স্কুল গ্রাউন্ডের ঠিক মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে, একবার গোল ঘুরে চারধারটা দেখে নিল। কী সুন্দর রঙিন লাগছে, রোদ ঝলমল নীল আকাশের নীচে, মাটিতে যেন রামধনু নেমে এসেছে। সীমানা বরাবর মাঠের দুই ধারে সারি সারি স্টল,যেমনটা হয় প্রতিবার। বাইরের লোক আসা শুরু হয়নি এখনো, স্টলে স্টলে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতির উত্তেজনা তুঙ্গে। অন্যান্যবারে তারাও এই সময় নিজের নিজের স্টলে ব্যস্ত থাকত, টিচারদের বকাবকি, হাঁকডাক, এটা ভুলে যাওয়া সেটা ভুলে যাওয়া, স্টলের সাজ, নিজেদের সাজ, সবেতে শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া দিয়ে নেওয়া। অবশ্য নিজেদের সাজ বলতে পরণে সেই স্কুল ড্রেস, তবু এত লোক আসবে, এই বিশেষ দিনে, তাই ওরই মাঝে সম্ভব হলে চুলের ছাঁটে সামান্য হেরফের, মাথায় শ্যাম্পু, নখে পালিশ, হাল্কা লাইনার, কড়া ডিসিপ্লিনের টীচাররাও এদিন ওটুকু নাদেখা করে দেয়। ... ...
শীত এলেই এই শহরে পিকনিকের ধুম পড়ে যায়। অবশ্য শীত কালটা হয়ও খুব সুন্দর। কনকনে ঠান্ডা রাত্রি, ঝলমলে রোদের দিন, ঝকঝকে নীল আকাশে ভাসে দূর পাহাড়ের বরফ চূড়া। আগে তো শীতের শুরুতেই হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়ে, রেজাল্ট বেরোতো ক্রিসমাসের ছুটির আগে। ছুটিটা তাই মজায় ভরা থাকত, এমনিতে ক্যাম্পাসে একটু সাহেবিয়ানা বেশী বেশী, লোকে হরদম বিদেশ যাচ্ছে পড়তে বা পড়াতে, বিদেশী ছাত্রছাত্রীও আছে বেশ কিছু, তাই ক্রিসমাসের শুরুতেই সেজে ওঠে ঘর বাড়ি রাস্তা। এর ওপরে আবার এই শহর জুড়ে আছে বেশ কয়েকটা পুরনো নামী চার্চ। ঝিমলিদের স্কুলের চ্যাপেলও সেজে ওঠে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই, সাজানোর কাজে সিস্টারদের সাহায্য করে ছাত্রীরা যারা আর্টস আর ক্রাফটে ভালো, অনুর মত। আর অনু যেখানে সেখানে ঝিমলি থাকবেই। প্রতি বছরই ওরা খুব ভালোবেসে টাইনি টটের সিস্টাররা যারা এর দায়িত্বে থাকে তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। ক্লাস টেনের পর থেকে তো ওদের পরীক্ষার সময়গুলো সব উল্টোপালটা হয়ে গেছে, এসময় ওদের ছুটি, আর ছুটির পরে প্রিবোর্ড, তাই এই দু বছর আর ওরা ক্রিসমাস ডেকরেশনে নেই, এমনকী ছুটি পড়ার দিনের সকালে যে প্রোগ্রামটা হয় প্রতি বছর সেটাও বোধহয় আর এ জন্মে দেখা হবেনা। গত বছর থেকে ওদের ক্লাসের সরিতা আর সান্টা সাজেনা, শুনছিল, ছোটরা নাকি সান্টার বদলটা ঠিকমত বুঝতে না পেরে, জিজ্ঞেস করেছে, “সান্টা দিদি, তুমি এত রোগা হয়ে গেছ কেন?” ... ...
দেওয়ালিতে এবার তার বাজি পোড়ানো বারণ, ঝিমলির তাই মুখ বেজার। সেই টেনের বোর্ডের আগে থেকে এ এক আপদ শুরু হয়েছে। এবার তো আবার তার সাথে কলেজে ভর্তির সব পরীক্ষা, বারো ক্লাস বলে কথা , কত দায়দায়িত্ব, বাজিটাজিতে হাত পুড়ে কিছু একটা হলে! কলেজে উঠে যাও তারপরে যত খুশী আশ মিটিয়ে বাজি পোড়াও, দোল খ্যালো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারো, আমরা কিচ্ছু বলতে যাবনা। কথার ওপর কথা বলতে গেলে মা বলবে সবকিছুতে ঝিমলির নাকি যত কুযুক্তি, আর নিজেদের এইসব যুক্তি তাহলে কী? কলেজে উঠে গেলে বন্ধুরা তখন কে কোথায় থাকবে তার কোনো ঠিকানা আছে, নিজেই বাড়িতে আর থাকবে কিনা কে জানে! দেখছে তো অন্যদের অবস্থা, সিনিয়রদের সবাইকে। কার কখন ছুটি হয় কে কখন বাড়ি আসছে, কোনো ঠিক নেই, এর সেমিস্টার একসময় শেষ হয় তো ওর প্রজেক্ট তখন মাঝখানে। ... ...
হিমালয়ঘেরা এই শহরটাতে পুজো আসার সাথে সাথে চারদিক থেকে হিমেল হাওয়ার দল উঁকিঝুঁকি মারে।সারাদিন নানা শোরগোলে আর লোকের ভিড়ে, পুজোমন্ডপের চারধার বেশ সরগরম থাকলেও সন্ধ্যে হতে না হতেই ঠিক শীত না, তবে হিম ভাব। আরতি শেষে ফাংশন শুরু হলে প্রথম দিকটায় ভিড়টা চারিদিকে মাঠের ঘাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও আস্তে আস্তে ঘন হয়ে আসে শামিয়ানার নীচে। একটু রাতে বাড়ি ফেরার সময় হাল্কা একটা পাতা পোড়ার গন্ধ মেশে হাস্নুহানার মাতাল গন্ধে। টুপটাপ হিম ঝরে গন্ধরাজের পাতায়, আর ঝিমলির মন কেমন করে, কারণ ভালো বোঝা যায়না, তবু করে। অন্তত ওই সরস্বতী মন্দির থেকে বাড়ির আধো অন্ধকার পথ চলার ক্ষণে তো করেই। পুজোয় তার তেমন কিছু করার ছিলনা। এমনিতেও সে কোনো বছরই পুজোর ফাংশনের দিকে ঘেঁসেনা খুব একটা, ওই অনন্ত রিহারসাল পর্ব তার মোটেই পছন্দ নয়। আসলে বাঁধাধরা সময়ে কোন কিছু করতেই ঝিমলির ভালো লাগেনা। সেই কারনে এতকাল কোথাও ঠিকমত টিউশনই পড়ে উঠতে পারল না। এবার বারো ক্লাস বলে জোর করে শরাফ স্যরের কাছে অংক করতে পাঠানো হচ্ছে, খুব নিমরাজী হয়েও যাচ্ছে, এন্ট্রান্সের গরজ বালাই! ... ...
“মা বাইরে তাকিয়ে দ্যাখো না, বৃষ্টি হচ্ছে?” “হচ্ছে, কিন্ত জোরে নয়, উঠে পড়।“ “আর পনের মিনিট, মা। তুমি দশ মিনিট পরে আবার জানালায় যেও। যদি দেখ প্রাইমারির ছেলেমেয়েরা ফিরছে, তাহলে ডেকো না, তাহলে রেনি ডে। যদি না ফেরে তাহলে ডেকো। “রেনি ডে হলেই বা কী? সকাল সকাল উঠে পড়, বাড়িতেই পড়বি। আর এক মাস পরে তোর ফার্স্ট টার্ম না? এ কথার জবাব দিতে গেলে সকালের মিষ্টি আলতুসি ঘুমটা মাটি হয়। ঝিমলি মুখের ওপর চাদরটা টেনে দিয়ে পাশ ফিরে শুল। মা গজগজ করতে করতে মশারি খুলতে থাকে। ক্লাস ইলেভেন টুয়েলভের পড়া, এত কম পড়ে কী করে হয় কে জানে। স্কুলটুকু বাদ দিলে সারাদিনই তো হয় ঘুরে বেড়াচ্ছে নয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, অথবা গল্পের বইয়ে মুখ দিয়ে বসে আছে। এত বন্ধু যে কোত্থেকে আসে? আবার কারুর না কারুর জন্মদিনের পার্টি লেগেই আছে। আজকাল নাকি এরপরে সব আলাদা হয়ে যাবে বলে, জন্মদিন পালনের বেশী ঘটা। রাত্রি দশটা এগারোটায় সবাই ঘুমোতে গেলে, তিনি আলো জ্বালিয়ে বই খাতা নিয়ে নাকি পড়তে বসেন । অত রাতে কী ছাই পড়া হয় অমন করে কে জানে! ... ...
টেনের রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকেই জয় এই শহরের হীরো হয়ে গেল, যে বাড়িতে যাও, সেখানেই শুধু তাকে নিয়ে আলোচনা। একদিন দাদার কাছে এসেছিল ইলেভেনের ফিজিক্সের কী ডিফিকাল্টি বুঝে নিতে। রাস্তায় জিজ্ঞেস করতে দাদাই বাড়িতে এসে ভালো করে বুঝে নিতে বলেছিল। সে কী বিপত্তি, মা দাদা বৌদি সব এসে জড়ো হল। তার মধ্যে দাদার চিৎকার, "দ্যাখ, এভাবেই ওরকম রেজাল্ট হয়, জয় এসেছে পড়া বুঝে নিতে আর তোকে ডেকে ডেকেও বই নিয়ে বসানো যায়না।" মাও মহা উৎসাহে যোগ দেয়, "শুধু কী তুই, কারুর কাছেই তো পড়তে চায়না, কী যে হবে ওর! এই তো জয় শরাফ স্যরের কাছে অংক করছে, শহরের সব ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা তার কাছে অংক করে ইঞ্জিনিয়ারিং মেডিক্যাল পায়। আর এই মেয়ে একদিন গিয়ে বলে, শরাফ স্যর নাক খোঁটে, ওর কাছে পড়বনা। বালাসুন্দরমের কাছে কেমিস্ট্রী পড়বেনা কেন না সে এম কে ইয়াম আর এন কে ইয়ান বলে, কে বি গুপ্তা নাকি বই মুখস্থ করায়। হাজারটা বায়নাক্কা এর, এমন মেয়ে দেখেছিস জয়?" চশমার সরু স্টাইলিশ ফ্রেমের আড়ালে ঝকঝকে উজ্জ্বল চোখের, আপাতগম্ভীর মুখে কি চাপা হাসির আভাস? কিন্তু সে ছাই ভালো করে দেখার উপায় আছে এদের জ্বালায়! কী যে ভাবছে ওর সম্বন্ধে, ধরণী দ্বিধা হও ব্যাপার স্যাপার, ঝিমলি মানে মানে সরে পড়ে সেখান থেকে। ভাবছে কি, হয়ত ভাবছেই না, বয়ে গেছে তার, ওর মত বিচ্ছিরি, লেখাপড়ায় ফাঁকিবাজ, কোনোকিছুতেই ভালো নয় মেয়ের কথা ভাবতে! ... ...
আমার তা-ই মনে হয়েছে, বলে ফল্গু, কিন্তু এসপিণ্ডোলো ছাড়া আর কাউকেই বলিনি। তোদের বলছিলুম বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করেছি, সেই বিশেষজ্ঞ তিনিই। পেরুর পুলিশকে জানালে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা ছিল। কে দখল নেবে, ক্রেডিট কার – এইসব আন্তর্জাতিক কচকচি তৈরি হত। ব্যাপারটা তাই ছেড়ে দিয়েছি এসপিণ্ডোলোর হাতে। এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ফল্গু, কিন্তু এখনো কিছু জানালেন না এসপিণ্ডোলো। এদিকে পরশু দিনের ফ্লাইট কনফার্মেশন হয়ে গেছে আমাদের। ফেরবার আগে জানতে পারব কিনা কে জানে! ... ...
একটা ট্যাক্সি ডেকে সোজা ওরা পৌঁছোয় ট্যুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টারে। সেখানে কামিলা আর শ্যাভেজের সঙ্গে বসে আছেন স্বাস্থ্যবান মাঝবয়েসী এক ভদ্রলোক। পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে অপেক্ষা না করে বলেন তিনি, ওয়েলকাম মিজ ফল্গু, প্লীজ সিট ডাউন। কনগ্র্যাচুলেশনস, যেভাবে আপনি – মুড়কিকে দেখিয়ে বলেন ভদ্রলোক – এই বাচ্চা মেয়েটাকে উদ্ধার করেছেন ফ্রম ক্যাপটিভিটি, তাতে আমরা সবাই আপনার ফ্যান হয়ে গেছি এখন। আই হ্যাপ্ন্ টু বি দ্য পুলিস চীফ হিয়ার, বলুন কী করতে পারি। ... ...
আপনার সঙ্গে রসিকতা করার ধৃষ্টতা আমার নেই স্যর, কিন্তু আমি দেখেছি। আপনি তো জানেন বিশাখাপত্তনমের পোর্টে সিঙ্গাপুর অভিমুখী জাহাজকে দাঁড় করিয়ে আমি এবং আমার বন্ধুরা ভারতথেরিয়ামকে নামিয়ে এনেছিলাম। আমি নিজের হাতে একা একা নামাইনি, কিন্তু সঙ্গে ছিলাম। ভারতথেরিয়ামকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, ছুঁয়েছি। আমি চিনতে ভুল করব না স্যর। এখন একটা খুব জরুরি কাজ করছিলাম, সেটা ফেলে রেখে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, কারণ ওটাকে এখনই না বাঁচাতে পারলে হয়তো দেরি হয়ে যাবে। ... ...
নৌকো যখন দ্বীপের অনেকটা কাছাকাছি, ওরা দেখল দ্বীপের বেশ কিছু লোক একসঙ্গে দাঁড়িয়ে দেখছে নৌকোটাকে। নৌকোটা এসে দাঁড়ালো যখন তীরে, তখন প্রথম নামল রায়া, তারপর ফিনিগান। ওদের সঙ্গে দ্বীপের মানুষদের জন্যে কিছু উপহার ছিল, সেগুলো দিল ওরা। তারপর তিন-চারজন মাতব্বর জাতীয় লোক – পরে ওরা জানতে পেরেছিলো ওদের মধ্যে একজনের নাম অ্যাপো আর একজন সেরিপ – এগিয়ে এল রায়া আর ফিনিগানের দিকে। ... ...
আমরা সকলেই নিজ-নিজ সংসার-পরিবারের প্রতি বিশ্বস্ত। আমাদের নিয়মিত নিশ্চিন্ত উপার্জনের প্রতি আমরা বিশ্বস্ত। রাজধানী এবং প্রশাসনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কারণে কিছুটা প্রতিপত্তি উপভোগ এবং তার ফলে উপরি কিছু সুযোগ-সুবিধে লাভের প্রতি আমরা বিশ্বস্ত। আমাদের এই বিশ্বস্ততা অটুট থাকলে – আমরা রাজ্যের প্রতি তো বটেই – যে কোন রাজার প্রতিও সর্বদা বিশ্বস্ত থাকব। আমাদের এই সকল বিশ্বস্ততায় যদি কোনভাবেই হাত না পড়ে – তাহলে রাজার সিংহাসনে কখন কে বসল। কিংবা কখন কে উলটে গেল – তাতে কিছু কী যায় আসে আমাদের? আর আমাদের এই প্রভাব-প্রতিপত্তির সুবিধায় যদি কোনদিন টান পড়ে, বিপ্লবী হয়ে উঠতে আমাদের কতদিন লাগবে? ... ...
পড়েছিলাম, খানিকটা পড়েছিলাম, বলে উল্কি। লেকের মোটামুটি পূবে বলিভিয়া আর পশ্চিমে পেরু; পৃথিবীর উচ্চতম নাব্য সরোবর, দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম, বিরাট বড় জাহাজও অক্লেশে চলতে পারে। মুড়কি বলেছে যেদিকেই তাকানো যাক জল ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়া যায় না। এই লেকের ওপর ছোটবড় অন্তত একচল্লিশটা দ্বীপ আছে, কাজেই তার মধ্যে যে কোন একটা দ্বীপে মুড়কিকে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকতে পারে। ... ...
হ্যাঁ, আমাদের চোখের সামনেই, বলে ফল্গু, তারপর আগের দিন সকালে যতটুকু দেখেছে সবটাই বলে। শুনে, ফিনিগান বললো, আমরা পুলিশের মর্গ থেকেই আসছি এখানে সোজা। আপনারা যা দেখেছেন সেটা পুলিশকে বলবেন নাকি? হয়তো ওদের তদন্তে সুবিধে হবে। ... ...
বাড়ি ফিরে সদ্যজাতা শিশুকে প্রথম কোলে নিয়ে তার চোখে জল চলে এসেছিল। সে অশ্রু আনন্দের না কষ্টের – সে কথা আজও সে বুঝতে পারেনি। প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দ তো ছিলই। কিন্তু কষ্টও ছিল। নিজের প্রথম সন্তানের জন্মের মতো আশ্চর্য এক ঘটনার মুহূর্তে সে উপস্থিত থাকতে পারেনি। হুল এবং মায়ের চরম উদ্বেগের সময় পাশে থেকে পিতৃসুলভ কোন কর্তব্যই সে পালন করতে পারেনি। ... ...
অন্যের জীবনে যদি কেউ একটা বিষাক্ত ক্ষত খুঁজে পায়, জানি না কেন, কিছু লোক সেটাকেই খুঁচিয়ে বড়ো আনন্দ পায়…”। ... ...
মুড়কি বোঝবার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। হাসপাতাল তো নয়, কোন বাড়িই হবে। তাহলে ফল্গুদি আর উল্কিদি কোথায়? আর এই লোকগুলোই বা কারা? তারপর মনে পড়তে শুরু করে তার। মিস্টার শ্যাভেজের সঙ্গে কক-অব-দ্য-রক দেখে ফিরছিল তারা নৌকোতে। পারের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে যখন তখন জোরে একটা শব্দ হলো, তারপর কেউ একটা চেপে ধরলো ওর গলা। তারপর আর মনে নেই কিছু। ... ...
সাধারণ মানুষ রাজাকে কবে আর চোখে দেখেছে? তারা চেনে এবং ভয় পায় রাজকর্মচারীদের। সেই রাজকর্মচারীদের চোখে চোখ রেখে, তাদের হারিয়ে দেওয়ার সাহস যারা করতে পারে, সাধারণের চোখে তারাই তো বীর। তাদেরকেই তো তারা বসাবে তাদের হৃদয়ের রাজাসনে...”। ... ...
হঠাৎ ফল্গু বলে, এরকম অবস্থায় আমার একটা প্রশ্ন ছিল সেটা করা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। কিন্তু ভাবছি যখন, করেই ফেলি। আমাকে যে চার দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল মুড়কির ব্যাপারটা সমাধান করার জন্যে, আজই তার শেষ দিন। এখনও পর্যন্ত দেখাবার মতো কোন কাজই আমি করতে পারিনি। কাল সকাল থেকে এই কাজটা একা একা করবার স্বাধীনতা আমার থাকবে কি? ... ...
ভল্লাদাদা তাদের অনেক ক্ষতি করেছে – প্রধানমশাইয়ের মৃত্যু, কবিরাজমশাইয়ের মৃত্যু। তার কাছে হানো বা শল্কুর মৃত্যু হয়তো শোকাবহ নয় – কিন্তু ওরাও তো মারা গেছে – ওই দুটি পরিবারের কাছে সে ক্ষতিও তো অপূরণীয়! কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ মনে হচ্ছে – ক্ষতির থেকে লাভও কিছু কম হয়নি। এই যে দুই গ্রাম মিলিয়ে বত্রিশজন ছেলে রক্ষীর কাজ পেয়েছে – কাজ পেয়েছে তিনজন রাঁধুনি। পাশাপাশি গ্রামের অনেক ছেলেরা ভবিষ্যতেও অনেক কাজ পাবে। ছোটবেলা থেকে সে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা দেখেছে ক্বচিৎ-কখনো। কেনাকাটার একমাত্র উপায় ছিল – চাষ করা ফসল বিনিময়। আজ এতগুলো পরিবার মাসান্তে নিয়মিত হাতে পাবে এতগুলি তাম্রমুদ্রা! চারটি পরিবারের ক্ষতির তুলনায় - এতগুলি পরিবারের এই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা কী অনেক বড়ো নয়? ... ...
দু দিন কেটে গেছে, কোন সুরাহা হল না। তৃতীয় দিনে কামিলার যে ডাক্তার বন্ধু, সে হাতে লেখা একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল, রেসিডুয়াল ট্রেসেস অব কোকেইন। এটাই ভাবা ছিল ফল্গুর, রিপোর্ট পেয়ে সে বুঝলো তার চিন্তা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। আরও একটা ঘটনা। রাত্তিরবেলা ফোন করেছিলেন এসপিণ্ডোলো। পুরো ঘটনাটা ফল্গুর কাছ থেকে শুনে নিলেন, বললেন, তুমি সম্ভবত ঠিকই ভেবেছ, জঙ্গলেরই কয়েকজন মানুষকে লাগানো হয়েছে তোমাদের বিরুদ্ধে, এখনও পর্যন্ত অপরাধ যা সংঘটিত হয়েছে তা সবই করেছে জঙ্গলের মানুষ, তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমরা যাতে জঙ্গলের মানুষের সাহায্য পাও সে দায়িত্ব আমার। ... ...