হুম, জরুরী আলোচনা। কিন্তু এই মুহুর্তে স্কুলশিক্ষায় আমাদের দেশে সবচেয়ে জরুরী যেটা আমার মতে, সেটা হল মিড ডে মীল। অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর একব্রলা খাদ্যের একমাত্র ভরসা। যে ব্যবস্থাকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এমনিতেই সাবোতাজ করে চলেছে। এটার কী হবে? এর কোন বিকল্প তো আমি দেখতে পাচ্ছি না। ছেলেমেয়েগুলো খাবে কী?
এখানে দুটো স্তর আছে -
এক) বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। এখানে ডিজিটাল মাধ্যমে ক্লাস চালাতে গেলে যে পরিকাঠামো দরকার, তার খরচ আদায় করা হবে অভিভাবকদের থেকেই। এবং সেটাও করা হবে অতিরিক্ত আদায় হিসেবে। ক্লাস চালু রাখারে থেকেও এখানে মূল জোরটা পড়বে ছাত্রছাত্রীদের থেকে টিঊশন ফি আদায় করার অছিলা হিসেবে। এখানে যারা শিক্ষার্থী তারা বা তাদের অভিভাবকরা নিজেদের গরজেই ক্লাস চালু রাখতে চাইবে। অতিরিক্ত খরচ দিতে হলেও। সুতরাং এই ক্ষেত্রটা বাদ রাখাই ভালো।
দুই) সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত-সরাকারি স্কুল। সেখানে, সত্যি কথা বলতে, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্ররা আর স্কুলের পরোয়া করে না দীর্ঘদিন থেকেই। বিকল্প ও সমান্তরাল প্রাইভেট টিউশন সে জায়গা নিয়েছে অনেকদিন হল। কাজেই ছেলেমেয়েদের ও তাদের অভিভাবকদের এ ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই গরজ কম। তার সঙ্গে যুক্ত হবে বিষয় শিক্ষকের ব্যাপারটাও। সেটা কোনও ভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চালানো যাবে না।
পঞ্চম থেকে অষ্টম এ বছরে পরীক্ষা হবে না বা পাশ-ফেল থাকবে না ঘোষণার পরেই তাদের গরজ কমে গেছে অনেকটাই। যারা ভালো ছেলেমেয়ে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সমান্তরাল ব্যবস্থা খুঁজে নিয়েছে নিজেদের মতো করে। প্লাস এমনিতেই বলা হচ্ছে তাদের স্কুলে আসারই দরকার নেই। মিড ডে মিলের টাকা যা আসছে তাতে নাম-কা-ওয়াস্তে চাল-আলু বিলি করার পরে বাকি টাকার কী সদগতি হচ্ছে তা কেউ জানে না। কায়েমি স্বার্থ এটাকে দীর্ঘমেয়াদি করতে চাইবেই।
প্রচুর স্কুলে কোয়ারান্টাইন সেন্টার হয়েছে। সেগুলোকে বীজানুমুক্ত করার বিষয়ে সরকার একটি টাকাও ঠেকাবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। বন্যার সময়ে অস্থায়ী আবাস হিসেবে গড়ে ওঠা স্কুলের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত।
ফলে পড়ে থাকছে ক্লাস নাইন। তাদের সিলেবাস শেষ করার প্রশ্নই নেই। শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে দিয়ে তা সামাল দেওয়া মুশকিল জাতীয় শিক্ষা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে।
সুতরাং প্রতিবন্ধকতা প্রচুর আছে। শুধু সমস্যাটা শিক্ষার্থীদের তরফেই নয়। এখনও প্রচুর শিক্ষক আছেন যাঁরা এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আদৌ সড়গড় নন। তাঁরা রাতারাতি এক্ষপার্ট হয়ে উঠবেন সে আশা করা বাতুলতা মাত্র।
আমি বাস্তব সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরলাম মাত্র। এই পরিস্থিতিতে সবকিছু বাদ দিয়ে সরকার এই ব্যাপারটায় আদাজল খেয়ে লেগে পড়বে, তেমন মনে হচ্ছে না। তবে ওই আর কি - আশায় বাঁচে চাষা। তাতে লেখার উপসংহারটা জব্বর হয় বটে, কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ হয় না এই যা দুঃখ।
ডিজিট্যাল ক্লাস আর টেলিভিশন ভিত্তিক ক্লাস দুটোর মধ্যে কোনটা ছাত্রদের জন্য বেশি সুবিধার? আর্থসামাজিক মাপকাঠির ভিত্তিতে? এ নিয়ে কি কোন সার্ভে হয়েছে বা কোন ধারণা আছে? ... আমার নিজের ধারণা ডিজিট্যাল ক্লাসে নেটয়ার্ক স্পিড শুধু ছাত্রদের ইমপ্যাক্ট করে তা না, শিক্ষকের পড়ানোকেও ইমপ্যাক্ট করে। তার পর শিক্ষকের ডিজিত্যাল মাধ্যম ব্যবহারের অপারগতা তো আছেই। এমন কি করা যায় না যে বোর্ড ধরে ক্লাস ধরে বিষয়গুলো প্রাইমারিলি টিভিতে ব্রডকাস্ট হল আর তারপর সেটা একটা ভবিষ্যৎ রেফারেন্সের জন্য জমা থাকল ওয়েবসাইটে, ক্লাস, বিষয়, টপিক ধরে। আর স্কুলের ক্লাস এর উপর ডাউট ক্লিয়ারিং এর জন্য কাজ করল ? এতে কি অন্তত্তঃ আরও বড় সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীকে ছাতার তলায় আনা যাবে না?