ইতিহাসে নোবেল পুরস্কার হয় না, কিন্তু এবারের অর্থনীতির নোবেল অনেকটাই ইতিহাস ঘিরে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারে গাণিতিক বিষয়েরই প্রাধান্য- রাশিবিজ্ঞান, গেম থিওরি, ফিনান্সিয়াল ম্যাথমেটিক্স। ২০২৪এ অর্থনীতির নোবেল পেলেন দারন আসেমোগলু (Daron Acemoglu), জেমস এ. রবিনসন (James Robinson) আর সাইমন জনসন (Simon Johnson)। বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন - সাধারণ মানুষের সুখসমৃদ্ধিতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানব্যবস্থা কী ধরণের ভূমিকা পালন করেছে এবং করতে পারে। এঁদের মধ্যে প্রথম দুজনের লেখা একটা উল্লেখযোগ্য বই হল "Why Nations Fail: The Origins of Power, Prosperity, and Poverty"- অর্থনীতির চেয়ে বইটিকে ইতিহাসের বইই বেশি করে বলা যায়। বইটিতে দারন আসেমোগলু এবং জেমস এ. রবিনসন দেখিয়েছেন কেন কিছু রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়, আর অন্যরা দারিদ্র্যের জালে আটকে থাকে। তাঁদের মতে, একটি দেশের সাফল্যের মূল কারণ হল তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক প্রতিষ্ঠান (inclusive institutions) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেয়, এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনে। এর বিপরীতে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান (extractive institutions) ক্ষমতা ও সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, আর সমাজকে অসাম্য, স্থবিরতা এবং ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়। ... ...
একখানা সাত-বাসি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। রাজা যাবেন যুদ্ধে। রণসজ্জা প্রস্তুত। কিন্তু বাদ সেধেছেন রাজজ্যোতিষী। রণক্ষেত্রে রাজার সাক্ষাৎ মৃত্যুযোগ নাকি দেখতে পাচ্ছেন তিনি! রাজজ্যোতিষীর গণনাকে রাজা অব্যর্থ বলে ভাবেন। সব কাজেই নেন তাঁর পরামর্শ। এবারেও তাঁর সাবধানবাণী ফেলতে পারছেন না। এদিকে সেনাপতি রেগে কাঁই। সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র, রণকৌশল – সব কিছুতেই প্রতিপক্ষের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থেকেও এভাবে রণে ভঙ্গ দিতে তাঁর বেজায় আপত্তি। রাজজ্যোতিষীর ডাক পড়ল রাজসভায়। আবারও রাজার মৃত্যুযোগ ঘোষণা করে সর্বসমক্ষে তিনি সগর্বে জানান যে, তাঁর গণনা কখনও ভুল হয় না। “বটে!”, সেনাপতি শুধোন, “তা আপনার নিজের মৃত্যু বিষয়ে কোষ্ঠীতে কিছু লেখেনি?” রাজজ্যোতিষী ঝটপট উত্তর দেন, “লিখেছে বই-কি, সেনাপতি! গণনা করে দেখেছি যে, বাঁচব আরও বহু বছর। থুত্থুড়ে বুড়ো হয়েই মরব আমি।” সেনাপতি মৃদু হেসে বলেন, “না গো মাননীয় মহাশয়, আপনি আর এক মুহূর্তও বাঁচবেন না”, এবং কথাটা শেষ হওয়ার আগেই চকিতে কোমরে গোঁজা তরোয়ালটা খাপ থেকে বের করেই রাজজ্যোতিষীর কাঁধ লক্ষ্য করে চালিয়ে দেন নিখুঁত নিশানায়। ঘচাং করে ধড় থেকে মুণ্ডুটা আলাদা হয়ে যায়.. গল্পটা সেকেলে হলেও এর নৈতিক উপদেশটুকুর প্রয়োজন এখনও ফুরোয়নি, অন্তত সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষার খবর তেমনই ভাবাচ্ছে। গোড়াতেই সেগুলো একটু দেখে নিলে মন্দ হয় না। ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্যোতিষ-বাণিজ্যের মোট বহরটা ছিল প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাপে এবং তা বার্ষিক প্রায় ৬ শতাংশ হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জন্মছক দেখে ভাগ্যগণনা ছাড়াও এই সওদার মধ্যে আছে নিউমেরোলজি, পামিস্ট্রি, ট্যারট কার্ড গণনা, বাস্তুশাস্ত্র ইত্যাদির পরামর্শ-খরচ এবং মহার্ঘ গ্রহরত্নের বিক্রিবাটার হিসেব। জ্যোতিষশাস্ত্রের এই বিপুল বাজারে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছেন গড়ে লাখখানেক করে নতুন জ্যোতিষী [Allied Market Research 2023]। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় বিশ্বখ্যাত পিউ ফোরাম জানিয়েছিল যে, মার্কিন মুলুকে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ জ্যোতিষে ঘোর বিশ্বাসী [Gecewicz 2018]। ব্রিটেনে এই বিশ্বাস কিছুটা কম (১৯%) হলেও ইউরোপের অনেক দেশেই জ্যোতিষে আস্থাশীল মানুষের শতকরা হিসেব মার্কিনীদের মতোই, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি। যেমন, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়ামে তা ৩০ শতাংশের ওপরে। ইউরোপের অনেক দেশেই প্রতি তিনজনের একজন মানুষ ভাগ্যে বিশ্বাস করেন [PEW Research Center 2018: 135]। ভারতের চিত্র অবশ্য আরও ভয়াবহ। ২০২১ সালের পিউ-সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, এদেশে ভাগ্যবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ এবং জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন শতকরা ৪৪ জন ভারতীয় [Sahgal et al 2021: 206]। আরও একটি পরিসংখ্যান তাৎপর্যপূর্ণ যে, কোভিড অতিমারির পর থেকে জ্যোতিষে বিশ্বাস ও জ্যোতিষ ব্যবসার পালে যেন একটা ধাক্কা লেগেছে, ধাক্কাটা এসেছে প্রধানত জ্যোতিষের অনলাইন বাজারের হাত ধরে। কাজেই, বিষয়টিকে নিয়ে একটু চর্চা করার দরকার আছে। ‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ (astrology) শব্দটার গায়ে বেশ-একটা জ্যোতির্বিজ্ঞানের (astronomy) গন্ধ মাখানো আছে! অনেকেই দুটোকে এক বলে ভাবেন। এ হেন ভ্রান্তিকে গোড়াতেই শুধরে নেওয়া দরকার। তবে কেবল এটুকু হলেই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও যখন বিষয়টিকে চর্চার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন বিজ্ঞান না-হোক, যে কোনও প্রকারের জ্ঞানচর্চার দিক থেকেও এর আদৌ কোনও মূল্য আছে কিনা, খতিয়ে দেখা দরকার তা-ও। এরই সঙ্গে, ফলিত জ্যোতিষ আদৌ ফলে কিনা, তার উত্তরও আমাদের পেতে হবে। ... ...
রংবেরঙের জিনিসের প্রতি কার আকর্ষণ কম? তার সঙ্গে যদি মেশানো হয় ছবি আর ভিন্ন ভাবনার অনুপম অনুপান তাহলে তো কেল্লা ফতে! দেশলাই বাক্সের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই ঘটনা ঘটলো – Veni Vidi Vici – এলাম দেখলাম জয় করলাম। একে তো দীপশলাকা হাতে পেয়ে লোকজন নিজেদের প্রমিথিউসের উত্তর পুরুষ হিসেবে ভাবা শুরু করলো, তার ওপর দেশলাই নির্মাতাদের নানান ধরনের ঘোষণায় একেবারে তেতে উঠল লোকজন। অনেকটা একালের একটা কিনলে একটা ফ্রি র মতো ব্যাপার আর কি! তবে সবাই যে এই সূত্র ধরে খালি দেশলাই বাক্স জমানোর নেশায় বুঁদ হয়ে গেল তা কিন্তু মোটেই নয়। অবশ্য একশ্রেণির মানুষ ফাঁকা ম্যাচ স্টিক বাক্স আবর্জনার স্তূপে বিসর্জন না দিয়ে তাদের সংগ্রহ করতে শুরু করলো বাক্সের ওপর ছাপা বিচিত্র সব ছবির টানে। আসলে একটা সময়ে প্রচলিত যে কোন উপাদানের মধ্যেই সেই সময়ের প্রচল সমাজ সংস্কৃতির বিচিত্র যাপন ভাবনার প্রতিফলন ঘটে। দেশলাইয়ের বাক্সগুলোতে ছাপা ছবির মধ্যেও সেই ফেলে আসা সময়ের ছাপগুলো যেন ধরা পড়ে গেল। এখানেই ফিলুমেনির আসল মজা। ... ...
রিনকিন বলেন তাঁর গভীর মানসিক দ্বন্দ্ব বা Moral Dilemmaই নানাভাবে হানা দিচ্ছে তাঁর দুঃস্বপ্নে। সাদা পবিত্রতার প্রতীক। যেহেতু তিনি তাঁর ধর্মবিশ্বাস, স্কাউটিংয়ের শপথ, গীর্জায় নেওয়া বিবাহ শপথের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারেন নি তাই তাঁর হারানো পবিত্রতাবোধ প্রতিশোধ নিতে স্বপ্নে শ্বেত-কঙ্কাল হয়ে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। র-বাবু বলেন, যদি স্ত্রীকে ত্যাগ না করি - ফ-মণিকেও বিয়ে না করি - তবে স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ তলানিতে ঠেকেছে বলে ফ-মণির সাথে মেলামশা করে নিছক আনন্দ পেতে চাই - কেমন হয়? রিনকিন বললেন, এভাবে দু নৌকায় পা দিয়ে চলা শক্ত তবু চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি দুই মহিলাই, বিশেষ করে আপনার স্ত্রী, তা মেনে নেন তো ভালোই। তবে আমার পরামর্শ এখন কিছুদিন কার্টুন আঁকা থেকে বিশ্রাম নিন, ফ-মণি থেকেও দুরে থাকুন, দেখুন তাও ঐ দুঃস্বপ্ন ফিরে আসছে কিনা। ... ...
এই মন্ত্রের অপূর্ব অনুবাদ আমরা পাই রবীন্দ্রনাথের রচনায় -- "বায়ু মধু বহন করিতেছে। নদী সিন্ধু সকল মধুক্ষরণ করিতেছে। ওষধি বনস্পতি সকল মধুময় হউক। রাত্রি মধু হউক, ঊষা মধু হউক, পৃথিবীর ধূলি মধুমৎ হউক। সূর্য মধুমান হউক।" বিশ্বজনীন কল্যাণ কামনায় ভারতীয় ঋষিদের এই প্রার্থনা গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি থেকে উৎসারিত। অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় মধুর ব্যবহারের কথা আমরা পাই গ্রিক মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসিতেও। ... ...
তামিলনাড়ু সরকারের মন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ প্রসঙ্গে মন্তব্যের জেরে জোর শোরগোল পড়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন এই বলে যে, বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘সনাতন ধর্ম’ ধ্বংস করতে সচেষ্ট। তুমুল রাজনৈতিক বাদানুবাদের মধ্যে ‘সনাতন ধর্ম’ বিষয়টি প্রসঙ্গে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ... ...
১৯৩৬ সালের বসন্ত কাল। আর মাস খানেক বাদেই রয়েছে ইউএসএর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বিভাগে ভর্তির পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই এখন বেশ কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বছর বাইশের তরুণী জিন ফ্রান্সেস ট্যাটলক (Jean Frances Tatlock)। তা নাহলে এতক্ষণে হয়তো তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কোনও কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কমিউনিস্ট পার্টি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার সক্রিয় কর্মী তিনি। ট্যাটলকের জন্ম ইউএসএর বিখ্যাত পঞ্চ হ্রদ তীরবর্তী মিচিগান প্রদেশে। তবে বর্তমানে পশ্চিম ইউএসএর ক্যালিফর্নিয়া প্রদেশের বার্কলে শহরের বাসিন্দা তিনি। বার্কলে শহরের কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবীদের ঘরোয়া সভাই হোক বা ডক শ্রমিকদের পথসভা- সর্বত্র হাজির থাকেন তিনি। কিন্তু ইদানীংকালের সভা সমিতিতে বড় একটা দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। ওই যে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বিভাগে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ... ...
টাটা এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কিছু বলবার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ পেয়ে আমি একই সঙ্গে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ এবং যারপরনাই সংকুচিত। দেশের প্রাচীনতম কর্মী সংগঠনগুলোর অন্যতম এই সংগঠনের বিপুল প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি ও অর্জিত অভিজ্ঞতার তুলনায় আমার জ্ঞান অতি তুচ্ছ। সুতরাং আজকের এই সভায় এমন কিছু বোধ হয় বলতে পারব না, যা আপনাদের অজানা। তা সত্ত্বেও আপনাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি এই কারণে যে, জানা কথাগুলোও বারবার বলার প্রয়োজন হয়। এটাই জ্ঞানীদের অভিমত। যে বাস্তবতায় আমরা দিন কাটাই তাকে যদি বদলাবার দরকার হয়, অথচ কাম্য পরিবর্তনটি আসে না, তাহলে পরিবর্তনের প্রয়োজন ও উপায় নিয়ে আমাদের কথা বলে যেতেই হবে। যেমন, আমাদের যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তানুশীলক অমর্ত্য সেনকে বারবার একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, আপনি পুরনো কথাগুলোই বারবার বলে যাচ্ছেন, নতুন কিছু বলছেন না, কেন? তাঁর উত্তরটি অপরিবর্তিত, যতক্ষণ পুরনো সমস্যাগুলো থাকবে ততক্ষণ সেগুলো নিয়ে কথা বলে যেতে হবে, কারণ নতুন কথা বলার জন্য নতুন বাস্তবতার প্রয়োজন। ... ...
তখন আমি বিশ্ববাঙালি হই নি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াই। ভূগোলের পাঠ্যবস্তুর একটা অন্যতম অংশ ছিল ক্ষেত্রসমীক্ষা। তখনকার দিনের ভূগোলের নিয়মকানুন ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে, এধরণের যাত্রায় আমরা দূরদূরান্তরের নানা অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করতাম। এখানে বলে নেওয়া ভালো যে বেশির ভাগ শিক্ষক ও শিক্ষিকারাই পাঠ্যের এই অংশটি অপছন্দ করতেন। হয়তো তাঁদের পরিবার-সংসার ও দৈনন্দিন জীবনে সকলকে সামলে ছুটির ফাঁক বের করার সুযোগ ছিল কম। তাছাড়া অনেকগুলি সদ্য টিন-উত্তীর্ণ, বক-বকন্দাজ যুবক-যুবতীর সঙ্গ সকলের ভালো লাগারও কথা নয়। ... ...
সে যাই হোক, তোমায় একটা আবিষ্কারের গল্প বলি শোনো। এসব কথায় কথায় উঠে আসে। সুগতবাবু রবীন্দ্রনাথকে নানান জায়গায় কোট করেছেন ওঁর বইতে, তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতা বা কট্টর-জাতীয়তাবাদ-বিরোধিতা ইত্যাদির উপর জোরও দিয়েছেন। তো এক জায়গায় ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে নতুন শতাব্দীর সময়টাকে ধরতে গিয়ে উনি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা কোট করছেন, 'শতাব্দীর সূর্য আজি রক্তমেঘ মাঝে অস্ত গেল'। এইটা দিয়ে উনি তখনকার পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, যে কেন রবীন্দ্রনাথ এটা লিখলেন। এইটারই আবার রবীন্দ্রনাথের করা একটা অনুবাদ ন্যাশনালিজম বইয়ের পরিশিষ্টে আছে। তো আমি রবীন্দ্রনাথের বাংলাটা আর ইংরেজিটা মেলাতে গিয়ে দেখলাম ইট ইজ এ রেভিলেশান। কারণ প্রথম লাইনগুলো হুবহু এক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর দেখি কবিতার লাইন আর মিলছে না। আবার কয়েকটা লাইনে দেখি নাহ এই কবিতা থেকেই নেওয়া, খানিক দূর যাওয়ার পর দেখি আবার মিলছে না! ইংরেজি কবিতাটা বেশ বড়, আর বাংলাটা ততটা বড় নয় কারণ ওটা সনেট- ১৪ লাইনের। বাংলাটা লেখা হয়েছিল ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর, আর উনি ওটার ইংরেজি করছেন ১৯১৩ কি ১৪ সালে- যদ্দূর সম্ভব; কাজেই ততদিনে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ... ...
প্রথমত, কবিতা ব্যাপারটাই, মানে সেই রবীন্দ্রনাথের কথায়, ফুলের গন্ধের মত। ব্যাপারটা কী ইউ ক্যানট ডিফাইন। মানে এই অস্পষ্টতাটাই কবিতার বৈশিষ্ট্য। আমি যেমন কবিতা একেবারে লিখতে পারি না। একসময় রবীন্দ্রনাথের কিছু গান বা কবিতা অনুবাদের চেষ্টা করেছি। আমার ভাই সৌমিত্রও করতো, আমারা একে অপরের সঙ্গে মেলাতাম; কিন্তু আমি দেখেছি যে আমার হাতে সেটা প্যারাফ্রেজিং হয়ে যাচ্ছে। মানে সেটা পড়ে মূল কবিতার অর্থটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু দ্যাট ইজ নট দি পোয়েম। কাজেই কবিতার ক্ষেত্রে ওই যে এক্সট্রা মাত্রাটা, সেটা শুধু তার লজিক নয়, শুধু তার শব্দ নয়, অথবা সবকিছু মিলিয়ে, ধরো তার ধ্বনি, মানে এই সবকিছু মিলিয়ে যে বাড়তি ব্যাপার, আমার মনে হয় অনুবাদে সেটা সম্ভবই না। তাহলে কি বলবে কবিতা অনুবাদের কোনো মানে নেই? এক অর্থে হয়তো নেই! রবীন্দ্রনাথ নিজেই তার প্রমাণ। কোনো কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ইংরেজি গীতাঞ্জলি বেশ ভালো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! কিন্তু যারা গীতাঞ্জলিকে বাংলা-গীতাঞ্জলি হিসেবে পড়েছে তারা সেই রসটা খুঁজে পাবে না। অর্থাৎ যে লোক বাংলা জানে না তার কাছে কিন্তু ওটার মূল্য আছে এবং সেখানেই আমি বলবো কবিতা অনুবাদের সার্থকতা; যেটা বুদ্ধদেব বসুও পয়েন্ট আউট করেছিলেন। ... ...
কলেজজীবনের সময় থেকেই প্রদীপ হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রদীপকে হাংরি আন্দোলনের সাথে পরিচয় করান। প্রতিষ্ঠানবিরোধী এই সাহিত্য আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৬১ সালে পাটনা থেকে প্রথম ম্যানিফেস্টো প্রকাশের মাধ্যমে। আন্দোলনের মূল স্রষ্টা ছিলেন কবি-সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। কবিতা সম্পর্কে হাংরিদের বক্তব্য ছিল, “…it is a holocaust, a violent and somnambulistic jazzling of the hymning five, a sowing of the tempestual hunger.”। হাংরিরা মনে করতেন পঞ্চাশের দশক অবধি বাংলা কবিতায় যে স্থিতাবস্থা চলে আসছে, কবিতার ভাষাকে সেই স্থিতাবস্থার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। একইসাথে স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে এবং বিশেষ করে দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা ও কায়েমি স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষের যে স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে হাংরিদের আন্দোলন সেসবের প্রতিই এক কাউন্টার ডিসকোর্স। ... ...
এফএম প্রচার তরঙ্গে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সেই সময়, নয়ের দশকের মাঝামাঝি, ডেকে নেওয়া হল কলকাতা বেতারে ড্রামা অডিশন পাশ করা শিল্পীদের। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ ধরে নিলেন, যাঁরা আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের সঠিক বাংলা উচ্চারণ আর কণ্ঠস্বর নিয়ে কোনও দ্বিধা বা সংশয়ের কারণ নেই। এই প্রসঙ্গে জানাই, রেডিওর নাটক বিভাগে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই জানেন – বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য হয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক অবলীলায় ছুঁয়ে যেতে হয় এই পরীক্ষায়। বিভিন্ন বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ শোনার জন্য চোখা কান পেতে থাকেন পরীক্ষকরা। আজও এই পরীক্ষা দুরূহ। এই পরীক্ষা-পারাবার পার হয়েও অবশ্য তারপরে অনেকে আর সেভাবে সুযোগ পান না অভিনয়ের খামতির জন্য, তবে সে প্রসঙ্গ এখানে গৌণ। এখানে মূল উপজীব্য, কণ্ঠস্বর, পরিবেশনা, উপস্থাপনা। .... শ্রোতাকে আকৃষ্ট করার মত বিষয় ভাবতে হবে, কথার মধ্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার গর্হিত অপরাধ, ইংরেজির ঝোঁকে বাংলা বলা অমার্জনীয়। অনুষ্ঠানের নাম ‘টক শো’। অবশ্যই ‘লাইভ’। তাকে নানান চেহারায় ‘কণ্ঠদান’ করতে এগিয়ে এলেন বাংলা ভাষার দক্ষ ‘কথাশিল্পী’রা। ইংরেজিতে তাঁরা ‘টক শো প্রেজেন্টার’, বাংলায় ‘অনুষ্ঠান উপস্থাপক’। হে পাঠক, লক্ষ্য করুন, ‘আর জে’ বা ‘রেডিও জকি’রা তখনও ঝাঁপিয়ে পড়েনি বাংলা সংস্কৃতিতে। ... ...
এই মদ্যপান নিয়ে বাঙালির নৈতিক দ্বন্দ্বের ইতিহাস বড় পুরাতন। মূলধারার সাথে অস্ফুট লোকাচারের পার্থক্য তো ছিলই; কিন্তু মূল সুর ছিল সহাবস্থানের। কথিত আছে, একবার শাক্ত সাধক কমলাকান্তকে মদ্যপান করতে দেখলে, বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্র তিরস্কার করেন। প্রত্যুত্তরে মাতৃভক্ত কমলাকান্ত মদ্যকে দুগ্ধে পরিণত করে সেই দুধে দেবীপ্রতিমার পূজা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রতিভূ তেজচন্দ্রের কাছে যা অনৈতিক, সাধক কমলাকান্তের কাছে তা নয়। ভারতীয় লোকাচারের ঊর্ধ্বে থাকা সাধক সামাজিক নিয়মনীতির অধীন নন। কমলাকান্তের মতই, সাধক রামপ্রসাদও মদ্যপান করতেন। পণ্ডিতসমাজের প্রধান কুমারহট্ট এ নিয়ে তাঁকে তিরস্কার করলে, রামপ্রসাদ বলতেন, “সুরাপান করিনা আমি / সুধা খাই জয় কালী বলে”। কিন্তু সব প্রেমিক যেমন দেবদাস নয়, সকল মদ্যপই রামপ্রসাদ নয়। শাক্তমতে গুহ্যসাধন-ক্রিয়ায় মদ্যপানের যে রীতি, তা প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ না হওয়াটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘প্রাত্যহিক জীবন’ তো কোন সমসত্ত্ব ধারণা নয়, বরং তা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন। একদিকে প্রাক-ঔপনিবেশিক বঙ্গীয় উচ্চবর্গ যেমন পারতপক্ষে মদ্যপান এড়িয়ে চলেছে, মঙ্গলকাব্যের অন্ত্যজ শ্রেণি অবশ্য শুঁড়িখানায় ক্রমাগত ভিড় জমিয়ে গেছে। তাই মদের বিচারেই বাঙালি অনেক আগেই ‘আমরা-ওরা’-র ব্যবধান তৈরি করে ফেলেছে। ... ...
আসলে প্রশ্নটি ওঠার জায়গা ও রয়েছে অনেক। একটি প্রতিবেদনে জানা যায় রিফিউজি দলের দৌড়বিদদের মধ্যে ছয়জন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাননি কারণ দলের মধ্যের প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র তাঁদের যথাযথ স্বাধীনতা দিচ্ছেন না। বিতর্কের শুরু হয়দক্ষিণ সুদান থেকে বাস্তু-চ্যুত দৌড়বিদ দমিনিক লোকিনয়োমো লোবালু সুইস দৌড় প্রতিযোগিতায় জেতার পর পুরস্কারের অর্থমূল্য না পাওয়া নিয়ে। ... ... কথাটিকে একটু সাজিয়ে নিলেই হয় যে বাস্তু-চ্যুতদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এটাই যথেষ্ট তাই তাদের অনুযোগের অধিকার থাকে কি করে! অর্থাৎ হয় প্রদত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ কর বা কাকুমার উদ্বাস্তু শিবিরে ফেরত যাও। 'Savior's Complex' কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গদের রয়েছে তাই নয়, বরং তা কেনিয়া পরিচালিত গোটা রিফিউজি দলের বিষয়টির সাথেও জড়িয়ে রয়েছে। অত্যাচারী যেমন অত্যাচারিতের মতের অপেক্ষা করে না; রক্ষাকর্তাও অনুগ্রহপ্রার্থীর মতের আশায় থাকে না। ... ...
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে আর কর্পোরেটের স্ট্রেসগরিমা ইত্যাদি ভাষ্যের অন্তরালে প্রকৃত ভারতবর্ষের মানব সম্পদের পরিচর্যায় সরকারি ব্যবস্থার অবদানকে ভুলতে থাকার কারণ বিবিধ হতে পারে। সরকারের নিজের দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলার ইচ্ছা, সর্বগ্রাসী মুনাফাপিপাসা, জনগণের সঙ্গত ক্ষোভ - এইসব অনেক কিছুই তার মধ্যে থাকা সম্ভব। তার পরেও, যেসব জায়গায় পৌঁছে যাওয়া পুঁজির কাছে লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় পৌঁছনোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্রের। সেই যন্ত্রকে সচল রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিকূল পথে চলতে গেলে শুধু চাকরির দায়ের বাইরেও, মানুষের প্রতি পারস্পরিক মমতা এক আবশ্যিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি বা অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের অভিপ্রায়। আজকের পর্বে থাকছে সত্তরের দশকের ত্রিপুরায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক জয়া বর্মনের অভিজ্ঞ্তা। আপনিও আপনার অভিজ্ঞ্তা নিয়ে লিখুন খেরোর খাতা অথবা হরিদাস পাল বিভাগে, কিংবা সম্পাদকীয় বিবেচনার জন্যে ইমেল করুন guruchandali@gmail.com ঠিকানায়। ... ...
আমার বাংলা সাদামাটা বাংলা। চাইলে যে সুমিতদা সেভাবেও লিখতে পারত তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ- বিভূতিভূষণের ‘পোনু’-কে নতুন ভাবে মার্কিন মুলুকে আত্মপ্রকাশ করিয়ে সুমিতদা-র লেখা এক গুচ্ছ ‘পোনুর চিঠি’। পুরোনো ‘অবসর’ আর অধুনালুপ্ত ‘আন্তরিক’ পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠিগুলো ছিল ব্যাঙ্গ আর শ্লেষে পরিপূর্ণ! অত্যন্ত সুপাঠ্য সেই চিঠির একটাতে হোঁচট খেয়েছিলাম ‘পন্টক’ শব্দটা দেখে - ব্যবহার করা হয়েছে কোনও এক সম্মেলনে কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে। ... ...
মাদের দেশে ‘দর্শন’ বলে আলাদা কোনো বিষয় কখনও ছিল কি? বেদে, উপনিষদে যা আছে বা মহর্ষি কপিল, কণাদ, জৈমিনি, ব্যাস, মধ্বাচার্য, রামানুজম, শঙ্করাচার্য ইত্যাদিরা যা বলে বা লিখে গিয়েছিলেন তৎকালে তা ‘দর্শন’ নামে বিবেচিত হতো কি? সম্ভবত না। প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ও অপার বৈচিত্র্যময় এই জগতের দিকে তাকিয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলী হয়েছিলেন অগাধসলিলা সরস্বতী নদীর তীরের আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেরা। তারই ফল স্বরূপ যেগুলি বিবেচিত হয়েছে সাংখ্য, বৈশেষিক, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ইত্যাদি হিসেবে, এগুলির ভিতর দিয়ে তাঁরা যা বলতে চেয়েছিলেন নিজেদের জীবন-চর্যায় তাই তাঁরা প্রতিভাত করে গিয়েছিলেন, যার অন্ত বোধিতে বা মুক্তিতে। এমনকি বস্তুবাদী চার্বাকেরাও চর্যায় ছিলেন বস্তুবাদী দর্শনানুগ। অর্থাৎ, আদিতে দর্শন আসলে জীবন-চর্যার নামান্তর ছিল ও পরিশেষে জীবনের অন্তিম লক্ষের সন্ধানী। এসব দূর অতীত বা সুপ্রাচীন কালের কথা। স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে ‘দর্শন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বহু পরে মূলত পাশ্চাত্যের হাত ধরে। আমাদের নিকটবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর দর্শন বলে যা পরিচিত বলা বাহুল্য তা জোরালো ভাবে পাশ্চাত্যেরই অবদান। এর সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে George Edward Moore-র আধুনিক বাস্তববাদের হাত ধরে, প্রসারিত হাল আমলের Slavoj Zizek পর্যন্ত। ... ...
বীরচন্দ্রের মৃত্যুর পরে ১৮৯৬ সালের শেষে মহারাজা রাধাকিশোর সিংহাসনে বসেন চল্লিশ বছর বয়সে। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথেরই সমবয়সী। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। রাধাকিশোরের রাজত্বের ছমাস কাটতে না কাটতেই ১৮৯৭ সালের প্রবল ভূমিকম্পে ত্রিপুরা সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে করুণ আর্থিক অবস্থার মুখোমুখি হয় রাজ্য এবং তার মধ্যেই রাজপারিষদদের স্বার্থপর আচরণে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। রাধাকিশোরের একান্ত অনুরোধে তাঁকে সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভেবে অবাক হতে হয়, সাহিত্যের নান্দনিক বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এসে বিরাট ধৈর্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বন্ধুকে রাষ্ট্রশাসনের কূটিল বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজে ত্রিপুরায় হাজির হয়ে শাসন ব্যবস্থার নানা ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করে উপযুক্ত বিশ্লেষণ সহ একটি গোপন নোট পাঠান রাজার কাছে। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে কবির বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে... ... ...
কবিতাপ্রয়াসী হিসেবেই শুধু নই, একজন পাঠক হিসেবে মনে হয়, কবিতা ও কবিতা সংক্রান্ত ভাবনাবিশ্বের যে যুগলবন্দি তিনি তৈরি করেছিলেন ধারাবাহিক ভাবেই, তা আমাদের খোলা হাওয়ার বাঁচতে শেখায়। কারণ একপ্রকার ভাবনাগত দৈন্যের মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। এ সময় শঙ্খ ও অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতো কবিদ্বয় আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন, তাই আমাদের আগামীদিনের সহায় হয়ে উঠতে পারে। দুজনকেই আমরা হারিয়েছি খুব অল্প ব্যবধানে। অথচ দুজনেই তাঁদের চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তাঁদের সৃষ্টি ও ভাবনায় আমাদের সমৃদ্ধ করে গেছেন। ... ...