"ও কাকিমা, ওরা আমায় কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না, তুমি একটু বলে দাও না।" ছেনুর মা ভেতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন, হঠাৎ পিছন থেকে এরকম ডাক শুনে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন কাঁদো কাঁদো মুখে হাফপ্যান্ট পরা একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, ছেনুর মতো একই বয়স বা এক দু বছর বড় হবে হয়তো। ছেনুর মা, তাকে ডেকে বললেন, কি হয়েছে? তোমার নাম কি? সে আরো কাঁদো কাঁদো মুখে জানাল, তার নাম চন্দন। তার কথা থেকে জানা গেল প্যান্ডেলের সামনে হুটোপাটি করে খেলাধুলোর সময় ছেনু নাকি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে, এবং সে টাল সামলাতে না পেরে পড়বি তো পড় প্যান্ডেলের ওপর গিয়ে পড়েছে। এবং সেই পতনের ফলে প্যান্ডেলের এক জায়গার কাগজের সাজসজ্জা ফর ফর করে ছিঁড়ে যায়। প্যান্ডেলের লোকজন সেই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চেপে ধরে বকাবকি করে, কিন্তু চন্দন পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দেখে আসল অপরাধী পগারপার। ফলে এক তরফা সব বকুনি তাকেই শুনতে হয় আর প্যান্ডেলের ডেকোরেশন নষ্ট করার জন্য প্যান্ডেলের কাছে খেলাও বারণ হয়ে যায়। আজ যেই সে ওখানে খেলতে গেছিল, ওমনি ডেকরেটরের লোকজন হাতুড়ি নিয়ে তাড়া করেছে। ... ...
নয়ের দশকের প্রারম্ভ থেকে পূর্ব ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলির শিল্প বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্বের বাজারে অর্থ সংগ্রহের অভিযানে সিটি ব্যাঙ্ক ছিল পথিকৃৎ। আমার ডায়েরিতে তাই বারে বারে আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণ কেনা বেচার কথা এসেছে । প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঋণ গ্রহীতা উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দা আর ঋণ দাতা অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশের লগ্নিকারক; আজকে যাকে নর্থ সাউথ ডিভাইড বলা হয়ে থাকে (পরে আমরা সাউথ সাউথ বা গ্লোবাল সাউথকে একত্রিত করেছি , যেখানে এক উন্নয়নশীল দেশ অন্য দেশে অর্থলগ্নি করেছে )। সে সময়ে আমরা উত্তরের ধন দক্ষিণে বণ্টন করেছি, অবশ্যই উপযুক্ত সুদ এবং মানানসই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। দেশ কাল ও খদ্দেরের ক্রেডিট রেটিং ভেদে এই বাণিজ্যের খানিকটা ইতর বিশেষ হয়; বদলে যায় সুদের হার, পারিশ্রমিকের বহর । ... ...
সাধারণ মানুষ রাজাকে কবে আর চোখে দেখেছে? তারা চেনে এবং ভয় পায় রাজকর্মচারীদের। সেই রাজকর্মচারীদের চোখে চোখ রেখে, তাদের হারিয়ে দেওয়ার সাহস যারা করতে পারে, সাধারণের চোখে তারাই তো বীর। তাদেরকেই তো তারা বসাবে তাদের হৃদয়ের রাজাসনে...”। ... ...
হঠাৎ ফল্গু বলে, এরকম অবস্থায় আমার একটা প্রশ্ন ছিল সেটা করা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। কিন্তু ভাবছি যখন, করেই ফেলি। আমাকে যে চার দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল মুড়কির ব্যাপারটা সমাধান করার জন্যে, আজই তার শেষ দিন। এখনও পর্যন্ত দেখাবার মতো কোন কাজই আমি করতে পারিনি। কাল সকাল থেকে এই কাজটা একা একা করবার স্বাধীনতা আমার থাকবে কি? ... ...
ভল্লাদাদা তাদের অনেক ক্ষতি করেছে – প্রধানমশাইয়ের মৃত্যু, কবিরাজমশাইয়ের মৃত্যু। তার কাছে হানো বা শল্কুর মৃত্যু হয়তো শোকাবহ নয় – কিন্তু ওরাও তো মারা গেছে – ওই দুটি পরিবারের কাছে সে ক্ষতিও তো অপূরণীয়! কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ মনে হচ্ছে – ক্ষতির থেকে লাভও কিছু কম হয়নি। এই যে দুই গ্রাম মিলিয়ে বত্রিশজন ছেলে রক্ষীর কাজ পেয়েছে – কাজ পেয়েছে তিনজন রাঁধুনি। পাশাপাশি গ্রামের অনেক ছেলেরা ভবিষ্যতেও অনেক কাজ পাবে। ছোটবেলা থেকে সে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা দেখেছে ক্বচিৎ-কখনো। কেনাকাটার একমাত্র উপায় ছিল – চাষ করা ফসল বিনিময়। আজ এতগুলো পরিবার মাসান্তে নিয়মিত হাতে পাবে এতগুলি তাম্রমুদ্রা! চারটি পরিবারের ক্ষতির তুলনায় - এতগুলি পরিবারের এই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা কী অনেক বড়ো নয়? ... ...
দু দিন কেটে গেছে, কোন সুরাহা হল না। তৃতীয় দিনে কামিলার যে ডাক্তার বন্ধু, সে হাতে লেখা একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল, রেসিডুয়াল ট্রেসেস অব কোকেইন। এটাই ভাবা ছিল ফল্গুর, রিপোর্ট পেয়ে সে বুঝলো তার চিন্তা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। আরও একটা ঘটনা। রাত্তিরবেলা ফোন করেছিলেন এসপিণ্ডোলো। পুরো ঘটনাটা ফল্গুর কাছ থেকে শুনে নিলেন, বললেন, তুমি সম্ভবত ঠিকই ভেবেছ, জঙ্গলেরই কয়েকজন মানুষকে লাগানো হয়েছে তোমাদের বিরুদ্ধে, এখনও পর্যন্ত অপরাধ যা সংঘটিত হয়েছে তা সবই করেছে জঙ্গলের মানুষ, তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমরা যাতে জঙ্গলের মানুষের সাহায্য পাও সে দায়িত্ব আমার। ... ...
মায়াকে সংক্ষেপে জানালাম চেক আলফাবেটে যদিও অক্ষর বেয়াল্লিশটি, স্বর বর্ণ সাতটি, তারা এই সীমিত স্বর বর্ণগুলি অনেক ভেবে চিন্তে খরচা করেন, যেমন মৃত্যুর প্রতিশব্দ Smrt, শোনায় স্মরত্। এর পিছনে মুখের ব্যায়াম ছাড়া আর কোন যুক্তি আছে জানি না। BRNO উচ্চারণ বরনো অথবা ব্রনো। জার্মানরা অবশ্য এর একটা সহজ ভার্শন রেখে গেছে, ব্রুইন। এই রাজ্যের নাম মোরাভিয়া, চেকে মোরাভা, সেখানে ভাওয়েল আছে মাঝে ও শেষে। জার্মান আরও সহজ, মেহরেন। মেয়েকে আরেকটা ট্রিভিয়া শোনানোর সুযোগ ছাড়া গেলো না। চেক ভাষায় আনো (ano, শুনলে নো মনে হয়) হলো হ্যাঁ! আরেকটিমাত্র ইউরোপীয় ভাষায় এমনি গোলমেলে ব্যাপার আছে - গ্রিকে নে মানে হ্যাঁ! ব্যবসায়ের নামে পূর্ব ইউরোপ বেড়ানোর দিন ফুরিয়েছে। ভিয়েনায় আমার অনাদি ব্যাঙ্কের বোর্ড মিটিং সেরে গাড়ি ভাড়া করেছি চেক সন্দর্শনের বাসনায়। প্রথম স্টপ ব্রুইন, ভিয়েনা থেকে মাত্র একশ মাইল। গাড়িতে বা ট্রেনে দেড় ঘণ্টা (ভাড়া আটশো টাকা!) ইতিহাসে পড়া হাবসবুরগ সাম্রাজ্যের দিগন্ত খুলে যায় চোখের সামনে, তাকে সত্বর চেনা হয়ে যায়। ভিয়েনার শোয়েখাত হাওয়াই আড্ডা থেকে বেরিয়ে শহরে যাবার পথে নির্দেশিকা চোখে পড়ে – এই দিকে প্রাগ, ব্রুইন,ওই বুদাপেস্ত, জাগ্রেবের রাস্তা- হাবসবুরগ রাজত্বের পুরনো জেলা সদর! এককালে কাঁটাতার, ওয়াচ টাওয়ার ছিল এখন সীমানা অবধি নেই। চেনা অচেনা জায়গা পার হয়ে যাই, এমনি হঠাৎ কখন পার হয়েছি আর্কডিউক ফ্রান্তস ফারদিনান্দের স্ত্রী সোফি ফন হোহেনবুরগের পৈত্রিক জমিদারি। চেকোস্লোভাকিয়া নামের দেশ কোন কালে ছিল না; ছিল কয়েকটি রাজ্য বোহেমিয়া, মোরাভিয়া, চেক সাইলেসিয়া, আপার হাঙ্গেরি (আজকের স্লোভাকিয়া), আটশ বছর পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য, তারপর হাবসবুরগ এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজত্বের (১৮৬৭-১৯১৮) অংশ। আমরা বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়াকে বেশি চিনি, এদের নাম প্রায় একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। বোহেমিয়া আয়তনে বড়ো, প্রাগ তার রাজধানী, ব্যাভেরিয়ার সঙ্গে গায়ে লাগা, জার্মান ভাষা সংস্কৃতি ও শিক্ষার পীঠস্থান; মোরাভিয়া আজকের চেক রিপাবলিকের এক তৃতীয়াংশ, রাজধানী বরনো, চেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর,ইউরোপের ষাট নম্বরে। ... ...
“তোরা জনসাধারণের জন্যে লড়াই করছিস – মনে রাখবি তারা তোদের থেকে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে। অন্যায়কারীকে হত্যা করা একরকমের বিচার, রাজাও করেন।। কিন্তু তাকে সবংশে নির্মূল করাটা কখনোই ন্যায় বিচার হতে পারে না। রাজাও কখনও তা করেন না। জনগণের মনে বিতৃষ্ণা জাগিয়ে জনগণের সঙ্গে বেশি দিন চলা যায় না। তোরা ডাকাত নয়, রাজা হয়ে ওঠ, জনা।” ... ...
সত্যি কথা বলছি হেফা, আমরা একেবারেই বোকা হয়ে গেছি, কী কারণ বুঝতেও পারছি না। তবে ডিরেক্টর সাহেব আর আপনি যখন কাল আমাদের সঙ্গে কথা বলে চলে গেলেন, সাহেব বললেন কালই ফিরে আসবেন প্রজেক্টে, আমরা তখন দুজনে মিলে ইঞ্জিন-টিঞ্জিন সব খুলে দেখলাম। কার্ব্যুরেটরে অনেক জল ঢুকেছে, কনভেয়রটা খুলে গেছে আর প্রপেলারটার দেখলাম ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি, একটা ব্লেড তো ভেঙেই গেছে, তাছাড়া কাদা জমে প্রায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে গেছে, ঘুরছেই না ভালোভাবে। ... ...
কমলিমা শুনেছেন – বড়ো বড়ো পণ্ডিতেরা নাকি অনেক গণনা করে দেখেছেন – জন্মমুহূর্ত থেকেই প্রতিটি মানুষের ভাগ্য নাকি কোন না কোন তারকাগুচ্ছের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় – যুক্ত হয়ে যায় কোন না কোন গ্রহের সঙ্গেও। একমাত্র মৃত্যুর সঙ্গেই নাকি সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ... ...
সেটা আপনাকে না বলার আর কোন মানে হয় না, এখন হয়তো আপনার কাছ থেকে আমাদের অনেক সাহায্য নিতে হবে। আর সত্যি কথা হল, আমাদের যা উদ্দেশ্য তার সঙ্গে আপনার কাজের কোন সংঘাত তো নেইই, বরঞ্চ একটা আর একটার পরিপূরক বলতে পারেন। যাঁর নির্দেশে কাজটা আমরা করতে এসেছি, তাঁর পরামর্শ ছিল আমরা যেন আমাদের উদ্দেশ্য যতটা পারি গোপন রাখি, এটা নিয়ে কোন হৈ চৈ যেন না হয়, তাই প্রথম আলাপেই আপনাদের জানাইনি ব্যাপারটা। ... ...
পোল্যান্ডের একটি গ্রামে কিছু পোলিশ ব্যাংকারকে জড়ো করে আমরা পশ্চিমি মুক্ত অর্থ ব্যবস্থার যে ঢক্কা নিনাদের সূচনা করেছিলাম সেটি নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হয়। স্টচনিয়া গদিনিয়া নামক এক প্রায় দেউলে সরকারি জাহাজ নির্মাতার জন্য সিটি ব্যাঙ্ক যে সামান্য এক কোটি ষাট লক্ষ ডলার বাজার থেকে তুলতে পেরেছিল, সেটিকে পূর্ব ইউরোপের প্রথম আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ডিলের সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। সেটা ১৯৯৪। পশ্চিমের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে অচেনা বাণিজ্য সংস্থায় কিছু ব্যাঙ্ক আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ডলার লগ্নি করার সাহস দেখালেন; আমার উন্মাদনা তখন তুঙ্গে, ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে গ্রাহাম বওলির ফোন পেয়ে রীতিমত গর্বিত বোধ করি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমরা কিভাবে এই ডিলের ফি নির্ধারণ করেছি। তুলনামূলক দর বা মার্কেট রিডের কোন প্রশ্ন ওঠে না কারণ এ ধরণের ঋণের আয়োজন কখনো হয় নি। বলতে পারতাম আঙ্গুল গুণে। বলতে হলো বাজারে কোন ডিল না হয়ে থাকলেও আমরা কিছু এমপিরিকাল তথ্যের সহায়তা নিয়েছি। সেটা একেবারে বাজে কথা। ভিত্তিহীন। বাট হু কেয়ারস! এদিকে আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাটা যে কি, কিভাবে ঘটল সে সব না বুঝেই চতুর্দিকে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানো হচ্ছে। পাবলিকের ধারণা আমরা কোন নতুন স্বর্ণ খনির সন্ধান পেয়েছি। স্বাভাবিক। পশ্চিম ইউরোপে মন্দার বাজার বাড়িঘরের দাম কম, শেয়ার বাজার অতল জলের সন্ধানে ধাবিত ; সেই কিছু বাঁধাধরা খদ্দের, দু পয়সা সুদ বাড়ালে তারা চোখ রাঙ্গাবে। তাই ছাড়িয়া নিশ্বাস, যতো বকরা পুবের মাঠে এই তাদের বিশ্বাস। কিন্তু ব্যাঙ্কের ঋণ যারা মঞ্জুর করেন সেই সব গুরুরা সেটা মানলে তবেই না তাঁরা সে মাঠে নামতে পারেন। ... ...
ওদের নৌকো যখন জল ছেড়ে ডাঙা ছুঁলো তখন ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে চার-পাঁচ জনের একটা দল, একটু দূরে খোলা জীপের মতো একটা গাড়ি। চার ঘণ্টারও বেশি গভীর রাতের অন্ধকারে নদীতে নৌকোয় আসতে আসতে চোখ খানিকটা অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, নদীর ঘাট থেকে গাড়িটা পর্যন্ত যেতে যেতেই ওরা বুঝলো, এমন জঙ্গল ওরা আগে দেখেনি তো বটেই, অন্ধকারও যে এত ঘন হতে পারে তা ওদের কল্পনাতেও ছিল না। ... ...
একটু সময় নিয়ে ভল্লা খুব নরম করে বলল, “আমাদের দলের আমরা সবাই জুজাক, তাই তো মা?” কমলিমা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন, অস্ফুট অথচ দৃঢ় স্বরে বললেন, “হ্যাঁ জুজাক”। ... ...
ভল্লা হাসতে হাসতে বলল, “তোর ওই ডাইনী চোখের ভিরকুটিতে আমি ডরাবার পাত্র নই... আর আমি যে ডাকাত - সে কথা কবিরাজদাদা তোকে বলেনি? সারা জীবনে অনেক ডাকাতি করেছি - অস্ত্র-শস্ত্র, টাকাকড়ি...কিন্তু মা ডাকাতি কোনদিন করিনি...”। ... ...
সাইজে প্রায় এক ফুটের মতো। বড়োসড়ো হলেও খুব লাজুক পাখি, আপন মনে একা-একা ঘুরে বেড়ায়, সাধারণত দেখা দেয় না। পুরুষদের পালকের রঙ প্রধানত নীচের দিকে কালো আর ওপরের দিকে সোনালী-গেরুয়া, চোখে পড়ার মতো একটা বিরাট ঝুঁটি থাকে মাথায়, গায়ে সূর্যের আলো পড়লে বহু দূর থেকেও ঝকঝকে লালচে সোনালী পাখিটাকে দেখতে পাওয়া যায়। এরা রুপিক্যুলা বর্গের পাখি, এই বর্গের অন্য পাখিটার নাম গায়ানান কক-অব-দ্য-রক, প্রায় একই রকমের দেখতে। ... ...
বছর তের আগে পাড়ায় এসে দেখি তিনটি কালো কুকুর। খুব আপত্তি সবার। আমারও খারাপ লাগে। একটা কুকুরের পিছন দিয়ে রক্ত বের হয়। সিঁড়ি জুড়ে রক্ত দাগ। এক সরকারি কর্মকর্তাকে বললাম। তিনি এক চিকিৎসকের ফোন নম্বর দিলেন। ডা. মুখার্জি। পশুপ্রেমী। তিনি বললেন, কুকুরটার বোধহয় ক্যান্সার হয়েছে। অপারেশন দরকার। ১৫০০ টাকা লাগবে। আমি একজনকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। যিনি নিতে আসবেন তাকে দিয়ে দেবেন। ... ...
কপাল-টপাল কোন কাজের কথা নয়, রামালি। ওসব অকর্মাদের ধূর্তামি – আধাখ্যাঁচড়া কাজ করে মনোমত ফল না পেলে, বলে কপালে নেই তো করবো কী? তুই তো তেমন নস, তুই কেন কপালের দোষ দিবি?” ... ...
এত বিচিত্র রকমের প্রজাপতি একই জায়গায়, জঙ্গলের অংশ হলেও ঠিক জঙ্গল নয়, গাছপালাগুলোর উপর মানুষের হাত স্পষ্ট, প্রজাপতিদের থাকবার আর ডিম পাড়ার সুবিধে হবে এমন বাছাই করা সব গাছ-গুল্ম, কেয়ারি-করা বাগানের মতোই খানিকটা। মানুষের কাটা ছোট ছোট জলাশয়, তার উপর ছোট ছোট সাঁকো – ভালো হলেও খুব স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা বলে মনে হয় না, এগুলোই আমার আবিষ্কার। আর তা ছাড়া মাউন্ট হাউজের ওই অগুনতি প্রজাপতির প্রদর্শন তো ভোলা যাবে না কোনদিনই। পিন দিয়ে লাগানো না থাকলে মনে হতো এখনই বুঝি বা উড়ে যাবে! ... ...
একি! এখানেও এত জন উঠবে নাকি? আমরা তালে বসব কোথায়?, মহারাজ রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছেন কাণ্ড দেখে। ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ আছে বৈকি। এইটুকু ট্যাক্সির সামনের সিটে টপাটপ চার জনকে উঠে বসতে দেখে তিনি হাঁ হয়ে গেছেন। আগের গাড়িগুলোতেও কেমন আট দশজন করে লোক ঠেসেঠুসে উঠে পড়ছিল। এই গাড়িতে যে এত লোক ধরতে পারে এটাই মহারাজের ভাবনার বাইরে। এবার কি হবে ভেবেই ওনার দম আটকে আসছে। মামা পাশ থেকে আশ্বাস দিলো, না না, চিন্তা নেই, পেছনে শুধু চার জনই উঠবে আমাদের গাড়িতে, একটা সিট বেশি নেওয়া হয়েছে দিদিমার জন্য। পিছনে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ, মামা আর দিদিমাকে ঠেলেঠুলে আরও এক জন এসে চেপে বসল। মালপত্র যা কিছু ছিল সব ডিকিতে ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে। ওদিকে সামনে চারজন বসেছে বললে ভুল হয়, কোনমতে এঁটে গেছেটাই সঠিক কথা, কিন্তু এর পর ড্রাইভারকাকুই বা বসবে কোথায়? দেখা গেল ড্রাইভার তো উঠলই আরেকজন লোকও উঠে পড়ল, সে নাকি সামনে নেমে যাবে। উঠে তো সবাই পড়েছে, এদিকে গাড়ির দরজা তো কিছুতেই বন্ধ হয়না। মহারাজ ভাবছিলেন, এ নিয়ে সবাই বুঝি ভয়ানক চিন্তায় পড়বে, কিন্তু কোথায় কি, দিব্যি নিশ্চিন্ত মনে একটা মোটকা মতো নারকেলের দড়ি বের করে ড্রাইভারকাকু খুব কষে দরজাটা আটকে দিল। আটকে দিল মানে একেবারে গাড়ির সথে ফট করে লেগে গেল, তা কিন্তু নয়, দরজা হাওয়াতেই দাঁড়িয়ে, তবু গাড়ির ফ্রেমের কিছুটা কাছাকাছি আনা গেল, সেটাই সান্ত্বনা। গাড়ি জোরসে ঝাঁকুনি দিলে কেউ অন্তত যাতে ছিটকে পড়ে না যায়। পড়ে গেলে ড্রাইভারেরই মুশকিল, একটা সিটের টাকা মার যাবে, তাই এই ব্যবস্থা - মামা উবাচ। এদিকে ড্রাইভারকাকুও অর্ধেক সিটের বাইরে বেরিয়ে আছে, কোনোমতে বাঁ হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং ধরে আছে। ওইদিকটা পরের গাড়ির ড্রাইভার এসে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে গেছে। শেষমেশ দড়িদরা বেঁধেছেঁদে গাড়ি ধানবাদ স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করল। রাস্তায় একগাদা ধুলো ওড়াতে ওড়াতে গাড়ি ছুটে চলেছে আর খানাখন্দে চাকা পড়লেই সব যাত্রীরা মিলে শূন্যে লাফিয়ে উঠছে। ... ...