ছবি আঁকতে আমি পার্কে যেতাম প্রায়ই, এবং সবদিনই আমার সাথে মালেক আব্দুর রহমানের দেখা হতো। মালেক আব্দুর রহমান একজন সত্তুর বছর বয়স্ক লোক, এবং বলাবাহুল্য যে, অন্যসব মানুষের ব্যাপারে আমার যেমন কোন আগ্রহ ছিল না তেমনি তার ব্যাপারে আমার কোনরূপ আগ্রহ ছিল না। তিনি রীতিমত আমাকে আমার কাজে বিরক্ত করতেন। এই বিরক্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আমি তার গল্পে ঢুকে যাই। সেই গল্পই এক্ষণে প্রকাশ করছি। ... ...
যেখানে এখনও মৃত জ্যোৎস্নারা জীবন্ত হয়ে যায় বাইরে গান হচ্ছে 'কতদিন দেখিনি তোমায়…' কয়েকটা বীজধান উপহার দিলাম তাঁকে সঙ্গে দিলাম দু-একটা মেঘ গানটা থামলে মন গেয়ে ওঠে 'মেনেছি গো হার মেনেছি…' ... ...
এবার পুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। মন্ডপরা পেয়েছে অনেক পুরষ্কার। কিন্তু পুজো মানে তো কেবল মন্ডপ বা প্রতিমা না। মানুষও। তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? কে পাচ্ছেন শারদ সম্মানের শিরোপা? জানতে হলে পড়তে থাকুন। একমাত্র গুরুচণ্ডালিতে। ... ...
শিখা পায়েসের বাটিটা নিয়ে ছাদে উঠল। দোতলা বাড়ির ছাদ। চিন্তিত মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে, একবার পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে, সবদিক নজর করে শেষে পায়েসের বাটিটা সে ছাদের পাঁচিলে রাখল। তারপর গলার মঙ্গলসূত্রটা চেপে ধরে কি যেন ভাবা শুরু করল। পাশের বাড়ির ছাদে সপ্তর্ষি, বছর চোদ্দর ছেলে হবে, হাতে খাতা, মুখে পেন। খাতা উল্টেপাল্টে দেখছে আর পাশে বসে থাকা পায়রাটাকে কীসব পড়ে শোনাচ্ছে। ছেলেটি একঝলক শিখাকে দেখল, শিখা সেটা খেয়াল না করে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এল। ... ...
বাবা হঠাৎ মারা গেলে কী হবে জানত না নবনীতা, কিন্তু মা-ও যে জানত না সেটা ও বুঝল পরে। কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলত, কিন্তু চলত তো। মারা যাবার পর মা বলল, বাবার মরদেহ হাসপাতালে দান করা হবে, সেটাই বাবার ইচ্ছে ছিল। রাণীকুঠিতে কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার ভ্যাটের পিছনে প্রায়-পড়া-যায়-না এরকম দেওয়াল লিখন একটা মাঝে-মাঝেই দেখেছে নবনীতা, সেখানেই একটা ফোন নম্বর দেখেছিল ও, মরণোত্তর দেহদানের জন্যে। নম্বরটা দেখে এসে সেখানে ফোন করল নবনীতা, এক ভদ্রলোক এসে দেখে গেলেন, তারপর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে একজন ডাক্তার আর দলবল নিয়ে এসে নিয়ে গেলেন দেহটা। ওর ভয় ছিল ওরা হয়তো পয়সা-কড়ি চাইবে কিছু; চাইল না কিন্তু, একটা ছাপা কাগজে শুধু সই করাল মাকে দিয়ে। নবনীতাকে ওরা বলেওছিল ওদের সঙ্গে হাসপাতালে যেতে, ও যেতে চায়নি। ওদের মুখ দেখে মনে হল একটু অবাক হয়েছে ওরা, কিন্তু বলল না কিছু। সেদিনই সন্ধ্যেবেলা ওদের একজন এসে হাসপাতালের সার্টিফিকেট একখানা দিয়ে গেল, বলল, এটা দিয়ে কর্পোরেশন থেকে ডেথ-সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। তা ছাড়াও ব্যাঙ্কে, অফিসে, নানা জায়গায় কাজে লাগবে এটা, কাগজটা যেন হারিয়ে না ফেলে ওরা। ... ...
প্রতিটি দিনই তো দেবীপক্ষ ভাবতে ভালো লাগে – কেবল সেই ভোরে ওঠা নিয়ে সূর্যের সাথে রাগারাগি না হয় মাথার কাছে বাজুক চেনা সুর আধোঘুমে গুন গুন নিবিড় হয়ে এসে বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষা ... ...
মালতী আর কোনোদিনও উল্টোদিকে যায়নি। বর্ডার পেরিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়া হয়নি কোনদিন। বাইশ বছরের প্রায় প্রতিটা ভোর ঝড় জল কনকনে উত্তরে হাওয়া ভ্যাপসা পচা গরমে ডাউন বনগাঁ লোকালে কেটেছে মালতীর । দেশের বর্ডার পেরিয়েছিল সেই একবার। তারপর রোজ জেলার বর্ডার পেরিয়ে কোলকাতা। মালতীর হাতের শাঁখার খাঁজে খাঁজে কালো কালো ময়লা জমে দাগ দাগ দাগ। চুলের তলা গুলো অনেকদিন ছাঁটা হয়নি। সব চুলগুলো তিন খানা প্যাঁচে ভাগ হয়ে ঝুলছে। খানিক ভেজা খানিক শুকনো। আধা কাঁচা আধা পাকা চুলে দু চারটে শাকের পাতা লেগে আছে। ... ...
ঘর বানানো বিষয়ক প্রস্তাবনা ঘর বানানোর জন্য প্রথমেই লাগবে একটুকরো জমি। আপনাকে দেখে নিতে হবে যে জমিটা যেন বৃষ্টিতে ভেসে না যায় এবং ডুবে না যায় বন্যায়। ফলে জমি বিষয়ক সাধারণ জ্ঞানের সাথে আপনার লাগবে প্রাকৃতিক কিছু প্রবৃত্তি। জমিটি নির্বাচিত হলেই আপনি তখন চারটি দেয়ালের কথা ভাববেন; এবং অতি অবশ্যই চার দেয়াল আপনি জমিনের ওপর স্থাপন করবেন না। ঝড়ো বাতাস আর প্রকৃতির বিভিন্ন গজব থেকে রক্ষার স্বার্থেই আপনি চারটি দেয়ালকে আসলে প্রোথিত করবেন মাটির ভেতরে। ঠিক গাছ যেভাবে নিজেকে রাখে। তবে আপনি কোনো শেকড়, কখনোই, স্থাপন করতে পারবেন না। ... ...
অথচ, চিনিনা তাকে হাতের আড়াল হলে নিভৃতচারিনী স্নেহ ছলে, আলো ছলে বারবার দেখি... বিষণ্ণ আদল মেয়ে স্তন পেতে বলি ' ক্ষুধা নিবি...' ... ...
উৎসব হয় কোথায়? মণ্ডপে রাস্তায় বাড়িতে মসজিদে গির্জায় কোন বাড়িতে। উৎসব আসে কোথায়? উৎসব আসে মনে। মন না জাগলে মন না মাতলে উৎসবের কোনো মূল্য নেই। প্রকৃতি সুন্দর। ততক্ষণই, যখন আপনার চোখ ও চোখের ভিতরে থাকা মন প্রস্তুত তাকে দেখতে। ... ...