হিলবার্ট স্পেস আর বানাক স্পেস। অংকের কচকচিতে ঢোকার আগে এই দুই স্পেসের ভূমিকা নিয়ে একটু বলা যাক।
    আঠারো শতকের শেষভাগ অবধি অংকের শেষ কথা ছিলেন নিউটন আর লিবনিজ। তাঁদের তৈরী করা ক্যালকুলাস অংকে বিপ্লব ঘটায়। অ্যালজেব্রা এসে মিশে যায় জিওমেট্রিতে। তত্ত্ব হিসেবে অ্যানালিসিসের সূত্রপাত ক্যালকুলাস থেকেই। ক্যালকুলাসের তত্ত্বকে ফর্মাল রূপ দেন রিম্যান। এই ইনফিনিটি আর ইনফাইনাইটসিমালের ধারনার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আধুনিক এপসিলন-ডেল্টার বীজ। গাউসের কাজ ছিল লিস্ট স্কোয়ারের। ধরা যাক n টি অজানা ভ্যারিয়েবলের জন্য n টি লিনিয়ার ইকোয়েশন আছে। আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি যদি সব ইকোয়েশন গুলো স্বাধীন হয় তাহলে ঐ ভ্যারিয়েবল গুলোর মান বার করা সম্ভব। ম্যাট্রিক্স ভেক্টর হিসেবে লিখলে ম্যাট্রিক্সকে ইন্ভার্ট করে উত্তর পাওয়া যায় (ক্র্যামারের নিয়ম)। কিন্তু কম্পিউটারের আগের যুগে একটা বড় ম্যাট্রিক্স ইনভার্ট করা সহজ কাজ ছিল না। গাউস এই লিনিয়ার ইকোয়েশন এর উত্তর খুঁজছিলেন সহজ উপায়ে। গাউস এলিমিনেশন পদ্ধতি বেরিয়ে আসে। সেই আঠারো শতকের পদ্ধতি আজো কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয় লিনিয়ার ইকোয়েশনের উত্তর বার করতে। গাউসের পরের যে প্রশ্ন জাগে তা হল, ঐ অজানা ভ্যারিয়েবল আর ইকোয়েশনের সংখ্যা যদি সমান না হয়? অন্যভাবে বললে ম্যাট্রিক্সটা যদি স্কোয়ার না হয়? তাহলে ম্যাট্রিক্স টা ইনভার্ট করা যাবে না। সঠিক একমাত্র উত্তরও পাওয়া যাবে না।
    কিন্তু বাস্তবে এরকম ঘটনা ঘটে। ভ্যারিয়েবল কম ইকোয়েশন বেশী এটা খুবই বাস্তব একটা ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমস্যা। গাউস ভাবলেন এরকম করলে কেমন হয়? হয়ত একমাত্র নিখুঁত উত্তরের অস্তিত্ত্ব নেই, কিন্তু এমন যদি একটা উত্তর হয়, যাতে ভুলের মাত্রাটা কম হয়? জন্ম নিল লিস্ট স্কোয়ার। এহ বাহ্য। স্কোয়ার কথাটার মধ্যে প্রথম হিলবার্ট স্পেসের ধারনা লুকিয়ে রইল, যদিও সেটা বুঝতে আরো সত্তর বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর অন্য সমস্যাটা? মানে ঐ বেশী ভ্যারিয়েবল কম ইকোয়েশন? মানে যার অসংখ্য সমাধান সম্ভব? নাহ, গাউস ভেবে উঠতে পারেননি। পরের দেড়্শ বছরেও কেও পারেন নি। একুশ শতকের প্রথম দশকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যান্ডেস, ডোনোহো আর টেরেন্স টাও মিলে তৈরী করেন কম্প্রেসড সেন্সিং। যা নিয়ে এই মূহুর্তেও অনেক বিজ্ঞানী কাজ করে চলেছেন।
    একটা ধাতব পাতে তাপ পরিবহন বোঝাতে ফুরিয়ার আবিষ্কার করেন ফুরিয়ার সিরিজ। পরে বোঝা যায়, যেকোনও পিরিওডিক ফাংশন কে সাইন আর কোসাইন এর হারমোনিক ফাংশন গুলোর লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে প্রকাশ করা সম্ভব। এটা একটা অদ্ভুত আবিষ্কার। এর আগে বিজ্ঞানীরা ফাংশন এর লিস্ট বানাতেন। সব ফাংশন আলাদা আলাদা। কিন্তু অ্যালজেব্রা দিয়ে ফর্মূলা লেখা যায় এমন ফাংশনের গ্রাফ বানানো সহজ হলেও যেকোনও গ্রাফের ফর্মূলা লেখা মোটেই সহজ বা স্বাভাবিক কাজ নয়। ফুরিয়ারের পদ্ধতি পিরিওডিক ফাংশনগুলোর ফর্মূলা বের করে ফেলল। এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সর্বত্র। মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল যেখানেই ঘূর্ণায়মান যন্ত্র সেখানেই পিরিওডিক ফাংশন, আর সেখানেই ফুরিয়ার সিরিজ। উনিশ শতকের শেষ অবধি লোকজনের ফাংশন সম্পর্কে ধারনা ছিল, এটা একটা ম্যাপ, যা এক বা একাধিক রিয়েল নাম্বারকে একটা রিয়েল নাম্বারে ম্যাপ করে। যেমন ধরা যাক, f(x) = 3x+4 । এই ম্যাপের ইনপুট x আর আউটপুট f(x) । সুতরাং ফাংশন হল একটা বিশাল ইনপুট-আউটপুট টেবিলের সংক্ষিপ্ত ফর্মূলা বা গ্রাফ। এর বাইরে ফাংশনের কোনও অর্থ বুঝতেন না উনিশ শতকের গণিতজ্ঞরা। ফাংশনকে ম্যাপ হিসেবে দেখেই লিমিট, কন্টিনিউটি, ডেরিভেটিভ বা ইন্টিগ্রালের তত্ত্ব তৈরী হয়েছিল। কিছু কিছু চিন্তাধারা প্রমান ছাড়াই তত্ত্ব হয়ে পড়ে যেমন যেকোনও কনটিউয়াস ফাংশন অধিকাংশ স্থানে ডিফারেন্সিয়েবল হবে। বা যেকোনও ফাংশনের ইন্টিগ্রাল সম্ভব। জার্মান স্কুলের একজন উৎকেন্দ্রিক গণিতজ্ঞ উইরেরস্ট্রাস প্রথম এই সুন্দর ফাংশনের সুন্দর তত্ত্বে আঘাত করেন। উইরেরস্ট্রাস একটা ফাংশন তৈরী করেন যেটা পুরো ডোমেনের কন্টিনিউয়াস কিন্তু কোথাও ডিফারেন্সিয়েবল নয়। ডিরিচলেট তৈরী করেন আর একটা অদ্ভুত ফাংশন I_Q(x)। এর অর্থ x যদি মূলদ সংখ্যা হয় তবে এই ফাংশন এর মান ১, অন্যথায় 0। ডিরিচলেটের এই ফাংশন দেখা যায় রিম্যান পদ্ধতিতে ইন্টিগ্রেট করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ অংকে খামতি আছে।
    উনিশ শতকের শেষে যখন ফিজিক্সে নতুন তরঙ্গ উঠেছে, ফ্যারাডের কাজ ধরে উঠে আসছেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, তড়িৎ, চৌম্বক আর আলো যে একসূত্রে বাঁধা সেটা ধরে নিতে কারোর আর অসুবিধে হচ্ছে না। ইংল্যান্ডে টেলিগ্রাফের লাইন পাতা হয়ে গেছে। টরে টক্কায় চলছে প্রথম যুগের কমিউনিকেশন। হেভিসাইড নামক এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার গণিতজ্ঞদের রাতের ঘুম কেড়ে নিলেন। প্রথাগত অংক না জানা হেভিসাইড একের পর এক গাণিতিক ব্লাসফেমি করতে লাগলেন। ডিফারেন্সিয়াল অপারেটরকে অ্যালজেব্রিক অপারেটার ধরে টেলিগ্রাফ ইকোয়েশন এর উত্তর বার করলেন, যেটা আসল উত্তর খুব কাছের। ম্যাক্সওয়েলের ২০ টি কোয়াটার্ণিয়ন ইকোয়েশনকে ৪ টি ইকোয়েশনে সহজ করে লিখে ফেললেন। ইঞ্জিনিয়ারের হাতের এই জাদুর খবর অংকের মাস্টারমশাইদের কাছে পৌঁছল। বোঝা গেলে অংকে বড়সড় খামতি আছে।

    ***********
    (৮)
    বিশ শতক তখন শুরু হয়েছে। নোবেল প্রাইজও শুরু হয়েছে। ফিজিসিস্টরা হয়ে উঠছেন রকস্টার। রন্টজেন, প্ল্যাংক, হার্জ, আইনস্টাইন, বোর, মাদাম কুরী দের কথা লোকের মুখে মুখে ফিরছে। ফিজিক্সের কাছে অংক যেন হেরে যাচ্ছে গ্ল্যামারে। অনেকযুগ হয়ে গেল নতুন অংক নেই। সেই যুগসন্ধিক্ষণেই উঠে এলেন ডেভিড হিলবার্ট। ভ্দ্রলোক সার্থকনামা। গালিয়াৎদের সাথে যুদ্ধে জিততে ডেভিড আর তাঁর গুলতিই তো দরকার। ডেভিডের আস্তানাও হল আইনস্টাইনদের চত্ত্বরেই, গাউসের সাধের গোটিঙ্গেনে। ১৯০৫ সালে যখন আইনস্টাইনের কালজয়ী পেপারগুলো বেরোচ্ছে, তখন ফ্রেচেট লিখলেন একটা পেপার, যে ফাংশন মানে শুধু ইনপুট-আউটপুট ম্যাপ হয়, ফাংশন নিজেই একটা জিওমেট্রিক স্ট্রাকচার। রিয়েল লাইনের বিশেষ কাঠামোর বাইরে গিয়ে সেট থিওরীর সাধারণ কাঠামোতে ফেললেন ফাংশন কে। এর আগে রেনে দেকার্তে অ্যালজেব্রা দিয়ে জিওমেট্রিকে গ্রাস করেছিলেন। এ হল জ্যামিতির প্রত্যাঘাত। অ্যালজেব্রার ফর্মূলা ভুলে আবার ছবির পথচলা শুরু হল। হিলবার্ট বললেন ইউক্লীডিয় ভেক্টর স্পেস, যেখানে কিনা জ্যামিতিক দূরত্ব, উল্লম্বতা ইত্যাদিকে খুব সহজেই দেখা যায় (দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক ইউক্লীডিয় স্পেসে তো যায়ই), তাকে ইনফিনিটিতে বিস্তার করতে হবে। কি হবে যদি স্পেসের মাত্রা দুই বা তিনের বদলে অসীম হয়? জ্যামিতি কি একই থাকবে? আর এই স্পেস এর অর্থই বা কি?
    সেট কথাটার অর্থ হল একটা সংগ্রহ, কিছু বস্তু বা ধারণার সংগ্রহ, যেমন, পাঁচটি আপেলের সেট, দুটি কাপ আর চারটি গ্লাসের সেট, আকাশের নক্ষত্রের সেট, স্বাভাবিক সংখ্যার সেট ইত্যাদি। শুধু সেট দিয়ে অংক হয় না, প্রয়োজন সেটের সদস্যদের কিছু অতিরিক্ত বিশেষত্বর, যাকে বলে টোপোলজি। টোপোলজি হল এক ধরনের জ্যামিতিক গঠন যা পেলে সেট হয়ে ওঠে স্পেস, টোপোলজিক্যাল স্পেস। একটা বিশেষ টোপোলজি স্পেসে দুই সদস্যের মধ্যে দূরত্বের ধারণা দেয়। যখন সেটের দুটো সদস্যের মধ্যে দূরত্ব সংজ্ঞায়িত করা যায়, তখন সেই সেট কে বলে মেট্রিক স্পেস। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রিয়েল লাইন, যেখানে দুটো সংখ্যার দূরত্ব হল ওদের বিয়োগফলের মান। দ্বিমাত্রিক ইউক্লীডিয় স্পেসে এই দূরত্ব হল দুটো বিন্দুর ইউক্লীডিয় দূরত্ব। হিলবার্ট এই দূরত্বের তত্ত্বকে নিয়ে গেলেন অসীম মাত্রায়। সেট তো শুধু সংখ্যার সেট হয় না। ফাংশনের সেটও হয়। ধরা যাক f(x) একটা ফাংশন, যেখানে x এর ডোমেন হল [0,1] ইন্টারভ্যাল। এখন f(x) কে শুধু একটা ইনপুট আউটপুট ম্যাপ না ভেবে একটা জ্যামিতিক ছবি ভাবা যাক। তাহলে [0,1] এর মধ্যে অসীম সংখ্যক f(x) এর ছবি আঁকা সম্ভব। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন 2x+1, x^2, sin(x), cos(2*x), exp(x), log(x), 2^x,.. ইত্যাদি প্রভৃতি। এখন এই অসীম সংখ্যক ফাংশনের সেট যদি ধরা হয় আর যদি ফাংশন গুলোর মধ্যে দূরত্ব যদি সংজ্ঞায়িত করা হয়, তবে এই সেট হবে একটা স্পেস, ফাংশন স্পেস।

    স্পেসের গুণাবলী নির্ভর করবে ঐ দূরত্বের সংজ্ঞার উপর। হিলবার্ট একটা দূরত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ করলেন। ধরা যাক দুটো ফাংশন f(x) আর g(x)। ধরা যাক x এর ডোমেন [a,b]। হিলবার্ট বললেন f আর g এর মধ্যে দূরত্ব হল integral_a^b [f(x)-g(x)]^2 dx। যেখানে সেটের প্রতিটি সদস্যের নর্ম হল integral_a^b [f(x)]^2 dx। আর এই নর্মের সংজ্ঞা প্রতিটি সদস্যকে একটি ভেক্টর বানিয়ে দেয়। ডেভিড হিলবার্ট দুটো ভেক্টরের মধ্যে ইনার প্রোডাক্ট এর ফর্মূলা দিলেন integral_a^b [f(x)g(x)dx]। এই ইনার প্রোডাক্ট দুটো ভেক্টরের মধ্যে কোণ নির্ণয় করতে প্রয়োজন। এই তিন সংজ্ঞায় সজ্জিত হয়ে ফাংশন স্পেসকে জ্যামিতিক ভাবে দেখা গেল। আসলে হিলবার্ট স্পেস হল কমপ্লিট ইনার প্রোডাক্ট স্পেস। মানে যে স্পেসে নর্ম আসে ইনার প্রোডাক্ট থেকে। আর কমপ্লিট মানে যে স্পেসে কসি সিকোয়েন্স কনভার্জ করে। কসি সিকোয়েন্স মানে যে সিকোয়েন্সের দুটো সদস্যের দূরত্ব যত খুশী কমানো যায়। এই ইনার প্রোডাক্টের জন্য ফাংশনের স্পেস L2 বা সিকোয়েন্সের স্পেস l2 হল হিলবার্ট স্পেস। এতে সুবিধা কি হল? যেকোনও ফাংশন বা যেকোনও সিকোয়েন্স কে ভেক্টর হিসেবে দেখানো গেলো। ট্রান্সফর্ম হয়ে গেলো ম্যাট্রিক্স। আর লিনিয়ার অ্যালজেব্রার সব অংক এসে গেলো অ্যানালিসিসে।
    আইনস্টাইন হিলবার্টের খুব ভক্ত ছিলেন। হিলবার্টের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির কদর করতেন ও হিলবার্টের সেমিনার কখনও মিস করতেন না। অনেকে বলেন রিলেটিভিটির অংক আইনস্টাইন হিলবার্টের কাছেই শিখেছিলেন। তবে হিলবার্ট এই ফিজিসিস্টদের অংক শেখাতে হিমশিম খেতেন। উনি বলতেন তাত্ত্বিক ফিজিক্স আসলে অংক। হিলবার্টের কুখ্যাত মন্তব্য স্মরণীয়ঃ ' ফিজিসিস্টরা থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স একদম বোঝেন না'।
    হিলবার্টের এই স্পেস, যা আমরা এখন হিলবার্ট স্পেস বলে জানি, তা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পথ খুলে দেয়। ওয়েভফাংশন এর ইনার প্রোডাক্ট, হ্যামিল্টোনিয়ান, তার স্পেক্ট্রাল ডিকম্পোজিশেন, প্রোবাবিলিটি ডিসট্রিবিউশন থেকে অর্বাইটাল থিওরীর গবেষণার ঢল নেমে যায়। হিলবার্টের দেখানো পথে নয়ম্যানের কাজ আর সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যান হাইজেনবার্গ, শ্রোডিংগার, ওয়াইজম্যান, ফার্মি, ডিরাক। ফিজিক্সের শেষ বড় কাজ।
    হিলবার্টের অবদান ফিজিক্সেই শেষ নয়। রাশিয়ায় আন্দ্রে কোলমোগরভ এই স্পেসের তত্ত্ব আর অঁরি লেবেগের নতুন ইন্টিগ্রাল (যা দিয়ে ডিরিচলেটের ফাংশনের ইন্টিগ্রেশন করা যায়) আর মেজার থিওরীকে নিয়ে যান প্রোবাবিলিটির নতুন গবেষণায়। শুরু হয় অ্যাকজিওমেটিক প্রোবাবিলিটির। বোরেল সেট দিয়ে প্রোবাবিলিটি স্পেসের ধারণা দানা বাঁধে। ওদিকে এম আই টি তে ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে এসেছেন এক চুরুটখোর উৎকেন্দ্রিক গণিতজ্ঞ, নর্বাট উইনার। তিরিশের দশকের শুরুর দিকে সাস্টারের পিরিওডগ্রাম পদ্ধতিকে এগিয়ে নিয়ে তিনি লেখেন একটা বিরাট পেপার, হারমোনিক অ্যানালিসিসের উপর। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্পেসের ধারণা কাজে লাগিয়ে এসে যায় নতুন যুগ। উইনার ফিল্টার, অমর বোসের অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং, হ্যারী কালম্যানের রিকার্শিভ লিস্ট স্কোয়ার ফিল্টার, ক্লদ শ্যাননের ইনফরমেশন থিওরী, রিচার্ড বেলম্যানের অপটিম্যাল কন্ট্রোল হয়ে থমাস কৈলাথের দিকে এগিয়ে যায় নতুন গবেষণা। এই পুরো কার্য্যকলাপের কেন্দ্রে যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশী তিনি হলেন ডেভিড হিলবার্ট।
    **********
    (৯)
    হিলবার্ট স্পেসের সাধারণীকরণ শুরু করেন স্টেফান বানাক। হিলবার্ট স্পেসগুলো মানে যেখানে ইনার প্রোডাক্ট থেকে নর্ম আসে, সেটা সমস্ত স্পেসে সত্য নয়। L2, l2 আর ইউক্লীডিয় স্পেসের বাইরে ইনার প্রোডাক্ট কাজ করে না। অথচ স্পেস আছে, নর্ম আছে। জ্যামিতিক গঠন আছে। কমপ্লিটনেসও আছে। এই কমপ্লিট নর্মড লিনিয়ার স্পেসের নামই এখন বানাক স্পেস। হিলবার্ট স্পেসগুলোও বানাক স্পেসের মধ্যেই পড়ে। নন হিলবার্ট বানাক স্পেসের উদাহরন হিসেবে বলা যায় কন্টিনিওয়াস ফাংশনের স্পেস C[a,b], যেখানে নর্ম হল ||f(x)|| = max |f(x)|, যা ইনার প্রোডাক্ট থেকে আসে না। এছাড়া L1, l1, l_inf, BV, সবই হল নন হিলবার্ট বানাক স্পেস। এই সাধারণ বানাক স্পেসে অনেক কাজই করা যায় না। বেসিস ফাংশন ঠিক্ভাবে বানানো যায় না, অপারেটরের থিওরী সবসময় কাজ করে না হিলবার্ট স্পেসের মত। বানাক বেশ কিছু থিওরেম বানিয়েছিলেন। যেমন হান-বানাক থিওরেম, বানাক ফিক্সড পয়েন্ট থিওরেম, বানাক-স্টেইনহৌস থিওরেম। সবগুলোই এখন অংকের হল অফ ফেমে। স্পেসের এমবেডিং, স্পেসের সেপারেবিলিটি,স্পেসের এক্সটেনশন নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটেছিল স্কটিশ ক্যাফে তে। কিন্তু হিলবার্টের থিওরী যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেলেন ফিজিসিস্ট রা, বানাকের ভাগ্যে তেমন হল না কেন? দুটো তিনটে কারন এখুনি বলা যেতে পারে। এক, বানাক গোটিঙ্গেনের মত ফিজিসিস্ট দিয়ে ঘেরা ছিলেন না। অংকের বাইরের কেও বানাকের কাজ নিয়ে মাথা ঘামান নি। দুই, কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বা কমিউনিকেশনের অংক সব হিলবার্টের পদ্ধতিতেই করা যায়। গাউসিয়ান নয়েজ এর অ্যানালিসিস (কাহুরান লোয়েভ পদ্ধতি) করে যে নর্ম মিনিমাইজেশনে এসে দাঁড়ায় সেটা L2 নর্ম। পুরো পদ্ধতিটাই হিলবার্ট। কালমান ফিল্টার, যার উপর মিসাইল ও নাসার রকেট সায়েন্স দাঁড়িয়ে সেটাও হিলবার্ট স্পেসেই। বানাক সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। বিশ শতকের বিজ্ঞানে বানাকের প্রয়োজন হয় নি।
    তিন, লোভভ স্কুল আর বানাকের অ্যাকাডেমিক আয়ু মাত্র ২০ বছর, স্কটিশ ক্যাফের মাত্র পাঁচ। এই স্বল্প সময়ের এই সাফল্য অভাবনীয়, গাউস বা হিলবার্টের বা কোলমোগরভের দীর্ঘজীবন বানাক পান নি। অনেক কাজ যা হতে পারত তা আর হয় নি।
    ***********
    (১০)
    স্কটিশ ক্যাফের খাতা যা পরে স্কটিশ বুক বলে পরিচিত হবে, তা ভরে ঊঠতে লাগল অংকে। পাঁচ বছেরের আয়ুষ্কালে ১৯৩ টি অংক লিপিবদ্ধ হবে। ঔদ্ধত্ত্ব্যে এই স্কটিশ বুকের সাথে পাল্লা দিতে পারে একমাত্র হিলবার্টের মিলেনিয়াম প্রবলেমস। একশ বছরের অংকের রাস্তা বলে দিয়েছিলেন ডেভিড হিলবার্ট। স্কটিশ বুক কোনও সময় বলে দেয় নি, কোনও বড় সেমিনারে পড়াও হয় নি। কিন্তু এখনও এর অনেক অংকেরই উত্তর মেলে নি। কিছু উত্তর মিলেছে। তার একটা গল্প শোনানো যেতে পারে। ১৯৩৭ এ স্ট্যানিশ্ল মজুর একটা অংক লিখেছিলেন এই খাতায়। সেটা হল, আমরা জানি সব সেপারেবল বানাক স্পেসের সউডার বেসিস আছে, কিন্তু কোনও প্রমান নেই। হয় প্রমান দাও, নাহয় দেখাও যে কোনও একটু সেপারেবল বানাক স্পেসের সউডার বেসিস নেই।
    ফুটনোটে মজুর লিখেছিলেন, যে এই অংক করতে পারবে, মজুর তাকে একটা জ্যান্ত রাজহংসী উপহার দেবেন।
    ১৯৭৩ সালে পের এনফ্লো এই অংকের সমাধান করেন। তিনি একটা সেপারেবল বানাক স্পেস তৈরী করে দেখান যার কোনও সউডার বেসিস নেই। মজুর তখনও বেঁচে। মজুর তক্ষুনি বলেন আমি পুরস্কার দিতে চাই। এনফ্লো উড়ে আসেন ওয়ারশ তে। টিভিতে লাইভ রেকর্ডিং হয় সেই রাজহংসীর হস্তান্তর। গণিতের ইতিহাসে এরকম পুরস্কারের আর কোনও উদাহরণ নেই।
    ***********
    (১১)
    যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ১৯৩৯ সালেই। রাশিয়া এসে দখল করে নেয় লোভভ। সোবোলেভ (এনার নামেও স্পেস আছে) এই সময় লোভভ এসেছিলেন। তিনি স্কটিশ ক্যাফেতেও এসেছিলেন। আর স্কটিশ বুকে ওনার অংকও লিখেছিলেন। লোভভের ধংস শুরু করে জার্মানী। হিটলারের বাহিনী রাশিয়াকে হটিয়ে দেয়। মজুর চলে যান ক্লো তে। বানাক এর কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। হারিয়ে যায় স্কটিশ বুকও। ক্যাকমার্জ খুন হন জার্মানীর বম্বিং এ। তারপর আসে সেই বীভৎস রাত। এক রাতে লোভভ ইউনিভার্সিটির পঞ্চাশ জন প্রফেসরকে খুন করে নাৎসীবাহিনী। গোটিঙ্গেনের ঈহুদী বিতাড়নে হিটলারের মন ভরেনি। অনার্য্য পোল গুলোকে না মারলে আর কিসের জার্মান আত্মগরিমা?
    বানাকের কি হল?
    বানাকের খোঁজ মিলল আরো তিনব্ছর পর। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। কেও বলে উনি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ছিলেন। অকথ্য অত্যাচার হয়েছিল। কেও বলে উনি ছোটখাটো কাজ করে কোনও রকমে বেঁচে ছিলেন। জার্মানদের হটিয়ে যখন রেড আর্মি লোভভ পুনরুদ্ধার করল, বানাককে আবার প্রফেসর পদে নিয়োগ করা হল। ততদিনে স্কটিশ ক্যাফের আড্ডা ভেঙ্গে গেছে। ১৯৪৪ এ বানাকের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে বানাক মারা যান।
    **********
    (১২)
    স্কটিশ বুক হারায় নি। বানাক বইটা পৌঁছে দিয়েছিলেন ছেলের কাছে ক্লো তে। ওনার ছেলে বাবার মৃত্যুর পর স্কটিশ বুক তুলে দেন স্টেইনহৌসের হাতে। স্টেইনহৌস স্ট্যান উলামকে পাঠিয়ে দেন বইটা। উলাম তখন লস অ্যালামসে। উলাম স্কটিশ বুকের অনুবাদ করেন ইংরাজীতে। তারপর মাইক্রোগ্রাফ করে পাঠিয়ে দেন সব বড় বড় ইউনিভার্সিটিতে, এম আই টি তে, হার্ভার্ডে, প্রিন্সটনে, ক্যালটেকে, অক্সফোর্ডে, কেম্ব্রিজে। বইটা পেয়ে গণিতজ্ঞরা পাগল হয়ে যান। এ তো রত্নখনি। ১৯৫৬ তে ছেপে বেরোয় স্কটিশ বুক।
    এই স্কটিশ ক্যাফের স্মরণে ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ টেক্সাস ডেন্টনে ১৯৭৫ এ অনুষ্ঠিত হয় 'স্কটিশ ক্যাফে কনফারেন্স'। ড্যান মলডিনের উৎসাহে এই কনফারেন্সে লেকচার দেন স্ট্যান উলাম, মার্ক ক্যাক, জিগমুন্ড, পল আর্ডস, গ্রানাস। স্মরণ করা হয় ঐ হারিয়ে যাওয়া ক্যাফে, অমর হওয়া খাতা আর অংক বদলে দেওয়া মানুষটিকে, যাঁর নাম স্টেফান বানাক।

    ***********
    (শেষ)
    'সকলেই গণিতজ্ঞ হয় না। সাধারণ গণিতজ্ঞরা থিওরেমের মধ্যে অ্যানালজি খোঁজে। আর একটু ভালো গণিতজ্ঞরা খোঁজে প্রমানের মধ্যে। ভালো গণিতজ্ঞরা থিওরীর মধ্যে অ্যানালজি খোঁজে। কিন্তু আমার মতে তারাই জিনিয়াস যাঁরা অ্যানালজির মধ্যে অ্যানালজি খুঁজে পায়'ঃ স্টেফান বানাক এই কথা বলেছিলেন মজুরকে কফি খেতে খেতে। বানাকের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব একুশ শতকের। অংক এখনও শেষ হয়নি। যেখানে ফিজিক্সের শেষ তার পরও অংক কে এগিয়ে যেতে হবে। হয়ত বায়োলজির জন্য নতুন অংকে লাগবে বানাককে। হয়ত কেন? লাগবেই। বায়োলজির সিগন্যাল আর নয়েজ হিলবার্ট স্পেসে থাকে না। তবে বানাকের থিওরীকে আরো উন্নত করতে হবে, যাতে ব্যবহার করা যায়। আর তার জন্য লাগবে আরো এক ক্যাফে। এ গল্পটা ঠিক ইতিহাস নয়, বানাকের জীবনী তো নয়ই। কফি হাউসের আড্ডা যে দেশ কালের ব্যবধান লহমায় মুছে দেয়, কফি হাউস যে আধুনিক সমাজে ডায়ালগ-কোলাবোরেশনের প্রতীক এ গল্প তার। কফির কাপ ছাড়া আর যাই হোক, অংক হয় না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৯ জুন ২০১৬ | ৬৭০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • sswarnendu | ***:*** | ০১ জুলাই ২০১৬ ১১:০১54952
  • বাহ, লেখাটা গুরুতে দেখে বেশ ভাল লাগল... আবার পড়ে ফেললাম ।
    তবে ওই হিলবার্ট এর কাজ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে, বানাকের কাজ নিয়ে ঘামায়নি অংশটায় লেখাটার একটু মান পড়ে গেছে... যেমন "কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বা কমিউনিকেশনের অংক সব হিলবার্টের পদ্ধতিতেই করা যায়।" না লিখে 'হিলবার্ট স্পেস ছাড়া করা যায় না' লিখলেই ভাল হত... আর সেটার কারণটাও যখন লেখাটাতেই বলা আছে একরকমভাবে... "অপারেটরের থিওরী সবসময় কাজ করে না হিলবার্ট স্পেসের মত।"
  • sswarnendu | ***:*** | ০১ জুলাই ২০১৬ ১১:১১54953
  • আর হ্যাঁ, হিলবার্ট স্পেস এর ধারণা অ্যালজেব্রাকে জ্যামিতির প্রত্যাঘাত হলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ফাউন্ডেশনে ভন নয়ম্যানের কাজ আবার অ্যালজেব্রার জ্যামিতিকে প্রতি-প্রত্যাঘাত :)
    জ্যামিতিকে কম্যুটেটিভ অ্যালজেব্রা দিয়ে দেখা... আর নন-কম্যুটেটিভ জ্যামিতির শুরু। :)

    কোয়ান্টাম ফউন্ডেশনের কাজটা নিজেই একটা এইরকম লেখার দাবি রাখে এত মজার... ঋত্বিকদা সেই নিয়ে আর একটা নামাও না।
  • ঈশান | ***:*** | ০১ জুলাই ২০১৬ ১২:৪৩54939
  • পটকের মন্তব্যের এই কোটেশনটা কি কোনো সাইট থেকে কপি করা? নাকি কোনো পিডিফ থেকে? লিংকটা পাওয়া যাবে? এই লেখাটাই গোলমাল করছিল। কেন জানিনা। অরিজিনাল টেক্সটটা পেলে একটু খতিয়ে দেখা যেত।
  • dc | ***:*** | ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৬54954
  • লেখাটা খুব ভাল্লাগলো। আর পোটকেবাবু যে রাসেল এর বর্ণনাটা উদ্ধৃত করেছেন সেটা ছোটবেলায় পড়েছিলাম, যদ্দুর মনে পড়ছে, পেরেলম্যানের বইতে।
  • potke | ***:*** | ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৮54955
  • রিত যে সময়টা ধরেছেন আমি তার থেকে একটু পিছিয়ে গেছি কারন ঐ সময়্টা য় এমন কিছু ফিসিক্যাল ফেনোমেনা অবসার্ভ করা হচ্ছিল যার ব্যখ্যা ক্লাসিকাল ম্যাথ দিতে পারেনি। রাসেল এর উদাহরণ কেস ইন পয়েন্ট।

    সলিটন/পিকনের ছবি দিয়েছি, দেখলেই বুঝবেন যে সল্যুশন ( কোন ইকুয়েশনের সেটায় পরে আসব) C1/C2 নয়, মানে ফাংশন বা তার ডেরিভেটিভ কনটিনিয়াস নয়--ইন ফ্যাক্ট পিকনের (পিকড সলিটন) কেসটায় ফাংশন কে ডিস্ট্রিবিউশনাল সেন্সে ধরা হয়( আসব এই প্রসংঙ্গে); শ্যালো ওয়াটার ওয়েভ অবসার্ভ করতে গিয়ে এটা আরো দেখা গেল, বিশেষ করে কোনো ন্যাচারাল ক্যালামিটি( সুনামী মনে করুন)।

    আগের পোস্টে ডিফ্রাই এর কথা লিখেছি, এর ইকুয়েশন আবিষ্কার হবার অনেক পরে দেখা যাবে যে এটা একটা ফ্যামিলির পার্ট- " বি-ফ্যামিলি", যেখানে b=1 বসালে আপনি ডিফ্রাই(KdV) ইকুয়েশন পাবেন। b=2, b=3 বসালে কি পাবেন? b=4 বসালে কি কিছু হবে?

    তো নতুন থিওরি চাই, নতুন অন্ক। পোস্ট হিলবার্ট আন্কিক রা মাথার চুল ছিঁড়ছেন।

    এনটার সোবোলেভ, রাশিয়ান জিনিয়াস!

    এবার একটু ব্রেক, নইলে হুড়ো দেবার জন্য লোকে বসে আছে ঃ)

    ওভার টু ইউ রিত।
  • potke | ***:*** | ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৬54956
  • Despite the early development of KdV equation it was not until 1960 that any new application was found. Study of the Korteweg-de Vries equation then proliferated and arose in a number of different physical contexts, from stratified internal waves to plasma physics. Moreover, there were numerous modifications to the original Korteweg-de Vries equation, e.g. KdV5, etc. which continue to be studied extensively. However, the story in essence begins with Korteweg-de Vries and ends with the so-called b-Family of equations.

    Definition of Soliton: A soliton is a solitary wave which asymptotically preserves its shape and velocity upon nonlinear interaction with other solitary waves, or more generally, with another (arbitrary) localized disturbance, or alternatively a soliton is a self-reinforcing
    solitary wave (a wave packet or pulse) that maintains its shape while it travels
    at constant speed; solitons are caused by a delicate balance between nonlinear and dispersive effects in the medium. This is in important contradistinction to solitary waves which even though being
    an isolated wavefront, may not preserve shape, etc. upon interaction with other solitary waves.
  • Rit | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০১:৪১54961
  • আরো ভালো জিনিস ডিরাক কোম্ব, যেটা আবার ফুরিয়ার অপারেটরের একটা আইগেন ফাংশন। পুরো মস্তির জিনিস। ডিজিটাল রেভোলিউশনটাই দাঁড়িয়ে আছে এর উপর।

    স্যাম্প্লিং জিনিসটার উপরই একটা বড় লেখা দেওয়া যায়। ক্লদ শ্যানন, নাইকুইস্ট, হুইটেকার, কোটেলনিকভ সবাই মিলে পুরো থিওরী টা দাঁড় করিয়েছিলেন।
  • sswarnendu | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৮54962
  • হোক হোক
  • Ranjan Roy | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৮54963
  • ম্যাথগুরুর দল ভালো জনিয়ে দিয়েছে!!!
  • Rit | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৮:১৮54957
  • বোতিন্দা,
    থেংকু থেংকু।

    স্বর্নেন্দু,
    দা টা কেন আবার? আমরা তো ব্যাচমেট, নাকি! আমি নাহয় পি এইচ ডি টা ক বছর আগে করেছি। তা বই তো নয়!
    থ্যংকস। ম্যাথেমেটিসিয়ানের কাছ থেকে ফিডব্যাক পেলে ভালো লাগে। তোমার পয়েন্ট টা ঠিক। শুধরে নেবো।

    আর তুমি টোপোলজি নিয়ে নামাও না প্লিজ কিছু।

    পোটকে,
    হুম। পড়ছি। তারপর সোবোলেভ নিয়ে ফিরে আসছি।
    আর ক্রেইন স্পেস নিয়ে লেখা যেতে পারে। এইচ ইনফিনিটি তে ব্যবহার করে। কালমান টাইপ অ্যানালিসিস করা যায়।
  • potke | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৮:৫৯54958
  • সোবোলেভ নিয়ে লিখলে হোল্ডার কে বাদ দিলে বহুত না-ইনসাফি হবে।

    তবে বেশী ঘাঁটতে চাইনা।
  • Rit | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৯:১৫54959
  • প্লিজ ঘাঁটুন। এগুলো নিয়ে ঘাঁটা দরকার।
  • sswarnendu | ***:*** | ০৩ জুলাই ২০১৬ ১২:৪৯54960
  • টপোলজি নিয়ে এমনিই লেখার ইচ্ছে আছে, বিজ্ঞান এ জ্যামিতির সিরিজের শেষ পর্বটা শেষ হলে ওটার কম্প্যানিয়ন পিস হিসেবেই একটা লিখতে হবে আসলে...

    আর এই সোবোলেভ স্পেস এর কথায়... একটা PDE র classical solution থেকে weak solution এ আসা, এই journey টা mathematics এ revolutionary journey গুলোর একটা...

    এবং যার শুরু ফিজিক্স থেকে...

    গত শতাব্দীর ২ এর দশকে ( ৩ এর দশকেও ) ডিরাক প্রথম বলেন দুটো revolutionary nonsense....
    ১) Heaviside function এর derivative Dirac delta !!
    ( Heaviside function হচ্ছে H(x) = 1 if x >0 , H(x) = 0 if x <=0. ফাংশনটা ডিফারেন্সিয়েবল তো দূর অস্ত, x =0 তে কন্টিন্যুয়াস ও নয়, আর সেটা খালি চোখেই দৃশ্যমান, অঙ্ক জানতে লাগেনা...
    যা ডিফারেন্সিয়েবল নয় তার আবার ডেরিভেটিভ!!!
    আর তার derivative হচ্ছে ডিরাক ডেল্টা ' ফাংশন' ... যা x=0 তে + ইনফিনিটি, বাকি সব জায়গায় 0. এতদূর অবধি তাও বোঝা যায়, ডেরিভেটিভ কে ট্যানজেন্ট এর slope ভাবার idea একদমই classical... আর Heaviside এর graph দেখলেই সহজবোধ্য যে graph টার tangent x= 0 ছাড়া বাকি সব জায়গায় horizontal আর x=0 তে vertical, এরকম ভাবা অঙ্ক হিসেবে nonsense হলেও can make sense....

    কিন্তু গল্পের একটু বাকি আছে, ওই 'ফাংশন' এর ইন্টিগ্রালটা হচ্ছে 1 ( এটাই definition, ডিরাক ইন্টিগ্রাল ১ প্রমাণ করেননি... বলেছিলেন Heaviside function এর derivative এমন একটি জিনিস, অথচ দিব্য জানতেন যে এটা utter nonsense )

    ২) এই Dirac delta র Fourier transform হচ্ছে constant function 1.

    এই nonsense এর sense দেওয়া সম্ভব হল ( এবং তার সাথে প্রায় ১৫০ বছরের আর এক semi(nal) nonsense, Fourier transform, তারও ) ৬ এর দশকে ... Laurent Schwartz ডিস্ট্রিবিউশন থিওরি দাঁড় করালেন, modern PDE র theory র জন্ম হল।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন