হ্যাঁ, আমাদের চোখের সামনেই, বলে ফল্গু, তারপর আগের দিন সকালে যতটুকু দেখেছে সবটাই বলে। শুনে, ফিনিগান বললো, আমরা পুলিশের মর্গ থেকেই আসছি এখানে সোজা। আপনারা যা দেখেছেন সেটা পুলিশকে বলবেন নাকি? হয়তো ওদের তদন্তে সুবিধে হবে। ... ...
বাড়ি ফিরে সদ্যজাতা শিশুকে প্রথম কোলে নিয়ে তার চোখে জল চলে এসেছিল। সে অশ্রু আনন্দের না কষ্টের – সে কথা আজও সে বুঝতে পারেনি। প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দ তো ছিলই। কিন্তু কষ্টও ছিল। নিজের প্রথম সন্তানের জন্মের মতো আশ্চর্য এক ঘটনার মুহূর্তে সে উপস্থিত থাকতে পারেনি। হুল এবং মায়ের চরম উদ্বেগের সময় পাশে থেকে পিতৃসুলভ কোন কর্তব্যই সে পালন করতে পারেনি। ... ...
অন্যের জীবনে যদি কেউ একটা বিষাক্ত ক্ষত খুঁজে পায়, জানি না কেন, কিছু লোক সেটাকেই খুঁচিয়ে বড়ো আনন্দ পায়…”। ... ...
মুড়কি বোঝবার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। হাসপাতাল তো নয়, কোন বাড়িই হবে। তাহলে ফল্গুদি আর উল্কিদি কোথায়? আর এই লোকগুলোই বা কারা? তারপর মনে পড়তে শুরু করে তার। মিস্টার শ্যাভেজের সঙ্গে কক-অব-দ্য-রক দেখে ফিরছিল তারা নৌকোতে। পারের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে যখন তখন জোরে একটা শব্দ হলো, তারপর কেউ একটা চেপে ধরলো ওর গলা। তারপর আর মনে নেই কিছু। ... ...
সাধারণ মানুষ রাজাকে কবে আর চোখে দেখেছে? তারা চেনে এবং ভয় পায় রাজকর্মচারীদের। সেই রাজকর্মচারীদের চোখে চোখ রেখে, তাদের হারিয়ে দেওয়ার সাহস যারা করতে পারে, সাধারণের চোখে তারাই তো বীর। তাদেরকেই তো তারা বসাবে তাদের হৃদয়ের রাজাসনে...”। ... ...
হঠাৎ ফল্গু বলে, এরকম অবস্থায় আমার একটা প্রশ্ন ছিল সেটা করা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। কিন্তু ভাবছি যখন, করেই ফেলি। আমাকে যে চার দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল মুড়কির ব্যাপারটা সমাধান করার জন্যে, আজই তার শেষ দিন। এখনও পর্যন্ত দেখাবার মতো কোন কাজই আমি করতে পারিনি। কাল সকাল থেকে এই কাজটা একা একা করবার স্বাধীনতা আমার থাকবে কি? ... ...
ভল্লাদাদা তাদের অনেক ক্ষতি করেছে – প্রধানমশাইয়ের মৃত্যু, কবিরাজমশাইয়ের মৃত্যু। তার কাছে হানো বা শল্কুর মৃত্যু হয়তো শোকাবহ নয় – কিন্তু ওরাও তো মারা গেছে – ওই দুটি পরিবারের কাছে সে ক্ষতিও তো অপূরণীয়! কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ মনে হচ্ছে – ক্ষতির থেকে লাভও কিছু কম হয়নি। এই যে দুই গ্রাম মিলিয়ে বত্রিশজন ছেলে রক্ষীর কাজ পেয়েছে – কাজ পেয়েছে তিনজন রাঁধুনি। পাশাপাশি গ্রামের অনেক ছেলেরা ভবিষ্যতেও অনেক কাজ পাবে। ছোটবেলা থেকে সে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা দেখেছে ক্বচিৎ-কখনো। কেনাকাটার একমাত্র উপায় ছিল – চাষ করা ফসল বিনিময়। আজ এতগুলো পরিবার মাসান্তে নিয়মিত হাতে পাবে এতগুলি তাম্রমুদ্রা! চারটি পরিবারের ক্ষতির তুলনায় - এতগুলি পরিবারের এই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা কী অনেক বড়ো নয়? ... ...
দু দিন কেটে গেছে, কোন সুরাহা হল না। তৃতীয় দিনে কামিলার যে ডাক্তার বন্ধু, সে হাতে লেখা একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল, রেসিডুয়াল ট্রেসেস অব কোকেইন। এটাই ভাবা ছিল ফল্গুর, রিপোর্ট পেয়ে সে বুঝলো তার চিন্তা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। আরও একটা ঘটনা। রাত্তিরবেলা ফোন করেছিলেন এসপিণ্ডোলো। পুরো ঘটনাটা ফল্গুর কাছ থেকে শুনে নিলেন, বললেন, তুমি সম্ভবত ঠিকই ভেবেছ, জঙ্গলেরই কয়েকজন মানুষকে লাগানো হয়েছে তোমাদের বিরুদ্ধে, এখনও পর্যন্ত অপরাধ যা সংঘটিত হয়েছে তা সবই করেছে জঙ্গলের মানুষ, তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমরা যাতে জঙ্গলের মানুষের সাহায্য পাও সে দায়িত্ব আমার। ... ...
“তোরা জনসাধারণের জন্যে লড়াই করছিস – মনে রাখবি তারা তোদের থেকে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে। অন্যায়কারীকে হত্যা করা একরকমের বিচার, রাজাও করেন।। কিন্তু তাকে সবংশে নির্মূল করাটা কখনোই ন্যায় বিচার হতে পারে না। রাজাও কখনও তা করেন না। জনগণের মনে বিতৃষ্ণা জাগিয়ে জনগণের সঙ্গে বেশি দিন চলা যায় না। তোরা ডাকাত নয়, রাজা হয়ে ওঠ, জনা।” ... ...
সত্যি কথা বলছি হেফা, আমরা একেবারেই বোকা হয়ে গেছি, কী কারণ বুঝতেও পারছি না। তবে ডিরেক্টর সাহেব আর আপনি যখন কাল আমাদের সঙ্গে কথা বলে চলে গেলেন, সাহেব বললেন কালই ফিরে আসবেন প্রজেক্টে, আমরা তখন দুজনে মিলে ইঞ্জিন-টিঞ্জিন সব খুলে দেখলাম। কার্ব্যুরেটরে অনেক জল ঢুকেছে, কনভেয়রটা খুলে গেছে আর প্রপেলারটার দেখলাম ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি, একটা ব্লেড তো ভেঙেই গেছে, তাছাড়া কাদা জমে প্রায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে গেছে, ঘুরছেই না ভালোভাবে। ... ...
কমলিমা শুনেছেন – বড়ো বড়ো পণ্ডিতেরা নাকি অনেক গণনা করে দেখেছেন – জন্মমুহূর্ত থেকেই প্রতিটি মানুষের ভাগ্য নাকি কোন না কোন তারকাগুচ্ছের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় – যুক্ত হয়ে যায় কোন না কোন গ্রহের সঙ্গেও। একমাত্র মৃত্যুর সঙ্গেই নাকি সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ... ...
সেটা আপনাকে না বলার আর কোন মানে হয় না, এখন হয়তো আপনার কাছ থেকে আমাদের অনেক সাহায্য নিতে হবে। আর সত্যি কথা হল, আমাদের যা উদ্দেশ্য তার সঙ্গে আপনার কাজের কোন সংঘাত তো নেইই, বরঞ্চ একটা আর একটার পরিপূরক বলতে পারেন। যাঁর নির্দেশে কাজটা আমরা করতে এসেছি, তাঁর পরামর্শ ছিল আমরা যেন আমাদের উদ্দেশ্য যতটা পারি গোপন রাখি, এটা নিয়ে কোন হৈ চৈ যেন না হয়, তাই প্রথম আলাপেই আপনাদের জানাইনি ব্যাপারটা। ... ...
ওদের নৌকো যখন জল ছেড়ে ডাঙা ছুঁলো তখন ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে চার-পাঁচ জনের একটা দল, একটু দূরে খোলা জীপের মতো একটা গাড়ি। চার ঘণ্টারও বেশি গভীর রাতের অন্ধকারে নদীতে নৌকোয় আসতে আসতে চোখ খানিকটা অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, নদীর ঘাট থেকে গাড়িটা পর্যন্ত যেতে যেতেই ওরা বুঝলো, এমন জঙ্গল ওরা আগে দেখেনি তো বটেই, অন্ধকারও যে এত ঘন হতে পারে তা ওদের কল্পনাতেও ছিল না। ... ...
একটু সময় নিয়ে ভল্লা খুব নরম করে বলল, “আমাদের দলের আমরা সবাই জুজাক, তাই তো মা?” কমলিমা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন, অস্ফুট অথচ দৃঢ় স্বরে বললেন, “হ্যাঁ জুজাক”। ... ...
ভল্লা হাসতে হাসতে বলল, “তোর ওই ডাইনী চোখের ভিরকুটিতে আমি ডরাবার পাত্র নই... আর আমি যে ডাকাত - সে কথা কবিরাজদাদা তোকে বলেনি? সারা জীবনে অনেক ডাকাতি করেছি - অস্ত্র-শস্ত্র, টাকাকড়ি...কিন্তু মা ডাকাতি কোনদিন করিনি...”। ... ...
সাইজে প্রায় এক ফুটের মতো। বড়োসড়ো হলেও খুব লাজুক পাখি, আপন মনে একা-একা ঘুরে বেড়ায়, সাধারণত দেখা দেয় না। পুরুষদের পালকের রঙ প্রধানত নীচের দিকে কালো আর ওপরের দিকে সোনালী-গেরুয়া, চোখে পড়ার মতো একটা বিরাট ঝুঁটি থাকে মাথায়, গায়ে সূর্যের আলো পড়লে বহু দূর থেকেও ঝকঝকে লালচে সোনালী পাখিটাকে দেখতে পাওয়া যায়। এরা রুপিক্যুলা বর্গের পাখি, এই বর্গের অন্য পাখিটার নাম গায়ানান কক-অব-দ্য-রক, প্রায় একই রকমের দেখতে। ... ...
কপাল-টপাল কোন কাজের কথা নয়, রামালি। ওসব অকর্মাদের ধূর্তামি – আধাখ্যাঁচড়া কাজ করে মনোমত ফল না পেলে, বলে কপালে নেই তো করবো কী? তুই তো তেমন নস, তুই কেন কপালের দোষ দিবি?” ... ...
এত বিচিত্র রকমের প্রজাপতি একই জায়গায়, জঙ্গলের অংশ হলেও ঠিক জঙ্গল নয়, গাছপালাগুলোর উপর মানুষের হাত স্পষ্ট, প্রজাপতিদের থাকবার আর ডিম পাড়ার সুবিধে হবে এমন বাছাই করা সব গাছ-গুল্ম, কেয়ারি-করা বাগানের মতোই খানিকটা। মানুষের কাটা ছোট ছোট জলাশয়, তার উপর ছোট ছোট সাঁকো – ভালো হলেও খুব স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা বলে মনে হয় না, এগুলোই আমার আবিষ্কার। আর তা ছাড়া মাউন্ট হাউজের ওই অগুনতি প্রজাপতির প্রদর্শন তো ভোলা যাবে না কোনদিনই। পিন দিয়ে লাগানো না থাকলে মনে হতো এখনই বুঝি বা উড়ে যাবে! ... ...
এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে, এত নাটক করে, সবে যখন আমাদের কাজটা সাফল্যের দিকে এগোচ্ছে, সে সময় কবিরাজমশাই এবং প্রধানমশাই আমাদের গোপন কৌশলটাই যদি সবার সামনে ফাঁস করে দেন, কী হবে? আমরা ব্যর্থ হবো – কিন্তু সেটা তুচ্ছ ব্যাপার। গুরুতর হচ্ছে - সব কথা জানাজানি হয়ে গেলে মন্ত্রীসভায় ঝড় বয়ে যাবে। রাজা ও মহামন্ত্রীকে বাধ্য হয়ে – তাঁদের বিশ্বাসভাজন সেনাধ্যক্ষ এবং মহাধিকারিকদের ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে এবং যারা যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত – সকলকে শাস্তি দিয়ে – পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। তাতে রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কর্মী ও সেনাবাহিনীতে তুমুল বিক্ষোভ সৃষ্টি হবে। এক কথায় রাজ্যের প্রশাসন ও সুরক্ষা ভয়ংকর সংকটের সম্মুখীন হবে – তাতে রাজার সিংহাসনও টলে যেতে পারে…। ... ...
ভেতরে ঢুকে কিন্তু ওরা হতবাক। ঠিক এমন ধরণের কিছু দেখবে ওরা আগে ভাবেনি। দেখে মনে হয় জঙ্গলেরই একটা অংশ, কিন্তু প্রজাপতিদের ধরে রাখার জন্যে বিরাট একটা জায়গা – শোনা গেলো ছ'শো স্কোয়ার মিটার – জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এত রং-বেরঙের প্রজাপতি এক জায়গায়, মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা, অজস্র গাছের পাতায় আর ফুলে তাদের রাজত্ব। ছোট ছোট খাল কাটা, তার ওপর আরও ছোট ছোট সাঁকো, ঘাসে-পাতায়-সাঁকোর রেলিঙেও প্রজাপতিদের মেলা, পথ-ভোলা কোন প্রজাপতি ওদেরও চুলে-মুখে-গায়ে – এমন মজার অভিজ্ঞতা ওদের হয়নি কখনো আগে। ... ...