এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ‘জেনানা’: প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষ তথা লিঙ্গ পরিচয়ের সমগ্র বিষয় ভুল বোঝার, ভুল বোঝানোর একটি নিদর্শন

    Ani Dutta লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ এপ্রিল ২০১৬ | ২১৬৭ বার পঠিত
  • অনি দত্ত ও রায়না রায়



    ভূমিকা: ‘প্রথম’ বনাম ‘তৃতীয়’ লিঙ্গ

    হিজড়ে এবং অন্যান্য প্রান্তিক লিঙ্গ বা যৌনতার মানুষদের প্রতি আমাদের সমাজে একটি ঘৃনা-মিশ্রিত কৌতুহল কাজ করে | এরা কি, কোত্থেকে এল, কেন বা কিভাবে এরকম হল? আমরা ভেবে থাকি, বা আমাদের পারিপার্শ্বিক সমাজ থেকে শিখি, যে যেই লিঙ্গ পরিচয় বা যৌন-আচরণকে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়, অর্থাৎ যৌনাঙ্গের ভিত্তিতে নির্ধারিত ‘পুরুষ’ ও ‘নারী’ পরিচয় এবং পুরুষ-নারীর মধ্যে বিসমকামী প্রেম, সেগুলোই ‘স্বাভাবিক’ এবং চিরাচরিত ভাবে চলে আসছে | বাকি অন্য কিছু ব্যতিক্রম, এবং তার একটা ব্যাখ্যা খাঁড়া করা চাই | এবং সেই ব্যাখ্যা যদি ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘অস্বাভাবিক’-এর দুরুত্ব বজায় রাখতে পারে, যাতে আমাদের চেনা পরিচয় বর্গগুলি কোনো ভাবে ওলট-পালট না হয়, আমরা সেই চিরায়ত লিঙ্গ ও যৌনতার ধারণা নিয়েই চলতে পারি – তাহলে তো কথাই নেই |

    যেমন সমাজে একটি চলতি ধারণা রয়েছে যে রাস্তায়-ঘাটে আমরা যে হিজড়ে বা রূপান্তরকামী মানুষদের দেখে থাকি, তাঁরা জন্মগত কোনো ‘খুত’ বা যৌন প্রতিবন্ধকতার কারণেই ওরকম হন, আর পাঁচটা ‘সুস্থ-স্বাভাবিক’ মানুষের থেকে জন্ম থেকেই আলাদা | তাই হিজড়ে বা রূপান্তরকামী মানুষদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে মেনে নিয়ে একটি আলদা স্থানে সরিয়ে রাখতে হয়ত সেরকম অসুবিধে হয় না | বিশেষত যদি ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বলতে জন্মগত যৌনাঙ্গ-জনিত বিভেদ বোঝা হয়, যৌনাঙ্গ নির্বিশেষে মানসিক পরিচয় নয় | সমস্যা তখন হয় যখন আমাদের সমাজে যেটাকে ‘স্বাভাবিক’ ভাবা হয়, যেমন বিসমকামী পুরুষ পরিচয়, তার সাথে কোনভাবে হিজড়ে বা রূপান্তরকামী পরিচয়গুলি গুলিয়ে যায় | যেমন ধরুন আপনি হয়ত কাউকে লিঙ্গ-চিহ্ন বা যৌন আচরণের ভিত্তিতে পুরুষ ভাবছেন, কিন্তু সে হিজড়ে বা রূপান্তরকামী পরিচয় ধারণ করছে; বা কাউকে আপনি রূপান্তরকামী বা হিজড়ে হিসেবেই চিনেছেন কিন্তু তারপর তার কিছু ‘পুরুষ’সুলভ বৈশিষ্ট সম্মন্ধে জানতে পারছেন, যেমন হয়ত জানতে পারলেন যে সে বিবাহিত, সন্তানও আছে | এইসব ক্ষেত্রে সমাজে যেই লিঙ্গ পরিচয় সর্বোচ্চ সম্মান পেয়ে থাকে – পুরুষ – সেই ‘প্রথম লিঙ্গ’ আর ‘তৃতীয় লিঙ্গ’র মধ্যে একটি পরিষ্কার ব্যবধান বজায় থাকে না, সামাজিক লিঙ্গ বিভেদের মৌলিক ধারনায় গিয়ে আঘাত লাগে | এই ধরনের পরিস্থিতিতে মূলস্রোতের কিছু মানুষ আবার সেই ‘প্রথম’ ও ‘তৃতীয়’ লিঙ্গের সীমারেখা টানতে উঠে পড়ে লাগেন, যাতে আমরা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারি কে আসলে ‘পুরুষ’ আর কে ‘হিজড়ে’ |

    সম্প্রতি ‘জেনানা’ বলে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে যেটি হিজড়ে সমাজের মধ্যে কিছু মানুষদের ‘আসল’ পরিচয় সমাজের সামনে উদঘাটন করার দাবি করেছে| এবং ছবিটির পরিচালক বর্ষালী চট্টোপাধ্যায় ‘এবেলা’, ‘এখন সংবাদ’ সহ বিভিন্ন সংবাদ মধ্যমে এ বিষয়ে সাক্ষাতকারও দিয়েছেন, যেগুলি পড়লে হয়ত মনে হবে যে তিনি খোদ প্রান্তিক লিঙ্গ ও রূপান্তরকামী মানুষদের চেয়েও বেশি এই জনগোষ্ঠীদের অভ্যন্তরীণ সত্য জানেন | কিন্তু আদতে, পুরো চলচ্চিত্রটি এবং সাক্ষাতকারগুলি বিভ্রান্তিকর, সম্পূর্ণ ভুল তথ্যে ভরা, এবং দর্শকমন্ডলীর মধ্যে রূপান্তরকামী, হিজড়ে ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষতিকারক ধারণা তৈরী করার আশঙ্কা বহন করে |

    ছবিতে এবং সাক্ষাতকারগুলিতে বলা হয়েছে যে হিজড়ে গোষ্ঠীর মধ্যে ‘জেনানা’ বলে কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা নাকি আদতে হিজড়ে বা রূপান্তরকামী নন, শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই পুরুষ, কিন্তু শুধুমাত্র পয়সা উপার্জনের জন্য তাঁরা হিজড়ে বা মহিলা সেজে থাকেন এবং তাঁদের আসল ‘পুরুষ’ পরিচয় পেশার স্বার্থে লুকিয়ে রাখেন | আনন্দবাজার পত্রিকায় চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, “লাল সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির চালক বা আরোহীদের কাছে ঘুরে ঘুরে টাকা চান এক দল মানুষ – লোকে বলে ‘হিজড়ে’... এদের অনেকেই শারীরিক ভাবে সুস্থ-সক্ষম পুরুষ, কারও ঘরে স্ত্রী-সন্তানও আছে, কিন্তু পেটের তাগিদে বা ভাগ্যের ফেরে এই বৃত্তি নিয়েছেন | পরিভাষায় এঁরাই ‘জেনানা’” (আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, মার্চ ৬, ২০১৬)| আর এবেলাতে পরিচালক বলেছেন যে জেনানারা নাকি শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই পুরুষ হওয়া সত্বেও “শুধুমাত্র টাকা রোজগারের জন্য” নিজেদের “ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তুলে ধরতে চান” (এবেলা, ‘মুখোমুখি ‘জেনানা’ পরিচালক’, মার্চ ১০, ২০১৬)| কিন্তু আদতে হিজড়ে পরিভাষায় ‘জেনানা’ শব্দটির মানে মোটেই হিজড়ে-সাজা পুরুষ নয়, ‘জেনানা’ মানে সেই রূপান্তরকামী বা প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষেরা যারা শারীরিক রূপান্তর করেন নি, কিন্তু হিজড়ে বা অন্যান্য প্রান্তিক লিঙ্গের গোষ্ঠির সাথে যুক্ত থাকেন (১)| তাছাড়া, শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন দেখে, বা রুপান্তর করা-না করার ভিত্তিতে, কেউ আদতে ‘হিজড়ে’ না ‘পুরুষ’ সেটাও নির্ধারণ করা সম্ভব নয় | চলচ্চিত্রে ‘জেনানার’ উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যে একজন মূলস্রোতের পুরুষকে খানিকটা জোর করেই হিজড়ে পেশায় নিয়ে আসা হচ্ছে | ছবির মধ্যে একজন মহিলা পরিচালক (হয়ত বর্ষালীরই কাল্পনিক সংস্করণ) একটু ভিন্নধর্মী চিত্রনাট্যের সন্ধান করতে গিয়ে একদল হিজড়ের সাথে পরিচিত হন | তাঁদের মধ্যে একজন, সোমু, তাঁকে তাঁর জীবন কাহিনী শোনায় | সোমু আদতে সামাজিক-মানসিক সকল অর্থেই একজন পুরুষ, খুবই গরিব ঘরের, তিনি আগে একটি গ্রামে ইটভাটায় কাজ করতেন | ইটভাটা বন্ধ হওয়ার পর অর্থকষ্টের জন্য বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর স্ত্রী-মেয়ে-সংসার ছেড়ে কলকাতায় কাজ করতে আসেন | এসে দিনের পর দিন চাকরি খুঁজতে খুঁজতে একদিন একটি পথ দুর্ঘটনায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান | সেই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কয়েকজন হিজড়ে মানুষ (যাঁরা নাকি আসলে ভান-করা মূলস্রোতের পুরুষ) তাঁকে নিজেদের ডেরায় তুলে নিয়ে গিয়ে এই তথাকথিত “ঘৃণ্য কাজে” অর্থাৎ হিজড়ে পেশায় যোগদান করতে বাধ্য করে, বা তিনি আর্থিক তাগিদের জন্যে করতে বাধ্য হন | শুধু ছবির মাধ্যমে নয়, কিছু সাক্ষাতকারেও বর্ষালী হিজড়েদের মধ্যে করা আদতে ‘পুরুষ’, আর কে আসল ‘রূপান্তরকামী’, সেই বিভাজন সুস্পষ্ট করার দাবি রেখেছেন | এই আপাত ‘তথ্য’ গুলি জেভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে তা শুধু হিজড়ে গোষ্ঠী ও রূপান্তরকামী মানুষ নয়, লিঙ্গ পরিচয়ের সামগ্রিক বিষয় নিয়েই ভুল ধারণা সৃষ্টি করতে পারে |

    গোড়ায় গলদ: লিঙ্গ নিয়ে চলচ্চিত্রে কিছু বিভ্রান্তিকর ধারণা



    “তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে যাঁদের কথা বলা হয়, তাঁদের চারটে ভাগ আছে... আকুয়া মানে যে ছেলেদের মধ্যে শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে মহিলা হওয়ার প্রবণতা বেশি | জেনানাদের শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে মহিলা হওয়ার কোনও প্রবণতা নেই | অথচ তাঁরা নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তুলে ধরতে চান | শুধুমাত্র টাকা রোজগারের জন্যই |”
    -বর্ষালী চট্টোপাধ্যায়, এবেলা (‘মুখোমুখি ‘জেনানা’ পরিচালক’, মার্চ ১০, ২০১৬)

    প্রথমেই বলা প্রয়োজন যে হিজড়ে-কোতি-রূপান্তরকামী প্রভৃতি জনগোষ্ঠির সদস্য হিসেবে, এবং এই সম্প্রদায়গুলির সাথে বহু বছর ধরে গবেষণার সুবাদে, আমরা আজ পর্যন্ত এমন কোনো মানুষ দেখিনি যিনি তাঁর মানসিক পরিচয়ে সম্পূর্ণভাবে পুরুষ, কিন্তু শুধুমাত্র “টাকা রোজগারের জন্য” জন্য ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী হওয়ার ভান করে হিজড়ে পেশার সাথে যুক্ত হয়ে থাকেন | এবং দরিদ্র মূলস্রোতের পুরুষদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তাদের হিজড়ে গোষ্ঠীতে ঢোকানোর কোনো নজিরও আমাদের জানা নেই | শুধু আমরা কেন - হিজড়ে গোষ্ঠির ওপর প্রচুর গবেষণাপত্র রয়েছে, বিভিন্ন ভাষায় বই রয়েছে, তথ্যচিত্র রয়েছে, তাদের মধ্যেও চলচ্চিত্রে যেরকম দেখানো হয়েছে সেইরকমভাবে জোর করে কাউকে ‘পুরুষ’ থেকে ‘হিজড়ে’ বানানোর নজির নেই |

    আনন্দবাজারে যে বলা হয়েছে হিজড়েদের মধ্যে “অনেকেই শারীরিক ভাবে সুস্থ-সক্ষম পুরুষ, কারও ঘরে স্ত্রী-সন্তানও আছে”, সেই কথাটার মধ্যে লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ে একটি মৌলিক ভুল ধারণা অন্তর্নিহিত আছে – যে কারুর শারীরিক লিঙ্গ চিহ্ন বা যৌন সম্পর্কের ধরন দেখে তাদের লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ করে বলা যায় যে এরা আদতে ‘পুরুষ’ না ‘হিজড়ে’ | এ কথা সত্যি যে কিছু হিজড়ে বা রূপান্তরকামী মানুষ তাঁদের শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন অর্থাৎ ‘পুরুষ’ যৌনাঙ্গ নাও বদলাতে পারেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নানা কারণে বিয়েও করে থাকেন | কিন্তু কারুর শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন কি, বা তার শারীরিক রুপান্তরের চাহিদা আছে কি নেই, তার ভিত্তিতে যদি আমরা তাদের লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ করতে যাই, তাহলে সেটা গোড়াতেই গলদ হবে |

    আমরা হয়ত অনেকেই জানি যে শারীরিক লিঙ্গ (sex), লিঙ্গ পরিচয় (gender identity) এবং যৌনতা (sexual behavior/orientation) প্রত্যেকটি আলাদা-আলাদা বিষয় | শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন বা sex কে লোকে একটি জৈবিক সত্য বা biological fact ভাবেন, কিন্তু সেটাও কিন্তু আদতে কিছু জৈবিক বৈশিষ্টের সামাজিক চিহ্নিতকরণ বা social labelling: আমরা কিন্তু আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ‘পুরুষের অঙ্গ’ না ‘নারীর অঙ্গ’ সেই বোধ নিয়ে জন্মাই না, বাহ্যিক ভাবে আমাদের শরীরের কিছু লক্ষণকে চিহ্নিতকরণ করা হয় | আমাদের শরীরের কিছু বৈশিষ্টকে আমাদের সমাজ প্রজননের নির্ধারিত ভূমিকা অনুযায়ী “পুরুষ যৌনাঙ্গ” বা “নারী যৌনাঙ্গ” বলে চিহ্নিতকরণ করে (২) | কিন্তু শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এমনকি যৌনাঙ্গেরও সেই অর্থে কোনো অন্তর্নিহিত লিঙ্গ নেই, যেহেতু প্রজনন ছাড়াও সেগুলোকে নানা ভাবে ব্যবহার করা যায় এবং নানা নাম দেওয়া যায় | উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে কিছু সামাজিক পুরুষ তাঁদের যৌনাঙ্গকে নানারকম পৌরুষসুলভ নাম দেন, আবার পক্ষান্তরে, আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে অনেক রূপান্তরকামী নারীরা (অর্থাৎ পুরুষ-থেকে-নারী রূপান্তরকামীরা) বা মেয়েলি পুরুষেরা কিন্তু সেই একই অঙ্গকে ভিন্ন চোখে দেখতে পারেন, এমনকি ‘লম্বা যোনী’ বা ইংরিজিতে ‘বড় clitoris’ (যোনীর উপরিভাগের ভগাঙ্কুর) ইত্যাদি নামে অভিহিত করতে পারেন (এবং শিশ্ন ও ভগাঙ্কুরের মধ্যে একটি জৈবিক সংযোগ আছে সেটাও ঠিক, যেহেতু ভ্রুণের বিকাশের সময়ে তাদের একই অঙ্গ থেকে উৎপত্তি হয়, অর্থাৎ শারীরিক লিঙ্গ দুটো বিপরীতধর্মী বর্গে বিভক্ত নয়)| একই যৌনাঙ্গের কতরকম লিঙ্গায়ন হতে পারে, যদিও সব লিঙ্গায়নকে সমাজ একই ভাবে স্বীকৃতি দেয় না!

    আবার লিঙ্গ পরিচয় “মানসিক প্রবণতা” ও আত্মপরিচয়ের ব্যাপার, অর্থাৎ শারীরিক লিঙ্গ থেকে আলাদা - বর্ষালী নিজেই সেটা স্বীকার করেছেন | উপরন্তু ওপরে যেমন দেখলাম, ‘শারীরিক লিঙ্গও’ শুধুমাত্র জৈবিক নয়, বরং জৈবিক বৈশিষ্টের সামাজিক চিহ্নিতকরণ | অতয়েব কোনো মানুষ তাঁর শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন না বদলেও, শারীরিক রূপান্তর না করতে চাইলেও, ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের অধিকারী হতেই পারেন | যেমন কেউ তথাকথিত ‘পুরুষ’ লিঙ্গ-চিহ্ন নিয়েও নারী বা অন্য বৈকল্পিক লিঙ্গ পরিচয় ধারণ করতে পারেন, এমনকি বিয়ে-সংসার করেও রূপান্তরকামী হতে পারেন| এই ক্ষেত্রে তাঁর শারীরিক ভাবে “মহিলা হওয়ার প্রবণতা” আছে কি নেই সেই প্রশ্ন অবান্তর, যেহেতু তিনি তাঁর যৌনাঙ্গ নিয়ে কি করতে চাইছেন বা চাইছেন না, সেটা তাঁর একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার | এবং মানসিক ভাবেও “মহিলা হওয়ার প্রবণতা” ছাড়াও বিভিন্ন বৈকল্পিক লিঙ্গ পরিচয় আছে | যেমন অনেক জন্মসুত্রে পুরুষ-চিহ্নিত প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষ নিজেদের মহিলা না মনে করে তৃতীয় লিঙ্গ, ভিন্ন লিঙ্গ, মিশ্র লিঙ্গ, মেয়েলি পুরুষ, ইত্যাদি অনেক কিছুই মনে করতে পারেন (৩) | অতয়েব বর্ষালী যে বলেছেন যে কিছু মানুষের “শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে মহিলা হওয়ার কোনও প্রবণতা নেই”, সেই বিষয়ে মনে রাখা দরকার যে কোনো প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের “মহিলা হওয়ার প্রবণতা” না থাকলেও তাঁরা যে আর পাঁচটা সামাজিক পুরুষের মতন পুরুষই, সেটা আমরা কখনই ধরে নিতে পারি না | যেহেতু যে কোনো মানুষের লিঙ্গ পরিচয় তাঁর মানসিক পরিচিতি, সেটা আমরা সমাজ যেভাবে তার শরীরকে চিহ্নিতকরণ করছে তার ভিত্তিতে তাঁর ওপর চাপিয়ে দিতে পারিনা | বা যদি চাপিয়ে দিই, তাহলে সেই পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক নিয়মাবলীরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে | ২০১৪ সালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ‘নালসা’ রায় কিন্তু ঠিক এই লিঙ্গ স্বনির্ধারনের অধিকারের কথাই বলেছে |

    আমাদের দেশে হিজড়ে নামক যে গোষ্ঠী ও উপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষ যোগদান করেন | যদিও পুরনো চলতি ধারণা হল যে তাঁরা সবাই জন্মসূত্রেই ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বা অন্তর্লিঙ্গ, এখন এই বিষয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে যার থেকে আমরা জানি যে গোষ্ঠির মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক জন্মের সময় অন্তর্লিঙ্গ বা intersex হিসেবে চিহ্নিত হন (যাদের যৌনাঙ্গ ঠিক পুরুষাঙ্গ বা যোনী বলে চিহ্নিত করা যায় না), তুলনায় বেশিরভাগই জন্মসুত্রে ‘পুরুষ’ হিসেবে চিহ্নিত হন (৪) | কিন্তু জন্মসুত্রে যাই চিহ্নিত হন না কেন, লিঙ্গ-চিহ্ন নির্বিশেষে তাঁরা নিজেদের পরিচিতি মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গ বা ভিন্ন লিঙ্গ হিসেবে দিতে পারেন | রাস্তায়-ঘাটে যে হিজড়ে পেশায় নিযুক্ত মানুষদের দেখা যায়, তাঁরা অনেকেই তাঁদের শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন পরিবর্তন করেননি বা করতে পারেননি, হয় অর্থাভাব বা সুযোগের অভাবে, নয় কারণ তাঁরা সেটা করতে চান না | কারুর মানসিক লিঙ্গ পরিচয় ‘পুরুষ’ না হলেও তারা ‘পুরুষ’ যৌনাঙ্গ নিয়েই সুখী হতে পারেন (যেমন আমরা নিজে, এবং আমাদের অনেক রূপান্তরকামী বন্ধু, যাদের নাম এখানে করছি না কিন্তু যাঁরা যৌনাঙ্গের রূপান্তর করাতে চান না)| এরকম বহু মানুষের সাথে আমাদের পরিচিতি আছে যাঁরা তথাকথিত শারীরিক ‘পুরুষত্ব’ বজায় রেখেও হিজড়ে বা রূপান্তরকামী নারীর পরিচয় ধারণ করেন – কিন্তু প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই সেই পরিচিতি ধারণ করার পেছনে শুধু জীবিকা নয়, তাদের লিঙ্গ পরিচয়েরও ভূমিকা থাকে | হিজড়ে পেশার সাথে যুক্ত আমাদের এক বান্ধবী হেনার কথায়, “কেউ যদি মনের দিক দিয়ে ‘টোন্না’ [অর্থাৎ সামাজিক অর্থে পুরুষ] হয়, সে তো এই কাজটা করে উঠতে পারবে না | আমাদের ঘরের বাবারা বা দাদারা কি এই কাজটা করতে পারবে?” অর্থাৎ হিজড়ে পরিচয় ধারণ করার জন্য শুধু জীবিকা নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটা মানসিক প্রস্তুতিও লাগে, যেটা রূপান্তরকামী বা বৈকল্পিক লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের পক্ষেই সচরাচর সম্ভব হয়ে থাকে |

    বিবাহিত মানেই রূপান্তরকামী নয়, পুরুষ?

    চলচ্চিত্রে আরও একটি বিভ্রান্তিকর ধারণা দেখানো হয়েছে – ছবিটির মুখ্য চরিত্র সোমু পরিচালককে বোঝায় যে তাঁর ডেরায় কেউ ‘আসল হিজড়ে’ নয়, তাদের সকলেরই বউ বাচ্চা আছে | পরিচালক যখন সোমুকে তার মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করে, সোমু তাকে অতি নাটকীয় ভঙ্গিতে চুপ করতে বলে, “শসসস... হিজড়াদের কখনও সন্তান হয় না!!” অর্থাৎ ধরা হচ্ছে যে যেহেতু এই হিজড়েরা নাকি বিবাহিত, বউ-বাচ্চা আছে, অতয়েব তাঁরা ‘পুরুষ’, আসলে হিজড়ে নন | আমরা আগেই বলেছি যে কেউ শরীরক ভাবে “সুস্থ-সমর্থ পুরুষ” কি না সেটা দেখে তার লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ করা যায় না | কিন্তু বিয়ে বা যৌন সম্পর্কের ভিত্তিতে কি যায়?

    আমাদের সমাজে প্রচুর রূপান্তরকামী ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষেরা বিয়ে করেন, বউ থাকে, বাচ্চাও হয়, এক হতে পারে পারিবারিক ও সামাজিক চাপের কারণে, নয় কারণ তাঁরা নারীসঙ্গই পছন্দ করেন | সব মেয়েলি পুরুষেরা বা রূপান্তরকামী নারীরা (অর্থাৎ পুরুষ-থেকে-নারী রুপান্তর্কামিরা) যে পুরুষদের যৌনসঙ্গই পছন্দ করবেন, সেটা একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা | লিঙ্গ পরিচয় এবং যৌন পছন্দ দুটি আলাদা বিষয় | অর্থাৎ যে কোনো মানুষের মধ্যে লিঙ্গ ও যৌনতার বিভিন্ন রকমের সংমিশ্রন বা combination থাকতে পারে, কোনো হিজড়ে, কোতি বা জেনানা মানুষ যেমন পুরুষদের পছন্দ করতে পারেন তেমনি নারীদেরও পছন্দ করতে পারেন, ঠিক যেমন কোনো নারী-থেকে-পুরুষ রূপান্তরকামী মানুষ পুরুষ সঙ্গই চাইতে পারেন – সেই যৌন পছন্দের ভিত্তিতে তাঁদের আসলত্ব বা নকলত্ব যাচাই করা সম্ভব নয় | উদাহরণস্বরূপ প্রখ্যাত মার্কিন ক্রিয়াবিদ কেটলিন জেনারের কথা বলা যেতে পারে, যিনি সম্প্রতি রূপান্তরকামী মহিলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন | তিনি এ যাবৎ নারীদের প্রতিই আকৃষ্ট হয়েছেন এবং সেই সম্পর্কগুলি থেকে তাঁর একাধিক সন্তানও রয়েছে |

    আসলে আমাদের সমাজ লিঙ্গ-চিহ্ন, যৌন আচরণ এবং লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যে একটি সামঞ্জস্যের ধারনা তৈরী করে, আমাদের শেখায় যে লিঙ্গ-চিহ্ন, যৌন আচরণ এবং লিঙ্গ পরিচয় একে অপরের পরিপূরক, একটার ভিত্তিতে আরেকটা নির্ধারিত হওয়া উচিত | মানে যদি কারুর পুরুষ যৌনাঙ্গ থাকে তার মানসিক ও সামাজিক লিঙ্গ পরিচয় পুরুষ হবে, এবং সে নারীদের প্রতিই আকৃষ্ট হবে | এই লিঙ্গ নির্মান অনুযায়ী ভাবা হয় যে রূপান্তরকামী মানুষদের কোন ভাবে ‘ভুল শরীরে’ জন্ম হয়ে গেছে | যেমন কেউ শরীরে ‘পুরুষ’ হয়েও মনে নারী, সে তার শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন বদলাতে চায় এবং পুরুষদের প্রতিই আকৃষ্ট হয়, যাতে সামাজিক ধারণা অনুযায়ী আবার লিঙ্গ-চিহ্ন, মানসিক পরিচয় এবং যৌন আচরণের ‘সামঞ্জস্য’ ফিরে আসে | কিন্তু কেউ যদি শরীর না বদলিয়েই ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয় ধারণ করেন, বা প্রত্যাশিত যৌন আচরণ না করে অন্য ধরনের যৌন আচরণ করেন, তাহলে সেই মানুষদের বোঝা বা মানাটা আরেকটু কঠিন হয়ে পড়ে, যেহেতু লিঙ্গ সামঞ্জস্যের ধারণা অনুযায়ী তাদের পরিচয় ঠিক ছকের মধ্যে ‘খাপ’ খাওয়ানো যায় না | উক্ত চলচ্চিত্র এবং সাক্ষাতকারগুলিতে যখন বিবাহিত হওয়া বা নারীসঙ্গ পছন্দ করা কে পুরুষত্বের প্রমান হিসেবে পেশ করা হচ্ছে, তখন লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ে কিছু এইরকম কিছু ধারণাগত সমস্যা রয়ে যাচ্ছে |

    এই লিঙ্গ সামঞ্জস্যের ধারণার ওপরেই প্রশ্ন তোলার প্রয়োজন আছে | কে ঠিক করে দেয় যে একটা ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে একটা ধরনের সাজ-পোশাক এবং সামাজিক পরিচয় খাপ খাওয়াতে হবে? আমাদের মধ্যে পুরুষত্ব-নারীত্বের এবং শরীর-মন-পোশাক-আচরণের বিভিন্ন সংমিশ্রন কেন থাকতে পারবে না? কেন বলা হবে যে কিছু কম্বিনেশন ঠিক এবং বাকি গুলো ‘ভুল’? (এখানে আমরা যে রূপান্তরকামী মানুষেরা শারীরিক রূপান্তর করতে চান তাঁদের বিরুদ্ধে বলতে চাইছি না | কেউ তার নিজস্ব লিঙ্গ-ধারণা অনুযায়ী নিজের পরিচয়ের পূর্ণতা অর্জনের জন্যে শারীরিক রূপান্তর চাইতেই পারেন | সমস্যাটা হয় যদি শারীরিক রুপান্তরের আবশ্যিকতা সব প্রান্তিক বা বৈকল্পিক লিঙ্গের মানুষদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, বা শারীরিক রূপান্তর না করলে তাঁদের পরিচয়ের স্বীকৃতি দেওয়া না হয়) |

    আসল বনাম নকলের মিথ্যা বিভাজন

    শুধু যে লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা চলচ্চিত্র ও সাক্ষাতকারগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে তা নয়, একটি গোটা প্রান্তিক লিঙ্গের গোষ্ঠিকে নকল রূপান্তরকামী বা ‘ভান করা পুরুষ’ হিসেবে দেখিয়ে তাঁদের নিজস্ব পরিচয় ও অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে | বিভিন্ন সাক্ষাতকারে বর্ষালী হিজড়ে পরিভাষার ভুল ব্যাখ্যা করে প্রান্তিক লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বিভাজন সৃষ্টি করেছেন | উপরোক্ত এবেলার সাক্ষাতকারে উনি বলছেন ‘আকুয়া’ মানে সেই পুরুষ-থেকে-নারী রূপান্তরকামীরা যাঁদের “মধ্যে শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে মহিলা হওয়ার প্রবণতা বেশি”, আর জেনানা মানে ভান-করা পুরুষ, যারা নাকি মানসিক-শারীরিক দুই ভাবেই পুরুষ কিন্তু “নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তুলে ধরতে চান শুধুমাত্র টাকা রোজগারের জন্যই |” চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে সোমু ডেরায় বসবাসকারী ‘জেনানা’দের বলে, “তোমরা তো কেউ হিজড়ে নও!!” | সমবেত ‘জেনানা’রা প্রতুত্ত্বরে তাঁকে বোঝায়, তাঁরা অর্থকষ্টের জন্যই এই পরিচয় ধারণ করেছে, “আসল শুধু টাকা, টাকা!” |

    এই সমগ্র বয়ানে প্রান্তিক লিঙ্গের গোষ্ঠীদের পরিচয় এবং পরিভাষা বোঝার মধ্যে কিছু বড় গলদ রয়ে গেছে | হিজড়ে পরিভাষায় কোতি, জেনানা, ইত্যাদি বিভিন্ন শব্দ আছে, যেগুলো মেয়েলি পুরুষ ও রূপান্তরকামী নারী সহ একটি বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠী কে বোঝায় | যদিও ‘জেনানা’ বা ‘কোতি’ এই শব্দগুলি নানা ভাবে ব্যবহার করা হয়, তাদের বৃহৎ অর্থ হল এমন অনেক মানুষ যাঁরা ১) জন্মসুত্রে পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত, ২) লিঙ্গ পরিচয় অনুযায়ী মেয়েলি, নারী, বা রূপান্তরকামী, কিন্তু ৩) সাধারণত শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন বদলাননি (যদিও শারীরিক রুপান্তরের পরেও কেউ-কেউ কোতি বা জেনানা পরিচয় বজায় রাখতে পারেন) (৫)| ‘কোতি’ শব্দটি দুই বাংলায় এবং দক্ষিন ভারতে নিম্নবিত্ত প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের মধ্যে বেশি ব্যবহৃত হয়, পক্ষান্তরে ‘জেনানা’ হিন্দি বা উর্দুভাষী অঞ্চলে (যেমন লকনৌ বা দিল্লী শহরে) বেশি ব্যবহৃত হয় | জেনানা বা কোতিরা হিজড়ে গোষ্ঠীর রীতি-রেওয়াজ মেনে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করতেও পারেন, আবার নাও করতে পারেন | যাঁরা যোগদান করেন তাদের আকুয়া হিজড়ে বলা হয়ে থাকে, যতদিন না তারা লিঙ্গচ্ছেদন করছেন; যদি লিঙ্গচ্ছেদন করান তাহলে তাঁদের নির্বাণ হিজড়ে বলা হয় (৬)| যেহেতু জেনানা বা কোতি থেকেই আকুয়া হিজড়ে হয়, ‘আকুয়া’ আর ‘জেনানা’ কখনই বিপরীতার্থক শব্দ নয়, এবং জেনানা হওয়া আর ‘আসল’ হিজড়ে হওয়ার মধ্যেও কোনো বিরোধ নেই | এবং জেনানা বা কোতি কখনই এমন মানুষদের বোঝায় না যাঁরা সম্পূর্ণ সামাজিক অর্থে পুরুষ হয়েও ‘হিজড়ে’ হওয়ার ভান করেন – আগেই বলেছি, আমি বা আমার রূপান্তরকামী বন্ধুরা আজ পর্যন্ত এমন কোনো মানুষ দেখিনি যে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ পুরুষ কিন্তু শুধুমাত্র পেশার জন্য হিজড়ে সেজে থাকেন | পরিচালক একটি বাহ্যিক মাপকাঠি চাপিয়ে দিয়ে কার “মহিলা হওয়ার প্রবণতা বেশি” আর কার কম সেই ভিত্তিতে প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের ‘আসল’ বনাম ‘নকল’ ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন | কিন্তু “মহিলা হওয়ার প্রবণতা” থাকুক কি না থাকুক, জেনানা বা কোতিরাও কিন্তু তাঁদের মতন করেই ‘আসল’, ‘নারীত্ব’ বা ‘তৃতীয় লিঙ্গের’ সামাজিক ধারণার মধ্যে তাঁরা কতটা খাপ খেতে পারছেন তার ওপর তাঁদের ‘আসলত্ব’ নির্ভর করে না | অতয়েব এইক্ষেত্রে পরিচালক একটি ‘আসলত্বের’ মাপকাঠি চাপিয়ে দিয়ে একটা সমগ্র সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব এবং ইতিহাস অস্বীকার করেছেন |

    কিছু সাক্ষাতকারে পরিচালক বলেছেন যে তিনি নাকি কিছু হিজড়ে মানুষের সাথে কথা বলেই চলচ্চিত্রটি নির্মান করেছেন | তাঁরাই নাকি তাঁকে এই উপরোক্ত ‘তথ্য’ গুলি দিয়েছে | এখানে বোঝা প্রয়োজন যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের সাথে কথা বলে, কোনো সম্প্রদায়ের সাথে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা না অর্জন করে, এই ধরনের উপস্থাপনা করতে যাওয়ার মধ্যে প্রচুর ঝুঁকি বা সমস্যা থাকতে পারে | যেমন হিজড়ে ঘরানারা অনেক সময়েই তাদের প্রতিদ্বন্দীদের “নকল” প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে (৭)| এমন হতে পারে যে কোনো হিজড়ে গোষ্ঠির সদস্য এই প্রতিদ্বন্দিতার কারণে বর্ষালীকে বুঝিয়েছিলেন যে যারা রাস্তায় ভিক্ষা করে তারা ‘আসল’ রূপান্তরকামী নয় | উনি এই রাজনীতি বুঝতে পারেননি বা বোঝার চেষ্টা করেননি, যদিও এই সম্প্রদায়দের সম্পর্কে কিছু গবেষণাপত্র বা বই পড়লেই তিনি এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের কথা জানতে পারতেন | গভীরে না মিশে বা গবেষণা না করে উনি উনার অতন্ত্য আংশিক অভিজ্ঞতাকেই সামগ্রিক ‘সত্য’ বলে তুলে ধরেছেন |

    অভিনেতা সুজয় ভৌমিকের মতে, যদি এটা সত্যিই একটি ব্যাতিক্রমী ব্যাক্তির কাহিনী হয় যিনি মানসিক ভাবে আর পাঁচটা পুরুষের থেকে কোনোভাবে আলাদা না হয়েও হিজড়ে হওয়ার ভান করেন, সেই ক্ষেত্রে ছবিটির নাম হয়ত দেওয়া যেত ‘পুরুষ যখন জেনানা’ | সেটা না করে তিনি সমগ্র ‘জেনানা’দের নিয়ে বলতে গেছেন, এবং তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অনুমতি না নিয়ে তাঁদের পরিচয়ের ভুল উপস্থাপনা করেছেন |

    চলচ্চিত্রের ক্ষতিকারক প্রকোপ

    চলচ্চিত্রে শুধু জেনানা বা কোতি পরিচয় নয়, হিজড়ে ঘরের রীতি-রেওয়াজ সম্মন্ধেও বিভিন্ন ভুল ধারণা উপস্থাপিত হয়েছে | ছবিটিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে যে একটি হিজড়ে ঘরানায় একজন মূলস্রোতের পুরুষকে ‘হিজড়ে’ হতে শেখানো হচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণ ভাবে অবাস্তব এবং কাল্পনিক | ছবিটিতে যেভাবে একটা হিজড়ে ঘরের জৌলুস, জমিদারী চাল, বাইজি নাচ ইত্যাদি দেখানো হয়েছে, সেগুলিও অত্যন্ত অবাস্তব | আমরা এ যাবত পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জায়গায় অন্তত সাত-আটটি হিজড়ে ঘরে অনেকবারই গেছি, প্রচুর হিজড়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলেছি, কোনো হিজড়ে ঘরে মূলস্রোতের পুরুষদের এইরকম ট্রেনিং দেওয়া হয় না, কোনো হিজড়ে দল মূলস্রোতের পুরুষদের শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য ‘হিজড়ে’ সাজিয়ে তাদের দলে ঢোকায় না – সে তাঁরা বাচ্চা-নাচানোর কাজ করুক, কি রাস্তায় বা ট্রেনে ছল্লা অর্থাৎ আশির্বাদের বিনিময়ে টাকা চাওয়ার কাজ করুক | মূলস্রোতের মধ্যে হিজড়েদের নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলি আছে, যেমন তারা নাকি বাচ্চাদের ধরে নিয়ে গিয়ে জবরদস্তি হিজড়ে ঘরে ঢুকিয়ে দায়, চলচ্চিত্রে সেই ধরনের ধারণাগুলিকেই ইন্ধন যোগান হয়েছে |

    এছাড়াও হিজড়ে পেশাকে একটা অত্যন্ত ভয়ানক এবং গর্হিত কাজ হিসেবে দেখানো হয়েছে | সোমু তার পূর্বতন পুরুষ পরিচিতি থেকে হিজড়ে পরিচিতি ধারণ করা নিয়ে অত্যন্ত লজ্জিত ও শঙ্কিত, একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে তিনি বলেন তিনি যেই পেশাকে আগে সবচেয়ে “ঘৃণ্য কাজ” হিসেবে দেখতেন, সেটাই আজ তাঁর পেশা | সোমুর কাহিনী কে পুরুষ থেকে হিজড়ের অবস্থায় অবতরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে (‘প্রথম’ লিঙ্গ থেকে ‘তৃতীয়’ লিঙ্গে অবতরণ)| সিনেমার শেষের দিকে দেখানো হয়েছে যে পরিচালক তার ক্যামেরামানকে সোমুর এলাকার মতন ভয়ানক জায়গা থেকে চলে চেতে বলছেন | এই ধরনের চিত্রনাট্য ও দৃশ্যায়নের মাধ্যমে হিজড়েদের প্রতি যে সামাজিক ভীতি কাজ করে সেই ভীতিকেই চাগিয়ে দেওয়া হয়েছে |

    এই যে এতগুলি ভুল ধারণা চলচ্চিত্রে ও সাক্ষাতকারগুলির মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, সেগুলো শুধুমাত্র ভুল নয়, অত্যন্ত ভাবে ক্ষতিকারকও বটে | কারণ আমাদের সমাজ এবং পুলিশ-প্রশাসন এই ‘আসলত্বের’ যাচাই করার ছলে হিজড়ে-কোতি-জেনানা মানুষদের ওপর নানারকম অত্যাচার করে থাকে | এমন অনেক নজির আছে যে পুলিশ ট্রেন বা রাস্তা-ঘাট থেকে হিজড়ে মানুষদের বা রূপান্তরকামী যৌনকর্মীদের জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে তারা ‘আসল’ কি না সেটা বোঝার জন্য তাদের যৌনাঙ্গ নিরীক্ষণ করেছে, যেটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়েই পড়ে | এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ‘নকল’দের এই পেশাগুলি থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে অন্য কোনো আর্থিক বিকল্প না দিয়েই | সেই প্রাতিষ্ঠানিক হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে শেষে আবার বলছি, লিঙ্গ-চিহ্ন বা যৌন সম্পর্কের ভিত্তিতে লিঙ্গ পরিচয় যাচাই না করে বরং শারীরিক লিঙ্গ-চিহ্ন, মানসিক লিঙ্গ পরিচয় ও যৌন পছন্দের যে হাজারো রকম কম্বিনেশন বা সংমিশ্রন থাকতে পারে, সেই বৈচিত্রময় সম্ভাবনাগুলি স্বীকার করার ও সম্মান করার হয়ত সময় এসেছে |

    লেখকদ্বয়ের পরিচিতি: অনি দত্ত আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন গবেষক; রায়না রায় বহু বছর যাবৎ কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ তথা নয়া দিল্লীতে একজন সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করে চলেছেন |

    কৃতজ্ঞতা স্বীকার: এই লেখাটি আমরা আমাদের রূপান্তরকামী-হিজড়ে-কোতি বন্ধুদের জিজ্ঞেস করে এবং তাঁদের পরামর্শ নিয়েই লিখেছি | অনেক ধন্যবাদ সায়ন ভট্টাচার্যকে এই বিষয়টি সম্মন্ধে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য, এবং সুজয় ভৌমিক ও হেনাকে তাঁদের পরামর্শের জন্য |

    অন্তটিকা:

    ১) ‘জেনানা’ পরিচয় ও গোষ্ঠী সম্পর্কে অধিক জানতে নিম্নোক্ত প্রবন্ধ গুলি দেখতে পারেন: Ila Nagar, “The Kotis of Lucknow: an insider perspective”, Pukaar, July 2009, Issue 66; Lawrence Cohen, ‘The Pleasures of Castration: The Postoperative Status of Hijras, Jankhas and Academics”, in Abramson & Pinkerton (Ed.s), Sexual Nature/Sexual Culture, University of Chicago Press: Chicago.
    ২) শারীরিক লিঙ্গ যে একটি সামাজিক চিহ্নিতকরণ সেই বিষয়ে মার্কিন ট্রান্স বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মী ডিন স্পেডের নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি দেখতে পারেন: http://www.deanspade.net/wp-content/uploads/2011/02/Purportedly-Gendered-Body-Parts.pdf
    ৩) লিঙ্গ পরিচয়ের বৈচিত্রের বিষয়ে আমাদের মধ্যে একজনের লেখা আরেকটি প্রবন্ধ দেখতে পারেন: অনিরুদ্ধ দত্ত, “কোন রূপের অন্তর: ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ও ‘রূপান্তরকামী’ পরিচয় বর্গ ও কিছু লিঙ্গ-প্রান্তিক মানুষদের আত্মপ্রকাশের ভাষা”, আমার যৌনতা, গুরুচন্ডালি: কলকাতা |
    ৪) এই বিষয়ে দেখুন: অজয় মজুমদার ও নিলয় বসু, ভারতের হিজড়ে সমাজ, দীপ প্রকাশন, কলকাতা; Gayatri Reddy, With Respect to Sex: Negotiating Hijra Identity in South India, University of Chicago Press: Chicago.
    ৫) Ila Nagar, “The Kotis of Lucknow: an insider perspective”, Pukaar, July 2009, Issue 66).
    ৬) এই বিষয়ে দেখুন: অজয় মজুমদার ও নিলয় বসু, ভারতের হিজড়ে সমাজ, দীপ প্রকাশন, কলকাতা; Gayatri Reddy, With Respect to Sex: Negotiating Hijra Identity in South India, University of Chicago Press: Chicago.
    ৭) প্রতিদ্বন্দীদের নকল প্রতিপন্ন করার রাজনীতির বিষয়ে দেখতে পারেন: Kira Hall, “Intertextual Sexuality: Parodies of Class, Identity and Desire in Liminal Delhi”, Journal of Linguistic Anthropology, Vol. 15, Issue 1.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১১ এপ্রিল ২০১৬ | ২১৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:১৯52563
  • চমৎকার ব্যখ্যা। জেনানা দেখিনি - তবে আনন্দবাজারের লেখাটা (কড়চা) পড়েছিলাম - তখনই কিছু খটকা লেগেছিল। এখন অনেকটা বোঝা গেল বিষয়টা।
  • Ani Dutta | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৮:২১52564
  • T
  • দেবব্রত | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ১২:২৩52562
  • চোখ বোলালাম , বিস্তারে পড়ব বলে তুলে রাখলাম আপাতত ।
  • সুকি | ***:*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৭52565
  • এই লেখায় কুন্ঠিত হয়েই একটা কমেন্ট করি - বিশেষ করে লেখকদ্বয় যখন এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ বলে উল্লিখিত হয়েছেন এখানে -

    মানে বলছিলাম কি ৬ নম্বর রেফারেন্সে যখন অজয় ও নিলয় বাবুর বইটার নামই নিলেন, তখন বেছে বেছে শুধু নিজের প্রয়োজনীয় অংশটাই নিলেন? আর বাকি অনেক কিছু উনারা যা লিখেছেন, যেটা আবার এই পরিচলকের কমেন্টকে সমর্থন করে সেটা লিখলেন না? অবশ্য সব কিছু ঘেঁটে দিয়ে লেখার উদাহরন এখানে এই প্রথম নয়!

    এবার দেখা যাক ভারতের হিজড়ে সমাজ বইতে কি লেখা হয়েছে - এই বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ের নাম হল গিয়ে "ছদ্মবেশী হিজড়ে" - আর সেখানে এই আকুয়া, জেনানা, ছিবড়ি ও ছিন্নি এই নিয়ে আলোচনা আছে। জেনানা প্রসঙ্গে লেখা আছে - "উর্দূ ও হিন্দীতে 'জেনানা' বলতে 'স্ত্রী' বোঝালেও, হিজড়ে সমাজে এর স্বতন্ত্র অর্থ আছে। এখানে জেনানা হল স্ত্রী সাজে সজ্জিত কোন পুরুষ। তবে এরা 'আকুয়া' নয়। আকুয়াদের সাথে এদের পার্থক্য এক্টাই যে, এরা কোনও বিশেষ মানসিকতার দ্বারা আক্রান্ত ন্য। নারী বেশ ধারণের মধ্যে দিয়ে এরা কোন সুখানূভুতি অনুভব করে না। যৌন প্রতিবন্ধী হিসাবে পরিচিত হয়ে এরা সমাজের কাছ থেকে সর্বপ্রকার বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে চায়। কম খেটে আসদুপায়ে অধিক উপার্জনের জন্যই তাদের এই হিজড়ে বেশ ধারণ।
  • সুকি | ***:*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৮52566
  • বেশী টাইপ করতে পারব না - তবে আরও একটু লিখি অজয় ও নিলয় বাবুর বই থেকে -

    "সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিজড়ে দলের এই সব জেনানারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমাজের একেবারে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষ। অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি ঝুপড়ি-বস্তি এলাকা থেকেই হিজড়েরা এদের সংগ্রহ করে। এদের কেউ কেউ অনাথ। সাধারনট এরা স্বেচ্ছায় আসে হিজড়ে দলে। দারিদ্র্য, ভবিষ্যত জীবনের অনৈশ্চয়তা, অল্প পরিশ্রমে অর্থোপার্জনের হাতছানি প্রভৃতি এই সব পুরুষত্বহীন ব্যক্তিদের টেনে আনে হিজড়ে-ডেরায়। এবার আসা যাক যৌন ক্ষমতা সম্পন্ন জেনানাদের কথায়। এরা শারীকিক বো মানসিক ব্দিক দিয়ে পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষ। তবে ধান্দাবাজ। এদের অনেকেরই স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আছে।"
  • সুকি | ***:*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪২52567
  • এছাড়াও ওই বই টিতে রেফারেন্স সহ (পাতা ৫২) অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে পুরুষ/যুবককে জোর করে হিজড়ে বানানো হয়েছে - এই ঘটনাগুলি ১৯৮৮-১৯৯৪ সালের মধ্যে খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়ে ছিল এবং পুলিশি কেস ও হয়েছিল।

    আরো অনেক কিছু লেখা যায় - তা মূল কথা হচ্ছে লিঙ্গ টিঙ্গ এই সব নিয়ে হাই হাই করে ঝাপিয়ে পড়ার আগে ন্যাজটা তুলে এঁড়ে না বকনা সেটা দেখে নিলে মনে হয় একটু ভালো হয়।

    আর আমার নিজের অভিজ্ঞতা নাই বা লিখলাম - তা মোটামুটি অজয় এবং নিলয়বাবুর সাথে মিলে যায়।
  • dipanjan | ***:*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৪52568
  • খুব জরুরী লেখা। বাংলা মূলস্রোত মিডিয়ার অজ্ঞতা দেখে মনে হয় যৌনতা আর লিঙ্গচেতনা মাধ্যমিক পাঠক্রমে আবশ্যক বিষয় হওয়া উচিত।

    পেশার স্বার্থে পুরুষ পরিচয় লুকিয়ে হিজড়ে সাজার মত অবান্তর চিন্তা একমাত্র গভীর অজ্ঞতা থেকেই আসতে পারে। কোনো গবেষণা বা প্রান্তিক লিঙ্গের সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছাড়াই বোঝা যায় পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পৌরুষ কেউ কখনো পেশার তাগিদে ছাড়ে না। বিশেষত ভারতে যেখানে হিজড়ে সম্প্রদায় প্রান্তিক এবং ঘৃণ্য এবং জীবিকার সুযোগ মূলত ভিক্ষা আর দেহব্যবসা। অন্তরের তাগিদ না থাকলে কেউ কখনো এর জন্য মেল প্রিভিলেজ ছাড়ে ? ওকামের রেজর ইত্যাদি।

    যৌনাঙ্গ, যৌনতা, লিঙ্গ চেতনা একে অন্যের নির্ধারক - এই মৌলিক ভুল ধারণা জনপ্রিয় না হলে এই ধরণের ভুল সিনেমার (বা অন্য কন্টেন্টের ) সাপ্লাই ডিমান্ড কিছুই থাকত না । পেনিস মানেই পুরুষ নয় । পুরুষ মানেই পেনিস নয় । পেনিস থাকলেই নারী আকর্ষণ আসে না। নারীদের প্রতি আকৃষ্ট মানেই পুরুষ নয়। সিমেন থেকে সন্তান হলেই পুরুষ নয়।

    হাজার হাজার কম্বিনেশন সম্ভব। না, আট (২ exp ৩) না - হাজার হাজার। কারণ যৌনাঙ্গ, যৌনতা, আর লিঙ্গ চেতনা কোনটাই ঠিক বাইনারি না, স্পেকট্রাম। তাই don't assume, ask . জেন্ডার দুটো রেডিও বাটন না, ফ্রি টেক্সট বক্স । যা খুশি তাই লেখার। ফেসবুকের মত মূলস্রোত মিডিয়াম শিখে গেল, আর বাংলা অন্য সিনেমার এই অবস্থা ?
  • dd | ***:*** | ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:১৫52569
  • লিং তো দিতে পরবো না। তবে কিছুদিন আগেই - কিছুদিন মানে চার পাঁচ মাস আগে, ব্যাংগালোরের কাগজেও বেড়িয়েছিলো এইরকম ঘটনা।

    ট্র্যাফিক সিগন্যালে টাকা চাইবার জন্য পুলিশ অনেক হিজরাকে গেরেপতার করে, তাদের অনেকেই আদৌ হিজরা নয়। জাস্ট সহজেই প্রচুর টাকা রোজগারের মতলবে হিজরে "সেজে" ও তাদের মতন অংগভংগী করে রোজগার করতো। যারা জেনুইন হিজরে তারাই পুলিশের কাছে এই নিয়ে অনুযোগ করে ও সেই মতন ব্যবস্থা হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন