এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • করোনা- রোগের উপসর্গ মাত্র

    সোমনাথ রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ৯৪০৬ বার পঠিত | রেটিং ৩.৫ (২ জন)

  • গত নভেম্বর থেকে কোভিড-১৯ অসুখ মানবদেহে প্রকট হতে শুরু করে, বিগত পাঁচমাসে বস্তুত কোনও সর্বশরীর গ্রাহ্য চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি হয় নি এই রোগের জন্য। প্রতিষেধকও যে সহজলভ্য হবে না তা বিলকুল বোঝা যাচ্ছে। ফলে, এই মুহূর্তে বিজ্ঞানের হাতে এই রোগের সুরাহা আছে, এরকম নয়। আর তাই, একমাত্র রাস্তা হিসেবে মানবগোষ্ঠীগুলির হাতে থাকছে রোগকে এড়িয়ে সুস্থ থাকার চেষ্টা করা। চিকিৎসা-চেতনার চলতি ধারণার নিরিখে এ এক ব্যতিক্রম বৈ-কী! আমাদের মধ্যে স্বচ্ছল শ্রেণির রোগভোগের মূল কারণ তার জীবনশৈলীজনিত; আমরা এই ধারণা নিয়েই বাঁচি যে শরীরের উপর অত্যাচার অনাচার যাই করি না কেন, চিকিৎসাবিজ্ঞান আমাদের বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। পরিমিত আহার, নিয়ন্ত্রিত যাপন বা কায়িক শ্রমের মধ্যে এক ভোগবিবর্জিত কৃচ্ছ আছে, তার চেয়ে ডাক্তার-পথ্যের আশ্রয় নেওয়া সহজতর আমাদের কাছে। তার উপর, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি বলতে ইদানীং আমরা পেয়ে এসেছি ম্যাজিকপ্রতিম এক বিস্ময়। আমরা নিজেরা সামান্যতম আয়াস স্বীকার করিনি, কিন্তু আমাদের মুঠো ভরিয়ে দিয়েছে নতুনতর প্রযুক্তি, সেলফোন, গাড়ি, এম্বেডেড সিস্টেমে। জীবন ও দুনিয়ার সকল সমস্যায় আমরা বিশ্বাস করতে শিখেছি বিজ্ঞান স্বর্গলোকের সমাধান নিয়ে আসবে। সেখানে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় বিজ্ঞান আর পাঁচটা সামাজিক ক্রিয়ার মতন একটা পদ্ধতি হয়েই দেখা দিচ্ছে, যার মধ্যে বিজ্ঞানী-কৌমের সমষ্টিগত অর্জন আছে, সেখান থেকে ভাইরাসটিকে বোঝার চেষ্টা আছে আর সেই বোঝার উপর দাঁড়িয়ে তার চিকিৎসা বা ভ্যাক্সিন প্রস্তাব করা এবং ডাক্তারি-গবেষণার পর্যায়গুলি মেনে সেই প্রতিষেধকের গ্রাহ্য হয়ে ওঠার পর্যায়টি আছে, যা ম্যাজিক নয়, সময় ও শ্রমসাধ্য পদ্ধতি। এর পাশাপাশি দেখছি এই রোগের সংক্রমণ হার এত বেশি যে উন্নততম দেশগুলোর পরিকাঠামো অবধি পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছে।

    ফলে, এই মহামারীটি আমাদের চলতি পৃথিবীকে তার চিন্তনের জগতেও এক বিপর্যয়ের সামনে এনে ফেলেছে, যেখানে বিজ্ঞানের স্বাভাবিক চলনে রোগটিকে কাবু করা যাচ্ছে না। বরং একমাত্র উপায় হয়ে উঠছে রোগের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানো আর সেইটা করতে গিয়ে অর্থনীতির পা হড়কাচ্ছে। অথচ, আমরা একাধিক মহামারীর মধ্যে বাস করেছি। কেবলমাত্র যক্ষ্মারোগে ভারতে দিনপ্রতি গড়ে ৬৫০ জন মারা যান। কিন্তু, এই রোগগুলির মোটের উপর চিকিৎসা আছে, আর প্রান্তিক লোকজন এর শিকার হন, যাঁরা আমাদের চোখেই পড়েন না, তার তুলনায় কোভিড-১৯-এর ধ্বংসলীলা অনেকগুণ স্পেক্ট্যাকুলার। বিত্তনির্বিশেষে মানুষ এর সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কোভিড-১৯ সামলানোর পদ্ধতিটিও অনুরূপ দর্শনীয় হয়ে উঠছে। আমরা লকডাউনের এক বিপুল আয়োজন দেখছি, যার মধ্যে দিয়ে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির প্রায় ধুধধুরি বেজে যাচ্ছে। অর্থনীতি-রাজনীতির আঙ্গিনায় প্রায় নিষিদ্ধতম উচ্চারণ এখন সরকারগুলির মুখে শোনা যাচ্ছে, মানুষকে নাকি ঘরে বসিয়ে খাইয়ে যেতে হবে, এই রোগের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে। এইবছরের অর্থনীতির নোবেল যিনি পেয়েছেন, তিনি বলছেন সরকারকে টাপা ছাপিয়ে লোকের হাতে তুলে দিতে হবে, সেই প্রভূত ইনফ্লেশনই নাকি টিকে থাকার একমাত্র উপায় হবে। অগুণতি মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, আরও অগুণতি মানুষ হারাবেন- দরিদ্র মানুষের দুর্গতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।

    ভারতের আধুনিক ইতিহাসে মারী বা মড়ক খুব কম আসে নি। মধ্যযুগের ভারতে বহু উপদেবতার আবির্ভাব হয়েছে, যাঁরা মারী হতে মানুষকে বাঁচানোর জন্য পুজো পেয়েছেন। যদিও প্রাক-বৃটিশ যুগে মড়কের মহামারী হয়ে ওঠা ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়, তবু আচার বিচারের গণ-অভ্যাসে সংক্রামক ব্যাধির সঙ্গে সংঘাতের স্মৃতি উঁকি মারে। ব্রিটিশ যুগের একদম গোড়ার থেকে এদেশে মহামারীর ঘনঘটা দেখা যায়। প্রাক-বৃটিশ ভারতে সমাজ খুবই শক্তিশালী ছিল, গণস্বাস্থ্য, গণশিক্ষার দায়িত্ব সমাজের হাতেই থাকত। ব্রিটিশ লুন্ঠনের মুখে সামাজিক সংগঠনগুলি ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেশে সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব প্রভূত বাড়তে শুরু করে। কখনো দেখি গুটিবসন্তের মহামারী ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নেমে আসছে, কখনও দেখি কলকাতা শহর গঠনের শুরুর পর্যায়ে এই অঞ্চল থেকে কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র সাম্রাজ্যে। বাইরে থেকে এদেশে আসা মহামারীর ক্ষেত্রে দুটি আলাদা করে উল্লেখযোগ্য, ১৮৯৬-৯৯ এর প্লেগ এবং ১৯১৮-এর স্প্যানিশ ফ্লু। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ঐ প্লেগের গুরুত্ব আলাদা করে উল্লেখ করার মতোন। প্লেগ দমনের নামে ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক আইন প্রণয়ন এবং শাসননীতি মহারাষ্ট্রের গুপ্তসমিতিগুলিকে সক্রিয় করে তোলে (প্লেগ কমিশনার র‍্যান্ড হত্যা), তেমনি প্লেগের ত্রাণকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়া বাঙলার যুবকদের মধ্যে থেকে গড়ে ওঠে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরবর্তী যুগের নেতৃত্ব, এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে সামাজিক আন্দোলনে বিস্তৃত করার প্রাথমিক বনিয়াদও সমভবতঃ প্লেগের ত্রাণ থেকে গড়ে ওঠে। উল্লেখ্য গান্ধিজিও সম্ভবতঃ ভারতে তাঁর প্রথম অ্যাক্টিভিজম শুরু করেন প্লেগের সময়েই। হংকং থেকে জাহাজে প্লেগের ইঁদুররা ভারতের বিভিন্ন বন্দরে এসেছিল। ক্রমে তারা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। প্লেগ কীভাবে ছড়ালো, তার সূত্র গান্ধিজি হিন্দস্বরাজে দিয়েছেন- "যদি রেল না থাকত, হিন্দুস্তানে আজ প্লেগের যে বিস্তার তা থাকত না। রেলে প্লেগের বিস্তার হয়। রেল না থাকলে লোকের এদিক সেদিক যাতায়াত কমে যেত, আর ছোঁয়াচে রোগ দেশময় বিস্তৃত হতে পারত না। আগে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাধির সংক্রমণ থেকে পৃথক হয়ে থাকতাম। রেলে দুর্ভিক্ষও বেড়েছে"। হিন্দস্বরাজের এই অধ্যায়ে তিনি দেশের দুরবস্থার এক অন্যতম কারণ হিসেবে রেলকে চিহ্নিত করেছেন। এর পূর্বপ্রেক্ষিত দেখতে গেলে আমাদের রমেশ চন্দ্র দত্ত-র ইকনমিক হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া বইটিতে একটু তাকাতে হবে। রমেশচন্দ্র ১৮২৮-৩২ সালের ব্রিটিশ দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখছেন কীভাবে ভারতের মানুষের দেয়া ট্যাক্সের টাকার ব্যায় সেচ এবং অন্যান্য জনমুখী খাতে বন্ধ হয়ে যায়, আর সেই টাকায় শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক স্বার্থে ভারতের রেলব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তিনি দেখাচ্ছেন ১৯০০ সাল অবধি রেলে যত বিনিয়োগ হয়েছে, তত বিনিয়োগ কমেছে সেচব্যবস্থায়। এবং ব্রিটিশ আমলাদের কেউ কেউও এই বিষয় লক্ষ্য করে নোট দিয়েছেন, রেল-এর পশুশক্তির বদলে জলপথ পরিবহনে জোর দিতে বলেছেন।

    একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। এবং এই পরিকাঠামো জনগণের টাকায় গড়ে ওঠে, তাদের সরাসরি কল্যাণকর কাজগুলির বরাদ্দ বঞ্চিত করেই। আমরা দেশজুড়ে যে বিশাল এয়ারপোর্ট আধুনিকীকরণের উদ্যোগ দেখছি গত দশক থেকে, তার কতটুকু আসলে গরিষ্ঠ জনতার কল্যাণ করছে সে প্রশ্ন উহ্য থেকেই যায়। বাণিজ্যের এই সংগঠন, বৃহিৎ বাণিজ্যের সুবিধার্থে বিশাল পরিকাঠামো গড়ে তোলা এই ধনতান্ত্রিক যুগের লক্ষণ এবং এই সংগঠনের পিছনে জনগণের শ্রমের মূল ভাগ নিয়োজিত হয়। এর ফলে নিশ্চিতভাবে বরাদ্দ কমে আসে গণমুখী কল্যাণপ্রকল্পগুলির। প্রাক ব্রিটিশ বাংলা যখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশে বস্ত্র সরবরাহ করত, সে বিকেন্দ্রিভূত, অসংগঠিত উৎপাদন এবং বাণিজ্যের এক মডেল চালাত। কোনও বৃহৎ শিল্পবাণিজ্য লাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ সেখানে ছিল না। ঐতিহাসিক দলিলগুলিতে দেখি, সেইসময়ে বাংলায় মানুষ মোটের উপর স্বচ্ছল। উত্তর-পলাশি যুগে বাংলার বয়নশিল্প ধ্বংস হল, বিশ্বের বস্ত্রবাজাররের উৎপাদন শুরু হল ইংল্যান্ডের মিউল গুলিতে। সেখানে স্থানীয় লোক বড় সংগঠিত মিলগুলিতে কাজ করতে শুরু করল, আর আশ্চর্যের বিষয় তাদের জীবনধারণ আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ল (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা, এংগেলস, ১৮৪৫)। অর্থাৎ, একই উৎপাদনে যখন বিকেন্দ্রিভূত সামাজিক শিল্পব্যবস্থা মানুষকে স্বচ্ছলতা দিত, বৃহৎ শিল্প সংগঠনে সে সংখ্যাগরিষ্ঠের দুরবস্থার কারণ হল। হয়ত কিছুটা একই ভাবে সংগঠিত শিল্পভিত্তিক ধনতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র শহরগুলি গড়ে ওঠার সময়ে সেখানে মানুষের ভালো থাকার মূল অক্ষগুলি অবহেলিত হল, কারণ এই শহরের বিকাশ হল কেবলমাত্র ঐ কেন্দ্রিভূত উদ্যোগ ও বাণিজ্যকে পুষ্ট করার স্বার্থে। তাই কি আমরা দেখতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা হয়ে ওঠে এশিয়াটিক কলেরার বিশ্ব-আঁতুরঘর?

    এবার, স্প্যানিশ ফ্লু-র প্রসঙ্গে আসি। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন স্প্যানিশ ফ্লু অতিমারী ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধফেরত সৈন্যরা বোম্বাই বন্দরে এই রোগ নিয়ে আসে, সেইখান থেকে ভারতের বাকি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়ার প্যাটার্ন যদি দেখি, বোম্বাই থেকে যত দূরে গেছে এর প্রকোপ তত কমেছে, বাংলায় স্প্যানিশ ফ্লু সেরকম সাড়া ফেলে নি, পরিসংখ্যান সেরকমই। এও খেয়াল করা যায় ওই সময়ের বাংলা সাহিত্যে কলেরা ম্যালেরিয়া যক্ষ্মা বসন্ত ছড়িয়ে রয়েছে, স্প্যানিশ ফ্লু বলতে গেলে নেই-ই। স্প্যানিশ ফ্লু ভারতে এক কোটির বেশি প্রাণহানি ঘটায়। কিন্তু, যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মূল (সম্ভবতঃ একমাত্র) পোর্ট অফ এন্ট্রি বোম্বে হওয়ায়, এই রোগের ধাঁচ হয় বোম্বে থেকে বিকীর্ণ হয়ে তার প্রকোপ যত দূরে গেছে তত কমে এসেছে এরকম। আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই না, শিক্ষা নিয়ে ভারতে যদি একটি বা দুটি মাত্র পোর্ট অফ এন্ট্রি চালু রাখতাম, যদি বাইরে থেকে আসা যাত্রী ও বিমান সংখ্যা কমাতাম, কোভিড-১৯কেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়ত সম্ভব হত। কতিপয় মানুষের আন্তর্দেশীয় চলাচল বন্ধ রাখলে বাকি বিশাল সংখ্যক মানুষকে সংক্রমণের আশঙ্কা বা বেরোজগারির দুরবস্থার মধ্যে একটা বেছে নিতে হচ্ছে এই আতান্তরে পড়তে হত না। আশ্চর্যের বিষয়, এইসব হিং টিং ছট প্রশ্ন আর আমাদের মাথার মধ্যে কামড়ায়ও না। কারণ আমরা ধনতন্ত্রের উচ্চতম পর্যায়ে আছি, যার নাম বিশ্বায়ন। আমাদের অঙ্কবইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার গ্রোথ আর ফরেন ইনভেস্টমেন্ট!

    আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই না, কারণ ঐতিহাসিকভাবেই আমরা একটা ভুল অর্থনৈতিক মডেলে গত আড়াইশ বছর হাঁটছি। শিক্ষা নিতে গেলে সেই মডেলটাকেই নাকচ করা হয়ে যায়, যা আমাদের আত্ম-অস্বীকৃতির সমতুল্য হবে! লকডাউনের দেশে আমাকে নিজের ঘরের কাজের একাংশ নিজেকে করতে হচ্ছে। দেখছি তাতে যা সময় যাচ্ছে তাতে আমি আমার মূল যে কাজটা ওয়ার্ক ফ্রম হোম হিসেবে দেওয়া আছে সেটাই করে উঠতে পারছি না। অথচ এই কাজটার জন্য আমি যে মাইনে পাই, তার ১/১০০ ভাগ পান সেই মহিলা যিনি আমার গৃহসহায়িকা। তার মানে আমার পেশাগত জীবন বস্তুত এক পরজীবিতার উপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে ১/১০০ ভাগ মাইনে নিয়ে আমাকে নিজের জীবনধারণের কাজগুলো করার থেকে অব্যাহতি না দিলে আমি বাকি ৯৯ ভাগ উপার্জনের কাজ করেই উঠতে পারব না! তবে এই হিসেব ভারতবর্ষের নিরিখে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মানুষ অধিক পরিশ্রমী, নিজের গৃহস্থালীর কাজ নিজেই করে নেন। তাস্বত্ত্বেও পরজীবিতার সেখানে মডেল অচল তা নয়, সামগ্রিক ভাবে অগ্রণীসমাজগুলি দাঁড়িয়েই আছে পিছিয়ে পড়া সমাজসমূজকে ১/১০০ বা আরও কম প্রদেয় দিয়ে। আমরা এও দেখছি অর্থনীতি যত উন্নত হচ্ছে প্রকৃতি তত বিপর্যস্ত। গত কুড়ি বছরের কার্বন এমিশনের গ্রাফ দেখলে একমাত্র বিশ্ব-মন্দায়নের ২০০৯ ছাড়া সব বছরেই এমিশন আগের বছরের থেকে বর্ধিত হারে বেড়েছে। অর্থাৎ, এই অর্থনীতির মডেলে মন্দা না এলে প্রকৃতি বিপন্ন হবে। আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি, এই মডেল হাজার বছর চলার নয়, একশ বছর তো নয়ই। কিন্তু, আমাদের ভরসা ওই বিজ্ঞানের ওপর, সে নাকি ম্যাজিকের মতন এর সুরাহা এনে দেবে। এমন শক্তি এনে দেবে যা কার্বন এমিট করে না, এমন প্লাস্টিক বানিয়ে দেবে যা দূষণ ছড়ায় না, ইত্যাদি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যদি তাপগতিবিদ্যার সূত্রগুলিকে ভেঙে ফেলতে পারত সেটা হত বটে। দুঃখের বিষয় বিজ্ঞান সেখানে নেহাৎ-ই নিয়মের নিগড়ে বাঁধা এক প্রক্রিয়া, ঐশী চমৎকার নয়।

    কোভিড-১৯ সেই দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে, যারা এই অর্থনৈতিক মডেলে অগ্রণীতম। আমদানি-রফতানিতে এগিয়ে থাকা প্রথম কুড়িটি দেশে থাকাই যেন এই মহামারীর তালিকায় এগিয়ে থাকার পাসপোর্ট (ইরান বাদে)। তাদের মধ্যেও সেই দেশগুলি বেশি আক্রান্ত হচ্ছে যাদের আমদানি-রফতানি জিডিপির ৩০%-এর কিছু বেশি। অর্থাৎ, যেসব দেশের টিকে থাকা বাইরের দেশের উপর নির্ভরশীল, তারা এই মহামারীর কাছে তত ভালনারেবল। যেখানে বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগের আবশ্যকতা কম, সেখানে অবস্থা তুলনায় সহনীয়। ভারতেও যদি দেখি, মেট্রো শহরগুলির মধ্যে বিদেশ-যোগাযোগ সবচেয়ে দুর্বল কলকাতায়, আর নিশ্চিতভাবে সেইজন্যই, কোভিড-১৯-এর ছড়িয়ে পড়া কলকাতায় কম। ভেবে দেখলে লক ডাউনের যুগেও সেইসব এলাকার মানুষ সহজে বাঁচতে পারবে, যেখানে বৈশ্বিক যোগাযোগের প্রয়োজন কম, নিজের চাল-ডাল-সবজি-মাছ-দুধের কিছু নিজে বানিয়ে নেয়। সেইসব মানুষও কাজ চালাতে পারবেন, যাঁরা মূলতঃ স্থানীয় মানুষের জন্য কাজ চালান। ধরা যাক, যদি এরকম একটা মডেল থাকত যে ন্যূনতম খাওয়া পরার নিরিখে প্রতিটি অঞ্চল স্বয়ংসম্পূর্ণ, ব্যাপক হারে লক ডাউন করার কোথাও কোনও প্রয়োজন হত না। সে শুধুমাত্র বাইরের থেকে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে চালিয়ে নিতে পারত। ভারতের কয়েকটি গ্রাম লকডাউনের নিজস্ব অর্থ বানিয়ে নিয়েছে গ্রামের বাইরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে। সমস্যাটা হল আমাদের ব্যবস্থায়, কোনও গ্রাম বা জেলা কে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দিকে লক্ষ্য দেওয়া হয় না, বরং লক্ষ্য রাখা হয় সে যাতে পরজীবিতার অর্থনীতিকে পুষ্ট করে যেতে পারে, শহরকে রসদ জুগিয়ে যেতে পারে।

    আসল অসুখ তাই, এই অর্থনীতির মডেলটির। সেই মডেলের বিকাশের পর্যায়ে ধনতন্ত্রের সবচেয়ে দুর্বিষহ রূপটি আমরা দেখছি বিশ্বায়ন নামে। চিনেরা কয়েক হাজার বছর ধরে হয়ত প্যাঙ্গোলিন খেয়ে এসেছে, তা থেকে রোগ-বিসুখও হয়েছে নিশ্চয়ই। এই কোটি কোটি এয়ারলাইন্স আর হাইস্পিড রেল না থাকলে এই অসুখ চিনের কিছু প্রদেশে থাকত, ক্রমে লোকে সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু, বিশ্বায়নের ম্যাজিকে সেই রোগ আমার আপনারর ঘরের চাল ডাল দুধের বোতলে লেগে থাকছে। রোগ থেকে বাঁচতে কোটি কোটি মানুষকে নিশ্চিত অর্ধাহার-অনাহারের পথে হাঁটতে হচ্ছে, সেখানে হয়ত কয়েক হাজার লোককে যাতায়াত কম করতে দিলেই এই রোগ আসত না। বস্তুত এই রোগ বড়লোকেরা এনে গরিবদের দিচ্ছেন! বিশ্ববাণিজ্যের এক সামান্য উপসর্গ কোভিড-১৯ অতিমারী। উপসর্গকে এড়াতে গিয়ে যেই না বিশ্ববাণিজ্যকে একটু থমকে যেতে হচ্ছে আর কলকাতার আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে আর ব্রহ্মপুত্রের জলের স্বচ্ছতা বাড়ছে। একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এবছর দক্ষিণবঙ্গে বজ্রপাতে কম লোক মারা যাবেন। অর্থনীতি থমকে গেলে প্রকৃতি সুস্থ হচ্ছে। তবে, এই অর্থনীতির থমকে থাকার ফল ভুগতে হচ্ছে কোটি জনতাকে, কারণ তাদের উৎপাদনশীলতার বিকাশ হয়েছে সিস্টেমের দাসত্ব করবার জন্য, নিজের খাওয়া পরাটুকু নিজেরা জোটানোর সামর্থ্য তাদের আসেনি, আমাদের চাষ অবধি পেট্রোপণ্য নির্ভর!

    এবার বসন্ত গত হলে, আবার আমরা ওই বিশ্বায়িত পুঁজির মডেলেই ফিরে যাব। এ কথাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় সভ্যতার এই মূল অসুখের বিবিধ উপসর্গ, সে প্রকৃতির বিপর্যয় হোক, সংস্কৃতির বিপর্যয় হোক বা কৃষকের আত্মহত্যার মহামারী হোক, বারে বারে ফিরে আসবে। আর, যতক্ষণ না আমরা ব্যবসাটাকে কামড়ে ধরতে পারব, ঐ উপসর্গের চিকিৎসাই হাতড়ে যেতে হবে!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ৯৪০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 162.158.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪৬92137
  • এই লেখাটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে করি, বা এই চিন্তার লাইনটা।

    এই ত্রুটিপূর্ণ ও বিষম অর্থনীতিকে ঠেকনা দিয়ে দাঁড় করানোর বদলে যদি গ্রাম কেন্দ্রিক স্বয়ংসম্পূর্ন যৌথ এফর্টের মডেল ভাবা যায়, এই সময়টা হয়তো সেরকম ভাবার সুযোগ দেবে।

    যদিও এই সময়ে মানুষ আরো বেশি কঠোর কর্তৃত্বনির্ভর, অদৃষ্টবাদী, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম হবে।
  • সুকি | 172.69.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ২২:৫২92145
  • লেখাটায় যুক্তি কিছু কিছু কি অতি সরলীকরণ হয়ে গেল না? ধনতন্ত্র, বিজ্ঞান, অর্থনীতি - সব মিলে মিশে একটু ঘেঁটে গেছে বলে মনে হল আমার।

    আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন আছে - অর্থনীতির এই সব মডেলের সাথে মানুষের বেঁচে থাকা কেমন ভাবে জড়িয়ে? মানুষের 'গড়' আয়ু দিয়ে কি পরিমাপ করা যায়, নাকি মানুষ 'কেমন' ভাবে বাঁচছে সেটা বেশী জরুরী মাপকাঠি হয়। আর তাই যদি হয়, তাহলে খারাপ ভাবে বেঁচে থেকে কি গড় আয়ু বাড়ানো যায়? মড়ক, অনাহার ইত্যাদি সব কিছু ধরেও তো মনে হয় গত একশো বছরে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় বছর কুড়ির মত। বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ, ভুল অর্থনীতি সত্ত্বেও যদি মানুষ আরো বেশী দিন বাঁচে - তাহলে সেই পুরানো দিনে ফিরে যাবার মূল ড্রাইভিং ফোর্স তা হলে কি হবে?

    সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা মনে হয় এইখানে বলা হল না তা হল আট বিলিয়ন লোকের বাঁচার মডেল কিভাবে দেড় বিলিয়ন মানুষের বাঁচার সাথে তুলনীয় হবে? বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ না রেখে শুধু গ্রাম ভিত্তিক অর্থনীতি কি গড়ে তোলা সম্ভব নাকি এখন?
  • S | 108.162.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ২৩:৪১92146
  • "এই কোটি কোটি এয়ারলাইন্স আর হাইস্পিড রেল না থাকলে এই অসুখ চিনের কিছু প্রদেশে থাকত, ক্রমে লোকে সুস্থ হয়ে উঠত।"
    এই যুক্তি দিয়ে দেখলে মানুষ যেখানে জন্মেছে তার ৫০ মাইলের বাইরে যেতে বারণ করতে হয়। তাহলে অন্য দেশে তৈরী মেডিসিনও আমদানি রপ্তানি বন্ধ করতে হয়। ধনতন্ত্রের বেশ কিছু সমস্যা আছে, বিশ্বায়নের আছে। কিন্তু তা থেকে যে যুক্তি খাড়া করা হয়েছে, সেটা বিশেষঃ জুতসই না। এক সময় সত্যিই লোকে সেভাবেই থাকত, তাতে যে খুবএকটা ভালো থাকত তার কোনো প্রমাণ নেই।
  • Somnath Roy | ১১ এপ্রিল ২০২০ ০০:২২92147
  • সুকি, বুঝতে পারলাম না কোন প্যারামিটারটাতে জোর দিতে চাইছেন? ভালো করে বাঁচা না বেশি দিন বাঁচা। আমি বৃহৎ-শিল্প, পুঁজি-পুঞ্জীভবনের উল্টোদিকে একটা মডেল বলেছি, যেটা কয়েক শতাব্দী আগে বাংলাতেই ছিল। বাংলা বা ভারতে সেই মডেল যখন পর্যুদস্ত হয়, সেই মুহূর্তে কিন্তু লাইফ এক্সপেক্টেন্সি অনেকখানি কমে এসেছিল। সামাজিক উৎপাদনের মডেল থেকে বৃহৎ-পুঁজির মডেলে প্রতিসরণের এক দশকের মধ্যে মন্বন্তরে বাংলার ১/৩ অংশ মানুষ মারা গেছিলেন। আর, পলাশীর অব্যবহইত আগে মানুষ যে এখানে উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের থেকেও অনেকটা ভালো ছিলেন, সে নিয়ে ঐতিহাসিকদের লেখাপত্রও আছে। তবে এদেশে মানুষের বিপর্যয়ের বিনিময়ে ইউরোপের একাংশে মানুষের নিশ্চয়ই উন্নতি হওয়ার কথা, সেই সময়ে। লাইফ এক্সপেক্টেন্সি সম্ভবতঃ বেড়েছিল, কোয়ালিটি অফ লাইফ নিয়ে মতভেদ আছে।
    যাই হোক, বাংলার সামাজিক উৎপাদনের মডেল ২৫০ বছর আগে পরিত্যক্ত হয়, সেই মডেল তার নিজের ক্রিয়াশীলতার সময়ে স্থাণু কিছু ছিল না। আমরা দেখেছি তার নিজের এগিয়ে চলার একটা ধাঁচ ছিল, সেই ধাঁচে এগিয়ে সে আজকের দিনে কোথায় পৌঁছত আর সেখানে লাইফ এক্সপেক্টেন্সি আজকে কতটা করত, সে ভাবনা আকাশ-কুসুম চয়ন। আমরা বড়জোড় চ্যূতিপর্বের কয়েক দশক পরিসরে দুটো মডেলকে তুলনা করতে পারি, যদি প্যারামেট্রিক তুলনা করতেই হয়।
    একটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট হল, কদিন আগে সিদ্ধার্থ মুখার্জির আনন্দবাজারের আর্টিকেলেও উনি লিখেছেন, গুটিবসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে এদেশে ভারিওলাইজেশন প্রচলিত ছিল, যা একাদশ শতাব্দীতে চিনে আবিষ্কৃত হয় এবং সেখান থেকে বাংলায় আসে। অর্থাৎ, অন্য সভ্যতার সঙ্গে গ্রহণ বর্জনও ছিল।
    এইটা এস-এর প্রশ্নের উত্তরও কিছুটা, পঞ্চাশ মাইলের বেশি কেউ বেরোতে পারবে না এরকম মনে হয় ছিল না। অনেকেই ঘুরে টুরে বেড়াত, আগেও তো লিখলাম, বাংলার পণ্য ইউরোপের বাজার দখল করেছিল, মানুষ না গেলে পণ্য যাবে কী করে। কিন্তু, এই যাতায়াতটাকে ইটসেলফ একটা পণ্য করে তোলা ছিল না।
    কথা হচ্ছে, বিদেশে হওয়া উৎপাদন ছাড়া সমাজ অচল হয়ে যাবে এই অ্যাসার্শন ছিল না। বাংলা ছাড়াও নিশ্চয়ই পৃথিবীর অপরাপর প্রান্তে বিভিন্ন অর্থনৈতিক মডেল ছিল, সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিই নিশ্চয় স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনীতির কথা বলত, পরজীবী প্রকৃতিবিমুখ অর্থনীতির থেকে বেরোতে সেইসব নির্যাস খুঁজে দেখা দরকার বইকী!
  • স্বাতী রায় | 162.158.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৪92171
  • বার বার পড়ার মত লেখা। পড়ার আর ভাবার। বড্ড কম জানি বলে আর কোন মন্তব্য করছি না এখন।
  • স্বাতী রায় | 172.69.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৪92172
  • বার বার পড়ার মত লেখা। পড়ার আর ভাবার। বড্ড কম জানি বলে আর কোন মন্তব্য করছি না এখন।
  • স্বাতী রায় | 172.69.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৪92173
  • বার বার পড়ার মত লেখা। পড়ার আর ভাবার। বড্ড কম জানি বলে আর কোন মন্তব্য করছি না এখন।
  • রৌহিন | 108.162.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৩৩92174
  • এই লেখাটার মূল সুরের সাথে আমি একমত। সুকি বা এস যে সব সরলীকরণের কথা লিখেছেন তা ভুল নয়, তবে এক্ষেত্রে আমার মনে হয় পুরো বিষয়টাই এতটাই জটিল (৭০০ কোটি মানুষের বেঁচে থাকার প্রশ্ন) যে এবিষয়ে যাই লেখা হোক তাতে কিছুটা সরলীকরণ থাকবেই। ডাস ক্যাপিটালেও ছিল। পুরোটা কভার করে লিখতে গেলে কোন লেখাই আর হবে না।

    আমাদের পরমুখাপেক্ষী পরজীবি জীবনযাত্রা নিয়ে যেটা লিখেছো সেটা ভীষণভাবে আমারও মনে হয়। ওঁরা ওঁদের প্রাপ্য অর্থের অনেক কমে, আমাদের সাধ্যের মধ্যে এসে কাজগুলো করে দিচ্ছেন বলেই আমাদের এই জীবনযাত্রা অ্যাফোর্ড করা সম্ভব হচ্ছে

  • dc | 108.162.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২৬92178
  • কার্যকারন সম্পর্ক বোধায় উল্টে ফেলা হচ্ছে।

    ক্রমাগত নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে আর অয়াপ্লাই করা হচ্ছে, তার ফলে অর্থনৈতিক মডেলও বিবর্তিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক মডেলের বিবর্তনের ফলে নতুন প্রযুক্তি আসছে, তা নয়।

    মাস ট্রান্সিট আর লং ডিসট্যান্স ট্রাভেল ব্যাবস্থায় ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে বলে বিশ্বায়ন দ্রুততর হয়েছে। একদল ক্যাপিটালিস্ট ষড়যন্ত্র করেছে বিশ্বায়্ন করবে, আর সেজন্য মানুষ লং ডিসট্যান্স ট্রাভেলে উন্নতি করেছে (তার পেছনে হাজারটা ছোট ছোট প্রযুক্তির উদ্ভাবন আছে), এরকম না।

    কমিউনিকেশান সিস্টেমের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে বলে বিশ্বায়ন দ্রুততত হয়েছে। কেউ বিশ্বায়ন করতে চেয়েছে, সেজন্য কমিউনিকেশানের উন্নতি হয়েছে, এরকম না।

    কোটি কোটি হাই স্পিড রেল আর এয়ারলাইন না থাকলে কোভিড ছড়াতো না, সে তো অবশ্যই। তাহলে আবিষ্কার টাবিষ্কার থামিয়ে গুহায় ফিরে গেলেই তো হয়। কোভিড এক্কেবারে জব্দ হয়ে যাবে।
  • র২হ | 162.158.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৫৮92179
  • ভারতে রেলপথ পাতা প্রাশাসনিক ও বাণিজ্যিক সুবিধের জন্য পরিকল্পিত না?

    আমেরিকাতে গোল্ডরাশের সঙ্গে জড়িয়ে। স্টিম ইঞ্জিনের আবিষ্কারও কি যেন সব খুব প্র্যাকটিকেল কারনে যদ্দূর মনে পড়ে।

    হাল্কা শক্ত নৌকো সব, নতুন দেশ দেখা ও লুটপাট করার জন্যে (নেটফ্লিক্স্ ভাইকিংস দেখছি কিনা :)) 

    কার্যকারন সম্পর্ক জটিল কিন্তু বহুমুখিও।

  • র২হ | 172.69.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৯:০৮92180
  • গুহায় ফিরতে হবে কিনা সেই প্রশ্ন অবশ্য এই আলোচনায় বোধয় আসবেই। লোকজনও কি দেশ দেখবে না, এক মহাদেশ থেকে অন্যত্র যাবে না?

    এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তো স্পষ্ট আমাদের কাছে। কিন্তু মূল প্রস্তাবের সঙ্গে এগুলো কী করে অ্যাকোমোডেট করা হবে তা আমার জানা নেই।

    আবার, মূল প্রস্তাব বোধয় ঠিক সেরকম নয়। আবিষ্কার গুলির ইকনমিক ভায়াবিলিটি সরিয়ে, ডিসপ্লেসমেন্টকে বাধ্যতার বদলে বাছাইয়ের আওতায় আনলে কি হবে সেসব।

    এক পুলিসকর্মীর জবানী- সাতজন শ্রমিক খড়গপুর থেকে হেঁটে ওড়িষার কোন গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, রাতে পুলিশ ধরে উত্তাল ক্যালায়, প্রথমেই। এবার পবঙ্গ  তাদের রাখতে চাইছে না, ওড়িষা তাদের নিতে চাইছে না। তো, এই হৃদয়হীন ব্যাবস্থাটা সিরিয়াসলি ফ্লড।

  • Somnath Roy | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫৬92182
  • প্রযুক্তি থাকবে না এরকম বলতে চাই নি, সেরকম মনে হচ্ছে নাকি? বললাম যে বাংলা ইউরোপে বস্ত্র রপ্তানি করত, সেটা প্রযুক্তি ছাড়া কী করে হবে?
    প্রশ্নটা ছিল গণমুখী উৎপাদন দরকার না কেন্দ্রিভূত উৎপাদন ব্যবস্থা দরকার। কেন্দ্রিভূত উৎপাদন ব্যবস্থা, বৃহৎ পুঁজি এইসবই যে প্রযুক্তিগুলিকে নেয় সেগুলি নিজসেদের স্বার্থেই তৈরি করে। ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লপবের ইতিহাসও যদি দেখি প্রযুক্তি আকাশ থেকে পড়ে নি, এরকম মোটেই নয় যে জেমস ওয়াট কল বানিয়ে ফেললেন আর কটন ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বব্যাপ্ত হল। বরং ম্যাথু বোল্টনের দীর্ঘদিনের ইনভেস্টমেন্টের জন্যই ওয়াট তার হাজার খানেক মডেল (লিটারালি নয়) থেকে কন্ডেন্সারের এফিসিয়েন্ট ডিজাইনটা বানাতে ফেললেন। সম্ভবতঃ প্রায় সমস্ত ইনভেনশন এবং ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এই গল্পটা সত্যি। পুঁজি একটা পার্টিকুলার উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ হয়েছে এবং অনুরূপ আবিষ্কার হয়েছে।
    প্রশ্নটা সেই লক্ষ্যটাকেই, কোন ধরণের প্রযুক্তির পিছনে মানব সমাজ ইনভেস্ট করবে সেটা নিয়ে-
  • হখগ | 162.158.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫৮92183
  • সুন্দর লেখাটির র জন্য লেখক সোমনাথ রায় মশাইকে কে ধন্যবাদ। লেখার ব্রড স্কোপ আমার ভালো লাগে। রৌহিনের সঙ্গে একমত।
    কতগুলো বিষয় কে আড্রেস করলে ভালো হত, তার তালিকা করাই যায়, কিন্তু সে তো সব প্রবন্ধ ই তাই।
    ডিসি, বড় স কে আমার বলার মত কথা একটাই। ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এর শুরু থেকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সবটাই সংকীর্ণ অর্থে রোমান্টিক না।
  • হখগ | 162.158.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৯92184
  • বড় স না, সুকি
  • হখগ | 162.158.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ২০:২৯92185
  • ""একদল ক্যাপিটালিস্ট ষড়যন্ত্র করেছে বিশ্বায়্ন করবে, আর সেজন্য মানুষ লং ডিসট্যান্স ট্রাভেলে উন্নতি করেছে (তার পেছনে হাজারটা ছোট ছোট প্রযুক্তির উদ্ভাবন আছে), এরকম না""

    কিন্তু হুতো এব়ং আমি যেটা বলছিলাম সেটা হল, ক্যাপিটালিজম এর কাজে লাগাটা কখনো ই প্রযুক্তি র মোটিভেশন না। এটা বলা কি ঠিক হবে, এমনকি এটা যদি ধরে ও নেই কতগুলো বিশেষ প্রযুক্তি র কারনে ই সর্বশেষ ধরনের বিশ্বায়নটা সম্ভব হয়েছে।

    সোমনাথ বাবু কে যেটা বলার ছিল তে লেখাটায় ক্যাপিটালিজম এর বিবর্তন এর ঐতিহাসিক প্রসেস টা। ফেজ গুলো র মধ্যে ডিসটিংকশন গুলো যদি আরেকটু ঢোকানো যেত তাহলে এই অভিযোগ করা কঠিন হত যে বিশ্বায়নের ক্রিটিক লেখার সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এর ক্রিটিক ব্যবহার করা হচ্ছে ইত্যাদি বা প্রিকলোনিয়াল মার্কেট মেকানিজম গুলোর সোশাল মোবিলিটির সমস্যা আড্রেস করা হচ্ছে না।

    কিন্তু ওভার অল রিয়েলি গ্রেটফুল তে আপনি বড় লেখা র দৈর্ঘ্য টাকে স্কোপের সমস্যা হতে দেননি।
  • Somnath Roy | ১১ এপ্রিল ২০২০ ২০:৪৯92186
  • @হখগ, বাকি বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলে মন্দ হয় না।
  • হখগ | 162.158.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২০ ২১:১৯92187
  • আমি সিন্সিয়ারলি ই বলছি, মাইরি, খুব ভালো লেগেছে আপনার লেখাটা।
  • Somnath Roy | ১১ এপ্রিল ২০২০ ২১:২৯92188
  • থ্যাঙ্কস। আমি বলছিলাম যে আমি একটা কথামুখ টাইপের শুরু করছিলাম, কারণ একটা গ্লোবাল ডিজাস্টারে গ্লোবালাইজেশনকে চিহ্নিত করে লেখা বেশি দেখছিলাম না। এই প্রসঙ্গে অন্যান্য আস্পেক্ট এলে ভালো হয়। বিশেষতঃ ক্যাপিটালিজমের গড়ে ওঠার ফেজ নিয়ে কী ভাবছিলেন সেটা লিখলে পারেন। আমার জ্ঞান ঐ পরিধিতে খুবই সীমিত, আমি ভারতের পরাধীনতার আস্পেক্টটুকুকেই শুধু আনতে পেরেছিলাম।
  • dc | 108.162.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০০:১৫92190
  • সোমনাথবাবুত পোস্টগুলো পড়ার পরেও আমার যেন মনে হচ্ছে কজ- এফেক্টের মধ্যে কিছু একটা গুলিয়ে যাচ্ছে। বা ব্যাপারটা আমার কাছে আরও ঘেঁটে গেল, সেটা অবশ্যই আমার বোঝার অক্ষমতা হতে পারে।

    আমি যেটা বলতে চেয়েছি, নানান লোক সবসময়েই কিছু না কিছু টেকনোলজি উদ্ভাবন করেই চলেছে, ঘাঁটাঘুঁটি করেই চলেছে। আর কিছু লোক (বা কোম্পানি বা দেশ) সবসময়েই সেই আবিষ্কার গুলো দিয়ে প্রফিট বেশী করার চেষ্টা করেই চলেছে। এই দুটো প্রসেস এর মধ্যে আদান প্রদান থাকলেও, দ্বিতীয় প্রসেসটা প্রথম প্রসেস এর চালিকা শক্তি হয়ে ওঠেনি। মানে কিছু লোক নিজেদের প্রফিট এর জন্য আবিষ্কার করিয়ে নিয়েছে, এরকম প্রায় কখনো হয়নি। বরং যা আবিষ্কার হয়েছে সেগুলো নিজেদের স্বার্থে প্রফিটের জন্য ব্যবহার করেছে।

    "কেন্দ্রিভূত উৎপাদন ব্যবস্থা, বৃহৎ পুঁজি এইসবই যে প্রযুক্তিগুলিকে নেয় সেগুলি নিজসেদের স্বার্থেই তৈরি করে। ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লপবের ইতিহাসও যদি দেখি প্রযুক্তি আকাশ থেকে পড়ে নি, এরকম মোটেই নয় যে জেমস ওয়াট কল বানিয়ে ফেললেন আর কটন ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বব্যাপ্ত হল। বরং ম্যাথু বোল্টনের দীর্ঘদিনের ইনভেস্টমেন্টের জন্যই ওয়াট তার হাজার খানেক মডেল (লিটারালি নয়) থেকে কন্ডেন্সারের এফিসিয়েন্ট ডিজাইনটা বানাতে ফেললেন। সম্ভবতঃ প্রায় সমস্ত ইনভেনশন এবং ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এই গল্পটা সত্যি।"

    এটা আমার ভুল মনে হচ্ছে। প্রথমত, স্টিম ইঞ্জিন বা স্টিম পাওয়ার শুধুমাত্র ম্যাথু বোল্টনের আর জেমস ওয়াটের উদ্যোগে জনপ্রিয় হয়েছিল, এরকম দাবী করলে একেবারেই ভুল হবে। জেমস ওয়াট না হলে অন্য কেউ বা অন্য অনেকে মিলে স্টিম পাওয়ার কাজে লাগানোর উপায় আবিষ্কার করতো, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশান হয়তো অন্য কোন ভাবে আসতো, কিন্তু আসতোই। সেরকমই, "সম্ভবতঃ প্রায় সমস্ত ইনভেনশন এবং ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এই গল্পটা সত্যি" - এখানে কার্যকারন সম্পর্কটা উল্টে গেছে, যেটা ঠিক না। আবিষ্কারের পেছনে ইনভেস্টমেন্টের রোল অবশ্যই আছে, কিন্তু ইনভেস্ট করার জন্যই আবিষ্কার হচ্ছে, এটা ঠিক না।
  • dc | 108.162.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০০:২১92191
  • "কার্যকারন সম্পর্ক জটিল কিন্তু বহুমুখিও।"

    অব্শ্যই, এটা মানতে কোন দ্বিধা নেই।
  • dc | 108.162.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০০:২৫92192
  • "একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। এবং এই পরিকাঠামো জনগণের টাকায় গড়ে ওঠে, তাদের সরাসরি কল্যাণকর কাজগুলির বরাদ্দ বঞ্চিত করেই। আমরা দেশজুড়ে যে বিশাল এয়ারপোর্ট আধুনিকীকরণের উদ্যোগ দেখছি গত দশক থেকে, তার কতটুকু আসলে গরিষ্ঠ জনতার কল্যাণ করছে সে প্রশ্ন উহ্য থেকেই যায়"

    ইয়ে, এই প্রশ্নও আমার কাছে উহ্য না ঃ-) নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে বিশাল এয়ারপোর্ট আধুনিকীকরণ, বিশাল বন্দর আধুনিকীকরণ, ডিপ সাপ্লাই চেন বা গ্লোবাল সাপ্লাই চেন - এসবে অতি অবশ্যই সারা পৃথিবীর জনগণের কল্যাণ হচ্ছে।
  • r2h | 162.158.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০১:০৩92193
  • গরিষ্ঠ জনতা - এইটা কিওয়ার্ড আরকি।

    যে লোকটা অভুক্ত রোদে হেঁটে দম ফেটে মারা গেল রাস্তায়, বিশ্বায়ন বা প্লেন আধুনিক সভ্যতা তার কোন উপকার করেনি।
    হয়তো একটা স্বয়ংসম্পূর্ন ব্যবস্থার মধ্যে থাকলে সে অপ্রবাসী হয়ে দিনান্তে শাকান্ন ভক্ষণ করে যদ্দিন হয় বেঁচে নিত পরিজনে মাঝে।

    আবার অন্য দিকে দেখতে গেলে আধুনিক চিকিৎসা বা যেমনই হোক বন্টন ব্যবস্থা না হলে হয়তো তার দুই প্রজন্ম আগেই ওলাওঠা বা দুর্ভিক্ষে ফৌত হয়ে যেত; আধুনি ব্যাব্স্থায় সে জীবনের সুযোগটুকু পেয়েছিল, শেষরক্ষা হলো না, আধুনিক ব্যবস্থাটাকে আরো মজবুত করতে হবে।

    এবার এই তুল্যমূল্য বিচার করাটা, এতেও হয়তো আধুনিক ধারনার সাহায্য নিয়ে, বড় পরিমান তথ্য বিশ্লেষণ করে কোন উপপাদ্যে আসা যাবে।

    আবার, হরেদরে সচেতনতা, এমপ্যাথি, এইসব বেড়েছে বলে আমার বিশ্বাস (মানে একেবারে ব্যক্তিগত মত তেমন না, অন্য সব ছেড়েই দিলাম, রাষ্ট্রীয় শাস্তি, প্রতিশোধ এইসব বিষয়ে লম্বা সময়ে পরিবর্তনশীল জনমত মোটামুটি রেকর্ডেড), তো অধিকতর ব্যবস্থা মানবিক যেহেতু বিবেচ্য তাই এমপ্যাথি ফ্যাকটরটা আসবে, বেসিক চাহিদাভিত্তিক সমাজে কী আজ আমরা মানবিকতা বলতে যা বুঝি তা একটু হোঁচট খাবে?
  • o | 162.158.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫৮92200
  • অ্যান্টি-গ্লোবালাইজেশন একটা পুওর আর্গুমেন্ট। কারণ সঙ্গে সঙ্গে উল্টোদিক থেকে দাও ফিরে অরণ্য বা প্রস্তরযুগে ফিরে যাও ইত্যাদি আওয়াজ খেতে হবে, শুরুতে মডার্ন লুডাইট বলে লেবেল করা হবে এবং পরে হিপোক্রিট। ঃ-))) বলা বাহুল্য, এই লাইন অফ আর্গুমেন্টটা বেশ নাইভ। যেরকম গণতান্ত্রিক দেশ বলতে একসময় আম্রিগার বন্ধু দেশগুলিকে বোঝাত (এখন তো স্যামচাচার ভীমরতি ধরেছে), সেরকম গ্লোবালাইজেশন বা ফ্রি ট্রেডের বাস্তব অর্থ আভিধানিক অর্থ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যদি গ্লোবালাইজেশনকে আভিধানিক অর্থে ধরি, তাহলে সেটা ক্যাপিটালিজমের অনেক আগে থেকে এক্সিস্ট করছে। সিল্ক রুটও গ্লোবালাইজেশনের উদাহরণ। লেফটিস্টরা শুরু থেকেই গ্লোবালাইজেশনের কথা বলে এসেছে। টয়েনবি কারেক্টলি পয়েন্ট আউট করেছিলেন যে কমিউনিজমের প্রতিপক্ষ আসলে ক্যাপিটালিজম নয়, ন্যাশনালিজম। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতেও সরাসরি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশনের উল্লেখ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সমস্যা নেই। প্রব্লেমটা হচ্ছে নিওলিবেরাল পলিসি কর্তৃক গ্লোবালাইজেশন টার্মটার অর্থ পাল্টে যাওয়া। গ্লোবালাইজেশনের মাপকাঠি হিসেবে যদি ক্রস-বর্ডার লেবার মুভমেন্টকে ধরি, তাহলে দেখা যাচ্ছে ১৮৭০ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত পৃথিবীর ইকনোমি সবচেয়ে বেশি গ্লোবালাইজড ছিল। টেকনোলজির সেরকম উন্নতি না হওয়া সত্ত্বেও। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৩-৭৫-এর রিসেশন পর্যন্ত যেটা ক্যাপিটালিজমের গোল্ডেন এজ এবং টেকনোলজির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, তখন দেখা যাচ্ছে গ্লোবালাইজেশন অনেক কম। অর্থাৎ ডিগ্রী অফ গ্লোবালাইজেশনের সঙ্গে টেকনোলজির উন্নতির কোন ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেই। ক্যাপিটালিজম এবং গ্লোবালাইজেশনেরও ভাই-ভাই সম্পর্ক নয়। এইবার মাপকাঠিটা বদলে যদি ক্যাপিটালের মুভমেন্ট হিসেবে গ্লোবালাইজেশনকে দেখা হয়, সেক্ষেত্রে স্টেট ক্যাপিটালিজমের সহায়তায়, রেগান-থ্যাচার পিরিয়ডের নিওলিবেরাল পলিসির সৌজন্যে ক্যাপিটালের মুভমেন্ট অবিশ্বাস্যরকম বেড়েছে। তাতে ডেভেলপিং কান্ট্রিগুলোয় ইনইকুয়ালিটি বেড়েছে হু-হু করে। ফলে ক্লিয়ারলি তর্কটা গ্লোবালাইজেশন ভার্সেস অ্যান্টি-গ্লোবালাইজেশনের নয়, টেকনোলজি ভার্সেস গুহায় ফিরে যাওয়া নয়, বরং গ্লোবালাইজেশন ইন ফেভার অফ পিপল নাকি গ্লোবালাইজেশন ইন ফেভার অফ প্রাইভেট মাল্টিন্যাশনালস, সেটার।
  • S | 162.158.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৩92201
  • প্রথমত ডিসি যেটা লিখেছেন সেটা খুব জরুরী। টেকনলজি আগে থেকেই থাকে, ক্যাপিটাল লাগিয়ে সেটাকে ছড়ানো হয়। রেলওয়েজের টেকনলজি আগেই ছিল। ডিমান্ড যখন তৈরী হয়, বাণিজ্যিক এবং বিশেষ করে অ্যাড্মিনিস্ট্রেটিভ (আসল মানে মিলিটারি), তখন ক্যাপিটাল এসে সেটাকে মাস ট্রানজিটে পরিণত করে। ক্যাপিটাল জাস্ট এগজিস্টিং টেকনলজিকে ব্যবহার করে। সেটার ফলে ক্যাপিটালিস্ট প্রচুর বড়লোক হয়, সোসাইটির একটা খুব অংশও লাভবান হয়, কিন্তু একটা অংশকে এই উন্নতির মাসুল দিতে হয়। সেটার প্রতিকার হল ওয়েল্থ রিডিস্ট্রিবিউশান। এই শেষ পার্টটা ঠিকঠাক হচ্ছে না মেনে নিচ্ছি। কিন্তু তাই বলে ওয়েল্থ ক্রিয়েশান বন্ধ করে রাখাটা হঠকারিতা হবে।

    একটা উদাহরণ দিই। ধরুন এমন টেকনজি, বীজ ইত্যাদি এল যাতে সব জমিতেই চাষ করা সম্ভব। এর ফলে সব জমিই চাষের জমি হয়ে গেল। এর ফলে চাষীরা লাভবান হল, সেই টেক আর এগ্রি কোম্পানি প্রচুর লাভ করল, খাদ্য সুরক্ষাও হল, কিন্তু বেশ কিছু লোক জমি হারাবে। তাদেরকে যথাযথ কমপেনসেট করতে হবে। সেটা সরকারের কাজ। ইত্যাদি।
  • S | 162.158.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২১92202
  • গ্লোবালাইজেশানের একটা ইনহেরেন্ট প্লট আছে। কনস্পিরেসি টাইপের। সেটা হল গ্লোবাল কনফ্লিক্ট কমানো। আজকে আমেরিকার কোম্পানিদের প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট আছে চীনে, আবার চীন প্রচুর এক্সপোর্ট করে আমেরিকাতে। ফলে এই দুই দেশের মধ্যে প্রচুর কনফ্লিক্ট থাকা সত্ত্বেও মেজর ওয়ারফেয়ার হওয়া অসম্ভব। আজকে যদি প্রচুর ভারতীয় শিল্পপতিদের পাকিস্তানে ইনভেস্টমেন্ট থাকলে আর পাকিস্তানের অর্থনীতি ভারতের উপর বড়সড় ভাবে নির্ভরশীল হলে এই কনফ্লিক্টও ভদ্রস্থ জায়্গায় যেত। এর ফলে অবশ্যই সব দেশের সরকারের সোভেরেইনিটি কমেছে, সবারই হাত বাঁধা। সেটা যে অন্তত কনফ্লিক্ট রেজুলিউশানে কাজে দিচ্ছে, সে তো চোখের সামনেই দেখতে পারছি। এবারে কেউ যুক্তি দিতেই পারেন যে এতে ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার স্ট্রাকচার স্টেটাস কুওতে থাকছে। সেটা আংশিক সত্যি।
  • S | 108.162.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৬:৪৩92204
  • o এর ৫ঃ৫৮ এর জবাব।

    হ্যাঁ আপনার বেশিরভাগ বক্তব্যই ঠিক আছে। কিন্তু নিওলিবারল পলিসিতে এসে আমার একটু আপত্তি আছে। নিওলিবারল পলিসির দিক থেকে গ্লোবালাইজেশানের সবথেকে বড় প্রজেক্ট হল গ্যাট আর ডাব্লিউ টি ও। এদের চার্টারে কিন্তু দেখা যাছে লেখা আছেঃ ফ্রি মুভমেন্ট অব ক্যাপিটাল, টেকনলজি, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস, আর লেবার।

    এখন এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে টেকনজির উন্নতির ফলেই - এয়ারলাইন্স, লজিস্টিক্স, শিপিং আর ফ্রাইট লাইনস, ইন্টারনেট, কমিউনিকেশানস, ফরেন কারেন্সি ট্রেড, ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্কিং ইত্যাদি।

    সমস্যা হল প্রথম তিনটে (লেবার বাদে) ক্যাপিটালিস্টদের জোড়ে হয়ে গেছে। লেবার মুভমেন্ট এখনও অপ্রেক্ষাকৃত কম আছে, তার কারণ রেসিজম। ভেবে দেখুন প্রায় সব দেশ ক্যাপিটাল, গুডস, সার্ভিস, আর টেকনলজির জন্য বর্ডার হাট করে খুলে দিয়েছে। কিন্তু লেবার-পিপল মুভমেন্টের কথা এলেই সব বর্ডার বন্ধ। এখানেই পলিটিক্স এসে যায়। কারণ যে দক্ষীনপন্থীদের সহায়তায় বাকীগুলোর ব্যবস্থা করেছে বিগ ক্যাপিটাল, সেই দক্ষীনপন্থীদের ক্ষমতায় থাকার সবথেকে বড় অস্ত্র হল রেসিজম আর ডিসক্রিমিনেশান। ফলে মনে হচ্ছে যেন গ্লোবালাইজেশান ফেইল করছে। সব দেশই চায় যে অন্য দেশ তার জিনিসপত্তর, ক্যাপিটালের জন্য বর্ডার খুলে দিক, কিন্তু সেই দেশের লোকের জন্য নিজের বর্ডার কেউ খুলতে রাজী নয়।
  • S | 108.162.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৬:৪৭92205
  • এর পরিবর্তে বিগ ক্যাপিটাল প্রচুর ট্যাক্স কাট আদায় করে নেয়। ফলে যারা গ্লোবালাইজেশানের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তাদেরকে কমপেনসেট করা যায় না। ফলে একদল সবসময়ই মনে করে যে তারা লেফট আউট। গ্লোবালাইজেশানের পর থেকে প্রায় প্রত্যেক আমেরিকান অ্যাডমিনিস্ট্রেশান (ওবামা ছাড়া) ট্যাস্ক কাট দিয়েছে।
  • o | 108.162.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৩৮92206
  • সেটাই বললুম। গ্লোবালাইজেশন কিভাবে মেজার করছেন তার ওপর ডিপেন্ড করছে। গ্লোবালাইজেশন মানে যদি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন হয়, নিওলিবেরাল পলিসি তার বারোটা বাজাচ্ছে। অন্যদিকে, ফ্রি ক্যাপিটালের মুভমেন্টকে গ্লোবালাইজেশন হিসেবে দেখলে তাতে ডেভেলপিং কান্ট্রিগুলো মরবে। এই তো ব্যাপার। সব টার্মগুলো ভুলভাবে ইউজ হয়। অ্যাডাম স্মিথের জন্য ফ্রি ট্রেডের শর্ত ছিল ফ্রি সার্কুলেশন। এখন যেটাকে ট্রেড বাড়ছে বলে কনজারভেটিভরা লাফায়, ধরুন নাফতা, নর্থ আমেরিকার একই কোম্পানি এক দেশ থেকে অন্য দেশে গুডস পাঠাল কোন টেকনিক্যাল কারণে, এটা ক্ল্যাসিকালি ট্রেড নয়। বর্ডার ক্রস করছে, কিন্তু কোম্পানির ভেতরে ইন্টার্ন্যাল ইকনমিক এক্সচেঞ্জ মাত্র। একে ফ্রি ট্রেড বলা মিনিংলেস।
  • Somnath Roy | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৫২92207
  • "এটা আমার ভুল মনে হচ্ছে। প্রথমত, স্টিম ইঞ্জিন বা স্টিম পাওয়ার শুধুমাত্র ম্যাথু বোল্টনের আর জেমস ওয়াটের উদ্যোগে জনপ্রিয় হয়েছিল, এরকম দাবী করলে একেবারেই ভুল হবে। জেমস ওয়াট না হলে অন্য কেউ বা অন্য অনেকে মিলে স্টিম পাওয়ার কাজে লাগানোর উপায় আবিষ্কার করতো, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশান হয়তো অন্য কোন ভাবে আসতো, কিন্তু আসতোই।"
    বোল্টন ওয়াট ছাড়া আর কেউ স্টিম এঞ্জিন বানাতে পারত না এরকম নয়। কিন্তু, যে ওয়াটই বানাত, তার একজন বোল্টন লাগত। ট্রেভিথিক-বুলের জন্য জন হার্ভে লেগেছে , যিনি জাহাজ নির্মাতা- জাহাজ ব্যবসায়ী ছিলেন। আর, কে না জানে কলোনি থেকে লুঠের মাল কীভাবে আসত। স্টিফেনসন পেয়েছিলেন ব্যারন র‍্যাভেন্সওয়ার্থকে, যিনি কয়লাখনির মালিক হওয়ার পাশাপাশি এমপিও ছিলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির সংগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
    একটু খুঁজলেই এই সমস্ত ফাইনান্সিং-এর পেছনে পূর্ব অথবা পশ্চিম ভারতীয় অঞ্চল থেকে লুঠের শস্য, পণ্য বা সোনা রুপোর অবদান দেখতে পাওয়া যাবে।

    আমার মনে হয়, আমরা যেকোনও একটা প্রযুক্তি (শিল্পবিপ্লবের সময়ের বা পরবর্তীকালেও বড় উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত) ধরে দেখতে পারি, এমন কি আজকের দিনের প্রযুক্তিগুলোও। কোনওটাই একজন বিশাল প্রতিভাধর মানুষ একা ঘরে বসে করেন নি, ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট করা হয়েছে ঐ পার্টিকুলার প্রযুক্তির জন্য এবং তার ফলেই সে এসেছে। হাজার হাজার কন্ডেন্সার বানানোর টাকা না পেলে কী কুরতেন জেমস ওয়াট? আর ভারতের লুন্ঠন এবং সেই লুন্ঠনের লাভকে ক্যাপিটাল মার্কেটে এনে রোল করানোর মনোবাঞ্ছা না রইলে জেমস ওয়াটদের পিছনে বৃটিশ শিল্পপতি, ইউরোপীয় ফিনান্সাররা টাকা ঢালতেন না।
    অন্য সভ্যতাগুলি এই বড় যন্ত্র বানানোর দরকার ভাবে নি, তারা অন্য রকম ভাবে উৎপাদন করত। তাই এই আবিষ্কার তারা করে নি।
    "It was not that we did not know how to invent machinery, but our forefathers knew that, if we set our hearts after such things, we would become slaves and lose our moral fibre. They, therefore, after due deliberation decided that we should only do what we could with our hands and feet. They saw that our real happiness and health consisted in a proper use of our hands and feet. They further reasoned that large cities were a snare and a useless encumbrance and that people would not be happy in them, that there would be gangs of thieves and robbers, prostitution and vice flourishing in them and that poor men would be robbed by rich men."
    প্রাক বৃটিশযুগে বাংলায় ইউরোপ থেকে কাপড়ের দাদন আসা শুরু হলে কারিগররা নিজেরা অনেকটা কাজ ধরে ফেলার বদলে আরও বেশি লোককে ব্যবসায় আনার চেষ্টা করতেন।
  • S | 162.158.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৮:২১92209
  • আমার থিয়োরি হল যে বেশিরভাগ প্রযুক্তি (এমনকি একটু বাড়িয়ে ইনোভেশান বললেও খুব ভুল হবেনা) এসেছে যুদ্ধের জন্য। সবার আগে মিলিটারি-আর্মি সব ব্যবহার করেছে। তারপর একটা সময় সেটা মাসের জন্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন ক্যাপিটাল এসেছে, স্কেল বেড়েছে ইত্যাদি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন