এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ধ্যান ও  স্নায়ুবিজ্ঞান 

    অরিন লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ১২ জুন ২০২৪ | ৬৫১০ বার পঠিত | রেটিং ৩.৮ (৪ জন)
  • | |

     
    গোড়ার কথা: কি, কেন, ইত্যাদি 
     
    এই প্রবন্ধটির আলোচনার বিষয় ধ্যান এবং স্নায়ুবিজ্ঞানএর পারস্পরিক সম্পর্ক, বা বলা যেতে পারে স্নায়ুবিজ্ঞান এর "চোখ" দিয়ে ধ্যানের মতো একটি বিষয়কে বোঝার চেষ্টা করা। আজ অবধি এই বিষয়ে মোটামুটি যা যা জানা হয়েছে ও জানা হচ্ছে তার একটি অতি সংক্ষিপ্ত, হয়তো কিছুটা লঘু ধরণের অবতরণিকা পেশ করা। এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে হঠাৎ করে এইরকম একটি বিষয় নিয়ে, বিশেষ করে ধ্যান ও স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে দু চার কথা পাড়তে গেলে যা হয়, আপনারা যারা পাঠক আপনাদের কারো কারো মনে হতে পারে যে কোথায় কি নিয়ে গপ্পো? মানে কোথায় ধ্যানের মতো গুরুগম্ভীর ধর্মীয় বিষয়, রীতিমতন সাধারণ ভাবে যার সঙ্গে নানারকমের ধর্ম কর্মের যোগ প্রবল, আর কোথায় নিউরোসায়েন্স, অতি জটিল বিজ্ঞান, বিশেষত মস্তিষ্কের জটিল অন্তর্জগতের হদিস দেওয়া যার কাজ - এই দুটো বিপ্রতীপ বিষয় কি তেল আর জল মেশানোর মতো অসম্ভব ব্যাপার নয়? এখানে আমার উত্তর "না নয় :-) ",  কিন্তু কেন নয়, ক্রমশ প্রকাশ্য । 
     
    এ নিয়ে সন্দেহ নেই যে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুবিজ্ঞান অতি জটিল বিষয়, এবং অনেকেই হয়তো ভাবেন যে যাদের ও বিষয়ে ব্যুৎপত্তি নেই, তাদের পক্ষে ও বিষয় না যায় বোঝা, না যায় বোঝানো । তার থেকে অপেক্ষাকৃত ভাবে ধ্যান ব্যাপারটি আপাতভাবে আরেকটু সোজাসাপ্টা ও হাতেকলমে করে দেখা যেতে পারে। এইটা আমার মনে হয়, তাই এই লেখাটিতে প্রথমে ধ্যান ব্যাপারটিকে নিয়ে চর্চা করা যাক। তারপর পর্যায়ক্রমে ধ্যানের সঙ্গে নানান রকমের ব্যবহারিক প্রয়োগ, এই করে আমরা স্নায়ু, মস্তিষ্ক, সেখান থেকে নির্গত সংবেদনাকে ধরার জন্য ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাফি (EEG), মস্তিষ্কের অভ্যন্তর দেখার জন্য MRI ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে, কারণ ধ্যান, এবং মনোবিজ্ঞান এবং স্নায়ুবিজ্ঞান ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ের অবতারণা করতে গেলে এই বিষয়সমূহ আসবেই ।
     
    লেখাটার গোড়ায় এখানে একটা কৈফিয়ত দেবার ব্যাপার আছে। সেটা এই যে আমাদের এই আলোচনা কিন্তু ধ্যানের ধর্মীয় দিকগুলো নিয়ে আমরা করব না, আমরা বরং বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখার চেষ্টা করব। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে ধ্যানের ধর্মীয় ব্যাপারটি কম গুরুত্বপূর্ণ, বরং উল্টোটা। ধ্যানের অবশ্যই একটি ধর্মীয় দিক রয়েছে, এবং সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এবং সে দিকটি বিভিন্ন ধর্মের ধ্যানের চর্চায় দেখা যায়। উপনিষদিক ব্রাহ্মণ্যাধৰ্মে যেমন হঠযোগ (বিশেষ করে প্রাণায়াম প্রক্রিয়া ইত্যাদিতে) এবং রাজযোগে ধ্যানের অপরিসীম গুরুত্ব, তেমনি বৌদ্ধধর্মে অনপনসতী (শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে নজর রেখে ধ্যান), বা কায়াগত সতী (শরীরের বিভিন্ন অংশে নজর রেখে ধ্যান) বা বিপাসনা (আসলে বলা উচিত বিপস্যনা), তেমনি আবার খ্রীষ্ট ধর্মেও সুপ্রাচীন কাল থেকে ধ্যানের তাৎপর্য রয়েছে (মরু যাজকদের সূত্রে, desert fathers , দেখুন, https://www.contemplativeoutreach.org/the-christian-contemplative-tradition/ ), তেমনি ইসলাম ধর্মেও ধ্যানের  ভূমিকা রয়েছে।  সেইসব জটিল পারমার্থিক বিষয়ের মধ্যে না গিয়ে আমরা আপাতত ধ্যান কি সেই দিকটায় প্রাথমিক মনোনিবেশ করি, কারণ ধ্যান কি ও কত রকমের । এছাড়াও ধ্যান বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যে কতরকমের অদ্ভুত ধারণা আমাদের সমাজে আছে, সে সমস্ত নিয়ে দু একটি কথা আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে নয়। এখানে আরেকবার লিখে রাখা যাক যে  ধ্যান মানেই ধর্ম-কর্মের ব্যাপার নয়, এই ব্যাপারটা স্পষ্ট করে না লিখলে এ আলোচনা এগোনো যাবে না। 
     
    ধ্যান বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা 

    এক কথায় ধ্যান কথার সঙ্গে  মনোনিবেশ বা মনঃসংযোগ ব্যাপারটির একটি যোগাযোগ রয়েছে, যদিও সচরাচর বাংলা ভাষায় ধ্যান কথাটি বললে সেই ব্যাপারটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে না । সে তুলনায় হিন্দি ভাষায় যদি "মন দিন" বলতে হয়, বলা হয় "কৃপয়া ধ্যান দিজিয়ে"। আমরা বাংলা ভাষায় ধ্যান বলতে অনেকটা এইরকম একটা ছবির কথা ভাবি সাধারণত :
     

    (জনৈকা ধ্যানরতা)
     
    ছবিটা "মন দিয়ে" দেখুন । ছবিতে যে মানুষটিকে দেখা যাচ্ছে তাঁর চোখদুটি বন্ধ, দুই হাত দুই হাঁটুতে রেখে, তিনি  বসে আছেন। ধ্যানরত লিখলাম বটে, তিনি কি প্রকৃত পক্ষে ধ্যান করছেন? অস্যার্থ , কারোর এই রকম ছবি দেখে কি বোঝা যায় যে  তিনি সত্যি সত্যি ধ্যান করছেন? সেটা আমরা জানছি কি করে? ধ্যান ব্যাপারটা কি শুধুই হাতের মুদ্রা আর বিশেষ রকম পিঠ টান টান  করে বসে থাকার ব্যাপার? ইনি  ধ্যান আদৌ করছেন কিনা আমরা কিন্তু জানি না, কাজেই যে কেউ তাঁর ধ্যানস্থ অবস্থায় বসে থাকার নানাবিধ ছবি দেখাতে  পারেন (আজকাল বৈদ্যুতিক সামাজিক মাধ্যমের যুগে অনেকেই সেই ধরণের ছবি পেশ করে থাকেন), তা থেকে কিন্তু প্রমাণিত হয় না যে তিনি অভিনয় করছেন, না সত্যিকারের ধ্যান করছেন । আপাত ছবি দেখে যদি সত্যিকারের ধ্যানের কথা ভাবা যায়, তাহলে ভুল হবে । একথা লিখছি কেন?  একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করি । 
     
    চুপটি করে বসে থাকো, কিছু কোরো না
    যেমন ধরুন, ছোট বয়েসে  "চুপটি  করে বসে থাকো, কিচ্ছু করো না" এই কথাটা আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি । কিন্তু এই ব্যাপারটাই, যে কোন কাজ কর্ম না করে চুপ করে বসে থাকার ব্যাপারটি প্রাপ্ত বয়েসে কেমন হয়?   মনে করুন আপনি স্থির হয়ে বসে থাকা মনস্থ করলেন। আরো মনে করুন আপনি স্থির করলেন প্রায় ২০-২৫ মিনিট মতন ঐরকম এক ঠায় একটি চেয়ারে বা আসনে বসে থাকবেন। কাজ কর্ম কিছু করবেন না, শুধু এক জায়গায় চোখ বুজে চুপ করে বসে থাকবেন। প্রথমত ঐরকম করে বসে থাকা, নেহাত সহজ নয়, বা করলেও যেটি অবধারিত ভাবে হবে, মনে নানান রকমের চিন্তা ভিড় করে আসতে থাকবে, মন যেন জংলী বাঁদরের  মতন, এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়ায় (বৌদ্ধ ধর্মে এই মনের অবস্থাকে বলে "কপিচিত্ত ", আমরা আপাতত ধর্মকর্ম জাতীয় আলোচনা না করা মনস্থ করেছি, অতএব এ নিয়ে কথা বাড়াবো না)। এখন "কপিচিত্ত " দশা প্রাপ্ত হলে যা হয়, মনে নানান রকমের চিন্তা ভিড় করে আসে, এক চিন্তা অন্য চিন্তায় মিশে যায় বিস্তর দিবাস্বপ্ন দেখা হয়। বাইরে থেকে আপনাকে দেখলে মনে হবে আপনি বুঝি গভীর ধ্যানে নিমগ্ন, আসলে তা তো নয়। এবং এই ব্যাপারটি ধ্যানও নয় কারণ ধ্যানের অন্যতম শর্ত  মনোনিবেশ করা, সেটি না হলে ধ্যান বলা যাবে না।
     
    এবার আমরা আরেকবার বিষয়টিকে বিবেচনা করে দেখি । এইবার, আবার, বসে থাকার একই ব্যাপার, কিন্তু আগের থেকে এবারের তফাৎ, এবার চোখ বন্ধ করে ও সুখাসনে উপবেশিত হয়ে আপনি "মনোনিবেশ" করবেন, মনকে একেবারে লাগামহীন অবস্থায় ছেড়ে দেবেন না । অতএব আবার সেই  ব্যাপার, একই রকমের বসার ভঙ্গি, এবারও ২০ মিনিট ঘড়ি ধরে একটি নরম গদিতে ধরুন আসন পিঁড়ি হয়ে বসলেন, বা একটি চেয়ারে বসলেন । চোখ বন্ধ করলেন, এবং , এইবার স্থির করলেন যে "মনোনিবেশ" করবেন, মনকে লাগামহীন ঘুরতে দেবেন না । এই অবধি তো হল, এখন মনোনিবেশ করবেন কিসে? 
     
    সব ধ্যান একরকম নয় (যে ধরণের ধ্যানের কথা আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করছি না )
     

    এইখানে দুটি কথা বলার আছে। প্রথমত, মনে করুন মনোনিবেশ করবেন কোনো একটি রূপকল্পনায়, কোনো একটি  শব্দে, বা কোন একটি  মন্ত্রে ।  মহাঋষি মহেশ যোগী বলতেন শব্দের ওপর "ধ্যান দিতে", যাকে এখন বলা হয় transcendental meditation । এই ধরণের ধ্যান করার সময় অন্য কোন কিছুকে মনে স্থান দেওয়া যাবে না । অনেকে তাই এই ধরণের ধ্যান কে চিন্তাশূণ্য ধ্যান বলেন । এই জাতীয় ধ্যান বা মনোনিবেশ আমাদের এই আলোচনার বিষয় নয়, অন্য কোনো সময় একে নিয়ে চর্চা করা যাবে। দ্বিতীয়ত, আমরা যে ধরণের ধ্যান নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করতে চাই তাকে "মুক্ত ধ্যান" (open awareness meditation) বলা যেতে পারে। সে কিরকম ধ্যান? আসছি সে কথায় ।
     
    আমাদের আলোচ্য ধ্যান: মনোনিবেশিত ধ্যান বা Mindfulness Meditation
     
    আগের বারের মতন এবারেও আপনি মনে করুন ২০-২৫ মিনিট সময় নিয়ে ঘড়ি ধরে ধ্যান করতে শুরু করেছেন। এইবার আপনি "মন" দেবেন আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি, আপনার নাসারন্ধ্রে শ্বাস নেবার সময় হাওয়া প্রবেশ করছে, শ্বাস নির্গত হচ্ছে ওই পথে, আপনি তার প্রতি মনোনিবেশ করবেন । এবার দেখবেন কিছু পরে পূর্ববর্ণিত কপিচিত্তের কার্যকলাপ শুরু হবে, আপনার মনে নানান রকমের চিন্তাভাবনা আসতে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনি সেইসব চিন্তাসমূহ দূরে কোথাও সরিয়ে রাখবেন না, বরং নিজেকে বলুন যে "আমি আর আমার মন আমার চিন্তা এক নয়, অতএব সবিশেষ কৌতূহল নিয়ে তাদের দেখি", এই বলে  নিজের শরীর থেকে মন সরিয়ে নিয়ে কৌতূহল সহকারে এই যে নানান ধরণের চিন্তা মনে আসছে, তাদের দেখতে থাকুন ।  এই ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়, এই কাজটি করতে আপনার সময় লাগবে, ধৈর্য্য লাগবে । আপনার ভাবনাচিন্তা এমন ভাবে  "দেখতে" থাকুন, যেন গ্যালারিতে বসে খেলা বা নাটক দেখছেন । চিন্তার উদয় হওয়া মাত্রই, তাদের একটি নাম দিন, এবং তারপর আবার পুনরায় আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি  মনোনিবেশ করুন। যেমন ধরুন, ধ্যান শুরু করেছেন, শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে নজর রাখতে শুরু করেছেন, এমন সময় মনে একটি চিন্তা উদিত হল  যে অমুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, এখন অবধি করা হয়ে ওঠেনি । সে চিন্তা ভারী প্রবল হয়ে মনে উপস্থিত হল । এখন আপনি ধ্যান করা ছেড়ে উঠে গিয়ে অমুকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, কিন্তু তা না করে, এই চিন্তাটির যে উদয় হয়েছে, তার প্রতি কৌতূহল প্রকাশ করে মনে মনে নিঃশব্দে নিজেকে বলতে লাগলেন "যোগাযোগ", "যোগাযোগ", এবং একাগ্র মনে আবার শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি নজর ফিরিয়ে আনলেন । এই ধরণের যে ধ্যান, যেখানে মনোসংযোগ করা হচ্ছে ঠিকই, তবে অন্যান্য ধারণাকে দেখে, তাদের অগ্রাহ্য করা হচ্ছে না, এই ধরণের ধ্যান নিয়ে আমাদের আলোচনা (এর ইংরেজি পরিভাষায় "open awareness meditation" বলা হয়, আমরা বাংলা করে বলতে পারি "মুক্ত চেতনার ধ্যান" ।
     
    আকাশ ও মেঘ 
     
    এবার এখানে একটা ব্যাপার নজর করুন । এই যে পদ্ধতিতে ধ্যানের কথা বলা হচ্ছে, এই যে শ্বাসের প্রতি মন নিবিষ্ট রেখে অন্যান্য যে সমস্ত চিন্তা ভাবনা মনে আসছে তাকে চিহ্নিত করতে থাকছেন, তাতে করে কিন্তু মন থেকে চিন্তা "দূর" করার কোন  ব্যাপার নেই,  মনকে "চিন্তাশূণ্য" করার কোন প্রয়োজন নেই। ক্রমাগত যদি চিন্তা ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের উদয় এবং অস্ত যাওয়া লক্ষ করতে থাকেন , তাহলে একটা ব্যাপার অচিরে বুঝতে পারবেন।  প্রতিবার এই যে চিন্তাভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করতে থাকবেন, এরা একবার করে উদিত হবে, তারপর আবার মিলিয়ে যাবে। ধ্যানের বিভিন্ন ঘরানায় (বিশেষত বিভিন্ন ধর্মে), এর একটা উপমা দেওয়া হয়, এ যেন অনেকটা নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনার মতন ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের পূজা ও প্রার্থনা পর্যায়ের "মাঝে মাঝে তবে দেখা পাই" গানের কথা স্মরণ করলে দেখবেন কবি লিখেছিলেন, "কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না", এও তাই । আপনার হৃদয় একটি আকাশের মতন, সেখানে নানান চিন্তা ভাবনা মেঘের মতন আসে, কিছু সময় যেন ভেসে বেড়ায়, তারপর মিলিয়ে যায় । আপনার মন আকাশ, আর চিন্তা ভাবনা, ধারণাসমূহ মেঘের মতন ভেসে বেড়ায় ।  উপনিষদেও "চিদাকাশ" কথাটির ঐরকম একটি  ধারণা পাওয়া যায় । এই রকম করে, আপনি যতক্ষণ অবধি  ধ্যান করবেন, আপনার মনে একেকবার একেকটি চিন্তা আসতে থাকবে, আপনি তাদের চিহ্নিত করবেন, তারপর আবার ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে মন নিবদ্ধ করতে থাকবেন । কালক্রমে ক্রমশ এলোমেলো চিন্তা ভাবনার মনে আসা যাওয়া কমে আসবে, মন পুরোপুরি শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি নিবদ্ধ হবে। আমি যেভাবে লিখলাম, কথাটা লেখা সহজ, কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটি অমন সহজ নয় । বেশ কয়েকদিন নিয়ম করে ধ্যান করতে থাকলে তখন দেখবেন এই ব্যাপারটি হয়তো কিছুটা সম্ভব হবে, তবে সে হতে দীর্ঘ সময় ধরে আপনাকে প্রায় প্রতিদিন কিছুটা সময় ধ্যানে ব্যয় করতে হবে ।

    তার পর লক্ষ  করবেন, মন হয়তো কিছুক্ষন এর জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসে নিবেশিত হয়েছে । তারপর, শরীরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান রকমের ব্যাথা বেদনা  সংবেদনা এসে উপস্থিত হবে। আপনি এই অবস্থায় ধ্যান করার অভ্যাসে রণে ভঙ্গ দিতে পারেন, আবার  নাও পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো ক্ষণকালের জন্যে আপনার  মনকে শরীরের থেকে "আলাদা" করে নিয়ে ভাবতে শেখাতে হবে যে, এই সাময়িক শারীরিক সংবেদনা নেহাতই শারীরিক ব্যাপার, একে আপাতভাবে শরীরের "হাতেই" ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে । তবে এখানে একটা কথা মনে রাখবেন  বলে সব রকমের শারীরিক সংবেদন উপেক্ষা করার বিষয় নয়, কোনটা করার আর কোনটা নয় ধরে নেওয়া যেতে পারে সে বোধ আপনার রয়েছে । বেশ কিছুক্ষন যদি এইভাবে স্থির থাকেন, তখন দেখবেন ঠিক যেমন প্রাথমিক উড়ো চিন্তাভাবনা গুলো প্রথমে জড়ো হয়ে তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল (অবিশ্যি মিলিয়ে আর গেলো কোথায়, মনের গভীরে কোথাও সে রয়ে গেলো, শুধু আপনাকে আপনার ধ্যান থেকে সরিয়ে দিতে পারল না), এই শারীরিক ব্যাপারগুলো সেইরকম, উদিত হবে, কিছুক্ষন জ্বালাতন করবে, তারপর অস্তমিত হবে। তারপর আবার যখন আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে মনোনিবেশ করেছেন, তখন আবার অন্য রকমের কিছু মানসিক চিন্তা ভাবনার উদয় এবং অস্ত হতে থাকবে। এরকম চলতেই থাকবে। ব্যাপারটি অনেকটা এইরকম,
     

     
    এখন, এই যে ধরুন মনের মধ্যে একেকটি ভাব চক্রাকারে চলতে থাকছে এবং একে যদি আপনি নিয়ম করে প্রতিনিয়ত ধ্যান করে যেতে থাকেন, বিশেষ করে এই যে নানান রকমের ভাব উদিত হচ্ছে, তা থেকে আপনি নিজেকে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হন, কোনো রকম আলাদা করে ভালো মন্দর বিচারবোধ দিয়ে তাকে না দেখেন, এই ব্যাপারটিই  মনোনিবেশিত ধ্যান যাকে ইংরেজি পরিভাষায় mindfulness meditation বলা হয় । একে যদি  আপনি মাস দুয়েক নিয়ম করে চালিয়ে যেতে সক্ষম হন, আপনি  "নিজের মধ্যে" দুটি ব্যাপার লক্ষ  করবেন :
     এক, আপনার শারীরিক, মানসিক বা চেতনায় যে সমস্ত সংবেদন আসবে, তার কোনটির প্রতি কতটা মনোসংযোগ করবেন, আপনি স্বয়ং তার নিয়ন্ত্রক, অর্থাৎ, ক্রমাগত আস্তে থাকা অনুভূতি গুলো আপনাকে আপনার একাগ্রতা থেকে সরাতে সক্ষম হবে না ।
    দুই, এই যে আপনার বিভিন্ন রকমের অনুভূতি, সে যা হোক, ব্যাথা,  বেদনা,মানসিক উদ্বেগ, বিষন্নতা, প্রতিটির প্রতি আপনার এক ধরণের ঔৎসুক্য বলুন, কৌতূহল বলুন, এমন একটা সম্পর্ক স্থাপিত হবে, যেন আপনি আর তারা আলাদা, আপনি ও আপনার অনুভূতি, আপনার মন এক নয়, ব্যাপারটির  উপলব্ধি হবে  । বিশেষ করে, যত দিন যাবে, তত ক্রমশ নিজের মধ্যে নজর করবেন মনের মধ্যে এক ধরণের পরিবর্তন আসছে  যে আপনি যা ছিলেন, তার তুলনায় আরো অনেক নিস্পৃহ ও শান্ত হয়ে পড়ছেন । আপনাকে বাইরে থেকে দেখলে হয়তো কেউ বুঝতে পারবে না, সে পরিবর্তন অন্তরের পরিবর্তন । আপনার উদ্বেগ, রাগ, একই  কথার চর্বিতচর্বন, এই ধরণের চিন্তা ভাবনা গুলো ক্রমশ কমতে থাকবে  ।  সে ধরণের পরিবর্তন হয়তো আপনি নিয়মিত ধ্যান না করলে হত  না, আর আপনি যদি ধরুন কয়েক সপ্তাহ ধ্যান করা বন্ধ করে দেন, আপনি আবার আপনার পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাবেন ।  এই ব্যাপার গুলো থেকে মনে হতে পারে আপনার অন্তরের যে পরিবর্তন তাতে ধ্যানের একটা প্রভাব রয়েছে ।
     
    স্নায়ুবিজ্ঞানের কথাটা আসছে  কেন?
     
    এই  ব্যাপারগুলো যেহেতু সাধারণ মানুষের মধ্যে লক্ষ করা যায়, স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে যে কি কারণে এমন হচ্ছে? তাহলে কি ধ্যান ব্যাপারটি কোন ভাবে আমাদের চেতনায় একটা পরিবর্তন আনছে? তাই যদি হয়, তাহলে তাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? যেহেতু মস্তিষ্ক এবং চেতনার কথা উঠছে, তাই স্নায়ু এবং সেই সূত্রে স্নায়ুবিজ্ঞানের বিষয়টিও আসছে । সেই সূত্রে যে প্রশ্নগুলো অবধারিত ভাবে আসবে, ধ্যান যদি/হয়ত "কাজ" করে, কিন্ত তার কারণ কি? এখন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন অনেকবার হয়েছে যে প্রামাণ্য তথ্য মিলেছে, কিন্তু তার মূল কারণ কি জানতে বহু সময় পেরিয়েছে । হাতের কাছে চটজলদি  উদাহরণ  ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক জন স্নো সাহেবের লন্ডনে  কলেরা মহামারীর প্রতিকার । যখন তিনি প্রতিকার করেছিলেন, তখন কলেরার জীবাণু কি তাই নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না,  কলেরার জীবাণু  আবিষ্কার করবেন  ১৮৮৩ তে রবার্ট কখ (তার সঙ্গে অবশ্য কলকাতার একটি যোগাযোগ আছে, এখানে সে সব আলোচনার অবকাশ নেই) । এইরকম আরেকটি আবিষ্কার, অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ১৭৪৭ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক জেমস লিন্ড স্কার্ভি অসুখের চিকিৎসা করার জন্য এর নাবিকদের লেবু খাবার পরামর্শ দেওয়া ১৯৩৩ সালে চার্লস কিং এর  ভিটামিন সি  আবিষ্কার করবেন । অতএব চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস ঘাঁটলে  এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে ডাক্তাররা কিছু একটা লক্ষ করছেন, রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন, পুরো ছবিটা তৎক্ষণাৎ  জানা যায় না, পরে জানা যাবে ।  এই ধরণের ব্যাপারগুলো কেন্দ্র করে আজকের দিনের  evidence based medicine গড়ে উঠেছে, কাজেই আজকে ধ্যান কেন কাজ করে, তার একেবারে ঠিক মূল্যায়ন যদি আমরা নাও জানি, কাল যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে না, কেউ বলতে পারেন না ।  সে সব পরের কথা, আপাতত যে বিষয়টি নিয়ে শুরু করেছিলাম,তার উত্তর খোঁজা যাক,যে, এই যে মনোনিবেশিত ধ্যান  (mindfulness meditation ) এর কথা আলোচনা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে মনোবিজ্ঞান,  সাইকিয়াট্রি, চিকিৎসা, এমনকি স্নায়ুবিজ্ঞান কে জড়ানোর কারণটি কি? এই ধরণের ব্যাপারগুলো কারা শুরু করেছিলেন এবং কোথা  থেকে শুরু হয়েছিল? 
     
    অন্তত বাংলায় বা বাঙালির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্নগুলো অবান্তর নয় । কারণ ধ্যান ব্যাপারটা আমরা যতদূর বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ বুঝি তাতে সাধু বা ধরুন, সাধু সন্তদের ভেক ধরে  যারা ধর্মের বা ধর্মের "ব্যবসার" সঙ্গে জড়িত, এই সমস্ত লোকজন লোক দেখানো ধ্যান ইত্যাদি করে থাকেন । দুঃখের বিষয়, এদের সবাই যে সৎ , এমন বলা যাবে না, অনেকেই নানারকম অলৌকিক ব্যাপার স্যাপার নিয়ে মানুষকে হতচকিত করে ঠকিয়ে দেবার চেষ্টা করেন, শুধু তাই নয়, যুক্তির বদলে, তর্কের বদলে, এরা  চান মানুষ এদের বিশ্বাস করুন, যার জন্য এমনিতেই যুক্তিবাদী লোক এদের ব্যাপারে বিরক্ত , বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না । আরো একটা ব্যাপার রয়েছে । মনে করুন  যদি ধ্যান ব্যাপারটায় মানুষের সত্যি সত্যি মানসিক পরিবর্তন হয়ও, যারা ধর্মের ব্যবসায়ী, তারা ব্যাপারটাকে "ধর্মীয় কীর্তি"  বলে চালিয়ে দেবেন, সে পরিবর্তনের পশ্চাৎপটে নিয়মিত  ধ্যান করার একটা "মনস্তাত্বিক" ব্যাপার আছে, সেই প্রসেস  বা সেই প্রচেষ্টাকে সেভাবে এরা গুরুত্ব দেবেন না । এই সমস্ত নানান কারণে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যে হঠাৎ মনোবিদ, স্নায়ু বৈজ্ঞানিক, ডাক্তার, যারা পেশাগত ভাবে বিজ্ঞান চর্চা করেন, এরা  এইসব নিয়ে কেন মাথা ঘামাচ্ছেন । তো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখতে দুটি ভিন্ন বিষয়ে লিখতে হয়, দুটিই এই ধরণের ধ্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত । স্নায়ুবিজ্ঞানের সূত্রে ধ্যানের তাৎপর্য নিয়ে লেখার আগে ধ্যান ও স্নায়ুগত আরো দুয়েকটা ব্যাপার দেখা যাক:  (১) একটা ধ্যান এবং Flow (জানিনা, বাংলায় ইংরেজির ফ্লো  কথাটিকে হয়তো প্রবাহ বলা যেতে পারে), (২) ধ্যান এবং আধুনিক মনোবিজ্ঞানে ও চিকিৎসায় তার তাৎপর্য ।
     
    (এর পরের পর্বে বাকিটা, চলবে  )
     
     
     
    ---
    তথ্যপঞ্জী 
    ১) Keng SL, Smoski MJ, Robins CJ. Effects of mindfulness on psychological health: a review of empirical studies. Clin Psychol Rev. 2011 Aug;31(6):1041-56. doi: 10.1016/j.cpr.2011.04.006. Epub 2011 May 13. PMID: 21802619; PMCID: PMC3679190
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • প্রবন্ধ | ১২ জুন ২০২৪ | ৬৫১০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debasis Bhattacharya | ২৬ জুন ২০২৪ ১৫:৫৫533727
  • মাননীয় অরিনবাবু,

    বেশ কয়েক দিন অপেক্ষা করলাম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব বলে যা লিখেছেন তার মাথামুণ্ডু এখনও বোধগম্য নয়, অন্তত আমার কাছে। যাই হোক, আর ধৈর্য ধরা যাচ্ছে না, মাফ করবেন। ওখানে মন্তব্য করতে বারণ করেছেন, আর তার ওপরে আমি আপাতত যা বলব তা প্রথম পর্বের থ্রেডে পোস্ট হওয়া কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই, অতএব এখানেই বলছি।

    (১) ওপরে দেখলাম, আমাকে আপনি 'বি এস সি ফেল' বলে সাব্যস্ত করেছেন, এবং দেখে বেশ অবাক হলাম। কোনও বিশেষ পরীক্ষায় ফেল হওয়াটা আমি তেমন লজ্জাজনক বলে মনে করিনা, কাজেই ওটা সমস্যা না। কিন্তু আমি এই ভেবে অবাক হলাম যে, আপনি তথ্যটি জানলেন কোত্থেকে? নিজের ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষের তথ্য থেকে জেনারালাইজ করলেন কি? যদি করে থাকেন, তো তার পদ্ধতিটা কাইন্ডলি একটু ভেঙে বলবেন স্যার, সকলেরই ওটা শেখা দরকার। 

    (২)  আপনি বলেছেন, ককরেন ডেটাবেস-এ কোনও কিছু ‘অন্তর্ভুক্ত’ হবার ব্যাপার নেই, এবং আমি ওই ‘অন্তর্ভুক্তি’ শব্দটা ব্যবহার করার কারণে এই দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন যে, আমি ককরেন-এর নাম শুনলেও, আসলে হয়ত সে ব্যাপারে তেমন কিছু জানিনা। আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত।

    কিন্তু, আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার, বললে হয়ত বিশ্বাস করবেন না, এখানে ‘অন্তর্ভুক্তি’ বলে একটা আলাদা ব্যাপার আছে, এবং তার কিছু বিশেষ তাৎপর্যও আছে। বিশ্ব জুড়ে লাখে লাখে মেডিক্যাল রিসার্চ পেপার বেরোয়, তার মধ্যে এক বড় অংশেরই মান ভাল নয় (আপনি যে সমস্ত রেফারেন্স দিয়েছেন তার মধ্যে কয়েকটি সে রকম, ওপরে বলেছি)। ককরেন তা থেকে শুধুমাত্র উচ্চমানের গবেষণাপত্রগুলো বাছাই করে তাদের সাইটে রাখে (‘ককরেন পেপার্স’), শুধুমাত্র সেই গবেষণাপত্রগুলোর ওপরেই তাদের নিজস্ব ‘রিভিউ’ তৈরি করে প্রকাশ করে (‘ককরেন রিভিউ’), এবং তার ফলাফল সহজবোধ্য প্রশ্নোত্তরের আকারে প্রকাশ করে ওই সাইটেরই আরেকটি জায়গায় (‘ককরেন অ্যানসার’)। এই কঠোর বাছাবাছির ‘ক্রাইটেরিয়া’ বা মাপকাঠিগুলো কী কী, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ওই সাইটেই আছে। কষ্ট করে খুঁজতে হবে না, এখানে দেখে নিন।
    https://training.cochrane.org/handbook/current/chapter-03

    আপনি বলেছেন, ধ্যান সংক্রান্ত রিসার্চ-ও আসলে ককরেন ডেটাবেস-এ আছে, এবং নাকি গোটা সতেরো আছে। আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার, ঠিকই দেখেছেন, আছে বইকি! যদিও, ঠিক কটা দেখতে পাবেন সেটা নির্ভর করবে ঠিক কোন পদ্ধতিতে খুঁজছেন তার ওপরে --- কিন্তু আছে বটে --- এটাই আসল কথা। সেখানে মোদ্দা বক্তব্য কী আছে না আছে সে নিয়ে তো পরে কথা হতেই পারে, কিন্তু আপাতত একটা ছোট্ট প্রশ্ন। আপনি ইতিমধ্যে যে সব গবেষণাপত্রের উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে কি ওখান থেকে একটাও আছে? থাকলে একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন প্লিজ, হয়ত আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। আর যদি না থাকে, তাহলে প্রশ্ন, ওগুলো বাদ দিলেন কেন? সেগুলো প্রাসঙ্গিক মনে করেননি বলে, নাকি যথেষ্ট উচ্চমানের নয় বলে, নাকি, জাস্ট সময়মত মনে পড়েনি বলে? আমার মত বোকাদের জন্যে একটু ভাল করে ভেঙে বুঝিয়ে বলবেন স্যার!

    (৩) ‘ধ্যান করে কী ঘোড়াড্ডিমটা হয় মোয়ায়’ এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আপনার উত্তর হচ্ছে, এতে করে ‘মনের সমতা’ আসে। ‘মনের সমতা’ জিনিসটা  ভাল, অতএব একবার ওটা হয়ে গেলে ভাল ভাল আরও অনেক কিছু হতেই পারে --- যেমন মানসিক সমস্যার নিরাময় --- এইরকম একটা আশ্বাস ওই উত্তরের পেছনে আছে। কিন্তু বস্তুটি ঠিক কী সেটা আমার মতন অনেক বোকাই বুঝতে পারেননি, ফলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তার উত্তরে আপনি বলেছেন, সমতা মানে সাদা বাংলায় ব্যালেন্স --- সাইকেল চালানো বা সাঁতারের সময়ে যেটা লাগে --- এবং যেটা এমনি এমনি হয়না, অনেক প্রশিক্ষণ ও অভ্যাস সহযোগে আয়ত্ত করতে হয়। কথাটা এমনিতে বেশ ভাল, কিন্তু সমস্যা কী জানেন তো? সাইকেল চালানো এবং সাঁতারের সময়ে ঠিক কীসের সঙ্গে কীসের ‘ব্যালেন্স’ করতে হবে সেটা পরিষ্কার করে জানা আছে। সাইকেলের গতি, চাকার ঘূর্ণন, জলের প্লবতা ইত্যাদির সঙ্গে অভিকর্ষের ব্যালেন্স করা বলতে ঠিক কী বোঝায় সেটা একটা ‘ওয়েল ডিফাইন্ড প্রব্লেম’, ফলে তার সমাধানটাও অর্থপূর্ণ এবং বাস্তব। কিন্তু মনের সমতা বলতে কী বোঝায় সেটা কেউই জানেনা, মানে, এক্ষেত্রে ঠিক কীসের সঙ্গে কীসের ব্যালেন্স করতে হবে সে বিষয়ে কোনও অর্থপূর্ণ আলোচনা সম্ভব না। তবুও ওয়েলনেস ব্যবসায়ীরা সব সময়ে মনের ‘ব্যালেন্স’ এবং ‘ফিটনেস’ এনে দেবার আশ্বাস দিয়ে থাকেন। এই যে অস্পষ্ট একটা কথার মধ্যে স্পষ্টতার ভুয়ো দ্যোতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাকে পদার্থবিদ্যার কিছু সুসংজ্ঞায়িত বিষয়ের সঙ্গে এক করে দেখানো, এই ভাটবাজিটাকেই আমি বলছিলাম, ‘ডিজাইন্ড টু চিট’, ওপরে দেখুন। বাই দ্য ওয়ে, আপনি একে কী বলেন, স্যার?

    আপনার থ্রেডে অনেক কথার শেষে খুব অবাক হয়ে দেখলাম, আপনি বলছেন, এটা হচ্ছে ‘এক্সপ্লোরেটরি রিসার্চ’। ওহো, তাই বুঝি? তার মানে তো এই যে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি, কিন্তু খোঁজখবর চলিতেছে, তাই না? কিন্তু তাহলে, এখানে মহাজ্ঞানের ভাণ্ডার উজাড় করা হইতেছে এই রকমের ভাবভঙ্গির দরকার কী, আর, এত সব গুরুগম্ভীর রিসার্চের নামকীর্তনই বা কেন? গোড়াতেই ‘এক্সপ্লোরেটরি রিসার্চ’ বলে দিলে তো সকলকেই কিছু কথা কম বলতে হত, তাই না স্যার?

    যে সব ‘রিসার্চ’-এর কথা পেড়েছেন, সে সব নিয়ে কথা হবে’খন যথা সময়ে। আপাতত এইটুকু থাক।
     
  • +/- | 95.129.***.*** | ২৬ জুন ২০২৪ ১৬:২১533728
  • বিএসসি ফেল কিনা জানিনা, তবে পশ্চিমবঙ্গে চাগ্রী না পেলে গুন্ডামাস্তান টাইপের ছেলেরা একসময় নকশাল হতো আর ডরপোক টাইপের ছেলেরা যুক্তিবাদী হয়ে খার মেটাত। এ একেবারে কমন নলেজ, এর কোনো বিবলিওগ্রাফি নাই।
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ২৬ জুন ২০২৪ ১৬:৪৪533730
  • আলোচনা আবার উঠে এসেছে বলে আমি একটা প্রশ্ন অরিনবাবু আর দেবাশিসবাবু দুজনের থেকেই জানতে চাইব। 
    ছোটবেলায় ক্লাস এইটে স্বামী প্রেমঘনানন্দের ''মনের ব্যায়াম'' বলে একটা বই আমাদের পাঠ্য ছিল। সেখানে একটা ছোট গল্প ছিল।
    একজন লোক তাঁর গুরুর কাছে ধ্যান শিখতেন। কিন্তু কিছুতেই তিনি ধ্যানে মন দিতে পারছেন না। তখন তাঁর গুরু তাঁকে জিজ্ঞেস করল , '' ধ্যান করার সময় আপনার ঠিক কী কথা মনে পড়ে?''তখন লোকটা বলল , '' আমার একটা আদরের পোষা ভেড়া আছে , তাঁর কথা মনে পড়ে , ছোট থেকে মানুষ করেছি তো!'' তখন গুরু তাঁকে বললেন , ''তবে তুমি সেই ভেড়াটারই ধ্যান কর।'' তারপর তিনি ধ্যানে মন বসালেন।
     
    আমিও একজন ভদ্রমহিলাকে ভীষণ ভালবাসি , নিজের প্রেমিকার মতই। আমিও কি ধ্যান করার সময় তাঁর কথা মনে করে ধ্যান করতে পারি? 
    এটা স্রেফ আমার কৌতুহল। 
    আর আমার নিজের স্ট্যান্ড জানিয়ে রাখি , আমি নিজে অধ্যত্মবাদ আর যুক্তিবাদকে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ মনে করি। আশা করি অরিনবাবু আর দেবাশিসবাবু দুজনেই আমার সাথে একমত হবেন। 
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ২৬ জুন ২০২৪ ১৬:৪৯533731
  • একটা কথা জুড়ে দিই , লেখক মনের ব্যায়াম বইতে বলেছিলেন , তোমরা কোন মানুষকে বা কোন বন্ধুকে ভালবাসলে তাঁর কথা ভেবেও ধ্যান করতে পার। তাই জিজ্ঞেস করলাম। আমি কি ওই ভদ্রমহিলার কথা ভেবে ধ্যান করতে পারি। প্রশ্নটা আর একটু ক্লিয়ার করলাম।
  • অরিন | ২৬ জুন ২০২৪ ১৭:৫৮533737
  • "ওপরে দেখলাম, আমাকে আপনি 'বি এস সি ফেল' বলে সাব্যস্ত করেছেন, এবং দেখে বেশ অবাক হলাম। কোনও বিশেষ পরীক্ষায় ফেল হওয়াটা আমি তেমন লজ্জাজনক বলে মনে করিনা, কাজেই ওটা সমস্যা না। কিন্তু আমি এই ভেবে অবাক হলাম যে, আপনি তথ্যটি জানলেন কোত্থেকে? নিজের ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষের তথ্য থেকে জেনারালাইজ করলেন কি? যদি করে থাকেন, তো তার পদ্ধতিটা কাইন্ডলি একটু ভেঙে বলবেন স্যার, সকলেরই ওটা শেখা দরকার। "
     
    @দেবাশিসবাবু, 
    আমি কিন্তু আপনাকে কখনো এবং কোথাও বি এস সি ফেল বলে সাব্যস্ত করিনি ।  
    আপনার কি শিক্ষাগত যোগ্যতা আমি কিছুই জানি না, আপনার নিশ্চিত করে বোঝার ভুল হচ্ছে, একটু ভাল করে কমেন্টগুলো চেক করুন । এই অভিযোগ কিন্তু একদম ভুল করলেন!
     
    এবার আপনার বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া যাক: 
     
    * এটা ঠিক যে আমি সত্যি ই বাকি অংশগুলো লিখে উঠতে পারি নি, আমার নানান কাজের জন্য, তবে আমি লিখবো, এগুলো লিখতে সময় লাগে (আমার লাগে অন্তত), তবে আপনি চাইলে এর পরবর্তী পর্বগুলো পড়ে  দেখতে পারেন, এবং সেখানে মন্তব্য করতে পারেন । সেখানে আপনার নানান প্রশ্নের উত্তর পাবেন । তবে একটু ধৈর্য ধরবার অনুরোধ করবো ।
     
    * আমার মনে হচ্ছে আপনি যে কোন কারণেই হোক "wellness ব্যবসায়ী" দের শঠতার সঙ্গে সিরিয়াস  contemplation  রিসার্চ এক করে ফেলছেন । আমি যে বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করেছি সেটা কিন্তু ব্যবসার বিষয় একেবারেই নয়, রীতিমতো গবেষণার বিষয়, ব্যবসায়ীরা এই সব ব্যাপারে একদম আগ্রহী নন । এই দুটোকে এক করে দেখবেন না ।
     
    * " কিন্তু মনের সমতা বলতে কী বোঝায় সেটা কেউই জানেনা, মানে, এক্ষেত্রে ঠিক কীসের সঙ্গে কীসের ব্যালেন্স করতে হবে সে বিষয়ে কোনও অর্থপূর্ণ আলোচনা সম্ভব না।"
     
    এই দাবিটা মনে হয় ঠিক নয়, কারণ  কিছু না হলেও আজ থেকে প্রায় বছর কুড়ি আগে পল একমানরা এই নিয়ে লিখেছিলেন, আমি রেফারেন্স টা দিয়ে রাখলাম 
     
    Ekman, P., Davidson, R. J., Ricard, M., & Wallace, B. A. (2005). Buddhist and Psychological Perspectives on Emotions and Well-Being. Current Directions in Psychological Science14(2), 59–63. http://www.jstor.org/stable/20182989
    (যদি পুরো লেখাটা চান, আমি পিডিএফ পাঠিয়ে দেব ) 
    সে লেখায় তাঁরা লিখেছেন,
    "A Buddhist term for such happiness is sukha, which may be defined in this context as a state of flourishing that arises from mental balance and insight into the nature of reality. Rather than a fleeting emotion or mood aroused by sensory and conceptual stimuli, sukha is an en during trait that arises from a mind in a state of equilibrium and entails a conceptually unstructured and unfiltered awareness of the true nature of reality. Many Buddhist contemplatives claim to have experienced sukha, which increases as a result of sus tained training"
    এখানে এই বৌদ্ধ 'সুখের" ধারণাটিকে সমতা বলে বলা হচ্ছে । এই লেখাটা কিন্তু প্রাথমিক গবেষণা নয়, প্রাথমিক গবেষণা এর উদ্দেশ্য নয়, এদের বক্তব্য ছিল সমকালীন মনস্তত্ব-এর প্রেক্ষিতে বৌদ্ধ ধ্যান কে নিয়ে দেখা, যার জন্যে এরা বলছেন,
    "Psychologists do not distinguish between beneficial and harm ful emotions. Those who take an evolutionary view of emotion (e.g., Cosmides & Tooby, 2000; Ekman, 1992) have proposed that emotions were adaptive over the history of the species and remain adaptive today. Even those who categorize emotions as simply positive or negative (e.g., Watson, Clark, & Tellegen, 1988) do not propose that all of the negative emotions are harmful to oneself or to others. The goal in any psychologically informed attempt to improve one's emotional life is not to rid oneself of or transcend an emotion?not even hatred?but to regulate experience and action once an emotion is felt (Dav idson, Jackson, & Kalin, 2000). (Note, however, that not all theorists consider hatred an emotion.)"
     
    এই লাইনগুলো তাৎপর্যপূর্ণ কারণ আমাদের এই আলোচনাটা এই ব্যাপারগুলোকে নিয়ে ।  মনের সমতা নিয়ে এর পরে আরো বহু গবেষণা হয়েছে, তার মধ্যে আন্তর্জাতিক সমতা প্রজেক্ট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তো সেখানে অংশগ্রহণকারী একজন ডাক্তারের প্রাথমিক অভিজ্ঞতার বয়ান এখানে রইলো, 
     
     
    (এটাও একজন ব্যক্তিবিশেষের বক্তব্য অনেককে নিয়ে গবেষণা নয়, এটা একটু বোঝবার অনুরোধ করছি, এর মানে কিন্তু ব্যাপারটা ভুল বা বাজে তা নয় ) ।
     
    আরো একটু এগিয়ে যদি প্রাথমিক গবেষণার কথা বলেন, তো এই গবেষণাটি পড়ে দেখতে পারেন,
    MacLean, K. A., Ferrer, E., Aichele, S. R., Bridwell, D. A., Zanesco, A. P., Jacobs, T. L., King, B. G., Rosenberg, E. L., Sahdra, B. K., Shaver, P. R., Wallace, B. A., Mangun, G. R., & Saron, C. D. (2010). Intensive Meditation Training Improves Perceptual Discrimination and Sustained Attention. Psychological Science21(6), 829-839. https://doi.org/10.1177/0956797610371339
    এরকম একাধিক কাজ রয়েছে, এখানে দেখুন, শুধু ক্লিফ শ্যারনের গবেষণাটুকু এখানে রাখলাম (কারণ ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলাপ পরিচয় রয়েছে) 
    এরকম আরো অনেকে আছেন ।
    তো মানসিক সমতা বা ব্যালান্সের ছটি Matrix এর কথা বলা হয়, conation , ethics , ইমোশন এরকম কয়েকটি বিষয় নিয়ে, এখানে দেখুন, তাহলে কিছুটা স্পষ্ট হবে যে কোন ব্যালান্সের কথা এখানে বলা হচ্ছে 
     
    (এটি প্রধানত অ্যালেন ওয়ালেসের তৈরী করা ) 
     
    এতগুলো কথা আর রেফারেন্স এই জন্য দেওয়া যে ব্যাপারগুলো খুব সোজা সাপ্টা নয়, এবং এগুলো নিয়ে রীতিমতন গবেষণা চলে, আমরা নিজেরা আমাদের এখানে mobile  EEG  headset দিয়ে যারা ধ্যান করেন, এই রকম মানুষদের নিয়ে কাজ করি । এগুলোর experiment  সেটআপ করার অজস্র নানাবিধ সমস্যা রয়েছে, কারণ মস্তিষ্ক সংক্রান্ত যে ধরণের কাজের কথা এখানে বলা হচ্ছে আর যে ধরণের যন্ত্রপাতি নিয়ে সচরাচর কাজ করা হয়, তাদের উদ্দেশ্য পৃথক, যেমন ধরুন মস্তিষ্কের অসুখের জন্য যে ধরণের ব্রেন ইমেজিং চলে, সেই একই যন্ত্র দিয়ে সাধারণ জঙ্গম মানুষের ওপর গবেষণা করা যায় না, বা গেলেও যে ধরণের finding পাওয়া যাবে, তা দিয়ে বিশেষ সুবিধে হবে না । 
    এই সব নানান কারণে এ জিনিস কিন্তু এখনো অনেকটাই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তাহলেও তার বৈজ্ঞানিক প্রামাণিকতা নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই ।
     
    জানিনা কতটা বোঝাতে পারলাম ।
     
    * ককরেন, ইত্যাদি নিয়ে আপনি লিখেছেন, "ককরেন তা থেকে শুধুমাত্র উচ্চমানের গবেষণাপত্রগুলো বাছাই করে তাদের সাইটে রাখে (‘ককরেন পেপার্স’), শুধুমাত্র সেই গবেষণাপত্রগুলোর ওপরেই তাদের নিজস্ব ‘রিভিউ’ তৈরি করে প্রকাশ করে (‘ককরেন রিভিউ’), এবং তার ফলাফল সহজবোধ্য প্রশ্নোত্তরের আকারে প্রকাশ করে ওই সাইটেরই আরেকটি জায়গায় (‘ককরেন অ্যানসার’)। এই কঠোর বাছাবাছির ‘ক্রাইটেরিয়া’ বা মাপকাঠিগুলো কী কী, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ওই সাইটেই আছে। কষ্ট করে খুঁজতে হবে না, এখানে দেখে নিন।"
     
    এখানেও একটা কথা বলার আছে । আমি নিজে ককরেন কোলাবোরেশানের  একজন রীতিমতন সার্টিফায়েড সদস্য (প্রমান দেখুন, 
    )
    ককরেন কোলাবোরেশানে যারা লেখেন, তাঁরা নানান  প্রাথমিক গবেষণাপত্র থেকে মেটা এনালিসিস করেন । কিছু কঠোর বাছাবাছির ব্যাপার নেই, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে বাছ বিচার করার ব্যাপার রয়েছে । আমি যে লেখাগুলো আপনাকে আগের বার দিয়েছিলাম, সেগুলো আপনার প্রশ্ন "এতে করে জগতের কি উপকার হয়" উপকারের তালিকার একটা খুব সামান্য কিছু উদাহরণ, সেগুলোর থাকার কথাই নেই, কাজেই আপনি কেন ওই প্রশ্ন বারবার তুলছেন । 
     
    * আপনি লিখেছেন, 
    "আপনার থ্রেডে অনেক কথার শেষে খুব অবাক হয়ে দেখলাম, আপনি বলছেন, এটা হচ্ছে ‘এক্সপ্লোরেটরি রিসার্চ’। ওহো, তাই বুঝি? তার মানে তো এই যে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি, কিন্তু খোঁজখবর চলিতেছে, তাই না? কিন্তু তাহলে, এখানে মহাজ্ঞানের ভাণ্ডার উজাড় করা হইতেছে এই রকমের ভাবভঙ্গির দরকার কী, আর, এত সব গুরুগম্ভীর রিসার্চের নামকীর্তনই বা কেন? গোড়াতেই ‘এক্সপ্লোরেটরি রিসার্চ’ বলে দিলে তো সকলকেই কিছু কথা কম বলতে হত, তাই না স্যার?"
     
    Exploratory Research কথাটাও  আমার লেখা কথা নয়, dc নিক নিয়ে যিনি লেখেন, তিনি  লিখেছিলেন, তার উত্তরে আমার বক্তব্য ।  প্রথম থেকে আমার বক্তব্য কিন্তু  একটাই  রয়েছে, যে আমরা ধ্যান বিষয়টিকে স্নায়ুবিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে দেখতে চাইছি, কি কি জানি, কি কি জানিনা । এইটুকু তো ব্যাপার । 
     
    এর মধ্যে বারবার করে "ভুয়ো , চিট  এই কথাগুলো ব্যবহার করাটা আমার মনে হয় আপনার কোন কারণে "ধ্যান" ব্যাপারটা সম্বন্ধে বিরূপ কিছু অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে বা কোন অসৎ লোকের অভিজ্ঞতা থেকে হয়তো লিখছেন । এখন সমাজে  অসৎ লোক ধ্যান ইত্যাদি কে ওয়েলনেস ইত্যাদি করে বিক্রি করে, কিন্তু তাতে তো আর ধ্যান ব্যাপারটা ভুয়ো হয়ে যায় না, এই তফাৎটুকু না বুঝলে চলে কি করে? 
  • অরিন | ২৬ জুন ২০২৪ ১৮:০২533740
  • @ধ্যান : " গুরু তাঁকে জিজ্ঞেস করল , '' ধ্যান করার সময় আপনার ঠিক কী কথা মনে পড়ে?''তখন লোকটা বলল , '' আমার একটা আদরের পোষা ভেড়া আছে , তাঁর কথা মনে পড়ে , ছোট থেকে মানুষ করেছি তো!'' তখন গুরু তাঁকে বললেন , ''তবে তুমি সেই ভেড়াটারই ধ্যান কর।'' তারপর তিনি ধ্যানে মন বসালেন।"
     
    গুরুদেব যে কথাটা তাঁর শিষ্যকে বলেছিলেন, ধ্যান ব্যাপারটার সেটাই  definition । 
  • q | 2a06:d380:0:103::***:*** | ২৬ জুন ২০২৪ ১৮:১৫533741
  • দাদাই কোন (কোন) বছরের বিএসসি ফেল?
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ২৬ জুন ২০২৪ ১৮:২২533743
  • ধন্যবাদ অরিনবাবু।
    এবার দেবাশিসবাবুর মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম
  • | 103.244.***.*** | ২৬ জুন ২০২৪ ২২:২৯533747
  • যা বুঝছি আজ থেকে দশ পনের বছর পর গোমূত্র গোবর ইত্যদি নানান বিষয়ে ধ্যানের মতোই এরকম নানান পেপারের রেফারেন্স দেওয়া  যাবে। অন্তত নানা আইয়াইটি কোর্স ও নালন্দা ইত্যাদি প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানান্বেষণ কেন্দ্র ও আধ্যাত্মিক গবেষনা খাতে বাজেটবাহুল্য সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। 
  • আনন্দম  | 173.62.***.*** | ২৬ জুন ২০২৪ ২৩:৫৮533749
  • কিছু বক্তব্য রাখতে পারি মনে হচ্ছে। 
    ঈশ্বর আছেন, না কি নেই - এটা কি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রমান হয়েছে? না হয়নি, কারণ এ নিয়ে কোন রিসার্চ হয়নি। রিসার্চ হয়নি, কারণ বিজ্ঞান যে বিষয়ে রিসার্চ করে - ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড ও তার ঘটনাসমূহ - তার মধ্যে ঈশ্বরকে ফেলা যাচ্ছে না! যদিও, ঈশ্বরের হিলিং এফেক্ট নিয়ে রিসার্চ হয়েছে, এবং প্রমাণ হয়েছে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন তাদের ওপর এই ভাবনার হিলিং এফেক্ট পজিটিভ। কিন্তু তা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান করে না, কেবল প্রমান করে ঐ ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ডের ওপর ঐ ভাবনার রিপিটেবল প্রভাব আছে। 
    (নোটঃ ঈশ্বরবিদ্বষীদের কোন ইমোসান ট্রিগার করার জন্যে এই উদাহরণ দিই নাই, কেবল complexity টা ধরার চেষ্টা করছি, যেটা ধ্যান নিয়ে আলোচনায় অপরিহার্য। তাছাড়া, উদাহরণের রিসার্চের লিমিটেশান নিয়ে আলোচনার স্থান নেই এখানে) 
     
    কিন্তু ধ্যান বিষয়টা ঈশ্বরের মত পরিস্থিতিতে নেই আর। এটা যে বিজ্ঞানের আওতার মধ্যেই পড়ে, সেটা ইতিমধ্যেই স্বীকৃত। কিন্তু তার সীমা নির্ধারণ করা বিবিধ কারণেই জটিল এবং নিশ্চিতভাবেই এটা এখনও exploratory. পা মুড়িয়ে বসে পড়লেই ধ্যান হয় না, বিশ্রামও করা যায়, অবশ্যই শরীর মনের ওপর বিশ্রাম প্রভাব ফেলবে, কিন্তু তাকে তো ধ্যানের প্রভাব বলা যায় না! 
    শরীরচর্চা, আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ফিটনেস ট্রেনিং, যেমন একটি প্রক্রিয়া, ধ্যান সেরকম একটি মানসিক প্রক্রিয়া - মনের ফিটনেস ট্রেনিং। মনকে নানারকম পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে খুশিতে উদ্বেল আর দুঃখে শুয়ে পড়ে যাতে শরীর-মনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বিচলিত না হয়। এরকম শিক্ষা নানাবিধ ধর্মেও দেওয়া হয় - সেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে অপরীক্ষিত (e.g. God)  কিছুকে ব্যবহার করা হয়। সেও অনেকক্ষেত্রেই ধ্যানের প্রক্রিয়াতেই হয়ে থাকে, এবং সেটাই এই জটিলতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। 
     
    আমার ধারণা, অরিন যে ধ্যান নিয়ে আলোচনা করছেন, তাতে সুনির্দিষ্টভাবে এই চিন্তা পদ্ধতি avoid করা হয়। এবং ট্রেনিং দেওয়া হয় বিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে থাকা কিছুতে focus করতে। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে, নিজের প্রশ্বাস- নিশ্বাস এবং তারপর কোন রকম মানসিক চিন্তাভাবনা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কি প্রভাব ফেলছে - তা নজর করতে।  খুবই বোরিং কাজ। এমনি শুনলে পাগলের প্রলাপ বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক।  কিন্তু, দীর্ঘক্ষন  ধরে ও দীর্ঘদিন ধরে  ঐ ট্রেনিংয়ের প্রভাব যা বিজ্ঞানের আওতায় আসছে তা নিয়েই  অরিন সম্ভবতঃ লিখতে চাইছেন - মানে, এরকমই মনে হয়েছে। 
     
    একজন বলেছেন প্রেমিকার কথা চিন্তা করে মনোনিবেশ করতে পারেন কি না! যেটুকু জানি, বিশেষভাবে বলা হয়, খুব ভালবাসেন বা খুব ঘৃণা করেন এমন কারো কথা প্রথম দিকে না ভাবতে। তাতে মনের এতই বিচলিতি হবার সম্ভাবনা থাকে যে আসল কাজ - মনের ওপর নজরদারী করার অভ্যেস - সেইটে করা ভয়ানক শক্ত হয়ে পড়ে।  উদ্দেশ্য হল, নিজের মনের ওপর এই নজরদারী করার অভ্যেসটা শক্তপোক্ত করা।  সে অভ্যেস হয়ে গেলে মনের সমতার জন্যে বাইরের কোন সাহায্য বা শক্তির দরকার পরে না, বরং আপনি নিজেই অন্য অনেককে সাহায্য করতে পারবেন। 
     
    খুবই সরলভাবে লেখা হল, কিছু ছোটখাট ভুল থাকতেই পারে - যেহেতু বিস্তারিত লেখার অধিকারী নই।  
  • অরিন | ২৭ জুন ২০২৪ ০৩:৪৬533758
  • ধন্যবাদ আনন্দম।
    আপনার মতামতের সঙ্গে আমিও একমত ।
     
    এই লেখাটার একটাই সামান্য উদ্দেশ্য:
    মানুষ যদি নিজের মনের চিন্তাভাবনাকে পর্যবেক্ষণ করতে শেখে, তাতে করে দেখা গেছে যে যারা পারে, তাদের তথাকথিত মানসিক অবস্থার কিছু সদর্থক অর্থে পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে মনের বিভিন্ন ভাবের সামঞ্জস্য তৈরী হয়, যদিও সেই সব বিষয় নিয়ে এই লেখার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং যেটা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত, আমরা মস্তিষ্কের কাজে কী ধরণের পরিবর্তন হয়, তার সম্বন্ধে কি কি জানছি।
     
    এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রে "ভুয়ো", "চিট", বিদ্রূপাত্মক তীব্র মন্তব্য, গোবর ইত‌্যাদি অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপারগুলো কেন বারবার আসছে আমার বোধগম্য নয়। খুব অল্প কয়েকজন এ ধরণের মন্তব্য করে চলেছেন, হয়ত এদের কোন কারণ রয়েছে।
  • আনন্দম | 173.62.***.*** | ২৭ জুন ২০২৪ ০৮:০৪533768
  •  ধ্যান শব্দটি এতই loaded যে যারা নিয়মিত নিউরোসায়েন্স বা কগনিটিভ সায়েন্সের অগ্রগতির খবরাখবর রাখেন না, তাদের পক্ষে এর বৈজ্ঞানিক যোগ হঠাত করে শুনলে,  বিশেষতঃ যদি তাদের দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ ধর্মভিত্তিক ভুয়োবাজীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তবে সংশয় হওয়া স্বাভাবিক। 
    গোমূত্র, গোবর নিয়ে রিসার্চ সাইট করা হতেই পারে ভবিষ্যতে, যদি বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু পাওয়া যায়। গোবরের বেসিক কিছু উপযোগিতা তো জানা, তাকে স্বল্পমূল্যে আধুনিক জীবনের উপযোগী করা যাবে কিনা - তা দেখার! সেরকম হলে বেশি  উপকার কিন্তু পশ্চিম দেশগুলো, যারা মাংস খাবার তরে লার্জ স্কেলে গরুর চাষ করে! 
    এই প্রসঙ্গে অনেক সময় মনে হয়, বর্তমান ভারত সরকার perfect government ছিল ধ্যানের রিসার্চে ইনভেষ্ট করার জন্যে। তবে, ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিসার্চ হয়ে গেলে তো মুশকিল। 
    একটু প্রসঙ্গান্তর হয়ে যাচ্ছে, তবুও ভাবলাম এখানে বলে রাখা যায়। আপাততঃ অপেক্ষায় থাকব অরিনের পূর্ণাঙ্গ লেখার জন্যে। 
     
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জুন ২০২৪ ১৯:১৪533785
  • মাননীয় অরিনবাবু,

    বিষয়টি নিয়ে আমার আগ্রহ আছে, কাজেই আমি ধৈর্য ধরতে রাজি। আপনি কী লিখছেন সেটা আমি অতি অবশ্যই ক্লোজলি ফলো করতে থাকব। তবে, ইতিমধ্যে কয়েকটি কথা না বললেই নয়, অতি সংক্ষেপে হলেও।
     
    (১) ‘বি এস সি ফেল’ কথাটা অন্য একজন বলেছেন, এবং আপনি তা সমর্থনসূচকভাবে উদ্ধৃত করেছেন, অতএব তার দায় আপনার ওপরেও বর্তায় বইকি। এ ব্যাপারে আমার বুঝতে ভুল হয়েছে বলে মনে করিনা। অন্যের কথাটা আমি ধর্তব্য বলে মনে করিনি, আপনারটা করেছি --- সেটা আমার প্রেরোগেটিভ, যেহেতু কথাটা আমাকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। কার কথায় গুরুত্ব দেব সেটা স্থির করার অধিকার আমার আছে বলেই মনে করি। তা সে যাই হোক, আপনি যখন নিজে বলছেন যে এটা আপনি বলেননি বা বলতে চাননি, তখন আমি সেটাকে ফেস ভ্যালুতেই নিচ্ছি।
     
    (২) আবারও বলি, আমি আপনার পুরো লেখা পড়ে দেখতে রাজি। শেষ পর্যন্ত আপনি কোথায় গিয়ে পৌঁছতে চান, সেটা সাগ্রহে দেখতে চাই। সময় লাগুক, সেটা কিছু না।
     
    (৩) ওয়েলনেস ব্যবসা আর সিরিয়াস রিসার্চ এক নয় --- এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত। তবে, দুটো এক নয় বলেই ব্যবসায়ীরা রিসার্চে আগ্রহী হবেন না --- ব্যাপারটা বোধহয় ঠিক এতখানি সোজা নয়। ব্যবসার পেছনে রিসার্চ থাকলে যদি ব্যবসার সুবিধে হয়, তো তাতে তাঁদের অনাগ্রহী হবার তো কোনও বাস্তব কারণ নেই! রিসার্চ যদি ব্যবসার পক্ষে যায়, তো কোনও কথাই নেই। আর যদি পক্ষে না যায়, তো সেটাকে পক্ষে আনবার নানা কেরামতি তাঁদের হাতে থাকে। ‘সায়েন্টিফিক মিসকন্‌ডাক্ট’ এমন কিছু বিরল বস্তু নয়, বিশেষ করে যদি পেছনে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলারের গল্প থাকে। আপনি সেটা জানেন নিশ্চয়ই। কাজেই, এক্ষেত্রে যে তা হচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত করবার পক্ষে বোধহয় আপনার আশ্বাসমূলক বিবৃতিটুকু যথেষ্ট নয়, তার সঙ্গে আরও কিছু দরকার।
     
    (৪) এটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ যে, বৈজ্ঞানিক ভ্রষ্টাচারের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রণোদনা এক বড় কারণ, কিন্তু আদৌ একমাত্র কারণ নয়। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং জাতীয়তাবাদী প্রণোদনাও বৈজ্ঞানিক ভ্রষ্টাচারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। যে প্রণোদনা গোমূত্র-গবেষণায় উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে, সেই একই প্রণোদনা ধ্যান-গবেষণাতেও অত্যুৎসাহ জাগাতে পারে। বস্তুত, বর্তমানের ধ্যান-গবেষণা বহুলাংশেই হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার-প্রণোদিত। আপনি যে সব রেফারেন্স দিয়েছেন তার মধ্যেও বৌদ্ধ যোগাযোগ একাধিকবার দেখা গেছে, এবং আমি তা দেখিয়ে দেবার পরেও আপনি তার ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি মনে করেননি। দুঃখিত, এর মধ্যে অন্তর্নিহিত ইঙ্গিতটি আমার কাছে খুব বেশি স্বাস্থ্যকর ঠেকেনি।
     
    (৫) আপনি ককরেন কোলাবোরেশনের সদস্যপদের প্রমাণপত্র পেশ করে নিজের অথরিটি ঘোষণা করেছেন, সে ব্যাপারে অবহিত হয়ে অত্যন্ত প্রীত হলাম। অথচ, নিজের আলোচনার মধ্যে কেন যে ধ্যান-বিষয়ক ককরেন-রিভিউগুলো অন্তর্ভুক্ত করলেন না, সেই প্রশ্নের জবাবটা কিন্তু পেলাম না। এর অন্তর্নিহিত অর্থ কী হতে পারে?
     
    (৬) ‘এক্সপ্লোরেটরি রিসার্চ’ কথাটা ডিসি বলেছেন, ঠিকই। কিন্তু আমি যা বুঝেছি, তিনি সেটা বলেছেন আপনার সাফাইগুলোকে এক কথায় প্যারাফ্রেজিং করতে গিয়ে। তার পরবর্তী মন্তব্যগুলোতে আপনি সে নিয়ে খুব আপত্তি করেননি, এটাই তো মনে হল। আমার কাছে তার মানে দাঁড়িয়েছিল এই যে, ধ্যান-গবেষণার ‘এক্সপ্লোরেটরি’ চরিত্রটি আপনি মেনে নিয়েছেন। এখন আপনি যদি তা অস্বীকার করেন, তো আমি সে নিয়ে মোটেই তর্ক করব না। আমি তাহলে এটাই ধরে নিচ্ছি যে, আপনি একে একটি প্রতিষ্ঠিত গবেষণা হিসেবেই উপস্থাপিত করতে চাইছেন। অর্থাৎ, ধ্যান যে আদৌ ‘কিছু একটা বটে’, এবং তার যে নানা ‘উপকার’ আছে, সেটা ইতিমধ্যেই গবেষণায় সুপ্রতিষ্ঠিত --- এমনটাই আপনি বলতে চাইছেন। বেশ, চমৎকার। আশা করি, পরবর্তীকালে এ অবস্থানের পরিবর্তন হবেনা।
     
    (৭) ধ্যান-গবেষণা সম্পর্কে ‘ভুয়ো’ বা ‘চিট’ জাতীয় শব্দের প্রয়োগে আপনি আহত, কারণ, আপনি বিষয়টিকে জরুরি সিরিয়াস চর্চার বিষয় বলে মনে করেন। বেশ, আহত হতেই পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমি যেহেতু একে গণপ্রতারণা বলে মনে করি, এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিকে অত্যন্ত সম্মান করি, তাই একে ‘বিজ্ঞান’ বলে হাজির করবার চেষ্টা হলে আমিও অত্যন্ত আহত হই। আপনার থ্রেডে এসে সময় ও শ্রম খরচা করে এই যে বকর বকর, সেটা ওই আঘাতেরই ফসলবিশেষ। আপনার সেন্টিমেন্ট-টা আমি বুঝি, আপনিও অনুগ্রহ করে আমারটা বুঝবেন। এবং অনুগ্রহ করে নিশ্চিত থাকবেন যে, আমার এ অবস্থান কোনও সংকীর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কারণে নয় --- যুক্তি দিয়ে ভাবলে ওই রকম মনে হয়, স্রেফ সেই কারণেই। আমার মতে যা সম্পূর্ণ অকাজের, সেই রকম কোনও কিছুকে যদি কার্যকর চিকিৎসা বলে দাবি করা হয় এবং বেচারা রুগিরা তার পেছনে প্রচুর সময় ও অর্থ খরচ করতে থাকে, তাহলে তো তাকে আমি ওটাই বলব, তাই না? তবে কিনা, ঠিকঠাক তথ্য-যুক্তি পেলে এ অবস্থান বদলাতেই পারে, সেটাই যুক্তি এবং বিজ্ঞানের ধর্ম। কাজেই, আসুন, আমরা তথ্য-যুক্তি বিনিময় করি।
     
    (৮) পরিষ্কার করে বলা দরকার, এই বিকল্প চিকিৎসার হিড়িককে (ধ্যান ইনক্লুডেড) আমি ‘ভুয়ো’ বলি বটে, কিন্তু শুধু আমি একাই বলি, এমনটা নয়। যেমন ধরুন, প্রায় দেড় দশক আগে চিকিৎসা-গবেষক এডজার্ড আর্নস্ট এই ধরনের যাবতীয় চিকিৎসার স্বরূপ উন্মোচন করে যে বইটি লিখেছিলেন তার নাম ছিল, “Trick or Treatment – The Undeniable Facts about Alternative Medicine”। বইটির বক্তব্য বিষয়ে নিয়ে আমি এখন আলোচনায় ঢুকছি না, যদিও পরে তা করতে হতেও পারে। কিন্তু আপাতত লক্ষ করে দেখুন, লেখক ওই যে ‘ট্রিক’ শব্দটি এখানে ব্যবহার করছেন, তার বাংলা অর্থ তো প্রতারণা, তাই না? প্রায় ওই একই সময়ে বায়োস্ট্যাটিস্টিশিয়ান বার্কার বওজেল আরেকটি বইতে একই বক্তব্য পেশ করেছিলেন, চিকিৎসা-গবেষণার পদ্ধতি ও তার অন্তর্নিহিত পারিসংখ্যায়নিক ধ্যানধারণাগুলোর অসাধারণ খুঁটিনাটি সহ। বইটির নাম, “Snake Oil Science: The Truth About Complementary and Alternative Medicine”। উভয় বইতেই হোমিওপ্যাথি, আকুপাংচার, জড়িবুটি ইত্যাদি ‘বিকল্প চিকিৎসা’-র সঙ্গে ধ্যান নিয়েও কিছু কথাবার্তা ছিল। এঁরা দুজনেই অত্যন্ত যোগ্য বিশেষজ্ঞ বলে আমার ধারণা। অবশ্য, আপনি এঁদেরকে ‘রীতিমতন সার্টিফায়েড’ বলে গণ্য করেন কিনা, তা আমার জানা নেই।
     
    (৯) আমি ইতিমধ্যে বলেছি, একে তো জ্যোতিষ জন্মান্তর হোমিওপ্যাথি এইসব নিয়েও ‘অ্যাকাডেমিক পেপার’ গুচ্ছ গুচ্ছ পাওয়া যায়, আর তার ওপর ধ্যান-গবেষণার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এমন গবেষণাপত্রও রয়েছে বহুসংখ্যক --- কাজেই শুধু সপক্ষে দাঁড়িয়েছে এমন গবেষণাপত্র হাজির করে করে বিষয়টি নিয়ে ধন্ধ কাটানো অসম্ভব। কিন্তু বিষয়টি এখনও আপনাকে বিবেচনা করতে দেখলাম না। আশা করা যাক, পরে করবেন।
     
    (১০) ইতিমধ্যে আপনি যা যা পাঠ্যবস্তু হাজির করেছেন (তার মধ্যে অন্তত কয়েকটি সিরিয়াস অ্যাকাডেমিক পেপার), তার কয়েকটি সম্পর্কে ওপরে বলেছি, পরে হয়ত আরও কিছু বলতে হবে। কিন্তু আপাতত শুধু আমার প্রতি আপনার শেষতম মন্তব্যটিতে যে সব রেফারেন্স দিয়েছেন সেগুলোর কথা বলি, কারণ, এগুলো নমুনা হিসেবে চমৎকার।

    (ক) “Buddhist and Psychological Perspectives on Emotions and Well-Being”। না, এটা আমার কাছে আছে, পাঠানোর দরকার নেই। কিন্তু, এই রেফারেন্স ও তার উদ্ধৃত অংশটি দিয়ে ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইলেন, বুঝতে পারিনি। ‘মনের সমতা’ বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন তার একটা অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা আমি আপনার কাছে চেয়েছিলাম, কারণ, কমপক্ষে সেইটুকু না হলে, ‘ধ্যান করে মনের সমতা আনা যায়’ --- এ দাবির আর কোনও মানেই থাকবে না। তো, এখানে আপনি তার যে অংশ উদ্ধৃত করেছেন তার মোদ্দা বক্তব্য হচ্ছে, বৌদ্ধ ধর্মতত্ত্বে যাকে ‘সুখ’ বলা হয়েছে সেটাই নাকি আসলে মনের সমতা। পরিষ্কার করে বলা জরুরি যে, এগুলো মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত কোনও চর্চা নয়, যদিও মনোবিজ্ঞানের কৃত্রিম গন্ধ সঞ্চার করবার একটা চেষ্টা এর মধ্যে আছে। মনোবিজ্ঞানগন্ধী এই ধরনের বাগাড়ম্বরচর্চাকে আজকাল একটি চমৎকার নাম দেওয়া হয়েছে --- একে বলে ‘সাইকোব্যাব্‌ল্‌’। দীপক চোপড়া, সদগুরু এবং রবিশঙ্করদের ব্যবসা আজ এই সমস্ত সাইকোব্যাব্ল-এর ওপরে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার মত ছুটছে। সমস্যা একটাই, এসবের মধ্য দিয়ে ভক্তের মনে ব্রহ্মজ্ঞানের আত্মতৃপ্তি জাগলেও, মন ও তার সমস্যা সম্পর্কে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক উপলব্ধি বিশেষ কিছুই ঘটেনা আসলে। মনে করুন, আপনি যদি সুকুমার রায়কে জিজ্ঞেস করতেন যে, ‘দ্রিঘাঞ্চু’ মানে কী, আর তার উত্তরে তিনি যদি বলতেন, ‘এও জানো না হে, দ্রিঘাঞ্চু হল গিয়ে একটি আত্মমগ্ন কুমড়োপটাশ’ --- তাহলে দ্রিঘাঞ্চু সম্পর্কে আপনি ঠিক কোন উপলব্ধিতে পৌঁছতেন?
     
    (খ) “https://sbinstitute.com/wp-content/uploads/2021/03/buddhadharmashamathaprojectarticle.pdf”। এখানে একটি গবেষণায় অংশ নেবার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণিত হয়েছে। একটি ধর্মীয় স্থানে ধর্মীয় পরিবেশে ধর্মীয় নেতার তত্ত্বাবধানে কিছু লোক ধ্যান করছে, এবং তার ফলে তাদের শারীরিক ও স্নায়বিক নানা পরিবর্তন পরীক্ষায় ধরা পড়ছে, এবং বিশেষত তাদের সংবেদন-ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে --- এটাই মোদ্দা বক্তব্য। যদি ধরেও নিই যে এই পরীক্ষায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বৈজ্ঞানিক সততা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, তার পরেও বলতে হয় যে এ ধরনের পরীক্ষার আদৌ কোনও অর্থ নেই, যদিও এ ধরনের ননসেন্স পেপার নিয়মিতই গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকাশ হয়ে থাকে। এ পরীক্ষায় যারা ধ্যান করছে তাদের কন্ট্রোল হিসেবে থাকছে এমন লোক যারা ধ্যান করছে না। কী অর্থ হয় এ কন্ট্রোলের? ওখানে যারা স্বেচ্ছায় পরীক্ষিত হতে গেছে তারা সকলেই ধ্যানে বিশ্বাসী লোক, সেভাবেই তাদেরকে বাছা হয়েছে --- পরিষ্কার না বললেও এটা সহজবোধ্য। তাদের ওপরে একটা দারুণ কিছু চলছে এবং তার ফলে তাদের মধ্যে একটা অসাধারণ কিছু ঘটা উচিত --- শুধু এই প্রত্যাশাটুকুর কারণেই অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। মূলত দু ধরনের প্রক্রিয়া এখানে কাজ করে --- প্লাসিবো এফেক্ট, এবং হথর্ন এফেক্ট। এই দুটো প্রক্রিয়া থেকে ধ্যানের প্রকৃত প্রভাবকে আলাদা করে ছেঁকে বার করবার মত উপযুক্ত কোনও কন্ট্রোল এখানে ডিজাইন করা আবশ্যিক ছিল। দুঃখের বিষয়, তেমন কন্ট্রোল এখানে আদৌ নেই, আদর্শ ‘ডাব্ল ব্লাইন্ড কন্ট্রোল’ তো অনেক দূরের গল্প!

    (গ)  “Intensive Meditation Training Improves Perceptual Discrimination and Sustained Attention”। এটি সম্ভবত (খ)-তে বর্ণিত পরীক্ষারই ফলাফল প্রকাশ, আনুষ্ঠানিক গবেষণারূপে। এবং সেই হেতু, ওপরে যা যা বললাম সবই এখানেও প্রযোজ্য। ধ্যান করবার পরে বড় দাগকে ছোট দাগ থেকে আলাদা করবার ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে, চমৎকার কথা। কিন্তু মনে করুন, আদৌ ধ্যানট্যান কিছুই না করে যথাযথ বিশ্বাসীদের জড়ো করে রোজ চারবেলা ‘জয় শ্রীরাম, মুসুলমান ঘ্যাচাং’ সমস্বরে আবৃত্তি করালেও যে ওই ক্ষমতাটা ঠিক ওই রকমই বা ওর চেয়েও ভাল বাড়ত না, সে ব্যাপারে কীভাবে নিশ্চিত হবেন আপনি!
     
    (ঘ) “https://saronlab.ucdavis.edu/contemplative-science.html”। এটি একটি বিশেষ পেপার নয়, এক বিশেষ ব্যক্তির অনেকগুলো পেপারের তালিকা। পড়িনি, কারণ, কেন পড়ব বুঝিনি।

    (ঙ) “https://centerforcontemplativeresearch.org/living-practice/a-matrix-of-mental-balance/”। এই সংস্থাটির পরিচয় হিসেবে সাইটে পরিষ্কার করে লেখা আছে, এটি একটি ধর্মীয় সংস্থা যারা নিয়মিত ধ্যান-সংক্রান্ত নানা কর্মসূচি সংগঠিত করে থাকে। ওই একই জায়গায় এটাও লেখা আছে যে, এই সংস্থা মনে করে, এই জগতের যত দুর্নীতি হিংসা অত্যাচার দূষণ সবই নাকি ঘটছে মানুষের বিচলিত মনের কারণে, এবং ধ্যানের মাধ্যমে মনকে শান্ত করে জগতকে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি দেবার জন্য তাঁরা কাজ করে চলেছেন, যদিও, কে যে তাঁদের ওপরে এত বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিল সেটা ওখানে লেখা নেই। বিজ্ঞানের আলোচনার মধ্যে আপনি যে এইসব বিচিত্র বস্তু টেনে আনতে লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করেন না, এই ব্যাপারটা আপনার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কথোপকথন চালিয়ে যাবার পথে এক মস্ত অন্তরায়। তা সে যা-ই হোক, এখানে নাকি ‘মনের সমতা’ কি সেটা ভেঙে বোঝানো আছে --- আপনার এই কথায় আশান্বিত হয়ে গোটাটাই পড়ে দেখলাম। এখানে মনের সমতাকে কতকগুলো উপাদানে ভাগ করা হচ্ছে। অভিপ্রায়মূলক, আবেগমূলক, নৈতিক, বৌদ্ধিক,  আধ্যাত্মিক --- এইসব। ব্যাপারটা এমনিতে চমৎকার, এবং আমি এর সঙ্গে আরও কয়েকটা যোগ করতে পারি। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, এ দিয়ে গবেষণার কী সুবিধে হল! আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘মনের সমতা’ ব্যাপারটার কোনও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও মাপনযোগ্য পদ্ধতি আছে কিনা --- যেমনটি বিগ ফাইভ বা বুদ্ধিমত্তা বা উদ্বেগ মাপার ক্ষেত্রে আছে --- এবং তা দিয়ে ধ্যানের ফলাফল কেউ সফলভাবে মেপেছেন কিনা। তার উত্তরে এইসব হাবিজাবি বস্তু পেয়ে আমি অত্যন্ত হতাশ।
     
    এমন হতেই পারে যে, আপনার লেখাটির শেষে হয়ত এই সমস্ত কথারই যথার্থ জবাব থাকবে। তার জন্য অপেক্ষা করব, সে তো বলেইছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যে একটিও জবাব পাইনি, সেটা ইতিমধ্যে বলা থাক।
  • ধ্যান?? | 103.249.***.*** | ২৭ জুন ২০২৪ ২০:৪৪533788
  • অরিনবাবুর লেখাটা জটিল লাগছিল , এবার দেবাশিসবাবুর মন্তব্য পড়ে বিষয়টা স্পষ্ট হল। আসলে যেটা ফ্যাক্ট , 
    অধ্যাত্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বিজ্ঞান যে যে সমস্যার সমাধান করতে পারে না , অধ্যাত্ম সেই সমস্যাগুলোই সামলাতে আসে। আজকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স , রিলেটিভিটির প্রচুর সমস্যা ডিল করা হচ্ছে স্পিরিচুয়ালিটির দ্বারা। জগদীশ বোসের মত বিজ্ঞানীও অধ্যাত্মের অথরিটি ছিলেন। উচ্চশিক্ষায় সফল হতে গেলে অধ্যাত্ম ছাড়া গতি নেই।  ধ্যানকে সঙ্কীর্ণ যান্ত্রিক বিজ্ঞানের গন্ডিতে রাখা উচিত না। দেবাশিস বাবু মনে হয় সেটাই বলতে চাইছেন।
  • হতাশ প্রেমিক | 2409:4060:2dc3:845d::ad8a:***:*** | ২৭ জুন ২০২৪ ২০:৫৬533789
  • দেবাশিস ভট্টাচার্য খুব ভাল কাউন্টার করেছেন।অরিনবাবুর লেখাটা ভাল না।আমারও ভাল লাগেনি।আরও সাহিত্যগুণ,আরও আলঙ্কারিক প্রয়োগ দরকার ছিল, অরিনবাবুর মূল বক্তব্য ১০০% সঠিক থাকলেও।
  • অরিন | ২৮ জুন ২০২৪ ০৬:৫৪533801
  • @দেবাশিসবাবু,
    আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আপনার প্রশ্ন এবং কিছু মতামতের প্রত্যুত্তর রইল ।
     
    প্রথমেই একটা ব্যাপার মিটিয়ে নেওয়া উচিত:  ‘বি এস সি ফেল’ কথাটা অন্য একজন বলেছেন, এবং আপনি তা সমর্থনসূচকভাবে উদ্ধৃত করেছেন, অতএব তার দায় আপনার ওপরেও বর্তায় বইকি। এ ব্যাপারে আমার বুঝতে ভুল হয়েছে বলে মনে করিনা। ... আপনি যখন নিজে বলছেন যে এটা আপনি বলেননি বা বলতে চাননি, তখন আমি সেটাকে ফেস ভ্যালুতেই নিচ্ছি।
     
    আমি যে কথাটা বলিনি, যে কথাটা মনে করি না, বা সমর্থনাসূচকভাবে উদ্ধৃত করেছি বলে কোথাও দেখলাম না, জোর জবরদস্তি করে আমার ওপর চাপানোর এই ব্যাপারটির আমি প্রতিবাদ করছি । আমি আরো একবার স্পষ্ট করে লিখছি, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি আমি জানিও না, আমার জানার কোন কৌতূহল নেই, এবং আমি জানলেও তাই নিয়ে কোন কমেন্ট করতাম না, কারণ ব্যাপারটিকে আমি এযাবৎ আলোচনায় ধর্তব্যের মধ্যে আনি  নি, আপনি যা লিখেছেন আমার বক্তব্য শুধু সেটুকুর ওপর সীমাবদ্ধ, এর বাইরে আপনি মানুষ হিসেবে কে বা কি করেন, তাই নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র জ্ঞান বা আগ্রহ নেই ।  তর্ক যখন করছেন, তখন আমাকে আপনার এইটুকু মানসিক বা চারিত্রিক সততার ওপর ভরসা করতে হবে যে আপনি কাউকে মিথ্যা দোষারোপ করবেন না ।  মিথ্যা দোষারোপ করা আপনিও করে করবার উদ্দেশ্য করেন নি, তাছাড়া, বস্তুগতভাবে এই ব্যাপারটা গোটা বিতর্কটিতে মূল  বিষয় নয়, অতএব আপনি নিজে থেকে মিটিয়ে নিলে ভাল লাগবে । মানুষের তর্কের মধ্যে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়, আপনার কোথাও একটা কিছুর ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে ।   
     
    দ্বিতীয় পয়েন্টে, আপনি যেহেতু  লিখেছেন, "আমি আপনার পুরো লেখা পড়ে দেখতে রাজি। শেষ পর্যন্ত আপনি কোথায় গিয়ে পৌঁছতে চান, সেটা সাগ্রহে দেখতে চাই।"  ধন্যবাদ । আমিও আপনার মন্তব্য পড়ে দেখতে চাই ।
     
    তৃতীয়ত,  ওয়েলনেস ব্যবসা আর সিরিয়াস রিসার্চ এক নয় --- এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত। তবে, দুটো এক নয় বলেই ব্যবসায়ীরা রিসার্চে আগ্রহী হবেন না --- ব্যাপারটা বোধহয় ঠিক এতখানি সোজা নয়। 
     
    এ ব্যাপারটায় আপনার সেন্টিমেন্টের সঙ্গে আমি নীতিগত ভাবে একমত । আপনার সাইন্টিফিক মিসকন্ডাক্ট নিয়ে মন্তব্যের প্রসঙ্গে লিখি,  এখন এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে scientific misconduct হবে বলে বৈজ্ঞানিক গবেষণাটি হতেই দেওয়া হবে না, এইটা যদি আপনার বক্তব্য হয় (আমার মনে হয় না আপনি তাই বলতে চাইছেন যদিও আপনার লেখা পড়ে সেটা সবসময় মনে হয় না), তাহলে তো আর আলোচনা এগোয় না  । এখন সাইন্টিফিক মিসকন্ডাক্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পূর্ণ হয়ে তার ফলাফল প্রকাশিত হয়ে তাকে অনুপুঙ্খিক বিশ্লেষণ না করা অবধি তো বোঝা সম্ভব নয় । তাকে রাখার বেশ কিছু উপায় রয়েছে, আপাতত সেটুকুর ওপরে আমাকে আপনাকে ভরসা করতে হবে । ধার্মিক সংস্থা, ওয়েলনেস কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানিগুলো চেষ্টা করবে নিজেদের ব্যবসার অনুকূল গবেষণার ফল প্রকাশ করতে বা করাতে, সেই সব গবেষণা প্রকাশিত হলে তাদের বিশ্লেষণ করে ভুলগুলো বা গলত গুলো ধরিয়ে দিয়ে মানুষকে বোঝানো বাদে তো আর কিছু বিশেষ করার থাকে না ।  সেই সব নিয়ে প্রচুর কাজকর্ম হচ্ছে, হবেও । আপাতত তাদের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় কি? 
     
    চতুর্থ, আপনার বর্তমান ধ্যান গবেষণায় যে বৌদ্ধ ইত্যাদি, যেখানে লিখেছেন, 
    > " বর্তমানের ধ্যান-গবেষণা বহুলাংশেই হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার-প্রণোদিত। আপনি যে সব রেফারেন্স দিয়েছেন তার মধ্যেও বৌদ্ধ যোগাযোগ একাধিকবার দেখা গেছে, এবং আমি তা দেখিয়ে দেবার পরেও আপনি তার ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি মনে করেননি। দুঃখিত, এর মধ্যে অন্তর্নিহিত ইঙ্গিতটি আমার কাছে খুব বেশি স্বাস্থ্যকর ঠেকেনি।"
     
    আমি আরেকবার চেষ্টা করে দেখি আমার বক্তব্য বোঝাতে পারি কি না ।
    বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূত্রপাত হয় বিজ্ঞানীর কোন বিষয় নিয়ে পুংখানুপুখ পর্যবেক্ষণ থেকে । এখন ধ্যান নিয়ে যে গবেষণা  হচ্ছে,তার মূলেও কিন্তু এইরকম একটা কৌতূহল রয়েছে । এখন, আপনি এক সময় নিজেই লিখেছেন যে আমার লেখায় আপনি দেখেছেন  আমি উল্লেখ করেছি যে ভারত বাদেও অন্য অনেক দেশে, সঙস্কৃতিতে, ধর্মে, ধ্যানের একটা জায়গা রয়েছে । যেমন ক্রিশ্চিয়ান ধ্যান, stoic দের ধ্যান, ইসলাম ধর্মে ধ্যান এবংবিধ । ধ্যান ব্যাপারটা একচেটিয়া হিন্দু বা বৌদ্ধ ব্যাপার নয় । যে বৈজ্ঞানিকরা ধ্যান নিয়ে গবেষণা করছেন, তাদের মধ্যে যারা ধ্যান এবং স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন, তার একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ secular বা অধার্মিক ধ্যান নিয়ে লিখেছেন (mindfulnes based stress reduction , যার আরেক নাম MBSR ),  আপনি যদি "mindfulness based stress reduction " দিয়ে pubmed ডাটাবেস সার্চ করেন (এর সঙ্গে আমি সার্চ করলাম কি আপনি সার্চ করলেন, কি আমি ইচ্ছে করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খুঁজতে চাইছি এসব কিছু নেই) আপনি দেখবেন প্রায় ১৫০০ পেপার পাবেন (দেখুন, https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/?term=%22mindfulness+based+stress+reduction%22 )
    কাজেই ব্যাপারটা ঠিক ধর্মের ব্যাপার নয় । 
    এখন প্রশ্ন উঠবে তাহলে এরা হঠাৎ করে হিন্দু বৌদ্ধ রা কি ধরণের ধ্যান করে তাই নিয়ে এত উৎসাহিত কেন? এর সূত্রপাত রূপে ১৮৯০ সালে উইলিয়াম জেমসের "The Principle of Psychology" বইয়ের একটি উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে, যেখানে তিনি লিখেছিলেন,
    > "PSYCHOLOGY IS A NATURAL SCIENCE.
    That is, the mind which the psychologist studies is the mind of distinct individuals inhabiting definite portions of a real space and of a real time. With any other sort of  mind, absolute Intelligence, Mind unattached to a particular body, or Mind not subject to the course of time, the psychologist as such has nothing to do. 'Mind,' in his mouth, is only a class name for minds. Fortunate will it be if his more modest inquiry result in any generalizations which the philosopher devoted to absolute Intelligence as such can use.
    To the psychologist, then, the minds he studies are objects, in a world of other objects. Even when he introspectively analyzes his own mind, and tells what he finds there, he talks about it in an objective way. He says, for instance, that under certain circumstances the color gray appears to him green, and calls the appearance an illusion. This implies that he compares two objects, a real color seen under conditions, and a mental perception which he believes to represent it, and that he declares the relation between them to be of a certain kind. In making this critical judgment, the psychologist stands as much outside of the perception which he criticises as he does of the color. Both are his objects. And if this is true of him when [p.184] he reflects on his own conscious states, how much truer is it when he treats of those of others! In German philosophy since Kant the word Erkenntnisstheorie, criticism of the faculty of knowledge, plays a great part. Now the psychologist necessarily becomes such an Erkenntnisstheoretiker. But the knowledge he theorizes about is not the bare function of knowledge which Kant criticises - he does not inquire into the possibility of knowledge überhaupt. He assumes it to be possible, he does not doubt its presence in himself at the moment he speaks. The knowledge he criticises is the knowledge of particular men about the particular things that surround them. This he may, upon occasion, in the light of his own unquestioned knowledge, pronounce true or false, and trace the reasons by which it has become one or the other.
    It is highly important that this natural-science point of view should be understood at the outset. Otherwise more may be demanded of the psychologist than he ought to be expected to perform"
     
     
    উইলিয়াম জেমসের এই কথাগুলো দেখুন, 
    "To the psychologist, then, the minds he studies are objects, in a world of other objects. Even when he introspectively analyzes his own mind, and tells what he finds there, he talks about it in an objective way. He says, for instance, that under certain circumstances the color gray appears to him green, and calls the appearance an illusion. This implies that he compares two objects, a real color seen under conditions, and a mental perception which he believes to represent it, and that he declares the relation between them to be of a certain kind. In making this critical judgment, the psychologist stands as much outside of the perception which he criticises as he does of the color"
     
    এই ব্যাপারগুলো কে যদি বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হয়, তাহলে কোন একটা পর্যায়ে এমন মানুষ খুঁজে বার করতে হত যারা নিজেরা এই কাজ প্রথাগতভাবে করে আসছেন । সেখানেই বৌদ্ধ ধর্মের এবং শ্রমণদের অবদান । আরো একটু ভেঙে বললে এই ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপলক্ষ করে নিয়ে আসার পিছনে যে মানুষটির অবদান, তিনি চিলি দেশের জীববিজ্ঞানী  Francesco Varela  ( তাঁর সম্বন্ধে জানতে দেখুন যদি ইচ্ছে হয়, https://infogalactic.com/info/Francisco_Varela )
     
    পুরো ব্যাপারটায় কোথাও কিন্তু "প্রচার প্রনোদিত" মনে করার কোনো কারণ নেই । বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেরা এগিয়ে এসে কাউকে নিজেদের ধর্মের প্রচারের জন্য কিছু করতে বলেন না, উল্টে বৈজ্ঞানিকরা তাঁদের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছে এঁদের রহস্যের সূত্রপাত, কারণ উইলিয়ম জেমস এর কথাগুলোর যাচাই করে নেওয়ার তাগিদটি বৈজ্ঞানিকদের নিজেদের । কাজেই বৌদ্ধ যোগাযোগ থাকাটা বৈজ্ঞানিকদের নিজেদের প্রয়োজনেই, এবং এখানে কারো হয়ে প্রচার করার কোন ব্যাপার নেই কিন্তু । 
    এখন কেউ এর অপপ্রয়োগ করে তার দায় কিন্তু সিরিয়াস বৈজ্ঞানিক বা তাঁদের সহযোগী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ওপর বর্তায় না । এই ব্যাপারটি আপনি না বুঝলে বা না বুঝতে চাইলে আমার আর সত্যি ই কিছু করার নেই  ।
     

    পঞ্চমত, আপনি লিখেছেন, "আপনি ককরেন কোলাবোরেশনের সদস্যপদের প্রমাণপত্র পেশ করে নিজের অথরিটি ঘোষণা করেছেন, সে ব্যাপারে অবহিত হয়ে অত্যন্ত প্রীত হলাম। অথচ, নিজের আলোচনার মধ্যে কেন যে ধ্যান-বিষয়ক ককরেন-রিভিউগুলো অন্তর্ভুক্ত করলেন না, সেই প্রশ্নের জবাবটা কিন্তু পেলাম না। এর অন্তর্নিহিত অর্থ কী হতে পারে?"
     
    দিই নি, তার কারণ, আমার লেখাটির মধ্যে কোথাও তো ধ্যান করলে মানুষের কি শারীরিক বা মানসিক উপকার হয়, তার ইতিবৃত্ত দেওয়া তো এই প্রবন্ধের একেবারেই উদ্দেশ্য নয়, সেটা আপনার জানার উদ্দেশ্য হতে পারে । এই লেখাটির বক্তব্য ধ্যান ও স্নায়ুবিজ্ঞান । ধ্যান করলে "জগতের কি উপকার" সেটা আপনি জানতে চেয়েছে, তাই এতো কথা হচ্ছে । আমি যে ব্যাপারটি নিয়ে লিখতে চাইনি, সেখানে এই রিভিউগুলো অন্তর্ভুক্ত করা অপ্রাসঙ্গিক বলেই করিনি । আমার লেখার উদ্দেশ্য যদি হতো ধ্যান করলে মানুষের মনের বা শরীরের কি কি উপকার হয়, তাহলে নিশ্চয়ই দিতাম ।
     
    ষষ্ঠত, আপনি লিখেছেন, "আমার কাছে তার মানে দাঁড়িয়েছিল এই যে, ধ্যান-গবেষণার ‘এক্সপ্লোরেটরি’ চরিত্রটি আপনি মেনে নিয়েছেন। এখন আপনি যদি তা অস্বীকার করেন, তো আমি সে নিয়ে মোটেই তর্ক করব না। আমি তাহলে এটাই ধরে নিচ্ছি যে, আপনি একে একটি প্রতিষ্ঠিত গবেষণা হিসেবেই উপস্থাপিত করতে চাইছেন। অর্থাৎ, ধ্যান যে আদৌ ‘কিছু একটা বটে’, এবং তার যে নানা ‘উপকার’ আছে, সেটা ইতিমধ্যেই গবেষণায় সুপ্রতিষ্ঠিত --- এমনটাই আপনি বলতে চাইছেন। বেশ, চমৎকার। আশা করি, পরবর্তীকালে এ অবস্থানের পরিবর্তন হবেনা।"
     
    আমার মেনে নেওয়া না নেওয়াতে কিছু এসে যায় না । ধ্যান ব্যাপারটিকে মানুষ নানান ভাবে পরীক্ষা করে গবেষণা করে দেখছেন, সব বিষয় এখনো স্পষ্ট নয় । এযাবৎ যেটুকু জানা গেছে (হাজার খানেক প্রাথমিক গবেষণা এবং ৮০০র ওপর randomised controlled trial, ১৭ টি meta -analysis ), নিয়মিত ধ্যান করলে এক ধরণের মানসিক "সমতা" মানুষ অর্জন করে, যাতে anxiety , distress গোছের মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়, সে উন্নতির পরিমাপ বর্তমান যেভাবে মানসিক অবস্থা মাপজোক করা হয়, তার নিরিখে কিছু আহামরি নয়, কিন্তু হয় । কিন্তু ঠিক কি কারণে হয় সেই ব্যাপারগুলো কেউ জানে বলে মনে হয় না, যে কারণে এতো গবেষণার সূত্রপাত । এর সঙ্গে না ধর্মের ব্যবসায়ী না ওয়েলনেস না কি বলছেন তার কোন সম্পর্ক নেই । যা গবেষণা অদ্যাবধি হয়েছে সব কিছু লিখে রাখা আছে, যে কেউ হাতে কলমে করে দেখতে পারে ।
     
    এখন এই পর্যন্তই থাকে, পরের পয়েন্টগুলো পরে লিখব । কাজ রয়েছে, কাজ শেষ করে এসে সময় পেলে, বাকি গুলো লিখবো ।
  • যদুবাবু | ২৮ জুন ২০২৪ ০৯:২৭533805
  • আমিও পড়ছি। ব্যক্তি-আক্রমণ ফিলটার করে পড়লে আলোচনা ভালোই লাগছে। তবে, আমি সব পেপার খুলে খুলে পড়ার সময় পাবো না, পড়ছিও না। 
     
    "হথর্ণ এফেক্ট"-এর কথা এলো দেখে খুশি হলাম। বেশ ইন্টারেস্টিং জিনিষ, না? আর এই ধরণের স্টাডিতে "কোলাইডার বায়াস" নামে একটা জিনিষ-ও আসার সম্ভাবনা প্রচুর। (তার মানে এই নয় যে তাইই হচ্ছে, কিন্তু ঐ আর কি।) ... 
     
    আবার, এই যেমন Saron lab এর লেটেস্ট পেপারে দেখলাম, "All participants were experienced meditators" ... এবার এই যে "এক্সপিরিয়েন্স" - এটা তো একটা কোলাইডার? মানে যাদের মধ্যে সম্পর্ক দেখা হচ্ছে তারা এটাকে অ্যাফেক্ট করে, না এক্কেবারে ভুল বুঝছি? 
     


    (কোলাইডার বায়াসের উদাঃ) 

    এই যেমন, এই পেপার-টা দেখলাম মেটা-অ্যানালিসিস করেছে এইরকম মাইন্ডফুলনেস/মেডিটেশন ইত্যাদির। সে অনেক ফিল্টার করে করে ১৩টা মত পেপার বিবেচ্য হয়েছে। তো, যেগুলো বাদ গ্যালো বিবিধ বায়াসের জন্য, সেগুলো তো সব রিট্র্যাক্টেড হবে এমন না। (এই জন্যই আজকাল বিজ্ঞানের উপর লোকের আস্থা একদম কম।) 
     
     
    তাতেও তারা এর পর বলেছে, "The Cochrane Collaboration tool suggested that included studies are, overall, at low risk in regard to attrition and reporting bias. However, risk regarding selection, performance, and detection bias remains largely unknown, given that most studies failed to report sufficient information to evaluate them." (emphasis mine.)

    এই নিয়ে আরও একটা ভালো পেপার পড়লাম। তাতে বলছে যে, কোনো জিনিষ নিয়ে স্পেকুলেশন করার সময় মানুষের এবং বিশেষ করে মিডিয়ার চারটে জিনিষ মাথায় রেখে করা উচিত - 
     
    a) the magnitude and costs of the effect, (b) the robustness of the effect, (c) testing causality, (d) the identification of moderator variables, and (e) the underlying mechanisms. 
     
    হয়তো এইসব-ই অ্যাচিভ করা যাবে একদিন ঐ গবেষণায়, তবে এখনো সময় লাগবে। তার আগে, ব্যক্তিগতভাবে, আনক্রিটিক্যালি কিছু বিশ্বাস করার প্রশ্ন নেই। সে নিশ্চ্যয়ই কেউ করতেও বলছেন না। 
     
    যাই হোক, আমার দু পয়সা দেওয়ার ছিল, দিয়ে গেলাম। এক গাদা লিংক দিলাম, সে জন্য সরি। তবে, যারা যারা বলেছেন, লেখা শেষ হলে নিজেদের লিখবেন, তারা আশা করি লিখবেন। কেকে, ডিসি, দেবাশিস-বাবু। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৮ জুন ২০২৪ ০৯:৫৩533806
  • আরে, যদুবাবু যে! ওয়েলকাম, ওয়েলকাম! 
  • অরিন | ২৮ জুন ২০২৪ ১০:৪৫533807
  • @দেবাশিসবাবু, আপনার মন্তব্যের উত্তরে আমার প্রত্যুত্তরের  দ্বিতীয় ভাগ:
     
    সপ্তমত, আপনি লিখেছেন, " ধ্যান-গবেষণা সম্পর্কে ‘ভুয়ো’ বা ‘চিট’ জাতীয় শব্দের প্রয়োগে আপনি আহত, কারণ, আপনি বিষয়টিকে জরুরি সিরিয়াস চর্চার বিষয় বলে মনে করেন। বেশ, আহত হতেই পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমি যেহেতু একে গণপ্রতারণা বলে মনে করি, এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিকে অত্যন্ত সম্মান করি, তাই একে ‘বিজ্ঞান’ বলে হাজির করবার চেষ্টা হলে আমিও অত্যন্ত আহত হই। আপনার থ্রেডে এসে সময় ও শ্রম খরচা করে এই যে বকর বকর, সেটা ওই আঘাতেরই ফসলবিশেষ।"
     
    এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, আপনি যদি কিছুকে গণপ্রতারণা বলে মনে করেন, তার মানে সেই ব্যাপারটা গণপ্রতারণা হয়ে যায় না ।  ধ্যান নিয়ে গবেষণার ব্যাপারটি একটি "চেতনা" নিয়ে গবেষণার মতন ব্যাপার, বিজ্ঞানের অন্যতম শর্ত যে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ এবং সেই পর্যবেক্ষণ করে যা পাওয়া গেল তাকে বিচার বিবেচনা করে তার ভিত্তিতে তত্ত্ব ও হাইপোথিসিস করে তাকে empirically দেখা এখানেও হয় । কাজেই আপনি যদি সত্যি যে দাবি করছেন " বিজ্ঞান ও যুক্তিকে অত্যন্ত সম্মান করি",  তা যদি করেন, তো খুবই ভালো কথা, তবে বিজ্ঞান ব্যাপারটি কি তাকে জেনে বিজ্ঞানকে  সম্মান করলে আলাপ আলোচনা করতে সুবিধে হয়, কারণ বিজ্ঞানের এবং বিজ্ঞান যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁরা কোন কিছুকেই বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করেন না, তাঁদের কাছে সমস্ত ব্যাপারই খুঁটিয়ে দেখার, কৌতূহলের , তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের নয়  । আপনি যুক্তি কে সম্মান করেন, সেও ভাল কথা । যদি ধরে নিই আপনি এক্ষেত্রে যুক্তি বলতে rationalism বোঝাতে চাইছেন ("যদি ধরে নিই ", আপনি তা নাও হতে পারেন, আপনি বিজ্ঞান ও যুক্তির  "ভক্ত" হতে পারেন, যেমন বিভিন্ন ধর্মের ভক্ত দেখা যায়, সেক্ষেত্রে পরবর্তী কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই):, তাহলে একটা ব্যাপার আপনার জানার কথা যে সত্যের সন্ধানে rationalism যেমন একটি পথ, তেমন empiricism এর পথও একটি পথ, এ দুটোর মধ্যে আপাত বিরোধ থাকার কোন সঙ্গত কারণ নেই, যদি না উভয় তরফের অন্ধ ভক্তরা একে অপরকে আক্রমণ করতে থাকেন । এই কথাটি এই জন্যে লিখলাম, যে, ধ্যানের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় "চেতনা"কে নিয়ে ("consciousness ") নিয়ে গবেষণার একটি  ভূমিকা রয়েছে । এখন চেতনা নিয়ে গবেষণা করতে গেলে empiricism  বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়, rationalism ই একমাত্র অবলম্বন নয়  ।  শুধু তাই নয়, এমন অনেক ব্যাপার  আছে, যেগুলো intuitive  । Francesco Varela র কথাগুলো দেখুন,
     
    > "Intuition is not some fluffy stuff Many people react to the mention of intuition with suspicion. In this context, intuitive capacity does not refer to some elusive, will-oí-the-wisp inspiration. It is, on the contrary a basic human ability which operates constantly in daily life, and that has been widely discussed in studies of creativity. Think about mathematics: ultimately the weight of a proof is its convincing nature, the immediacy of the evidence which is imposed on us, beyond the logical chains of symbolic reasoning. This is the nature of intuitive evidence: born not of argument but from the establishment of a clarity that is fully convincing. We take this capacity for granted but do little to cultivate it in a systematic manner. Obviously there is no contradiction here between reasoning and inference: intuition without reasoning is blind, but ideas without intuition are empty"
     
     
     এখন শুধু deductive logic প্রয়োগ করে দেখতে চাইলে আর অন্য কিছু না গ্রাহ্য করলে কোনটা "প্রতারণা" আর কোনটা নয়, তার তারতম্য বিচার করা কিন্তু সহজ নয়, এবং আমরা সম্পূর্ণ cross-purpose এ আলোচনা চালিয়ে যাব ।
    ভুয়ো বিজ্ঞান নিয়ে আপনার বক্তব্য যা লিখেছেন এ নিয়ে আলাদা করে লেখার কিছু নেই, এনারা কি লিখেছেন আমি পড়িনি, 
    ধরে নিচ্ছি আপনি পড়েছেন । 
    যেখানে আপনি লিখেছেন, 
     
    "পরিষ্কার করে বলা দরকার, এই বিকল্প চিকিৎসার হিড়িককে (ধ্যান ইনক্লুডেড) আমি ‘ভুয়ো’ বলি বটে, কিন্তু শুধু আমি একাই বলি, এমনটা নয়। যেমন ধরুন, প্রায় দেড় দশক আগে চিকিৎসা-গবেষক এডজার্ড আর্নস্ট এই ধরনের যাবতীয় চিকিৎসার স্বরূপ উন্মোচন করে যে বইটি লিখেছিলেন তার নাম ছিল, “Trick or Treatment – The Undeniable Facts about Alternative Medicine”। বইটির বক্তব্য বিষয়ে নিয়ে আমি এখন আলোচনায় ঢুকছি না, যদিও পরে তা করতে হতেও পারে। কিন্তু আপাতত লক্ষ করে দেখুন, লেখক ওই যে ‘ট্রিক’ শব্দটি এখানে ব্যবহার করছেন, তার বাংলা অর্থ তো প্রতারণা, তাই না? প্রায় ওই একই সময়ে বায়োস্ট্যাটিস্টিশিয়ান বার্কার বওজেল আরেকটি বইতে একই বক্তব্য পেশ করেছিলেন, চিকিৎসা-গবেষণার পদ্ধতি ও তার অন্তর্নিহিত পারিসংখ্যায়নিক ধ্যানধারণাগুলোর অসাধারণ খুঁটিনাটি সহ। বইটির নাম, “Snake Oil Science: The Truth About Complementary and Alternative Medicine”। উভয় বইতেই হোমিওপ্যাথি, আকুপাংচার, জড়িবুটি ইত্যাদি ‘বিকল্প চিকিৎসা’-র সঙ্গে ধ্যান নিয়েও কিছু কথাবার্তা ছিল। এঁরা দুজনেই অত্যন্ত যোগ্য বিশেষজ্ঞ বলে আমার ধারণা। অবশ্য, আপনি এঁদেরকে ‘রীতিমতন সার্টিফায়েড’ বলে গণ্য করেন কিনা, তা আমার জানা নেই।"
     
    এরা যদি বিশেষ কোন গবেষণা নিয়ে লিখে থাকেন, তাহলে হয়তো ঠিকই লিখবেন, এঁরা কি নিয়ে লিখেছেন সে সমস্ত না জেনে আমি কি কমেন্ট করবো?
     
    দশম,  “Buddhist and Psychological Perspectives on Emotions and Well-Being”। না, এটা আমার কাছে আছে, পাঠানোর দরকার নেই। কিন্তু, এই রেফারেন্স ও তার উদ্ধৃত অংশটি দিয়ে ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইলেন, বুঝতে পারিনি। ‘মনের সমতা’ বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন তার একটা অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা আমি আপনার কাছে চেয়েছিলাম, কারণ, কমপক্ষে সেইটুকু না হলে, ‘ধ্যান করে মনের সমতা আনা যায়’ --- এ দাবির আর কোনও মানেই থাকবে না। তো, এখানে আপনি তার যে অংশ উদ্ধৃত করেছেন তার মোদ্দা বক্তব্য হচ্ছে, বৌদ্ধ ধর্মতত্ত্বে যাকে ‘সুখ’ বলা হয়েছে সেটাই নাকি আসলে মনের সমতা। পরিষ্কার করে বলা জরুরি যে, এগুলো মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত কোনও চর্চা নয়, যদিও মনোবিজ্ঞানের কৃত্রিম গন্ধ সঞ্চার করবার একটা চেষ্টা এর মধ্যে আছে। "
     
    আমি এর আগের পোস্ট এ মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের কি সংযোগ তাই নিয়ে লিখেছি । এখানে এইটুকু লেখা থাকে, যে ব্যাপারটি মোটেও কৃত্রিম গন্ধ সঞ্চার ধরণের কিছু ব্যাপার নয় । 

     
    আপনার (খ) সম্বন্ধে,  “https://sbinstitute.com/wp-content/uploads/2021/03/buddhadharmashamathaprojectarticle.pdf”। এখানে একটি গবেষণায় অংশ নেবার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণিত হয়েছে। একটি ধর্মীয় স্থানে ধর্মীয় পরিবেশে ধর্মীয় নেতার তত্ত্বাবধানে কিছু লোক ধ্যান করছে, এবং তার ফলে তাদের শারীরিক ও স্নায়বিক নানা পরিবর্তন পরীক্ষায় ধরা পড়ছে, এবং বিশেষত তাদের সংবেদন-ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে --- এটাই মোদ্দা বক্তব্য। যদি ধরেও নিই যে এই পরীক্ষায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বৈজ্ঞানিক সততা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, তার পরেও বলতে হয় যে এ ধরনের পরীক্ষার আদৌ কোনও অর্থ নেই, যদিও এ ধরনের ননসেন্স পেপার নিয়মিতই গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকাশ হয়ে থাকে। এ পরীক্ষায় যারা ধ্যান করছে তাদের কন্ট্রোল হিসেবে থাকছে এমন লোক যারা ধ্যান করছে না। কী অর্থ হয় এ কন্ট্রোলের? ওখানে যারা স্বেচ্ছায় পরীক্ষিত হতে গেছে তারা সকলেই ধ্যানে বিশ্বাসী লোক, সেভাবেই তাদেরকে বাছা হয়েছে --- পরিষ্কার না বললেও এটা সহজবোধ্য। "
     
    আমার সন্দেহ আপনি এই ধরণের গবেষণা সম্বন্ধে যা যা লেখা হয়েছে ঠিক মতন পড়েন নি বা হয়তো ওপর ওপর পড়েছেন, বা  পড়লেও বোঝেন নি । স্বাস্থ্য   সংক্রান্ত যে randomised controlled trial গুলো করা হয়েছে, বিশেষ করে MBSR এর efficacy দেখার জন্য, যাদের কে নিয়ে করা হয়, তাদের কারোরই ধ্যানের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে তাদের সেই গবেষণায় সাধারণত নেওয়া হয় না । এখন  কে ধ্যানে বিশ্বাস করেন, কে করেন না, সেই ব্যাপারটায় গবেষকদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, এবং যেহেতু ব্যাপারটা randomised হবার দরুন এই ব্যাপারটা আলাদা করে কাজ করে না । বাকি রইল control, তারা ধ্যান করে "না" ঠিক নয়, তাদের এমন একটি অবস্থায় রাখা হয়, যেটা ধ্যানের মতন, কিন্তু ঠিক mindfulnesss মেডিটেশন নয় । 
     
    যেমন, নিচে একটি randomised controlled trial  এর মেথডের বর্ণনা দিলাম, দেখুন, (এটা একটা উদাহরণ  মাত্র,এরকম আরো আছে),
     
    "Study Participants
    Healthy individuals aged 30–60 years with unmedicated BP in the prehypertensive range (SBP 120–139 mm Hg or DBP 80–89 mm Hg) were sought for this trial. Participants could not be taking antihypertensive medication, could not be experienced with meditation practices, could not be current smokers, and could not report any disease (e.g., myocardial infarction, heart failure, chronic kidney disease, diabetes) that would mandate treatment with drugs that could substantially affect BP.
    Enrollment began in January 2006. Participants were enrolled in 7 cohorts ranging in size from 3–11. MBSR and PMR (Progresive Muscle রিলাক্সেশন) treatment groups included some non-protocol patients in order to increase the group size so that a high-quality group treatment experience could be provided to every patient enrolled in the trial. That is, some individuals who were not enrolled in the trial participated in the treatment groups. The circumstances of their involvement was that they had responded to the advertisements but were not eligible for enrollment. Reasons for ineligibility included falling outside the age range, taking antihypertensive medication, previous experience with meditation, being a smoker, or not being pre-hypertensive. When patients were ineligible but remained interested in participating in treatment, they were allowed to opt to participate in one of the treatments. There were 13 non-protocol participants in each group. No baseline BP data were collected from non-protocol patients, and their presence was designed to maintain an adequate group size. The CONSORT chart in Figure 1 presents the flow of patients through the trial. Patient accrual from recruiting efforts and eligibility screening is presented in Figure 2.
    Procedure
    The Institutional Review boards of Kent State University and SUMMA Health System reviewed and approved the study procedures. Prospective participants completed a telephone screening that included questions about their medical history. If there were any concerns about whether or not a patient was “healthy” for purposes of eligibility, the case was reviewed by the study physician (RAJ). Those who appeared eligible then scheduled an initial BP screening, which consisted of three separate BP readings separated by 5 minutes after 10 minutes of quiet rest (additional details in the measures below). This initial screening was followed by a second screening approximately one week later that followed the same procedures, and participants were scheduled for a pre-treatment assessment approximately one week later. When they returned, a third screening that used the same procedures was conducted. If BP remained in the pre-hypertensive range, the patient was enrolled and the pre-treatment assessment was completed at the same visit. Thus, BP had to remain in the prehypertension range on three separate determinations over a three-week period for patients to be eligible. If BP was not in the pre-hypertensive range at any of the three screenings, the patient was no longer eligible and was not enrolled. Participants who were eligible and who consented to participate in the study were enrolled in the study and completed a pre-test assessment including clinic and ambulatory BP. After the pre-test assessment, patients were randomized to eight weekly sessions of MBSR or PMR using an order of assignment generated by random number, stratified for gender and ethnicity. After the eight sessions, patients returned for reassessment of both clinic and ambulatory BP, as described below in the measurement procedures.
     
    Blinding
    Concealment of treatment allocation was maintained by having different study personnel perform recruitment and treatment assignment functions so the investigators responsible for recruiting and assessments were not aware of random assignment. The adequacy of this blinding procedure was assessed using a questionnaire asking the primary research assistants to predict group membership. No patient volunteered their treatment assignment to the research assistants, and research assistants were unable to predict group membership (Cohen’s к = .135, p = .37), confirming adequacy of blinding. Furthermore, investigators responsible for random assignment and the delivery of the treatments were not aware of assessment results (e.g., BP values) until after the study was complete. The blind was not broken until after the final assessment.

    MBSR
    The MBSR program consisted of eight group sessions, each 2.5 hours long, and delivered on consecutive weeks. MBSR included instruction and practice in mindfulness meditation skills along with discussion of stress, coping, and homework assignments. The MBSR therapist participated in the mindfulness exercises with group members during the weekly sessions, and group members were instructed to practice these mindfulness exercises outside group meetings for at least 45 minutes per day, 6 days per week. Homework was collected by the study therapist and consisted of weekly logs in the participant folder with spaces for each day of the week for participants to record the duration of homework completed.
    Group members were taught three main varieties of mindfulness skills: the body scan exercise, sitting meditation, and yoga exercises. The body scan exercise entails lying down with one’s eyes closed and deliberately focusing one’s attention on various parts of the body with the goal of noticing nuances of sensations going on within the body. In sitting meditation, participants sit in a relaxed and wakeful posture with eyes closed and deliberately bring their attention to the sensations of breathing. Finally, group members learned a series of physically non-strenuous yoga exercises designed to bring mindful attention to bodily sensations during gentle movements and stretching. The daily homework exercises consisted of repeating body scan work, sitting meditation and yoga exercises at home to provide practice and generalization of the skills. Group members were provided audiotapes or CD’s with guided MBSR exercises to assist their homework. In addition, group members were encouraged to bring mindful attention to daily activities such as walking, standing, and eating.
    Progressive Muscle Relaxation Training
    The PMR treatment was based on a manual created for this study, adapted from other sources (18). PMR consisted of eight group sessions lasting 2.5 hours each delivered on consecutive weeks. PMR patients received instruction and practice in PMR skills, which involved learning to achieve a state of relaxation by alternately tensing and relaxing various muscle groups, along with homework assignments. The PMR therapist participated in the exercises with group members during the weekly sessions. Sessions progressed from 16 muscle group relaxation to 7 muscle groups, 4 muscle groups, and finally relaxation by recall. Relaxation by recall was intended to allow participants learning PMR to apply relaxation skills during their daily lives, and there was explicit instruction on generalizing the relaxation response to stressful situations. Group members were instructed to practice these exercises outside group meetings for at least 45 minutes per day, six days per week. Homework was collected by the study therapist and consisted of weekly logs in the participant folder with spaces for each day of the week for participants to record the duration of homework completed. They were provided with audio recordings of to assist their home PMR exercises.
    Measures
    Clinic BP 
    All clinic BP assessments were completed in a quiet, climate controlled room.
    All measures were completed in the same room, and in accordance with American Heart Association guidelines for taking BP (19). Participants were asked to refrain from consuming caffeine for at least 60 minutes prior to their appointment time. Patients had their BP assessed on their non-dominant arm while sitting in a chair with their feet flat on the floor and their arm supported at heart level. Patients rested quietly for 10 minutes, and then had 3 seated BP readings taken, each 5 minutes apart using an automated oscillometric BP device (Accutor Plus Oscillometric BP Monitor, Datascope Corp, Mahwah, NH). An automated oscillometric BP device was chosen in favor of manual sphygmomanometer for several reasons. First, mercury has been phased out (20). Second, the Accutor Plus performed well in a validation study (21). Specifically, the Datascope Accutor Plus received a grade of A (British Society of Hypertension) for both systolic and diastolic BP and met the Association for the Advancement of Medical Instrumentation guidelines (the mean difference between the BP device and the mercury standard were ≤ 5 mmHg). Finally, an automated device eliminated any potential experimenter bias. Clinic BP assessment procedures were the same at the BP screening, pre-test, and post-test assessment visits. Pre-test and post-test clinic BP are based on one visit and are not aggregated across several visits.
    Ambulatory BP 
    Following the laboratory assessments, participants completed 24-hour ambulatory BP monitoring. Participants were instrumented with an Oscar (Suntech, Raleigh, NC) oscillometric BP monitor at the time of their assessment, and the monitor was programmed to take three BP measurements each hour between the hours of 6 AM to 11 PM and two BP measurements were taken each hour between the hours of 11 PM to 6 AM. Participants were instructed to lower their arms to their sides as soon as they sensed the cuff inflating and to keep it relaxed and still until a few seconds after the deflation had finished because of possible movement artifact. Artifactual values were deleted after inspection by an experienced examiner blind to patient condition using modified Casadei criteria (22). Participants wore the ambulatory BP device for a continuous 24-hour period. Daytime and nighttime BP values were defined by patient diary entries indicating sleep and waking times.
    Data analysis
    The primary outcome measures were clinic SBP and DBP, and secondary outcome variables were ambulatory SBP and DBP. Clinic BP for analyses was derived by taking the average of the three BP readings from the final pre-test visit and the three readings from the post-test assessment visit. Ambulatory SBP and DBP were derived by computing the mean of all valid readings obtained during waking hours and nighttime sleep. Hierarchical linear regression analyses using pre-intervention clinic BP levels as control variables were conducted separately for change in clinic SBP and DBP. A variable representing treatment condition was regressed on change in clinic BP score from pretest to posttest while controlling for pretest clinic BP levels in separate analyses. The same analytic strategy was used for ambulatory BP. Analyses were based on intent to treat with baseline values carried forward when post-treatment values were missing, although analyses were repeated with completers to check for consistency. That is, discrepant results for completers could reveal a bias in the intent-to-treat analyses given the higher drop out among patients randomized to PMR. Furthermore, although evaluating group effects on change scores is equivalent to the interaction term from a 2 (group; MBSR vs. PMR) by 2 (time; pretreatment vs. posttreatment) factorial design, for completeness these interaction terms were reported for clinic BP as well as mean values of posttreatment BP. All analyses were conducted at the .05 level of significance and were not corrected for multiple comparisons. Data were analyzed using IBM SPSS Version 20 (Chicago, IL) using linear regression procedures with forced entry of control variables. Means reported in the table are unadjusted means from simple descriptive statistics."
     
    (পুরো লেখাটা পড়তে চাইলে, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3834730/ )
     
    আমি যে জায়গায় ঘন করে দিয়েছি সেগুলো পড়লে বুঝবেন যে:
    * ধ্যানের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে এ ধরণের ট্রায়ালে লোক কে নেওয়া হয় না 
    * আপনার ধারণা " তেমন কন্ট্রোল এখানে আদৌ নেই, আদর্শ ‘ডাব্ল ব্লাইন্ড কন্ট্রোল’ তো অনেক দূরের গল্প!" টি ভুল ধারণা, ডাবল ব্লাইন্ড করা সম্ভব 
    * আপনার ধারণা সব রেজাল্ট Bias এর কারণে ("তাদের ওপরে একটা দারুণ কিছু চলছে এবং তার ফলে তাদের মধ্যে একটা অসাধারণ কিছু ঘটা উচিত --- শুধু এই প্রত্যাশাটুকুর কারণেই অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।") এই সন্দেহ সব ক্ষেত্রে খাটে  না, অন্তত এই ধরণের গবেষণায় সেটি হবার সম্ভাবনা নেই, কারণ রক্ত চাপ এর ম্যাপ ব্যাপারটি তে response bias ব্যাপারটির কোন ভূমিকা নেই ।
    * মেডিটেশন রিসার্চে, যেখানে randomised করা হয়েছে, সেখানে Hawthorne Effect  (যে কাউকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে তাদের আচার ব্যবহারে পরিবর্তন হবে)  হওয়া সম্ভব নয় ওই randomisation procedure  এর জন্য ।
    * আপনি যদি ধরে নেন, যে সকলের এই গবেষণা সফল হলে স্বার্থ চরিতার্থ হবে (মানে ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে হেলথ সার্ভিসের সকলের), তাহলে তো সত্যি কিছু বলার নেই ।
     
    এই সিরিজে আপনার শেষ বক্তব্য, " ... তা সে যা-ই হোক, এখানে নাকি ‘মনের সমতা’ কি সেটা ভেঙে বোঝানো আছে --- আপনার এই কথায় আশান্বিত হয়ে গোটাটাই পড়ে দেখলাম। এখানে মনের সমতাকে কতকগুলো উপাদানে ভাগ করা হচ্ছে। অভিপ্রায়মূলক, আবেগমূলক, নৈতিক, বৌদ্ধিক,  আধ্যাত্মিক --- এইসব। ব্যাপারটা এমনিতে চমৎকার, এবং আমি এর সঙ্গে আরও কয়েকটা যোগ করতে পারি। "
     
    আপনি যদি তালিকায় যোগ করতে চান, করুন না, কারণ এই প্রজেক্ট টিতে যাঁরা কাজ করেন, আমি তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, আপনি যা যা যোগ করতে চাইবেন তাঁদের পাঠিয়ে দেব । এ তো ভাল কথা ।
     
    তারপর আপনি লিখেছেন, "কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, এ দিয়ে গবেষণার কী সুবিধে হল! আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘মনের সমতা’ ব্যাপারটার কোনও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও মাপনযোগ্য পদ্ধতি আছে কিনা --- যেমনটি বিগ ফাইভ বা বুদ্ধিমত্তা বা উদ্বেগ মাপার ক্ষেত্রে আছে --- এবং তা দিয়ে ধ্যানের ফলাফল কেউ সফলভাবে মেপেছেন কিনা। তার উত্তরে এইসব হাবিজাবি বস্তু পেয়ে আমি অত্যন্ত হতাশ।"
     
    না, সেটা নেই, এবং এই ধরণের স্কেল তৈরী করা যেতে পারে, তবে তাতে চেতনা সংক্রান্ত বা ধ্যান সংক্রান্ত বিষয় মাপার বিশেষ সুবিধে হবে না । হয়তো মানসিক সমতা এক রকম মাপা যাবে, তবে মানসিক সমতা হল কি না, লোকের প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে সরাসরি EEG বা MEG (Magnetoencephalography ) বা ব্লাড অক্সিজেন লেভেল ডিপেন্ডেন্ট ইমেজিং দিয়ে করা আরো জরুরি, যে সমস্ত ব্যাপার নিয়ে এই লেখার সিরিজ টাকে শুরু করা ।
     
    এখন এ লেখা শেষ করতে পারলে হয়, :-)
  • অরিন | ২৮ জুন ২০২৪ ১১:০৪533809
  •  যদুবাবু,"আবার, এই যেমন Saron lab এর লেটেস্ট পেপারে দেখলাম, "All participants were experienced meditators" ... এবার এই যে "এক্সপিরিয়েন্স" - এটা তো একটা কোলাইডার? মানে যাদের মধ্যে সম্পর্ক দেখা হচ্ছে তারা এটাকে অ্যাফেক্ট করে, না এক্কেবারে ভুল বুঝছি? "
     
    না ভুল কিছু নয়, তবে collider bias তখনি হতো, যদি এঁরা meditation এর experience  (এক্সপেরিয়েন্সড/নন-experienced ) কে কন্ট্রোল variable রাখতেন আর এই রিসার্চে সবাইকে অভিজ্ঞতা নির্বিশেষে নিতেন, এই যে "All participants were experienced meditators", এতে আর সেই বায়াস টা  থাকে না । আপনার দেওয়া ছবিগুলো তে যেমন, যদি এরা এই variable তিকে কন্ট্রোল করতেন, তাহলে অবশ্যই সে রেজাল্ট বিশ্বাসযোগ্য হতো না, বয়সের জন্যে । দাঁড়ান এর স্বপক্ষে মিগুয়েল হের্নানের লেখাটা খুঁজে পেতে বার করি,
    "
    1. Conditioning on common effects: We propose that this structure is the source of those biases that epidemiologists refer to as selection bias. We argue by way of example."
     
    যদুবাবু, "দেখলাম মেটা-অ্যানালিসিস করেছে এইরকম মাইন্ডফুলনেস/মেডিটেশন ইত্যাদির। সে অনেক ফিল্টার করে করে ১৩টা মত পেপার বিবেচ্য হয়েছে। তো, যেগুলো বাদ গ্যালো বিবিধ বায়াসের জন্য, সেগুলো তো সব রিট্র্যাক্টেড হবে এমন না। (এই জন্যই আজকাল বিজ্ঞানের উপর লোকের আস্থা একদম কম।) "
     
    না না, যেগুলো বাদ  গেলো সেগুলো retracted  হবে কেন (যদি না তারা মিথ্যা কথা ইত্যাদি বলে থাকে, সে অন্য ব্যাপার) ? মেটা এনালিসিস থেকে পেপার অনেক কারণে বাদ  যায় । তাছাড়া বায়াস এসেসমেন্ট তো শুধু একটা পেপারের ওপর হয় না (মানে ককরেন কোলাবোরেশান GRADE নামে যেটা ব্যবহার করে তাতে ), সবকটা পেপার মিলে হয়, ফলে বায়াস দেখা গেলে বড়োজোর বলা যেতে পারে, এই পেপার সমূহের ভিত্তিতে যে Meta Analysis  হলো, তাতে এতটাই বায়াসের সমস্যা যে এ এভিডেন্স থেকে কিছু বলা সম্ভব নয়, আরো গবেষণা প্রয়োজন । 
     
  • যদুবাবু | ২৮ জুন ২০২৪ ১১:৪৫533812
  • হ্যাঁ। retracted হবে এটা দাবি করা হয়তো ঠিক হয়নি। একটু বাড়াবাড়ি হয়েছে। কিন্তু যে পেপারে স্পষ্ট সিলেকশন বায়াস হয়েছে বা severely under powered বা অন্য selected reporting, সেগুলো তো সাধারণ মানুষ অত না বুঝেই বিশ্বাস করে নেবে। এটা একটা সমস্যা তো বটেই। আজকের যুগে বিশেষ করে। 
     
    যার জন্য meta analysis দরকার। Meta analysis ও কঠিন এখানে। প্রচুর variability ইত্যাদি। তবে এত স্টাডি যখন হচ্ছে, আমরা অচিরেই আরো জানতে পারব। 
     
    Collider নিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছেই। আরেকটু ভেবে দেখি। একটা DAG ছবি আঁকতে হবে। এমনি বললে, Saron দের conclusion general population (inexperienced) এর জন্য প্রযোজ্য কি না জানা নেই। অন্যগুলো দেখতে হবে inclusion criteria ইত্যাদি। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৮ জুন ২০২৪ ১১:৫২533814
  • অরিনবাবু,
     
    আপনার যা বক্তব্য ধীরেসুস্থে বলুন, আমিও ধীরেসুস্থেই উত্তর দেব। চেষ্টা করব এখন আর বেশি কথা না বলার, এবং আপনার বাকি লেখাটুকুর জন্য অপেক্ষা করার। তবু, যৎসামান্য কিছু যদি বলার থাকে, ধীরেসুস্থে বলব। 
     
    আমার ধারণা, যদুবাবুর অংশগ্রহণ আমাদেরকে সমৃদ্ধ করবে। 
  • অরিন | ২৮ জুন ২০২৪ ১২:১১533815
  • @দেবাশিসবাবু, ধন্যবাদ। আমারও মনে হয়, @যদুবাবুর মতামত যোগ হলে সামগ্রিকভাবে আলোচনা সমৃদ্ধই হবে।
     
    তবে আপনার কমেন্টগুলো আমাকেও ভাবতে সাহায্য করছে (বিশেষ করে আজকে যেগুলো লিখেছেন)। আমি সাধারণভাবে হয়ত প্রবন্ধ লেখার সময় উইলিয়াম জেমস বা ভ্যারেলার কথা ভেবে দেখতাম না।
     
    @যদুবাবু, স্যারণদের যে রিসারচের কথা লিখেছেন, তার কথা আমি মনে হয় জানি, তাহলেও লিঙ্ক শেয়ার করলে ভাল হয়। এরা যেহেতু experienced meditator দের নিয়ে করেছে, সে রিসার্চের কনক্লুশন সকলের জন্য তো প্রযোজ্য নয়, হবার কথাও নয়। তবে এরা যেহেতু experience এর ওপর কন্ট্রোল করেনি (সব participant experienced) , experience এর দরুণ সিলেকশন বায়াস ব্যাপারটা এখানে বিবেচ্য নয়। অন্য কিছু অবশ্য হতে পারে।
     
    আর সাধারণত যে ধরণের আউটকাম দেখা হয়, তাতে মেডিটেশন স্টাডির এফেক্ট সাইজ কখনোই খুব বেশী হয় না, ফলে আণ্ডারপাওয়ার্ড স্টাডি দিয়ে খুব একটা লাভ হবে না কারোর। কিন্তু মেডিটেশন মেটা analysis এ নেগেটিভ, আণ্ডার পাওয়ার্ড স্টাডি নিতে হয় পাবলিকেশন বায়াস যাতে না হয়।
     
  • শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রগামী বাহিনী | 103.249.***.*** | ২৮ জুন ২০২৪ ১৭:৩৫533826
  • অরিনবাবু আর দেবাশিসবাবু 
    আপনারা অনেক পণ্ডিত মানুষ , আপনাদের মত এত পান্ডিত্য আমার নেই , তবে কিছু সাফ কথা একটু বলে নেওয়া খুব প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। 
    ''দাবি'' আর ''প্রমাণ'' দুটো আলাদা জিনিস , প্রথমটা করলেই দ্বিতীয়টা আপনা আপনি হয়ে যায় না। আপনারা দুজনেই প্রচুর বই বা পেপার পড়ে এই সাদামাটা বক্তব্যটা কোন কারণে ভুলে গেছেন বলে মনে হচ্ছে , তাই মনে করিয়ে দিলাম। গুগল সার্চ করে পটাপট কিছু কপিপেস্ট করে দিলেই সেটা বিজ্ঞান হয়ে যায় না ,সেটাযে বৈজ্ঞানিক ,তাঁর জন্য আলাদা করে ''প্রমাণ'' করতে হয়। 
    একজন বড় বিজ্ঞানী হয়েও অরিনবাবু , আর একজন বড় যুক্তিবাদী হয়েও দেবাশিসবাবু এটা ভুলে গেছেন দেখে খুব খারাপ লাগল। তাই একজন ধ্যনে বিজ্ঞান খুঁজে পাচ্ছেন , আর একজন জ্যোতিষ , জন্মান্তর এসবে বিজ্ঞান খুঁজে পাচ্ছেন।
    আসলে আপনারা চান ,শ্রমিকশ্রেনী আকন্ঠ ভাববাদের মদিরা পান করে বসে থাকুক ,বিপ্লববিমুখ হোক , ধ্যান প্রানায়ামে নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজুক , আর মোটিভেশনাল বাবাজিদের পেট মোটা হোক , আর আদানি আম্বানি মনের সুখে শোষণ করুক। আপনাদের জানিয়ে রাখি সেটা হবে না। শ্রমিকশ্রেনীর মধ্যেও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগবে। এবার আপনারা তাঁর পক্ষে থাকবেন না বিপক্ষে , আপনাদের সিদ্ধান্ত। ধন্যবাদ 
  • যদুবাবু | ২৮ জুন ২০২৪ ১৮:৩১533831
  • অরিনদাকে আবার জ্বালাবো। (একটা চটজলদি সিমুলেশন করে ফেললাম, আমার প্রশ্নটা আরেকবার ঠিক করে করতে।)
     
    ধরুন আমরা ঐ মেটাঅ্যানালিসিসের পেপারটার মতন একটা মডেল ধরছি। ঐ পেপারে বিভিন্ন স্টাডিতেই অ্যাসোসিয়েশন দেখা হচ্ছে (কজ়ালিটি নয় এ কথা ওরা বলেই দিচ্ছেন), দুটো জিনিষের - এগজ়িকিউটিভ কন্ট্রোল আর মাইন্ডফুলনেস। দুটোর-ই ডেফিনিশন কিঞ্চিত ভেগ, তবে প্রথমটার এইরকম - "Also referred to as executive functioning or cognitive control, executive control encompasses a family of top-down cognitive processes that scaffolds human goal-directed behavior and self-regulation." -- একটু সার্কুলার ডেফিনিশন কিন্তু সে আপাতত ইগনোর করা যাক। 

    ধরা যাক, যে জেনারেল পপুলেশনে এই দুই - এগজ়িকিউটিভ কন্ট্রোল আর মাইন্ডফুলনেসের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই - কোরিলেশন শূন্যের দিকে (ছবির প্রথম প্যানেল।) 

    এবার আমি একটা স্টাডি করছি যাতে শুধু এক্সপিরিয়েন্সড মেডিটেটর-দের-ই দেখবো - তাদের এই দুটোর মধ্যে কোরিলেশন আছে কি না দেখার জন্য। যেটা জেনারেল পপুলেশনের একটা সাবসেট, কিন্তু ধরে নিতে পারি যেহেতু এক্সপিরিয়েন্স বেশীই, তাই এদের মাইন্ডফুলনেস, যেভাবেই ডিফাইন করা হোক না কেন, সেটাও এই এক্সপিরিয়েন্সড সাবসেটের বেশির দিকেই। এবার এই সাবসেটে কোরিলেশন পজ়িটিভ, জাস্ট ঐরকম ভাবে সাবসেট নিচ্ছি বলেই (প্যালেন দুই)। 
     
    তাহলে, শুধু ঐ সাবসেটের বেসিসে একটার আরেকটার উপর প্রভাব আছে বললে একটা সামান্য ভুল থেকে যায় না? 
    আমি হয়তো ভুল বুঝছি এবং আপনার আমার থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা। ভুল ধরিয়ে দিলে শিখতে পারবো। 

    ছবি (অবশ্যই সিমুলেটেড ডেটা, সত্যিকারের আর কই পাই?) 
     
     
    পুনশ্চঃ মেটা-অ্যানালিসিসের পেপারে বলা আছে, "The present systematic review included 16 studies sampling a total of 1112 participants. In most cases, participants were novices to the practice of mindfulness meditation, when not completely meditation-naive. In one study, though, a certain level of experience was required for participation (i.e., having completed prior to recruitment at least three 5- to 10-day meditation retreats; Sahdra et al. 2011), and four studies did not provide information regarding previous experience with meditation."  
     
    সে জন্যে ওদের এফেক্ট সাইজ-ও ছোটো - The overall weighted mean effect size reported in these studies was g = 0.34, 95% CI [0.16, 0.51], z = 3.76, p < .001, indicating a small-to-medium effect favoring mindfulness training over control interventions in enhancing executive control. 
     
    আমার সন্দেহ ঐ "certain level of experience was required" দের আর নো-ইনফর্মেশনদের নিয়ে। আর এটা বলার যে মাইন্ডফুলনেসের এফেক্ট যদি থেকেও থাকে, তা স্মল টু মিডিয়াম। এইটা মাথায় রেখেই ইন্টারপ্রিট করা উচিত। 
     
  • r2h | 208.127.***.*** | ২৮ জুন ২০২৪ ১৯:২৮533833
  • যদুবাবু যখন মাইন্ডফুলের প্রসঙ্গ আনলেনই, তখন আমি সমবেত বিদ্দজ্বন ও পীড়ের চরনে প্রগলভতার জন্য মার্জনা চেয়ে একটা প্রাচীন পদ্য দিয়ে যাই।
     
    • rabaahuta | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০১:৫২
     
    • ইমেজেই রসাতল হায় কিরকম টান
      দিল শুক্রবারের মাইন্ডফুল অভিমান
      শেষে সময় হল ভারী মেডিটেশনের
      লোক উপোষকাতর তাঁরা বালিস সাজান

      খোলা খবর কাগজ তাঁর সাধ্যসাধন
      তিনি মৃদু ব্রীড়াতুর তাঁর অধরে দশন
      তাঁর ওষ্ঠ লাজুক তাঁর তক্তপোষের
      নীচে জ্যাক ড্যানিয়েল তাঁর নাই অনুপান

      আসে শুক্র, সবেগ, পাপ চিন্তা ছাড়ুন
      সুধী মানবজীবন আজ গল্প থাকুক
      আজ পদ্মবনে টাল একলা মাতাল
      আজ শুক্রবারে, থাক সেই রসাতল।
  • r2h | 208.127.***.*** | ২৮ জুন ২০২৪ ২০:২৩533835
  • ইয়ে, স্যরি, শুক্রবার সকালবেলা মিটিঙে বসে উদাস মনে ছ্যাবলামি করে ফেললাম, এটা উচিত হয়নি, এখানে সিরিয়াস কথাবার্তা চলছে, স্যরি। মাইন্ডফুল ব্যাপারটাও মনে হচ্ছে আগেই এসেছে, চটপট চোখ বোলাতে গিয়ে যদুবাবুর কমেন্টটা চোখে পড়লো।

    এমনিতে মনঃসংযোগ বিষয়ে অভ্যাস তো চমৎকার ব্যাপার। আমার যেমন রোববারের জিলিপি আনতে যাওয়ার কথা ভেবে না যাওয়ার মত জিনিসের দীর্ঘ লিস্টিতে একটা হল তাই চি ক্লাসে ভর্তি হওয়া। একবার একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম সম্মোহন করে মোটিভেশন বাড়িয়ে লোকে জীবনে উন্নতি করছে, সেটা নিয়েও কৌতূহল হয়েছিল, জীবনে উন্নতি করা প্রচন্ড দরকার, কী যে অবস্থা।

    সে যাই হোক, অ্যাকাডেমিক জিনিসপত্র ফলো করতে পারি না, তাই না পড়ে টড়ে একটু ইয়ে করে ফেললাম, মার্জনা চাই।
    আলোচনা চলুক।
  • আরে | 200.122.***.*** | ২৮ জুন ২০২৪ ২১:৩৮533837
  • রবীন্দ্রনাথও শান্তিনিকেতনে তাই চি না কি একটা শেখানোর জন্য জাপান থেকে কুংফু মাস্টার এনেছিলেন না? আমাদের হুতেন্দ্রনাথেরও দেখি ওইদিকে ঝোঁক। সুনীল-শক্তি শুনেছি খালাসিটোলা থেকে বেরিয়ে মধ্যরাত্রের কলকাতায় তাই চি প্র্যাকটিস করতেন। বাঙালি কবিরা চিরকাল এমন মারকুটে কেন এর ঐতিহাসিক কারণ জানতে চাই।
  • যদুবাবু | ২৮ জুন ২০২৪ ২১:৪৪533838
  • আহা জিলিপি! কতদিন চ্যাঙ্গারি ভরে জিলিপি খাইনি। বনহুগলির মোড়ের কচুরির দোকানে সকাল সকাল একটা স্বর্গীয় জিলিপি পাওয়া যেতো। ঐটা খেয়েই তো কলমগরভ এত বড়ো প্রবাবিলিস্ট হৈলেন। 
     
    পদ্যটা কিন্তু দারুণ। আবার আজকে শুক্কুরবারই। অতএব, খাপে খাপ। এবার তাই চি নিয়ে একটা অলস পদ্য হোক? অন্ত্যমিল দিতে গাইচি, পাইচি, নাইচি, তরী বাইচি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন