এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • চে’র বিপ্লবী চিন্তা ও সংগ্রাম

    souvik ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ জুন ২০২০ | ৩৮০০ বার পঠিত
  • লাতিন আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে উপনিবেশ হয়ে থেকেছে। একসময়ে তা ছিল মূলত স্পেন ও পর্তুগালের রাজনৈতিক উপনিবেশ, পরে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উপনিবেশ হয়ে দাঁড়ায়। লাতিন আমেরিকার যে কোন প্রগতিশীল বামপন্থী গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের সাধারণ শর্ত তাই উপনিবেশবাদ বিরোধি লড়াই। এই সূত্রেই সাইমন বলিভার থেকে চে গেভারা বা আজকের উগো সাভেজরা তাদের রাজনীতির মেরুদণ্ড নির্মাণ করেছেন। তবে চে লাতিন আমেরিকারই শুধু নন, সারা বিশ্বের মধ্যেই সম্ভবত জনপ্রিয়তম বিপ্লবী আইকন। যিনি ‘ডাক্তারের ব্যাগটা ফেলে রাইফেল হাতে তুলে নিয়েছিলেন’, গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে কিউবার মুক্তিসংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিপ্লবের পরে সেই দেশের বিশিষ্ট মন্ত্রীপদ ছেড়ে দিয়ে আরেকটি গেরিলা যুদ্ধে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হিসেবে দেখার প্রবণতা স্বাভাবিক। কিন্তু একে শুধু এক অসামান্য মানুষের অসাধারণ জীবনকাহিনী হিসেবে দেখা যায় না, তাতে তার কর্মকাণ্ডর মূল সুরটিকেই হারিয়ে ফেলা হয়। চে কে দেখা দরকার লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে, তার সমকালীন ‘নয়া ঔপনিবেশিকতার’ বাস্তবতার বিশ্লেষণের সূত্রে।
    ঔপনিবেশিকতাকে চেনা :-
    চে র জন্ম হয়েছিল আর্জেন্টিনায়। (এখানে আরহেনতিনা না লিখে আর্জেন্টিনা, কুবা না লিখে কিউবা, চিলে না লিখে চিলি, মেহিকো না লিখে মেক্সিকো ইত্যাদিই লেখা হল, কারণ সঠিক স্পেনীয় উচ্চারণের চেয়ে বড় সংখ্যক পাঠক এখনো ইংরেজী ভাষার সূত্রে আসা উচ্চারণগুলির সাথেই পরিচিত। বলা যায় এও এক ধরণের উত্তর ঔপনিবেশিক বাধ্যবাধকতা। যদিও তাকে সাহস করে ভেঙে ফেলাই ভালো, তবে এ লেখায় সেটা করা গেল না বলে সঠিক স্পেনীয় উচ্চারণে অভ্যস্ত পাঠকদের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে রাখছি।) ছোটবেলায় বেশ অসুস্থ থাকতেন বলে তাকে অনেকটা সময় ঘরে থাকতে হত। এই অবসরে চে হয়ে ওঠেন একজন মগ্ন পাঠক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক পড়াশোনা তিনি কলেজে পড়ার আগেই করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল লাতিন আমেরিকার ইতিহাসও। কলেজে পড়ার সময় তিনি ও তাঁরই মত ডাক্তারী পড়া এক বন্ধু আলবার্তো বেরিয়ে পড়েন লাতিন আমেরিকা ঘুরে দেখতে। এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকেই তিনি অমর করে রেখে গেছেন তাঁর বহু বিখ্যাত ‘মোটর সাইকেল ডায়েরী’ বইতে। লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ অবশ্য দুটি পর্বে ঘটেছিল। একবার ডাক্তারী পরীক্ষা দেবার আগে,ছাত্র হিসেবে,১৯৫০-৫১ সালে, একবার পরীক্ষায় পাশ করার পর ডাক্তার হিসেবে, ১৯৫৩ সালে। ‘মোটর সাইকেল ডায়েরী’ বইতে প্রথম পর্বের ভ্রমণ বৃত্তান্তই কেবল রয়েছে। সেখানে আমরা দেখি চে চিলিতে এক কমিউনিস্ট দম্পতির সাথে পরিচিত হচ্ছেন, যাদের গায়ে দেবার একটা কম্বল পর্যন্ত নেই, অশেষ নির্যাতন ও কষ্ট স্বীকার করে একটা আদর্শ নিয়ে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন। এখানেই একটি তামার খনির শ্রমিকদের কষ্টকর জীবন প্রণালীও তিনি কাছ থেকে দেখেন। মাচু পিচু যাবার পথে গ্রামীণ দারিদ্রের সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ পরিচয় হয়। সেখানে তিনি বড় জমিদারদের অধীনস্থ গরীব চাষী, ক্ষেতমজুরদের সঙ্কটের চেহারাটা বুঝতে পারেন। আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, মিয়ামি ভ্রমণের পর চে অনুভব করেন লাতিন আমেরিকা কোন আলাদা আলাদা দেশের সমষ্টি নয়, এটি একটি সামগ্রিক সত্তা, এবং এর মুক্তির জন্য একটি মহাদেশব্যাপী পরিকল্পনার প্রয়োজন। আমাদের চের উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনায় লাতিন আমেরিকাকে আলাদা আলাদা নেশন স্টেটের পরিবর্তে একটি অখণ্ড সত্তা হিসেবে দেখা আর তার মুক্তির জন্য চেষ্টা করায় বিষয়টিতে আবার ফিরতে হব, কারণ সাম্প্রতিক লাতিন আমেরিকার প্রগতিশীল আন্দোলনের এটিই চাবিকাঠি।
    গুয়াতেমালায় নয়া ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে প্রথম মহড়া :-
    চের প্রথম পর্বের ভ্রমণের পরই একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির হয়ে গিয়েছিল, ১৯৫৩ র ৭ জুলাই তিনি যখন তাঁর দ্বিতীয় ভ্রমণে বেরোলেন, তখন তাই তার সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছে একটা রাজনৈতিক কার্যক্রম। ১৯৫৪ তে গুয়াতেমালার উত্তুঙ্গ ঘটনাবলীর সাথে তিনি সরাসরি জড়িয়ে পড়েন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সি আই এ-র ভূমিকা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে স্পষ্টতর হয়। এই প্রসঙ্গে আমরা গুয়াতেমালার সেই সময়টা একটু ফিরে দেখব। গুয়াতেমালার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ছিল মায়া সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। মায়া সভ্যতায় জমি ব্যক্তিগত মালিকানার বিষয় ছিল না, ছিল গোষ্ঠীর, সমাজের। ব্যক্তি জমি ভোগ করত প্রয়োজন অনুযায়ী। প্রয়োজনে একের জমিতে অন্যেরা শ্রমদান করত, পারস্পরিক সহায়তায় উৎপাদন হত। এই সম্পর্ক ষোড়শ শতকে স্পেনীয় শাসন শুরু হবার পর থেকে বদলাতে শুরু করে। স্পেনীয়দের কাছে জমি ছিল সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতার ব্যাপার। ১৮২১ এ গুয়াতেমালা স্পেনীয় শাসন থেকে স্বাধীনতা পায়। কিন্তু তারপর উনিশ শতকের শেষদিক থেকে নয়া শাসকরা নতুন অর্থনৈতিক পরাধীনতায় মানুষকে বন্দী করে ফেলেন। লিসান্দ্রো বারিয়াস (১৮৮৫ – ৯২) এবং এস্ত্রাদা কাবরোরার (১৮৯৮-১৯২০) আমলে গুয়াতেমালার জমি লাদিনো বা বড় জোতদারদের হাতে চলে যায়। কবরেরার সময়ে বিদেশি পুঁজির ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটে। ১৯০৬ সালে মার্কিন সংস্থা ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানী (ইউ এফ কো) রেলপথ স্থাপনের বরাত পায়। রেলপথ স্থাপন ও তাদের ব্যবসার জন্য দেশের সবচেয়ে ভালো ১লক্ষ ৭০ হাজার একর জমি তুলে দেওয়া হয়। ইউ এফ কো মূলত কলার ব্যবসা করত। তাদের হাতেই দেশের অনেকটা নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। গড়ে ওঠে ব্যানানা রিপাবলিক। পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান উবিকো (১৯৩১-৪৪) স্বাধীন কৃষক ও অন্যান্য অংশকে প্রায় ভূমিদাসের পর্যায়ে নিয়ে আসেন। বাধ্যতামূলক শ্রমদান, অন্যথায় গ্রেপ্তারীর মত বেশ কিছু শোষণমূলক আইন এ সময় পাশ হয়। এ সময়েই অনেকগুলি আদিবাসী ও কৃষক বিদ্রোহ হয়। এই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটেই প্রথমে আরেভালো ও তারপর তারই সহযোগী আরাবেনস এর জনপ্রিয় সরকার কাজ করতে থাকে। ভূমিসংস্কার ও শ্রমিক কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। সরকারের সাথে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানীর স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধ বাধে। ইউ এফ কোর হাতে থাকা পাঁচ লক্ষ একরের বেশি জমির তিন লক্ষ সাতাশি হাজার একর সরকার অধিগ্রহণ করে। সি আই এ-র উদ্যোগে প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী গঠনের কাজও চলতে থাকে। উদ্দেশ্য জনপ্রিয় সরকারের পতন ঘটিয়ে পুঁজির স্বার্থ সুরক্ষিত করা। এই ঘটনা যখন ঘটছে চে তখন গুয়াতেমালায়। এখানকার প্রাথমিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পিসী বেয়াত্রিসকে একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন, “ ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানীর সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে আসার সুযোগ আমার হয়েছে এবং আমি বুঝে গেছি কত ভয়ঙ্কর এই ধনী অক্টোপাসগুলো। আমি বৃদ্ধ এবং শোকাহত স্তালিনের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি যে যতদিন পর্যন্ত এই অক্টোপাসগুলোকে খতম করতে না পারব, ততদিন আমি থামব না। গুয়াতেমালাতে আমি নিজেকে আরো তৈরি করব এবং সত্যিকারের বিপ্লবী হতে যা যা করণীয় করব”। এই সময় কিউবার কয়েকজন বিপ্লবীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাদের কাছ থেকে তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর কথা শোনেন। গুয়াতেমালায় চে র ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন ইলদা গাদেয়া। পরে তারা বিয়ে করেন। ইলদার থেকে চে মার্কসবাদ এর সম্পর্কে অনেকটাই জানেন। ইলদাই তাঁকে পড়ান মাও সে তুং ও সার্ত এর লেখা। এই সময় সি আই এ-র ক্যুর চক্রান্ত চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছলে চে চেয়েছিলেন আরাবেনস জনগণের হাতে অস্ত্র তুলে দিন, জনগণের মিলেশিয়া প্রতিবিপ্লবী ক্যুর বিরুদ্ধে জনপ্রিয় সরকারকে রক্ষা করুক। কারণ সেনাবাহিনী তখন আর বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। চে নিজে চলে গেছিলেন একটি মিলেশিয়ায় যোগ দিতে। কিন্তু আরাবেনস তখন সেনাকর্তাদের নির্দেশে পদত্যাগে বাধ্য হয়ে মেক্সিকোর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। আমেরিকা আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে চে প্রথমে আর্জেন্টিনার দূতাবাসে আশ্রয় নেন ও তারপর মেক্সিকোতে চলে যান। ইলদা গ্রেপ্তার হয়ে যান, পরে তিনি মেক্সিকোতে এলে চের সাথে সেখানে তার বিয়ে হয়। এখানে হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার সময়ে ১৯৫৫ তে তিনি কিউবান বিপ্লবীদের পুরনো বন্ধুদের মাধ্যমে প্রথমে রাউল ও তারপর তার বড় ভাই ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে মিলিত হন। কাস্ত্রোর সাথে তাঁর আলাপ নিবিড় বন্ধুত্বে পর্যবসিত হয়।
    কিউবা বিপ্লবের দিনগুলোয় :-
    কিউবা তখন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা গ্রস্ত। প্রত্যক্ষ সেনাশাসন না থাকলেও কিউবার অর্থনীতির সিংহভাগ আমেরিকার কব্জায়। কিউবা থেকে আমেরিকায় অবাধে চলছে সম্পদ পাচার। আমেরিকান পুঁজি কিউবায় যথেচ্ছ শোষণ চালাচ্ছে। শ্রমিকদের কৃষকদের অবস্থা শোচনীয়। উনিশ শতক থেকেই কিউবা আস্তে আস্তে মার্কিন গ্রাসে ঢুকতে শুরু করে। ১৯০১ সালে জোর করে মার্কিনিরা কিউবার সংবিধানে ঢুকিয়ে দেয় প্ল্যাট সংযোজনী। উল্লেখ্য ১৯০০ সালে কিউবার নতুন তৈরি সংবিধানে এর কোন অস্তিত্বই ছিল না। প্ল্যাট সংযোজনী অনুসারে মার্কিনের সাথে কিউবার যে বিনিময় চুক্তি হয় তাতে বলা হয় -
    ১) কিউবার উৎপাদিত কিছু কিছু দ্রব্য মার্কিন দেশে আমদানির সময় ২০ শতাংশ ছাড় মিলবে।
    ২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু দ্রব্য কিউবায় রপ্তানী করা হলে অন্য দেশের তুলনায় ২৫ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি শুল্ক ছাড় পাবে।
    ৩) বিশেষ ছাড় যা মার্কিন ও কিউবার মধ্যে প্রযোজ্য তা অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
    বাতিস্তা শাসনের সময় কিউবার অর্থনীতি পুরোপুরি আমেরিকার গ্রাসে চলে আসে। কিউবার প্রধান উৎপাদন চিনি ও তামাক ততদিনে পুরোপুরি আমেরিকান ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। আখ থেকে উৎপাদিত চিনির রপ্তানী আমেরিকা নিজের প্রয়োজন মতো কমায় বাড়ায়। আবার অসম চুক্তির যাঁতাকলে ফেলে সে কিউবাকে অন্য দেশের সাথে স্বাধীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে দিতেও রাজী নয়। চিনি এবং তামাকের পর কিউবার পরিবহণ এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবসাকেও আমেরিকা তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিউবার সম্পদ ক্রমশ দেশের বাইরে চলে যেতে থাকে। বাতিস্তা সরকারের মার্কিনের কাছে দেশকে বন্ধক রাখা নীতির বিরুদ্ধে ফিদেল ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই মোনকাদো সামরিক ঘাঁটি আক্রমণ করেন। এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফিদেল গ্রেপ্তার হন। মুক্তির পর ১৯৫৫ সাল থেকে নতুন করে বিপ্লবের চেষ্টা শুরু হয়। চে কিউবান বিপ্লবীদের ‘২৬ জুলাই আন্দোলন’ এর শরিক হন ও তাঁর জীবনে এক নতুন পর্বের সূচনা হয়। কিউবার শাসনে অধিষ্ঠিত আমেরিকার পুতুল বাতিস্তা সরকারকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে তিনি এবং অন্যান্য কমরেডরা গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। পাহাড়ে চড়া, নদীতে সাঁতার, লক্ষ্যভেদের নিশানা এবং দ্রুত সরে আসার তৎপরতা ইত্যাদি দক্ষতার নিরিখে নির্দেশক আলবার্তো বায়ো বিভিন্ন পরীক্ষার পর চে কেই সেরা গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেন। উল্লেখ্য পরে চে গেরিলা যুদ্ধের একটি বিখ্যাত ম্যানুয়াল লিখেছিলেন।
    ১৯৫৬ সালে কিউবার উদ্দেশ্যে নৌপথে যাত্রা করার পর থেকে রোমাঞ্চকর গেরিলা যুদ্ধ ও উত্থান পতনের বিচিত্র অধ্যায়ের পথ ধরে ১৯৫৯ র জানুয়ারীতে ক্ষমতা দখল পর্যন্ত দীর্ঘ দু বছরের পর্ব চে’র বিপ্লবী জীবনের অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায়। বিশ্ব বিপ্লবের ইতিহাসেও তা বিশেষভাবে আলোচ্য। কিন্তু এখানে সে ঘটনাবহুল পর্বের দীর্ঘ বর্ণনায় যাবার অবকাশ নেই। কিন্তু চরম কিছু টুকরো মুহূর্ত তুলে আনা দরকার, যেখানে মৃত্যুর বা সঙ্কটের একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়েও একজন বিপ্লবী হিসেবে তার মানসিকতাটা বোঝা যায়।
    কিউবার মাটিতে নামার পরেই ফিদেল, চে সহ অন্যান্যদের বিরাট আক্রমণের সামনে পড়তে হয়। গ্রানমা নামে যে ছোট জাহাজে করে তারা আসছিলেন, তার খবর কিউবার সেনাবাহিনী পেয়ে গিয়েছিল। তারা ফিদেলের বাহিনীকে একটা খোলা মাঠে বিশ্রামরত অবস্থায় অতর্কিতে আক্রমণ করে। আত্মরক্ষা করতে করতে বিপ্লবীরা সামনের আখের ক্ষেতের দিকে পালাতে থাকেন। অল্প কয়েকজনই মাত্র রক্ষা পেয়েছিলেন, বেশিরভাগ মারা যান বা বন্দী হন। চের সামনে এসময় একটা চরম মুহূর্ত উপস্থিত হয়, যার সম্পর্কে তিনি পড়ে লিখেছেন, “আমি ভীষণ সমস্যায় পড়লাম। আমার একদিকে ডাক্তারী অন্যদিকে বিপ্লবী হিসেবে আমার কর্তব্য। আমার পায়ের কাছে এক থলে ওষুধপত্র আর এক বাক্স গোলাবারুদ। দুটো একসাথে বহন করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি গোলাবারুদের বাক্সটা তুলে নিয়ে আখের ক্ষেতের দিকে চললাম”। গেরিলাবাহিনীতে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে চে আপোষহীন ছিলেন। এমনকী চরম মুহূর্তেও তিনি দুঃসাহসী গেরিলাযোদ্ধা হিসেবে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পছন্দ করতেন। মায়েস্ত্রার বিপ্লবী ঘাঁটিতে বিমান আক্রমণের সময় যখন প্রায় সবাই যে যেদিকে পারে পালাচ্ছে, তখন চে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হতচকিত গেরিলা যোদ্ধাদের সংগ্রহ করে পরের ঘাঁটির দিকে এগিয়ে দেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চের অনুরোধে ফিদেল গেরিলা বাহিনীতে কিছু কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা ও শাস্তির বিধান প্রণয়ন করেন।
    বিপ্লবোত্তর সমাজের নির্মাণ :-
    কিউবা বিপ্লবের পরের পর্বটা চের জীবনে খানিকটা ভিন্ন ধরণের কাজের অধ্যায়। সেটা বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গড়ে পিঠে নেবার সময়। নতুন সরকারে ফিদেল কাস্ত্রোর পরেই চে ছিলেন সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ ব্যক্তি। নতুন সরকারের যে সব কাজে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল ভূমিসংস্কার, শিক্ষার বিস্তার, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নতুন করে সাজানো। ২৭ জানুয়ারী নতুন সরকার গঠনের কিছুদিন পরেই এক বিখ্যাত বক্তৃতায় তিনি বিপ্লবী সরকারের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীগুলি স্পষ্ট করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন ভূমিসংস্কারের ওপর। কয়েকমাস পরে ১৭ মে, ১৯৫৯ এ নতুন সরকার চের মুসাবিদা করা ভূমি সংস্কার আইন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয় কোন ফার্ম ১০০০ একর এর বেশি জমি রাখতে পারবে না, এর অতিরিক্ত জমি থাকলে তা অধিগ্রহণ করা হবে। অধিগৃহীত জমি কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হবে বা সেখানে সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগ জারী থাকবে। এই আইনেও এও বলা হয়, আখ চাষের মালিকানা বিদেশীদের হাতে থাকতে পারবে না। ভূমিসংস্কার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার জন্য তৈরি হয় ‘ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারাল রিফর্ম’। এই ইন্সটিটিউটের অধীন ১ লক্ষ সৈন্যের মিলিশিয়া চের নেতৃত্বে সিলিং অতিরিক্ত জমি দখল, তার রক্ষণাবেক্ষণ, বন্টন ও কো অপারেটিভ ফার্ম গঠনের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করে। চে এই সংস্থার প্রধান ও সেইসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য চে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় ব্যাঙ্কের সভাপতি হিসেবেও কাজ করছিলেন।
    নতুন সমাজ গড়ার জন্য নতুন (চেতনার) মানুষের কথা :-
    দেশের শিল্প বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে চে নিয়ে আসেন ‘নতুন (চেতনার) মানুষ’ এর ধারণা। নতুন ধরণের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানোর দিকটিতে তিনি জোর দিয়েছিলেন, যাতে কিউবার জনগণ ব্যক্তির সাথে সমষ্টির সম্পর্ককে নতুনভাবে আবিস্কার করে। তিনি মনে করেছিলেন ভূমিসংস্কার বা শিল্পোৎপাদন বিকাশের মতো বিভিন্ন ধরণের প্রকল্পর সঙ্গে নতুন সামাজিক সম্পর্ক ও নতুন মূল্যবোধ গড়ে তোলা জরুরী। কিউবার বিপ্লবোত্তর নতুন মানুষকে তিনি চেয়েছিলেন আত্মকেন্দ্রিকতাহীন, পারস্পরিক সহযোগিতাপ্রবণ, শৃঙ্খলাপরায়ণ ও কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে দেখতে, যাদের মানসিকতা লিঙ্গ বৈষম্যের উর্ধ্বে থাকবে, যারা চেতনাগতভাবে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হবে। চে মার্কসবাদ লেনিনবাদের বুনিয়াদী দিকগুলির ওপরই জোর দিতে চেয়েছিলেন। চে বলতেন শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির উপর কাঠামোটাই পরিশ্রম, ত্যাগ, যুদ্ধবিরোধিতার জন্য যথেষ্ট নয়। যৌথ চেতনার পরিবর্তে সেই কাঠামো যদি লোভ ও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্রয় দেয়, তবে সেই উপরি কাঠামোর ব্যর্থতা আসা স্বাভাবিক। পুরনো আত্মচেতনাবাদী মানসিকতা ও মূল্যবোধের সংস্কার সাধনের মধ্যে দিয়েই তিনি মহত্তর কর্মী ও নাগরিক গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। একাজে দেশ গঠনের স্বার্থে স্বেচ্ছাশ্রমের বিষটিতে তিনি জোর দিতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজে মন্ত্রী হিসেবে যেমন অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন, তেমনি কারখানায় বা আখ কাটার মত শারীরিক শ্রমদানের প্রক্রিয়াতেও যুক্ত থাকতেন। উন্নয়নের নতুন ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “ মুক্ত বাজারের উন্নয়ন আর বিপ্লবী উন্নয়নের মধ্যে বিপুল ফারাক। প্রথম ক্ষেত্রে সম্পদ অল্প কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, তারাই সরকারের বন্ধু হয়। অন্যক্ষেত্রে সম্পদ হয় জনগণের সম্পত্তি”। কিউবা বিপ্লবের পর চের বিপ্লবী উন্নয়নের পরিকল্পনার একদিকে ছিল উৎপাদন সম্পর্ক, অন্যদিকে সামাজিক সম্পর্ককে ঢেলে সাজানো।
    দেশের মধ্যেকার এইসব কর্মকাণ্ডর পাশাপাশি চে ছিলেন বহির্বিশ্বের কাছে ফিদেল প্রেরিত কিউবার দূত। ১৯৫৯ এর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনি মিশর, পাকিস্থান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, জাপান সহ বারোটি দেশে ভ্রমণ করেন। জাপানের সঙ্গে নতুন বানিজ্য সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে কিছু নতুন চুক্তি হয়। কিন্তু এই কূটনৈতিক দৌত্যের পর্বেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের জাপানী চিহ্নগুলিতে শ্রদ্ধা জানাতে তিনি রাজী হন নি। বিপরীতে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন হিরোসিমা। সাম্রাজ্যবাদী জাপানকে ধীক্কার জানিয়েও তিনি বলেছিলেন, “কেউ যদি শান্তির জন্যে আরো ভালোভাবে লড়াই করতে চায়, তার হিরোসিমা দেখা উচিৎ”। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ও পশ্চিমী বিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে চে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিকাশের দিকে জোর দেন। ১৯৬০ সালের শেষের দিকে তিনি রাশিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, উত্তর কোরিয়া, হাঙ্গেরি, পূর্ব জার্মানী ভ্রমণ করেন এবং তাদের সাথে অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করেন।
    চিন – সোভিয়েত দ্বন্দ্বে অবস্থান :-
    চের কিউবা অর্থনৈতিক প্রশ্ন সহ নানাভাবেই সোভিয়েত এর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু মার্কসবাদ লেনিনবাদ নিয়ে সমকালীন বিশ্বে চিন সোভিয়েত মহাবিতর্কে বিপ্লবী অবস্থান নেওয়ার প্রশ্নে এই নির্ভরশীলতা কখনোই চেকে কোনও আপোষের রাস্তায় হাঁটার দিকে এগিয়ে দেয় নি। ২৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৫ চের শেষবারের মত প্রকাশ্যে জনসভায় বক্তৃতা দেন। আলজেরিয়ায় আফ্রো এশিয় ঐক্যের প্রয়োজনিয়তা নিয়ে তাঁর এই বক্তব্যে তিনি একই সঙ্গে মার্কিন ও সোভিয়েতের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। চের মতে পশ্চিম গোলার্ধের মার্কিন ও পূর্ব গোলার্ধের সোভিয়েত, উত্তরের এই দুই শক্তি দক্ষিণের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। চে যখন এসব কথা বলছেন, ততদিনে সোভিয়েত ও চীন – এই দুই প্রধান সমাজতান্ত্রিক দেশের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে মহাবিতর্ক। চে চীন এবং মাওয়ের পক্ষ নিতে চাইছেন, এটা তার সেই সময়ের কথাবার্তা এবং লেখালেখি থেকে স্পষ্ট হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বিপ্লবোত্তর কিউবায় চে দ্রুত শিল্পায়নের যে কর্মসূচী নিয়েছিলেন তার মধ্যে অনেকেই মাও সে তুং এর পরিকল্পিত চিনা ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ এর ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন। সোভিয়েত সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল তারা মার্কসকে ভুলে গেছে এবং সেখানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাকে তিনি অভিহিত করেছিলেন ‘প্রাক একচেটিয়’ বলে। পুঁজিবাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্রুশ্চেভীয় নীতিকে তিনি মানতে পারেন নি। মুল্যের নিয়মকে সোভিয়েত ধ্বংস করতে চাইছে না, এবং এটাই পুঁজিবাদে প্রত্যাবর্তনের কারণ হবে, সমকালীন সোভিয়েত রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে চের এই চেতাবনী পরবর্তীকালে সত্য প্রমাণিত হয়।
    মন্ত্রীত্ব ছেড়ে আবার গেরিলা বিপ্লবীর জীবন :-
    সোভিয়েতের ওপর নির্ভরশীল কিউবার ক্ষেত্রে চের সোভিয়েত সমালোচনা ক্ষতিকারক হচ্ছে, এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না – এই সব ভাবনা থেকেই সম্ভবত চে কিউবা পরিত্যাগ করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গেরিলা বিপ্লবীর জীবনে আবার ফিরে যান। সেইসঙ্গে গোটা লাতিন আমেরিকাকে মার্কিন আধিপত্য থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন তো ছিলই। প্রথমে কঙ্গোতে, তারপর বলিভিয়াতে জীবনের শেষদিনগুলো তিনি কাটান গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে। ধরা পড়ার পর বিচারের কোন আয়োজন না করে ৯ অক্টোবর, ১৯৬৭ তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে নটি বুলেট বিদ্ধ করে খুন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে খুন করার ঠিক আগে চে বলেছিলেন, ‘কেবল একটি মানুষকেই তুমি হত্যা করতে পারবে, বিপ্লবের স্বপ্নকে নয়’।
    চের উত্তরাধিকার :-
    ১৯৬০ এর পর থেকেই লাতিন আমেরিকা জুড়ে চালু হয়েছে, জনপ্রিয় হয়েছে একটা শব্দ –গেভারাইজম। গত পঞ্চাশ বছর জুড়ে,এমনকী এই একুশ শতকেও লাতিন আমেরিকায় এমন কোন বিপ্লবী বা প্রগতিশীল আন্দোলন হয় নি যা এই আর্জেন্টিনিয়-কিউবান চিকিৎসক-বিপ্লবীর দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়। মার্কসবাদ বা লেনিনবাদ বা মাও চিন্তাধারার মত গেভারা বাদ/চিন্তাধারা-র মত শব্দ আমাদের এখানে খুব বেশি শোনা না গেলেও লাতিন আমেরিকার নিজস্ব বাস্তবতার কারণেই তা ওখানে বহু উচ্চারিত। বহু শতাব্দী ধরে ধনসম্পদ, রাজনৈতিক ক্ষমতা যেভাবে একচেটিয়া করে রেখে জনগণকে শোষণ করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জনগণ বারবার সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। বার্লিন প্রাচীর ভাঙার পর, সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পর ইউরোপে জাপানী বুদ্ধিজীবী ফুকিয়ামা যেমন ‘ইতিহাসের সমাপ্তি’র কথা শুনিয়েছিলেন, তেমনি ‘ইউটোপিয়া আনআর্মড : দ্য লাতিন আমেরিকান লেফট আফটার দ্য কোল্ড ওয়ার’ নামক বইতে কাস্তানেদা ঘোষণা করেছিলেন লাতিন আমেরিকায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের দিন শেষ। এই বই প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই মেক্সিকোতে সশস্ত্র জাপাতিস্তা আন্দোলন সব হিসাব ওলটপালট করে দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য জাপাতিস্তা আন্দোলন ‘গেভারিয়ান’ হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করেছিল। কলম্বিয়ায় ‘ই এল এম’ গেভারীয় আদর্শে এখনো গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য শুধু গেরিলা যুদ্ধের দিক থেকেই নয়, ভূমিহীন কৃষক সহ সমাজের সব নিপীড়িত শাসিত শোষিতদের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনেও চে প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। আশির দশকে শুরু হওয়া ব্রাজিলের ভূমিহীন কৃষকদের আন্দোলন তাদের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে চের কথা বলেছে। এক ব্যর্থ কু দ্যে তা -র পর জনগণের ভোটে দুবার বিরাট জনপ্রিয়তা নিয়ে জেতা ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি উগো স্যাভেজ তার দুই গুরূতকপূর্ণ কার্যক্রম – লাতিন আমেরিকা জোড়া বলিভারীয় বিপ্লব ও একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে চে গেভারার কথা বারবার উচ্চারণ করেন। পেরু, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা সহ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে চলমান সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিন আধিপত্যবাদ বিরোধী সমস্ত লড়াই ই চে কে বিশেষ প্রেরণা হিসেবে স্মরণ করে। তাঁকে নিয়ে লেখা হয় অসংখ্য বই, তৈরি হয় অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। আলাদাভাবে তাঁর উত্তরাধিকারকে আর খোঁজার প্রয়োজন নেই, লাতিন আমেরিকা সহ বিশ্বের সর্বত্র জনগণের আন্দোলনে বিশেষ প্রেরণা হিসেবেই তিনি দাঁড়িয়ে আছেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ জুন ২০২০ | ৩৮০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Deep Chatterjee | 52.66.***.*** | ১৭ জুন ২০২০ ০৩:০৬94373
  • পুলওয়ামার সময় ভারতে বসবাসকারী চীনের দালাল কমিউনিস্টদের, আক্রমণের পর থেকেই যে পরিমাণ উল্লাস, গট-আপ তত্ত্ব, ভোটের জন্য সব সাজানো, যুদ্ধ চাইনা, ভাত দে হ্যাজ, এইসব গণহারে চলছিল, আজ সেই তুলনায় তার ছিটেফোঁটাও নেই। কমিউনিস্টদের মেজরিটি এখনো এই ইস্যুতে নীরবতাই পালন করছে। কেন?

    ১) কারণ, এখানে আক্রমণ করেছে তাদের বাবা চীন। তাই গট-আপের গল্প বা নজর-ঘোরানো তত্ত্ব এখানে চলবে না। তাদের শত্রু ভারতের সাথে তাদের বাবা চীন গট-আপ করেছে, তাও ভারতের সমস্যা থেকে ভারতবাসীর নজর ঘোরাতে, এই গ্যাস তারা প্রচার করবে কী করে? করলে তো বুমেরাং হয়ে যাবে।

    ২) ভারতীয় সেনাদের শহীদ হওয়াইয় উল্লাস করতো হয়তো ঠিকই, কিন্তু ভারত উল্টে কমিউনিস্ট চীনের ৪৫জন সৈন্যকে সাইজ করে দিয়েছে। সেই দুঃখ সামলাবে কীকরে?

    ৩) লাদাখে পাথর ছোঁড়া প্রকল্প, আইসিসের ফ্ল্যাগ, আজাদী, হিন্দু পণ্ডিত বিতাড়ন, এসব কোনদিনই নেই। তাই "লাদাখ মাঙ্গে আজাদী" স্লোগান এখানে চলবে না। "ভারতীয় সেনার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ গণবিক্ষোভ দেখিয়েছেন", সেই হ্যাজও অচল।

    ৪) "সব আমেরিকা আর সিআইএ-র চক্রান্ত। বাজার-ই এর মূলে।" এই গল্পও এখানে অচল। কারণ, বর্তমানে আমেরিকার প্রধান প্রতিপক্ষ, কমিউনিস্টদের বাবা দেশ চীন এই আক্রমণ করেছে।

    ৫) "যুদ্ধ চাইনা, ভাত দে", ভারতীয় সেনার পাশে দাঁড়ালে "তুই যুদ্ধ করতে বর্ডারে যা", দেশভক্তি নিয়ে খিল্লি, এগুলো এক্ষুনি করতে পারছে না, কারণ, সেই একই। আক্রমণটা তাদের বাবা কমিউনিস্ট চীন করেছে। ঝামেলাটা চীন পাকিয়েছে।

    একটা কথা ভুললে চলবে না, ১৯৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধের সময় চীনকে সমর্থন করার জন্যই, সিপিআই ভেঙ্গে সিপিআইএম তৈরি হয়েছিল। সিপিএমের জন্মই কমিউনিস্ট চীনকে সমর্থন করার উদ্দেশে। পরে তাদের থেকে ভেঙ্গে যখন নকশাল বা লিবারেশন তৈরি হল, তখন তো তারা সরাসরি স্লোগানই দিল, "চীনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান।" তাই ভারতে বসবাসকারী কমিউনিস্ট মাত্রই যে চীনের দালাল, সেটা কোন কষ্টকল্পনা, বা রাজনৈতিক বিদ্বেষে বানানো গল্প নয়। এটা একদম ঐতিহাসিক সত্য, কমিউনিস্টদের ঘোষিত অফিশিয়াল স্ট্যান্ড। এখন দিনকাল বদলেছে, নোটার সাথে লড়তে হচ্ছে, এইটবি থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত মিছিল করলেও, পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া বাস থেকে লোকে খিস্তি দেয়, তাই বাধ্য হয়ে প্রকাশ্যে আর অতোকিছু বলা যায় না। নাহলে, বাম আমলে সবসময় চীনকে স্বর্গদ্যান হিসেবে প্রোজেক্ট করে প্রচারিত হয়েছে, "আমাদের পরে স্বাধীন হয়েও চীন কতো উন্নতি করেছে, সেখানে ভারত কিছুই করতে পারল না।" চাপা পড়ে গেছে, চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে সেখানকার ভূমিজ সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা, মাওমেড অনাহার, দুর্ভিক্ষ, গণহত্যা, তিব্বত, বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধ, ক্রীতদাস প্রথা, আরও হাজারও অত্যাচার-অনাচারের মর্মান্তিক কথা। সেসব কিছু বললেই বলা হয়েছে, "সব আমেরিকার চক্রান্ত, সব বানানো, সব মিথ্যে"। এখনো যে চীন সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস ছড়ালো, তারপরও বাম নেতা-সমর্থকদের মুখে তাদের ডিফেন্স আর সুখ্যাতের শেষ নেই। কাজেই কমিউনিস্টরা চীনের দালাল ছিল, আছে, থাকবে। 

    সুতরাং ভারতের এই ক্রাইসিসের সময় ভারতের কমিউনিস্টদের থেকে চীনের সমর্থন, ডিফেন্স, আর ভারত-বিরোধিতা করা ছাড়া আর অন্য কিছু কেউ আশা করবেন না। কমিউনিস্ট মানে শুধু সিপিএম আর নকশাল-মাওবাদী কর্মী-সমর্থকদের কথা বলছি না, পুরো মাকু-নকু-বিপ্লবী-সেকু-সুশীল-লিবেড়াল-বুদ্ধিজীবী-বিদ্বজ্জন-সেলিব্রিটি-মিডিয়ার একাংশ-বিভিন্ন বেনামী ফ্রন্টে তাদের সমর্থনে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্ট, সবার কথাই বলছি। এই পুরো গ্যাংটাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কমিউনিস্ট চীনের দালাল।

    এদের কোনরকম অপপ্রচারে, গুজবে কেউ কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। আপনি নরেন্দ্র মোদী-বিজেপির বিরোধী হতেই পারেন, কিন্তু লড়াইটা লড়ছে ভারতীয় সেনা। ভারতবর্ষ একটা গণতান্ত্রিক দেশ। কমিউনিস্ট চীনের মতো একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র নয়। এখানে কেন্দ্রে মোদী রইল কি কেজরিওয়াল, সেটা বড় কথা নয়। সরকার আসবে, সরকার যাবে, এটাই সুস্থ গণতন্ত্রের নিয়ম। আসল কথা হল, এই সময় পুরো দেশের এক হয়ে থাকা, সেনার পাশে দাঁড়ানো, মনোবল বাড়ানো। ১৯৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধের সময় বিজেপি-মোদী-অমিত শাহ-বাজার অর্থনীতি কেউ ছিল না, কেন্দ্রে ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু এবং কংগ্রেস সরকার। বলা বাহুল্য, সেই সময় তথাকথিত ফ্যাসিবাদী শক্তি, সিএএ, পরিযায়ী শ্রমিক এসব কোন ইস্যু ছিল না। তাও এই ভারতের কমিউনিস্টরা তখন চীনকেই সমর্থন করেছিল। তাই এদের প্রচারিত "ফ্যাসিস্ট মোদী-শাহ-বিজেপির বিরোধিতা করার জন্য সবকিছু করা উচিত" বলা স্ট্যান্ডে পা দেবেন না। এটা এদের মানুষকে ভুল বোঝানোর একটা ধান্দাবাদ। এদের এই চিটিংবাজিতে একদম বিভ্রান্ত হবেন না। সব সময় মনে রাখবেন, এরা সব অবস্থাতেই চীনের দালাল। ভারতে থেকে চীনের হয়ে, চীনের জন্য কাজ করাই এদের রাজনৈতিক লাইন। চীনের স্বার্থরক্ষার্থে এরা সবকিছু করতে পারে। অতএব, রাজনীতি, ধর্ম, জাতপাত, প্রাদেশিকতা, লিঙ্গভেদ, সব মতপার্থক্য, সব বিভেদ ভুলে, চীনের দালাল কমিউনিস্টদের ভারতবিরোধী বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারে কান না দিয়ে, সবাই শুধু ভারতবাসী হিসেবে এক থাকুন, ভারতীয় সেনার পাশে থাকুন। এখন শুধু এটাই দরকার।

    জয় হিন্দ।
    বন্দে মাতরম্‌।
    ভারতমাতা কী জয়।

  • বিপ্লব রহমান | ১৭ জুন ২০২০ ০৫:৫১94377
  • "চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে সেখানকার ভূমিজ সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা, মাওমেড অনাহার, দুর্ভিক্ষ, গণহত্যা, তিব্বত, বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধ, ক্রীতদাস প্রথা, আরও হাজারও অত্যাচার-অনাচারের মর্মান্তিক কথা। "

    দ্বীপ চ্যাটার্জি,     

    মাফ করবেন, এই কথাটি ঠিক বুঝিনি। আরেকটু বিশদে বলবেন?         

  • r2h | 49.37.***.*** | ১৭ জুন ২০২০ ১০:৫৮94388
  • ও কিছু না, অন্যত্র থেকে কপি পেস্ট, ইগনোর করুন।

    আর দীপ বোধয়, দ্বীপ কি আর লোকের নাম হয় কখনোঃ)

    আমাদের দুই প্রতিবেশী ছিলো, এক পরিবার তামিল অন্যরা পাঞ্জাবী, সর্দার। তামিল পরিবারের ছেলেটির নাম সাহিথ (মানে সাহিত্য)। সেই নিয়ে গুরমিত আংকল জনান্তিকে তামাশা করতেন, কি নাম রেখেছে মা বাবা, লিটারেচার কখনো মানুষের নাম হয়?
  • meh | 185.22.***.*** | ১৭ জুন ২০২০ ১১:৪৪94392
  • নাহ, এই বিপ্লব রহমানটা বেশ কিউট আছে। বুঝে না বুঝে সবখানে স্যালুট/সহমত/গদাম দিয়ে বেড়ায়, আর ওদিকে বেসিক অনেক ব্যাপারে একদম কঅক্ষর গোমাংস। একদম উইকি লেভেলের পড়াশোনাও নেই।

    https://en.wikipedia.org/wiki/Great_Leap_Forward

    https://en.wikipedia.org/wiki/Great_Chinese_Famine

    মোটামুটি ধারণা এই যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড থেকেই দুর্ভিক্ষ লেগেছিল, আশির দশক থেকেই সেটা অফিশিয়ালি স্বীকার করা হয়েছে। কোটির কাছে বা কোটির উপর মানুষ মারা গেছে সেসময়। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড মাওয়ের প্রোগ্রাম যা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষ লাগিয়েছিল। সুতরাং এর দায় বিশাল অংশে মাওয়ের উপরে বর্তায়। এই ঘটনার পরে ৬১-৬২ সালের দিকে মাও কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যান, এবং নেতৃত্ব বিষয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন। 

    তারপরে ৬৬ সালে কালচারাল রেভোলুশন নামে আরেকটি দশকব্যাপি তান্ডব শুরু করেন। যার অনেক উদ্দেশ্যের কয়েকটা হলো নিজের ক্ষমতা অ্যাবসলুট করতে পলিটবুরোর  রাজনৈতিক দুচারজন বাদে প্রতিপক্ষদের, প্রতিবিপ্লবীদের হিসেবে দাগিয়ে নিস্ক্রিয় বা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া ও রেড গার্ড/উগ্র মাও কাল্ট বানানো (গ্যাং অফ ফোর চালিত) যা একই সাথে ঝটিকা বাহিনী ও মিশনারি হিসেবে কাজ করবে।

    এসবের ভয়াবহ মুল্য দিয়েছে চীন ও উপনিবেশবিরোধী সকল আন্দোলন। যেমন ভিয়েতনাম যুদ্ধ কয়েকবছর আগেই শেষ হয়ে যেত যদি চীন তার কালচারাল রেভোলুশন নামের স্বসৃষ্ট গাড্ডায় না গিয়ে পড়ত।

    আর তিব্বত/জিনজিয়াং অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের সাথে বেইজিং এর রেকর্ড অত্যন্ত খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে ভারতের থেকেও খারাপ। আর ভারতের রেকর্ড গর্ব করার মতো নয়।

    চে'র উপনিবেশ বিরোধী লড়াই ও ১৯৪৯ এর মাওর কুয়োমিন্টাং কে হারিয়ে দেয়া এসবকে মোরাল সাপোর্ট দেয়া গেলেও উপরের তথ্যগুলো মিথ্যে হয়ে যায় না। এসব বলতে মার্কিনপন্থী বা মোটাভাই/মুদি ভাইয়ের ৭৫ পয়সা ব্রিগেডের সদস্য হতে হয় না।

    আর কপিপেস্ট দীপকে বলার আছে চীন হার্ডলি ভারতীয় মেইনস্ট্রিম কম্যুনিস্টদের বাবা। এখন যারা মাওয়ইস্ট আছে তাদেরও না। আটষট্টি বছর আগে চীনপন্থী কথাটার যে অর্থ ছিল এখন একেবারেই সেরকম কিছূ নেই। । যে স্লোগানগুলো জে্‌ইউ/জেএনইউ এবং বিভিন্ন রাস্তার প্রটেস্টে/স্থানীয় ইন্ডিজেনাস প্রটেস্টে  উঠে এসেছে যেগুলো সিংহভাগ, সম্ভবত কোনোটাই কম্যুনিস্ট পার্টি (তার সকল অবতারদের ধরে) নেতা/কর্মীদের বানানো নয়। উগ্র জাতীয়তাবাদ আর র‍্যাবল রাউজিং কে যদি তোল্লাই না দেয় কম্যুনিস্টরা তো বেশ করে। ফর অল দেয়ার ফল্টস অ্যান্ড স্টুপিডিটি।

  • dc | 103.195.***.*** | ১৭ জুন ২০২০ ১১:৫৩94393
  • হিটলার, স্ট্যালিন, পোল পোট, মাও সে তুং, ইদি আমিন ইত্যাদিরা পৃথিবীর সেরা খুনীদের মধ্যে পড়ে।
  • ভক্ত পেল্লাদ | 5.18.***.*** | ১৭ জুন ২০২০ ১২:২৯94394
  • কে একজন এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কমেন্ট করেছেন দেখলাম - কপি পেস্ট ইগনোর করুন 
     

    এই যে কপি পেস্ট ইগনোর করুন , এটা কিছু লোকের স্লোগান হয়ে ওঠার কারণ টা  কি ? এটা কি কিছুটা প্রি মেডিটেটেড ট্যাকটিকস নয় ? কালো মানুষ দেখলে অন্য ফুটপাথ দিয়ে হাঁটুন , দলিত দেখলে মুখ ঘুরিয়ে রাখুন , এগুলো তো এক ধরণের আরোপিত অন্ধত্ব ?

    হ্যা মানছি কেউ গীতা বা উপনিষদের বাণী কপি পেস্ট করলে সেই কদর্য জিনিষ বিষ্টা র মতো এড়িয়ে চলা উচিত , এক্ষেত্রে যুক্তি লাগেনা 

    কিন্তু ধরুন কেউ লেনিন এর বাণী বা দাস ক্যাপিটাল বা মাও সে তুং এর জীবনী থেকে দু লাইন কপি পেস্ট করলো , এক্ষেত্রে যদি শুধু কপি পেস্ট বলে ইগনোর করেন সেক্ষেত্রে মানব সভ্যতার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে তার ক্ষতিপূরণ কে করবে ? কে করবে মহাকালের ন্যায় মহান জিন পিং এর কাছে জবাবদিহি ?

    সেক্ষেত্রে আর একটা প্রশ্ন ওঠে , চিনে গুলোকে তো সব এক রকম দেখতে , একটা আরেকটার কপি পেস্ট , তো হো চি  মিন  হোক  বা  মাও  সে টুং , সবাইকে কি ইগনোর করা উচিত ?

    আর ওই সেলফ defined রেসিডেন্ট ভাঁড় শ্রী বিল্পব ? ওনার কথা  ছাড়ুন , ছাড়া  বাছুর , এখানেসেখানে জাবর কাটার obhyes

  • r2h | 2405:201:8805:37c0:50c7:a06d:f05e:***:*** | ১৭ জুন ২০২০ ১২:৩৮94395
  • কাজের জন্যে নেওয়া আশি ডলারের হাইফাই ভিপিএন সত্যি কাজে লাগছেঃ)
  • r2h | 2405:201:8805:37c0:50c7:a06d:f05e:***:*** | ১৭ জুন ২০২০ ১২:৪৫94396
  • ১১:৪৪ meh-ও কি আপনিই? মোটের ওপর একমত (খুব ভালো জানিনা, যেটুকু ধারনা আছে তার ভিত্তিতে আরকি)।

    এই প্রসঙ্গে মনে হল চীনের টইটা খুঁজে বের করতে হবে।
  • ভক্ত পেল্লাদ | 5.18.***.*** | ১৭ জুন ২০২০ ১২:৫০94398
  • ড়২হ 

    একটু  ওপর দিয়ে গ্যালো , আপনি কি VPN বলতে চাইনিজ প্রোডাক্ট mean করছেন ? এটার ব্যাকগ্রাউন্ড কি ?

  • রঞ্জন | 122.162.***.*** | ১৮ জুন ২০২০ ০০:২৪94417
  • দেশের সমৃদ্ধি ও  বিকাশের জন্যে শান্তি চাই। করোনা এবং ইকনমিক ডিপ্রেশনে আক্রান্ত দুই প্রতিবেশি দেশ সীমান্তে লড়াই করে রক্ত ঝরাবে--এটা কোন কাজের কথা নয়। আশা করব দুই বিদেশমন্ত্রী আজ চর্চার পরে যা বলেছেন অর্থাৎ উত্তেজনা প্রশমিত করে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে, কেউ সমঝোতা উল্লঙ্ঘন করবে না--তাই যেন হয়। যুদ্ধ হলে সবারই ক্ষতি। ১৯৬২, ৬৫ এবং ৭১ এর যুদ্ধ  ও তার পরবর্তী আর্থিক বিপর্যয় ভুলিনি।

    আর তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে দুই অকুতোভয় ছাত্রের উপর দিয়ে চীনের পিএলএ'র ট্যাংক চালিয়ে পিষে দেওয়া ভুলিনি।

    সৈন্যবাহিনী কোন স্বতন্ত্র সত্তা নয়, যুদ্ধ শুরু ও বন্ধ দুটোই রাজনৈতিক শক্তির নির্দেশে হয়। সৈন্যবাহিনী আদেশ পালন করে মাত্র।

  • বিপ্লব রহমান | ১৮ জুন ২০২০ ০৭:১২94421
  • meh 

    আপনি ঠিক বলেছেন,  চণ্ডালের  ইউকি লেবেলের পড়াশোনাও নাই।  শিক্ষিত করার প্রকল্পে আপনাকে ধন্যবাদ। 

    এখন থেকে গুরুতে আপনার এডমিনশিপ মেনে চলবো।  ভাল থাকুন। 

         

       

  • বিপ্লব রহমান | ১৮ জুন ২০২০ ০৭:২৪94422
  • পুনশ্চঃ 

    ওপরের নামটি দীপ চ্যাটার্জি  হবে।  টাইপো 

       

  • রঞ্জন | 122.162.***.*** | ১৮ জুন ২০২০ ০৮:২৫94425
  • "সেক্ষেত্রে আর একটা প্রশ্ন ওঠে , চিনে গুলোকে তো সব এক রকম দেখতে , একটা আরেকটার কপি পেস্ট , তো হো চি  মিন  হোক  বা  মাও  সে টুং , সবাইকে কি ইগনোর করা উচিত ?"

    -- অ! হোচিমিন চীনেম্যান? জানিয়া ঋদ্ধ হইলাম।  তাহলে বোধহয় নাগাল্যান্ড থেকে ভিয়েতনাম --সবাই আপনার চোখে একইরকম দেখতে। এ ধরণের সাহেবদের এথনিক প্রফাইলিংকে কী বলে জানেন নিশ্চয়? সাহেবদের চোখে কিন্তু  সবকটা ভারতীয়ই কালো , আমি এবং আপনিও।

    কারও লেখা থেকে উদ্ধৃতি দেয়া আর কপি পেস্টের মধ্যে তফাৎ হল যে প্রথমটায় মূল কথকের নাম থাকে, দ্বিতীয়টা কার্বনকপি।

    -+ আপনি যে কোন বিচারধারার সমর্থক বা সমালোচক হোন না কেন (হতেই হবে এমন কোন দিব্যি নেই) একটু তথ্য , একটু যুক্তি দিলে পড়তে শুনতে ভালো লাগে এই আর কি!

    আর বক্তব্যকে গাল দিন , মানুষটারে ক্যান?

  • ভক্ত পেল্লাদ | 217.78.***.*** | ১৮ জুন ২০২০ ১৩:১৯94432
  •  ভাই রঞ্জন 
    কোনো কারণে আপনি মূল বক্তব্যের সারকাসম টি মিস করে গ্যাছেন বা আমি ঠিক পরিষ্কার করে বলতে পারিনি 
     

    কপি পেস্ট মানেই ইগ্নোরেবল নয় কেননা বক্তব্যের সোর্স এর থেকে কনটেন্ট জরুরি ঠিক যেমন হো চি মিন আর মাও মঙ্গোলীয় কিন্তু কনটেন্ট আলাদা , তো সেটাই ছিল কথা 

    ফলতঃ আপনি মাও কে ইগনোর করলেও হো এর বক্তব্যকে একই মঙ্গোলীয় উপনিবেশ এর ফসল বলে ইগনোর করার আগে বক্তব্য পড়ে দেখা বাঞ্ছনীয় 

    কপি পেস্ট দেখেই স্ক্রল করে ইগনোর করা ই যে সর্বশ্রেষ্ঠ যুক্তিবাদী একটিভিটি সেটাও মনে করার কারণ নেই , সোর্স copied হলেও কনটেন্ট এর সারমর্ম থাকতেও পারে 

    আপনি ঘুরিয়ে যেটা বললেন সেটা আমার ও বক্তব্য ছিল 

    গান এর ভিডিও টি অসাধারণ , আরো কিছু বিনোদন হলে মন্দ হয়না , হিরো আলম এর কিছু নাই ?

    (বিনোদন ইমোজি )

  • পল্লব সরকার | 80.2.***.*** | ১৮ জুন ২০২০ ১৩:২৪94433
  • লড়াইটা লড়ছে ভারতীয় সেনা , নাগপুর পার্টি অফিস নয় 

    এই একটা লাইন এর জন্যই দীপ কে সাধুবাদ দেওয়া যায় 

    বাকি বক্তব্য যে যেমন চশমা পরে দেখবে 

  • r2h | 2405:201:8805:37c0:145:ffc6:bf89:***:*** | ১৮ জুন ২০২০ ১৩:৪৩94434
  • হিরো আলমকে খুবই তুচ্ছ্তাচ্ছিল্য খিল্লী ইত্যাদি করা হয়, কিন্তু ঐ ভদ্রলোকের জার্নিটা আমার খুব ফেনোমেনাল লাগে। জানিনা, উনি হয়তো ওরকমভাবে ভাবেন না, তবু এইসব শোবিজ ইত্যাদি শূণ্যতাটা, আমার মনে হয় হিরো আলম এবং তাঁর ফ্যান ফলোয়িং থেকে বোঝা যায়। ছ'ফুট লম্বা ডিজাইনার পোশাক পরা নায়ক দশজন গুন্ডাকে একসঙ্গে মেরে পাট করে দিচ্ছেন বা জেমস বন্ড প্লেন থেকে লাফ দিয়ে হেলিকপ্টারে পড়ে টাইয়ের নট ঠিক করে নিচ্ছেন, এর সঙ্গে হিরো আলমের অবাস্তবতার মাত্রার কতটা তফাত?

    নাসিরুদ্দিন শাহ আর সঞ্জনা কাপুরের একটা সিনেমা আছে হিরো হিরালাল। অন্য ব্যাপার যদিও।
  • রঞ্জন | 182.69.***.*** | ১৯ জুন ২০২০ ১৮:২৫94463
  • @ভক্ত পেল্লাদ,

      সত্যিই মিস করেছি, এখন বুঝলাম। সরি। নো হার্ড ফিলিং! :))

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন