ভালোয় মন্দয় মিলিয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনেক বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে, তবে এবার যা হলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের আরেক প্রস্থ কফির অর্ডার দিয়ে ইস্তভান কিছু লিখলেন একটা কাগজে, তার পর বললেন ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে তিনি সিটি ব্যাঙ্ককে একটি আন্তর্জাতিক ঋণের মৌখিক ম্যানডেট দিতে আগ্রহী। আমরা যদি তাঁদের শর্ত মেনে নিই, ইস্তভান তাঁর বোর্ডের সম্মতি বিধায় আমাদের ফর্মাল চিঠি দেবেন, তাতে কিছু সময় লাগতে পারে। এবার তিনি তাঁর টেবিলে লেখা চিরকুটে চোখ রেখে উইশ লিস্ট, চাহিদার তালিকা জানালেন- এক। কাম্য ঋণের পরিমাণ তিরিশ মিলিয়ন ডলার। দুই। মেয়াদ তিন বছর, আসলটা শোধ দেওয়া হবে ঋণচুক্তি সই করার তিন বছর বাদে, কোনো কিস্তিতে নয়। তিন। সুদ প্রত্যর্পণ করা হবে প্রতি ছ মাস অন্তর। চার। সুদের হার লন্ডনের ইন্টার ব্যাঙ্ক অফার রেট বা লাইবরের ওপরে ২% (সে সময় ৪% প্লাস ২=৬%), ফিক্সড নয়, ফ্লোটিং, ছ মাস অন্তর নির্ধারিত হবে। পাঁচ। আমাদের পারিশ্রমিক তিরিশ মিলিয়ন ডলারের ওপরে ১% অথবা ৩০০,০০০ ডলার, সেটি ঋণচুক্তি সই হবার দিনে দেয়, আপ ফ্রন্ট। সুখবর ! খদ্দেরের আজ্ঞাপত্র বা ম্যানডেট পেতে কত যে ঘোরাঘুরি করতে হয়, জুতোর সুখতলা খোয়াতে হয়! টাটা স্টিলের বর্তমান অধ্যক্ষ কৌশিক চাটুজ্জে তার সাক্ষী। তাঁর কোম্পানির ইংল্যান্ডের কোরাস স্টিল অধিগ্রহণের ডিলের সন্ধানে বম্বে হাউসের লবিতে, প্রয়াত রতন টাটার স্নেহধন্য সতত বিচরণরত কুকুরগুলিকে পাশ কাটিয়ে লিফটে চড়ে তিনতলায় কৌশিকের অফিসে কতদিন যে হত্যে দিয়ে বসে থেকেছি (তাঁর তৎকালীন সুযোগ্য সহকারী সন্দীপ অবশ্য আমাদের আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখে নি)। এই বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক পয়লা মিটিঙেই বললেন, চরৈবেতি? মানে আমাদের কপালে ডিল নাচছে, না আমরা বোকার মতন বীরদর্পে কোন গভীর গাড্ডার দিকে এগুচ্ছি? চ্যালেঞ্জের তালিকা নিম্নরূপ: পূর্ব ইউরোপের বাজার খুলেছে সবে কিন্তু এই কয়েক বছরে কোনও দেশের কোনো ব্যাঙ্কই আন্তর্জাতিক ঋণ বাজারে আসে নি। ব্যাঙ্কের বয়েস সাত বছর, ব্যবসার ফলাফল ভদ্রসমাজে বড়ো গলা করে বলার মতন নয়; লাভের মুখ কখনো দেখেনি, দেখছে লোকসানের মুখ। মালিকানা সরকারি, জানি। কিন্তু ঋণের অনাদায়ের অপরাধে হাঙ্গেরি সরকারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। সরকারের একটি কবচ-কুণ্ডল থাকে, তার নাম সভারেন ইমিউনিটি, সরকার অবধ্য। ঋণের দর কি হবে ব্যাঙ্ক নিজেই স্থির করে দিয়েছে। সেটা তাদের ইচ্ছে, পাবলিক সেটা মানবে? বেচব কাকে? কোনো তুলনামূলক বাজারি দর আমাদের অজ্ঞাত, ওয়াল স্ট্রিটের কেতাবি ভাষায় যার নাম মার্কেট রিড। মার্কেট কোনও ডিলই দেখে নি অতএব কোনো কিছু রিড করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব! জিজ্ঞেস করব কাকে? পশ্চিমে ঋণের বাজারে হাঙ্গেরি ও বুদাপেস্ট দুইই অপরিচিত। ... ...
হ্যাঁ, আমাদের চোখের সামনেই, বলে ফল্গু, তারপর আগের দিন সকালে যতটুকু দেখেছে সবটাই বলে। শুনে, ফিনিগান বললো, আমরা পুলিশের মর্গ থেকেই আসছি এখানে সোজা। আপনারা যা দেখেছেন সেটা পুলিশকে বলবেন নাকি? হয়তো ওদের তদন্তে সুবিধে হবে। ... ...
বাড়ি ফিরে সদ্যজাতা শিশুকে প্রথম কোলে নিয়ে তার চোখে জল চলে এসেছিল। সে অশ্রু আনন্দের না কষ্টের – সে কথা আজও সে বুঝতে পারেনি। প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দ তো ছিলই। কিন্তু কষ্টও ছিল। নিজের প্রথম সন্তানের জন্মের মতো আশ্চর্য এক ঘটনার মুহূর্তে সে উপস্থিত থাকতে পারেনি। হুল এবং মায়ের চরম উদ্বেগের সময় পাশে থেকে পিতৃসুলভ কোন কর্তব্যই সে পালন করতে পারেনি। ... ...
আলোর অপেক্ষায় থাকা আঁধারের দিনগুলোয় সতর্কতা ছিল, ভয় ছিল, রোমাঞ্চও ছিল। আশা ছিল – আলো আসবে, আলো আসছে। কিন্তু, আলোর উল্টো পথে চলে যে আঁধারে পৌঁছে যাওয়া, আলোর সম্ভাবনাগুলোকে ধ্বংস করে আঁধারের সমুদ্রে যে ক্রম-নিমজ্জন, আমাদের বোধের জগতে সে বড় ভয়াবহ, সে বড় মর্মান্তিক অভিঘাত নিয়ে এসেছিল। সেই শেষ নয় যদিও। বস্তুত জীবন দীর্ঘ হলে আমরা বারেবারেই কালের ঘড়ির দোলকের এই প্রান্ত বদলের মধ্য দিয়ে যাই। তাই আলোর দিনে যথা সাধ্য প্রস্তুতি নিই আগামীর অন্ধকারের জন্য। আর, অন্ধকারের দিনে মনে রাখতে চেষ্টা করি, সমস্ত অন্ধকার যুগ কাটিয়ে একসময় আলোর দিন আসে, পরের অন্ধকারের আগে। আর হাতে ধরা বাতি হোক কি তারার আলোয়, এমনকি নিকষ কালো অন্ধকারেও, আলোর পথযাত্রীরা এগিয়ে চলে, কেউ কেউ পড়ে যায়, তবু এগিয়ে চলা থামেনা। ... ...
অন্যের জীবনে যদি কেউ একটা বিষাক্ত ক্ষত খুঁজে পায়, জানি না কেন, কিছু লোক সেটাকেই খুঁচিয়ে বড়ো আনন্দ পায়…”। ... ...
মুড়কি বোঝবার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। হাসপাতাল তো নয়, কোন বাড়িই হবে। তাহলে ফল্গুদি আর উল্কিদি কোথায়? আর এই লোকগুলোই বা কারা? তারপর মনে পড়তে শুরু করে তার। মিস্টার শ্যাভেজের সঙ্গে কক-অব-দ্য-রক দেখে ফিরছিল তারা নৌকোতে। পারের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে যখন তখন জোরে একটা শব্দ হলো, তারপর কেউ একটা চেপে ধরলো ওর গলা। তারপর আর মনে নেই কিছু। ... ...
"ও কাকিমা, ওরা আমায় কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না, তুমি একটু বলে দাও না।" ছেনুর মা ভেতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন, হঠাৎ পিছন থেকে এরকম ডাক শুনে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন কাঁদো কাঁদো মুখে হাফপ্যান্ট পরা একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, ছেনুর মতো একই বয়স বা এক দু বছর বড় হবে হয়তো। ছেনুর মা, তাকে ডেকে বললেন, কি হয়েছে? তোমার নাম কি? সে আরো কাঁদো কাঁদো মুখে জানাল, তার নাম চন্দন। তার কথা থেকে জানা গেল প্যান্ডেলের সামনে হুটোপাটি করে খেলাধুলোর সময় ছেনু নাকি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে, এবং সে টাল সামলাতে না পেরে পড়বি তো পড় প্যান্ডেলের ওপর গিয়ে পড়েছে। এবং সেই পতনের ফলে প্যান্ডেলের এক জায়গার কাগজের সাজসজ্জা ফর ফর করে ছিঁড়ে যায়। প্যান্ডেলের লোকজন সেই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চেপে ধরে বকাবকি করে, কিন্তু চন্দন পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দেখে আসল অপরাধী পগারপার। ফলে এক তরফা সব বকুনি তাকেই শুনতে হয় আর প্যান্ডেলের ডেকোরেশন নষ্ট করার জন্য প্যান্ডেলের কাছে খেলাও বারণ হয়ে যায়। আজ যেই সে ওখানে খেলতে গেছিল, ওমনি ডেকরেটরের লোকজন হাতুড়ি নিয়ে তাড়া করেছে। ... ...
নয়ের দশকের প্রারম্ভ থেকে পূর্ব ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলির শিল্প বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্বের বাজারে অর্থ সংগ্রহের অভিযানে সিটি ব্যাঙ্ক ছিল পথিকৃৎ। আমার ডায়েরিতে তাই বারে বারে আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণ কেনা বেচার কথা এসেছে । প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঋণ গ্রহীতা উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দা আর ঋণ দাতা অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশের লগ্নিকারক; আজকে যাকে নর্থ সাউথ ডিভাইড বলা হয়ে থাকে (পরে আমরা সাউথ সাউথ বা গ্লোবাল সাউথকে একত্রিত করেছি , যেখানে এক উন্নয়নশীল দেশ অন্য দেশে অর্থলগ্নি করেছে )। সে সময়ে আমরা উত্তরের ধন দক্ষিণে বণ্টন করেছি, অবশ্যই উপযুক্ত সুদ এবং মানানসই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। দেশ কাল ও খদ্দেরের ক্রেডিট রেটিং ভেদে এই বাণিজ্যের খানিকটা ইতর বিশেষ হয়; বদলে যায় সুদের হার, পারিশ্রমিকের বহর । ... ...
সাধারণ মানুষ রাজাকে কবে আর চোখে দেখেছে? তারা চেনে এবং ভয় পায় রাজকর্মচারীদের। সেই রাজকর্মচারীদের চোখে চোখ রেখে, তাদের হারিয়ে দেওয়ার সাহস যারা করতে পারে, সাধারণের চোখে তারাই তো বীর। তাদেরকেই তো তারা বসাবে তাদের হৃদয়ের রাজাসনে...”। ... ...
হঠাৎ ফল্গু বলে, এরকম অবস্থায় আমার একটা প্রশ্ন ছিল সেটা করা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। কিন্তু ভাবছি যখন, করেই ফেলি। আমাকে যে চার দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল মুড়কির ব্যাপারটা সমাধান করার জন্যে, আজই তার শেষ দিন। এখনও পর্যন্ত দেখাবার মতো কোন কাজই আমি করতে পারিনি। কাল সকাল থেকে এই কাজটা একা একা করবার স্বাধীনতা আমার থাকবে কি? ... ...
ভল্লাদাদা তাদের অনেক ক্ষতি করেছে – প্রধানমশাইয়ের মৃত্যু, কবিরাজমশাইয়ের মৃত্যু। তার কাছে হানো বা শল্কুর মৃত্যু হয়তো শোকাবহ নয় – কিন্তু ওরাও তো মারা গেছে – ওই দুটি পরিবারের কাছে সে ক্ষতিও তো অপূরণীয়! কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ মনে হচ্ছে – ক্ষতির থেকে লাভও কিছু কম হয়নি। এই যে দুই গ্রাম মিলিয়ে বত্রিশজন ছেলে রক্ষীর কাজ পেয়েছে – কাজ পেয়েছে তিনজন রাঁধুনি। পাশাপাশি গ্রামের অনেক ছেলেরা ভবিষ্যতেও অনেক কাজ পাবে। ছোটবেলা থেকে সে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা দেখেছে ক্বচিৎ-কখনো। কেনাকাটার একমাত্র উপায় ছিল – চাষ করা ফসল বিনিময়। আজ এতগুলো পরিবার মাসান্তে নিয়মিত হাতে পাবে এতগুলি তাম্রমুদ্রা! চারটি পরিবারের ক্ষতির তুলনায় - এতগুলি পরিবারের এই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা কী অনেক বড়ো নয়? ... ...
দু দিন কেটে গেছে, কোন সুরাহা হল না। তৃতীয় দিনে কামিলার যে ডাক্তার বন্ধু, সে হাতে লেখা একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল, রেসিডুয়াল ট্রেসেস অব কোকেইন। এটাই ভাবা ছিল ফল্গুর, রিপোর্ট পেয়ে সে বুঝলো তার চিন্তা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। আরও একটা ঘটনা। রাত্তিরবেলা ফোন করেছিলেন এসপিণ্ডোলো। পুরো ঘটনাটা ফল্গুর কাছ থেকে শুনে নিলেন, বললেন, তুমি সম্ভবত ঠিকই ভেবেছ, জঙ্গলেরই কয়েকজন মানুষকে লাগানো হয়েছে তোমাদের বিরুদ্ধে, এখনও পর্যন্ত অপরাধ যা সংঘটিত হয়েছে তা সবই করেছে জঙ্গলের মানুষ, তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমরা যাতে জঙ্গলের মানুষের সাহায্য পাও সে দায়িত্ব আমার। ... ...
মায়াকে সংক্ষেপে জানালাম চেক আলফাবেটে যদিও অক্ষর বেয়াল্লিশটি, স্বর বর্ণ সাতটি, তারা এই সীমিত স্বর বর্ণগুলি অনেক ভেবে চিন্তে খরচা করেন, যেমন মৃত্যুর প্রতিশব্দ Smrt, শোনায় স্মরত্। এর পিছনে মুখের ব্যায়াম ছাড়া আর কোন যুক্তি আছে জানি না। BRNO উচ্চারণ বরনো অথবা ব্রনো। জার্মানরা অবশ্য এর একটা সহজ ভার্শন রেখে গেছে, ব্রুইন। এই রাজ্যের নাম মোরাভিয়া, চেকে মোরাভা, সেখানে ভাওয়েল আছে মাঝে ও শেষে। জার্মান আরও সহজ, মেহরেন। মেয়েকে আরেকটা ট্রিভিয়া শোনানোর সুযোগ ছাড়া গেলো না। চেক ভাষায় আনো (ano, শুনলে নো মনে হয়) হলো হ্যাঁ! আরেকটিমাত্র ইউরোপীয় ভাষায় এমনি গোলমেলে ব্যাপার আছে - গ্রিকে নে মানে হ্যাঁ! ব্যবসায়ের নামে পূর্ব ইউরোপ বেড়ানোর দিন ফুরিয়েছে। ভিয়েনায় আমার অনাদি ব্যাঙ্কের বোর্ড মিটিং সেরে গাড়ি ভাড়া করেছি চেক সন্দর্শনের বাসনায়। প্রথম স্টপ ব্রুইন, ভিয়েনা থেকে মাত্র একশ মাইল। গাড়িতে বা ট্রেনে দেড় ঘণ্টা (ভাড়া আটশো টাকা!) ইতিহাসে পড়া হাবসবুরগ সাম্রাজ্যের দিগন্ত খুলে যায় চোখের সামনে, তাকে সত্বর চেনা হয়ে যায়। ভিয়েনার শোয়েখাত হাওয়াই আড্ডা থেকে বেরিয়ে শহরে যাবার পথে নির্দেশিকা চোখে পড়ে – এই দিকে প্রাগ, ব্রুইন,ওই বুদাপেস্ত, জাগ্রেবের রাস্তা- হাবসবুরগ রাজত্বের পুরনো জেলা সদর! এককালে কাঁটাতার, ওয়াচ টাওয়ার ছিল এখন সীমানা অবধি নেই। চেনা অচেনা জায়গা পার হয়ে যাই, এমনি হঠাৎ কখন পার হয়েছি আর্কডিউক ফ্রান্তস ফারদিনান্দের স্ত্রী সোফি ফন হোহেনবুরগের পৈত্রিক জমিদারি। চেকোস্লোভাকিয়া নামের দেশ কোন কালে ছিল না; ছিল কয়েকটি রাজ্য বোহেমিয়া, মোরাভিয়া, চেক সাইলেসিয়া, আপার হাঙ্গেরি (আজকের স্লোভাকিয়া), আটশ বছর পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য, তারপর হাবসবুরগ এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজত্বের (১৮৬৭-১৯১৮) অংশ। আমরা বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়াকে বেশি চিনি, এদের নাম প্রায় একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। বোহেমিয়া আয়তনে বড়ো, প্রাগ তার রাজধানী, ব্যাভেরিয়ার সঙ্গে গায়ে লাগা, জার্মান ভাষা সংস্কৃতি ও শিক্ষার পীঠস্থান; মোরাভিয়া আজকের চেক রিপাবলিকের এক তৃতীয়াংশ, রাজধানী বরনো, চেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর,ইউরোপের ষাট নম্বরে। ... ...
“তোরা জনসাধারণের জন্যে লড়াই করছিস – মনে রাখবি তারা তোদের থেকে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে। অন্যায়কারীকে হত্যা করা একরকমের বিচার, রাজাও করেন।। কিন্তু তাকে সবংশে নির্মূল করাটা কখনোই ন্যায় বিচার হতে পারে না। রাজাও কখনও তা করেন না। জনগণের মনে বিতৃষ্ণা জাগিয়ে জনগণের সঙ্গে বেশি দিন চলা যায় না। তোরা ডাকাত নয়, রাজা হয়ে ওঠ, জনা।” ... ...
সত্যি কথা বলছি হেফা, আমরা একেবারেই বোকা হয়ে গেছি, কী কারণ বুঝতেও পারছি না। তবে ডিরেক্টর সাহেব আর আপনি যখন কাল আমাদের সঙ্গে কথা বলে চলে গেলেন, সাহেব বললেন কালই ফিরে আসবেন প্রজেক্টে, আমরা তখন দুজনে মিলে ইঞ্জিন-টিঞ্জিন সব খুলে দেখলাম। কার্ব্যুরেটরে অনেক জল ঢুকেছে, কনভেয়রটা খুলে গেছে আর প্রপেলারটার দেখলাম ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি, একটা ব্লেড তো ভেঙেই গেছে, তাছাড়া কাদা জমে প্রায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে গেছে, ঘুরছেই না ভালোভাবে। ... ...
কমলিমা শুনেছেন – বড়ো বড়ো পণ্ডিতেরা নাকি অনেক গণনা করে দেখেছেন – জন্মমুহূর্ত থেকেই প্রতিটি মানুষের ভাগ্য নাকি কোন না কোন তারকাগুচ্ছের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় – যুক্ত হয়ে যায় কোন না কোন গ্রহের সঙ্গেও। একমাত্র মৃত্যুর সঙ্গেই নাকি সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ... ...
সেটা আপনাকে না বলার আর কোন মানে হয় না, এখন হয়তো আপনার কাছ থেকে আমাদের অনেক সাহায্য নিতে হবে। আর সত্যি কথা হল, আমাদের যা উদ্দেশ্য তার সঙ্গে আপনার কাজের কোন সংঘাত তো নেইই, বরঞ্চ একটা আর একটার পরিপূরক বলতে পারেন। যাঁর নির্দেশে কাজটা আমরা করতে এসেছি, তাঁর পরামর্শ ছিল আমরা যেন আমাদের উদ্দেশ্য যতটা পারি গোপন রাখি, এটা নিয়ে কোন হৈ চৈ যেন না হয়, তাই প্রথম আলাপেই আপনাদের জানাইনি ব্যাপারটা। ... ...
পোল্যান্ডের একটি গ্রামে কিছু পোলিশ ব্যাংকারকে জড়ো করে আমরা পশ্চিমি মুক্ত অর্থ ব্যবস্থার যে ঢক্কা নিনাদের সূচনা করেছিলাম সেটি নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হয়। স্টচনিয়া গদিনিয়া নামক এক প্রায় দেউলে সরকারি জাহাজ নির্মাতার জন্য সিটি ব্যাঙ্ক যে সামান্য এক কোটি ষাট লক্ষ ডলার বাজার থেকে তুলতে পেরেছিল, সেটিকে পূর্ব ইউরোপের প্রথম আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ডিলের সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। সেটা ১৯৯৪। পশ্চিমের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে অচেনা বাণিজ্য সংস্থায় কিছু ব্যাঙ্ক আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ডলার লগ্নি করার সাহস দেখালেন; আমার উন্মাদনা তখন তুঙ্গে, ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে গ্রাহাম বওলির ফোন পেয়ে রীতিমত গর্বিত বোধ করি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমরা কিভাবে এই ডিলের ফি নির্ধারণ করেছি। তুলনামূলক দর বা মার্কেট রিডের কোন প্রশ্ন ওঠে না কারণ এ ধরণের ঋণের আয়োজন কখনো হয় নি। বলতে পারতাম আঙ্গুল গুণে। বলতে হলো বাজারে কোন ডিল না হয়ে থাকলেও আমরা কিছু এমপিরিকাল তথ্যের সহায়তা নিয়েছি। সেটা একেবারে বাজে কথা। ভিত্তিহীন। বাট হু কেয়ারস! এদিকে আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাটা যে কি, কিভাবে ঘটল সে সব না বুঝেই চতুর্দিকে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানো হচ্ছে। পাবলিকের ধারণা আমরা কোন নতুন স্বর্ণ খনির সন্ধান পেয়েছি। স্বাভাবিক। পশ্চিম ইউরোপে মন্দার বাজার বাড়িঘরের দাম কম, শেয়ার বাজার অতল জলের সন্ধানে ধাবিত ; সেই কিছু বাঁধাধরা খদ্দের, দু পয়সা সুদ বাড়ালে তারা চোখ রাঙ্গাবে। তাই ছাড়িয়া নিশ্বাস, যতো বকরা পুবের মাঠে এই তাদের বিশ্বাস। কিন্তু ব্যাঙ্কের ঋণ যারা মঞ্জুর করেন সেই সব গুরুরা সেটা মানলে তবেই না তাঁরা সে মাঠে নামতে পারেন। ... ...
ওদের নৌকো যখন জল ছেড়ে ডাঙা ছুঁলো তখন ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে চার-পাঁচ জনের একটা দল, একটু দূরে খোলা জীপের মতো একটা গাড়ি। চার ঘণ্টারও বেশি গভীর রাতের অন্ধকারে নদীতে নৌকোয় আসতে আসতে চোখ খানিকটা অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, নদীর ঘাট থেকে গাড়িটা পর্যন্ত যেতে যেতেই ওরা বুঝলো, এমন জঙ্গল ওরা আগে দেখেনি তো বটেই, অন্ধকারও যে এত ঘন হতে পারে তা ওদের কল্পনাতেও ছিল না। ... ...
একটু সময় নিয়ে ভল্লা খুব নরম করে বলল, “আমাদের দলের আমরা সবাই জুজাক, তাই তো মা?” কমলিমা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন, অস্ফুট অথচ দৃঢ় স্বরে বললেন, “হ্যাঁ জুজাক”। ... ...