এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  সমাজ

  • ১৬ ই আগস্ট ১৯৪৬

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ১৯ আগস্ট ২০২৫ | ৬৩১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কী হয়েছিল ১৬ ই আগস্ট ১৯৪৬ সালে? এর এক মাস আগে পর্যন্ত দাঙ্গা হাঙ্গামার কোনো আঁচ পাওয়া যায়নি। ক্যাবিনেট মিশন তখন ভারতকে টুকরো না করার শেষ চেষ্টা করছে। একটা ঢিলেঢালা ইউনিয়নের প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাব মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মুসলিম লিগ অংশগ্রহণ করবে বলেছে। কিন্তু কংগ্রেস ক্রমাগত টালবাহানা করছে। শেষকালে জুলাইয়ের ১০ এ নেহরু জানালেন, যে, কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকবে বটে, কিন্তু ক্যাবিনেট মিশনের একীকৃত ভারতবর্ষের পরিকল্পনা মেনে নেবার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জিন্না কংগ্রেসের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ডাক দিলেন ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডের। আর কিছু না, সেটা একটা দেশব্যাপী হরতালের ডাক। 

    এর ছমাস আগে পর্যন্ত শুধু দাঙ্গার আঁচ পাওয়া যায়নি নয়, কলকাতা শহর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এবং অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছিল। ভারতে বিপ্লবের হাতছানি দেখা যাচ্ছিল এবং কলকাতা আর বোম্বে ছিল আগ্নেয়গিরির মুখ। ঠিক আটমাস আগে ৪৫ এর নভেম্বরে আজাদ হিন্দ ফৌজের সপক্ষে একটা অভূতপূর্ব রকম বিরাট মিছিল হয়েছিল কংগ্রেস, লিগ আর লাল পতাকা  নিয়ে।  দুদিন ধরে কলকাতা ছিল বিদ্রোহীদের দখলে। সরকারি হিসেবে মারা গিয়েছিলেন তিরিশের উপরে মানুষ। ঠিক ৬ মাস আগে, ৪৬ এর ফেব্রুয়ারি, নৌবিদ্রোহের কলকাতা আরেকবার ফেটে পড়ে। এবার বিদ্রোহ হয়েছিল আরও বড়। কং-লিগ-লাল সবাই ছিলেন, সোহরাবর্দী, সোমনাথ লাহিড়ি, সতীশ দাশগুপ্ত ছিলেন হাতে হাত ধরে। সর্বভারতীয় স্তরে নৌবিদ্রোহকে কায়দা করে দমন করা হয়। এবার মারা যান আশি-নব্বই জন মানুষ। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামেনি। ডাক-তার, রেলওয়ে ধর্মঘট হয় এর পরে। জুলাইয়ের শুরুতে কৃষিশ্রমিকদের বিপুল জমায়েত হয় কলকাতা শহরে। আবার ধর্মঘট। শহর তখন কাঁপছে। 

    এতে ভয় শুধু বৃটিশ পেয়েছিল, তা নয়। বস্তুত বৃটিশ আমলারা পেলেও, বিলেতের বৃটিশ সরকার তখন নবীন লেবার পার্টির, তাদের ভয় পাবার কোনো কারণ ছিলনা। কিন্তু ভয় পেয়েছিলেন অন্য একদল, তাঁরা সম্পূর্ণ অন্য একটা যুদ্ধ লড়ছিলেন। এই যুদ্ধের একদিকের নেতৃত্বে ছিলেন জিডি বিড়লা এবং সহযোগীবৃন্দ। বিড়লা নিজে এক বর্ণময় চরিত্র। একদিকে বৃটিশের সঙ্গে বোঝাপড়া করছেন, অন্যদিকে ৩৯ সালে সুভাষকে তাড়ানোয় ভূমিকা রাখছেন। কংগ্রেসকে প্রচুর টাকা দিচ্ছেন। বিভক্ত ভারতের প্রস্তাব দিচ্ছেন, পাকিস্তান প্রস্তাবেরও আগে। ওটা তাঁর ড্রিম প্রোজেক্ট। ৪৬ সালে বিভক্ত ভারতে কীভাবে একচেটিয়া হবে, তার জন্য টাটার সঙ্গে মিলে তৈরি করছেন বোম্বে প্ল্যান (মোটের উপর সেটাই মেনে নেওয়া হয়েছিল স্বাধীন ভারতে), নিজে একটা পুস্তিকা লিখছেন ভারত ভাগের উপকারিতা বিষয়ক। এবং তিনি এর জন্য স্রেফ কংগ্রেসের উপর ভরসা করেননি। আরেসেস, হিন্দু মহাসভা, এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে অন্তত বছর দশেক ধরে সাহায্য করে চলেছিলেন মারোয়াড়িরা। সারা ভারত যখন বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়ছে, মারোয়াড়ি শিল্পপতিদের পয়সায় তখন কিছু যুবক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছেন নানা নামের যুবকবৃন্দের পতাকাতলে। এই ৪৬ সালে মহাসভা প্রায় বিলীয়মান, তখন আরেসেস বাসা বেঁধেছে কংগ্রেসের ভিতরে। বিদ্রোহ হবে, অখণ্ডিত ভারত হবে, সেখানে প্রতিযোগিতা হবে, এটা এই গোষ্ঠীর পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল। 

    প্রতিযোগিতা কার সঙ্গে হবার কথা? যুদ্ধটা কাদের সঙ্গে? তারা ছিল ইস্পাহানি গোষ্ঠী এবং সহযোগীবৃন্দ। এই যুদ্ধে বিড়লা যেমন ব্যবহার করেছিলেন, আরেসেস এবং কংগ্রেসকে, ইস্পাহানি করেছিলেন মুসলিম লিগকে। তারা ৪০ এর শুরুতে তেমন সংগঠিত ছিলনা। কিন্তু মুসলিম লিগ বাংলায় প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদেরও জোর বাড়ে। ৪৬ এর গোড়া থেকেই এই দুই পক্ষই সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বিড়লাপক্ষের যুবকবৃন্দ বেশি সংগঠিত ছিল। ফুট সোলজাররা অবশ্যই ছিল বাঙালি। তারা মার্কিন সেনাদের কাছ থেকে বেআইনী অস্ত্র জোগাড় করত। ব্যায়ামসমিতি চালাত। ইস্পাহানিপক্ষ এত সংগঠিত না হলেও তাদের পক্ষে ছিল সরকার। ৪৬ সালে, বৃটিশ তখনও যায়নি, কিন্তু কার্যত সরকার চালাচ্ছিলেন সোহরাবর্দী। 

    আগস্টে এই বিবদমান দুই পক্ষই হাতে চাঁদ পায় ডায়রেক্ট অ্যাকশান ডে তে। নেহরু-প্যাটেল লিগের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। আর জিন্নার ছিল ক্ষমতাপ্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ। কোনোপক্ষেরই বিশেষ আপত্তি ছিলনা যুদ্ধে। সব মিলিয়ে কলকাতা হয়ে ওঠে এই ক্ষমতা-ভাগাভাগির খেলার পরীক্ষাগার। সোহরাবর্দী ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডেকে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। তাতেই ব্যাপারটা মিটে যাবার কথা ছিল। কিন্তু দুই পক্ষ থেকেই রণহুঙ্কার শুরু হয়। খুবই সাম্প্রদায়িক সেসব। প্রকাশ্যে অস্ত্রচর্চা শুরু হয়। সরকারপক্ষে সোহরাবর্দীর চেয়েও মীর ওসমান বেশি হুঙ্কার দিয়েছিলেন। আর উল্টোদিকে ছিল হিন্দু সংবাদপত্রের সংগঠিত প্রচারযন্ত্র।সোহরাবর্দী ভেবেছিলেন শক্তিপ্রদর্শন করবেন, উল্টোদিকে হিন্দুবীররাও নিঃসন্দেহে তাইই ভেবেছিলেন।  

    এইসবের পরেও দাঙ্গা হতনা। কিন্তু ১৬ ই আগস্ট কীকরে হাঙ্গামা শুরু হয়েছিল, তার একাধিক ভার্সান থাকলেও, যেটা নিয়ে কোনো বিবাদ নেই, দুই পক্ষই নামিয়ে দেয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের লোকজনকে। আন্ডারওয়ার্লড যুদ্ধ শুরু হয়, এবং সরাসরি চলে অন্তত ৪ দিন। এলাকায় এলাকায় তৈরি হয় সংগঠিত "রক্ষাকর্তা"দের গুণ্ডাবাহিনী। তারা নিজের এলাকায় তোলা তুলত, "রক্ষা" করত এবং বিপক্ষকে আক্রমণ করত। টার্গেট ছিল দোকানপাট, অরক্ষিত বিপক্ষের লোক এবং বস্তি। "রক্ষাকর্তা"রা রবিনহুড ইমেজ বজায় রাখতেন নিজের এলাকায়। এমনকি অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনের উপরও হামলা হতে দিতেন না। কৌতুহলোদ্দীপকভাবে হিন্দু ভদ্রলোকদের একাংশও বেশ উৎসাহিত হয়ে নেমে পড়েছিলেন। উল্টোদিকে মুসলমান পক্ষে আক্রমণকারীদের একটা বড় ছিল কসাই এবং বিহারি। এলাকায় এলাকায় দাদা তৈরি হয়ে যায়। বলাবাহুল্য রাজনীতির দাদাদের আশীর্বাদ ছিল তাদের মাথায়। এরকম অনেক দাদাদের নাম শোনা যায় সে সময়। গোপাল পাঁঠা, যুগল ঘোষ, মীনা পেশোয়ারি, বোম্বাইয়া। এরা সবাই এলাকার দাদা, তোলা তুলত, এবং "বিপক্ষ"কে আক্রমণ আর লুট করত। দাঙ্গার সময় সর্বত্রই এরকম গুণ্ডাদের দেখা যায়। 

    এক্ষেত্রে গুণ্ডামি অবশ্য মাত্রাতিরিক্ত হয়েছিল। অন্তত ৫০০০ লোক মারা যান চার দিনে। তবে, নিঃসন্দেহে মুসলমানরা সংখ্যায় বেশি মারা যায়।  এবং সবশেষে প্যাটেল বলেছিলেন, হিন্দুদের পক্ষে ব্যাপারটা খুবই ভালো হয়েছে। 

    এই হল দাঙ্গার গল্প। এর কতটা পরিকল্পিত বলা কঠিন। কিন্তু ফলটা হয়েছিল সুদূরপ্রসারি। এর জবাবি দাঙ্গা শুরু হয় নোয়াখালিতে। সেখানে আবার হিন্দুরা বেশি মরে। যদিও এই দুটোর বাইরে কোথাও সেভাবে দাঙ্গা হয়নি, কিন্তু এই সুযোগ লুফে নেয় হিন্দুবীররা। সংবাদপত্রে এমন প্রচার শুরু হয়, যেন কলকাতাই বাংলা, এবং গোটা বাংলাই দেশভাগ যায়। ভদ্রলোকরা একটা দাঙ্গার পরেই দেশভাগের পক্ষে বলতে শুরু করেন। এমনকি পূর্ববঙ্গে বসেও। তাঁদের ধারণা ছিল যে, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হবে এবং তাঁরা পূর্ববঙ্গে জমিদারি চালিয়ে যেতে পারবেন। বিড়লা তখন নিশ্চয়ই মুচকি হেসেছিলেন, যে, এই কিছু গাম্বাট পেয়েছি, যারা নিজের পিছনে বাঁশ দিয়েই ভাবে, কী মহৎ কাজ করলাম। 

    বাংলা, যাকে বলে মায়ের ভোগে যায়, ৪৭ এর পরেই। এদিকে উদ্বাস্তুদের স্রোত। সরকার কোনো দায়িত্ব নেয়নি। প্রায় সব ব্যাংক লালবাতি জ্বালে, শিল্প-সিনেমা শুরু হয়। ওপারে তো পাকিস্তানি আগ্রাসন আরও নগ্ন ছিল। আর গোপাল পাঁঠারা? তাঁদের অনেকেই পুরোনো গুণ্ডামিতে ফিরে যান। অনেকেই ডাকাতি করতে শুরু করেন। গোপাল পাঁঠার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল ডাকাতির। অনেকেই রাজনৈতিক দলের হয়ে সংগঠিত গুণ্ডামি করতে শুরু করেন। এইসব হয়।  

    বীরদের মতো এক লাইনে এই ইতিহাস বলা কঠিন। সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করলাম। যা লিখেছি বর্ণে বর্ণে সত্য। কিছু খাঁচখোঁচ জ্ঞানত বাদ দিইনি। তবে সারসংক্ষেপ করতে গেলে কিছু তো ছঁটতেই হয়, অন্য কারো বিবেচনায় হয়তো সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। এক লাইনে বলতে গেলে বলতে হয়, বাংলা ভাগ হল বিড়লা-ইস্পাহানি যুদ্ধের ফল। নেহরু-প্যাটেল-জিন্নার প্রশ্রয়েই সেটা হয়েছিল। পুরোটাই উত্তর এবং পশ্চিম ভারতীয় প্রকল্প। বাঙালি তার ফলে গোল্লায় গিয়েছিল। এখানে গোপাল পাঁঠা বা মিনা পেশোরারিরা নেহাৎই খুচরো গুণ্ডা। কাউকেই তাঁরা রক্ষা করেননি, বাঙালি জাতিকে তো নয়ই, বরং গোল্লায় পাঠাতে সাহায্য করেছিলেন। এই পুরো ইতিহাসটা জানেন এরকম লোক নেই তা নয়, কিন্তু বলা হয়না, সেটা বাঙালি জাতির আরেক দুর্ভাগ্য। তবে শুরু যখন করেছি, আমিই কোনো একদিন শেষ করে ছাড়ব। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৯ আগস্ট ২০২৫ | ৬৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 107.77.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০২৫ ১০:২৪733483
  • এই ব্যাপারগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই ইতিহাস সবিস্তারে আলোচিত হওয়া খুব দরকার। বিশেষ করে বম্বে প্ল্যান এর ব্যাপারটা।
  • আব্দুল  | 2401:4900:8828:c808:3127:52d5:dc26:***:*** | ১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৮:২৪733490
  • সৈকত - চালিয়ে যা |
     
    আমার খাটে পয়দা হওয়া মাল বোঝাই যায় |
  • Reference | 136.226.***.*** | ২০ আগস্ট ২০২৫ ০১:০৯733499
  • ফেসবুকে শুনলাম রেফারেন্সগুলো দেওয়া হয়েছে। এখানে দেওয়া যায়?  
  • রেফারেন্স | 2601:5c0:c280:d900:7c4b:55c2:a375:***:*** | ২০ আগস্ট ২০২৫ ০৩:০৫733500
  • ... শহর তখন কাঁপছে। [ এই অবধি পুরোটা পাবেন সুরঞ্জন দাসের বিখ্যাত বই "কমিউনাল রায়টস ইন বেঙ্গল" এর ১৯৪৬ এর পার্টিশন রায়ট পরিচ্ছেদে। পাতা ১৬১]

    ..... কিন্তু কার্যত সরকার চালাচ্ছিলেন সোহরাবর্দী। [এই দুই প্যারার সূত্র একাধিক। বিড়লার আত্মজীবনীকে কংগ্রেসকে টাকা দেবার কথা আছে। জয়া চ্যাটার্জির বইতে ( বেঙ্গল ডিভাইডেড) পাবেন মারোয়াড়িদের অর্থসাহায্যের কথা। অর্থনীতির পুরো প্রসঙ্গটা পাবেন মার্কোভিটসের বইতে. ইন্ডিয়ান বিজনেস অ্যান্ড ন্যাশনালিস্ট পলিটিক্স। বোম্বে প্ল্যান কী যেখানে খুশি দেখে নিন]

    ..... এবং সবশেষে প্যাটেল বলেছিলেন, হিন্দুদের পক্ষে ব্যাপারটা খুবই ভালো হয়েছে। [এর সূত্র সুরঞ্জন দাস এবং জয়া চ্যাটার্জি। আগেরবইগুলিই। এছাড়াও অজস্র বইয়ে বিশদ বিবরণ পাবেন, সেখানে ঢোকা হয়নি]
     
    ---- 
     
    পিডিএফ চাইলে -> 
     
     
    Bengal Divided, Jaya Chatterji. 
     
  • দীপ | 2402:3a80:198b:8ccc:678:5634:1232:***:*** | ২০ আগস্ট ২০২৫ ১৪:১৫733508
  • শ্রদ্ধেয় রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর বাংলাদেশের ইতিহাস (চতুর্থ খণ্ড) গ্রন্থে কলকাতা দাঙ্গা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রমেশচন্দ্রের আলোচনা অত্যন্ত তথ্যনিষ্ঠ ও প্রামাণ্য। 
     
    কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মৌলানা আজাদ স্পষ্টভাবে সুরাবর্দীর অপদার্থতা ও নিষ্ক্রিয়তাকে এই দাঙ্গার জন্য দায়ী করেন। তাঁর মতে সুরাবর্দীর মদতে পুলিশপ্রশাসন ও মিলিটারিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়।
     
    স্টেটসম্যান পত্রিকাও এ‌ক‌ই মন্তব্য করে।
     
    রমেশ মজুমদারের লেখা থেকে জানা যায় ১৬ তারিখ মুসলিম লীগের গুণ্ডারা প্রশাসনের সক্রিয় মদতে একতরফা দাঙ্গাহাঙ্গামা করতে থাকে। কিন্তু ১৭ তারিখ থেকে অবস্থা পরিবর্তিত হয়। হিন্দুরাও একজোট হয়ে পাল্টা মার দিতে থাকে। ফলে নিরীহ মুসলিমরাও আক্রান্ত হতে থাকেন। ১৮ তারিখ দুইপক্ষের দাঙ্গাহাঙ্গামায় অবস্থা আরো গুরুতর হয়ে ওঠে। অবশেষে ব্রিটিশ অফিসারদের চাপে ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় সুরাবর্দী মিলিটারি নামিয়ে অবস্থা সামাল দিতে চেষ্টা করেন।
     
    ততোক্ষণে কম করেও ৪-৬ হাজার মানুষ মৃত, অসংখ্য আহত, একের পর এক বাড়ি লুণ্ঠিত।
  • কামাল পাশা | 42.127.***.*** | ২০ আগস্ট ২০২৫ ১৪:২১733509
  • অ্যাই দীফেপাঁঠা ঘাস খাবি?  
  • Reference | 136.226.***.*** | ২০ আগস্ট ২০২৫ ২০:১৫733519
  • রেফারেন্সের জন্যে ধন্যবাদ। পিডিফের জন্যে আরো একপ্রস্থ। 
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2406:b400:b4:7af:4d6c:e116:c536:***:*** | ২১ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৩৩733528
  • রেফারেন্স আরো অনেক আছে। কে কত মেরেছিল, আর কারা কত মরেছিল, আর কি কায়দা করে কে কাকে মেরে ফেল্লো, কার কি চরিতার্থ হল এই আলোচনার একটা ক্ষেত্র বিশেষে চাহিদা আছে। ভদ্রলোকেরা বলে থাকেন, আমরা তো কেবল ই মরেছি। আর গুন্ডারা বলেন, ভাই , আমরা কিন্তু জিতেছি, সলিড দিয়েছি। এবার দুইটার ই রাজনীতির ই একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তাই কেন্দ্রীয় চরিত্র বা তাদের জাতি বিদএষের প্রমাণ আর রাজনৈতিক ছাগলামো এবং সিনিসিজম যেমন একটা ঐতিহাসিক বিষয়, তেমন ই, যে জাতি কদিন আগে রাখি পড়ল পড়ালো, সুভাষের পাশে আবেগের সংগে জড় হল, এক সঙ্গে অসংখ্য আন্দোলন, এক সঙ্গে মন্বন্তর দেখলো, কিছু বাঁচলো, তারা হঠাৎ নিজেদের প্রতিবেশি দের খুন করায় কেন ব্যস্ত হল, এর খুব একটা সম্মান জনক ব্যাখ্যা শুধু চরিত্রের মধ্যে থাকলে করা মুশকিল। অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়, আর সাম্রায্যবাদী দের দুর্ভিক্ষ এবং পরবর্তী ঘটনার সময় ভূমিকা, ইত্যাদির সম্পর্কে কম্প্যাসনেট অথচ অবজেক্টিভ আলোচনা , জনম মুখার্জির বই বা থিসিসে পাওয়া যেতে পারে, রেফারেন্স সহ। দুটি ই সহজ্লভ্য। নামটা সম্ভবত চিত্তপ্রসাদের বই টা থেকে নেওয়া, হাংরি বেংগল। লজ্জার ইতিহাস, পাঠক কে তার শহরের ঐতিহাসিক লজ্জার কথা মনে করানো হয়েছে।
  • ? | 79.***.*** | ২১ আগস্ট ২০২৫ ১৩:২৬733535
  • দুর্ভিক্ষের সঙ্গে দাঙ্গা কিভাবে কানেক্ট করছেন? নাকি দাঙ্গাটাকে সাইড করতে দূর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ এনে ফেললেন? ছেচল্লিশ নিয়ে ডেডিকেটেড আলোচনা হলে চাপ কোথায়? যারা একাত্তরে গণহত্যা চালিয়েছে, তারাই ছেচল্লিশেও চালিয়েছে। একই ইডিওলজির লোক। একাত্তর নিয়ে তো ঘড়া ঘড়া পানি ঝরান। ছেচল্লিশ কি একটু জল পাবেনা? রেফারেন্স হিসেবে ভি এস নাইপলের এমোং দা বিলিভার্স বরং প্রাসঙ্গিক হবে। ওই যেখানে উনি দেখিয়েছেন আরব পেনিনসুলার বাইরে সাউথ এশিয়ার একের পর এক দেশে ইসলাম কিভাবে ইন্ডিজেনাস সংস্কৃতিগুলিকে ধ্বংস করল, ভায়োলেন্সের ডাইমেনশানটা বুঝতে হেল্প কোরবে, কি বলেন?
  • কালের নৌকা | ২২ আগস্ট ২০২৫ ১৮:০৬733563
  • পুরো লেখাটিই পড়লাম। ঐতিহাসিক ভাবে সত্য সেও ঠিক। কিন্তু নেপথ্যের দুইজন নায়কের কথা এখানে বলা বাকি রয়ে গেল। একজন চার্চিল এবং ব্রিটিশরাজ। আর একজন মহাত্মা গান্ধী। পঞ্চাশের মন্বন্তরের পুরো প্ল্যানটাই ছিল চার্চিল এবং তার সহযোগীদের। বাঙালিকে ভাতে মারার। লক্ষ্য ছিল আজাদহিন্দ বাহিনী যদি বার্মা দিয়ে ঢুকেও যায় পূর্ববঙ্গে। তাহলে যেন পাশে কাউকে না পায়। একটা গোটা দেশ খাদ্যের অভাবে জীবন্মৃত। চার্চিলের বদান্যতায় বাঙালি তখনই আধমরা। কলকাতা সাক্ষী ছিল 'ফ্যান প্রত্যাশী মৃতপ্রায় বাঙালির'। এরপর ব্রিটিশরা যখন ভারত ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েই নেয়। তখন ১৯১১ সালের সেই পুরানো ঘায়ে মলম দেওয়ার কথা মাথাচারা দিয়ে ওঠে লণ্ডনের। সেই সময় চার্চিল প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও লণ্ডনের ক্ষমতার অলিন্দে চার্চিলই তখনো শেষ কথা। তখনই ঠিক হয়ে যায় বাঙালির শিরদাঁড়া চিরকালের মতো ভেঙ্গে দেওয়ার প্ল্যান। চার্চিল ছিল ভয়ঙ্কর রকম ভাবে বাঙালি বিদ্বেষী। মন্বন্তর ঘটিয়ে দেওয়ার পরে বাঙালিকে ভাগ করার মতোন এমন সুবর্ণ সুযোগ চার্চিলের হাতছাড়া করার কথাই নয়। ফলে ১৯১১ সালে যে বঙ্গভঙ্গ রোধ করতে হয়েছিল নাক উঁচু ব্রিটিশকে। ১৯৪৭ এ সেই ব্রিটিশই পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে বাংলাকে চিরকালের মতোন ভাগ করে দেওয়ার নীলনকশা প্রস্তুত করে ফেলে। আর তাতে পাশে পেয়ে যায় মারোয়ারী বিড়লাদের ,সাম্প্রদায়িক হিন্দুমহাসভার এবং তাদের বহু দিনের সবচেয়ে বড়ো বিশ্বস্ত এজেন্ট মহাত্মা গান্ধীকে। বাকি ঘটনা সব পরপর ঘটতে থাকে লেখকের বর্ণনার মতোই। শুধু, দাঙ্গার পিছনে ব্রিটিশের মস্তিষ্ক এবং মদতের কথাটুকু পুরোটা বলা হয়নি। একবার ঘর পোড়া গরু ব্রিটিশ জানতো সাংঘাতিক রকমের দাঙ্গা না লাগাতে পারলে বাংলাকে আবার ভাগ করে দিলেও। শেষরক্ষা হবে না। বাঙালি আবার এক হওয়ার জন্য খেপে উঠতে পারে। সেই সম্ভাবনাই বেশি। তাই ব্রিটিশের সরাসরি মদতে বিহার উত্তরপ্রদেশ থেকে দুই সম্প্রদায়েরই অবাঙালি গুণ্ডা আমদানি করে তাদের হাতে অস্ত্র জোগান দেওয়া হয়। আর সেই কাজে কলকাতার থেকে উপযুক্ত জায়গা আর কোথায়। এমনিতেই কলকাতা ভরা অবাঙালি। ফলে হিন্দু-মুসলিমের মুখের ভিড়ে বাঙালি অবাঙালির বিষয়টা আড়ালে রয়ে যাবে। আর মাখনের ভিতর দিয়ে ছুরি চালানোর মতোন করে কার্যসিদ্ধও সহজ হবে। কিন্তু তারপরেও কথা আছে। তারপরেও শেষ পেরেকটার কথা বাদ রয়ে গেছে। ১৯৪৭এ অখণ্ড বাংলার জন্য যখন শরত বসু আবুল হাশিম কিরণশঙ্কর রায়রা মরিয়া চেষ্টা করছিলেন। তখন তাঁদের অন্তিম ভরসা ছিল সেই ম হা ত্ম্য গা ন্ধী। ঐ একটি মানুষের সেদিনও এমন সর্বাত্মক প্রভাব ছিল যে। তিনি যদি একবার বাংলা ভাগের বিপক্ষে দাঁড়াতেন। দাঙ্গা শ্যামাপ্রসাদ বিড়লা ব্রিটিশ কারুর পক্ষেই বাংলা ভাগ করা সম্ভব ছিল না। শরত বসুরা সেটা জানতেন বলেই তাঁরা তাঁর কাছে বারবার দরবার করতে ছুটে গিয়েছেন সেই সময়। আর মহাত্মা বারবার নানান ছলে তাঁদের আশাহত করে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন ক্রমাগত। ৩রা জুনের আগে শেষ চেষ্টা হিসাবে অখণ্ড বাংলার পক্ষের প্রতিনিধিরা যখন বেলেঘাটা আশ্রমে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলেন। তখন তিনি মৌনব্রত' পালনের ছলে তাঁদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ না করে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিলেন। না দিয়েও তাঁর উপায় ছিল না। একদিকে বিড়লাদের স্বার্থ আর একদিকে ব্রিটিশরাজের বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসাবে তাঁর সর্বশেষ এসাইনমেন্ট! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন