এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • ডাক্তারদের আবার সিবিআই অভিযান 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ৪৬১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কাল ছিল সেই বহুপ্রতীক্ষিত সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান। খুবই ভালো ব্যাপার, ডাক্তাররা অবশেষে সিবিআইকে পাকড়েছেন। কিন্তু দাবীটা কী, সেটা পরিষ্কার করে জানা গেলনা। জুনিয়ার ডাক্তারদের পেজে একটা ভিডিও আছে, যেখানে খুব ভালো স্টুডিও রেকর্ডিং এবং মিক্সিং করা একটা গান পাওয়া গেল, সঙ্গে নানা দৃশ্যের কোলাজ। কিন্তু কোনো বক্তব্য পাওয়া গেলনা। লাইভ স্ট্রিমিং হয়নি, তেমন দাবীও ছিলনা। টিভিতেও কভারেজ অল্প হয়েছে। বিশদ কিছু নেই। এছাড়াও স্মারকলিপির কোনো প্রতিলিপি নেই, আদৌ কিছু দেওয়া হয়েছে কিনা তাও বোঝা যায়নি। ডাক্তারবাবুরা এবং অধুনা এই অভয়া মঞ্চ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে যা করেন, তা খুবই খোলাখুলি, যেটা দাবী করেন, সেটা হল সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, দুটোই খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু রাজ্যপাল বা সিবিআই দপ্তরে গিয়ে কী করেন, সে ব্যাপারে তাঁদেরই ন্যূনতম স্বচ্ছতা না রাখার একটা ধারাবাহিকতা আছে। ছোটোরা এবং বড়োরা মিলে তিনবার সিজিও কমপ্লেক্স গেছেন। কিন্তু সেখানে কী হল, দাবীগুলো কী, তাঁরা ধমক খেয়ে ফিরে এলেন, নাকি সিবিআই সব দাবী মেনে নিল, জানার উপায়। রাজ্যপালের কাছেও সেই একই ব্যাপার। সেখানে অবশ্য স্মারকলিপিটা 'ফাঁস' হয়েছে। কিন্তু সে নিয়ে তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিনি। 

    যাহোক, টিভিতে তেমন কিছু না থাকলেও কাগজে বেরিয়েছে কিছু বক্তব্য। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে পেলাম, আন্দোলকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে প্রথম থেকে সিবিআই ঢিলেমি দিচ্ছে। এই সমস্ত কারণে সন্দীপ ঘোষ ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। তেমন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। গত ২১ তারিখে আদালতে এই সংক্রান্ত যে শুনানি ছিল, সেখানে সন্দীপকে হাজির করানোই হয়নি। এত গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে কেন সিবিআই? নির্যাতিতার বাবা-মাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’’

    এই উদ্ধৃতি যদি ঠিক হয়, তো তার মানে, প্রথম বক্তব্য হল, সিবিআই ঢিলে দিচ্ছে। সেটা ঠিকই কথা। কলকাতা পুলিশ যা করেছে, সেটাই যদি পুনরাবৃত্ত হয়, তো সেটা ডবল-চেক করতে এই দু-তিন মাস সময় লাগেনা। কলকাতা পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ওটা বার করেছিল। ফলে এই ক্ষোভটা যথাযথ। তাহলে সিবিআইয়ের কাছে কী চাওয়া হচ্ছে? দ্রুত তদন্ত, নিয়মিত আপডেট এবং দোষীর শাস্তি? সেটাই সবচেয়ে যথাযথ হত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, সেটা দাবী না। দাবী হল সন্দীপ ঘোষ ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন। এর চেয়ে শিশুসুলভ দাবী হওয়া খুব মুশকিল। যদি তদন্ত ঠিক হয়, দেখা যায় উনি দোষী তো জেলে থাকবেন, যদি না হন তো ছাড়া পাবেন, এ তো প্রাথমিক ব্যাপার। আপনি মনে করছেন, বা হোয়াটস্যাপে ফরোয়ার্ড পেয়েছেন, কিংবা আনন্দবাজারে পড়েছেন, এই দিয়ে তো আর বিচার হয়না। প্রত্যক্ষ প্রমাণ যদি কিছু থাকে তো দিন না। যদি "সবাই জানে" হয়, তো সবাই কীকরে জানল, সেটাও জানিয়ে দিন। এর কোনোটাই না করে "স্রেফ ওমুককেই দোষী সাব্যস্ত করতে হবে, কীকরে জানিনা" - এই দাবীটাই তো অবাস্তব। ওরকম কোনো বাস্তব বিচারে হয়না, কাফকার উপন্যাসে হয়। সেখানে আগেই ঠিক করে নেওয়া হয় দোষী কে, তারপর শুরু হয় দোষ খুঁজে বার করা।

    যেটা বলা যেতে পারে, অবশ্যই বলা উচিত, সিবিআই কী করছে তার আপডেট দিক। কিন্তু দোষী চিহ্নিত করে দেওয়া যায়না। সিবিআই এর প্রতিটি কোর্ট প্রসিডিওর আমরা দেখেছি। প্রথমে তারা বলছিল, সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের কোনো প্রমাণ নেই, তারা খুঁজছে। অবশেষে জানিয়েছে, ফরেনসিক টেস্ট করে দুজনের মধ্যে কিছু কল রেকর্ড তারা খুঁজে পেয়েছে। এটা আগেই জানা যাবার কথা, সিডিআর থেকে, ফরেনসিক কেন লাগল জানা নেই। ক্রসচেক করছে খুবই ভালো কথা। কিন্তু সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ, সিসিটিভি ফুটেজ, সব দেখে যদি শুধু এইটুকু বেরোয়, তবে সেটাও আর বেশিদূর এগোনো মুশকিল। চার্জশিটে দেখেছি, ওখানে একগাদা ডাক্তাররাও উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা অতিরিক্ত কিছু জানলে বা দেখলে জানান না। স্বচ্ছতা রেখে পাবলিক ডোমেনেও জানান। তারপর সিবিআইকে চেপে ধরা যাবে। কিন্তু সোমা-মুখার্জির হোয়াটস্যাপ জাতীয় তথ্য দিয়ে তো আর কিছু প্রমাণ করা যায়না। এটা তো বস্তুত ব্ল্যাকমেল। 

    সরকারও অবশ্য, মনে হচ্ছে, এই আন্দোলন নিয়ে একটা ব্ল্যাকমেলের খেলা খেলছে। দমন-পীড়ন কিছু হয়নি, সে খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু হঠাৎ ঝুলি থেকে বেরোলো ৫৬৩ জন জুডা স্বাস্থ্যসাথীর বিলে সই করেছেন, অর্থাৎ কর্মবিরতির সময় প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেছেন। প্রাইভেট প্র‌্যাকটিস নিয়েও নানা জিনিস বেরোলো।তারপর সব চুপ। হঠাৎ দেখা গেল একজন ডাক্তার কুঘোর সঙ্গে মিটিং করছেন, আরেকজন সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কোনো ব্যাক-চ্যানেল না থাকলে এগুলো হয়না। ডিপ্লোম্যাসিতে দোষও বিশেষ নেই। কিন্তু কথা হল, এগুলো যদি এতদিন চলেই থাকে, তো সরকার কী করছিল। আর এখন যদি বেরোলোই, তো চুপ কেন। এগুলো তো স্রেফ ব্ল্যাকমেলের অস্ত্র না,  জনস্বাস্থ্যের বিষয়, পাবলিকের জানার অধিকার আছে। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ৪৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩১539005
  • স্কুল কলেজের শিক্ষক রা যেমন প্রাইভেটে পড়ায় ডাক্তাররা ও তেমন চিকিৎসা করে। কোন সরকার ই এসব দুর্নীতি দূর করতে পারে নি। সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে একটা ভাতা দিয়ে কমানোর চেষ্টা হয়েছিল। ভাতা নিয়েও অনেকে করছে। স্ট্রাইক করার সময় ও প্রাইভেটে অনেকে চিকিৎসা করেছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন। নিশ্চয় করে উনি জানেন হয়তো। ওদের ন্যায্য আন্দোলন দমনের ক্ষেত্রে উনি যথা সময়ে ব্যবহার করবেন বলে মনে হয়। ওনার সরকার পুরো দুর্নীতির সরকার। তার উপর হাসপাতালে ডাক্তার ধর্ষিতা খুন হয়েছে বলে সরকার চাপে আছে। তাই নৈতিক জোর নেই কিছু করার।
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২২539009
  • জু ডা রা প্রথম থেকেই এই ক‍্যাঙ্গারু কোর্ট, খাপ স্টাইল চালু করেছেন । এখনো অবধি এরা কোন প্রমাণ পুলিশ, সিবিআই বা নিউজ মিডিয়া কে দেবার চেষ্টা ও করেননি- নিছক অতিরঞ্জন আর গুজব ছড়ানো ছাড়া । এদের ক্রমাগত অনৃতভাষণ ধরা পড়লেও বিচলিত হননি - অন‍্য গুজবে বা দাবিতে চলে গেছেন । 
    আরজিকরের পরেও অন‍্য অনেক নির্যাতন নিয়ে এরা মুখ খোলেননি - খালি ফুটেজ খেয়েছেন- নাটক বাকি থাকেনি।
    স্বাস্থ্যসাথীর তথ‍্য প্রকাশ‍্যে আসায় এদের ব‍্যাকফুটে যেতে হয়েছে আপাতত । মূলত দুটো লবির লড়াই চলছে এবং হাই স্টেক । যারা জিতবেন আগামী কয়েক বছর তারাই রাজ করবেন আশা করা যায় । their moral compass is broken and level of cognitive dissonance is appalling 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন