হয়তবা, প্রতিটি যুদ্ধের খবর আমাদের তৃপ্তি দেয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, খুঁজে খুঁজে আমরা পড়ি সে-সব , দেখি, আলোচনা করি, গালি দেই, আমাদের দুর্বল হৃদয়গুলো তেতে ওঠে, আমাদের নিজের নিজের রায়ে ঘোষিত অপরাধীদের ধ্বংস কামনায় আমরা একাত্ম হই। প্রাগৈতিহাসিক সমবেত আক্রমণের উল্লাস-ধ্বনি আমাদের ফিরিয়ে দেয় - যুদ্ধ, আহা যুদ্ধ! ... ...
বেশির ভাগ এক তলা বাড়িতে ভরা দিঘড়ি পাল পাড়া আর আগের মতো স্বাভাবিক নয়। এই অঞ্চলটায় আর্থিক অসাচ্ছল্যের চিন্হ চারপাশে। পাল পরিবার বারোই এপ্রিল সন্ধে বেলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে , বাড়ি চড়াও হবার ঘটনার ঘন্টা পাঁচেক বাদে বি এস এফের লোকজন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ফাঁকা বাড়িগুলোর জন্যেই যেন এলাকায় থমথমে ভাব। লোকে ভয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। জেলাটার নাম মুর্শিদাবাদ , জেলাওয়ারি মুসলিম জনসংখ্যায় দেশে বৃহত্তম - দুহাজার এগারোর জনগণনা অনুযায়ী সাতচল্লিশ লক্ষ। এই সংখ্যাটা জেলার মোট জনসংখ্যার দুইতৃতীয়াংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকে ওয়াকফ ( সংশোধনী ) বিল ২০২৫ পাশ করে পাঁচই এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই দেওয়ার পরই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিল। প্রতিবাদীরা পথে - রাজপথে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায় আর সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি করে। আগের দিন সন্ধেতে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুলিশের গুলিতে দুজন মুসলিম যুবক মারাত্মক আহত হয়। তা বলে দিঘড়ি , জাফরাবাদ, রানিপুল আর বেদবনাতে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে বাড়ি আক্রমণ হতে পারে । এখানে , হিন্দু আর মুসলিম এতো গা ঘেষাঘেষি করে থাকে যে না জানা থাকলে বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল কোন বাড়ি হিন্দুর আর কোনটা মুসলিমের । সবাই শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু এই সব বসতিতে বারোই এপ্রিল উন্মত্ত জনতা এসে বেছেবেছে হিন্দু বাড়িগুলোতেই চড়াও হলো। ... ...
আসল কথাটা হলো দৃশ্যগতভাবে রাজনৈতিক ভাবে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দল ঠিক এক ভঙ্গিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা লঙ্ঘন করে মেতে উঠল সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের মন্দির নির্মাণে। অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী, আর দীঘায় মুখ্যমন্ত্রী— কেউ নিজের হাতে পুজো করে, আর কেউ যজ্ঞে আহুতি দিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে— নিজের হিন্দুত্বের প্রমাণ পেশ করলেন। কে কত বড় হিন্দু এ যেন তার প্রমাণ দেওয়ার প্রতিযোগিতা। ভারতের সংবিধান যে রাষ্ট্রকে এইরকম কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দেয় না, দেখা গেল যে, সে কথাটি মনে রাখার দায় কোনও তরফেরই নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মাচারণ করতেই পারেন, কিন্তু সেটা কী প্রকাশ্যে করতে পারেন? অবশ্য এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলতেই পারেন, তিনি শুধু অনুকরণ করেছেন মাত্র। দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যদি করতে পারেন, একই ধরনের কাজ, তিনি তো চুনোপুঁটি মাত্র। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে। যদি সেটাও সত্যি হয়, তাহলেও কিছু বদল হয় কি? অনুষ্ঠানটির ধর্মীয় চরিত্র তাতে পাল্টায় কি? হিন্দু ধর্মের মন্দির কোনও মন্ত্রবলে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন পহেলগাঁও তে ধর্ম দেখে দেখে সন্ত্রাসবাদীরা মানুষকে মেরেছে, যখন তার পরবর্তীতে পুরো দেশ জুড়েই নতুন করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ তীব্র হয়ে উঠছে, যখন ওয়াকফ আইন নিয়ে বিরোধিতা এবং তারপরে মুর্শিদাবাদে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে মুসলমানরা অতি বিপন্ন বোধ করছেন, ঠিক সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্দির উদ্বোধন করে কী বার্তা প্রেরণ করলেন, তা বোঝার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁর নিশ্চিত ভাবেই আছে। যে মুসলমানরা এতদিন তাঁকে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কী মনে হয়েছে, তা একবারও তিনি কি ভেবেছেন? ... ...
অপরাধীকে মহিমান্বিত করার এই প্রবণতা স্বাধীন ভারতের অন্যতম জঘন্য অপরাধ, গান্ধী-হত্যা দিয়েই শুরু হয়েছিল। এটা সর্বজনবিদিত যে তাঁর হত্যার পর সঙ্ঘীরা বাজি ফাটিয়ে উল্লাস করেছিল, মিষ্টি বিতরণ করেছিল। স্বাধীনতার পর কয়েক দশক চুপচাপ থাকার পর নব্বইয়ের দশকের পর থেকে তাঁকে বরেণ্য করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রজ্ঞা ঠাকুর, সাক্ষী মহারাজের মতো বিজেপি সাংসদরা গডসেকে দেশভক্ত বলে অভিহিত করার পরেও দল তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে তারপরেও তাঁরা পার্টির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং বিপুল ভোটে জিতেছেন। ... ...
প্যারাসেলসাস বলেছিলেন, “Only the dose makes a thing not a poison”, অর্থাৎ শুধু মাত্রার তফাত-ই ঠিক করে দেয়, কোনটা বিষ, আর কোনটা বিষ নয়। আজকের দিনে এই কথাটার তাৎপর্য বোঝা বোধহয় আরও একটু বেশিই দরকারি হয়ে পড়েছে আমাদের সবার জন্যেই, কারণ বিজ্ঞাপন কিংবা মিডিয়া থেকে শুরু করে খবরের বিভিন্ন সূত্রে প্রায়-ই শোনা যায় ভয়-ধরানো সব বিশেষণ, “সাঙ্ঘাতিক বিষ”, “দ্য মোস্ট টক্সিক সাবস্ট্যান্স” ইত্যাদি প্রভৃতি। যা থেকে আমাদের মনে হয় যেন আসলে প্রকৃতিতে একটা দুর্দান্ত বাইনারি ব্যবস্থা আছে - কিছু পদার্থ বিষাক্ত আর বাকি সব নির্বিষ। কিন্তু আরেকটু তলিয়ে দেখলে বোধহয় প্যারাসেলসাসের মতই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনো খুব কঠিন না। আরও সহজ করে বললে, যত বিষাক্ত পদার্থই হোক না কেন, যদি তার একটিমাত্র অণু, একটি মলিকিউল প্রবেশ করে কারুর শরীরে, বাজি রেখে বলা যায় তার কিস্যু হবে না, আবার অন্য দিকে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে, এমন কী জল-ও প্রাণহানির কারণ হতে পারে। আর তাই, আজকের আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা দূষকের মাত্রা পার্টস পার বিলিয়ন অর্থাৎ পিপিবি এককে মাপতে পারছি যখন, আবার-ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন ‘বিষবিজ্ঞানের জনক’ প্যারাসেলসাস। মাত্রা তবে মাপবো কী করে? কাকে বলে বায়ো-অ্যাসে, অথবা ডোজ-রেস্পন্স কার্ভ? কাকেই বা বলে LD-50? সেই সব গল্পে আসতে গেলে আমাদের রেনেসাঁ পেরিয়ে এসে অপেক্ষা করতে হবে সেই ১৯৩৫ অব্দি। ওহায়োর স্প্রিংফিল্ডের একজন সাধারণ কিন্তু অসামান্য মানুষ চেস্টার ব্লিসের গল্প বলবো। ব্লিসের গল্পে আসবেন ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট, আসবে গ্রেট ডিপ্রেশন, রোনাল্ড ফিশার এবং স্তালিন-জমানার লেনিনগ্রাদের গল্প। এবং একটু অঙ্ক, আর নির্বিষ অঙ্কের সাথে একটু বিষাক্ত ইতিহাস। ... ...
কাটোয়ার গিধগ্রামের শিবমন্দিরে ‘দাস’ সম্প্রদায়ের মানুষজন স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর নিজেদের ধর্মাচরণের স্বাধীনতা পেলেন। পুলিশ প্রশাসনের উপস্তিতিতে গ্রামের অস্পৃশ্য চামাররা মন্দিরে ঢুকলেন, সংবিধানের আর্টিকেল ২৫ এ ন্যাস্ত ধর্মাচরণের অধিকার পেলেন পাশাপাশি ৩৫০ বছরের প্রথা ভাঙলেন। তালিকা এইখানেই শেষ নয়। ‘রবিদাসীয়া মহাসঙ্ঘ’ তরফ থেকে সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেখানে বলা হয় কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি শিবমন্দির, বিল্লেশ্বর শিবমন্দির, নদীয়ার কালিগঞ্জে একই পরিস্থিতি। প্রাথমিক ভাবে নিজেদেরকে প্রগতিশীল দাবী করা বাঙালি নিজেদের ইমেজ বাঁচাতে গিধগ্রামের মতো কোন এক অজ পাড়াগাঁয়ের এই ঘটনাকে ভদ্রলোকী কায়দায় নিছকই বিছিন্ন বলে উড়িয়ে দিতে শুরু করে। কিন্তু তালিকা লম্বা হতে শুরু করতেই নবজাগরনের উত্তরসূরি কলকাতার বাবুদের বেশ চিন্তা; ‘জাতপাত এসব তো বিহার উত্তরপ্রদেশের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গে এসব এলো কবে!’ ক্যালকাটা হাই কোর্টের এক মহামান্য বাঙালি বিচারপতি নদীয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, ‘বাংলায় তো এসব ছিল না। এখনও এই ধরনের সমস্যা বাংলায় নেই বলেই বিশ্বাস করি’। এই সাম্প্রতিক মন্তব্যের একই সুর শোনা গেছিল সেই ১৯৮০ সালে মণ্ডল কমিশনের প্রতিক্রিয়ায়। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র দুটি জাত, ধনী এবং দরিদ্র’। রাজ্য যে জাতপাত মুক্ত এই বিশ্বাস কি একদিনে জন্মেছে? নাকি গঠনতান্ত্রিক উপায়ে বাংলা যে জাত প্রশ্নে ব্যতিক্রম সেটা নির্মাণ করা হয়েছে? আজকে এই লেখায় একটু বিনির্মাণের চেষ্টা করবো। ... ...
মুসলিম ধর্মীয় আইন অনুসারে ধর্মীয় কারণে ( মসজিদ ইত্যাদি তৈরির জন্য ) বা জনহিতকর কাজে ( স্কুল, হাসপাতাল তৈরি বা দরিদ্র আতুরের সেবার জন্য ) দান করা সম্পত্তিই হল ওয়াকফ। লিখিত ওয়াকফনামার মারফৎ তো সম্পত্তি দান করাই যায়, এছাড়াও দীর্ঘকাল ব্যবহারের দরুণ ওয়াকফ (বা ওয়াকফ বাই ইউজেস ) এবং ওয়াকফ-আলাল-আউলাদ ( যা কিনা প্রাইভেট ওয়াকফ যার থেকে অর্জিত অর্থ বংশধরদের কাজে লাগবে এবং বংশলোপ পেলে সেই সম্পত্তি ওয়াকফের হাতে চলে যাবে। ) ও মান্য হত। যিনি সম্পত্তি দান করতেন তিনি হলেই ওয়াকিফ। ওয়াকফ ছিল চিরস্থায়ী ব্যবস্থা, তার মালিক হলেন আল্লাহ স্বয়ং। বোঝার সুবিধার জন্য ধরা যায়, এটা অনেকটা আমাদের দেবোত্তর সম্পত্তির অনুরূপ। দেবোত্তর সম্পত্তির ক্ষেত্রে যেমন সেবাইত থাকেন ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা করেন মুতওয়ালি। খালি বিবাদ বিসম্বাদ উপস্থিত হলে দুই আলাদা আলাদা আইনের মাধ্যমে দেবোত্তর ও ওয়াকফ সম্পত্তির মীমাংসা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির পঞ্জীকরণ ও পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের। এটা মুসলমান পার্সোনাল আইনের অংশ। ... ...
রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা এক অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া, কারণ শাসক সর্বদাই চায় স্থিতাবস্থা। তাই এই প্রক্রিয়ার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে এমন রক্তাক্ত ও নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকে জনগণ ভুলে যেতে পারলেই শাসকের জন্য ভালো। শাসক নির্বিশেষে তাই সেই ইতিহাস ভুলে যেতে হয় বা ধামাচাপা দিতে হয় যা স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করতে পারে। এমন উদাহরণ ইতিহাসে আমরা প্রচুর দেখেছি। এই কারণেই দক্ষিণ চিলির অধিবাসী সেল্কনাম জনগোষ্ঠীকে গণহত্যার ইতিহাস ১০০ বছর ধরে প্রায় অজানাই থেকে যায়। সরকারের প্রচ্ছন্ন মদতে দেশের মূলধারার ইতিহাসের পাতায় এই জনগোষ্ঠীর উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বহুদিন অবধি বিশেষ কিছুই পাওয়া যায়নি। শেষ দশ-পনেরো বছরের গবেষণার সৌজন্যে এবং ইন্টারনেট জমানার ফলস্বরূপ আজকের দিনে এই বিষয়ে যদিও অনেক কিছুই জানা গিয়েছে, “The Settlers”, “White on White” (পরিচালক- থিও কোর্ট) এর মত ছবিও হয়েছে এবং সর্বোপরি সে দেশের পার্লামেন্টে এই বিষয়ের উপর ঝড়ও উঠেছে। ... ...
দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে বাতিল করেছেন বটে, কিন্তু এ দুর্নীতির সূত্রপাত তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে নেওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে। তৃণমূল জমানায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এই মানুষটি ঘোষিত বাম বিরোধী হলেও তাঁর পড়ানো ও পাণ্ডিত্য নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠার কোন অবকাশ ছিল না। সেই সময় NCTE (National Council of Teachers education) এর নতুন নিয়মানুসারে ঠিক হয়, পরীক্ষা হবে দুটি ধাপে, কিন্তু এক দিনেই। প্রথমে ৯০ নম্বরের Teachers Ebility Test বা সংক্ষেপে টেট এবং তারপর ২ নম্বর করে ৩০ টি প্রশ্ন, অর্থাৎ মোট ৬০ নম্বরের বিষয়ের উপর পরীক্ষা। টেট এর প্রশ্নপত্র এমসিকিউ ধাঁচে হবে, তবে বিষয়ের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রেই জায়গা থাকবে, তাতেই লিখতে হবে। টেটে ৬০% মানে ৫৪ নম্বর পেলে তবে বিষয়ের খাতা দেখা হবে, এরপর বিষয়ে ন্যূনতম ৪০% মানে ২৪ নম্বর পেলে ইন্টারভিউতে ডাক মিলবে। ... ...
বলুন দেখি, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা দুটো কী কী? দেখুন, সেই বিরানব্বুই সালে মনমোহন সিংজী লাইসেন্স রাজের অবসান ঘটিয়ে সর্বত্র দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তারপর ভাগীরথির বুক দিয়ে কত জল বয়ে গেল, দেশী-বিদেশী শিল্পপতিরা কত চেষ্টাই করলেন, কিন্তু এ পোড়া রাজ্যে একটাও বড় মাপের কারখানা বানানো গেল না। বুদ্ধবাবুও পারেননি, মমতা ব্যানার্জীও পারলেন না। প্রতি বছর প্রচুর ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শিল্প-সম্মেলন হয়, হাজার-কোটি লক্ষ-কোটি বিনিয়োগের গল্প শোনা যায়, তারপর সময়কালে দেখা যায় সব ঢুঁ ঢুঁ। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের তো বসে থাকলে চলে না। নাই বা হল শিল্প, বিরাট একটা বাজার তো রয়েছে এ রাজ্যে। মোটামুটি সম্পন্ন একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা সব সময়ই এ রাজ্যে বিপুল। ... ...
হিন্দুস্থানে বাবর মোঘল সালতানাতের প্রতিষ্ঠা করলেন ঠিকই কিন্তু তাকে এক স্থায়ী অনন্য , বিশিষ্ট রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিচ্ছেন আকবর । সমসময়ে কি ছিল তাঁর মুল্যায়ন ? নিজের সম্প্রসারণের প্রকল্পকে হিন্দুস্থানের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন তিনি কেমন করে ? সালতানাতের আরেক বিশিষ্ট সম্প্রসারণকারী ঔরঙ্গজেব আলমগীরের সঙ্গে তাঁর তফাৎ কিসে ? ... ...
সক্কাল সক্কাল খবরের কাগজে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে বার্নিহাট এই নামটা দেখে বেশ অবাক হয়ে গেছিলাম।পাশে তিরঙ্গা জাতীয় পতাকার ছবি ধন্দ আরও বাড়িয়ে দিল সঙ্গে প্রবল অস্বস্তি , জায়গাটা চিনতে না পারায়। হাতের সামনে পাওয়া এ্যাটলাসের পাতা হাতড়াতে হাতড়াতে হাত ব্যাথা, চোখ বিগলিত। তবুও তেনার দেখা নাই। উপায়ান্তর না দেখে আমার এক ছাত্রকে ফোন করলাম। ও এখন কর্মসূত্রে অসম রাজ্যের বাসিন্দা। প্রথম প্রচেষ্টায় ওদিক থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আবার তার নম্বর মেলাতে যাব, এমন সময় আমার মুঠোফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠতেই বাটন টিপে কানের কাছে ফোনটা ধরতেই ওদিক থেকে কথা ভেসে আসে – “বার্নিহাট কোথায় ? -তা জানতেই বোধহয় ফোন করেছেন দাদা ? জায়গাটা আমাদের গুয়াহাটি থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে। অবশ্য শিলং থেকে এই শহরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। অসমের গায়ে গা লাগিয়ে থাকা মেঘালয় রাজ্যের রি- ভোই জেলায় মেঘালয় পাহাড়ের ঢাল যেখানে এসে গুয়াহাটির সমতলে মিশেছে সেখানেই এই বার্নিহাট শহর।” খট্ করে আওয়াজ তুলে কলটা কেটে যায়। বুঝতে পারি অসমে থাকার দরুণ বেচারিকে হয়তো শহরের অবস্থান জানাতেই নাজেহাল হতে হচ্ছে। ... ...
ভুয়ো এপিক নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, নির্বাচন কমিশন তখন তাঁদের গাফিলতি ঢাকার উদ্দেশ্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে মিটিং করে ঘোষণা করলো, তাঁরা আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ করিয়ে এই ভুয়ো ভোটার কার্ড সমস্যার সমাধান করতে চায়। প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সমাজ মাধ্যমে এই বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হলো। সংসদের বিরোধী দলনেতা নিজে টুইট করে লিখলেন, অবশেষে নির্বাচন কমিশন তাঁদের অভিযোগকে মান্যতা দিল এবং আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ ঘটানোর মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয়। সঙ্গে অবশ্য তিনি আরও একটা কথা যুক্ত করলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোনও ভোটার যেন বাদ না পড়েন, তা দেখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের এই সংযোগ প্রক্রিয়ায় কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে। ... ...
যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে মহম্মদবাজারের এই কয়লা খনি এলাকা ধরা হচ্ছে, সেখানে আদিবাসী, তফসিলি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস বেশি শুধু নয়, তারাই প্রায় ৯০ শতাংশ। দেওয়ানগঞ্জ, হরিণসিঙ্গা অঞ্চলের তিন হাজার পরিবারের প্রায় ২১ হাজার মানুষ প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্য নিজের এলাকা থেকে উৎখাত হবেন। যদিও তাঁরা বিকল্প বাসস্থান এবং খোলা মুখ খনিতে কাজের সুযোগ পাবেন বলে সরকার জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আবার জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি পাবেন - সরকার এমনও ঘোষণা করেছে। বিবাদ বেঁধেছে এখানেই। সরকারের এই প্রতিশ্রুতিতে গ্রামবাসীদের অধিকাংশের সায় নেই। তাঁরা কোমর বেঁধে নেমেছেন। খোলা মুখ খনিতে কতটা দূষণ হবে, কয়লা উত্তোলন ও পরিবহনের ফলে যে দূষণ হবে, তার জন্য কতটা জমির ফসল নষ্ট হবে, সে তো পরের কথা। মমতার সিঙ্গুর আন্দোলনের যে মূল কথা ছিল, মানুষ না চাইলে সরকার কোনও শিল্প প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না, সেই আপ্তবাক্যই এখন মমতা সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, বিকল্প বাসস্থান - কোনও কথাতেই চিঁড়ে ভিজছে না। মহিলারা সামনে এগিয়ে এসে পুলিশের সামনেই বলছেন, আমরা ভিটে জমি দেব না। তার জন্য দরকারে প্রাণ দেব। এটা আসলে আদিবাসী গাঁওতার সিদ্ধান্ত। ... ...
অনেকে হয়তো ভাবছেন, ভারতের স্থান কত? ২০২৩ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৬২ আর ২০২৪ সালে ভারত ১৫৯তম স্থান পেয়েছে ১৮০টি দেশের মধ্যে। আসলে কোনও দেশের সরকারই গণতান্ত্রিক নয়। ভারতে যদি হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান হয়ে থাকে, তুরস্কে তেমনি মুসলমান মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় আছে, এই সূচকে যাঁদের স্থান ভারতের একটু আগে- ১৫৮। এ যেন কে কত খারাপ হতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্বের বেশীরভাগ সরকার সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে, সেই ইন্টারনেট কারা ব্যবহার করবেন তার সীমা নির্ধারণ করেছে, অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে এবং সংবাদ ও তথ্য বহনকারী বার্তাগুলিকে দমন করেছে। ভিয়েতনামের সাংবাদিকদের বক্তব্য যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে তাকে পদ্ধতিগতভাবে বন্ধ করা হয়েছে৷ চীনে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি সাংবাদিককে আটক করার পাশাপাশি, সরকার বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা চ্যানেলের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ করেছে। অনলাইন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য সেন্সরশিপ এবং নজরদারি নীতি প্রয়োগ করে এবং সংবেদনশীল বা দলীয় লাইনের বিপরীত বলে বিবেচিত তথ্যের বিস্তার সীমিত করেছে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী সাংবাদিকদের অপমান, অসম্মান এবং হুমকি দিয়ে তাদের প্রতি ঘৃণা ও অবিশ্বাসকে উস্কে দেওয়ার কাজটাও করে চলেছে। অন্যরা মিডিয়া ইকোসিস্টেম দখলের আয়োজন করছে, তা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়ার মাধ্যমে হোক, বা বেসরকারি মালিকানাধীন মিডিয়া বন্ধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা অধিগ্রহণের মাধ্যমে হোক। জর্জিয়া মেলোনির ইতালি (৪৬ তম) - যেখানে ক্ষমতাসীন সংসদীয় জোটের একজন সদস্য দ্বিতীয় বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা (এজিআই) অধিগ্রহণ করার চেষ্টা করছেন – তার ফলে ঐ সূচকে এই বছর পাঁচটি স্থান নেমে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই প্রচারের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে চলেছে, এমনকি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার উসকানিও দিচ্ছে। সূচকে মূল্যায়ন করা দেশগুলির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি (১৩৮টি দেশ) বেশিরভাগই রিপোর্ট করেছেন যে তাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা প্রায়শই প্রচার বা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার সাথে জড়িত ছিল। এই সম্পৃক্ততাকে ৩১টি দেশে "পদ্ধতিগত বিষয়" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ... ...
বিনা ব্যয়ে শিক্ষার অধিকার আইন বলে একটি আইন হয়েছিল এই দেশে। তার পরই সকলের জন্য শিক্ষার বিষয়টা নিয়ে ভালোরকম নাড়াচাড়া হয়। স্কুলের পরিকাঠামোর কিছু উন্নতি হয়, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হয়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তো বটেই তার পরেও বিনামূল্যে বই খাতা দেওয়া হয়। মিড ডে মিল ইত্যাদি তো আছেই। এই সময় থেকে ছাত্রছাত্রী সংখ্যাও বাড়ে। যাবতীয় সরকারি দপ্তরে সংবেদনশীলতা বাড়ানো হয়, হিসাব রাখার জন্য পোর্টাল খোলা হয়, প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর ইউনিক আইডি দেওয়া হয়। ... ...
পরিবার নিরাপদ আশ্রয় হলেও, জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন একা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারও নিরাপত্তার ছাতা সরে যেতে পারে, আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবেও একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও ভবিষ্যতে কী হবে বলা যায় না। তাই নিজের টাকা-পয়সার ব্যাপারে নিজে সতর্ক থাকা জরুরি। সমীক্ষার ফলাফল বলছে, বেশিরভাগ মেয়ে অর্থ সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী নন। ২১% মেয়ে এখনো বিনিয়োগ বা সঞ্চয় বুঝতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আবার যারা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের অনেকেই পরিবারের ওপর নির্ভর করেন। সেই সঙ্গে ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়ে মেয়েদের দ্বিধা স্পষ্ট। তবে যাঁরা নিজেদের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তাঁদেরও অনেকেই কোন ঝুঁকি নেন না! জ্ঞানটি যথেষ্ট সময়-উপযোগী ও সম্পুর্ণ তো? প্রশ্ন থেকেই যায়। ... ...
কলকাতা উচ্চ আদালতের বেশ কিছু শুনানি এখন ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। আমি বেশ কটা দেখেছি এবং শুনে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। বাদী-বিবাদী সবাই বাঙালি। দুই-তিন-চার-পাঁচজন উকিল, যাঁরা তর্কবিতর্ক করছেন, সবাই বাঙালি। বিষয়বস্তু বাংলার। কিন্তু পুরোটাই হচ্ছে ইংরিজিতে। কালো কোট পরে উকিলরা বিচারকের সামনে এসে নানারকম বিচিত্র উচ্চারণে ইংরিজিতে সওয়াল করছেন। বাংলায় কোনো অপরাধ হয়েছে, কোনো বাঙালি মেয়ের উপর অত্যাচার হয়েছে, বাংলার কোনো হাসপাতালে ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন, বিচারপ্রার্থীরা আদৌ কিছু বুঝছেন কিনা তার তোয়াক্কা না করে সবটাই ইংরিজিতে। শুনলে মনে হয়, এখনও ইংরেজ জমানা চলছে, আর ছন্দ করে 'কিউকাম্বার শসা, প্লৌম্যান চাষা' মুখস্থ করছেন। ... ...