এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • সৌদামিনীর ঘরে ফেরা - শেষ পর্ব 

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৯৫৫ বার পঠিত
  • ১৩

    বিগত সাড়ে তিন বছরে মৃণালিনীর জীবনে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। তাঁর বয়েস সাড়ে তিন নয় বেড়ে গেছে দশ-বারো বছর। তাঁর মাথার চুলে পাক ধরেছে। শরীরেও দেখা দিয়েছে ভাঙনের লক্ষণ। তাঁর কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা স্থায়ি আস্তানা গেড়েছে। মাত্র মধ্য চল্লিশেই তাঁকে এখন দেখলে বুড়ি মনে হয়। বাংলার ঘরে মেয়েরা অবিশ্যি কুড়িতেই বুড়ি হয়, এমন প্রবাদ আছে। কিন্তু এই কবছরে তাঁর এই আকস্মিক পরিবর্তন চোখে না পড়ে উপায় নেই।

    তাঁর একমাত্র পুত্র খোকা ও বৌমা আশালতার একটি পুত্র হয়েছে। সেই সম্পর্কে তিনি এখন ঠাকুমা। সেই শিশুর দৌরাত্ম্য এবং দুষ্টুমি তাঁর মন প্রাণ জুড়িয়ে দেয়, কিন্তু তিনি এই দুরন্ত নাতির সঙ্গে তাল রাখতে পারেন না। একটুতেই হাঁফিয়ে পড়েন, হাতে দুধের বাটি নিয়ে কিংবা চটকে মাখা ডাল-ভাত-আনাজের বাটি নিয়ে তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে ডাকেন, “বাবু, সোনাবাবা আমার, লক্ষ্মীবাবা আমার, অত দৌড়লে কি আমি পারি বাবা, তোমার সঙ্গে”? দুরন্ত শিশু ঘাড় ঘুরিয়ে একটি দুটি দাঁতের খিলখিল হাসিতে মুগ্ধ করে তোলে ঠাকুমাকে, বলে, “এচো এচো, আমায় ধলবে এচো”। এ শিশুর নাম, সুদীপ্ত, ডাক নাম নীলু। মৃণালিনীর দুটি নামের কোনটাই পছন্দ নয়। তাঁর পছন্দের নাম ঠিক করেছিলেন শশীভূষণ। কিন্তু তাঁর ছেলের এই ধরনের পুরোনো নাম পছন্দ হয়নি। মৃণালিনীর মনে হয় এ ব্যাপারে, তাঁর ছেলের থেকেও বৌমা আশালতার পছন্দের জোর অনেক বেশী। আশালতা সামনাসামনি কোন দ্বন্দ্বে কোনদিন আসে না, কিন্তু একমাত্র ছেলের উপর থেকে তাঁর কর্তৃত্বের রাশ নিরন্তর আলগা হয়ে চলেছে, এটা তিনি টের পান নিজের অন্তরে।

    মাস ছয়েক আগে তাঁর স্বামী কী এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছিলেন। প্রায় মাস দুয়েক ধরে চলেছিল মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ, আশু বিপদের আর কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ব্যাধির আক্রমণে তাঁর বাঁদিকটা এখন প্রায় অসাড়। লাঠিতে ভর দিয়ে বাঁ পা টেনে টেনে হাঁটা চলা করেন। কলতলায় যেতেও তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কথাবার্তা বুঝতে, শুনতেও অনেক সময় লাগে। একই কথা উচ্চস্বরে, বারবার বলতে হয়। সামান্য বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখে কোন বার্তাতেই তাঁর আর তেমন কোন ভাব পরিবর্তন হয় না।

    দুপুরে খাওয়ার পর মৃণালিনী আগে একটু বিশ্রাম নিতেন। এখন দুপুরে বিছানায় শুলে তাঁর নিদ্রা আসে না, আসে যত রাজ্যের দুশ্চিন্তা। অবেলায় যদি ঘুমিয়েও পড়েন, রাত্রে একদম ঘুম আসে না। ঘুম না আসা রাত্রে দুশ্চিন্তার জালে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। খাওয়ার পর স্বামীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, স্বামীর নাসিকা ধ্বনি শোনার পর তিনি নিশ্চিন্ত মনে একতলার বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেন। এই সময়টা তাঁর নিজস্ব, তাঁর নিজস্ব ভাবনার সময়। এই সময় তিনি নিজের মনে হিসাব করতে বসেন। বিচার করতে বসেন তাঁর জীবনের ফেলে আসা দিনগুলির ভুলভ্রান্তি, ব্যর্থতা আর সাফল্য।

    আজ দুপুরে মৃণালিনী চেয়ারে বসে তাকিয়ে ছিলেন, সামনের পেয়ারা গাছটির দিকে। এ গাছটি অনেকদিনের পুরোনো, বিয়ের পর, এ বাড়িতে এসে থেকে তিনি দেখছেন। এই গাছটির ওপর সারাটা দুপুর দৌরাত্ম্য করত, তাঁর ননদ সৌদামিনী। কাঁচা থেকে ডাঁশা অব্দি কোন পেয়ারাই মেয়েটা ছাড়ত না। পেয়ারার টুকরোয় নুন লংকারগুঁড়ো মাখিয়ে নিয়ে আসত, বলত “বৌদিমণি খাবে? দারুণ খেতে”। মৃণালিনী কখনো এক আধ টুকরো চিবিয়ে দেখতেন, কষ্টা, তেঁতো। বলতেন, “আজ নয় কাল দুদিন বাদে তোমার বিয়ে হবে, বিয়ের পরেও কি এমন করবে নাকি, ঠাকুরঝি? এবার ছেলেমানুষী ছেড়ে, একটু বড়ো হও”। আজ হঠাৎ ঠাকুরঝির কথা খুব মনে পড়ছে মৃণালিনীর। কেন কে জানে? কেমন আছে মেয়েটা, কিভাবে আছে মেয়েটা, কে জানে? অবিশ্যি তিনি যে জানতে খুব আগ্রহী তাও নয়। ছোটবোনের মতো এই ননদিনী তাঁর খুব নেওটা ছিল, সারাদিন কাজে কর্মে পায়ে পায়ে ঘুরত মেয়েটা। মৃণালিনীও খুবই স্নেহ করতেন এবং প্রশ্রয়ও দিতেন মেয়েটিকে।

    কিন্তু আজ মৃণালিনী বোঝেন জীবনে কিছু কিছু ভালোবাসা, মায়া, স্নেহমাখা স্মৃতি, আলমারিতে ভাঁজ করে রাখা দামী শাড়ির মতো। তামাক-পাতা এবং ন্যাপথালিনের ঝাঁজে চোখের আড়ালে সংরক্ষণ করা চলে। কিন্তু বাইরে সবার চোখের সামনে মেলে ধরা যায় না, প্রাণে ধরে ব্যবহার তো করাই চলে না। কখনো সখনো, ঘুঘু-ডাকা অলস মধ্যাহ্নে আলমারি খুলে সে শাড়িতে একলা নির্জন ঘরে বসে হাত বোলানো চলে। কিন্তু কোনভাবেই আর ফিরিয়ে আনা যায় না, আটপৌরে জীবনের মাঝখানটিতে।       

    এ গ্রামে ডাক আসে এই দুপুরবেলাতেই। আজ তেওয়ারিজি হাতে একটা পোস্টকার্ড এনে মৃণালিনীর হাতে দিয়ে বলল, “মাইজি, এক চিট্‌ঠি আয়ি”। হাত বাড়িয়ে মৃণালিনী চিঠিটা নিতে নিতে ভাবলেন, খোকা তো সবে কাল কলকাতায় গেল, আজ তার চিঠি আসার তো কথা নয়। পোস্টকার্ডের উল্টোপিঠের শেষে দেখলেন সৌদামিনীর নাম। তাঁর ভুরু কুঁচকে উঠল, তিনি চিঠিটা পড়তে শুরু করার আগে তিওয়ারিজিকে ডাকলেন, “তিওয়ারিজি”?

    তিওয়ারিজি চিঠিটা দিয়ে আবার গেটের দিকে যাচ্ছিল। মাইজির ডাকে ফিরে এসে বলল, “জি, মাইজি”।
    “আজ থেকে এ বাড়িতে যা চিঠি আসবে, সব আমার হাতেই দিয়ে যাবেন। মনে থাকবে তিওয়ারিজি”?
    “জি মাইজি”।
    “ঠিক আছে যান, গেটে যান”।

    চিঠিটা পড়তে লাগলেন মৃণালিনী।

    শ্রীচরণকমলেষু দাদা,
    আপনি ও বৌদিমণি আমার প্রণাম নেবেন। খোকা ও বৌমাকে আমার আশীর্বাদ দেবেন। আশা করি ভগবানের কৃপায় আপনারা সকলে কুশলে আছেন। প্রায় চার বছর হল আমি কাশীতে এসেছি, এখানে থাকতে আমার আর ভালো লাগছে না। দাদা, আপনার দুটি পায়ে পড়ি। বৌদিমণিকে বলে আমাকে অন্ততঃ মাস খানেকের জন্যে হলেও গ্রামে ফিরিয়ে নিন। আপনাদের সকলকে চোখে দেখার জন্যে আমার মন বড়োই আকুল হয়। আপনার পাঠানো টাকাতে সংকুলান হয় না। বাড়িওয়ালা বলছিল, গত পাঁচ-ছমাস আপনি নাকি কোন টাকা পাঠান নি। দাদা, আপনার ও বৌদিমণির চরণে যা অপরাধ করেছি তা ক্ষমা করে, এই হতভাগী বোনকে ফিরিয়ে নিন। আপনি ও বৌদিমণি আমার প্রণাম নেবেন। আপনার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
    ইতি আপনার একান্ত অভাগী
    সৌদামিনী

    চিঠিটা পরপর দুবার পড়লেন মৃণালিনী। তারপর চিঠিটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে এলেন রান্নাঘরের উনুনে। রান্নাঘরের এই উনুনে গুঁড়োকয়লা দিয়ে ঢিমে আঁচ রাখা থাকে। তার ওপর বসানো থাকে লোহার কড়াই ভর্তি দুধ। সময়ে অসময়ে দরকার পড়লে এই উনুনের আগুন কাজে লাগে। উনুনের ঢিমে আঁচে জ্বলে উঠল চিঠির ছেঁড়া টুকরোগুলো। মৃণালিনীর যাবতীয় অমঙ্গলের আশঙ্কা এবং সুদূর কাশীতে নির্বাসনে থাকা ঠাকুরঝির বুকের অনন্ত জ্বালা, ছাই হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।

    ১৪

    বিশেষ ওই গ্রাম চেনে। বিশেষ শশাঙ্কর নাম শুনেছে। প্রতিবার দুর্গাপুজোর সময় বিশেষরা ওই কুসুমপুরের বাড়িতে যায়। কুসুমপুরের বাড়িতে এখন থাকেন বৃদ্ধ মৃগাঙ্ক এবং তাঁর স্ত্রী আশালতা। সে শুনেছিল তাদের বাড়িতে এই দুর্গাপুজো চালু হয়েছিল প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। মৃগাঙ্কর বাবা শশাঙ্কর মৃত্যুর এক বছর পর, শশাঙ্কর স্ত্রী মৃণালিনীর ইচ্ছায়। বিশেষের বাবা সুদীপ্ত তখন বছর ছয়-সাতের বালক মাত্র। বহুদিনের পুরোনো সাবেকি পুজোর সুনামের জন্যে, কুসুমপুর গ্রামে তাদের বাড়ির এই পুজোয় অনেকেই আসে। অনেক আত্মীয়, দূর সম্পর্কের বহু পরিজন। তাদের বাড়ির এই প্রাচীন দুর্গাপুজোর কথা বন্ধুবান্ধবের কাছে খুব গর্ব করেই বলে থাকেন তার বাবা। নিজেদের সেই ঐতিহ্যের কথা বিশেষ নিজেও বন্ধুবান্ধবদের বলে থাকে। বাবার অনেক বন্ধু সপরিবারে গিয়ে পুজোর কটা দিন মহানন্দে কাটিয়ে এসেছেন। পুকুরের টাটকা মাছ, গ্রামের কচি ও নধর পাঁঠার স্বাদে বেড়ে উঠেছে পুজোর আমোদ।

    বারান্দা থেকে নেমে বাবাকে ফোন করল, বিশেষ, রিং হচ্ছে। বাবা কথা বললেন, “তুই এখন কোথায়? বৃন্দাবন ঘোরা হয়ে গেল”?
    “বাবা, সদু, সৌদামিনী বলে কাউকে চেন”?
    “সৌদামিনী? শরৎচাটুজ্জে কি রবিঠাকুরের কোন চরিত্র মনে হচ্ছে, কেন বলতো? তুই হঠাৎ সৌদামিনী পেলি কোথায়? শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র ব্রজধামে কোন সৌদামিনী তোর মনে বিদ্যুৎ হানল, রে!”
    “ইয়ার্কি নয়, বাবা। পেয়েছি, হীরালালজির ধর্মশালায়। এ কোন উপন্যাসের চরিত্র নয় বাবা, আমাদের পরিবারেরই জনৈক পার্শ্বচরিত্র। আমার আন্দাজে একশর কাছাকাছি বয়সের এক বুড়ি”।
    “কি বলছিস, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের পরিবারে সৌদামিনী বলে কাউকে আমি চিনি না। তোকে মিথ্যে কথা বলেছে”।
    “মিথ্যে হতে পারে না, বাবা। সৌদামিনী তোমার দাদু শশাঙ্কর বোন”।
    “দাঁড়া, দাঁড়া। মনে পড়েছে। আমার দাদুর এক বিধবা বোনের কথা, বাবা-মার কাছে দু একবার শুনেছি। অল্প বয়সের বিধবা, কাশীতে থাকতেন”।
    “থাকতেন বলো না, বাবা। আমাদের পরিবার তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তিনি থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি এখন বৃন্দাবনে”।
    “কিন্তু তিনি বৃন্দাবনে যাবেন কেন?”
    “সে কথা আমাদের পরিবার তো কোনদিন জানতে চায়নি বাবা?”
    “বুঝতে পারছি তুই খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিস। কিন্তু নামটা তো আমি জানি না রে, অমু। বাবাকে কিংবা মাকে জিজ্ঞাসা করলে পেয়ে যাবো”।
    “আমি পেয়ে গেছি বাবা, আমি ওঁনাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি, নোয়দায়”।
    “পাগলামি করিস না, অমু। কোথাকার কে বুড়ি, জানা নেই, শোনা নেই। বিপদে পড়বি”।
    “আমাদের পরিবার; তোমরা, তোমার বাবা-মা, তোমার দাদু–ঠাকুমা, ওঁনাকে বহু বছর ধরে বহু বিপদে ফেলেছেন, বাবা। সারাটা জীবন উনি বিপদের মধ্যেই রয়েছেন”।
    “অমু। অমু আমার কথা শোন, হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিস না। একটু ভাবতে দে, তোর মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দে”।
    “না বাবা, এ সিদ্ধান্ত একান্তই আমার। তুমি আমাকে সনাতন ভারতের ঐতিহ্যের সন্ধান করতে বলো, বাবা। সে ঐতিহ্য খুঁজতে এসে আমি জেনেছি আমাদের অপরাধের ঐতিহ্যের কথাও। দাদু-ঠাকুমা সব কিছু জেনে-বুঝেও কোন সিদ্ধান্ত নেননি, এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তোমরা শুনেছিলে কিন্তু জানার চেষ্টাও করনি। অতএব এ প্রায়শ্চিত্ত আমার এবং সে সিদ্ধান্ত আমারই। তোমরা সাপোর্ট না করলেও কিছু যাবে আসবে না। তোমাকে জানানো উচিৎ, জানালাম”।

    ফোনটা কেটে দিল, বিশেষ। সৌদামিনী একইভাবে বসে আছেন বারান্দায়। ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। বাবার সঙ্গে বিশেষের কথায় তিনি কি বুঝলেন কিছু? বিশেষ বুঝতে পারল না। সে সৌদামিনীর পাশে আবার গিয়ে বসল, “বুড়িমা, আমার সঙ্গে যাবে”? সৌদামিনী মুখ ঘুরিয়ে বিশেষের দিকে তাকালেন, জিজ্ঞাসা করলেন, “কোতাআআয়?”
    “আমার ফ্ল্যাটে, আমার বাড়িতে?” সৌদামিনী ভুরু কুঁচকে তাকালেন, তাঁর চোখে কি সন্দেহের ছায়া? বললেন, “কেন?”
    “এমনি, থাকবে আমার সঙ্গে”।
    “আমার তো আর সে বয়েস নেই, বাছা। গতরও নেই। ঝি-গিরি করার ক্ষমতাও আর নেই। কেন নিয়ে যাবি আমাকে”?
    “বুড়িমা, আমি অমু। আমি বিশেষ। তোমার ভাইপো মৃগাঙ্ককে মনে পড়ে? আমি তার নাতি”।
    “মৃগাঙ্ক, খোকা - লতাবৌমা - তুই তাদের নাতি? সত্যি বলছিস”?
    সৌদামিনী তার শীর্ণ ডানহাত বাড়িয়ে বিশেষের মুখে, বিশেষের চুলে একবার হাত বুলিয়ে, হাত সরিয়ে নিলেন। তাঁর শুকনো চোখের কোলে জমে উঠল এক বিন্দু জল। তাঁর সমস্ত শরীর, হাত-পা কাঁপতে লাগল থরথর করে।
    বিশেষ বলল, “বুড়িমা, যাবে তো, আমার সঙ্গে”?
    “তোর বাড়িতে দাদা আছে? বৌদিমণি আছে?”
    “না, তাঁরা তো কবেই মারা গেছেন”।
    “মারা গেছে”? সৌদামিনী কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলেন, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লেন, “না”।
    “কেন যাবে না, বুড়িমা? চলো না, বুড়িমা, আমার বাড়িতে চলো। তোমাকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো আমাদের গ্রামের বাড়িতে”, বিশেষের স্বরে আন্তরিক আকুতি।
    বুড়ি তবু ঘাড় নাড়ল, “না”।
    “অভিমান? অভিমান করছ, বুড়িমা? কার ওপর? এক ভাগ্যহীনা মেয়েকে যে পরিবার তার প্রাপ্য মান দেয়নি, তাদের ওপরে অভিমান? এত বছর পরেও? কেন?” সৌদামিনী বিশেষের মুখের দিকে তাকিয়ে, বিশেষের চোখে চোখ রাখলেন।
    বিশেষ আবার বলল, “আমি সেই পরিবারেরই একজন, বুড়িমা। এত বছর বাদে তোমাকে চিনতে পেরেছি। তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি, আমাদের পরিবারে, আমাদের বাড়িতে, আমাদের গ্রামে...তবুও আসবে না তুমি?”

    বুড়ি দুই চোখ নামিয়ে শীর্ণ দুই হাতে বিশেষের দুই হাত ধরে ঘাড় নাড়লেন, অস্ফুট স্বরে বললেন, “যাআআআবো”।

    আশ্চর্য এক অনুভূতিতে বিশেষ নির্বাক হয়ে রইল বহুক্ষণ। এই অনুভূতি সে কীভাবে প্রকাশ করবে? সৌদামিনীর দুই হাত সে চেপে ধরল নিজের দুই হাতের মাঝখানে। স্পর্শ দিয়ে কি না বলা আবেগ বোঝানো যায়? বিশেষ জানত না। এখন কি সে জেনেছে? শান্ত স্বরে বিশেষ জিজ্ঞাসা করল, “বেরোনোর আগে একটু ভাত খাবে না, বুড়িমা”?
    সৌদামিনীর মুখ তুলে তাকালেন। প্রসন্ন মুখে বললেন, “খাআআবো। তুই যাআআআ খাওয়াবি, খাআআবো”।

    ধর্মশালা থেকে রাস্তায় বেরোনোর মুখে হীরালালজীর সঙ্গে বিশেষের দেখা হল। বিশেষ সব কথা খুলে বলল হীরালালজীকে। সব শুনে হীরালালজী বিশেষের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “বাবাকে বলেছিস”?
    “বলেছি”।
    “কী বলল। অনুমতি দিয়েছে”?
    “বোধহয় না। আমি কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, বুড়িমাকে আমি নিয়েই যাবো, আংকল। বাবা বলুন আর নাই বলুন”।
    “আমার ধারণা তোর বাবা মেনে নেবে, কিন্তু তোর মা”?
    “জানিনা, আংকল”। হীরালালজি কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, “কিসে যাবি? বাসে তো বুড়ি যেতে পারবে না, মরেই যাবে”।
    এ কথাটা বিশেষের মাথায় আসেনি। অসহায় স্বরে বলল, “সত্যিই তো, তাহলে”?
    “গাড়িতে নিয়ে যা, আমার চেনা গাড়িকে বলে দিচ্ছি”।
    “বাঃ, তাহলে তো খুব ভালো হয়”। বিশেষ হীরালালজির হাতটা দুই মুঠিতে চেপে ধরল।
    “টাকা পয়সা কিছু লাগবে? দেবো”?
    “না, না টাকা পয়সা হয়ে যাবে। এটিএম থেকে তুলে নিতে পারবো। ও নিয়ে ভাববেন না”।
    “ঠিক তো? গাড়ি বলে দিচ্ছি, এসে যাবে আধাঘন্টার মধ্যে। তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস”?
    “বুড়িমার জন্যে ভাত কিনে আনতে”।
    হীরালালজী বিশেষের এ কথায় হাসলেন, বললেন, “বেশ, খুব ভালো। ওই সঙ্গে দুটো সাদা থান শাড়ি, শায়া, ব্লাউসও কিনে আনিস। তুই কি তোর ফ্ল্যাটে ওই ছেঁড়া-ময়লা কাপড়ে মোড়া বুড়িকে নিয়ে তুলবি? একদমই না। মনে রাখিস, তুই ওঁকে বরণ করছিস। তার জন্যে কিছুটা পরিচ্ছন্ন সাজসজ্জা তো ওঁনার পাওনা হয়, বেটা। যা বেটা, ঘুরে আয়। ভাবিস না, সব ভালোই হবে। সবার মঙ্গলই হবে – সবার। তোর পরিবারের সকলের – যাঁরা জীবিত – যাঁরা এখন পরলোকে – সবার”।

    দু সেট শাড়ি, শায়া, ব্লাউজ আর বুড়িমার জন্যে ভাত তরকারি কিনে বিশেষ ফিরে এল। দেখল রামু বসে আছে বুড়িমার সামনে। বুঝতে পারল হীরালালজি পাঠিয়েছেন। সৌদামিনীর সামনে গতকাল রাত্রির মতো প্যাকেট খুলে সাজিয়ে রাখল ভাত, ডাল, তরকারি, ভাজি। আজ আর কোন দ্বিধা না করে, কালকের মতোই ভাতের সঙ্গে সব কিছু মেখে বিশেষ খাইয়ে দিল সৌদামিনীকে। রামু বসে বসে দেখল। কিছু বলল না। খাওয়ার পর, বিশেষ সৌদামিনীকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে গেল। সৌদামিনীকে বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “বুড়িমা, শাড়ি পরতে পারবে তো”?
    “নোওওতুন? পাআআআরি”। সৌদামিনীর হাতে নতুন শাড়ি, শায়া, ব্লাউসের একটা সেট তুলে দিয়ে বিশেষ বলল, “তাহলে এগুলো চটপট পরে ফেল দেখি”।
    বিশেষের এই কথায় সৌদামিনী এবার একটু ঝাঁজিয়ে উঠলেন, বললেন, “বাআআইরে যা, মুখপোড়া। তোর সামনে আমি কাপড় ছাড়বো নাকি রে, ছোঁড়া”?

    বিশেষ হাসতে হাসতে ঘরের বাইরে এসে দরজাটা ভেজিয়ে দিল। তার দুই চোখ ভরে উঠল জলে। সে স্পষ্ট দেখতে পেল, এই বুড়ির নিষ্প্রাণ জীবনেও জেগে উঠছে লজ্জা, স্নেহ, মায়া, মমতা। আশ্চর্য এক অনুভূতিতে সে আবার আচ্ছন্ন হতে থাকল।   উঠোনের পেয়ারা গাছটার দিকে তাকিয়ে সে মনে করার চেষ্টা করল, কুসুমপুরের বাড়িতে কোন পেয়ারাগাছ রয়েছে কিনা। মনে করতে পারল না। এই সময় ফোন এল, পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল, বাবা।
    “বলো”।
    “তুই কি বুড়িকে তোর ওখানে আজই নিয়ে যাচ্ছিস, অমু?”
    “হ্যাঁ, বাবা”।
    “আরেকটা দিন ওয়েট করা যেত না? আমি আর তোর মা ভাবছিলাম ভোরের ফ্লাইটে দিল্লি পৌঁছে, কাল বৃন্দাবন যাবো। তারপর না হয় ডিসিসানটা ফাইন্যাল করা যেত”।
    “ডিসিসান ফাইনাল হয়ে গেছে, বাবা। হীরালালজি গাড়ি বলে দিয়েছেন। আমি মিনিট পনেরর মধ্যেই বেড়িয়ে পড়তে চাই”।
    “বড্ড তাড়াহুড়ো করলি, অমু। আচ্ছা শোন। আমি বাবাকে ফোন করেছিলাম, মাও পাশেই ছিলেন। বাবার ওই পিসিমার নাম সৌদামিনীই”।
    “আমি জানি, বাবা”।
    “মা তো কেঁদেই ফেললেন, তাঁর পিস্‌শাশুড়ির কথা শুনে। তোকে যে কী আশীর্বাদ করলেন”।  
    “এরপরেও তুমি ডিসিসানের কথা বলছো, বাবা?”
    “ঠিক তা নয়, আসলে তোর মা বলছিল, অমুটা কী করতে কী করে ফেলবে”।
    “মাকে চাপ নিতে মানা করো, বাবা। আমি এখন যথেষ্ট বড়ো হয়ে উঠেছি”।
    “আচ্ছা আচ্ছা, সে ঠিক আছে। শোন, আমরা কাল ভোরের ফ্লাইটে দিল্লি আসছি। তোর ফ্ল্যাটে আসবো”।
    “এসো, বাবা। এক মিনিট। এক মিনিট হোল্ড করো, বাবা”।
    এইসময় ঘরের দরজা খুলে সৌদামিনী বেরিয়ে এলেন বারান্দায়, একলাই হেঁটে, হেঁটে। কুঁজো হয়ে, দুই হাঁটুতে ভর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে। পরনে তাঁর ধবধবে সাদা থান শাড়ি। বগলে কাপড়ে বাঁধা একটা ছোট্ট পুঁটলি। রামু ধরে ধরে বসিয়ে দিল, বারান্দার মেঝেতে। বিশেষ অবাক হয়ে দেখল বুড়িমার মুখের হাসি।
    “হ্যাঁ, বাবা। তোমার পিসিঠাকুমার ছবি দেখবে”?
    “আমি তো কোনদিন দেখিই নি, চিনতে পারবো নাকি?”
    “চেনার কি খুব দরকার, বাবা? ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, পাসপোর্ট কিচ্ছু নেই। কি করে চিনবে? আমাদের ক্ষেত্রে ওগুলো কিন্তু খুব জরুরি নয়, বাবা। হোয়াটস্‌অ্যাপে ফটো আপলোড করছি, দেখে নিও। রাখছি এখন”।

    কল এণ্ড করে, বিশেষ হোয়াট্‌স্‌অ্যাপ খুলল। সৌদামিনীর লাজুক হাসিমাখা ফোগলা মুখের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিল বাবার মেসেজে।

    এই সময় হীরালালজি বেরিয়ে এলেন বারান্দায়। সৌদামিনীকে দেখলেন, নতুন চোখে। তাঁর চোখেও খুশির হাসি। তিনি বিশেষকে বললেন, “কেয়া বেটা, রেডি?”
    “একদম রেডি। আপনার গাড়ি কদ্দূর?”।
    “এসে যাবে এখনি, বাস দো মিনিট”।
    “ওকে। আংকল। বুড়িমা তোমার আর কিছু নেবার নেই তো”? সৌদামিনী ঘাড় নেড়ে বলল, না।
    “তুই কিছু খেয়েছিস? খাসনি তো? কিছু খেয়ে যা। বাড়ি পৌঁছতে ঘন্টা চারেক তো লাগবেই”।
    “আজ নয় আংকল, ফির কভি”।
    “ঠিক হ্যায়, বেটা। যে ঝড় এখন তোর মনের মধ্যে বইছে, টের পাচ্ছি বেশ। একদিনের উপোসে কিছু যাবে আসবে না”।

    কথা বলতে বলতে গাড়ি ঢুকে এল, ভিতরে। হীরালালজির চেনা ড্রাইভার, ভেতরে ঘোরানো যাবে না, ব্যাক করেই ঢোকালো।
    উপরের ঘর থেকে নিজের ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে নামল বিশেষ। তারপর সৌদামিনীকে তুলে দিল গাড়িতে। নিজে গাড়িতে ওঠার আগে হীরালালজিকে প্রণাম করতে গেল। হীরালালজি বিশেষের হাত দুটো ধরে, বুকে টেনে নিলেন প্রথম দিনের মতো। পিঠে চাপড় মেরে বললেন, “দিল জিত লিয়া, বেটা।”

    এই সময়ে বিশেষের ফোন বেজে উঠল আবার, বাবা। “অমু, আমাদের প্রোগামটা একটু বদল হচ্ছে। বাবা-মা আজ সন্ধেতেই কলকাতা আসছেন। কাল ওঁরা দুজনেই আমাদের সঙ্গে তোর ওখানে যেতে চান। বাবা-মার পক্ষে ভোরের ফ্লাইট ধরা শক্ত, আমরা একটু বেলার ফ্লাইটে দিল্লি যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে তোর ফ্ল্যাটে আমাদের পৌঁছতে দেড়টা-দুটো হয়ে যাবে…।
    বিশেষ হাসল, “ঠিক আছে, এস। সাবধানে এস। ঠাম্মি-দাদুর যেন কোন অসুবিধে না হয়। আমরা আগামীকাল এক সঙ্গে লাঞ্চ করব বাবা – চার প্রজন্ম একসঙ্গে…!” ও পাশ থেকে কোন উত্তর এল না। ফোনটা কি কেটে গেল? কান থেকে সরিয়ে ফোনটা দেখল… না, কানেকশন চালু…বিশেষ বলল, “বাবা? হ্যালো, বাবা?”
    “কাল দেখা হবে, এখন রাখছি”। ধরাধরা ভারি কণ্ঠে বাবা উত্তর দিলেন। বাবা কি কাঁদছেন?
         
    ফোন অফ করে বিশেষ হীরালালজির দিকে তাকাল, একটু হাসল। বলল, “বাবা। খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছেন। বাবা-মা কাল সকালের ফ্লাইটে আসছেন, সঙ্গে আসছেন আমার দাদু ও ঠাম্মি, মানে ঠাকুমা। হয়তো এখানেও একবার আসবেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে”।
    হীরালালজি হাসলেন, বললেন “আসতে দে। আমি থাকব।”
    বিশেষ বলল, “চলি?”
    “উঁহু, আসি বলতে হয়”।

    গাড়ি উঠোন ছেড়ে বেরিয়ে এল। প্রায়  অনন্ত এক সময়ের তরণী বেয়ে সৌদামিনী আজ ঘরে ফিরছে।

    -০০-
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৯৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৩527441
  • একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন
  • Kishore Ghosal | ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১২527453
  • ঠিকই বলেছেন। আরেকটু টানাই যেত। পরেরদিন পারিবারিক সম্মিলনের একটা চিত্র তুলে ধরা যেত। ধরা যেত গ্রামে ফিরে যাওয়া সৌদামিনীর আবেগকে...কিন্তু নাঃ - এইখানেই শেষ করলাম।  শেষ হইয়াও যেন শেষ হইল না... এমন অনুভবটাই থাক না। 
     
    প্রথম থেকে সঙ্গে থাকার জন্যে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই আপনার প্রতিটা মন্তব্যের জন্যেও। 
     
  • Ranjan Roy | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫০527654
  • এক্ষুন পড়ে শেষ করলাম,  কিশোর ভাই।
    একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছি।
    বইমেলায় দেখা হবে?
  • Kishore Ghosal | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০২527671
  • আপনাকে ইমোশনাল করিয়ে দিতে পেরেছি - এর থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে? 
    অবশ্যই দেখা করব - গতবার পাকে চক্রে হয়নি। কবে কবে মেলায় থাকবেন বলবেন।  
  • Ranjan Roy | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২৪527672
  • শনি, রবি, বৃহস্পতিবার বাদ।
    বাকি চারদিন 1টা থেকে সাড়ে তিনটে অবদি।
    সাক্ষাতে সব বলষ।
  • Kishore Ghosal | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৮527676
  • তাহলে প্রথম সাক্ষাৎটা ২৩.০১-এ হোক মঙ্গলবার। 
  • Ranjan Roy | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৯527689
  • ও কৈ।
  • Kishore Ghosal | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০৬527723
  • রঞ্জনদা আপনার "মেসেঞ্জারে" একটা মেসেজ পাঠিয়েছি, সময় করে দেখে নেবেন।
  • Mira Bijuli | ০৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪৭534105
  • পারিবারিক পরিস্থিতি, সমাজের অদ্ভুত ধারণা, অবহেলা, তার পরিণতি হিসেবে একটা মানুষের আত্মবিসর্জন - প্রেক্ষাপট টা darun ছিল। ২টি ভিন্ন সময়ের ঘটনাকে এক সুতোয় গাঁথা এবং শেষে একটা সুন্দর পরিসমাপ্তিতে একটা পরম তৃপ্তি অনুভব হয়। সমাজের একটা অন্ধকার দিকের পাশে উদার মনের একটা যুগপৎ অধিষ্ঠান। 
    পৃথিবী একটা গোল বৃত্ত এবং তার পূর্বপুরুষের কোনো এক কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত তাকেই করতে হয় সেটাও আর এক বার প্রমাণিত হলো। তবে জীবন টা হয়তো এতটাও সহজ না। অনেক জটিলতা, পঙ্কিলতার মধ্যেও নিষ্পাপ সুন্দর জীবন গুলো কখনও ভালো মানুষের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে যায় আমাদের স্মৃতিপটে। 
  • Kishore Ghosal | ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৩:২০534108
  • বড়ো সুন্দর মন্তব্য করলেন।  "তবে জীবনটা হয়তো এতটাও সহজ না" - সহজ তো নয়ই। যে ঘটনা থেকে গল্পটি মাথায় এসেছিল - সেখানে ছেলেটি বিধবা বুড়িকে বাড়ি ফেরাতে পারেনি - তার পরিবারের তীব্র আপত্তিতে।  ছেলেটি লড়েছিল - কিন্তু অতীতের কলঙ্ক কীভাবে স্বীকার করবে তার পরিবার।
  • Kuntala | ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫১534120
  • এই যে বর্ধমানের ছেলে বললেন, তাতেই বেশ খুশি হয়ে গেলাম।
    বেশ লাগলো গল্পটি। হীরালালজির মুখে অত লেকচার না বসালেও চলতো যদিও। তবে বৈধব্য নিয়ে আমাদের সমাজের অসভ্যতা যত তুলে ধরা যায় ততই ভালো। 
    শুধু 'বেরিয়ে' আর 'পড়ে' নিয়ে একটু ভাবতে পারলে ভালো হয়। 'কাপড় পরে বেড়াতে যাবো বলে বেরিয়ে পড়লাম' - এটা মনে রাখলেই চলবে। 
    সরি, আবার মাস্টারনীর মতো বললাম, কিছু মনে করবেন না (যদিও লাইনটা মনে রাখলে ভালো হয়)। এখুনি কেউ হয়তো টুক করে একটুখানি কাদা ছুঁড়ে দেবেন।
  • Mira Bijuli | ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫৬534121
  • হ্যাঁ সেটাই, বাস্তব জীবনে এরকম happy ending খুব একটা চোখে পড়ে না। *"সেখানে ছেলেটি বিধবা বুড়িকে বাড়ি ফেরাতে পারেনি - তার পরিবারের তীব্র আপত্তিতে।"* উপন্যাস টা পড়তে গিয়েও এরকমই  আশঙ্কা হয়েছিল। পরিবার বা সমাজ মেনে না নেওয়াটাই যেন স্বাভাবিক, এটাই যেন রীতি চলে আসছে কোন সুদূর সময় থেকে স্রোতের  ধারার মত। তবু আমাদের সুপ্ত ইচ্ছা থেকে যায় ভালো কিছু হোক। আমরা আশা করে থাকি এমন একটা কিছু ঘটুক যেটা আমরা বাস্তবে ঘটতে দেখিনা বা ঘটাতে পারিনা। তাই কল্পনার জাল বুনে সাহিত্যে সহজেই ঘটিয়ে ফেলতে চাওয়া হয় সুন্দর পরিণতি। তাতেই হয়তো একটু পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়। যার ফলশ্রুতি এই উপন্যাসের সমাপ্তি। 
     
    "কিন্তু অতীতের কলঙ্ক কীভাবে স্বীকার করবে তার পরিবার।" আমাদের সমস্যা টা ওখানেই। দোষ করেও দোষ স্বীকার করার বদলে অন্য কারো ঘাড়ে চাপিয়ে শান্তি পাই। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও আধুনিকতার মোড়কে নারী স্বাধীনতা, সাম্যতা, সহমর্মিতা - এই শব্দ গুলো যেন অধরা স্বপ্ন। বাস্তবে এর প্রয়োগ খুব স্বল্প, হয়তো মাইকের গনগনে ভাষায় সীমাবদ্ধ । বর্তমান সমাজেও এই কাহিনীর যথেষ্ট পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায় - সেটা তো ব্যাং এর ছাতার মত গজিয়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রম প্রমাণ দেয়। 
     
    যাই হোক আমার কথা গুলো হয়তো খুব অসংলগ্ন মনে হতে পারে, কিন্তু আবেগমথিত চিরবস্তব।
  • Kishore Ghosal | ০৪ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩১534141
  • @ কুন্তলাদি-, একদমই মনে করলাম না -, বরং মনে রাখব -, ছাত্র হিসেব মোটেই মনোযোগী ছিলাম না -, মনে পড়ে গেল মায়ের কাছে কানমলা খাওয়া।
     
    @ মিরা -, ঠিকই বলেছেন -, আজকের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুগে প্রতিদিন যে বীভৎস কাণ্ড ঘটে চলেছে দেশেবিদেশে় -, সেখানে কিছুক্ষণ অন্ততঃ কল্প-,দুনিয়ায় নিজেদের মজিয়ে রাখতে চাওয়া। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন