হাইওয়ে ব্লুজ - ৬ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৩০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আলো, আনন্দ, প্রেম কই সেভাবে তো ছুঁয়ে গেল না করতল! সেভাবে একটা কোনও সীমারেখা হয়ে উঠল না আমার দেশ। কোথাও ইচ্ছেমতো বাঁচতে চাওয়া হলো না। তবে এত না এর মধ্যে একটা সমাজ কাকে চাইবে! কাকে দেবে তার আয়ের শতাংশ! চারপাশে ছড়িয়ে আছে অধিকার। অধিকার আর অধিকার। যে তোমাকে কেড়ে নিতে শেখাবে, যে শেখাবে হত্যা, রক্ত আর বিরাট একটা অধঃপতন। মানসিক এবং মানবিক কোনও ভাবালুতা তার কাছে বোকামি মাত্র। এইযে দেশ ছেড়ে যারা বসবাস গড়ে তুলেছিল অন্য একটা সীমারেখায়।
হাইওয়ে ব্লুজ - ১ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ মে ২০১৯ | ১৫৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কথা ফুরালেও কিন্তু আমার পথ কখনও ফুরায় না। চলতে চলতে, হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ি সাকচি মার্কেটে। বিষ্টুপুরের গোপাল ময়দানে। আলো আঁধারি মেশা নভেরাম হোটেলের চাউমিনে। পথ এখানে বিস্তৃত। পথ এখানে মায়াবী। গভীর, ঋজু, কালো কোবরার মত বিষাক্ত, ভয়ার্ত, অথচ রহস্যময়ী। এই পথ আমাকে টানে। পথের দৃশ্য, তার চারপাশের ফেলে রাখা বিস্কুটের প্যাকেট, জলের মোচড়ানো বোতল, ভাঙা চশমার কাচ... ছেঁড়া চপ্পল, পানের থুতু, কফের দাগ... কেমন যেন এক অস্তিত্বের সম্মুখীন করে তোলে। আর আমি হাঁটি। আর পরবর্তীকালের পাদটীকার মত জুড়ে ফেলি নিজেকে।
হাইওয়ে ব্লুজ - ৫ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ১৫৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এভাবেই সিট আসছে, যাচ্ছে। সিটের অধিকার পাচ্ছে অন্যকেউ... আবার অন্যকেউ সুযোগ বুঝে চেপে বসছে অন্যের ঘাড়ে... উদাসীন বাউল যাঁরা, তাঁরা ছাড়া এই পৃথিবী বড়ই প্ররোচনাময়। সবকিছুই যেন খুবই কষ্টের। তাঁকে ছাড়া আনন্দ নেই, আলো নেই, এগোনো -পেছনো নেই। ভাবছি। আর দেখছি ঘাটশিলা পর্যন্ত ছিল তাঁর আসা যাওয়ার খেলা। আর এই পথটাই ছিল লীলাময়তায় ভরা। ভাবছিলাম, এই মায়ার পৃথিবীতে কে যে ঈশ্বর! কে যে অন্ধকার!
বাচ্চার কান্না, ঘামের গন্ধ, চিৎকারের রঙ বেরঙের সুরে ভাসতে ভাসতে, ট্রেন গালুডিহি পেরিয়ে ঢুকে পড়ে আসনবনীতে... আহা খানিক পরেই জামশেদপুর!
হাইওয়ে ব্লুজ - ৪ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০১৯ | ১৩৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
একা মানুষের শত্রু হচ্ছে সে নিজে। তার একলা মন চাইবে পথে এসে মিশুক অন্য কেউ... হাত ধরুক... পায়ে পায়ে জুতো লেগে গতি হোক ধীর, মৃদু... অথচ কেউ আসে না, কেউ আসবে না হয়ত কখনো, কোনদিন, শুধু একটা দমকা বাতাস সবসময় ভিজিয়ে রাখবে তোমাকে... অধীর করে তুলবে... আর এই একলা জার্নি যোগ হবে দু'টো শালিকের শান্ত চেহারা। মন্দ ভেবে, আড়াল ভেবে যতই তাকে এড়িয়ে যাওয়া না কেন, ঠিক এসে ভাব জমাবে তোমাকে সঙ্গে।
কবিতাভাবনা - এসো শূন্য, এসো হে নিবিড় : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১২ জুন ২০১৮ | ১১৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আমি ভিখারীর মতো হাত পেতে দাঁড়াই। দয়াপরবশ হয়ে একটা দু'টো টুকরো যদি কখনও ভেসে ওঠে! কখনও জাগর চোখে তার অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করি। কিন্তু আসে কি! অসম্ভব ঔদাসীন্যভাব তার। হবেই নাই বা কেন! কতটুকু সাধনা করতে পারি আমি? অন্তরের কাছে পৌঁছানোর জন্য কতটুকুই বা চেষ্টা আমার! আর মুক্তি! ছোটবেলা থেকে আমি মৃদুভাষী। বুকের মধ্যে অসংখ্য কথা, শব্দ, অক্ষর কিন্তু প্রকাশ করতেই যত বাধা। ভাইবোনদের বললেই ওরা হেসে কুটিপাটি। মায়ের সংসার। অবসর নেই! একা বারান্দায় এসে দাঁড়াই। রাতের কালপুরুষ কথা বলে, সকালের রোদ কথা বলে, শব্দ দেয় প্রবল নৈঃশব্দ। এরাই একদিন বন্ধু হয়ে ওঠে।
তিনি স্বয়ং এক ‘ঐতিহ্যের বিস্তার’ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ মে ২০২১ | ২৯৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কবিতাপ্রয়াসী হিসেবেই শুধু নই, একজন পাঠক হিসেবে মনে হয়, কবিতা ও কবিতা সংক্রান্ত ভাবনাবিশ্বের যে যুগলবন্দি তিনি তৈরি করেছিলেন ধারাবাহিক ভাবেই, তা আমাদের খোলা হাওয়ার বাঁচতে শেখায়। কারণ একপ্রকার ভাবনাগত দৈন্যের মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। এ সময় শঙ্খ ও অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতো কবিদ্বয় আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন, তাই আমাদের আগামীদিনের সহায় হয়ে উঠতে পারে। দুজনকেই আমরা হারিয়েছি খুব অল্প ব্যবধানে। অথচ দুজনেই তাঁদের চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তাঁদের সৃষ্টি ও ভাবনায় আমাদের সমৃদ্ধ করে গেছেন।
আহা মরি বাংলা ভাষা : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২১ মার্চ ২০২৩ | ৩৪৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সম্প্রতি, ১৯ মার্চ, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুর শহরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনদের এক বিপুল সমাবেশ দেখা গেল। প্রায় লক্ষাধিক বাঙালি বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেই একত্রিত হয়েছিলেন এমনটাই ভাবা যায়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে, বাংলা ভাষাটিকে ধীরে ধীরে বিদ্যালয় পঠনপাঠন থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং বাংলা ভাষার পুন:বহালের দাবি নিয়ে জামশেদপুর শহরের, গোপাল ময়দান, বিষ্টুপুরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। জানি না, সরকারের টনক কতটা নড়বে কিন্তু এই দাবি চাইতে আসা মানুষজনদের দেখে খুব আশাবাদী। তবে কি ২১শে ফেব্রুয়ারির মত, ১৯ শে মে -এর মত আরেকটি দিন ১৯শে মার্চ সংযোজিত হবে ভাষা আন্দোলনে? বাঙালি অলস জাতি এই অপবাদ মুছে ফেলে শুধুমাত্র ভাষার দাবিতে জেগে উঠবে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি?
অন্নদাতাদের অসম্মান দেশের মানুষকে অপমান : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভারতের মানুষের আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে গিয়েছে। তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন এ দেশে ধর্মের কদর রুটির চেয়ে বেশি। এ দেশে যারা প্রকৃতই আমাদের খেতে দিচ্ছেন, তাঁদের উপর নেমে আসছে অত্যাচার। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পেশা কী?এ প্রশ্নের উত্তরে পুরোহিত, রাজনীতিবিদ, সেনা, বিজ্ঞানী, শ্রমিক নয়, আসবে কৃষকদের কথা। কৃষকরাই আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। আর তাঁরাই এ দেশের রাজধানীতে ব্রাত্য। এ জন্য এ দেশের শাসকমহলে কোনও লজ্জা তো নেই, বরং শাসনের অহঙ্কার রয়েছে।
লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৯ জুলাই ২০২৪ | ৯৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
আশার কথা, এই মিছরির ছুরির থেকে এবার রাষ্ট্র বেরিয়ে পড়েছে। ন্যায়, অন্যায়, ধর্ম, খাদ্য নানান সংহিতা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্র আর মুখ লুকিয়ে থাকতে রাজি নয়। দেশদ্রোহীদের কড়া হাতে শায়েস্তা করা হবে। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে দেশবিরোধিতার জন্য টেনে নিয়ে চলে যেতে পারে। কারণ রাষ্ট্র মানেই লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট। কিন্তু আগামীদিনের ভারতবর্ষ ঠিক কেমন হয়ে উঠতে পারে? ধরুন আমাদের বুকশেলফ ভরে উঠতে পারে বিভিন্ন সংহিতায়। কী খাব? তার জন্য খাদ্যসংহিতা। কী পরব? তার জন্য পোশাকসংহিতা। কী রকম চুল কাটব? তার জন্য কেশসংহিতা (পুরুষের জন্য একরকম, মেয়েদের জন্য আরেকরকম), কাকে বিয়ে করব? তার জন্য সংহিতা (বিবাহসংহিতা), কার সঙ্গে প্রেম করব? তার জন্য সংহিতা (প্রেমসংহিতা)। এর পর ধীরে ধীরে বেরোবে কাশিসংহিতা, হাঁচিসংহিতা, পাদসংহিতা, মিলনসংহিতা, কন্ডোমসংহিতা, ইত্যাদি প্রভৃতি।
হে বৃক্ষনাথ : বেবী সাউ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আবার কখনো কখনো এত গাম্ভীর্য। এত উদাসীন! এত ঈর্ষান্বিত! এত কষ্ট! অভিমান! অভিযোগ! আসলে কমলদা কখনো নিজেকে আড়াল করেন নি। তাঁর লোভ ছিল, তাঁর ইচ্ছে আছে, তিনিও চান, তিনিও পেতে পারেন, তাঁরও যোগ্যতা আছে— সবকিছুই তিনি বলতেন। তাঁর কথায় বোঝা যেত তিনিও যোগ্য। তিনি আড়াল জানতেন না। আবার হয়তো কখনো কখনো বর্ম এঁটে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতেন একের পর এক নগ্নরূপ। আমি যদিও কখনো চাইতাম না তাঁর চোখ দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে দেখতে, তিনিও হয়ত চাইতেন না, কিন্তু তাও তাঁর অনবদমিত মন সেইসব কষ্টের কথা বলে ফেলত। বলত, উপেক্ষা, অবজ্ঞার কথাও। বোঝাতে চাইতেন, বাংলা সাহিত্য ফুরিয়ে যাবে নাহয়। এসব জেনেও মেনে নেব আমরা! ইত্যাদি ইত্যাদি!
তিনি বলতেন, বাংলার বাইরে থেকে লেখালেখি করার অসুবিধে। কষ্ট। উপেক্ষার কথাগুলো।