এবারের দুর্গোৎসব অন্যরকম। ঘরে, বাইরে, সর্বত্র। তাই ভিড় থেকে নির্জনে এসেছি আমরা। কিন্তু কোথায় কী — বনপথে পাখি ও ঝিঁঝির কলতানে কান পাতা দায়। দিগন্তে ত্রিশূল, নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লীর বড় বড় মণ্ডপ দেখতে ভিড় করেছে পাইনের লাইন। আর আলোসজ্জা তো নক্ষত্রের — তেমন আর কখনও দেখিনি আগে… ... ...
শ্রীনগর লেহ জাতীয় সড়ক বরাবর কিছুদূর এগোতে পাশ থেকে সঙ্গ নেয় দ্রাস নদী। দুপাশের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী সম্পূর্ণ ন্যাড়া, বাদামী খয়েরি রয়েরি রঙ, কোথাও আলগা মাটি পাথর। কিন্তু নদীর দুপাশ একেবারে ঘন সবুজ গালিচা বিছানো। মূলত দেওদার গাছই বেশী চোখে পড়ল। কোথাও কোথাও ছোট ছোট খেত, অল্প কয়েকটা মাটির বাড়ি। রূপম আগেই বলেছিলেন ওয়্যার মেমোরিয়াল আর কার্গিল শহরের মাঝামাঝি কোথাও একটা দূরের ঘন সবুজ গাছের মধ্যে একটা মসজিদের ঝকঝকে সোনালি গম্বুজ দেখা যায়, সে নাকি অদ্ভুত সুন্দর লাগে দেখতে। জায়গামত সারথিকে বলে গাড়ি দাঁড় করিয়েও দিলেন। হুড়মুড়িয়ে নেমে দেখি সত্যিই বড় সুন্দর। চারিদিকে বাদামীর নানা শেডে উঠে যাওয়া সারি সারি পাহাড়, অনেক নীচে এক নদীকে ঘিরে ঘন গাঢ় সবুজ উপত্যকা, আর তার মাঝখানে ঝকঝকে সোনালী গম্বুজ আর তিনটে মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মসজিদ। বেলা প্রায় সাড়ে তিনটে, আকাশে এলোমেলো কিছু মেঘ ওদিকের কোণটা ছায়াছায়া করে রেখেছে আর একপাশ থেকে আসা প্রখর সূর্যকিরণ পড়ে সোনালী গম্বুজ আর মিনার যেন জ্বলছে। গোটা দৃশ্যটা মনে হচ্ছে ভার্মিয়ের আঁকা কোন ছবি, শুধু থ্রি ডাইমেনশানাল এই যা। এমন অপার্থিব আলোমাখা দৃশ্যকে ধরে রাখবে এমন ক্যামেরা আজও তৈরী হয় নি। তবু কিছু ছবি তো তুলতেই হয় যাতে পরে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তটায় ফিরে যাওয়া যায়। টিপিকাল ট্যুরিস্ট স্পটের বাইরে অপরূপ এই দৃশ্যটা দেখানোর জন্য রূপমকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু তিনখানা মিনার কেন? বরাবর তো মসজিদে চারটে মিনারই দেখেছি। আসিফভাইকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল শিয়া মসজিদে তিনখানাই মিনার থাকে। এই অঞ্চলে শিয়া মুসলমানের প্রাধান্য বেশী তাই পরেও আরো কিছু তিন মিনারওয়ালা মসজিদ দেখেছি। ... ...
তো এহেন লাদাখ আমার স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে আছে সেই ১৯৯৮ সাল থেকেই। সেই সময় ম্যাকলিয়ডগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে দালাই লামার বক্তব্যে লাদাখের কথা প্রথম শুনি। তারপরে তো নানা বইপত্র ইত্যাদি। কার্গিলযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কার্গিল ওয়্যার মেমোরিয়াল ইত্যাদিও হয়ে দাঁড়ায় পর্যটনস্থল। শ্রীনগর থেকে সড়কপথে লেহ গিয়ে লাদাখের অন্যান্য অংশ ঘুরে পরে মানালি হয়ে ফিরলে প্রায় পুরো সার্কিট ঘোরা যায়। তাছাড়া অ্যাক্লিমেটাইজেশানও বেশ ভালভাবে হয়। আকাশপথে সরাসরি লেহ গিয়ে নামলে সেটা হয় না। সেক্ষেত্রে লেহতে অন্তত দুইদিন থেকে ফুসফুসকে কম অক্সিজেনে কাজ চালাতে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হয় আর কি। লাদাখ এমনিতে বেশ ব্যায়বহুল জায়গা, গাড়িভাড়া যথেষ্ট বেশী। আর গণপরিবহন প্রায় নেইই বলতে গেলে। ফলে সোলো ট্রিপ খুবই খরচসাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। খুব বড় গ্রুপের সাথে যাওয়াও খুব একটা সুবিধেজনক হবে না। বিশেষ করে আমার যে সব ব্যপারে আগ্রহ, সেরকম গ্রুপ ট্যুরে পাওয়া সহজ নয়। তো অরুণাচল ট্রিপে আলাপ হওয়া সমরেশ হালদার-দাদার সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল কীভাবে টেম্পো ট্রাভেলার কাটিয়ে ইনোভা বা জাইলো্ জাতীয় ছোট গাড়িতে ভ্রমণটা করা যায়। সেই সূত্রেই রূপম মুখার্জিকে বলা (ইনিই অরূণাচল ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছিলেন), এবং উনি একটা ট্যুর প্ল্যান দিলেনও। আমি তাতে হানলে যোগ করতে বলায় রাজীও হলেন। সমরেশদা বৌদির যাওয়ার উপযুক্ত সময় ধরে ঠিক হল আগস্টের শেষে রওনা হব, শ্রীনগর পৌঁছে সেখান থেকে যাত্রা শুরু। আমরা তো যাওয়া আসার টিকিট কেটে তৈরী। একটা ছোট সমস্যা যা দেখলাম হানলে ঢোকানোর পরে ১২ রাত ১৩ দিনের বিস্তারিত প্ল্যানটা আর পাওয়াই গেল না। প্রচুর ফলোয়াপের পরে খুবই স্কেচি একটা আউটলাইন পাওয়া গিয়েছিল যাত্রার দুই তিনদিন আগে, তো সেটা তখন তেমন সমস্যাজনক মনে হয় নি। পরে গিয়ে বুঝেছিলাম মুশকিলটা কোথায় হয়েছে। তো যাক সে কথা আপাতত, যথাস্থানে বলবো। পরিকল্পনামাফিক ২৮শে আগস্ট দুপুরে কলকাতা থেকে শ্রীনগরগামী বিমানে চেপে বসা গেল। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ শ্রীনগর পৌঁছে দেখি ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। পছন্দ করে ডানদিকের জানলায় সিট নিয়েছিলাম, কিন্তু হায় পুরো হিমালয়ান রেঞ্জই পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রইলো। হোটেল যাওয়ার পথে সারথি জানালেন গতকাল অর্থাৎ ২৭ অবধি তীব্র গরম ছিল, আজই সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা মনোরম আবহাওয়া পাবো। আমাদের গন্তব্য হোটেল বেলমন্ট। এমনিতে ভালই, খাওয়াদাওয়াও মন্দ নয়। ... ...
চার্চ গেট থেকে ছেড়ে মেরিন লাইন্স, চারনি রোড, গ্র্যান্ট রোড, মুম্বাই সেন্ট্রাল। থামতে থামতে যাচ্ছে। বান্দ্রা, খার রোড পেরিয়ে সান্তা ক্রুজে নেমে উবের অটো। জুহু তারা রাস্তা ধরে যাবার সময়েই বোঝা গেল এই এক দামি এলাকা। লোকজনের পোশাক, গাড়ি, দুপাশের খাবার জায়গা, হোটেল দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। অথচ জুহুর সৈকত এত নোংরা যে সন্ধ্যেবেলা কিছুক্ষন পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে প্লাস্টিক এসে ঠোকরাচ্ছে। কালো লম্বা প্লাস্টিক জড়িয়ে যাচ্ছে পায়ে। সেসব দেখে আর আরো উত্তরে ভারসোভা সৈকত যাবার প্রবৃত্তি হল না। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে আরব সাগরের দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। ... ...
ওই হ্রদে যাবার জন্যই মান্ডিতে আগমন। হ্রদের তীরে ব্যাসদেবের পিতা পরাশর ঋষি ধ্যান করতেন বলে ~ছশো বছর আগে এক মন্দির বানিয়ে দেন মান্ডির রাজা। ঋষির নামেই সমস্ত উপত্যকা , হ্রদ , মন্দিরের নাম হয়ে যায়। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৫ - করণ বলে, বাবুজী, আপনি তো আমায় সিনেমায় এ্যাক্টিং করার মতো করতে বলছেন। আমি কী পারবো? বলি, চেষ্টা করে দ্যাখোই না। তবে চাপ নিয়ো না, এসব আমার নিছক খেয়াল। ওদের নিস্তরঙ্গ জীবনে বেড়াতে আসা এক প্রবীণ বাঙ্গালী আঙ্কলের খেয়াল দেখে করণও মজা পায়। স্পোর্টিংলি বলে, চলুন তাহলে দেখি, আপনি যা বলছেন, পারি কিনা ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৪ - অনেকের ধারণা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ১৪ বা ২০ বছর। তা কিন্তু নয়, সরকার চাইলে কাউকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী রাখতে পারে। তবে নতুন, হার্ডকোর অপরাধীদের জন্য কারাগারে স্থান সংকুলানের জন্য জেলারের সুপারিশে সাত দশ বছর জেল খাটা কিছু শান্ত, ভদ্র, নিরীহ দণ্ডিতদের মুক্ত বন্দীশালায় এনে রাখা হয়। তাতে বন্দী পিছু সরকারের খরচও হয় অনেক কম ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৩ - এই লেখায় চরিত্রগুলির নাম উল্লেখ না করতে আমি রঘুবীর মীনাজীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই জায়গাটিরও আসল নামের বদলে করলুম - সূরজনগর - After all what's in a name? ... ...
এখন তো বছরের সেই সময়টা শুরু হয়ে গেছে জাপানে যখন লক্ষ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সেই দেশে পাড়ি জমায়। জাপান বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসের মধ্যে খুব সময়ের জন্য সেজে ওঠে চেরী ফুলের সম্ভারে, যাকে ওরা বলে ‘সাকুরা’। সেই সাকুরা দেখতেই পর্যটকদের আগমন। আজ তো নতুন বছরের প্রথম দিন, ভাবলাম সেই চেরী ফুলের গল্প ভাগ করে নেওয়া যাক। ... ...
উত্তরাখন্ড বেড়াতে গিয়েছিলাম ডিসেম্বরের ছুটিতে, তারই টুকিটাকি ঘটনা ... ...
নতুন বছরের শুরুতে মানুষের শুভচেতনার প্রতি উৎসর্গিত ... ...
হল্যান্ডের গাঁ-গঞ্জে, পথে-ঘাটে আমলকীর দেখা না মিললেও স্কিফোল এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোলেই ডিসেম্বরের শীতের হাওয়া আপনার শরীরে নাচন লাগাবেই। আর তার সঙ্গে যদি থাকে বৃষ্টি, তবে ষোলো-আনা পূর্ণ! এবার যদিও দিন-দশেকের জন্যে যাওয়া আর কাজের চাপের জন্য খুব বেশী ঘোরাঘুরি হয়ে ওঠেনি, তবুও বাঙালীর পায়ের তলায় সর্ষের তরঙ্গ রোধিবে কে! সুতরাং তার-ই মাঝে ‘হরে মুরারে’ বলে বেরিয়ে পড়া; তবে এবারের ঘোরাঘুরি খুব-ই সংক্ষেপে সারা, তাই এই লেখা অনেকটাই হবে যাতায়াতের পথ আর ছবি-নির্ভর। আগের বার নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে আর আশেপাশের বেশীর ভাগ জায়গাই দেখা হয়ে গিয়েছিল, তাই এবার ভেবেছিলাম সুযোগ পেলে পাশের দেশ বেলজিয়ামে-ও ঢুঁ মেরে আসবো। আর আগেরবার জ্যানসে স্ক্যানসের প্রসঙ্গে কিন্ডারডাইকের কথাও উঠে এসেছিল, তাই মাথায় ছিল সেটাও যদি দেখে আসা যায়। ... ...
ভোর চারটেয় আমরা তৈরী হয়ে নিলাম, বেরিয়ে দেখি রতন-জীও তৈরী। লোহার ঝাঁপ তুলে টর্চ নিয়ে আমরা যখন বেরোলাম, তখনও নিশুতি রাত বলা চলে। কনকচৌরি থেকে কার্তিকস্বামীর মন্দির প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে। আর মন্দিরে গেস্ট হাউজ প্রায় আড়াই কিলোমিটার। প্রবেশদ্বার দিয়ে যখন ঢুকলাম, দুশো মিটার মত বাঁধানো রাস্তা পেরনোর পর শুরু হল মাটির রাস্তা, ঘন জঙ্গলের পথ। এতক্ষণ বুঝিনি, জঙ্গলে ঢোকার মুহূর্তে বুঝলাম চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চতুর্দিক, মনে পড়ল আজ কোজাগরী পূর্ণিমা। আকাশে থালার মত চাঁদ। একপাশে মেঘ হালকা রয়েছে যদিও, তবু আশায় বুক বেঁধে চলা। রাস্তা কখনো সমতল, কখনো চড়াই, কিন্তু এর আগের যেসব চড়াই পেরিয়ে এসেছি তার থেকে অনেক কম, আরও আশ্চর্য, পায়ের ব্যথা টের পাচ্ছি না একেবারেই, অতএব ভালো গতিতেই উঠছি। যত রাস্তা এগোচ্ছে, জঙ্গলের ছমছমে ভাব জাঁকিয়ে বসছে, চাঁদের আলোর আলপনা পথে, মাঝে মধ্যে খস খস, সর সর আওয়াজ! ... ...
প্রাচীনত্বের বিষন্ন সাহচর্যে অনেকেরই হাঁফ ধরতে পারে। বর্তমানের উত্তেজনা উপভোগে আসক্ত মানুষ শান্ত ঝিম ধরা অতীতের পরিমণ্ডলে অস্বস্তি বোধ করে। তবে সৌমেনের বেশ লাগে। তাই ও একাকী ভ্রমণে অনেকবার নানা পর্যটকবিরল, নির্জন, ভগ্নপ্রায়, পরিত্যক্ত কেল্লা, প্রাসাদের আনাচে কানাচে বহুক্ষণ ঘুরে বেড়িয়েছে নিজের মনে। এমন জায়গা ওকে নিশির ডাকের মতো টানে। বরং তাজমহলের মতো পরিবেশে ওর দমবন্ধ লাগে ... ...
অত:পর বিরিঞ্চিবাবা দুই বাহু প্রসারিত করে সূর্যকে নির্দেশ দিলেন, "ওঠ্, ওঠ্, ওওওওঠ্"। সূর্যবিজ্ঞান যাঁর হাতের মুঠোয়, তাঁর আহ্বানে অতএব সূর্যোদয় হল! ঐ বেথারটোলির উপর দিয়েই নন্দাদেবী, বেথারটোলি, নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল, দুনাগিরিকে সাক্ষী রেখে শতসহস্র উজ্জ্বল রশ্মির দ্যুতির সপ্তাশ্বরথে চড়ে তিনি আবির্ভূত হলেন। আর আমরা চন্দ্রশিলায় উপনীত মর্ত্যলোকের কীটপতঙ্গ সমুদয় চর্মচক্ষে সেই স্বর্গীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলাম! ... ...
সামনের জলে সেই প্রতিফলনের ছবি সুস্পষ্ট! চৌখাম্বা, মন্দানি, সুমেরু, খর্চাকুন্ট আর কেদার – বাকি শৃঙ্গরা ঢাকা পড়েছে ওক, দেওদার, রডোডেনড্রনের বনানীর পেছনে, তার-ও ছায়া জলে। আমাদের দেখাদেখি আরও চার-পাঁচজন পর্যটক এসে জড়ো হন সেই জায়গায়। সকলেই আমরা নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে সেই স্নিগ্ধ ভোরের অলৌকিক দৃশ্যটুকু শরীর-মনের অলিন্দে পূর্ণ করে নিতে থাকি। তবু এই পূর্ণতার কি সীমা আছে! না শেষ আছে! “অসীম কালসাগরে ভুবন ভেসে চলেছে। অমৃতভবন কোথা আছে তাহা কে জানে।। হেরো আপন হৃদয়মাঝে ডুবিয়ে, একি শোভা! অমৃতময় দেবতা সতত বিরাজে এই মন্দিরে, এই সুধানিকেতনে।।“ ... ...
উখীমঠের কিছু আগে থেকে রাস্তার চড়াই শুরু হল। এখান থেকে গুপ্তকাশীর রাস্তাও চলে গেল নদী পার হয়ে ওপারে। কেদারের পথ ঐদিকেই মন্দাকিনী বরাবর। এপাশ থেকে আমরা দেখলাম অপর পাশে পাহাড়ের গায়ে স্তরে স্তরে বাড়ি-ঘর নিয়ে সেজে ওঠা গুপ্তকাশী, ঠিক যেন কেউ আঠা দিয়ে খেলনা কিছু ঘরবাড়ি বসিয়ে দিয়েছে, এমন ঝুলে আছে বলে মনে হচ্ছে সেগুলো! আর পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে চাষ-বাসের উদ্যোগ। সবুজ উপত্যকা মাঝে মাঝেই বেশ কিছুটা পাহাড়ি ঢাল জুড়ে। আমরা ফেরার পথে উখীমঠ দেখবো, এখন সোজা চোপতা যেতে হবে। উখীমঠ থেকে চোপতার রাস্তার সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। অপরাজিত-এ অপুর প্রণবকে লেখা চিঠির কথা মনে পড়ে “I enter it by the Ancient way, Through the Ivory Gate and Golden”! এই পথ ঐতিহাসিক পথ, এই পথ পুরাণের-ও পথ। ইতিহাস আর পুরাণ এসে মিলে যায় যেন এই পথে। শিব মহিষের রূপ ধরে পালিয়ে বেড়ান পঞ্চকেদারের পথে, পঞ্চপান্ডব তাড়া করে ফেরেন তাঁকে ধরবেন বলে, উমাপ্রসাদ, প্রবোধকুমার, জলধর সেনরা জীবনকে নতুন করে খুঁজে বেড়ান, মানুষ দেখেন, ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করেন, জানিয়ে দেন আমাদের। আর আমরা ফিরে ফিরে এসে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি সেসব বারবার, মানুষ, ইতিহাস, পুরাণ আর সর্বোপরি হিমালয়ের অতুলনীয় সৌন্দর্য-সম্পদ। তীর্থযাত্রার বা ধর্মকর্মের উদ্দেশ্যে বের হইনি, কিন্তু হিমালয় নিজেই যে তীর্থ, সে স্থান-মাহাত্ম্যে আর সৌন্দর্যে প্রতি মুহূর্তে মালুম হয়। ... ...
রুদ্রপ্রয়াগ থেকে অগস্ত্যমুনির দিকে গাড়ি এগনোর সাথে সাথেই চারপাশের পাহাড়গুলো কেমন হঠাৎ ক’রে উঁচু হতে হতে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছিল, ঘিরে ফেলছিল পাঁচিলের মত, বাঁক নেওয়ার মুহূর্তে মনে হচ্ছিল এরপর আর রাস্তা আছে তো? অলকানন্দার বাঁদিক ধরে চলতে চলতে অগস্ত্যমুনি পৌঁছনোর একটু আগে গাড়ির কাঁচে হঠাৎ একঝলক দুধসাদা পাহাড়ের অংশ, একেবারেই হতবাক করে দিয়ে আবার মিলিয়ে গেল। মেঘ বলে ভুল করার কোনো উপায় নেই, চারটে কোণ আর শিখরদেশের ট্রাপিজিয়ামের আকৃতিতে ওই এক ঝলকেই চিনিয়ে দিয়ে গিয়েছে সে নিজেকে; হ্যাঁ, চৌখাম্বা দর্শন দিয়েই তাহলে এ’যাত্রার শুরু; তখনো জানিনা, এরপর এ-যাত্রা যেখানেই যাই আকাশের গায়ে চৌখাম্বা লেগে থাকবে সফেদ-শুভ্র শিখরশ্রেণীর কিরীটে কোহিনূর-এর মতো! কিন্তু ওই একবারই, অগস্ত্যমুনির কাছে এসে বাঁদিকে কেদারের গিরিশ্রেণী দৃশ্যমান হলেও সামনের উঁচু পাহাড়-প্রাচীরে চৌখাম্বা আবার অদৃশ্য উখিমঠের কাছাকাছি আসা পর্যন্ত। পাহাড় কিভাবে প্রাচীর হয়ে তার ভয়ঙ্কর সুন্দর চেহারা নিয়ে দিগবিদিক জুড়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, গাড়োয়ালের হিমালয় তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ! ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৮ … এটাকে চান্দেরী ভ্রমণ বৃত্তান্তের পুনশ্চঃ বলা যায় ....আমার প্রশ্ন শুনে করণ করুন ভাবে আমতা আমতা করে। করণের মতো মানুষের জীবনে বিশেষ কিছু না জেনেও দিব্যি চলে যায় তাই যেখানে এতদিন আছে সেই স্থানের নামটির তাৎপর্য জানার কৌতূহলও হয়নি ওর। শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত কোট - যা রোমিও জুলিয়েট না পড়েও কোথাও উদ্ধৃতি পড়েই জেনেছি - “What's in a name? That which we call a rose by any other name would smell just as sweet.” মনে হয় এমন খামচা মারা জানার আগ্ৰহ ওর নেই। ... ...