এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  আত্মজৈবনিক

  • বাড়ি বৃত্তান্ত

    শক্তি দত্ত রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | আত্মজৈবনিক | ২৪ জুলাই ২০২৪ | ৫৮৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কয়েক দিন ধরে মনে হচ্ছে যে বাড়ি গুলোতে জীবনের দিন সব কাটিয়ে এলাম শেষ বেলায় তাদের কথা একটু লিখে যাই। যাই বলছি বটে যাওয়ার নাম গন্ধ নেই। জাঁকিয়ে বসেছি মাটি মায়ের কোল আঁকড়ে। লিখতে অসুবিধা হয়। আস্তে আস্তে লিখবো খণ্ড খণ্ড। সেভ করতে গিয়ে লেখা হারিয়ে ফেলি। অনেকের জীবন এক বাড়িতে কেটে যায়। আমাদের তা হয়নি। ছোটবেলা থেকে কতো বাড়িতে থাকলাম। যেটুকু মনে আছে লিখতে থাকি। সুখে জড়ানো না হোক স্বস্তি শান্তি তো ছিল। মা বাবা ভাইবোন, দুএকজন সহায়ক, গৃহপালিত নিয়ে মধ্যবিত্ত জীবন। হাসি খুশি মোটামুটি খেয়ে মেখে মন্দ কাটেনি বলতে পারি। যাঁরা পড়বেন জেনে বুঝেই অপ্রয়োজনের আনন্দে পড়বেন। 

    ****

    প্রথম তো আসে আসামের গোয়াল পাড়া জেলায় চাপর চা বাগান - চার বছর অব্দি ছিলাম। মনে আছে খুব কম। দুটো বড় বড় ঘর। তকতকে উঠোন, একটা শিউলি গাছ থেকে ফুল ঝরতো। বাবা গ্রমোফোন রেকর্ডে বজাতেন "শিউলি ঝরা অঙ্গনে প্রাতে এসো আমার মা জননী"। জানিনা মনে আছে, না শুনে বলছি। দুচারটি পোষ‍্য ছিল। গরু ছিল মনে হয়, কয়েকদিন একটি বাঘের বাচ্চা ও ছিল। প্রতিবেশিনী এক ঠাকুমা ছিলেন। একটা কাঁঠালগাছ পাতায় কাঠি গুঁজে ছোটমাসি গরু বানিয়ে দিতো। একটি গোলাপ গাছের - ফুল মনে নেই লাল টুকটুকে কচিপাতা মনে আছে। আমার দুবছরের ছোট বোন আর চার বছরের ছোট ভাইয়ের জন্ম ওই বাড়িতেই। বোনের জন্মের কথা মনে নেই। ভাই এর কথা মনে আছে। তখন বাড়িতেই শিশুজন্ম হতো। টের পাইনি কিছু। একসময় কেউ বলেছিল তোমাদের ভাই হয়েছে। কেমন লেগেছিল কখন দেখেছি ভুলে গেছি। মনে আছে মা একদিন শিশুসাথী পড়ে শোনচ্ছিলেন। এক ভালো ছেলের নাম অসীম শুনে আমি বলেছিলাম ভাইয়ের নাম অসীম হোক। সেও বোধহয় মার মুখে শুনেই বলি। সেই থেকেই আমার নামকরণের অভ‍্যাস শুরু। 

    ****

    আমরা তো পায়ে সর্ষে নিয়ে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছি, আগেই বলেছি সে কথা। চাপর সুদূর, বিশেষ করে তখনকার দিনে। এরপর বাবার সঙ্গে আমরা গেলাম উত্তর ত্রিপুরার রানীবাড়ি চা বাগানে। একসময়ে দাদুরা এই বাগানের মালিক ছিলেন, বাবারও কিছু শেয়ার ছিল। ওখানে তখন কোনো কারণে বাবার কাজ করতে হয়েছিল। কেন জানিনা বাবা মাত্র এগারো মাস ওখানে ছিলেন। কিন্তু ওই সময়ের অনেক কথা মনে আছে। 

    রানীবাড়ীর কথা বেশি মনে থাকার কারণ হচ্ছে তখন একটু জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে। স্কুলে ভর্তি হইনি বলে সময়ও হাতে বেশি ছিল। মা, বিশেষ করে বাবাকে বেশি কাছে পেয়েছি। রানীবাড়িতে বাবার যে কোয়ার্টার ছিল সেরকম বাড়িতে অপনারা কেউ কখনও থাকেননি আমি নিশ্চিত। বাবার কোয়ার্টারের পাশে ছিল উঁচু টিলা। সবুজ গাছগাছালি ভরা। ছোট্ট ছোট্ট ঝর্ণা তাতে রঙিন রানীমাছ সাঁতার কাটতো। কতো বুনো ফুল ফুটতো। পাখি ছিল, বেজি ছিল, আর ছিল শেয়াল। সন্ধ‍্যার পর থেকে হুক্কাহুয়া ডেকে প্রহর ঘোষণা করতো। একটা ভঙ্গুর মাটির টিলার গা ঘেঁষে এরকম সাজানো বাড়ির পরিকল্পনা কার মাথায় এসেছিল জানিনা। শেয়াল বেজি বনবেড়াল সাপ তো ছিলই আর ছিল ত্রিপুরার বিখ্যাত টিক্কাপোড়া বাঘ। গায়ে হলুদের ওপর কালোদাগ। হিংস্র। হরিণ খরগোস, বনমোরগ তাদের শিকার। রঙীনমাছ ছোট গর্তের জমা জলে। প্রচুর বানর পাখি। সকালে দেখতাম লাল মাটির ওপর পাখির পায়ের ছাপ। গাছ লতাপাতার সতেজ সমারোহ। সে এক দেখার মতো বনভূমি। রোজ একবার টিলায় উঠতাম। বেগুনিরঙের বুনোফুল শটি ফুল তুলে আনতাম।

    যেহেতু দাদু একসময় ওখানে ছিলেন তাই ওখানকার পুরোনো কিছু বিশ্বস্ত চা শ্রমিকের সাথে বেশ পরিচয় হয়েছিল। তখনকার দিনে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক সহজ বা সৌর্হাদ‍্যপূর্ণ ছিল না। কিন্তু তবুও কেউ কেউ কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিল। বৃদ্ধ শ্রমিক ভরতমামার কোমর ভাঙা ছিল। শুধু হাতে নাকি বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে জখম হয়েছিলেন। তিনি আমার চোখে প্রথম হিরো। 

    ভরতমামা শুধুহাতে বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, বীর ছিলেন। সুপুরুষ ছিলেন না। তখন প্লাস্টারও বোধহয় হতোনা। ভাঙা কোমর নিয়ে কষ্টে হাঁটতেন। শিকারের আকর্ষনীয় গল্পই তাঁকে হিরো করে তুলেছিল। গরীবমানুষটির অনেক ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্টের সংসার ছিল। চাবাগানের শ্রমিক এবং সফেদ পোশাক কর্মীদের মধ্যে জীবনযাপনের বিপুল পার্থক্যই মনে হয় ঐ বয়সেই আমাকে শ্রেণিসচেতন করে তুলেছিল। জিজ্ঞেস করতাম মানুষ কি করে গরীব হয়। খুব প্রশ্ন করতাম, বাবা একদিন একজনকে বলেছিলেন তাঁর বাবা নেই। আমি বুঝতেই চাইছিলাম না বাবার বাবা কি করে নেই হয়। জানতে চাইতাম কিভাবে বোঝা যায় ভগবান আছে। কত বড় আস্পর্ধা এতটুকু মেয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে। মা বলতেন, এত জানিনা - আমরা মা বাবাকে এত প্রশ্ন করিনি। বাবা রাগী ছিলেন কিন্তু বাচ্চাদের প্রশ্ন করার প্রবণতা পছন্দ করতেন। যথাসাধ‍্য উত্তর দিতেন।

    আরো ছিলেন মঙ্গল জেঠু - গল্প বলতেন, বইএর মতো না, নিজের মতো। তাঁদের কাছে আমাদের খুব খাতির ছিল। কতরকম বুনোফল এনে দিতেন। পিপুল ফল থালার ওপর টোকা দিলে নাচতো। লাটিম ফল লাটিমের মতো ঘুরতো। বাবা ওদের দিয়ে টিলার ওপর সিঁড়ি কাটিয়ে দিয়েছিলেন। ছোট্ট একটা নদিখাত করিয়ে দিয়েছিলেন - ছোটভাইটি বৃষ্টির দিনে কাগজের নৌকা ভাসাবে বলে। সে তখন দেড় দু'বছরের শিশু। কোনদিন তরকারির ঝুড়ি থেকে পাকা লাল টুকটুকে লঙ্কা খেয়ে কাঁদে কখনও মার চুল বাঁধার টাসেল মুখে দেয়। একটা ভিটে ছিল - ঘর ছিল না। ওখানে আমড়া গাছের তলায় হাঁড়িকুড়ি খেলতে গিয়ে কিভাবে যেন হাত মচকে ফেলেছিলাম - ডাক্তারবাবু কাঠ দিয়ে ব‍্যান্ডেজ করে দিয়েছিলেন। সেই প্রথম আমার হাড়ে ব‍্যথা পাওয়া। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ওখানে বাড়ির থেকে একটু দূরে অশ্বথ্থগাছের তলায় কালো পাথরের শিবলিঙ্গ ছিল। ধপধপে ফর্সা লম্বা এক সাধু ছিলেন। বাবার সঙ্গে দুধ আর উৎকৃষ্ট স্থানীয় সবরিকলা নিয়ে যেতাম। সাধু আমাকে আর বোনকে কচুপাতায় দুধকলা প্রসাদ দিতেন। সম্ভবত সেই পুণ‍্যবলেই আমার বিয়েটা হয়েছিল! দুঃখের বিষয় সাধুর নামটা কোনদিন জানতে পারলাম না। একদিন কি কারণে জলের অভাব হয়েছিল। মার সঙ্গে স্নান করতে বাইরে একটা টলটলে পুকুরে গেছি। কি মজা। তখন শৈশবের নূতন চোখ। জলে কলমিলতা দেখে কী খুশি। মা ওঁদের ছোট বেলার ছড়া বললেন, কলমিলতা কলমিলতা/ জল শুকাইলে থাকবি কোথা/ থাকুম থাকুম জলের তলে/ জল শুকাইলে লাফাইয়া উঠুম। দেখেছেন? ভুলিনি এখনো। বাড়ির সামনে কার একটা গরুর গাড়ি থাকতো, ওটাতে বসে বাবা আমাকে মাবাবার বিয়েতে পাওয়া নরেন্দ্র দেবের মেঘদূত পড়ে শোনাতেন। তাঁর তখন ব‍্যারিটোন কন্ঠ। দুর্গাপূজার সকালে মালা গাঁথা শেখাতেন শিউলি ফুলে। ছুঁচ হারালে নিষ্ঠুর বকাবকিও করতেন। মা ছোট ভাইবোনকে আর রান্নাবাড়া নিয়ে ব‍্যস্ত। আমি বাবাকে প্রশ্নে প্রশ্নে অস্থির করতাম। বাবা পথের পাশে ছায়াতরু, ফলের গাছ রোপন করতে বলতেন। একবার একটা কদম গাছ লাগিয়েছিলাম। কে জানে হয়তো এখনো আছে। রানীবাড়ির আরেক স্মরণীয় ঘটনা- দুর্গাপূজা দেখতে গেছি বাড়ির কাছে তিনভাইবোন হাত ধরাধরি করে। রাস্তায় হাতি দেখে ভয় পেয়ে ভাই পড়ে গেছে। ভাইকে রাস্তায় একা ফেলে দুই বোন বাড়ি গেছি খবর দিতে। 

    রানীবাড়ি থাকাকালীন আমাদের এক জেঠতুতো দিদির বিয়ে হয় শিলচরে। আমরা যাইনি, বাবা গিয়েছিলেন, এসে বিয়ে বাড়ির খুব মজার মজার গল্প বলেছিলেন। বিয়েবাড়ি হৈ চৈ/ কেহ খায় দৈ খৈ/ হাতে দৈ পাতে দৈ/ তবু বলে দৈ কৈ। আমরা হেসে খুন। এর আগে কোন বিয়ের গল্পই শুনিনি আমরা। এমনি ছোট্ট ছোট্ট ঘটনায় গল্পে কেটে গেছে দিনগুলো। তার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে কতজনের জীবনের গল্প। বাড়ি তো বাড়ি হয়ে ওঠে পরিজন নিয়ে প্রতিবেশি নিয়ে। বাড়ির কথায় মিশে যায় কত কথা।

    ****

    জীবনের তিন নম্বর বাড়ি করিমগঞ্জ। বাবা কাকারা বাড়ি বলতেন না, বলতেন বাসা। বাড়ি তো তখন দেশের সীমার বাইরে অষ্টগ্রাম। 

    এই বাড়ি পুরনো বাড়ি। একসময় পরিবারের যৌথসম্পত্তি ছিল পরে ভাগাভাগি হয়ে গেলেও সদ্ভাবের অভাব ছিল না। আমি অবশ‍্য বেশি দিন ওখানে থাকিনি। আমার বাবা কাকাদের বাল‍্যকালে এই বাড়ি কেনা হয়েছিল। আমার স্কুলজীবন ওখানে শুরু। বাবা তখন আবার গোয়ালপাড়ায় কর্মরত। মা আমাদের তিন ভাইবোনকে নিয়ে প্রচুর ফল ফুলের গাছে ভরা এই বাড়িতে থাকতেন। পাশেই বাবার ছোটকাকা তাঁর ছেলে মেয়ে নাতি নাতনীদের নিয়ে। দাদু বিদ‍্যোৎসাহী, গাছপালাপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁর বিশাল পুস্তক ভাণ্ডার এবং মননশীলতা ছোটদের প্রভাবিত করতো। বাড়ির অনেকেই দীর্ঘকায় ছিলেন, লোকে নাকি বলতো যদি লম্বা দেখতে চাও যতী দত্তের বাড়িত যাও। ছোট দাদু যতীন্দ্র কৃষ্ণ দত্ত রায় আর তদীয় স্ত্রী সরোজিনী দত্ত রায় তখনও ভাইপোদের মান‍্য অভিভাবক, শাসনকর্তা। উঠোনে একটা তালগাছ ছিল - অনেকে বলতো তালগাইচ্ছা বাসা। ভাদ্রমাসে সারারাত ধূপধাপ তাল পড়তো। পাশে নটিখাল। লঙ্গাই আর কুশিয়ারা নদিকে জুড়ে রেখেছিল। রাতে নৌকা নিয়ে চোর এসে চুরি করে তখনকার পাকিস্তানে পালিয়ে যেতো। প্রতিবার বর্ষায় বন‍্যা হতো। ছোট ছোট কচ্ছপ বসে থাকত লিচু গাছের উঁচু গুড়িতে। পাড়াটির প্রায় সবাই তখন অবস্থাপন্ন স্বচ্ছল পুরনো বাসিন্দা। বিরাট সব কম্পাউন্ড। মেহেদির কেয়ারি। পাম গাছের সারি। প্রতিবেশিদের মধ‍্যে সুন্দর সম্পর্ক। করিমগঞ্জের সব বাসিন্দারা একে অপরকে আত্মীয় জ্ঞান করতেন। এমন আর দেখিনি। নটিখালের ওপরে পুল ছিল। ওপাশে কালীবাড়ি। জাঁকজমকে রথ ঝুলন হতো। করিমগঞ্জের সঙ্গে অনেক মধুর অন্তরঙ্গ স্মৃতি, মজার গল্প জড়িয়ে আছে। সব কি আর লিখে শেষ করা যায়। লিখতে পারলে লিখবো অতিভদ্র সজ্জন রামুদার কথা, ধূর্তচূড়ামণি সদুদার কথা, দাঙ্গায় পুত্রহারা পাগলিনী অমূল‍্যর মা, কমিক শুনিয়ে ভিক্ষা চাওয়া যদুনন্দন, খেলার সাথী রায়ট, তুতন, রাখিদের কথা। আরো আছে পুলের ওপর বসে মুসলমান ভিখারি বারোমাস বহু বছর ধরে চিৎকার করতো– তুমরার দয়া লাগে না নি বা– তার প্রসঙ্গে অনেকেই বলতো সে নাকি বহুটাকার মালিক। ভিক্ষার টাকা সে দান করার জন‍্য জমায়। 
    হুড়মুড় করে কতো জীবন স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে লেখায় ঢুকতে চাইছে,কাকে ফেলি কাকে রাখি?

    আমার ভাই বলেছে- দিদি যতীন্দ্র কিশোরের কথা আর একটু লিখতে পারতিস, কুটি কামলার কথা লিখলি না। বোন সুমিতা লিখেছে রাতের বেলা বাড়ির পুকুর ঘাটের মতো নদির ঘাটে বসে মায়ের বাসন মাজার কথা। ভাইঝি শাঁওলি বলেছে হরিণের শিংগুলির কথা। হ‍্যাঁ বলতে হবে নিজের মনের তাড়াতেই যদি পারি। বাড়ি তো অনুষঙ্গ সমূহ নিয়েই বাড়ি হয়ে ওঠে। কতো ফেলে আসা জিনিসে যাদুঘরের মতো বাড়ি। মানুষের সুখ বেদনায় মিশে যাওয়া বাড়ি। ছিদ্দিক মুনিষ যাকে ভাস্কর নাম দিয়েছিল ছিদ্রক। ঠাকুরমার বাংলো বাড়ির খড়ের চাল মেরামত করতো তবু জল পড়তো বলে। উনবিংশের দ্বিতীয়ার্ধে শৈশবে সিলেট থেকে পাচার হয়েছিল আফ্রিকার হীরের খনিতে। কি করে ফিরেছিল কে জানে। ঠাকুমার সঙ্গে পাক্কা সিলেটিতে কঠিন ইংরেজি শব্দ জুড়ে কথা বলতো। টয়লেট পরিষ্কার করতো জিৎরাম।
    আশিস যখন নূতন জামাই তাকে আমাদের সেই ভাই নিমন্ত্রণকরেছিল, জামাইবাবুকে খাতির না করলে হয়? কি ভাবে খাতির করবে ভেবে সারা। নারকেল সুপুরি পাড়তো যারা তারাও স্বজন। আশিস তো অবাক, এখানে রাস্তায় বেরোলেই সব তোমাদের কুটুম। বসুধৈব কুটুম্বকম। 

    আমাদের প্রভাবৌদি– সদাহাস‍্যময়ী, শ্রীময়ী, চাপা গায়ের রঙ। সরু কাজলকালো ভুরু আর কপালে একগুছি চূর্ণকুন্তলে বিষাদের ছায়াতে করুণা, স্নেহ,সব মেনে নেওয়ার দুঃখ। বাঙালি সমাজ অনেকদিকে উদার। কিন্তু বিধবাদেরকে কী নির্দয় অনুশাসনে অশনে বসনে সমাজে নির্বাসিত করে রাখে। প্রভাবৌদির বাইশ বছর বয়সে অসাধারণ রূপবান রাণাদা তিনটি সন্তান রেখে সামান্য ভুগে চলে গেছিলেন। আমি দেখিনি। ছবি দেখেছি। বড়লোক টী প্ল‍্যান্টার শ্বশুরবাড়ির নিমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য পোলাও পরমান্ন রান্না করতেন, বিধবা বৌমার বরাদ্দ হবিষ‍্যি। পোশাক? ধপধপে শাদা থান, শাদা ব্লাউজ, সম্পূর্ণ নিরলংকার। মানুষের সমাজ কাঠামোয় অবিচারের সর্বোচ্চ উদাহরণ প্রভাবৌদি। বেশবাসে খাওয়া দাওয়ার নিষেধ কমেছে, ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন সিঁদুর মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো কি কি মুছে যায়। সবার কথায় জড়িয়ে আমার, আমাদের বাড়ির গল্প। ইঁট কাঠ, খড়বাঁশে কি ঘর দালান উঠোন বাড়ি ওঠে?

    ****

    শুধু বাড়ির কথা তো হয় না সঙ্গে থাকে মানুষের কথা। মানুষ মানুষ ছাড়া থাকতে পারেনা। আমাদের করিমগঞ্জের বাড়ি বহুদিনের বহু স্মৃতিতে মিশে আছে কিন্তু আমার ভাইঝি শাঁওলি যা বলেছে, বেদনাদায়ক সত‍্য। সেই করিমগঞ্জ বাসা এখন আর দত্ত রায়দের নেই। "ঘাট ছেড়ে ঘট কোথা ভেসে যায় --"। মানুষ পরিযায়ী স্বাভাবিক ভাবেই। জীবনের, জীবিকার টানে ফুল্লকুসুমিত দ্রুমদল শোভন বাড়িটি থেকে আমরা বহুদিন চলে এসেছি। খুড়তুতো ভাই হারু ছিল ওখানে শেষ পযর্ন্ত। সে বলেছিল— শক্তিদি এই বাড়িতে দত্ত রায়দের পতাকাটা আমি রাখবোই। অকাল মৃত‍্যু আমার সেই সহজ সদাহাস্যোজ্জ্বল ভাইটিকে ছিনিয়ে নিয়েছে। লিখবো করিমগঞ্জের আরো অনেক কথা তার আগে অন্য বাড়ির কথা হয়ে যাক। 

    আমার শৈশব কৈশোর আর প্রথম যৌবনের দিনের বেশিরভাগ কেটেছে আমার জন্মস্থান আমার মাতামহের বাড়ি ৪৬ হরিগঙ্গা রোডের বাড়িতে। ওই নামে আমার একটি বই আছে তবে ওতে বাড়ির কথা মুখ‍্য নয়। ওই বাড়ির অনেক কাহিনী। আমাদের সর্বংসহা মা অনেক সুবিধা অসুবিধার মধ্যে আমাদের নিয়ে করিমগঞ্জে থেকেছেন। বাবা কিছুদিন ছিলেন কোকরাঝাড়ে। ওখানে ডালাবাড়ি, রাংলাবাড়ি আর চিকনমাটি তিনটি চা বাগানের মেশনারি দেখার দায়িত্ব ছিল। কোর্য়াটার ছিল ডালাবাড়িতে। ছুটি কাটাতে যেতাম মার সঙ্গে। তিনদিনের রেলযাত্রা। স্টীমারে গৌহাটি থেকে পান্ডু। বত্রিশটা টানেল পেরোতে হতো। ট্রেন থেকে দেখতাম জাটিঙ্গা নদি বয়ে চলেছে আপনবেগে পাগলপারা। হলুদ সূর্যমূখী আলো করে রেখেছে জঙ্গল। হাফলং স্টেসনে ট্রেন থামলে তড়িঘড়ি নেমে হোটেলে খাওয়া। টেবিলে আগে থাকতেই বাড়া থাকতো ধোঁয়াওঠা মুর্গির পাতলা ঝোল। খিদের মুখে অমৃত। মাহুর স্টেশনে বিখ‍্যাত পেঁড়া। সেবার বাচ্চুমাসি গেছিলেন সঙ্গে। জ‍্যোৎস্নারাত চাঁদের আলোয় ধূধূ করছে ব্রহ্মপুত্র আর তার বালুচর। ওই পৃথিবী যেন আমাদের চেনা পৃথিবী নয়। ডালাবাড়ির ছিমছাম কোয়ার্টার। কম্পাউন্ডে একটা মেহ্গিনি গাছ ফুল ভরা একটা গুলঞ্চগাছ। ফুলবাগানে হাওয়ায় কাঁপছে রঙ বেরঙের কসমস আর লাল শাদা পপিফুল। তখনো জানিনা পপির পরিনাম আফিম। চা বাগানের টমটমে চড়ে বেড়ানো, জেনারেটারে রাত আটটা অবধি বিদ‍্যুত তারপর হ‍্যারিকেনের আলোয় খাওয়া। এক বিয়েবাড়ি থেকে ফিরছিলাম মোষের গাড়িতে। বর্ষাকাল। চারদিকে জল। জলের মধ্যে হিজলগাছের সারি। দূরে কোথায় মাইকে গান বাজছে নিঙারিয়া নীলশাড়ি শ্রীমতী চলে....। যথারীতি ডালাবাড়িতেও অনেকের সঙ্গে চেনা হয়েছিল। অল্প দিন ছিলাম। ভুলে গেছি। বাবা খেয়ালবশে বা রাগের বশে দুমদাম চাকরি ছেড়ে দিতেন। মা ভয়ে ভয়ে থাকতেন। তবে ওই প্রজন্মের অনেক মহিলার মতো মারও মনে হয় চাপা একটা গর্ব ছিল, আমি কত ধৈর্যশীল এইরকম মেজাজি মানুষের সঙ্গে ঘর করছি। তাঁদের ওইরকমই শিক্ষা ছিল তো। তবুও ওই চাকরিটা ছাড়াতে মার মনখারাপ হয়েছিল আমি বুঝেছিলাম।

    ****

    সব বাড়ির কথা বলার মতো কিছু নেই। হয়তো অল্পদিন কাটিয়েছি, মনে রেখাপাত করার মতো কারো সঙ্গে পরিচয় হয়নি তাই ওই সব বাড়ির কথা বাদ! তবে দরংজেলায় বমডিলার কাছাকাছি চারদুয়ারের কথা বলবো। ওখানে স্থায়ীভাবে থাকিনি। ছুটিতে যেতাম। ব্রহ্মপুত্রের উপনদি গাব্রু মানে যুবতী। গাব্রু নদি আর বেলসিঁড়ি নদির মাঝখানে ময়ূরভঞ্জের মহারাজার চা বাগান। বাগানের মাঝখানে নালার মতো ছোট্ট কলাকুচি নদি। কী মিষ্টি নাম। বাবার সঙ্গে রোজ বেড়াতে যেতাম নানা বনপথে। নাগকেশরের ঝরা কেশর ধূলার সাথে মিতা– ধূলায় লুটিয়ে পড়তো, গাছ আলো করে থাকতো রাশি রাশি। বুনো সূর্যমুখীর হলুদ রঙ চোখ ধাঁধিয়ে দিতো। পৃথিবী তখন অতি নূতন,অতি সুন্দর। চোখে তখন কোন নূতনের আলো। আমাদের বেশ কটি পোষ‍্য। সিল্কি বিড়াল, কাজল, গোবিন্দের মা, ভোম্বল, আমসি, চিমসি নামের গরু বাছুর। নামগুলো সব গরুবাগাল কায়রুববুড়োর দেওয়া। বাড়ির সামনে কামিনী ক‍্যানা দুচারটি গাাঁদা দোপাটি ফোটে। পেছনে বড়ো কিচেন গার্ডেন শসা ফুটি - সেখানে বলে বাঙ্গি, বরবটি, সীম ঝিঙ্গে, কলাগাছ। একটা কাঁঠালগাছ, একটা আমগাছও। কাাঁচালঙ্কা কতো রকম। উর্বর মাটি আর গোবর সার পেয়ে বাগান সদাহাস‍্যময়। কুকুর আছে লাইকা, কালু, ভুলি, প‍্যাট। আছে পীরদিদি, ধীরজুদাদা তবে ওদের নিয়ে কাহিনীর কিছুটা– অনেকটাই আমার কল্পনা। আমরা প্রায়ই পিকনিক করতে যেতাম গাব্রুর চরে। ছোট ছোট ঝাউগাছ ছিল। এই শুকনো এই ডুবে গেল জলে। বর্ষার গাব্রু কাছাকাছি বস্তি ভাসিয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ভাসাতো - মৃত‍্যু ঘটাতো। ওখানে আমাদের ঠিকাদার কাকু তসির আলি বিষাদসিন্ধু বইটি দিয়ে পড়তে বলেছিলেন। বাড়ি ছিল সিলেটের ঢাকা দক্ষিন অর্থাৎ মহাপ্রভুর পৈতৃক গ্রামে। বলতেন মন্দিরে বাল‍্যভাগ হতো মেথির জাউ। হিন্দুমুসলমান নির্বিশেষে প্রসাদ নিতেন। ফলে নাকি ওই গ্রামে সর্দিকাশি ম‍্যালেরিয়া হতোনা। হয়তো বিশ্বাস, সংস্কার। 

    ****

    চারদুয়ারের কোয়ার্টার ডালাবাড়ির মতো ছিমছাম ছিলো না। সামনের দিকে ফুলবাগানের জন‍্য ঘিরে দেওয়া জায়গা থাকলেও জমেনি ঠিকঠাক। তবুও শীতের শিশিরে সিক্ত গাঁদাফুলের ঝাড়, বর্ষার দোপাটি, শরতের শেষে বীজের বুকের ভেতর ঝুমঝুমি বাজিয়ে অতসীগাছের মায়াবী উপস্থিতি মনে আছে। সামনে দিগন্তবিলীন চায়ের প্ল‍্যানটেশন। জ‍্যোৎ্স্নারাতে মনে হতো আকাশ থেকে নেমেছে ক্ষীরসমুদ্রের ঢেউ। পায়চারি করতাম উঠোনে। মনটা কি রকম ব‍্যাকুল হয়ে উঠতো। মনে হতো এই জন্ম পেরিয়ে ভেসে গেছি জন্মান্তরের স্রোতে। কাকে কোন জীবনে পেয়েছিলাম তার বা তাদের জন্য হৃদয় ব‍্যথিয়ে উঠতো। ভোর হলে বাবা ডাকতেন, ওঠো ওঠো দূরে স্নো-পিক ঝলমল করছে। হেমন্তের ভোরে আমরা কি সহজে উঠি। উঠে দেখি সামনের ছোট ঘরে ভাই ঘুমুচ্ছে তার বুকে শুয়ে সুখনিদ্রায় সিল্কি বিড়াল। আমাদের মোরগ ছিল - তাদের অন‍্যতম কাল্টু। একবার কে ওকে চুরি করে ব‍্যাপারির কাছে বেচে দিয়েছিল। ভাইকে দেখতে পেয়ে ভরা বাজারে কাল্টু এমন করে যে ব‍্যাপারি ওকে ফিরিয়ে দেয়। আমগাছে বাস করে বাস্তুপাখিরা, বাবা ওই শালিক চড়াইদের খেয়াল রাখতেন। আমগাছের ডালে একবার শঙ্খচূড় সাপ উঠেছিল। অসমসাহসে লাঠিপেটা করে মারা হলো। পাখির বাচ্চাগুলো তখনো সাপের পেটের ভেতরে নড়ছিল। প্রতিবেশী ছিলেন কেরেলার স‍্যামুয়েল আর পর্তুগীজ বংশোদ্ভূত রোজারিও। ওদের ছেলেমেয়েরা রোশনি, সুষমা, মেরি আর জুন আমাদের ভাইবোনই ছিল। ওইদিকে গঙ্গারাম কলিতা আমাদের কাকু। বিহুতে গামোছা তিলপিঠা বিন্নিধানের চিড়া দিতেন। মাসের প্রথমে মাড়োয়ারি দোকানের মালিকের ছেলে, ওখানে বলতো পোয়ালিবাবু টাকা আদায়ে আসতেন। তিনফুটিয়া মহাজন মনসাপূজার সন্ধ্যায় কলার খোলের ময়ূরপঙ্খী ভাসাতেন কলাকুচির জলে। ফাগুয়া ছিল শ্রমিক মেয়েমরদের মাদল বাজিয়ে মাতাল হবার উৎসব। শ্রমিকদের বসতি একটু দূরে ছিল। আমাদের বাড়ির লাগোয়া পাকা কুয়োতে ওরা মেয়েপুরুষ একসঙ্গে স্নান করতো। একে অপরকে সোহাগভরে "সাবুন" মাখাতো। সে সময়ের মধ‍্যবিত্তের আব্রুর ধারণার সঙ্গে ঘোর অমিল ছিল। একটু দূরে তেঁতুল গাছের তলায় বাচ্চারা খেলতো। বাবার আসা যাওয়ার পথে ওরা ডাকতো,-- ও ফুলের বাসা-- ভালোবাসা। বাবাও ফিরিয়ে বলতেন ভালোবাসা। 

    ****

    দূরের পাখিরা যেমন দিগন্তে মালা এঁকে নেমে আসে হেমন্তের হাওরে তেমনি স্মৃতিরেখা দীর্ঘতর হয়ে কতো ছবি ফুটিয়ে তুলছে। আঁধার আলোর আলিম্পনে ভরা অঙ্গনে আগ্রহী পাঠককে নিমণ্ত্রণ। দরংজেলাকে বলা হয় আসামের শস‍্যভাণ্ডার। আকাশে পাহাড়ের নীল আভাস দিগন্তলীন শস‍্যক্ষেত, মাঝে হয়তো ছোট্ট একটি জলাতে পদ্মফুল ফুটে আছে। ধানক্ষেতের মধ‍্যেই একটি লক্ষ্মীর পদ্মাসনা প্রতিমা। নদিতে, বিলে প্রচুর স্বাদুমাছ। বিখ‍্যাত ব্রহ্মপুত্রের চিতল,মহাশোল, বাচা, ভাঙ্গন। 

    একদা অবিভক্ত ভারতের ময়মনসিংহ থেকে আগত দক্ষ মুসলমান চাষীরা পরে জনগণনায় যাদের অসমীয়া পরিচিতি দেওয়া হয় তারা এই শস‍্যভাণ্ডারের সমৃদ্ধির কারণ। তাঁরা আমাদের ঈদের দিনে কতো সেমাই হালুয়া পাঠান। ফেলে আসা দেশ বিদেশ হয়ে গেছে। দুঃখ করেন। সবাই পরম আপন। বাবার সঙ্গে বড়জুলি হাটে বেড়াতে গেছি। সে এক অভিজ্ঞতা। সোনারূপা, কাপড়চোপর, মাছ সব্জী কি নেই। লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয় ওই হাটে। নদি পেরিয়ে হেঁটে যেতে হয়। পাওলুস দাদা সঙ্গে যায়। একবার আমি আর বোন চোরাবালিতে পড়েছিলাম - পাওলুস দাদা বাঁচিয়েছিল। ভারতের বহু ধর্ম বহুভাষা বহুসংস্কৃতি প্রানস্পর্শ করেছিল তখনই। মা হয়তো একটু খানি ছানার পায়েস করে লক্ষ্মীপুজো করেছেন, বাবা সবাইকে ডেকে বসলেন– সন্ধ‍্যাবেলায় এসো। অতঃপর যোগেনদাদা কাটলেটের জোগাড় নিয়ে বসলো। কালু ভুলি উন্মুখ হয়ে দরজায়। আমাদের অল্প ভুট্টা তিল পাট সরষে ছোট ছোট প্লটে চাষ হয়। কী সুন্দর লাগে শীতের কপিক্ষেতে কুয়াশার বিন্দু। ভুট্টার সোনালি রেশম। আমার মা বাবার অল্পবিত্ত সুখের সংসার। পূজার জামা হলো কি হলো না। শিউলির রাশি রাশি মালা গাঁথা হবে। ধপধপে নারকেল নাড়ু হবে লক্ষ্মীপূজায়, ভাইফোঁটায় এলোঝেলো ইচার মাথা। না, শুধু হাসি আনন্দের দিন কাটাইনি চারদুয়ারে - আসামের বঙালখেদার দাঙ্গা চীনের সঙ্গে যুদ্ধের আঁচ ও লেগেছে ওখানেই। 

    ****

    জীবনের সঙ্গে বাসস্থানের সঙ্গে বহুজনের কথা জড়িত থাকে। হয়তো ঘনিষ্ঠতা তেমন না, সদ্ভাব, সৌহার্দ। বাবার সঙ্গে অনেকেই তেমন সম্পর্কে স্বজন ছিলেন। শ্রেণী ধর্ম নিরপেক্ষ সম্পর্ক। তেমনি একজন ছেচুমিঞা। সেতার লাউ এর খোল না কাঠ দিয়ে বানায় কে জানে, বাউল বৈরাগীরা একতারা দোতারা ডুগডুগি বানায় লাউএর খোল দিয়ে। ছেচুমিঞা নিজের গাছের একটা তেমন শুকনো লাউএর খোল আমাদের দিয়েছিল সেতার বানানোর জন‍্য। বহুদিন আমরাও সযত্নে রক্ষা করেছিলাম। পরে কবে কোথায় হারিয়ে যায়। একদিন অনেক রাতে তেজপুর বমডিলা হাইওয়ের দিক থেকে একটা আবছা কলরব শোনা গেল। ছেচু মিঞা গাড়িচাপা পড়ে মারা গেছে। খবর পাওয়া গেল পরের দিন। পরিজন কেউ ছিল না "হিন্দুস্তানে" প্রতিবেশীরাই শেষ কাজ করলো। আমাদের ও চোখ ভিজেছিল। লাউএর খোলটা দেখলেই কষ্ট হতো। আর একদিন প্রবল বৃষ্টির রাত। দূরে গাব্রুনদির ফোঁপানি তখন গর্জনে পরিনত হয়েছে, বন‍্যা। পরদিন শুনি মনোয়ারা বিবি, ডিম বেচতে আসতো, তিন পিতৃহারা নাবালক সন্তান নিয়ে - নলখাগড়াকে ওখানে বলে ইকড়া। ওই দিয়ে ঘর বানিয়ে বাস করতো। তিনটি শিশুই বন‍্যার জলে ভেসে গেছে। আসামে দাঙ্গা হলো ৬০সালে। সম্প্রীতির রেশ সাময়িক ভয় এবং হিংসার নখের ঘায়ে ফালাফালা। আমরা সরাসরি আক্রান্ত নই। যাদের সঙ্গে মেলামেশা ছিল আছে- তবু কী যে আতঙ্ক। দূর বস্তি কি গ্রাম থেকে ভেসে আসে ভীত আর্তনাদ। আমার ভয়ত্রস্ত বোন তো রাতে মাকে ঘুমোতেই দেয়না। চারদিকে সত‍্য মিথ‍্যা গুজব। চীনের সঙ্গে যুদ্ধ; আমরা ওখানে ছিলাম না, বাবা প্রত‍্যক্ষ‍্যদর্শী। বিজয়ী ভারতীয় সেনারা নেমে আসছেন বমডিলা থেকে। স্থানীয় মানুষের উষ্ণ অভ‍্যর্থনায় উদ‍্যোগে অগ্রনী ছিলেন বাবা। অব‍্যবহিত আগে শোনা গেছিল বমডিলাকে অস্ত্র শূন‍্য করা হচ্ছে। তেজপুর টাকশালের টাকা পোড়ানো হচ্ছে। আ‍্যাসাইলামের রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আগে পরে আমরা ও খচ্চর এবং ট‍্যাঙ্ক সহ বড় বড় কনভয় ওই রাস্তায় চলতে দেখেছি।

    চারদুয়ারের কথা বলবো আর নূড়িপাথরের ওপর বয়ে যাওয়া সচ্ছতোয়া বেলসিঁড়ি নদির ধারে নাগকেশর বীথির ধারে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলবোনা তা তো হয় না। ব‍্যাম্বু এভিনিউ ওরফে বাঁশবাড়িতে সবুজ বনের ফাাঁকে উঁচু গাছের ডালে বসে ধ‍্যানস্থ ধনেশ পাখি; হাড়গিলেদের দেখতাম - দূরের জলাতে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে তারাও ধ‍্যানরত। তাদের কথাও বলতে ইচ্ছে তো করে। সব কি আর সাধ‍্যে কুলোয়।

    ****

    সব আবাস তো বাড়ি হয় না এমনকি বাসা হয়ে ওঠে না। তাদের কথা বলবো না। বলতে হবে আমার শ্বশুর মশাইএর সরকারি আবাসের কথা, আশ্রমচৌমুনির শ্বশুরবাড়ির কথা। ধনীসাগরের পাড়ে আমাদের অপূর্ব নিসর্গে ঘেরা কোয়ার্টারটির কথা। সাব্রুমে দুটি অন‍্যরকম কোয়ার্টারের গল্প। তার পর নিজেদের তৈরি করা উদয়পুরের কাঠের বাড়ি, রামনগরের বাড়ি, আশ্রমচৌমুনীতে আশিসের বড় সখের বাড়িটির কথা। লালি বলেছে ও অপেক্ষা করছে কবে আসছে বতর্মান ফ্ল‍্যাটের কথা। তার আগে বাঘাযতীন প্লেসের ফ্ল‍্যাট। দেখি কতোটুকু বলতে পারি কতটুকু ধৈর্য ধরে আপনারা পড়তে পারেন। তার আগে বলতে বাকি রয়ে গেছে আমার মাতামহের বাড়ি আগরতলার ৪৬ হরিগঙ্গা বসাক রোডের বাড়ির কথা। আমার ওখানে জন্ম হয়েছে, স্কুল কলেজের পড়াশোনা, বিয়েও হয়েছে ওই বাড়িতে। আমার বহু সুখস্মৃতি, আমার স্নেহময়ী মাসিদের ভালোবাসার স্মৃতি ঐ বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে। ওখান থেকেই জীবনের যাত্রা শুরু। দেখি কতটুকু লিখে উঠতে পারি। স্মরণবীণা মধুর সুরে বাজাতে চেষ্টা করতে হবে গানটি আনন্দের হোক বা বিষাদের। লিখতে শুরু করেছি স্মৃতি নিজের কিন্তু সে পাঠকের মনোগ্রাহী হওয়ার যোগ‍্যতা না থাকলে বৃথা। 

    ****

    লিখতে শুরু করেই আপশোস হচ্ছে ৪৬ হরিগঙ্গা বসাক রোডে আমার মায়ের বাবার বাড়ির কোন ছবি নেই। আমার জন্মস্থান বা বাসস্থান হিসেবে আমার কাছে গুরুত্ব আছে বলেই নয়, ছোট্ট তিনটি খড়বাঁশের ঘরে কতো উৎসব আতিথেয়তা, কত ছাত্র ছাত্রীর পড়াশোনা যে হয়েছে কেন্দুয়াই চৌধুরী বাড়ির প্রতিভাবান এই গরীব শিক্ষক প্রয়াত রোহিনী চন্দ্র চৌধুরীর বাড়িতে। তিনি আবার উপাধিধারী কবিরাজ ও ছিলেন। তাঁর সন্তান মোট দশজন সবার জন্ম এই বাড়িতে। অকালমৃত সন্তান সহ সাত পুত্র কন‍্যার মৃত্যু ও হয় এইবাড়িতে। দিদিমা তো বহুদিন আগেই গত হয়েছিলেন। এই দুঃখ সুখের স্মৃতি কল্লোলমুখর বাড়িতেই আমার জন্ম, বিবাহ আর আমার স্কুল কলেজ জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে। সবকথা ভীড় করে আসছে ঝাড়াই বাছাই করে স্টেজে তোলা কি সহজ কথা।

    এই বাড়িতেই দাদুর মৃত্যুর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। তখন ক্লাস সেভেন। পঁচিশে বৈশাখের সকালে আবৃত্তি প্র‍্যাকটিস করছিলাম স্কুলের রবীন্দ্র জয়ন্তীর জন‍্য। তখনই আমাকে গঙ্গাজল আনতে পাঠানো হয় আরেক দাদুর বাড়িতে। মাতৃহারা মেয়েদের পিতা হারানোর কান্না আমি সহ‍্য করতে পারছিলাম না। তখনকার সহৃদয় আগরতলার সমবেদনা ঝরে পড়েছিল সন্তপ্ত পরিবারের ওপরে।

    ওই বাড়ির তিনটি ঘর। বড়ঘর - তারই অন্তর্গত ভাণ্ডার ঘর, উত্তর ঘর, বাররাড়িরঘর আর রান্নার আলাদা একটি ঘর। তখন আগরতলায় পাকাবাড়ি খুব কম ছিল। একটা ফুল বাগান ছিল। জবা কাঁঠালি চাঁপা টেকোমা, শাদা গোলাপ মায় বসোরা গোলাপ ও ছিল সুগন্ধি গোলাপিরঙ। বড়ঘরের সামনে একসারি বেলফুল ক‍্যানাফুল ফুটতো। দুটো গন্ধরাজ গাছ বৃষ্টি পড়লেই উমরাওজানের রেখার মতো রূপসী হয়ে উঠতো। কিছু কিছু ভেষজ গাছে দাদুর কবিরাজির স্মৃতি জেগে ছিল। আর ছিলেন তখনও অবিবাহিত স্নেহশীলা পাঁচ মাসি। দাদুর মৃত্যুর পর তখনকার নিরিখে পাঁচটি বোনের অভিভাবিকা হয়ে মাকে কিছুদিন থাকতে হলো বাপের বাড়িতে। তখনই আমি পাকাপাকিভাবে আগরতলাবাসী হয়ে গেলাম। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটলো আগরতলায়। 

    ****

    "আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু,বিরহদহন লাগে তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে"। যতটা পারি আনন্দগানই বাজতে চেষ্টা করবো। কত হাসি আনন্দ মজার ছবি আছে মনে।

    তখন আগরতলায় জল বলতে রাস্তার পাশে আর্টেজিয়ান কুয়োর জল, নিজে নিজে সারাদিন জল পড়ে। এখানে ওখানে বড়বড় দীঘি। প্রত‍্যেক বাড়িতে বড় বা ছোট পুকুর। আমাদের বাড়িতেও ছোট্ট একটা পুকুর ছিল, বলা হতো কূয়া। ওপরের জলটা শ‍্যাওলা ঢাকা কালো। নিচে মিহি কাদা। গায়ে পায়ে লাগলে ওঠেনা সহজে। অথচ মিঠুমাসি নমাসির শাদা পোশাক ধোয়া হলে ধপধপে চোখ ধাঁধানো শাদা। মাঝেমাঝে গুরুচরণমামা ভাঙা মাটির কলসি ডুবিয়ে রাখে। উঠে আসে পিছল কালো তেলতেলে মাগুর মাছ। মা কণামাসি সীমের বীচি দিয়ে যা রাঁধেন, একবার খেলে ভুলবেন না কেউ। ওখানে ভাঙা তক্তার ওপর বসে বাসনামাসি বাসন মাজে। কুলগাছের ডালে বসে দুইপায়ে ধরে কুল খেয়ে কাঠবিড়ালি মাথায় বীচি ফেলে। আগরতলার কাঠবিড়ালির নাম চলই। তারা কোলকাতার কাঠবিড়ালির মতো রূপবান না। ধূসর এবং দুষ্টু। নারকেল বড় হতে দেয়না। ফলপাকুড় পাকতে দেয়না। ওরা গাছে উঠে খায়। আমি ওই অখাদ‍্য কষাটে কুল নিচে কুড়িয়ে খাই। টিউবওয়েলের জলে মেজে হলদে হওয়া দাঁত শাদা হয়ে যায়। আগরতলায় তখন বাড়িতে অবারিত দ্বার। গরু ছাগল ছাড়া কারো ঢুকতে বারণ নেই। উত্তর ঘরটি বৈঠকখানা। আঁকাবাঁকা আস্ত গাছ দিয়ে খুঁটি। নড়বড়ে দরজা। ওই ঘরে সকাল বেলায় মাস্টার মশাইএর কাছে পড়ছি, হঠাৎ নজর গেল এক রাস্তার কুকুর খাটের তলায় সন্ধ্যায় কখন ঢুকেছিল। মোটাসোটা এক বাচ্চা হয়েছে তার। নাম দিলাম বুলটুস। রয়ে গেল পোষ‍্য হয়ে। পাহাড়ের বধূরা আসেন শহরের মেয়েদের সঙ্গে বইনারি অর্থাৎ সই পাততে। তাঁরা দেন জুমের সব্জী, শহরের মেয়ে বৌরা শাড়ি পাউডার ঝুটো গয়না। সম্পর্ক সখীত্বের। নমাসির বইনারি আসে হাসিহাসি মিষ্টিমুখ। জুমের চাল বাঙ্গি আনে। শহরের একেবারে হৃদপিণ্ডে বাড়ি। হাসপাতালে যেতে, কামানচৌমুনি বাজার করতে যেতে আত্মীয় বন্ধুদের আনাগোনা লেগেই থাকে। আতিথেয়তা শাদাসিধে আন্তরিক। বাড়ির সামনে দিয়ে সব মিছিল যায় দুর্গাঠাকুর যান, মৃতদেহ বটতলা শ্মশানে যায়। দেখতে সবাই এইবাড়িতে জমা হয়। ন’মাসি খুব সুন্দরী, অনেকক্ষণ ধরে সাজেন, ভালোও লাগে। বাচ্চুমাসি অফিসে যান। বেশ সুন্দর কলেজখোপা বাঁধেন- বড় হয়ে বাঁধবো ভেবেছিলাম। সময় পাইনি। মিঠুমাসি একদম সাজতেন না। কণামাসি ফ‍্যাশনেবল স্মার্ট ছিলেন। ছোটমাসি খুব ফর্সা- যেন মিনিয়েচার আর্টের মোগল সুন্দরী। দুঃখ ছিল আর একটু মোটা হতে পারেননি বলে। সবাই খুব ফিটফাট গুছিয়ে থাকতে, মিষ্টি করে কথা বলতে ভালোবাসতেন।

    একে সব মাসিদের বিয়ে হয়ে গেল। মিঠুমাসি বিয়ে করলেন না। বিত্ত ছিল না কিন্তু কতজনকে যে কতভাবে সাহায্য করেছেন নীরবে। এরপর একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে আমাদের বিয়েটাও হয়ে গেল। বীথিমাসি রাজপরিবারের মেয়ে, প্রশাসনে উচ্চপদাধিকারী আমাকে সাজিয়ে দিলেন। সুভাষের মণিপুরী বন্ধু কুঞ্জ সাজালো। সুগন্ধি পচাপাতায় গাঁথা চাঁপাফুলের মালাবদল করে কন্দর্পকান্তি আশিস করভৌমিকের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমি শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় খুব কাঁদলো আমার বছর চারেকের দুই ছোট ভাই অর্ঘ‍্য শুভ। পরে ওরাই নূতন জামাইবাবু এলে খুশিতে ডগোমগো। বেড়াতে এলে আগেই খবর দেয় "আশিসদা তোমার লিগ‍্যা সিঙাড়া রসোগোল্লা আনতে গেছে। তুমি কইও তুমি রসোগোল্লা খাওনা সিঙাড়াটা খাইও। আমরা রসোগোল্লা খামু।" বললে তো বলা ফুরোয়না। একে একে অপি কুটু অর্ঘ্য শুভর ও বিয়ে হলো। মাসিরা, আমাদের স্নেহময় মেশোরা কালের নিয়মে চলে গেলেন। বস্তুত মিঠুমাসির প্রয়ানে এই বাড়ির আলো হারিয়ে গেল। আমাদের ভালোবাসার বাঁধন এখন বিনিসূতোয়। সেই বাড়ি চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে সবার মনে আছে, থাকবে।

    ****

    শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা --ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর মশাই আশ্রমপালিতার পিতৃআবাস ছেড়ে যাওয়ার যে সকরুণচিত্র এঁকেছেন তার কোন বিশেষ পরিবর্তন এখনো হয় নি। আমিও শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে বড়ঘরে পাটি পেতে দেওয়া হয়েছে, বরের সঙ্গে শোলার মুকুট পরে সেজগুজে বসেছি, মা বাবা অন‍্য গুরজনরা সাশ্রুনয়নে আশীর্বাদ করেছেন, শুনলাম অর্ঘ‍্য শুভ কেঁদে কেঁদে গর্জন করছে,"যে কান্নাকাটি করবে তাকে মেরে ফেলবো" শুনে তো কান্নার রোল বেড়ে গেল। শ্বশুরবাড়ির থেকে যারা এসেছে তাদের চোখে ও জল। আমার বাবা আর এক মেশোমশাই তো আকুল। এখনও সেদিনের কথা মনে পড়ে চোখে জল এসে যাচ্ছে। এতো ভালোবাসার যোগ্য কি ছিলাম। জানিনা। বারবাড়ি আর ভিতরবাড়ির সংযোগ স্থলে একটা ছোট ছোট শাদা মৃদুগন্ধ ফুলে ভরা গাছ ছিল। মৌমাছিরা ঝাঁক বেঁধে জটলা করতো। দাদুকে কেউ দিয়েছিল আপেলের চারা বলে। প্রচুর যত্ন আত্তি পেল। বড় হলো। পাতায় ফুলে ভরে গেল,আপেল হলোনা কাটাও হলোনা। আপেলের দাদা গাছ নামে থেকে গেল। তার তলায় হলো কণকাঞ্জলির অনুষ্ঠান। একমুঠো চাল আর কড়ি পেছন থেকে ছুঁড়ে দিয়ে ভুলুর মা মাসির কথামতো মাকে বললাম মা তোমার ঋণ চুকিয়ে দিয়ে গেলাম। সংস্কার। যন্ত্রচালিতের মতো মানলাম। ফুল সাজানো গাড়িতে যাত্রা করলাম শ্বশুরবাড়ির দিকে। এখন সেই সুন্দর করে সাজানো বাড়িতে আমাকে বরণের পালা। আমার শ্বশুর মশাইএর সরকারি আবাস আগরতলার সুন্দরতম আবাসের অন‍্যতম ছিল তখন। তিনি কলোজিরে ধানের কৃষ্ণাভ কেয়ারি দিয়ে ঘিরেছিলেন ব্ল‍্যাকপ্রিন্স গোলাপের বেড। স্বর্ণাভ হলুদ গোল্ডেন শাওয়ার ঝলমল করেছে প্রবেশ পথে। দুটি হরিণ একধারে বেড়া দেওয়া বিস্তীর্ন ঘাসজমিতে চরে বেড়াচ্ছে। সুসজ্জিত সুরুচিসম্মত ড্রইংরুম। ভেতরে ঢুকতেই শাশুড়ি মা দিদিমাকে নিয়ে বরণডালা ছুঁইয়ে বরণ করলেন। হাসিমুখে ননদরা দুই দেওর। ভালোই লাগছিল। শুধু আশু নামে কার্য‍্যমানবী কাংস‍্যকন্ঠে কিছু বলে ছন্দ ভেঙেছিল। ওইবাড়ির কথাও কি এক পর্বে শেষ হবে। সব মেয়েদের কাছেই বাপের বাড়ির মূল‍্যায়ণ আলাদা। কিন্তু প্রথম গিয়ে অনেক কিছুই নূতন লেগেছিল। শ্বশুর মশাই যুদ্ধের কঠিন সময়েও বিকেলে খোলা বারান্দায় চেয়ার পাতিয়ে সজিয়ে রাখতেন ছেলে বৌ নূতন জীবন যাতে মধুর হয়। আমরা ওখানে বসে গল্প করতাম। সকালে তখন আগরতলায় ভাত খাওয়ার চল ছিল। ওটাই ব্রেকফাস্ট। আমার ননদ দেবী কোনদিন অনেকটা ছোলার ডাল সঙ্গে দিয়ে বলতো খেতেই হবে। কথা না শুনতে সাহস হতোনা। চেষ্টা করতাম সবটাই খেতে। পারতাম না। শাশুড়ি মায়ের সখের সুন্দর সুন্দর বেড়াল ছিল। খুব চোর ছিল বেড়ালগুলো। মা সকালে আমাকে নিয়ে রান্নাঘরের লাগোয়া স্টোররুম থেকে মশলাপাতি সারাদিনের জন্য একটা ট্রেতে সাজিয়ে আনতে বলতেন সংসার শেখানোর জন্য। মেজো দেওর তখন বলতো বৌদি তোমার কবিতা লেখার জগত থেকে এই জগত কতো আলাদা। আমার ভালোই লাগতো। জীবনের ধন কিছুই ফেলা যায় না। ওঁরা ভালোবেসেছেন হয়তো কখনো দুঃখ পেয়েছি হয়তো কখনো দুঃখ দিয়েওছি। তবু সেদিনের যত হাসিও কান্না সবই জীবন পাত্রে উছলে পড়েছে।

    ****

    আমার শ্বশুর মশাইএর সরকারি কোয়ার্টারে কেটেছে একাত্তরের বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের উদ্বেগাকুল দিনগুলো। বাড়ির ভেতরে বাসযোগ‍্য বিরাট ট্রেঞ্চ বানানো হয়েছিল। ব্ল‍্যাকআউটের অভিজ্ঞতা, সাইরেনের শব্দে আতঙ্ক সব কিছুই ছিল রোজকার ব‍্যাপার। একদিন সন্ধ্যায় মা বাবার বেডরুমে শেল পযর্ন্ত পড়ল। আমরা নবদম্পতি। ভয় হতো কেউ যেন কারোকে ফেলে চিরতরে বিদায় নিতে বাধ্য না হই। ঐ করে সবসময় কাছাকাছি থাকার অভ‍্যাস গেঁড়ে বসল মাথায়। কাছাকাছি ছিল পূর্বাশা বাড়ি, ওখানে মুক্তি যোদ্ধাদের থাকার জায়গা। রোজ সকালবেলায় রাইফেল কাঁধে শীর্ণকায় বাঙালি যুবকেরা বেরিয়ে যেতেন জয়বাংলা,ধ্বনি দিয়ে। 

    বাড়িতে ফুল যেমন ছিল প্রচুর ফল গাছও ছিল। দাদু, শাশুড়ি মায়ের বাবা কাছেই বাড়ি। এক একদিন জ‍্যোৎস্নারাতে ভোর না হতেই ফুল তুলতে চলে আসতেন। নাতিরা বলতো যুদ্ধ চলছে, মিলিটারি এ‍্যারেষ্ট করে নিয়ে যাবে। যুদ্ধ চলছে, আতঙ্ক ছিল, জীবন থেমে ছিল না। বাবা সকালে ব্রেকফাস্ট করতেন। ফল খেতেন, পেয়ারার টুকরো চামচে তুলে আমাকে দিতেন। রাশভারি মানুষটি খুব স্নেহপ্রবণ ছিলেন। একদিন বঙ্গবন্ধু একরাতের জন্য এবাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন। 

    আত্মীয় বন্ধু অথবা অন্য প্রয়োজনে লোকজন তো আসতেনই, কিন্তু ঐ বাড়ি ঠিক অবারিত দ্বার ছিল না। আইজি প্রিজনসের আবাসে কিছু বাধানিষেধ ছিল। যুদ্ধ শেষে বাবা অবসর নিয়ে নিজের তৈরি আশ্রমচৌমুনি দেবেন্দ্র রোডের বাড়ি গেলেন। সেখানে অনেক দিন কেটেছে। 
    প্রথম যখন আমরা শ্বশুর মশাই অবসর নেওয়ার পর দেবেন্দ্র রোডের বাড়িতে আসি তার কিছু দিনের মধ‍্যেই চুরি হলো। চোর ঠাকুরঘর থেকে সব রূপোর বাসন নিল। বারান্দা থেকে দশটা তোয়ালে নিল। শুকোতে দেওয়া দুই কুলো পাকা কুল নিল আর নিল রান্নাঘরের শেলফ্ থেকে কেজি পনেরো চিনি। মা যুদ্ধের সময় গুড়ের তেজপাতা এলাচ দেওয়া সুস্বাদু চা খাইয়ে ও খেয়ে যক্ষের ধনের মতো জমিয়ে ছিলেন চিনি। সন্দেশ ইত্যাদি করার সখ ছিল। সকলের অগোচর ঐ ধন হারানোর কি দুঃখ। তখন রঙ্গ নামে এক দাপুটে রাঁধুনি ছিল। লকেটে তার কোনো অজানা দেবতার দুটি সোনার খড়ম। সে খুব শাপশাপান্ত চোরকে। এরপর অবশ‍্য ফুল ছাড়া আর চুরি হয়নি বাড়িতে। বাড়ির দালান তো খুবই সুন্দর ছিল। বাবার নিজের হাতে করা বাগান আরো সুন্দর। 

    ****

    আমরা উদয়পুর বদলি হলাম শঙ্খর জন্মের ঠিক আগে। দুয়েকটা ভাড়া বাড়িতে থাকলাম। উদয়পুরে তখন ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন। শঙ্খকে চৌদ্দ দিনের শিশু নিয়ে ঢুকলাম বিখ‍্যাত গঙ্গাগতি ভাণ্ডারের মহাদেব দীঘির পাড়ের বড়পুকুর ওয়ালা বাড়িতে। ওখানে এক বৃদ্ধ জ‍্যাঠামশাই ছিলেন- স্বপাকে খেতেন, সপরিবারে বাস করতেন। ঝকঝকে মাজা পিতলে কুকারে রান্না করতেন। ওদের একটি প্রতিবন্ধী কিশোর ছেলে আরো ভাড়াটে বাচ্চারা শঙ্খকে ইঙ্গিবুড়া ডেকে আদর জানাতো। ও নাকি ইঙ্গি ইঙ্গি বলে কাঁদতো। নূতন শিশুসন্তান নূতন চাকুরিস্থল নূতন একার সংসার সামলানোর কষ্ট তবুও ভালোই ছিলাম। 

    আমাদের স্বভাবে একটা হেথা নয় হেথা নয় অন‍্য কোনখানে ভাব ছিলোই। ধনীসাগরের পাড়ে নূতন কোয়ার্টার হয়েছে। ওখানে গেলাম। আমাদের মতো সুখী কে আছে। বিশাল টলটলে জলের দীঘি,আকুল পদ্মবন জানালা খুললে হুহু বাতাসে ভেসে যাই প্রায়। বিকেলে টিলার ওপরে ভাটফুল ফুটে থাকে। প্রতিবেশিদের সঙ্গে খুব ভাব। শঙ্খ সাইকেল চড়ে, টলমল পায়ে হাঁটে। অপেক্ষা করি ওর বাবা অফিস থেকে আসবে। স্কুটারের আওয়াজ ওঠে কি? মাচা ভরা লাউএর কড়া, ঢেড়শ বরবটি সীম। 

    উদয়পুর তীর্থস্থান, প্রায়ই কেউ না কেউ আসেন। বেশ কাটছিল। ছোট ছেলের জন্মের আগে স্কুলের কাছাকাছি আসার তাগিদে ওই সুখনীড় ছেড়ে আবার স্কুলের কোয়ার্টার। 
    ওখানে একজন প্রবীন ডাক্তারবাবু ছিলেন হেমচন্দ্র ভৌমিক। আমরা চিকিৎসার প্রয়োজনে যেতাম। গোমতী ব্রীজ পেরোলে যতদূর চোখ যায়– হেম ভৌমিকের গম খেত বেগুন খেত সর্ষে খেত ধান খেত। তিনি একদিন শঙ্খর বাবাকে বললেন - আমার জমি কিনে আপনি একটা বাড়ি করুন। যতদিনে সম্ভব হয় টাকা দেবেন। আমি তো আনন্দে আটখানা। আমরা অন্য সব দম্পতির মতোই ঝগড়া করলেও হুজুকে সর্বদা একমত। জায়গা কেনা হলো। ঠিক হলো কাঠের বাড়ি হবে, খড়ের চাল। শীতে গ্রীষ্মে আরামদায়ক। যে কথা সেই কাজ। ত্রিপুরায় ভালো কাঠ পাওয়া যায় কিন্তু খরচ ইঁট সিমেন্টের চেয়ে বেশি হলো, তার ওপর নিত্য মেরামত। তা হোক, বেশ অনেকটা জায়গা। বড় করে ফুলবাগান হলো। লাগানো হলো স্থলপদ্ম, রঙবেরঙের জবা কলাবতী বেলফুল গন্ধরাজ এমনকি রিঠা গাছ, গিলে করে যে ফল দিয়ে সেই গাছ, আমলকি কলা মায় সাতাশটা আমগাছ নারকেল গাছ, সিট্রোনেলার ঝাড়, হলিহকের কেয়ারি, সীমের মাচা। গ্রীষ্মের দুপুরে টিয়াপাখির ঝাঁক ফলন্ত অড়হড় গাছে পিকনিক বসায়। ঝড়ে আম পড়বে ছেলেরা কুড়োবে। স্কুল থেকে এসে জল দিতাম। ভাই একবার বলেছিল দিদি একটা বটগাছ লাগা, পঞ্চবটী কর। সন্ধ‍্যা অজস্র শশা লাউ বেগুন লেবু প্রতিবেশিদের দিয়ে দিতো। প্রতিবেশি কর্মকারবাবু আর অশোকবাবুর পরিবারের সঙ্গে হৃদ‍্যতা ছিল। পোষ্য কুকুর গাবলু বাহাদুর বেয়াড়াপনা করলে সন্ধ্যা বলে মেসোকে ডাকবো নাকি? তাতে ওরা শান্ত হয়। একটু হাসো তো বললে বিব্রতভাবে মুখ বাঁকিয়ে একটু দাঁত দেখায়। আর কি চাই।

    উনিশশো আশির জুনের দাঙ্গার ভয়ংকর দিন ওখানেই কেটেছে। বাড়ির একপাশে রাজারবাগে কার্ফু নেই একপাশে ছনবনে কার্ফু। গোমতি ব্রীজের ওপর দিয়ে নিহত মানুষের দেহ গাদাগাদি করে জীপের ট্রেলার নিয়ে যাচ্ছে, তাও দেখতে হয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে শুনতে হয়েছে দূরে তীরের ফলায় আগুন ছুঁড়ে যাদের ঘর জ্বালানো হয়েছে তাদের আর্তনাদ।

    এক সময় দাঙ্গার বীভিষিকা কেটে গেছে। বাড়ির সামনের নয়নজুলিতে হাতিদের স্নান দেখে দুই ভাই কী খুশি। আবার দোলের দিনে রঙ মাখামাখি করে গোমতি নদিতে স্নান করি দল বেঁধে। মায়ের বাড়ি, মহাদেববাড়ি মেলায়, বদর পীরের মোকামে যাই। দেওয়ালিতে পুজো দিই, পুকুরে ডুব দিই, বাচ্চারা দেখে ঘাটলায় বড় বড় কচ্ছপ, শোল মাছ। 

    উদয়পুরের কাঠের বাড়িটি আমাদের নিজেদের সার্মথ‍্যে নির্মিত প্রথম বাড়ি। বাবুই পাখির মতো মনের ভাব "নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা"। তখন ছেলেরা ঠিক দুগ্ধপোষ‍্য নয়। মাত্র পড়ালেখা শুরু করছে। ঐসময় সবাই ভাবে আমার সন্তান খুব মেধাবী হবে। আমাদের মা বাবা দুইজনেরই তখনও সুস্থ। তাই মোটামুটি উদ্বেগহীন জীবন। মাইনে সামান্য হলেও সন্তুষ্টির অভাব নেই। দুজনেই দুজনের ছেলেমানুষীকে পাত্তা দিই। এই বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এসে খুশি হন,থাকেন। গাছপালা তো হলোই, চারদিকে সুপুরি চারা লাগানো হলো। প্রাচীন শহর উদয়পুর। দিঘীর শহর, মন্দিরের শহর, আগরতলার আগে ত্রিপুরার রাজধানী ছিল উদয়পুর, রাঙামাটি। ত্রিপুরার রাজাদের তৈরী বিখ্যাত ভুবনেশ্বরী মন্দির, পুরনো রাজবাড়ির ধ্বং্সাবশেষ এখানে। এই তো কয়েক বছর আগেও জগন্নাথ দিঘী সংস্কার করতে গিয়ে প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার হলো। সেই সময় মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্যের গুপ্তধনের প্রবাদ লোকমুখে ঘোরে, প্রায়ই শোনা যায় এখানে ওখানে মাটি কাটাতে গিয়ে সোনার দুর্গা কি মোহর পাওয়া গেছে। আমরা বাগানের গাছে জল দেওয়ার জন্য একটা কুয়ো খোঁড়াচ্ছিলাম। ছেলেরা গুপ্তধনের আশায় তাকিয়ে থাকে- গুপ্তধন দূরে থাক জলও উঠলো না। প্রতিবেশি আরো দুটি পরিাবারের বাচ্চাদের জন্মদিনে একসঙ্গে মায়েদের আয়োজন করা ইত্যাদি। অসুখে বিসুখে সহায়তা। সায়ন মধ‍্যরাতে অসুস্থ হয়ে পড়লো একদিন সবাই সাহায্য না করলে উপায় ছিল না। সব মিলিয়ে সুখের জীবন। পূজো পার্বণও হতো। পাশেই মুসলিম চাষী পরিবারের মেয়েরা বৃষ্টি না হলে আল্লা মেঘ দে পাণি দে গান গেয়ে আসতো। লক্ষ্মীপূজার পরদিন প্রসাদ নিতে আসতো। তখনই শঙ্খ ভর্তি হলো রমেশ স্কুলে, সায়ন নার্সারিতে। আমি ওদের নিয়ে সন্ধ্যায় রেখাশ্রীদির বাড়ি যাই রাস্তার দুপাশেই ফুলের সৌরভ। সবাই কিছু ফুলগাছ করে। ছুটির দিনে প্রায়ই মায়ের বাড়ি মানে ত্রিপুরাসুন্দরী কালীবাড়ি যাই। গোমতি নদিতে নৌকা চড়ি, রাবার বাগানে বেড়াতে যাই। শ্বশুর শাশুড়ি এসে থাকলেন। তাঁরাও দেখে শুনে খুশি। নিজের হাতে মেপে গাছ লাগিয়ে বাগান সাজিয়ে দিয়ে গেলেন। আমার মা বাবাও এসেছিলেন। 
    শঙ্খ ক্লাস থ্রি অব্দি উদয়পুরে পড়েছে, সায়ন নার্সারি।

    একদিন বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়নোর পালা আসার আগেই ওই বন্দরের কাল শেষ হলো। 
    সবচাইতে আনন্দের দিনগুলো ওখানে কেটেছে। ভুলিনি।

    জীবনতরী ভেসে চললো, গল্প বকেয়া থাকলো সাব্রুমের কোয়ার্টার, দেবেন্দ্র রোডের বাড়ির দ্বিতীয় পর্ব, মেলার মাঠ, রামনগর, দেবেন্দ্র রোডের তৃতীয় পর্ব, কলকাতার ফ্ল্যাটবাড়ি দুটি।

    সাধ ও স্বাস্থ্যের মিল হলে ফিরে আসা যাবে পরের পর্বে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ২৪ জুলাই ২০২৪ | ৫৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • NRO | 165.124.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ০৪:০৯535226
  • অপূর্ব অপূর্ব লিখেছেন। একবার পড়েছি আরো কয়েকবার পড়বো । ঠিক এই ভাবে সরল ভাষায় লিখে চলুন। পরবর্তী পর্ব টা কবে আপলোড করবেন তার অপেক্ষায় থাকবো। এক কথায় অসাধারণ। 
  • kk | 172.58.***.*** | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৮:৪৯535320
  • সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পড়লাম। খুবই ভালো লাগলো। কী সুন্দর বর্ণনা। ঠিক যেন ছবির বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে যাচ্ছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
  • সুবর্ণরেখা | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৯:১৪535323
  • ভীষণ ভীষণ ভালো লাগল। আহা কি সব দিন ছিল।
  • Kasturi Das | ২৫ জুলাই ২০২৪ ২১:৩৪535329
  • আহা.. কী যে ভালো লাগছে পড়তে!  
     পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
  • aranya | 108.5.***.*** | ২৬ জুলাই ২০২৪ ০৫:১৭535374
  • অপূর্ব 
  • Lama | 2405:201:8005:9008:aca7:d6ab:e151:***:*** | ২৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:১১535460
  • ডাক্তার হেম ভৌমিকের চেম্বারে কোন এক ওষুধ কোম্পানির বিজ্ঞাপনে হাতির ছবি ছিল,তাই ডাক্তারবাবুকে 'হাতির্ছবি' বলে উল্লেখ করা হত।
     
    কুয়ো খোঁড়ার সময় গুপ্তধন বা জল না উঠলেও ক্রিকেট বলের মত দেখতে নিখুঁত গোল মাটির ঢেলা উঠেছিল। পরে শোনা গেল ওগুলো একরকমের পোকার বাসা- চিংড়িমাছের মত দেখতে। পরে কোথায় যেন পড়েছিলাম,একেই বলে ঘোঘ যা থেকে "বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা" কথাটা এসেছে।

    গাবলু বাহাদুরের কথা লিখলে বেশ হত।
     
    আর একটা ছোট্ট সংশোধনঃ গঙ্গাগতি দোকানের নাম গঙ্গাগতি ভান্ডার নয়,গঙ্গাগতি দত্ত অ্যান্ড সন্স।
     
    এই লেখাটার ওপর চাইলে হাজার হাজার পাতার টীকা সার সংক্ষেপ ভাবসম্প্রসার্‌ নামকরণের সার্থকতা, কাব্যনাট্য না নাট্যকাব্য ইত্যাদি লেখা যেতে পারে।
  • Lama | 2401:4900:708b:e21b:c294:b6bf:680f:***:*** | ২৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৫535461
  •  অবশ্য দোকনের নামে কিবা আসে যায় 
  • সুশান্ত | 117.194.***.*** | ০৮ আগস্ট ২০২৪ ১৯:২০536021
  • বাহ! আপনার আমার গল্প তো একই! পূর্বোত্তরীয় মানুষের গল্প। আপাতত চোখ বোলালাম। মন দিয়ে পড়ব। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৮ আগস্ট ২০২৪ ২০:১৯536022
  • পড়ে ফেললাম আজকে প্রিয় লেখকের গল্প। কি ভালো যে লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন