মঙ্গলসূত্র, মুসলিম, মাটন, মাচ্ছি, মোষ, মুজরা- এসবের মাঝে যে দুটো ম-এর কাহিনী চাপা পড়ে গেছে সেটা হল মহিলা ভোটার আর মাইগ্রেন্ট লেবারার। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই দফায় যে বিষয়টা নজর কেড়েছিল সেটা ছিল ভোট শতাংশ কমে যাওয়া। নির্বাচনের শেষের দিকে যেটা নজর কেড়েছে সেটা হল পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশিমাত্রায় অংশগ্রহণ। নারীদের মধ্যে অতিরিক্ত ভোটদানের হার বিশেষভাবে দেখা গেছে বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় এবং ঝাড়খণ্ডে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হল বিহার। বিহারে প্রথম দফায় নারীদের ভোট শতাংশ পুরুষের চেয়ে কম ছিল। দ্বিতীয় দফা থেকে বাড়তে শুরু করে। বিহারে যেটা কমেছে সেটা হল পুরুষদের ভোটদানের হার- এটা ৫৫.১% থেকে ৫৩.৩% এ নেমে এসেছে। মহিলাদের ভোটদানের হার ৫৯.৪% যা ২০১৯এর প্রায় সমান। ... ...
... কোথায় গেল আজ সূর্যতিলক আর কোথায় ফার বনে মরেছে কাক নবমীমিছিলের অস্ত্র ঝনঝনে পকেটে গেল না কি পনেরো লাখ?... ... ...
'নিও-লেফট' বামপন্থার তাত্ত্বিক রেমন্ড উইলিয়ামস, তার বহুপঠিত 'অ্যাডভার্টাইজিং: দ্য ম্যাজিক সিস্টেম' নিবন্ধে দেখিয়েছিলেন, কিভাবে সমাজপরিমন্ডলের ব্যক্তিমানুষ পুঁজিতন্ত্রের দৌলতে 'বিষয়' হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে 'নির্বাচক'মাত্র এবং স্বয়ম্ভূ 'জনতা'র সার্বভৌম অবস্থান থেকে সে হয়ে ওঠে 'জনমত' নামক একরৈখিক, সমসত্ত্ব কন্ঠস্বর। সিদ্ধান্ত গ্রহণ গণতন্ত্রের একটি ফাংশনে' পর্যবসিত হয়, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রণোদনা জোগানোর জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়, যাতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠকে একটি বিশেষ শাসনকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে সংগঠিত করা যায়, তৈরি করে নেওয়া যায় নিজেদের প্রয়োজনীয় 'জনমত'। এই ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠকে জনপিন্ড হিসাবে দেখা হয়, যাদের মতামত, জনসমূহ হিসাবে গৃহীত হবে, ব্যক্তি হিসাবে নয়, এই রূপান্তর 'বিজনেস অফ গভর্নেন্সের' একটি জরুরী ফ্যাক্টর। ব্যবহারিক পরিপ্রেক্ষিতে, এই রাজনীতি, বৃহৎ-পুঁজি, আমলাতন্ত্র ও বিজ্ঞাপনীজগতের মিলিঝুলি জাদুকাঠামো দীর্ঘ সময়ের জন্য সফলও হতে পারে, কিন্তু সামাজিক সমস্যাগুলি বর্ণনা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠে, যেহেতু প্রচারকের পেশা এবং প্রচারকের বাস্তবতার ব্যবধান রয়েছে। অধিকন্তু, শাসক একটি অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রকৃত ক্ষমতার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে আগ্রাসী ভূমিকা নেওয়ার ফলে, পুরানো সামাজিক-রাজনৈতিক প্রশ্নগুলি অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে এবং, নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ সমস্ত সামাজিক কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। ... ...
মন চায় বামের ভোট বাড়ুক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির ভারতে সম্ভবনার শিল্পে কি সে লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড আছে যেখানে বামেরা খেলতে পারে ? স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে বামেদের ভূমিকা এমনকি এই বাইপোলার পরিস্থিতিতেও অনস্বীকার্য। তাই তাদের ভোট দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। খেলার ছলে কেই বা নেবে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি বামেদের? মুশকিল হল ২০২৪ য়ের সাধারণ নির্বাচনে বামেদের বড় অংশকে বেশির ভাগ আসনেই ইন্ডিয়া জোটের আঁতাতের বাইরে প্রার্থী দিতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বড় বাম দল সি পি আই এম দিয়েছে মোট বাহান্নটা আসনে। তার মধ্যে কেরালার পনেরোটা সিটে আর বাংলার তেইশটা যথাক্রমে কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব এই শরিকি লড়াইয়ে ভাবিত নয় কারণ এই দু রাজ্যে জোট করতে যাওয়ার বাস্তবতা নেই। উল্টে করতে গেলে বিরোধী স্পেস বিজেপি খেয়ে নিতে পারে। এ কথাটা কেরালা আর পশ্চিম বাংলা এই দু রাজ্যে শুধু নয় পাঞ্জাবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেখানেও রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা আপ আর কংগ্রেসের মধ্যে দা কাটারি সম্পর্ক। অর্থাৎ যেখানে নির্বাচনী জোট হয়নি সেখানে নির্বাচন পরবর্তী জোটের কথাই ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্বের মাথায় আছে। সে কথা মাথায় রেখে, পশ্চিম বঙ্গে দুই যুযুধান ইন্ডিয়া শরিক তৃণমূল কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট-কংগ্রেস ভোট পরবর্তী অবস্থান নিয়ে এখনই বিতর্কে মেতেছে। উদ্দেশ্য নিজের নিজের ভোট ব্যাংক চাঙ্গা রাখা। ... ...
আজকের যুগে দাঁড়িয়ে যেখানে তরুণ থেকে বয়স্ক সবাই নিয়মিত ইন্টারনেটে আনাগোনায় স্বচ্ছন্দ সেখানে নিজেদের সম্ভাব্য ভোটারকে টার্গেট করতে সমস্ত রাজনৈতিক দলই নিজেদের আইটি সেল তৈরি করে ফেলেছে। কারও আইটি সেল বেশি সক্রিয়, কারও কম, তবে প্রত্যেকেই অঞ্চল বুঝে, অডিয়েন্স বুঝে, কোন মাধ্যমে বলা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের প্রচার কৌশল নিয়ে থাকে। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের আইটি সেল অনেক আগেই তাদের কার্যকলাপ শুরু করায় সেই পরিমাণ সাফল্য পেতে বা ততটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বাকিদের আরোও বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে। ... ...
লোকসভা ভোট শেষ দফায়। এবার ভোটে উত্তুঙ্গ কোনো উদ্দীপনা ছিলনা, ছিলনা কোনো হাওয়া, চাপা এক উৎকণ্ঠা নিয়ে ভোট হয়েছে। সেই ধারা শেষ দফায়ও অব্যাহত। রাজনৈতিক পটচিত্রে উত্তেজনার অবশ্য কোনো অভাব হয়নি। অভাব হয়নি নাটকীয়তার। ভোটের ঠিক আগে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত রায় এসেছে সুপ্রিম কোর্টের। নির্বাচনের মধ্যেই এসেছে কলকাতা হাইকোর্টের পরপর দুটি রায়। একটিতে বিপুল সংখ্যক রাজ্য সরকারি শিক্ষককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে, অন্যটিতে ২০১০ সালের পর পশ্চাদপদ অংশের সংরক্ষণকে একরকম করে বাতিল করা হয়েছে। দুটির চূড়ান্ত রায়ই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে। সন্দেশখালি ভোটের আগে থেকেই শিরোনামে। কিন্তু ভোটের মধ্যে এসেছে নতুন চমক। গঙ্গাধর কয়ালের এবং আরও কয়েকটি ভিডিও ফাঁস হয়ে ভাইরাল। এসেছে স্বয়ং রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ। ... ...
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির (সিএমআইই) তথ্য দেখায় যে, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, গুজরাটে এই ধরনের বিনিয়োগকারী সম্মেলনগুলিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মাত্র ২৫ শতাংশ দিনের আলো দেখেছিল৷ অনেক বিজেপি শাসিত রাজ্য একে মডেল হিসাবে গ্রহণ করেছে। যেমন -- হ্যাপেনিং হরিয়ানা, মোমেন্টাম ঝাড়খণ্ড, রিসার্জেন্ট রাজস্থান ইত্যাদি। উত্তরপ্রদেশ (ইউপি ইনভেস্টর সামিট), পশ্চিমবঙ্গ (বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট), ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশাও বিনিয়োগের উপযুক্ত গন্তব্য হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য ভাইব্রেন্ট গুজরাট সামিটের অনুরূপ সংস্করণ আয়োজন করেছে। কিন্তু সব জায়গাতেই একই কান্ড– বড় বড় ঘোষণার কিছুকাল পর দেখানোর মতো কিছু নেই। ইভেন্টের সময় যে মৌ (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়, খুব কমই প্রকৃত বিনিয়োগ হয়, কারণ মৌগুলির কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এই জাতীয় শোগুলির পর বলার মতো কর্মসংস্থান যে হয় এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যও নেই। ... ...
গুজরাত দাঙ্গার সময় রাস্তায় উন্মত্ত হিন্দু গোষ্ঠীর লোকেরা শুধু স্থানীয় মুসলমানদেরই হত্যা করেনি, এক হাজারের বেশি ট্রাকও জ্বালিয়ে দিয়েছিল। জেনারেল মোটরস কারখানায় তৈরি জাহাজে পাঠানো ‘ওপেল অ্যাস্ট্রা’ গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছিল। এক হিসাবে দেখা যায় দাঙ্গায় গুজরাটের দু’হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। ওই সাম্প্রদায়িক হিংসা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভীতিগ্রস্ত করে তোলে। শিল্পপতিদের ধারণা ছিল পরে গোলমাল আরও বাড়বে। সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুজরাতে ফরেন ডায়রেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) আসা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ... ...
সম্ভবত, কোনও ভোটার যাতে পোলিং বুথে ঢুকে ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে না পারেন, সেই জন্যই মোবাইল ফোন, ক্যামেরা বা এই ধরনের কোনও রকম বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে বুথে প্রবেশের ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু, ভিডিও বা ছবি তো নির্বাচনী স্বচ্ছতার জন্য আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায় বুথের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের দৃশ্য ধরা পড়েছে। পোলিং অফিসারদের হুমকি দিয়ে সম্মিলিত ভাবে বুথ জ্যাম, দেদার ছাপ্পা – এসব ঘটনা তো আমাদের কাছে অতিপরিচিত। তাই বুথের ভেতরে যদি কেউ বা কয়েকজন মিলে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করে, ভোটারদের কাছে ফোন থাকলে সেটার ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে তৎক্ষণাৎ, যেটা পরে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করে অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে সেগুলো কাজে লাগতে পারে। শুধু ইভিএম মেশিনে একজনের ভোটদানের দৃশ্য যাতে অন্য কেউ না তুলতে পারে, সে বিষয়ে কড়া নজর রাখতে হবে। ... ...
ধরা যাক আমাদের n-সংখ্যক ভোটার আছে, n বিজোড় সংখ্যা (অর্থাৎ “টাই” অসম্ভব)। প্রত্যেক ভোটারের ঠিক বিকল্পে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা ধরা যাক pc, এবং সবার ভোট পড়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে “মেজরিটি রুল” অনুযায়ী, অর্থাৎ যে সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, সেটিই আমাদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। কনডরসে-র উপপাদ্যে এও ধরে নেওয়া হয়, যে, প্রত্যেক ভোটার ‘স্বতন্ত্র’, ‘দক্ষ’ এবং ‘আন্তরিক’। ‘স্বতন্ত্র’ – অর্থাৎ যে যার নিজের ভোট দিচ্ছেন বা একজনের পছন্দ আরেকজনকে প্রভাবিত করে না। ‘দক্ষ’ – অর্থাৎ, প্রত্যেকের ঠিক বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকের থেকে বেশি, যত সামান্যই হোক, এক্কেবারে র্যান্ডম গ্যেস অর্থাৎ ইকির-মিকির-চামচিকির করে আন্দাজে যা-ইচ্ছে-তাই একটা বোতাম টিপে দেওয়ার থেকে তার প্রজ্ঞা বা দক্ষতা একচুল হলেও বেশি। আর শেষ অ্যাজ়াম্পশনের কথা আগেও লিখেছি, ভোটার-রা ‘আন্তরিক’, সিরিয়াস-ও বলা যায়—কেউ ইচ্ছে করে ভুলভাল ভোট দিয়ে নষ্ট করছেন না। ... ...
বিজেপির ইশতেহারে কেবল দাবি করা হয়েছে যে- ‘আমরা প্রধান ফসলগুলোর অভূতপূর্ব এমএসপি বৃদ্ধি করেছি এবং ঠিক সময়ে সময়ে তা বাড়িয়ে যাব’। আসলে মোদী সরকারের এমএসপি মূল্যের বৃদ্ধির দাবি মিথ্যা। সত্যিটা হল ২৩টির মধ্যে ২২টি ফসলেরই এমএসপি বৃদ্ধির হার মোদী সরকারের সময়ের তুলনায় মনমোহন সিং সরকারের সময়ে অনেক বেশি ছিল। বিজেপির ইশতেহারের ভাষা থেকে এটা স্পষ্ট যে না তারা স্বামীনাথন কমিশনের সূত্র মেনে নিতে চায় না এমএসপিকে কৃষকের আইনি অধিকারে পরিণত করতে চায়। এই ইশতেহারে দেশকে ডাল ও ভোজ্য তেলে স্বাবলম্বী করার কথা বলা হয়েছে এবং বিশ্বের জন্য মোটা শস্য উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এখানেও কৃষকদের এই ফসলের ন্যূনতম এমএসপি’র কথা বলছে না। দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও নারাজ। এই ইস্যুতে 'ইন্ডিয়া' ব্লক কৃষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিজেপি তার বিরুদ্ধাচরণ করছে। ... ...
উপরোক্ত কথাগুলো বলা এই কারণে যে যতটা সম্ভব সুষ্ঠু ভাবে ভোট করা যায় যদি একজন শক্ত, বজ্রকঠিন ব্যক্তি, যিনি নিয়ম জানেন, সংবিধান জানেন, তিনি যদি পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকেন। সরকার, তা সে যত শক্তিশালিই হোক, তাদের খেয়াল খুশি মতো সেই ব্যক্তিকে পরিচালিত করতে পারে না। আমাদের রাজ্যে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়িয়ে গেছে যে নির্বাচন, বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেই খুনোখুনি হবে, বহু লোক মারা যাবে। এটা যেন ভবিতব্য, এর অন্যথা যেন হতে পারে না! ... ...
কর্মস্থল বাঁকুড়ায়, ভোট হুগলীতে। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম ভোট দিতে যাবো না। বাঁকুড়া থেকে সিঙ্গুরে গিয়ে ভোট দিয়ে সেই দিনেই ফেরা পোষাবে না। পরে মতবদল হল। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। কারণ কয়েকটা বিশেষ কারনে আমাকে একবার বাড়ি ফিরতেই হবে। তাই ভোটের দিনেই ফিরি, রথ দেখা কলা বেচা একসাথে হবে... সেদিন সকাল সাড়ে ছটায় বের হলাম। এখান থেকে দুর্গাপুর স্টেশন ৩০ কিমি প্রায়। রাস্তায় পুরো শান্ত পরিবেশই পেলাম। দিকে দিকে নানা দলের দলীয় পতাকা উড়ছে। ট্রেনে চলেছি, সেদিন ট্রেনটাও অনেকটা ফাঁকা, তাই জানালার ধারে বসে, মাঠ ঘাট দেখতে দেখতে... কোথাও ভোট হচ্ছে, ভোটের লাইন দেখা যাচ্ছে ... দূর থেকে অন্তত কোনো গন্ডগোল চোখে পড়ল না। ... ...
থ্রি নট থ্রি রাইফেল বাগিয়ে ধরে আড়ষ্ট কনস্টেবল বললেন- 'স্যার, আমাকে একটু গার্ড দিয়ে রাখুন। গুলি চালানোর অর্ডার নেই, শুনেছি এইসব অঞ্চলে বন্দুক ছিনতাই হয়। বন্দুক গেলে চাকরিতে টান পড়বে' ২০২৩ এর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে আসা রাজ্যপুলিশের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির, ভোটার বা ভোটকর্মী কোন ছাড়? অঞ্চলটি আমডাঙা। পুলিশের মুখে এ-কথা শুনে ভোটকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা তাঁদের। ... ...
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে কেজরিওয়ালকে হারানো সম্ভব হয়নি। তাই তাঁকে গদি থেকে নামানোর জন্য অন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়েছে - ঘোষণা হয়ে গেলো যে বিজেপি-নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট-গভর্নর এখন একাই দিল্লির 'সরকার', জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা আম আদমি পার্টিকে কাজ করতে হবে তাঁর হুকুম মাফিক। আর তাছাড়া যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, সেই প্রত্যেকটি রাজ্যের রাজ্যপাল আর তাঁদের ওপরে থাকা দেশের রাষ্ট্রপতির ধমনীতেও তো বয়ে চলেছে গোলওয়ালকারেরই রক্ত। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একএকজন আরএসএস প্রাক্তন। তাই কানহাইয়া বা উমার খালিদের মতন অপ্রিয় প্রশ্ন করা ছাত্র-ছাত্রী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে দেখা যাবে না আজ থেকে দশ বছর পর। ... ...
জরুরি অবস্থা চলাকালীন ১৯৭৫ সালের অগাস্ট মাসে পদত্যাগ করেন সিপিআই(এম)-এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক পি সুন্দরাইয়া। দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের কাছে লেখা ঐ মাসের ২২ তারিখের চিঠিতে তাঁর পদত্যাগের যে দশটি কারণ উল্লেখ করেছিলেন তার প্রথমটিই ছিল জনসংঘ ও আরএসএস নিয়ে পার্টির অবস্থান। তিনি এই দুই শক্তিকে সাথে নিয়ে জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করার যে পার্টি লাইন তার বিরোধী ছিলেন। এমনকি তিনি আরএসএস কে ‘আধা সামরিক ফ্যাসিস্ট’ বলেও অভিহিত করেন। যদিও এর শিকড় আরো গভীরে, অবিভক্ত কমুনিস্ট পার্টির প্রথম সম্পাদক পিসি যোশিও স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই এই মৌলবাদীদের নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পার্টির মধ্যেই তীব্রভাবে সমালোচিত হন। এই দোদুল্যমানতা থেকেই কিছুকাল পূর্বেও জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রাখায় অটল ছিল সিপিআই(এম)। সুতরাং ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে আব্বাসকে সাথী করে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বাড়ানোর বাসনা কোনো ভাবেই বিস্ময়জনক তো নয়ই বরং তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে যথেষ্ট সংগতিপূর্ণ। ... ...
সাধারণভাবে তামিলদের দুর্নীতি নিয়ে তত সমস্যা নেই। জনতা জানে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল দুর্নীতিগ্রস্ত, এবং সে নিয়ে তাদের খুব কিছু যায় আসে না। এ ব্যাপারে কামাল হাসানের উদাহরণ উপযুক্ত হতে পারে। তিনি স্বচ্ছ রাজনীতির কথা বলেছিলেন, বলেছিলেন বিকল্প রাজনীতির কথা। তিনি নিজে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তাঁর দল একটি আসনও পায়নি। তাঁদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ২.৫ শতাংশ। ... ...
এআইএডিএমকে-র এই ফল কিন্তু আগামী দিনে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তামিল রাজনীতিকে। নানাভাবে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন দুই প্রধান দল মিলে ভোট পেয়েছে ৮৬%-এর মত, তামিলনাড়ুতেও ছবিটা একই রকমের। সেক্ষেত্রে দুই প্রধান জোট ভোট পেয়েছে ৮৫%-এর বেশি। দুই প্রধান দ্রাভিড়িয়ান পার্টির মধ্যেই তাই প্রধানত ওঠাপড়া করেছে তামিল সমর্থনের ভিত্তি। ... ...
আমাদের এই ভাঙা-চোরা, কালি-ঝুলি মাখা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে গণতন্ত্র আছে সেটাকে রক্ষা করাই আমাদের এখন প্রধান কাজ। ভবিষ্যৎ প্রমাণ করবে, কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায়, সেই কাজে বাঙালি একটা বড় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করল, এবারের ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়ে। বাঙালি বজেপির বিরুদ্ধে একটা শক্তিকে চেয়েছিল। বিজেপিও তার বহুমাত্রিক, সর্বগ্রাসী আক্রমণ দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছিল কে তার প্রধান শত্রু। সিপিএমের ‘বিজেমূল’ প্রচারে মানুষ একেবারেই কান দেয়নি। বাঙালির কাছে এই মুহূর্তের বাস্তবতা এটাই যে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ছাড়া তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনও শক্তি ছিল না। যারা তাঁকে ভোট দিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূল নেত্রী অতীতে কী কী বলেছেন, কী কী করেছেন এই সব অসংখ্য প্রশ্ন এবং তর্ক সরিয়ে রাখলেন। বিজেপির পরাজয় তারই পরিণতি। ... ...
২০১৯-এর নির্বাচনে ওই রকম জাতীয়তাবাদী প্রচারে বাংলা থেকে ১৮টা আসন বিজেপির পায়। শুধুমাত্র বামের ভোট রামে গেছে বললেই কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই। নিজেদের দলেরও সমালোচনা তৃণমূলকে করতে হবে। কেন নীচের তলায় এতো ক্ষোভ তৈরি হল তা পর্যালোচনা করতে হবে। শুধুমাত্র অঞ্চল স্তরের নেতাদের দুর্নীতির কারণে ক্ষোভ বেড়েছে তা কিন্তু নয়। নীচের তলার নেতাদের দাদাগিরিও ও ঔদ্ধত্যও আছে। যে রোগে ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতন হয়েছিল, সেই একই রোগে কিন্তু তৃণমূলও আক্রান্ত। বিরোধীশূন্য রাজনীতি আসলে দক্ষিণপন্থী উত্থানের সিঁড়ি সেটা আরো একবার আজ বাংলার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন। ... ...