এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • দেশভাগঃ ১৯৪৪ ও তারপর

    Indranil Ghosh Dastidar লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৫ এপ্রিল ২০২০ | ৫৫৩৩ বার পঠিত
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    ১৯৪৪ এর জুলাই মাসে গান্ধি জিন্নার সঙ্গে আলোচনায় বসবার প্রস্তাব দেন। আলোচনার ভিত্তি হবে রাজাগোপালাচারি-সূত্র-

    ১) উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বের সীমান্তবর্তী যেসব জেলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করবার জন্য যুদ্ধের পর একটি কমিশন গঠন করা হবে।
    ২) ঐসব এলাকার মানুষরা পাকিস্তানে যেতে চায় কিনা, তা নির্ণয় করবার জন্য গণভোট নেওয়া হবে; সেই ভোটে শুধুমাত্র মুসলিমরাই নয়, সমস্ত অধিবাসীরাই ভোট দেবেন।
    ৩) আলাদা যদি হতেই হয়, তাহলে প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদির মত অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়ার বন্দোবস্ত থাকবে।
    ৪) গোটা প্রকল্পটি রূপায়িত হবে ব্রিটিশরা পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর।
    ৫) মুসলিম লীগ কংগ্রেসের স্বাধীনতার দাবী মেনে নেবে।
    ৬) মধ্যবর্তী সময়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে।

    ( সুমিত সরকার, পৃ ৩৫৮)

    রাজাগোপালাচারি সূত্র মেনে নেওয়া ছিল জিন্নার পক্ষে রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল। জিন্নার পাকিস্তানের দাবীর সবচেয়ে দুর্বল গ্রন্থিতে আঘাত করতে চেয়েছিল এই সূত্র। পাকিস্তানের দাবী-র যে কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা ছিল না, সেটা জিন্নার রাজনৈতিক অপরিপক্কতার পরিচয় নয়; বরং ঠিক তার উল্টো। জিন্না খুব ঠান্ডামাথায় ভেবেচিন্তে পাকিস্তানের দাবীকে একটা ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছিলেন। মুসলিম লীগের সবচেয়ে গোঁড়া ও সাম্প্রদায়িক সমর্থকরা ছিলেন মুসলিম-সংখ্যালঘু প্রদেশগুলির অধিবাসী। কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় অল্প। পক্ষান্তরে লীগের বৃহত্তর অংশের সমর্থকরা ছিলেন মুসলিম-সংখ্যাগুরু প্রদেশের বাসিন্দা। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির থেকেও প্রাদেশিক রাজনীতির প্রতি এঁদের দায়বদ্ধতা ছিল অনেক বেশী। ক্ষমতায় থাকার জন্য স্বভাবতঃ শুধুমাত্র মুসলিম জনগোষ্ঠীই নয়, অন্যান্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সমর্থনের প্রয়োজনও এঁদের ছিল। এবং সেই কারণেই এঁদের পক্ষে কট্টর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মেনে নেওয়া সম্ভবপর ছিল না। তুলনামূলকভাবে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির লাইন মেনেই এঁরা ক্ষমতার ধরে রেখেছিলেন। ফলে জিন্নার প্রতি শর্তহীন আনুগত্য দেখানোর কোনো প্রয়োজন এঁদের ছিল না।

    রাজাগোপালাচারি সূত্র মেনে দেশভাগ হলে এই মুসলিম সংখ্যাগুরু অংশের নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হারানোর আশংকায় ছিলেন। তাঁদের পক্ষে এই শর্ত মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। পক্ষান্তরে দেশভাগ হলে মুসলিম-্সংখ্যালঘু অংশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষে কোনোভাবেই পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব ছিল না। স্পষ্টতঃ মুসলিম-সংখ্যালঘু ও মুসলিম সংখ্যাগুরু প্রদেশের লীগ নেতা-সমর্থকদের অগ্রাধিকার ছিল আলাদা। এই জটিল হিসেব জিন্না খুব ভালোভাবেই জানতেন।

    রাজাগোপালাচারি সূত্রের আর একটি ভাগ ছিল প্রতিরক্ষা-বানিজ্য-যোগাযোগের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় বোঝাপড়া। এই বিষয়টি জিন্নার মনোমত হওয়ারই কথা ছিল, কেননা এরকম একটি দাবী জিন্নাও করেছিলেন। মুশকিল হচ্ছে যে এখানে একটি 'কিন্তু' ছিল। এই বোঝাপড়া - দর কষাকষির জন্য যে পরিমাণ রাজনৈতিক শক্তি (কংগ্রেসের সমতুল্য) প্রয়োজন, বাংলা-পাঞ্জাবের মত বৃহৎ প্রদেশ ভাগ হয়ে গেলে জিন্না তা অর্জন করে উঠতে পারবেন না।

    ফলতঃ, যদিও ওপর-ওপর মনে হচ্ছিল রাজাগোপালাচারি সূত্র আসলে জিন্নার পাকিস্তানের দাবীকেই মান্যতা দেওয়া, প্রকৃতপক্ষে তা ছিল জিন্নার দাবীর দুর্বলতম অংশে আঘাত। তুখোড় আইনজীবী জিন্না আর এক আইনজীবী'র (রাজাগোপালাচারি) এই ধূর্ত চাল পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন ("...telling his council that it was intended to 'torpedo' the Lahore resolution" - Ayesha Jalal, The Sole Spokesman, p.121) এই সূত্রটিকে আক্রমণ করে তিনি বললেন, এতে দিতে চাওয়া হয়েছে - শুধু ছায়া ও ভুষি, এক বিখণ্ডিত তথা কীটদষ্ট পাকিস্তান।

    রাজাগোপালাচারি সূত্র নাকচ করবার এক মাস পরেও জিন্না কংগ্রেসের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন - জাতীয় স্বার্থে লীগ, কংগ্রেসের সাথে এক হয়ে তাদের সাধারণ শত্রু ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে; তবে অবশ্যই তার বিনিময়ে আসন্ন কেন্দ্রীয় সরকারে লীগকে তার প্রাপ্য ক্ষমতার ভাগ দিতে হবে। আয়েষা জালালের মতে, জিন্নার পাকিস্তানের দাবীর এটাই ছিল মূলকথা - একটি অখন্ড ইউনিয়নের মধ্যে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের ফেডারেল ধাঁচের সংযুক্তি; তিনি কখনোই মন থেকে দেশভাগ চান নি। (Ibid, p.122)

    সম্ভবতঃ নিজের এই মতটিকে তুলে ধরবার জন্যই জিন্না গান্ধির সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়ে যান এ কথা জেনেও, যে গান্ধির ঐ বৈঠকের ভিত্তিই হবে জিন্নার অপছন্দের রাজাগোপালাচারি চুক্তি। সেপ্টেম্বর মাসে বৈঠকের দিন ধার্য হয়। কিন্তু গান্ধি শুরুতেই জানিয়ে দেন তিনি কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে এই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না। অগত্যা এই বৈঠক থেকে কিছু পাওয়ার নেই ভেবেই হয়তো জিন্না তাঁর আগের অবস্থানে অনড় থাকেন। তিনি বলেন - দ্বিজাতিতত্বকে মেনে নিতে হবে। মুসলিম সংখ্যাগুরু রাজ্যগুলির বিভাজনের জন্য যে গণ ভোট নেওয়া হবে, সেই ভোটে শুধুমাত্র মুসলিমরাই অংশ নিতে পারবেন, অন্য ধর্মাবলম্বীরা নন। প্রত্যাশিতভাবেই গান্ধি দ্বিজাতিতত্ব নাকচ করে দেন। তিনি মুসলিম সংখ্যাগুরু রাজ্যগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কিছুটা বাড়ানোর ব্যাপার মেনে নিতে রাজি, যদিও কেন্দ্রীয় সরকারে মুসলিম লীগের ক্ষমতার ভাগ নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নন। পাকিস্তান আগে না স্বাধীনতা আগে, তা নিয়েও মতের অমিল দেখা দেয়। গান্ধি বলেন, আগে স্বাধীনতা আসুক, পরে পাকিস্তানের দাবী ভেবে দেখা যাবে। জিন্না তাতে রাজী হন না। স্বভাবতঃই আলোচনা ভেস্তে যায়।

    কংগ্রেস-লীগের বাইরে আর একজন মানুষ খুব চিন্তিত ভাবে গান্ধি-জিন্না বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়াভেল। বৈঠকের ব্যর্থতা স্বভাব্তঃই তাঁর কপালে ভাঁজ ফেলে। ওয়াভেল বুঝে যান সাম্প্রদায়িক সমস্যার সরাসরি সমাধান অসম্ভব। আর এক রকম হতে পারে, যদি পুরনো পদ্ধতি অনুসরণ করে সর্বভারতীয় কোনো সম্মেলন ডেকে ব্যাপারটার কোনো গতি করা যায়। কংগ্রেস আর লীগকে একটি অন্তর্বতী সরকারে সামিল করলে সমঝোতার একটা রাস্তা বেরোতে পারে। যদিও এর ফলে আরেকটি সমস্যার উদ্ভব হতে পারে - মুসলিম লীগকেই ভারতীয় মুসলিমদের মূল প্রতিনিধি হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়ে যায়। ফলে বাংলা আর পাঞ্জাব - দুটি বৃহৎ মুসলিম প্রদেশের অ-লীগভুক্ত মুসলিম নেতারা ক্ষুন্ন হতে পারেন। বস্তুতঃ বাংলা ও পাঞ্জাবের গভর্নরদ্বয় এ ব্যাপারে ওয়াভেলকে সতর্কও করে দেন। পাঞ্জাবের গভর্নর মনে করেন, এর ফলে পাঞ্জাবের শান্তি-শৃংখলার অবনতি ঘটতে পারে। বাংলার গভর্নর বাংলায় জায়মান বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যা জিন্নার কেন্দ্রিকতার রাজনীতির বিরোধী। কিন্তু ওয়াভেলের তখন প্রাদেশিক রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কথায় কান দেওয়ার মত অবস্থা ছিল না। বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে যখন জিন্না অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে রাজী হয়ে গেছেন।

    ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে শোনা গেল ভুলাভাই দেশাই এবং লিয়াকত আলি খান (যথাক্রমে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের পরিষদীয় দলের নেতা) অন্তর্বর্তী সরকারে আসন বন্টণ নিয়ে একটি রফায় এসে পৌঁছেছেন, যে উভয় দলই ৪০% আসনের ভাগ পাবেন। পরে অবশ্য জিন্না এবং গান্ধি উভয়েই এমন কোনো চুক্তির কথা অস্বীকার করবেন। কিন্তু ওয়াভেল তাও আশাবাদী এবং অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কংগেস ও লীগ- দুপক্ষের কেউই অন্ততঃ পিছিয়ে আসার কথা বলছেন না। লীগ ও জিন্নার তখন অবশ্য দর- কষাকষির ক্ষমতা বেশ কমে এসেছে; ১৯৪৪-এর মাঝামাঝি খিজর হায়াৎ খানের পাঞ্জাব ইউনিয়নিস্ট মন্ত্রীসভা মুসলিম লীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কচ্ছেদ করেছে; কংগ্রেস এম এল এ-রা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে খান আব্দুল গফ্ফুর খানের নেতৃত্বে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা লীগ মন্ত্রীসভাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে; ঐ একই বছর বাংলায় নিজামুদ্দিনের লীগ মন্ত্রীসভা বানচাল করে জারি হয়েছে গভর্নরের শাসন, এমন কি সিন্ধ আর আসামের লীগ মন্ত্রীসভাও কংগ্রেসের নীরব সমর্থনের জেরে টিম টিম করে জ্বলছে (Sumit Sarkar, p.359)।

    বাদ সেধে বসল লণ্ডন। ওয়ার ক্যাবিনেটের কাছে তখনো ভারতের স্বাধীনতা তেমন জরুরী কোনো ইস্যু নয়। চার্চিল তখনো তাঁর পুরনো লাইনে অটল, ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া সম্ভব নয়, যদি একান্তই ভারত ছেড়ে আসতে হয়, তবে দেশটাকে টুকরো টুকরো করে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ - "...into Pakistan, Hindustan, Princestan etc." (Jalal, p.127, Wavell: The Viceroy's Journal, p.120).

    যুদ্ধের শেষে অবশ্য পরিস্থিতি চার্চিলকে আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় রাখল না। ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসছে, চার্চিলের মিলিজুলি সরকারের জায়গা নিয়েছে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট। লেবার নেতা অ্যাটলী-র ছায়া ক্রমশঃ লম্বা হচ্ছে, এবং মূলতঃ তাঁরই উদ্যোগে ওয়াভেল ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি নিয়ে ফিরে এলেন। এই সরকারে একমাত্র ভাইসরয় ও কম্যান্ড্যার-ইন-চীফ ছাড়া আর কোনো ব্রিটিশ সদস্য থাকবেন না-বাকিরা সকলেই হবেন ভারতীয়। সদিচ্ছামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ওয়াভেল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সব সদস্যকে কারামুক্ত করলেন।

    জুন মাসে সিমলায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন ওয়াভেল। সম্মেলনের একটি খসড়া প্রস্তাবও তৈরী করা হয়। বর্ণহিন্দু ও মুসলিমদের সমান সংখ্যক আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; শাসনবিভাগ আপাততঃ প্রচলিত সংবিধানের মধ্যেই কাজ করবে, কিন্তু যুদ্ধে চূড়ান্ত জয়লাভের পর সবরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ খোলা থাকবে।

    মুশকিল বাঁধবে গান্ধি ও জিন্নাকে নিয়ে, ওয়াভেল জানতেন। এই দুই 'প্রবল খামখেয়ালি প্রাইমা ডোনা'-কে একমত করা 'খচ্চরকে রেললাইন বরাবর হাঁটানোর মত' কঠিন কাজ- ওয়াভেল তাঁর জার্নালে মন্তব্য করেছিলেন (Ibid, p.128)।

    আদতে কিন্তু পুরো কংগ্রেস দলই বেঁকে বসে। কংগ্রেসকে শুধুমাত্র 'বর্ণহিন্দুদের সংগঠন' বলে মেনে নিতে তাঁদের প্রবল আপত্তি ছিল; তাঁরা দাবী করেন কংগ্রেস হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্ব করে(যে কথা সত্যি, কিন্তু আংশিক সত্যি; তফসিলি জাতিভুক্ত অনেকেই অন্ততঃ এই দাবী মেনে নিতে আগ্রহী ছিলেন না)।

    পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী স্যার খিজরও বিন্দুমাত্র খুশী হলেন না। নবগঠিত কাউন্সিলে তিনি অ-লীগ মুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহী ছিলেন। আর ঠিক এখানেই জিন্নার আপত্তি ছিল প্রবল । কিন্তু লীগের সেইমুহূর্তে যা রাজনৈতিক ক্ষমতা, তাতে সিমলা সম্মেলন থেকে সরে আসার মত বিলাসিতা তাঁদের মানায় না-সেক্ষেত্রে মুসলিম লীগকে বাদ দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল । জিন্না স্থির করলেন, বাইরে থেকে নয়- সম্মেলনে যোগদান করে ভেতর থেকে অন্তর্ঘাত চালিয়ে সম্মেলন বানচাল করতে হবে (Ibid, p.129)।

    অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের যে লিস্ট ওয়াভেল ঘষেমেজে বানালেন, তাতে কংগ্রেস ও লীগ উভয়পক্ষকেই পাঁচটি আসন দেওয়া হল, একটি আসন রাখা হল শিখদের জন্য, দুটি আসন তফসিলি জাতি ও অপর একটি আসন রাজভক্ত স্যার খিজর হায়াতের জন্য। কংগ্রেসের এতে কোনোই আপত্তি ছিল না। কংগ্রেস তাদের পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেছিল তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি মওলানা আবুল কালাম আজাদকে।এছাড়াও আরো একটি করে আসন তারা ছেড়েছিল পার্সী ও ভারতীয় খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের জন্য। কংগ্রেসের তরফ থেকে উদার মনোভঙ্গি বলা যায়; হিন্দু মহাসভা যদিও এই নিয়ে শোরগোল পাকিয়েছিল।

    কিন্তু বাদ সেধে বসলেন মহম্মদ আলি জিন্না। তাঁর দুটি অনমনীয় দাবীকে কেন্দ্র করে সম্মেলন ভেস্তে গেল - (১) মুসলিম লীগই একমাত্র সব মুসলিম প্রধিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে, অন্য কোনো দলের সে অধিকার থাকবে না। (২) সাম্প্রদায়িক ভেটোর বন্দোবস্ত রাখতে হবে-মুসলিমরা যেসব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, তা পাশ করাতে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের দরকার পড়বে।

    তিক্ত আবুল কালাম আজাদ তাঁর বইতে লিখেছেন - সেদিন লীগ যদি না বাদ সাধত, তাহলে আইনসভার ১৪টি আসনের মধ্যে মুসলিম সদস্যসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াত ৭, অর্থাৎ মোট প্রতিনিধিদের ৫০%। মুসলিম লীগের নির্বুদ্ধিতার জন্য অবিভক্ত ভারতের শাসন পরিষদে মুসলিমরা তাদের এই বিপুল অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্ছিত হল (Maulana Abul Kalam Azad, India Wins Freedom, p.121)। আজাদ যেটা ভাবেন নি (বা বলেন নি) তা হল, জিন্না ভারতীয় মুসলিমদের তাৎক্ষনিক লাভ-ক্ষতি নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিলেন না; তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মুসলীম লীগকে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তুলে আনা এবং লীগের ম্যান্ডেটকেই ভারতীয় মুসলিমদের ম্যান্ডেট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এবং ভারতের পূর্বতন বড়লাটদের মতই ওয়াভেলও জিন্নাকে বেশ উঁচু নজরেই দেখতেন - এ একরকম ব্রিটিশ শাসকদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল - তিনি জিন্নাকে চটাতে সাহস করলেন না। সম্মেলন যথারীতি ভেস্তে গেল।

    ১৯৪৫ এর জুলাই মাসে লেবার পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এল। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলী পূর্বপ্রতিশ্রুতিমতই ভারতের স্বায়ত্বশাসনের (তখনো 'স্বাধীনতা' শব্দটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে) বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসলেন। শুরুতে ওয়াভেল খানিকটা চিন্তিতই ছিলেন - হয়তো লেবার পার্টির নেতারা ভারতকে তাঁদের কংগ্রেসী বন্ধুদের হাতে খুব তাড়াতাড়িই তুলে দিতে চাইবেন (এর থেকে কি কনজারভেটিভদের পাকিস্তানপন্থী ঝোঁকের কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে?)। কিন্তু দ্রুতই তিনি বুঝে যাবেন - এই ব্যাপারে দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ সামান্যই। বহু লেবার নেতা, যেমন পররাষ্ট্রসচিব বেভিন - 'বাস্তবিকই সাম্রাজ্যবাদী' এবং 'আমাদের ভারত ছেড়ে দিতে হবে, এই চিন্তাকে তিনি আর সকলের মতই ঘৃণা করেন...' (সুমিত সরকার, পৃ ৩৬০)।

    লন্ডন ও দিল্লী একটি বিষয়ে সহজেই একমত হলেন যে ভারতীয় সমস্যার আশু সমাধান দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, যাচাই করে দেখা যেতে পারে। বাস্তবিক, বহুদিন নির্বাচন হয়ও নি।

    পাঞ্জাবের গভর্নর দীর্ঘদিন ধরেই উপদ্রুত প্রদেশটির শান্তি-শৃংখলা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। জিন্নার পাকিস্তানের দাবী যে সাধারণ মুসলিমদের কাছে কতখানি বিপজ্জনক, তা জনসমক্ষে তুলে ধরা হোক- এই ছিল তাঁর দাবী। লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পুরো পাঞ্জাবকে যদি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তার ফল হবে ভয়ানক - বলছিলেন গ্ল্যান্সি। পাঞ্জাবের দুটি ডিভিসন - আম্বালা ও জলন্ধরে এমন একটিও জেলা নেই, যেখানে মুসলিম সংখ্যাধিক্য রয়েছে। অমৃতসর জেলায় অমুসলিমদের মোট জনসংখ্যা মুসলিমদের চেয়ে বেশী। গায়ের জোরে পাঞ্জাবকে পাকিস্তানে ঠেলে দিলে হিন্দু ও শিখরা সরাসরি বিদ্রোহ করবে। আর পাঞ্জাবীরা প্রদেশ-বিভাজনও মেনে নেবে না। বরং যদি মুসলিম সুরক্ষা নিশ্চিৎ করে পাঞ্জাবকে ভারতীয় ইউনিয়নে রেখে দেওয়া হয়, সেটিই তাদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে - এই ছিল গ্ল্যান্সি-র মত।

    কিন্তু লন্ডন ও দিল্লী, কোনো সরকারই এতদূর এগোতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁরা কি আদৌ পাকিস্তানের বেলুন চুপসে দিতে আগ্রহী ছিলেন? এমনটা হওয়া হয়তো আদৌ অসম্ভব নয় যে শুধু উইনস্টন চার্চিলই নয়, পাকিস্তানের দাবী আরো বেশ কিছু ব্রিটিশ শাসকের হৃদয়ের কাছাকাছি ছিল।

    কংগ্রেস-ই বা কেন জিন্না-র রাজনীতির এই দুর্বল জায়গায় আঘাত করে নি, সে কথাও খুব পরিষ্কার নয়। উত্তর ভারতের দুই কংগ্রেস কর্মী নেতৃত্বের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বাজারচলতি ম্যাপ দিয়ে পোস্টার বানিয়ে মহল্লায় মহল্লায় ছড়িয়ে দিতে; তাতে লেখা থাকবে - 'আপনি কি আপনার বাড়ি-ঘর-জমিজমা ফেলে রেখে পাকিস্তানে যেতে প্রস্তুত?' কিন্তু কংগ্রেস নেতারা কোনো উত্তর দেন নি (Yasmin Khan, The Great Partition, p.45)।

    অকুতোভয় জিন্না এমনকি এমন ঘোষণাও করে বসলেন - আগামী নির্বাচনে মুসলিমরা যদি লীগকে যথেষ্ট সমর্থন দেয়, তাহলে আর নতুন কোনো গণভোট ছাড়াই, রাজ্যবিভাজন না করেই পাকিস্তানের দাবী পূরণ করতে হবে। সরকারের উচিৎ ছিল তৎক্ষণাৎ জিন্নার এই দাবীকে নস্যাৎ করে দেওয়া। কিন্তু তা তাঁরা করলেন না। ওয়াভেল মৃদুভাষায় একটি আপত্তি জানাতে ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু সেটুকুও তাঁকে করতে দেওয়া হল না, পাছে নিরপেক্ষতা লঙ্ঘিত হয় !

    আয়েষা জালাল বলছেন - ১৯৪৬-এর নির্বাচনে জিন্নার সাফল্যের একটা বড় কারণ ছিল 'পাকিস্তান বলতে আদতে কী বোঝায়' সে নিয়ে ব্রিটিশ নীরবতা। আরেকটি বড় কারণ ছিল, মুসলিম প্রদেশগুলিতে অ-লীগ মুসলিম দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা না করা। কংগ্রেস সভাপতি আজাদ সেরকম ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রকাশ্যে একটি ফেডারেল ইউনিয়নের কথা বলুক, যাতে কেন্দ্রে থাকবে একটি ঢিলেঢালা, দুর্বল সরকার - আর অধিকাংশ ক্ষমতা থাকবে রাজ্যগুলির হাতে। কেন্দ্রে মুসলিমদের জন্য সমান অংশীদারীত্বের সুযোগ থাকবে, অবশ্যই একা মুসলিম লীগের জন্য নয়, লীগের বাইরে থাকা অন্যান্য মুসলিমরাও সে সুযোগ পাবেন । কিন্তু শক্তপোক্ত কেন্দ্রের মোহে আচ্ছন্ন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে (Jalal,p.135)।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • আলোচনা | ০৫ এপ্রিল ২০২০ | ৫৫৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • এলেবেলে | 162.158.***.*** | ০৫ এপ্রিল ২০২০ ১৩:০০92029
  • অনুরোধে সাড়া দিয়ে পুনরায় লেখা শুরু করায় ভালো লাগছে। পরবর্তী কিস্তিগুলো আরও একটু দীর্ঘ হবে, এই আশায় রইলাম।

  • Indranil Ghosh Dastidar | ১২ এপ্রিল ২০২০ ২১:৩১92242
  • আশা করি, এই কিস্তিটি আর একটু দীর্ঘ আর পাঠযোগ্য হয়েছে।
  • এলেবেলে | 162.158.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:২৬92246
  • পড়ে ফেললাম একটানে। একটা অনুরোধ আবারও করলাম। প্রথম কিস্তি, দ্বিতীয় কিস্তি ও পরবর্তী কিস্তিগুলোকে যদি একটা সমান্তরাল রেখা টেনে বিভক্ত করে দেন (দেশটাও ওভাবেই রেখা টেনে ভাগ হবে কিছুদিন পরে!), তাহলে পাঠকদের পড়তে সুবিধে হবে।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:৪৭92247
  • হুঁ, ঠিক কথা।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:৫১92248
  • আমার আসলে নতুন কল বুঝতে একটু সময় গেল। ভেবেছিলাম, পরের কিস্তি কল নিজে থেকেই আলাদা করে দেবে। কিন্তু তা তো হল না। বহুদিন গুরুতে আসা হয় না, নতুন গুরুতে তো একেবারেই নতুন। অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করছে। আশা করি, এর পর থেকে আরেকটু সড়গড় হবে।
  • একক | 162.158.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ১২:৪৮92261
  • যাক, আবার শুরু করার জন্যে ধন্যবাদ।  পড়চি..

  • আচ্ছা | 172.69.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২৯92270
  • আজাদের এই এতভাল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পক্ষে হাইকমান্ডের লিখিত যুক্তি কী ছিল?

    খুব ভাল লাগছে, লিখুন।
  • মৃণাল | 172.69.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ২১:৫৩92282
  • পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম 

  • মৃণাল | 172.69.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ২১:৫৩92283
  • পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম 

  • b | 108.162.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২০ ২২:২৬92284
  • "কিন্তু শক্তপোক্ত কেন্দ্রের মোহে আচ্ছন্ন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে "
    আসাম কংগ্রেসের (গোপীনাথ বরদলৈ)-র সম্ভবতঃ একটা বড় ভূমিকা ছিলো।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩৮92292
  • আজাদের এই প্রস্তাব হাইকম্যান্ড কেন , কী ভেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল, সে বিষয়ে আজাদ নিজে কিছু লিখে যান নি। আয়েষা জালালও বলেন নি; তিনি এর যে রেফারেন্স দিয়েছেন -তা হল অ্যাবেলকে লেখা জেনকিন্স-এর পত্রাবলী। ধরে নিতে অসুবিধে নেই যে এই জেনকিন্স হলেন পরাধীন পাঞ্জাবের শেষ গভর্নর স্যার ইভান মেরিডিথ জেনকিন্স এবং অ্যাবেল হলেন স্যার জর্জ অ্যাবেল, ওয়াভেল- এর ব্যক্তিগত সচিব (অ্যাবেল ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটার ছিলেন, উরস্টারশায়ারের ক্যাপ্টেন ছিলেন কিছুদিন)। কিন্তু এই চিঠি সংগ্রহ করা আমার পক্ষে, অন্ততঃ এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

    দুর্বল কেন্দ্র সহ ফেডারেল ধাঁচের সরকারের ধারণা- আজাদের মতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সাগ্রহে গ্রহণ করেছিলেন- গান্ধিজি অবধি। কিন্তু আজাদের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু নেহরু সম্ভবতঃ একমত ছিলেন না। আজাদ তাঁর জীবনের অন্যতম বড় ভুল বলে মনে করেন পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজে সরে দাঁড়িয়ে নেহরুকে মনোনীত করা। আজাদ বলছেন- ক্যাবিনেট মিশন তাঁর প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল, এবং মুসলিম লীগও নিমরাজি ছিল। কিন্তু নেহরু-র একটি বিতর্কিত মন্তব্যে সেই প্রস্তাব অথৈ জলে পড়ে যায়, যা থেকে পরে আর তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি । এ নিয়ে পরে লেখার কথা, তাই এখন আর বিস্তারিত আলোচনায় না যাওয়াই ভালো।

    গোপীনাথ বরদলৈ-এর ভূমিকার কথা জানি না। জানতে আগ্রহী রইলাম।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০২:২০92293
  • মূল লেখা থেকে একটা বিস্ফোরক অংশ বাদ পড়ে গিয়েছিল- সেটা আর মূল লেখায় জুড়লাম না, এখানেই দিয়ে দিচ্ছি; 'এই ছিল গ্ল্যান্সি-র মত..' - এর পর থেকে পড়তে হবে।

    আসামের গভর্নর স্যার অ্যান্ড্রু গোরলে ক্লো একটি ক্রুদ্ধ মেমোতে জানান- পাকিস্তানের দাবীকে জিইয়ে রাখার পেছনে ব্রিটিশদের অবদানও কম নয়। পাঞ্জাব ও বাংলা কখনোই তাদের রাজ্য ভাগ করতে চাইবে না; যদি তারা বুঝতে পারে যে পাকিস্তানকে সমর্থন করার অর্থ প্রদেশ- বিভাজন, তবে তারা কোনোমতেই পাকিস্তানের দাবী সমর্থন করবে না।প্রদেশ-বিভাজনের জন্য আয়োজিত গণভোটে শুধুমাত্র মুসলিমরাই অংশ নিতে পারবে- জিন্নার এই দাবীর মত অযৌক্তিক কথা আর কিছু হতে পারে না। আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী নিয়ে এ কি ছেলেখেলা হচ্ছে? জিন্নার এই ধরণের হাবিজাবি যুক্তিকে কেন চ্যালেঞ্জ করা হল না? লণ্ডন ও দিল্লিকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। যদি এই রেফারেণ্ডামে অমুসলিমদেরও অংশ নিতে দেওয়া হয়, তাহলে কী হবে? এইসব জরুরী প্রশ্নের জবাব মুসলিম লীগের নেতাদের কাছে জানতে চান- বলতে পারবে না। এই কথাগুলি বড় বড় করে ছাপিয়ে বোর্ডে টাঙিয়ে বাংলা ও পাঞ্জাবের প্রতিটি পাবলিক প্লেসে প্রদর্শিত হোক- তবে যদি মুসলিম লীগের হুঁস ফেরে; তবে যদি মুসলিম জনসাধারণ বুঝতে পারে পাকিস্তানের দাবী আসলে কত ফাঁপা। তাহলে, একমাত্র তাহলেই,তারা কেন্দ্রীয় সরকারে আসন রফার ব্যাপারে আপস করতে আগ্রহী হবে (Jalal, p.133-134, Note by Clow,22 Aug 1945, R/3/1/105, p.56, IOL)।
  • b | 172.69.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০২০ ১০:৩২92305
  • অন্য সমস্ত কিছুর মতই এ ব্যপারেও আমার জ্ঞান ভাসা ভাসা। এই নতুন ফেডেরাল স্ট্রাকচারে তৎকালীন আসাম প্রদেশে অসমীয়াভাষীরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়তেন, যে ভয়টা অসমীয়াদের আজ অবধি তাড়া করে আসছে। উনি প্রবল ভাবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। যদ্দুর মনে পড়ছে সঞ্জয় হাজারিকা-র স্ট্রেঞ্জার্স ইন দ্য মিস্ট বইটাতে এরকম একটা কিছু পড়েছিলাম।
    তবে এটা জানি না, হাই কম্যান্ড এর জন্যেই দাবীটি প্রত্যাখ্যান করে কি না।
  • গবু | 108.162.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ২১:৫২92482
  • আচ্ছা - এই কিস্তি থেকেই কি শুরু ? না আগের কোনো লেখা আছে ? কমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে আছে কিন্তু সার্চ করলে পাচ্ছিনা - কেউ কি আগের পার্ট গুলোর link পরপর দিয়ে দিতে পারেন কমেন্ট হিসেবে ?

    i দাদার লেখা তো ভালোই লাগে - সে আর নতুন করে বলার নেই - আবার লিখছেন ভালো লাগলো
  • I | 172.69.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৩২92508
  • নাঃ ! বাকিটা আমিও খুঁজে পেলাম না। কোথায় হারালো, কে জানে ! পাই কিম্বা অন্য কেউ যদি সাহায্য করে !
  • সুকি | 108.162.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৯:০৯92517
  • এই বিষয়ে সক্রিয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করার মত ফান্ডা নেই - তাই পড়ে যাচ্ছি কেবল। 

  • Asis Banerjee | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:১৭497904
  • খূবঃ তথ্য সমৃদ্ধ সুন্দর লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন