ইতিহাসে নোবেল পুরস্কার হয় না, কিন্তু এবারের অর্থনীতির নোবেল অনেকটাই ইতিহাস ঘিরে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারে গাণিতিক বিষয়েরই প্রাধান্য- রাশিবিজ্ঞান, গেম থিওরি, ফিনান্সিয়াল ম্যাথমেটিক্স। ২০২৪এ অর্থনীতির নোবেল পেলেন দারন আসেমোগলু (Daron Acemoglu), জেমস এ. রবিনসন (James Robinson) আর সাইমন জনসন (Simon Johnson)। বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন - সাধারণ মানুষের সুখসমৃদ্ধিতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানব্যবস্থা কী ধরণের ভূমিকা পালন করেছে এবং করতে পারে। এঁদের মধ্যে প্রথম দুজনের লেখা একটা উল্লেখযোগ্য বই হল "Why Nations Fail: The Origins of Power, Prosperity, and Poverty"- অর্থনীতির চেয়ে বইটিকে ইতিহাসের বইই বেশি করে বলা যায়। বইটিতে দারন আসেমোগলু এবং জেমস এ. রবিনসন দেখিয়েছেন কেন কিছু রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়, আর অন্যরা দারিদ্র্যের জালে আটকে থাকে। তাঁদের মতে, একটি দেশের সাফল্যের মূল কারণ হল তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক প্রতিষ্ঠান (inclusive institutions) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেয়, এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনে। এর বিপরীতে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান (extractive institutions) ক্ষমতা ও সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, আর সমাজকে অসাম্য, স্থবিরতা এবং ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়। ... ...
একখানা সাত-বাসি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। রাজা যাবেন যুদ্ধে। রণসজ্জা প্রস্তুত। কিন্তু বাদ সেধেছেন রাজজ্যোতিষী। রণক্ষেত্রে রাজার সাক্ষাৎ মৃত্যুযোগ নাকি দেখতে পাচ্ছেন তিনি! রাজজ্যোতিষীর গণনাকে রাজা অব্যর্থ বলে ভাবেন। সব কাজেই নেন তাঁর পরামর্শ। এবারেও তাঁর সাবধানবাণী ফেলতে পারছেন না। এদিকে সেনাপতি রেগে কাঁই। সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র, রণকৌশল – সব কিছুতেই প্রতিপক্ষের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থেকেও এভাবে রণে ভঙ্গ দিতে তাঁর বেজায় আপত্তি। রাজজ্যোতিষীর ডাক পড়ল রাজসভায়। আবারও রাজার মৃত্যুযোগ ঘোষণা করে সর্বসমক্ষে তিনি সগর্বে জানান যে, তাঁর গণনা কখনও ভুল হয় না। “বটে!”, সেনাপতি শুধোন, “তা আপনার নিজের মৃত্যু বিষয়ে কোষ্ঠীতে কিছু লেখেনি?” রাজজ্যোতিষী ঝটপট উত্তর দেন, “লিখেছে বই-কি, সেনাপতি! গণনা করে দেখেছি যে, বাঁচব আরও বহু বছর। থুত্থুড়ে বুড়ো হয়েই মরব আমি।” সেনাপতি মৃদু হেসে বলেন, “না গো মাননীয় মহাশয়, আপনি আর এক মুহূর্তও বাঁচবেন না”, এবং কথাটা শেষ হওয়ার আগেই চকিতে কোমরে গোঁজা তরোয়ালটা খাপ থেকে বের করেই রাজজ্যোতিষীর কাঁধ লক্ষ্য করে চালিয়ে দেন নিখুঁত নিশানায়। ঘচাং করে ধড় থেকে মুণ্ডুটা আলাদা হয়ে যায়.. গল্পটা সেকেলে হলেও এর নৈতিক উপদেশটুকুর প্রয়োজন এখনও ফুরোয়নি, অন্তত সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষার খবর তেমনই ভাবাচ্ছে। গোড়াতেই সেগুলো একটু দেখে নিলে মন্দ হয় না। ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্যোতিষ-বাণিজ্যের মোট বহরটা ছিল প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাপে এবং তা বার্ষিক প্রায় ৬ শতাংশ হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জন্মছক দেখে ভাগ্যগণনা ছাড়াও এই সওদার মধ্যে আছে নিউমেরোলজি, পামিস্ট্রি, ট্যারট কার্ড গণনা, বাস্তুশাস্ত্র ইত্যাদির পরামর্শ-খরচ এবং মহার্ঘ গ্রহরত্নের বিক্রিবাটার হিসেব। জ্যোতিষশাস্ত্রের এই বিপুল বাজারে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছেন গড়ে লাখখানেক করে নতুন জ্যোতিষী [Allied Market Research 2023]। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় বিশ্বখ্যাত পিউ ফোরাম জানিয়েছিল যে, মার্কিন মুলুকে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ জ্যোতিষে ঘোর বিশ্বাসী [Gecewicz 2018]। ব্রিটেনে এই বিশ্বাস কিছুটা কম (১৯%) হলেও ইউরোপের অনেক দেশেই জ্যোতিষে আস্থাশীল মানুষের শতকরা হিসেব মার্কিনীদের মতোই, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি। যেমন, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়ামে তা ৩০ শতাংশের ওপরে। ইউরোপের অনেক দেশেই প্রতি তিনজনের একজন মানুষ ভাগ্যে বিশ্বাস করেন [PEW Research Center 2018: 135]। ভারতের চিত্র অবশ্য আরও ভয়াবহ। ২০২১ সালের পিউ-সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, এদেশে ভাগ্যবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ এবং জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন শতকরা ৪৪ জন ভারতীয় [Sahgal et al 2021: 206]। আরও একটি পরিসংখ্যান তাৎপর্যপূর্ণ যে, কোভিড অতিমারির পর থেকে জ্যোতিষে বিশ্বাস ও জ্যোতিষ ব্যবসার পালে যেন একটা ধাক্কা লেগেছে, ধাক্কাটা এসেছে প্রধানত জ্যোতিষের অনলাইন বাজারের হাত ধরে। কাজেই, বিষয়টিকে নিয়ে একটু চর্চা করার দরকার আছে। ‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ (astrology) শব্দটার গায়ে বেশ-একটা জ্যোতির্বিজ্ঞানের (astronomy) গন্ধ মাখানো আছে! অনেকেই দুটোকে এক বলে ভাবেন। এ হেন ভ্রান্তিকে গোড়াতেই শুধরে নেওয়া দরকার। তবে কেবল এটুকু হলেই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও যখন বিষয়টিকে চর্চার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন বিজ্ঞান না-হোক, যে কোনও প্রকারের জ্ঞানচর্চার দিক থেকেও এর আদৌ কোনও মূল্য আছে কিনা, খতিয়ে দেখা দরকার তা-ও। এরই সঙ্গে, ফলিত জ্যোতিষ আদৌ ফলে কিনা, তার উত্তরও আমাদের পেতে হবে। ... ...
সেদিন সন্ধেবেলায় সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছি, হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি দরজার সামনে বাপি দাঁড়িয়ে আছে। চাবি এনে দরজা খুলতে খুলতেই প্রশ্ন করি – “ কী ব্যাপার বাপি ? হঠাৎ এমন সময়ে?” ম্লান হেসে বাপি উত্তর দেয় – “এই তোমার কাছে এলাম একটু পরামর্শের জন্য।” পরামর্শ? তাও আবার আমার মতো এক অচল গাড়ির গাড়োয়ানের কাছে?” “তুমি হলে মাস্টারমশাই মানুষ, তোমার সঙ্গে কথায় আমি পেরে উঠবো না।” – বেশ বিনয় করে কথাটা বলে বাপি। এই অবসরে আমার স্ত্রী বাপির জন্যও এক পেয়ালা চা এনে হাজির করেছেন। সেই কাপে ঠোঁট ঠেকিয়ে বাপি বলে, –“সামনের পরবের ছুটিতে বাড়ির সবাই মিলে একটু বেড়াতে যাবো বলে ঠিক করেছি।” বাপি মনের কথা সবটা বলে উঠতে পারে না, আমার গিন্নি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠেন, – “ বাহ্! এতো খুব ভালো কথা। যা ,যা, ঘুরে আয়। আমিতো তোর কাকুকে বলে বলে হয়রান হয়ে গেলাম। কতদিন বাড়ির বাইরে যাওয়া হয়না। তাই কোথায় যাবি ঠিক করলি? পাহাড় না সমুদ্র?” এক নাগাড়ে এতো কথা শুনে বাপিতো একরকম নাজেহাল। আমতা আমতা করে বাপি বলে,-- “এখনো তা ঠিক করে উঠতে পারিনি কাকিমা। মেয়েটা এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে ওর দাবি তাই সবার আগে। ওর ইচ্ছে এবার পাহাড় দেখতে যাবে, অন্যদিকে ওর মায়ের ইচ্ছে সমুদ্র দেখতে যাবে। আমি তো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কোথায় যাব। এই উৎসবের সময় এলেই আমার বুক , মাথা সব ধরফর করতে শুরু করে। একেতো পরবের জন্য কেনাকাটার খরচ,তার ওপর এই বেড়াতে যাওয়ার খরচ! সামলাবো কী করে,তা ভেবেই আমার ঘুম উড়েছে। কাকু, আমায় একটা উপায় বাতলে দাও দেখি।” ... ...
আমার গপ্পের নায়ক এমন একজন লোক যার সাথে "Prince of Mathematics" গাউস দীর্ঘদিন প্রায়োরিটি ডিস্পিউটে জড়িয়েছিলেন লিস্ট স্কোয়ারের আবিষ্কার নিয়ে। সেই নিয়ে বিস্তর চিঠিচাপাটি, মান-অভিমান, একশো বছর পরেও গণিত বা রাশিবিজ্ঞানের ইতিহাসের আগ্রহের ব্যাপার। তিনি আদ্রিয়ান-মারি লেজান্ড্র (নাকি লেজঁদ্র?) (জন্ম - ১৭৫২, মৃত্যু - ১৮৩৩।) অঙ্কের ইতিহাসে তার-ও কীর্তি কম নয়। চট করে ভাবলেই মনে পড়ছে - লেজান্ড্র পলিনমিয়াল, লেজাণ্ড্র ট্রান্সফর্মেশন, লেজাণ্ড্র ডিফারেনশিয়াল ইকোয়েশন, লেজান্ড্র সিম্বল, লেজান্ড্র কণ্ডিশন ফর ক্যালকুলাস অফ ভেরিয়েশন, লেজান্ড্র রিলেশন ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কিছু। ভদ্রলোক এর-ই পাশাপাশি নাম্বার থিওরি, এলিপটিকাল ইন্টিগ্রাল, ক্যালকুলাসের উপর বই লিখেছিলেন বেশ কিছু, আর ইউক্লিডের জিওমেট্রির মালমশলা নিয়ে লিখেছিলেন বেশ জনপ্রিয় পাঠ্যবই, একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল সেটি। তাও লেজান্ড্র জীবদ্দশায় প্রচুর খ্যাতি পেয়েছিলেন এ কথা লিখলে মিথ্যা বলা হবে। অন্যান্য সমমানে বিখ্যাত গাণিতিকদের মত তার 'সমগ্র' বেরোয়নি। এমন কি, ব্যক্তি লেজান্ড্র কেমন ছিলেন সে বিষয়ে আমাদের জানা আজ-ও অতি অল্প। ছাত্র অথবা বন্ধুদের দু-একটি চিঠির ভেতর যেটুকু যা ধরা যায় তাইই। তবে, সে এমন কিছু আশ্চর্য হয়তো না। কত বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কি অঙ্কবিদ সারাজীবন নিভৃতচারী হয়ে কাটান। অন্য এক আশ্চর্যতর জগতের বাসিন্দা হয়ে। তাদের রোজনামচা না-ই জানা থাকতে পারে। কিন্তু লেজাণ্ড্রের গল্পের সবথেকে আশ্চর্য বিষয় এই যে এক শতাব্দীর-ও বেশি সময় ধরে মানুষ অন্য এক লেজান্ড্র-র ছবি দেখে ভেবেছে এই সেই আদ্রিয়ান-মারি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেখানে যেখানে যে বইতে লেজান্ড্রর কথা পড়েছে, যে ওয়েবসাইটে অঙ্কের ইতিহাসে লেজান্ড্রর কীর্তি পড়েছে, সেই কীর্তির পাশে যাঁর ছবি দেখেছে তিনি আদৌ গণিতজ্ঞ লেজান্ড্র নন। আদ্রিয়েন-মারির সাথে তাঁর যে কোনোরকম বাহ্যিক সাদৃশ্য ছিলো এমন-ও না। শুধু, মিল ছিল পদবীতে। ... ...
সিনেমার আলো কতরকম হয়? স্বেন নিকভিস্ট এর উত্তরে বলেছিলেন যে আলো অনেকরকম হয়। সম্ভ্রান্ত, স্বপ্নবৎ, নিঃস্ব, জীবন্ত, মৃত, পরিচ্ছন্ন, দৃঢ়, তীর্যক, যৌনময়, আবছা, বিষাক্ত, রহস্যময়, উত্তপ্ত, অন্ধকারাচ্ছন্ন, হিংস্র, প্রেমময়, পতনশীল, শান্ত এবং বিবর্ণ! নিকভিস্ট বার্গম্যানের কুড়িটি ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন। দুবারের অস্কার বিজয়ী। এই যতরকম আলোর কথা বলা হল তারমধ্যে সবচেয়ে পরিচিত আলো কোনটা জানি না! আলোর গভীরে একটা ইমেজ থাকে,যেটা শুধুই অনুভূতিগ্রাহ্য! যেমন ধরুন "শান্ত আলো"! আপাত ভাবে এর কোনো অর্থ হয় না। এবার এই "শান্ত আলো" শব্দ দুটিকে নিয়ে একটু ভাবা যেতে পারে। ধরে নিন একটা মধ্যবিত্ত গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে নিঝুম অপরাহ্নের আলো এসে পড়েছে। একটা বিড়াল ঘুমোচ্ছে। গৃহস্থের ঘর ভেতর থেকে বন্ধ! এই নিবিড়তাকে শান্ত ভাবা যেতেই পারে। অর্থাৎ আলোর চরিত্র নির্ভর করছে তার সাবজেক্টের ফর্মের ওপর। ... ...
১৯২৮ সাল নাগাদ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, শুক্রের আকাশ ঘিরে রয়েছে ঘন ও পুরু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের আস্তরণ। মেঘের সেই স্তর ভেদ করে শুক্র পৃষ্ঠ থেকে কোনো আলোই মহাকাশের বুকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে শুক্র পৃষ্ঠের কোনো আলো এসে পৌঁছতে পারে না পৃথিবীর বুকেও। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায়, শুক্র পৃষ্ঠ থেকে যদি কোনো আলো পৃথিবীর বুকে এসে না পৌঁছয়, তাহলে শুক্র গ্রহকে আমরা দেখি কী করে? ঘোলাটে সাদা রঙের যে শুক্র গ্রহকে দেখে থাকি আমরা, আদতে তা হলো শুক্র গ্রহকে ঘিরে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড মেঘমালার বহিঃস্তর থেকে প্রতিফলিত সূর্যালোক। শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্রের মাটি থেকে কোনো আলো মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে পড়ে না বলেই, শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্র ভূমিকে কখনই দেখতে পাওয়া সম্ভবপর নয়। শুক্র সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পরই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, আলোকচিত্র নয়, একমাত্র রেডার চিত্র বা রেডিও ওয়েভই পারে শুক্র পৃষ্ঠের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে। কারণ, মেঘের স্তর ভেদ করে স্বচ্ছন্দে শুক্র পৃষ্ঠে পৌঁছে যেতে পারে রেডিও তরঙ্গ। শুক্র পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে ফের মেঘের স্তর ভেদ করে বেড়িয়েও আসতেও সক্ষম সে তরঙ্গ। অথয়েব শুক্র পৃষ্ঠের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য রেডার চিত্রই একমাত্র ভরসা। আর ঠিক সেই লক্ষ্য নিয়েই শুক্রের উদ্দেশ্যে পাইওনিয়র শুক্রযান দু’টো পাঠিয়েছে নাসা। শুক্র পৃষ্টের কাছাকাছি পৌঁছে, শুক্র পৃষ্ঠের উদ্দেশ্যে রেডিও ওয়েভ নিক্ষেপ করবে দুই শুক্রযান। শুক্র পৃষ্ট থেকে সেই তরঙ্গের প্রতিফলন সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে তারা। পাইওনিয়র ভেনাস দু’টোর উপর তাই একটু বেশিই ভরসা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর বিজ্ঞানীদের মোটেও নিরাশ করে নি পাইওনিয়র ভেনাস ১ ও ২। শুক্রের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে, বহু আকাঙ্খাকিত চমৎকার কিছু রেডার চিত্র পাঠিয়েছে তারা। সেই রেডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানালেন, শুক্র পৃষ্ঠের বিশাল আয়তনের দুই উচ্চভূমিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। ৫,৬০০ কিমি ও ১০,০০০ কিমি ব্যাসবিশিষ্ট সেই উচ্চভূমি দুটোকে সহজেই শনাক্ত করা যাচ্ছে। দুটো নতুন নাম দিয়ে এবার এই উচ্চভূমি দুটোর নামকরণের কথা ভাবলেন তাঁরা। ... ...
বন্যা, নদী জলের ভাগ দখলদারি নিয়ে পারস্পরিক অসহযোগিতা ও সংঘাতের বিষয়টি ক্রমশই হাইড্রো ইম্পিরিয়ালিজিমের হাত ধরে হাইড্রো ক্যাপিটালিজমের পথ ধরেছে। প্রাকৃতিক জল শক্তির বিকাশ যে প্রকৃতপক্ষে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অঙ্গ তা বোধহয় বোঝবার সময় হয়েছে। ঊনিশ ও বিংশ শতাব্দীর ফ্রান্সে এই ধারণার জন্ম যা নদীর জলের মতোই ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য উপনিবেশগুলোতে। নিজেদের স্বার্থেই ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো একেএকে উপনিবেশগুলোর দীর্ঘ সময় ধরে প্রচলিত রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বাস্তুতান্ত্রিক যাপনের সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে ধংস করে ফেলেছে। নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থেই প্রাক্ বৃটিশ যুগের ভারতীয় কৃষি কাঠামোকে ভেঙেচুরে এক পুঁজিবাদী কৃষি ব্যবস্থার পত্তন করেছে। প্রথাগত ঋতুচক্রের সুবিধাকে নস্যাৎ করে পত্তন করেছে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি অর্থকরী বাজারি ফসলের চাষ। এজন্য নদীর জলের ওপর স্থাপিত হয়েছে একছত্র পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রণ। এখন কর্তার ইচ্ছায় চলে নদী জলের জোগান। কখন ছাড়বে আর কখন ধরবে তা তাঁরাই ঠিক করে। বন্যার প্রসাদ পায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। ... ...
১২ সেপ্টেম্বর, রাত আটটা ছত্রিশ মিনিটে হায়দ্রাবাদের ‘নিজামস ইন্সটিটিউট অফ মেডিকাল সায়েন্সেস’ হাসপাতালে জি এন সাইবাবা প্রয়াত হলেন। শোনা যাচ্ছে গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারের পরবর্তি জটিলতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আপাত ভাবে এটা একটি স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু সত্যিই কি তাই? মাত্র সাত মাস আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় নয় বছরের কারাবাসে নির্মম, অমানুষিক নিপীড়নের কারণে তাঁর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রায় বিকল হয়ে গেছিল। এটা বিস্ময়কর যে ধারাবাহিক এই যন্ত্রণাভোগের পরেও তিনি জীবিত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, “কারাগারে অমানুষিক নিপীড়নের কারণে আমার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। বারবার চিকিৎসার জন্য আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আমার শরীর আজ এক ধ্বংসাবশেষ মাত্র। আপনাদের সম্মুখে আমি জীবিত কিন্তু আমার অঙ্গপ্রতঙ্গ চুরমার হয়ে গেছে।” ... ...
সামগ্রিকভাবে, এদেশের নারী, বিশেষত রূপান্তরকামী, ভিন্ন যৌনতার মানুষদের প্রতি ঘৃণ্য সামাজিক বিরূপতা তথা পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা, নির্যাতনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই সামগ্রিক সামাজিক কণ্ঠস্বর অবশ্যই নতুন রাজনৈতিক বোধের জন্ম দেয়, যা ঠিক ক্ষমতাসীন কোনও দল বিশেষের বিরুদ্ধে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক পরিসরের সমস্ত ক্ষমতান্ধ দলগুলো এবং প্রচলিত পুরুষ আধিপত্যবাদী সমাজ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক, সর্বনিয়ন্ত্রক ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে এক গণ প্রতিবাদ। প্রথাগত রাজনৈতিক দলের বাইরে অজস্র সামাজিক সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার আন্দোলনের সংগঠন, বিশেষত চিকিৎসকদের সংগঠন, এমন কি প্রান্তিক মানুষের আওয়াজ, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে, প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে, সর্বোপরি প্রচলিত সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্বর তুলেছে, প্রায় প্রতিদিনই মিছিল নিয়ে পথের দখল নিচ্ছে। এমন বিসদৃশ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলা গণ বিক্ষোভের আঁচে দিশেহারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে, ধর্ষকের কঠোর শাস্তির জন্য বিধানসভায় বিশেষ একটি বিল (Aparajita Woman and Child (West Bengal Criminal Laws Amendment) Bill, 2024) পাশ করালেন ৩রা সেপ্টেম্বরে। মজার ব্যাপার, তিলমাত্র বিতণ্ডা না করে সভার উভয় পক্ষই সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ করেছে। বিরোধী বিজেপিরও দেখানো দরকার ছিল ধর্ষণ অপরাধ কমাতে তারাও কতো উদগ্রীব। কারণ, সম্প্রতি অসরকারী সংস্থা এডিআর-এর প্রকাশিত তথ্যে, সারা দেশের নিরিখে বিজেপির এমএলএ, এমপিরাই (১৩৪ জনের মধ্যে ৪৪ জন) যে সর্বাধিক নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত। মোদীর সময়কালে (২০১৪ থেকে ২০২২), সারা দেশে নারী নির্যাতনের হার ৩১% বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিলটির প্রয়োজন কি ছিল? ধর্ষণ অপরাধীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না প্রচলিত আইনে, নাকি কঠোর শাস্তির আইনের অভাবেই নিত্য নারী নির্যাতন হচ্ছে রাজ্যে? এর অভাবেই কি সরকারের প্রশাসন নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিরোধে, প্রতিবিধানে সেভাবে কাজ করতে কাজ করতে পারছিল না? প্রশ্নগুলোয় যাওয়ার আগে দেখে নিই কি বিশেষত্ব রয়েছে এই বিলে। ... ...
অভিযোগটা যদি দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোন ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে হয়; কিংবা দেশের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে খেপিয়ে তোলার প্রসঙ্গে হয়, নিঃসন্দেহে তা গুরুতর এবং তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোরভাবে দণ্ডনীয়ও বটে। সুতরাং, দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্র যদি কোন বিষয়কে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসে, তা রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু অনিবার্যভাবে প্রশ্ন উঠবেই, যদি দেখা যায় যে, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার খোলসের আড়ালে রাষ্ট্র যদি দেশের নাগরিক সমাজের বাক্ স্বাধীনতা ও অবাধ মতপ্রকাশের অধিকারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খর্ব করতে উদ্যত হয়। ... ...
গত ১২ই জুলাই, শুক্রবার, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পনেরোতম আন্তর্জাতিক গণিত-শিক্ষণ কংগ্রেস-এর সম্মেলন থেকে অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নকে নিরাপত্তা-আধিকারিকরা প্রহরা দিয়ে বের করে দেন। তাঁর ব্যাজ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করা হয়। কারণ হিসেবে তাঁকে বলা হয়, যে, সেদিন সকাল ন-টায় অধ্যাপক আশিস অরোরা-র বৈদিক গণিতের অধিবেশনে তাঁর করা কিছু মন্তব্যকে কিছু অন্য অংশগ্রহণকারীর শাসানিমূলক ও ভীতিপ্রদ মনে হয়েছে। কতটা আতঙ্কের উদ্রেককারিণী এই ভারতীয় গণিত-অধ্যাপক? কতটা ভয়ঙ্কর তাঁর উপস্থিতি, যার ফলে তাঁকে শিক্ষকদের সম্মেলন থেকে বের করে দিতে হয়? ‘বৈদিক গণিত’ ঠিক কীরকম বিপন্ন হয়েছিল তাঁর উপস্থিতিতে? এসব কথা জানতে, সেই অধিবেশনেরই আরেক শ্রোতা এবং ওই সম্মেলনের আরেক নিমন্ত্রিত বক্তা, ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থিওডর চাও-এর বয়ান পড়ে ফেলুন। ... ...
২০২৪ লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর চারশো পারের খোয়াব যদি সত্যি সত্যি বাস্তবায়িত হত তাহলে ২০২৫ সালে আরএসএসের শতবর্ষে সংঘকে হিন্দু রাষ্ট্র উপহার দেওয়া কিংবা আইন হিসেবে মনু সংহিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা অসম্ভব ছিল না খুব। কারণ নিজের তৃতীয় দফার সরকারে তিনি যে সংবিধান বদলাবেন এমন আভাস নরেন্দ্র মোদী নিজে এবং অমিত শাহ দিয়ে রেখেছিলেন। ... ...
কালের নিয়মে, হিংস্র মৃত্যুদানবের উন্মত্ত নেশাতে এক সময় অবসাদ এসে জমাট বাঁধে। অহর্নিশি তোলপাড়ের ক্লান্তিতে খরস্রোতা নদীর চোখ ক্ষণিকের তরে বুজে আসে। বিধ্বস্ত চরাচরে ঝুপ করে নেমে আসে শ্মশানের স্তব্ধতা। গোবর নিকানো আদুরী উঠোনময় শুধু চরে বেড়ায় স্মৃতির বিধ্বংসী খণ্ডচিত্র। সুন্দরবনের মানুষদের আছেটাই বা কি, যে হারাবে! কিঞ্চিত জমি-জিরেত, খান কয়েক গবাদি পশু, স্বপ্ন বোঝাই ডিঙি নৌকো, আর নদীর ওপারের ভয়াল বাদাবন। ... ...
আশার কথা, এই মিছরির ছুরির থেকে এবার রাষ্ট্র বেরিয়ে পড়েছে। ন্যায়, অন্যায়, ধর্ম, খাদ্য নানান সংহিতা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্র আর মুখ লুকিয়ে থাকতে রাজি নয়। দেশদ্রোহীদের কড়া হাতে শায়েস্তা করা হবে। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে দেশবিরোধিতার জন্য টেনে নিয়ে চলে যেতে পারে। কারণ রাষ্ট্র মানেই লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট রাইট। কিন্তু আগামীদিনের ভারতবর্ষ ঠিক কেমন হয়ে উঠতে পারে? ধরুন আমাদের বুকশেলফ ভরে উঠতে পারে বিভিন্ন সংহিতায়। কী খাব? তার জন্য খাদ্যসংহিতা। কী পরব? তার জন্য পোশাকসংহিতা। কী রকম চুল কাটব? তার জন্য কেশসংহিতা (পুরুষের জন্য একরকম, মেয়েদের জন্য আরেকরকম), কাকে বিয়ে করব? তার জন্য সংহিতা (বিবাহসংহিতা), কার সঙ্গে প্রেম করব? তার জন্য সংহিতা (প্রেমসংহিতা)। এর পর ধীরে ধীরে বেরোবে কাশিসংহিতা, হাঁচিসংহিতা, পাদসংহিতা, মিলনসংহিতা, কন্ডোমসংহিতা, ইত্যাদি প্রভৃতি। ... ...
এবার আমরা দেখে নেই কিভাবে চালু হতে যাওয়া নতুন আইন বিধিতে পুলিশ রাজ কায়েম করা হয়েছে। একটা উদাহরণ নেওয়া যাক, ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বাক স্বাধীনতা, সভা, সমিতির অধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। এই দিকে নজর রেখে সুপ্রিম কোর্ট বারবার ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইন বাতিল করতে বলেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছেন, সরকারের বিরোধিতা মানে রাষ্ট্রের বিরোধিতা নয়। পুরানো আইন অর্থাৎ আইপিসি ১২৪(এ) ধারায় স্থগিতাদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন কাউকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত করা যাবেনা। কিন্তু নতুন আইন অর্থাৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৫০ ও ১৫২ ধারায় কৌশলে রাষ্ট্রদ্রোহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে বক্তব্যে অথবা লিখিত, বা সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দ্বারা, বা বৈদ্যুতিন যোগাযোগ দ্বারা, অথবা আর্থিক উপায় ব্যবহার করে বা অন্যভাবে উত্তেজিত বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করে যাতে বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বা কেউ যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে উৎসাহিত করে যার দ্বারা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা বা অখণ্ডতাকে বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তবে তা উক্ত ধারায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে শাস্তির যেখানে আগে নূন্যতম ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ছিল তা নতুন আইনে নূন্যতম ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে। ... ...
আমাদের রাজ্যে সম্প্রতি শিশুচুরির গুজবে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিস এসে কোনোরকমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে না বাঁচালে এগুলি সবই লিঞ্চিংয়ের নজির হয়ে উঠত। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি, ভবঘুরে, মহিলা-ছাড় পাচ্ছেন না কেউ। যদিও সারা বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে ছেলেধরা, গরুচোর বা ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকে। এগুলি সাধারণত খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় ছোট্ট খবর হিসেবে থাকে। পুলিসও নাম-কা-ওয়াস্তে একটা তদন্ত করে কেসগুলি মিটিয়ে দেয়। এই ঘটনাগুলি গ্রামের মানুষ প্রায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘটিয়ে থাকেন। এর পেছনে যে কারণগুলি তারা দেখান তা হচ্ছে (১) পুলিসি অকর্মণ্যতা, (২) দীর্ঘসূত্রী বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা আর (৩) গ্রাম বা অঞ্চলের সুরক্ষা। ... ...
মন্দা কাটার পর ২০১১ সাল নাগাদ শুরু হয় দ্বিতীয় বিপ্লব। মল তৈরি হতে থাকে দ্রুতগতিতে। বড়, মাঝারি শহরগুলো ছেয়ে যেতে শুরু করে মলে। একটা হিসেব পাওয়া যায়, যে, ২০১৭ সালে, গোটা ভারতে ৬০০ টার মতো মল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এর বেশিরভাগটাই ২০১১র পরে। মলগুলো নানারকম ছিল, কিন্তু যদি কেউ ২০১১র পরের মলগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য মনে করে দেখেন, তো মনে করতে পারবেন, এগুলো আগের মলগুলোর থেকে আলাদা। নতুন মলগুলোয় এবং পুরোনো গুলোও বদলে ফেলা হয় এমন ভাবে, যে, সেগুলো আর শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, সময় কাটানোর জায়গা হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, অজস্র রেস্তোরাঁ, খেলার জায়গা এবং অবশ্যই একটি মাল্টিপ্লেক্স। আন্দাজ করা যায়, মলের দোকানগুলো জিনিস বেচলেও, মলগুলো আসলে বিক্রি করছিল জীবনযাত্রার ধরণ। শনিবার বা রবিবার মধ্যবিত্তরা সময় কাটাতে মলে আসবে, মলগুলোই হবে গন্তব্য, এবং লোকে এসে পড়লে পয়সা তো খরচ করবেই, এইটাই ছিল লক্ষ্য। ভারত সরকার, প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে, এই পুরো প্রক্রিয়াটার পিছনে ছিল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই পুরো সময়টাতেই বিক্রির ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল করা হয় এবং মলগুলোর একটা বড় অংশই ছিল বিদেশী পুঁজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে হঠাৎ একদিনের ঘোষণায় ভারতে চালু করে দেওয়া হয় নোটবন্দী। নগদ টাকায় লেনদেন কার্যত দীর্ঘদিনের জন্য খোঁড়া হয়ে যায়। একই সময় চালু হচ্ছিল ই-কমার্সের নানা ব্যবস্থা, অ্যাপ, এবং টাকাহীন লেনদেনের নানা ব্যবস্থা। নোটবন্দীর ক্ষেত্রে কারণ দেখানো হয়েছিল, কালো টাকা উদ্ধার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েকবছর পরে দেখা যায়, প্রায় কোনো কালো টাকাই উদ্ধার করা যায়নি, ফলত গোটা নোটবন্দীকেই একটা বৃহৎ কেলেঙ্কারি বলা যেতেই পারে। এই সময় সরকারকে সরাসরি দেখা গেছে অ্যাপ দিয়ে লেনদেনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, অ্যাপ, বড় খুচরো কোম্পানি, এবং মলগুলোর সুবিধা করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। শুধু এদেরই সুবিধা করে দিতে নিশ্চয়ই না, আরও অনেক সুবিধাভোগীও অবশ্যই ছিল, কিন্তু এরা যে সেই তালিকার অন্তর্গত, সে নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। ... ...
হাসদেও অরন্য বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির (HABSS) আহ্বায়ক, যিনি সবুজ রক্ষার লড়াইয়ে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছেন সেই ‘গোল্ডম্যান’ বা ‘গ্রীণ নোবেল’ পুরস্কার প্রাপক অলোক শুক্লা বলেছেন, “হাসদেও-আরন্দ বনাঞ্চলের হাতিদের জন্য একটি মুক্ত কারাগার উপহার দিতে চলেছে সরকার ও আদানি গ্রুপ।” কেন এটা বলছেন তিনি? তাঁর যুক্তি, রাজস্থান বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম যা কিনা আদানি গ্রুপ পরিচালনা করে তারা ‘পারসা ইস্ট ও কাঁটা বাসন’ কোল ব্লকের জন্য বরাত পেয়েছে। এরজন্য ৪ লক্ষ গাছ কেটে ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার গাছ কাটা হয়ে গেছে। অনতি বিলম্বে কাটা পড়বে আড়াই লক্ষ। হাতিরা যাবে কোথায়? শুক্লা বলেছেন, “হাসদেও অরণ্যের পূর্ব দিকে আগে থেকেই একটি কয়লা খনি আছে। দক্ষিণ পূর্বে শিল্প শহর কোরবা। দক্ষিণ পশ্চিমে হাসদেও নদ। বাকি রইল পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত যেখানে আদানি গ্রুপ কয়লা খনির জন্য গাছ কাটতে শুরু করেছে।” ... ...
UGC NET বর্তমানে এমনই এক পরীক্ষা যেখানে মেধা বা শ্রমের কোনও জায়গা নেই, থাকার মধ্যে আছে কেবল আন্দাজ এবং একমাত্র আন্দাজ। নেট-এর গণ্ডি পেরিয়ে যারা আশা করে নিজ পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে বা আপাত ভাবে JRF এর টাকায় অস্বচ্ছল বাড়িটিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে ও ভবিষ্যতে একটি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনের প্রত্যাশায় রাতের পর রাত, মাসের পর মাস পরিশ্রম করে চলেছে - তাদের স্বপ্নকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে রাষ্ট্রের মামদোবাজি। ... ...
চলতি সপ্তাহের সোমবার যোগেন্দ্র যাদব একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন, "পলশিকর সুহাস এবং আমি এনসিইআরটি-কে লিখেছি যে তারা যদি এই বইগুলি প্রত্যাহার না করে এবং আমাদের নামগুলি না সরিয়ে দেয় তবে আমাদের আইনি ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।" সোমবারই এনসিইআরটি ডিরেক্টর ডিপি সাকলানিকে সম্বোধন করা একটি চিঠিতে, দু'জন জানিয়েছেন যে তাঁরা এটা "আবিষ্কার করে হতবাক" যে এক বছরেরও বেশি সময় পরে তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন এবং সংস্থাকে তাদের নাম মুছে ফেলার অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু এনসিইআরটি আবারও তাঁদের নাম উল্লেখ করেছে। ... ...