#পুস্তকালোচনা — #তিন_বাহু_দশ_মুখ — #অনির্বাণ_মুখার্জী
বই = তিন বাহু দশ মুখ
লেখক = অনির্বাণ মুখার্জী
প্রকাশক = BoiChoi Publication
পৃষ্ঠা সংখ্যা = ২৮৮
মুদ্রিত মূল্য = ৩৩৩ টাকা (চতুর্থ সংস্করণ)
————————————————————————————————————————
আপনি কি ইতিহাস - প্রত্নতত্ত্ব - জিনতত্ত্ব - হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অল্প জেনেই নিজেকে বিশাল বোদ্ধা মনে করছেন?
আপনি কি গাঁজাখুরি তথ্য - যুক্তির ভক্ত?
তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন অনির্বাণ মুখার্জীর লেখা "তিন বাহু দশ মুখ"।
খিল্লিগুলো দেখে নিই চলুন। আর Spoiler নিয়ে ভুলভাল হ্যাজাবেন না তো, হরধনু কে ভেঙেছিল সেটা না জানিয়ে তো আর রামায়ণ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা যায় না!
১) পুরো বইটা জুড়ে মাঝে মাঝে বাংলাভাষার শ্রাদ্ধ করা হয়েছে। হয় "বাইশে" লিখুন, না হয় "২২-এ" লিখুন। "২২শে" টা পড়তে গেলে "বাইশেশে" ধরে পড়তে হবে।
এবং প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে যেখানেই তারিখ দেওয়া হয়েছে সেখানেই এই গোলমালটা দেখতে পাবেন। (শেষে আরো কয়েকটি উদাহরণ দেবো!)
২) "২১-এ নভেম্বর, ২০১০" অধ্যায়ে দেখি একটি চরিত্র দাবী করছেন যে "তৃতীয় নয়ন" বস্তুটি এতো দামী যে তার জন্য একটা কেন, একশতটাও খুন করা যায়।
এদিকে কাজের সময় তাদের এইরকম তেমন কিছুই করতে দেখা যায় না, একটা খুনও না।
তাহলে খামোখা উত্তেজনা বাড়াতে কাহিনীতে এতো বাতেলা মারা হলো নাকি? আমি তো ভাবলাম যে এরপরে মার - মার - কাট - কাট ব্যাপার হবে, পৃথিবীর জনসংখ্যা কিছুটা হলেও কমে যাবে, কোথায় কী! পর্বতের মূষিকপ্রসব হলো আরকি।
৩) "২১-এ নভেম্বর, ২০১১" অধ্যায়ে দুটি চরিত্র একে অপরের সাথে কথা বলছেন, একজন অন্যজনের নাম ডেকে কথা বললেও দ্বিতীয়জন কিন্তু প্রথমজনের নাম বলছেন না।
প্রথম চরিত্রের নাম লর্ড ভোলডেমর্ট নাকি ভাই যে তার নাম নেওয়া যাবে না?
হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি যে রহস্য জিইয়ে রাখতে এইভাবে নামটা বলা হচ্ছে না। কিন্তু সেটাও ছদ্মনামের সাহায্য সহজেই আড়াল করা যেতো কাকা!
৪) সেই "২১-এ নভেম্বর, ২০১১" অধ্যায়েই পাথরের একটা খন্ডের ছাপ নিয়ে মোম কাগজে সেই ভোলডেমর্ট বাবু তুলে রাখলেন। এটা কী স্মরণজিৎ বাবুকে দেওয়া লেখকের কোনো শ্রাদ্ধাঞ্জলি থুড়ি শ্রদ্ধাঞ্জলি নাকি?
যেখানে ক্যামেরার মতো যন্ত্রে ঐ প্রস্তরখন্ডের গায়ে খোদাই করা সমস্ত বিবরণ record হয়ে যাবে সেখানে মোম কাগজ দিয়ে ঐ বিবরণ নকল করার কী প্রয়োজন ছিল মামা?
৫) এছাড়া ঐ পাথরের খন্ডের মাপ "একফুট বাই একফুট দুই ইঞ্চির মতো"। প্রায় বর্গাকার ধরনের এইরকম মোম-কাগজই যে লাগবে সেটা ভোলডুদা কীভাবে জানলেন? টেলিপ্যাথি নাকি?
হ্যাঁ, আপনারা বলতেই পারেন যে আগে টেলিফোনে উনি সেটা জেনেছিলেন। কিন্তু বইতে সেটা কোথাও স্পষ্টভাবে লেখা নেই। এবং এই বিষয়েই Deadpool সিনেমায় Deadpool বলেছেন - "Well, that's just lazy writing!".
৬) আবার ঐ অধ্যায়ে, বিদেশী রডরিগেজ ইংরেজীতে কথা বললেও তার সাথে ভোলডেমর্টদাদা কখনো ইংরেজি আবার কখনো বাংলাতে কথা বলছেন। তার বলা বাংলা শব্দের নমুনা - সঙ্কেত, অর্থ, প্রাচীন, লিপি, বরাহাবতার, কোঁকড়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুরোটা বাংলা বা ইংরেজীতেই বললে কী ক্ষতি হতো? লিখছেন তো বাংলা হরফেই। এই জায়গাটা যথেষ্ট উদ্ভট লেগেছে।
৭) "২০-এ ডিসেম্বর, ২০১৩, সন্ধ্যা সাতটা" অধ্যায়ে কাজ শেষ করেই আলিপুর চিড়িয়াখানার ভেতরেই ঘুরতে গিয়ে বিক্রম হোঁচট খেয়ে পড়লো, ধরলাম খুব বেশী হলে রাত পৌনে আটটা নাগাদ এটা ঘটেছে। আবার তার পরে আর খোঁজ পাওয়া গেলো প্রায় রাত দশটা নাগাদ?
কী এমন হোঁচট যে পড়ার পরে দেড় থেকে পৌনে দুই ঘন্টা হুঁশ থাকে না?
৮) "২১-এ ডিসেম্বর, ২০১৩, সকাল সাতটা" অধ্যায়ে "ত্রিপাঠীজি" নামক চরিত্রটি "শুদ্ধ হিন্দিতে" নাকি বক্তৃতা দিচ্ছেন এদিকে বাংলা হরফে Milky-way, Electrical Spark, Coincidence এর মতো শব্দ বলছেন।
এগুলোর শুদ্ধ হিন্দি হয় না বুঝি!
(Big Bang, Amino acid, Methane, Oxygen, Hydrogen - এইগুলো নিয়ে সমস্যা নেই কারণ এগুলোর হিন্দি অপ্রচলিত।)
৯) একই অধ্যায়ে শ্রীচক্র যন্ত্রের একটি ছবি দেওয়া হয়েছে কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেই ছবিতে সর্বস্য পরিপূরক এবং সর্ব সমস্কশোভনা নামের দুটি পদ্মের পাপড়িগুলো দেখানো হয় নি।
(কাহিনীটি গোটাটা পড়লে বুঝতে পারবেন যে একটি হিসেব যাতে মিলে যায় এবং সেখানে এই পাপড়িগুলির উপস্থিতি কোনো সমস্যা তৈরী যাতে না করে তার জন্যই এইভাবে চিহ্নটিকে বদলে দেওয়া হয়েছে। মানে, যা ইচ্ছে তাই চলবে!)
এছাড়া এই অধ্যায়ে ত্রিপাঠী চরিত্রটি বিজ্ঞান নিয়ে কিছু ভুলভাল তথ্য বলেছেন বটে, কিন্তু সেগুলো গল্পের জন্য সহ্য করা যেতে পারে। পাঠক যাতে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়েন, তাই বলে দিলাম আরকি।
————————————————————————————————————————
আপাতত এই নয়টাই থাক, সময় পেলে আরো লিখবো।
হা হা হা হা
কীসের টানে এরকম অনামা লেখকের বই এর আলোচনা হাজার লোক পড়ছে! আমি তো পাঠকসংখ্যা দেখে ভাবলাম দারুণ কিছু বুঝি। দেখি একেবারে খাজা মার্কা বই।
খাইসে
কিন্তু অরিত্র সূদন মানে কি? অরিত্রকে হত্যা করেন যিনি? এটি কি অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের নামের থেকে "অনুপ্রাণিত"? কিন্তু একটা মানে তো থাকবে! অমিত্র অর্থাৎ শত্রুকে বধ করা বুঝি, কিন্তু তাই বলে অরিত্র!!
লেখকের নামেই চোখ আটকে গেলো। লেখা দেখি নাই।
@অনিন্দিতা — চারটে সংস্করণ হয়ে গেলো। কাজেই বইটি অনেকেই পড়েছে বলে ধরা যায়।
@:|: — রথের সারথি। যদিও নামের মানে থাকতেই হবে এমন নয়।
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। লেখাটি দেখেই নিন।
বেশ চলছে আলোচনা গুলো । তবে একটা বলবো ওই নন্দ ডাক্তারের বইটা বড় সাঁটে সারলেন। আর একটু বড় হলে বেটার লাগবে।
@Ramit Chatterjee —দাদা, ডঃ নন্দ ঘোষের চেম্বার বইটার কাহিনীগুলো ছোট। ওটা নিয়ে আর কোথায় কী বাড়াবো বলুন?
ও আচ্ছা আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি। চালিয়ে যান। নতুন কিস্তির জন্য অপেক্ষায় রইলাম।