হিন্দুস্থানে বাবর মোঘল সালতানাতের প্রতিষ্ঠা করলেন ঠিকই কিন্তু তাকে এক স্থায়ী অনন্য , বিশিষ্ট রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিচ্ছেন আকবর । সমসময়ে কি ছিল তাঁর মুল্যায়ন ? নিজের সম্প্রসারণের প্রকল্পকে হিন্দুস্থানের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন তিনি কেমন করে ? সালতানাতের আরেক বিশিষ্ট সম্প্রসারণকারী ঔরঙ্গজেব আলমগীরের সঙ্গে তাঁর তফাৎ কিসে ? ... ...
সক্কাল সক্কাল খবরের কাগজে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে বার্নিহাট এই নামটা দেখে বেশ অবাক হয়ে গেছিলাম।পাশে তিরঙ্গা জাতীয় পতাকার ছবি ধন্দ আরও বাড়িয়ে দিল সঙ্গে প্রবল অস্বস্তি , জায়গাটা চিনতে না পারায়। হাতের সামনে পাওয়া এ্যাটলাসের পাতা হাতড়াতে হাতড়াতে হাত ব্যাথা, চোখ বিগলিত। তবুও তেনার দেখা নাই। উপায়ান্তর না দেখে আমার এক ছাত্রকে ফোন করলাম। ও এখন কর্মসূত্রে অসম রাজ্যের বাসিন্দা। প্রথম প্রচেষ্টায় ওদিক থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আবার তার নম্বর মেলাতে যাব, এমন সময় আমার মুঠোফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠতেই বাটন টিপে কানের কাছে ফোনটা ধরতেই ওদিক থেকে কথা ভেসে আসে – “বার্নিহাট কোথায় ? -তা জানতেই বোধহয় ফোন করেছেন দাদা ? জায়গাটা আমাদের গুয়াহাটি থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে। অবশ্য শিলং থেকে এই শহরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। অসমের গায়ে গা লাগিয়ে থাকা মেঘালয় রাজ্যের রি- ভোই জেলায় মেঘালয় পাহাড়ের ঢাল যেখানে এসে গুয়াহাটির সমতলে মিশেছে সেখানেই এই বার্নিহাট শহর।” খট্ করে আওয়াজ তুলে কলটা কেটে যায়। বুঝতে পারি অসমে থাকার দরুণ বেচারিকে হয়তো শহরের অবস্থান জানাতেই নাজেহাল হতে হচ্ছে। ... ...
ভুয়ো এপিক নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, নির্বাচন কমিশন তখন তাঁদের গাফিলতি ঢাকার উদ্দেশ্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে মিটিং করে ঘোষণা করলো, তাঁরা আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ করিয়ে এই ভুয়ো ভোটার কার্ড সমস্যার সমাধান করতে চায়। প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সমাজ মাধ্যমে এই বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হলো। সংসদের বিরোধী দলনেতা নিজে টুইট করে লিখলেন, অবশেষে নির্বাচন কমিশন তাঁদের অভিযোগকে মান্যতা দিল এবং আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ ঘটানোর মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয়। সঙ্গে অবশ্য তিনি আরও একটা কথা যুক্ত করলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোনও ভোটার যেন বাদ না পড়েন, তা দেখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের এই সংযোগ প্রক্রিয়ায় কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে। ... ...
যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে মহম্মদবাজারের এই কয়লা খনি এলাকা ধরা হচ্ছে, সেখানে আদিবাসী, তফসিলি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস বেশি শুধু নয়, তারাই প্রায় ৯০ শতাংশ। দেওয়ানগঞ্জ, হরিণসিঙ্গা অঞ্চলের তিন হাজার পরিবারের প্রায় ২১ হাজার মানুষ প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্য নিজের এলাকা থেকে উৎখাত হবেন। যদিও তাঁরা বিকল্প বাসস্থান এবং খোলা মুখ খনিতে কাজের সুযোগ পাবেন বলে সরকার জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আবার জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি পাবেন - সরকার এমনও ঘোষণা করেছে। বিবাদ বেঁধেছে এখানেই। সরকারের এই প্রতিশ্রুতিতে গ্রামবাসীদের অধিকাংশের সায় নেই। তাঁরা কোমর বেঁধে নেমেছেন। খোলা মুখ খনিতে কতটা দূষণ হবে, কয়লা উত্তোলন ও পরিবহনের ফলে যে দূষণ হবে, তার জন্য কতটা জমির ফসল নষ্ট হবে, সে তো পরের কথা। মমতার সিঙ্গুর আন্দোলনের যে মূল কথা ছিল, মানুষ না চাইলে সরকার কোনও শিল্প প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না, সেই আপ্তবাক্যই এখন মমতা সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, বিকল্প বাসস্থান - কোনও কথাতেই চিঁড়ে ভিজছে না। মহিলারা সামনে এগিয়ে এসে পুলিশের সামনেই বলছেন, আমরা ভিটে জমি দেব না। তার জন্য দরকারে প্রাণ দেব। এটা আসলে আদিবাসী গাঁওতার সিদ্ধান্ত। ... ...
অনেকে হয়তো ভাবছেন, ভারতের স্থান কত? ২০২৩ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৬২ আর ২০২৪ সালে ভারত ১৫৯তম স্থান পেয়েছে ১৮০টি দেশের মধ্যে। আসলে কোনও দেশের সরকারই গণতান্ত্রিক নয়। ভারতে যদি হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান হয়ে থাকে, তুরস্কে তেমনি মুসলমান মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় আছে, এই সূচকে যাঁদের স্থান ভারতের একটু আগে- ১৫৮। এ যেন কে কত খারাপ হতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্বের বেশীরভাগ সরকার সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে, সেই ইন্টারনেট কারা ব্যবহার করবেন তার সীমা নির্ধারণ করেছে, অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে এবং সংবাদ ও তথ্য বহনকারী বার্তাগুলিকে দমন করেছে। ভিয়েতনামের সাংবাদিকদের বক্তব্য যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে তাকে পদ্ধতিগতভাবে বন্ধ করা হয়েছে৷ চীনে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি সাংবাদিককে আটক করার পাশাপাশি, সরকার বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা চ্যানেলের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ করেছে। অনলাইন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য সেন্সরশিপ এবং নজরদারি নীতি প্রয়োগ করে এবং সংবেদনশীল বা দলীয় লাইনের বিপরীত বলে বিবেচিত তথ্যের বিস্তার সীমিত করেছে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী সাংবাদিকদের অপমান, অসম্মান এবং হুমকি দিয়ে তাদের প্রতি ঘৃণা ও অবিশ্বাসকে উস্কে দেওয়ার কাজটাও করে চলেছে। অন্যরা মিডিয়া ইকোসিস্টেম দখলের আয়োজন করছে, তা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়ার মাধ্যমে হোক, বা বেসরকারি মালিকানাধীন মিডিয়া বন্ধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা অধিগ্রহণের মাধ্যমে হোক। জর্জিয়া মেলোনির ইতালি (৪৬ তম) - যেখানে ক্ষমতাসীন সংসদীয় জোটের একজন সদস্য দ্বিতীয় বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা (এজিআই) অধিগ্রহণ করার চেষ্টা করছেন – তার ফলে ঐ সূচকে এই বছর পাঁচটি স্থান নেমে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই প্রচারের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে চলেছে, এমনকি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার উসকানিও দিচ্ছে। সূচকে মূল্যায়ন করা দেশগুলির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি (১৩৮টি দেশ) বেশিরভাগই রিপোর্ট করেছেন যে তাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা প্রায়শই প্রচার বা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার সাথে জড়িত ছিল। এই সম্পৃক্ততাকে ৩১টি দেশে "পদ্ধতিগত বিষয়" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ... ...
বিনা ব্যয়ে শিক্ষার অধিকার আইন বলে একটি আইন হয়েছিল এই দেশে। তার পরই সকলের জন্য শিক্ষার বিষয়টা নিয়ে ভালোরকম নাড়াচাড়া হয়। স্কুলের পরিকাঠামোর কিছু উন্নতি হয়, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হয়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তো বটেই তার পরেও বিনামূল্যে বই খাতা দেওয়া হয়। মিড ডে মিল ইত্যাদি তো আছেই। এই সময় থেকে ছাত্রছাত্রী সংখ্যাও বাড়ে। যাবতীয় সরকারি দপ্তরে সংবেদনশীলতা বাড়ানো হয়, হিসাব রাখার জন্য পোর্টাল খোলা হয়, প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর ইউনিক আইডি দেওয়া হয়। ... ...
পরিবার নিরাপদ আশ্রয় হলেও, জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন একা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারও নিরাপত্তার ছাতা সরে যেতে পারে, আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবেও একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও ভবিষ্যতে কী হবে বলা যায় না। তাই নিজের টাকা-পয়সার ব্যাপারে নিজে সতর্ক থাকা জরুরি। সমীক্ষার ফলাফল বলছে, বেশিরভাগ মেয়ে অর্থ সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী নন। ২১% মেয়ে এখনো বিনিয়োগ বা সঞ্চয় বুঝতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আবার যারা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের অনেকেই পরিবারের ওপর নির্ভর করেন। সেই সঙ্গে ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়ে মেয়েদের দ্বিধা স্পষ্ট। তবে যাঁরা নিজেদের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তাঁদেরও অনেকেই কোন ঝুঁকি নেন না! জ্ঞানটি যথেষ্ট সময়-উপযোগী ও সম্পুর্ণ তো? প্রশ্ন থেকেই যায়। ... ...
কলকাতা উচ্চ আদালতের বেশ কিছু শুনানি এখন ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। আমি বেশ কটা দেখেছি এবং শুনে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। বাদী-বিবাদী সবাই বাঙালি। দুই-তিন-চার-পাঁচজন উকিল, যাঁরা তর্কবিতর্ক করছেন, সবাই বাঙালি। বিষয়বস্তু বাংলার। কিন্তু পুরোটাই হচ্ছে ইংরিজিতে। কালো কোট পরে উকিলরা বিচারকের সামনে এসে নানারকম বিচিত্র উচ্চারণে ইংরিজিতে সওয়াল করছেন। বাংলায় কোনো অপরাধ হয়েছে, কোনো বাঙালি মেয়ের উপর অত্যাচার হয়েছে, বাংলার কোনো হাসপাতালে ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন, বিচারপ্রার্থীরা আদৌ কিছু বুঝছেন কিনা তার তোয়াক্কা না করে সবটাই ইংরিজিতে। শুনলে মনে হয়, এখনও ইংরেজ জমানা চলছে, আর ছন্দ করে 'কিউকাম্বার শসা, প্লৌম্যান চাষা' মুখস্থ করছেন। ... ...
এ বছরের জুলাই মাসে নেলসন আমেনিয়া নামক এক কেনিয়ান তাঁর ব্লগে জানিয়েছেন আদানিগোষ্ঠীর আনসলিসিটেড (তথাকথিত প্রাইভেট ইনশিয়েটেড প্রোজেক্ট) প্রস্তাবটি যেদিন সকালবেলা কেনিয়া এয়ারপোর্ট অথরিটির টেবিলে রাখা হয়েছিল সেদিনই বিকেলবেলা সেটি গৃহীত হয়। এই প্রোজেক্টের খরচা বা শর্তাবলী নিয়ে কোনো দ্বিতীয় অভিমত নেওয়া হয় নি, টেন্ডার তো অনেক দূরের কথা এই ডিলে আদানির লাভ ৯০% কেনিয়ার ১০%। তিনি যতদূর জানেন কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই আদানি ভারতে এয়ারপোর্ট ম্যানেজ করার কন্ট্রাক্ট পেয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সাংবাদিক-স্বাধীনতার মাপকাঠিতে কেনিয়ার স্থান ভারতের অনেকটা ওপরে (১০২-১৫৯)। একুশে নভেম্বর পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট রুটো আদানি-চুক্তি বাতিল করার পর তাঁর সাক্ষ্যে কেনিয়ান অর্থমন্ত্রী এমবাদি বলেন এক দিনে এই প্রকল্পটি সরকার মঞ্জুর করেছিলেন জেনে তিনিও যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন। আমেনিয়া কেন তাঁর বাঁশিটি বাজালেন? তার উত্তরে আমেনিয়া জানান এর কারণ বহুবিধ- নাইরোবি বিমানবন্দর প্রকল্পে আদানির প্রস্তাব শোনার পর তিনি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দর নিয়ন্ত্রণ (স্টক ম্যানিপুলেশন) এবং হিসেবের কারচুপির (অ্যাকাউনটিং ফ্রড) বৃত্তান্ত পাঠ করেন, তারপরে তিনি অস্ট্রেলিয়ান পরিবেশসংরক্ষণ লবির একটি ইস্তেহারে সেখানকার পরিবেশবিনষ্টিকরণ, মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও আইন বিরোধী কার্যকলাপের বিস্তারিত বিবরণ পান। তখন তাঁর মনে হয়েছে জনস্বার্থে আদানির প্রস্তাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত যতই তিনি এই প্রস্তাবের গভীরে গেছেন, মনে হয়েছে এটি অত্যন্ত একপেশে। আমেনিয়া এও বলেন তিনি বাঁশি না বাজালে কেনিয়ান সরকার অথবা কেনিয়ান এয়ারপোর্ট অথরিটি আদানির তিরিশ বছরের প্রোজেক্টটি সর্ব সমক্ষে আনতেন না। একান্ত গোপনে যে চুক্তি সই হয়েছিল সেটি গোপনেই থেকে যেতো। পরে কমার্শিয়াল কন্ট্রাক্ট সই হতো, যেখানে এয়ারপোর্ট পার্কিং থেকে চেক-ইন ডেস্কের কর্মীদের মাইনে, এক বোতল পানীয় জলের মূল্য নির্ধারিত হতো। এয়ারপোর্টের উন্নয়নের কাজ শুরু হতে দেখে মানুষজন মনে করতেন এটি সরকার বানাচ্ছেন, আদানি নামক এক কনট্রাক্টর দিন মজুরির ভিত্তিতে রাজ মিস্ত্রির কাজ করেন। দু বিলিয়ন ডলারে কেনিয়ার ক্রাউন জুয়েল বিক্রি করাটা সমীচীন কিনা সেটা কি ভেবে দেখা উচিত ছিল না? এই ডিলের ব্যাপারে কত টাকা এ হাত ও হাত হয়েছে? রুয়ান্ডার কিগালি, উগান্ডার কামপালা, সুদানের জুবাসকল, প্রতিবেশী দেশের রাজধানীর গেটওয়ে, পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে কর্মব্যস্ত এই নাইরোবি বিমান বন্দর কেনিয়ার ক্রাউন জুয়েল; দু বিলিয়ন ডলারে লিজের নামে এটি বাস্তবিক বেচে দেওয়াটা কি সমীচিন হবে? খবরটি নিয়ে কানাঘুষো হলে পরে কেনিয়ান এয়ারপোর্ট অথরিটি বলেন যে তাঁরা এই প্রস্তাবের টেকনিকাল, আইনি ও আর্থিক দিক গুলি খুঁটিয়ে দেখবেন (ডকুমেন্টে সই করার পরে!)। ... ...
নোমোফোবিয়া শব্দটির প্রচলন খুব বেশি দিনের নয়। ২০০৮ সালে বৃটেনের গবেষণা সংস্থার Gov You এর সৌজন্যে ইংরেজি ‘no mobile phobia’ শব্দবন্ধটিকে কেটে ছেঁটে এই শব্দটিকে তৈরি করা হয়েছে হাতের মুঠোয় সচল মোবাইল ফোন না থাকার ভয় এবং উদ্বেগকে বোঝাবার জন্য। হালফিল সময়ে খবর কাগজ খুললেই দেখা যায় মোবাইল ফোন না থাকার ফলে অথবা অতি ব্যবহারের আসক্তি থেকে ছেলে মেয়েদের দূরে সরে থাকার জন্য বকাঝকা করা হলেই, কি ভাবে তারা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে কোনো রকম চিন্তা না করেই। ডিজিটাল মাধ্যমের ওপর ক্রমশই আমাদের নির্ভরতা বাড়ছে। জীবন হয়ে উঠেছে অ্যাপস নির্ভর। আর সেই অবকাশে আমাদের, বিশেষ করে অল্পবয়সীদের, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শয়নে স্বপনে জাগরণে আজ মুঠো বন্দি এই উপকরণটি হয়ে উঠেছে সর্বক্ষণের সঙ্গী। আর এই কারণেই মোবাইল ফোনকে ঘিরে বাড়ছে তীব্র আসক্তি। ... ...
কালিদাসের জীবনের প্রেক্ষাপটে হিন্দি নাট্যকার মোহন রাকেশ (১৯২৫-১৯৭২) ১৯৫৮ সালে ‘আষাঢ় কা এক দিন’নাটকটি রচনা করেন। এই নাটকটি হিন্দি ভাষার প্রথম আধুনিক নাটক হিসেবে স্বীকৃত হয়। পরের বছর ১৯৫৯ সালে সেরা নাটক হিসেবে ‘সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার’ লাভ করে। এই নাটকটি থেকে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মনি কাউল (১৯৪৪-২০১১) ১৯৭১ সালে নির্মাণ করেন ‘আষাঢ় কা এক দিন’ ছবিটি। কাউল মনে করতেন ইউরোপের রেনেসাঁর পর শিল্প সম্পর্কে বিশেষত ভিস্যুয়াল কালচারের ব্যাপারে আমাদের উপলব্ধিতে প্রভূত পরিবর্তন আসে। বলা-বাহুল্য ভিস্যুয়াল কালচারের চৌহুদ্দিতে চলচ্চিত্র নবতম, রেনেসাঁর সময় তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। রেনেসাঁর সময় এক নতুন ধরনের পারস্পেক্টিভ বা দৃষ্টিকোণের জন্ম হয়। এই দৃষ্টিকোণ স্থানকে নতুন রূপে আত্মস্থ করে, যেখানে ফোরগ্রাউন্ড মিডলগ্রাউন্ড ব্যাকগ্রাউন্ডের হাত ধরে বাস্তবতার এক নতুন ধরনের অর্থের জন্ম হয়। এমনকি সঙ্গীত ও সাহিত্যেও পরিবর্তন আসে। বহু পূর্বের গ্রীক সাহিত্যে যেমন একটা নতুন ফর্ম ছিল - যাকে বলা হয় যুক্তি, প্রতি-যুক্তি থেকে সমাধান। আমাদের দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতার জন্য যেমন দুটি সমান্তরাল সরলরেখাকে আমরা শেষে দূরে মিলিত হতে দেখি, এই সমাধান বা ক্লাইম্যাক্সও বহুদিন ধরে লালিত ঐ-রকম একটি শৈল্পিক ধারণা। ... ...
ইংরেজ পূর্ব আফ্রিকায় প্রথমে উগান্ডায় ঘাঁটি গেড়েছিল; চমৎকার সবুজ দেশ, হ্রদে ভরা: চার্চিল বলেছিলেন এ এক রূপকথার দেশ। হাজার মাইল দূরের সমুদ্র বন্দর মোমবাসা থেকে কাম্পালা অবধি রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৯৬ সালে; এই রেল প্রকল্পে অর্থ লগ্নির বিতর্কে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হেনরি লাবুশেরে ওপরে উদ্ধৃত তির্যক মন্তব্যটি করেছিলেন! ততদিনে ব্রিটিশ রাজ ভারতে বিশ হাজার মাইল রেললাইন পেতে ফেলেছে তাতে লাভ হয়েছে প্রচুর কিন্তু আফ্রিকায় সেটা কতটা সঙ্গত হবে এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেদিন লন্ডনের ওয়েস্টমিনসটারে বসে একে পাগলের লাইন মনে হলেও ভবিষ্যতে পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডের লগ্নির আয় দ্বিগুণ হবে এই আশায় ব্রিটিশ সরকার প্ল্যান মঞ্জুর করেছিলেন। কোনো অজ্ঞাত কারণে সেই রেলপথ থেমে যায় লেক ভিক্টোরিয়ার কূলে, কিসুমুতে কিন্তু রেল লাইন বরাবর জনপদগুলি জুড়ে গিয়ে দেখা দিলো একটি নতুন দেশ, কেনিয়া! রেল নির্মাণ কর্তৃপক্ষ মাঝ পথে কর্ম বিরতির জন্য একটি ক্যাম্প বানিয়েছিলেন, কালে সেটি এক জনপদে পরিণত হল, আজ সেটি পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম শহর, নাইরোবি(মাসাই শব্দ- শীতল জল, কুল ওয়াটার)! তখনকার পূর্ব আফ্রিকার ব্রিটিশ কমিশনার চার্লস এলিওট বলেছিলেন, “কোনো দেশে রেলওয়ে বানানো আশ্চর্য কিছু নয় কিন্তু কোন রেলওয়ে থেকে একটা দেশ বনে গেল সেটা নিঃসন্দেহে আশ্চর্যের কথা”। মোমবাসা জুড়ল পাঁচশ মাইল দূরের কিসুমুর সঙ্গে- কেনিয়ার জন্ম হলো। ... ...
ইতিহাসে নোবেল পুরস্কার হয় না, কিন্তু এবারের অর্থনীতির নোবেল অনেকটাই ইতিহাস ঘিরে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারে গাণিতিক বিষয়েরই প্রাধান্য- রাশিবিজ্ঞান, গেম থিওরি, ফিনান্সিয়াল ম্যাথমেটিক্স। ২০২৪এ অর্থনীতির নোবেল পেলেন দারন আসেমোগলু (Daron Acemoglu), জেমস এ. রবিনসন (James Robinson) আর সাইমন জনসন (Simon Johnson)। বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন - সাধারণ মানুষের সুখসমৃদ্ধিতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানব্যবস্থা কী ধরণের ভূমিকা পালন করেছে এবং করতে পারে। এঁদের মধ্যে প্রথম দুজনের লেখা একটা উল্লেখযোগ্য বই হল "Why Nations Fail: The Origins of Power, Prosperity, and Poverty"- অর্থনীতির চেয়ে বইটিকে ইতিহাসের বইই বেশি করে বলা যায়। বইটিতে দারন আসেমোগলু এবং জেমস এ. রবিনসন দেখিয়েছেন কেন কিছু রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়, আর অন্যরা দারিদ্র্যের জালে আটকে থাকে। তাঁদের মতে, একটি দেশের সাফল্যের মূল কারণ হল তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক প্রতিষ্ঠান (inclusive institutions) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেয়, এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনে। এর বিপরীতে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান (extractive institutions) ক্ষমতা ও সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, আর সমাজকে অসাম্য, স্থবিরতা এবং ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়। ... ...
একখানা সাত-বাসি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। রাজা যাবেন যুদ্ধে। রণসজ্জা প্রস্তুত। কিন্তু বাদ সেধেছেন রাজজ্যোতিষী। রণক্ষেত্রে রাজার সাক্ষাৎ মৃত্যুযোগ নাকি দেখতে পাচ্ছেন তিনি! রাজজ্যোতিষীর গণনাকে রাজা অব্যর্থ বলে ভাবেন। সব কাজেই নেন তাঁর পরামর্শ। এবারেও তাঁর সাবধানবাণী ফেলতে পারছেন না। এদিকে সেনাপতি রেগে কাঁই। সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র, রণকৌশল – সব কিছুতেই প্রতিপক্ষের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থেকেও এভাবে রণে ভঙ্গ দিতে তাঁর বেজায় আপত্তি। রাজজ্যোতিষীর ডাক পড়ল রাজসভায়। আবারও রাজার মৃত্যুযোগ ঘোষণা করে সর্বসমক্ষে তিনি সগর্বে জানান যে, তাঁর গণনা কখনও ভুল হয় না। “বটে!”, সেনাপতি শুধোন, “তা আপনার নিজের মৃত্যু বিষয়ে কোষ্ঠীতে কিছু লেখেনি?” রাজজ্যোতিষী ঝটপট উত্তর দেন, “লিখেছে বই-কি, সেনাপতি! গণনা করে দেখেছি যে, বাঁচব আরও বহু বছর। থুত্থুড়ে বুড়ো হয়েই মরব আমি।” সেনাপতি মৃদু হেসে বলেন, “না গো মাননীয় মহাশয়, আপনি আর এক মুহূর্তও বাঁচবেন না”, এবং কথাটা শেষ হওয়ার আগেই চকিতে কোমরে গোঁজা তরোয়ালটা খাপ থেকে বের করেই রাজজ্যোতিষীর কাঁধ লক্ষ্য করে চালিয়ে দেন নিখুঁত নিশানায়। ঘচাং করে ধড় থেকে মুণ্ডুটা আলাদা হয়ে যায়.. গল্পটা সেকেলে হলেও এর নৈতিক উপদেশটুকুর প্রয়োজন এখনও ফুরোয়নি, অন্তত সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষার খবর তেমনই ভাবাচ্ছে। গোড়াতেই সেগুলো একটু দেখে নিলে মন্দ হয় না। ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্যোতিষ-বাণিজ্যের মোট বহরটা ছিল প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাপে এবং তা বার্ষিক প্রায় ৬ শতাংশ হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জন্মছক দেখে ভাগ্যগণনা ছাড়াও এই সওদার মধ্যে আছে নিউমেরোলজি, পামিস্ট্রি, ট্যারট কার্ড গণনা, বাস্তুশাস্ত্র ইত্যাদির পরামর্শ-খরচ এবং মহার্ঘ গ্রহরত্নের বিক্রিবাটার হিসেব। জ্যোতিষশাস্ত্রের এই বিপুল বাজারে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছেন গড়ে লাখখানেক করে নতুন জ্যোতিষী [Allied Market Research 2023]। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় বিশ্বখ্যাত পিউ ফোরাম জানিয়েছিল যে, মার্কিন মুলুকে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ জ্যোতিষে ঘোর বিশ্বাসী [Gecewicz 2018]। ব্রিটেনে এই বিশ্বাস কিছুটা কম (১৯%) হলেও ইউরোপের অনেক দেশেই জ্যোতিষে আস্থাশীল মানুষের শতকরা হিসেব মার্কিনীদের মতোই, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি। যেমন, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়ামে তা ৩০ শতাংশের ওপরে। ইউরোপের অনেক দেশেই প্রতি তিনজনের একজন মানুষ ভাগ্যে বিশ্বাস করেন [PEW Research Center 2018: 135]। ভারতের চিত্র অবশ্য আরও ভয়াবহ। ২০২১ সালের পিউ-সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, এদেশে ভাগ্যবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ এবং জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন শতকরা ৪৪ জন ভারতীয় [Sahgal et al 2021: 206]। আরও একটি পরিসংখ্যান তাৎপর্যপূর্ণ যে, কোভিড অতিমারির পর থেকে জ্যোতিষে বিশ্বাস ও জ্যোতিষ ব্যবসার পালে যেন একটা ধাক্কা লেগেছে, ধাক্কাটা এসেছে প্রধানত জ্যোতিষের অনলাইন বাজারের হাত ধরে। কাজেই, বিষয়টিকে নিয়ে একটু চর্চা করার দরকার আছে। ‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ (astrology) শব্দটার গায়ে বেশ-একটা জ্যোতির্বিজ্ঞানের (astronomy) গন্ধ মাখানো আছে! অনেকেই দুটোকে এক বলে ভাবেন। এ হেন ভ্রান্তিকে গোড়াতেই শুধরে নেওয়া দরকার। তবে কেবল এটুকু হলেই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও যখন বিষয়টিকে চর্চার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন বিজ্ঞান না-হোক, যে কোনও প্রকারের জ্ঞানচর্চার দিক থেকেও এর আদৌ কোনও মূল্য আছে কিনা, খতিয়ে দেখা দরকার তা-ও। এরই সঙ্গে, ফলিত জ্যোতিষ আদৌ ফলে কিনা, তার উত্তরও আমাদের পেতে হবে। ... ...
সেদিন সন্ধেবেলায় সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছি, হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি দরজার সামনে বাপি দাঁড়িয়ে আছে। চাবি এনে দরজা খুলতে খুলতেই প্রশ্ন করি – “ কী ব্যাপার বাপি ? হঠাৎ এমন সময়ে?” ম্লান হেসে বাপি উত্তর দেয় – “এই তোমার কাছে এলাম একটু পরামর্শের জন্য।” পরামর্শ? তাও আবার আমার মতো এক অচল গাড়ির গাড়োয়ানের কাছে?” “তুমি হলে মাস্টারমশাই মানুষ, তোমার সঙ্গে কথায় আমি পেরে উঠবো না।” – বেশ বিনয় করে কথাটা বলে বাপি। এই অবসরে আমার স্ত্রী বাপির জন্যও এক পেয়ালা চা এনে হাজির করেছেন। সেই কাপে ঠোঁট ঠেকিয়ে বাপি বলে, –“সামনের পরবের ছুটিতে বাড়ির সবাই মিলে একটু বেড়াতে যাবো বলে ঠিক করেছি।” বাপি মনের কথা সবটা বলে উঠতে পারে না, আমার গিন্নি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠেন, – “ বাহ্! এতো খুব ভালো কথা। যা ,যা, ঘুরে আয়। আমিতো তোর কাকুকে বলে বলে হয়রান হয়ে গেলাম। কতদিন বাড়ির বাইরে যাওয়া হয়না। তাই কোথায় যাবি ঠিক করলি? পাহাড় না সমুদ্র?” এক নাগাড়ে এতো কথা শুনে বাপিতো একরকম নাজেহাল। আমতা আমতা করে বাপি বলে,-- “এখনো তা ঠিক করে উঠতে পারিনি কাকিমা। মেয়েটা এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে ওর দাবি তাই সবার আগে। ওর ইচ্ছে এবার পাহাড় দেখতে যাবে, অন্যদিকে ওর মায়ের ইচ্ছে সমুদ্র দেখতে যাবে। আমি তো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কোথায় যাব। এই উৎসবের সময় এলেই আমার বুক , মাথা সব ধরফর করতে শুরু করে। একেতো পরবের জন্য কেনাকাটার খরচ,তার ওপর এই বেড়াতে যাওয়ার খরচ! সামলাবো কী করে,তা ভেবেই আমার ঘুম উড়েছে। কাকু, আমায় একটা উপায় বাতলে দাও দেখি।” ... ...
আমার গপ্পের নায়ক এমন একজন লোক যার সাথে "Prince of Mathematics" গাউস দীর্ঘদিন প্রায়োরিটি ডিস্পিউটে জড়িয়েছিলেন লিস্ট স্কোয়ারের আবিষ্কার নিয়ে। সেই নিয়ে বিস্তর চিঠিচাপাটি, মান-অভিমান, একশো বছর পরেও গণিত বা রাশিবিজ্ঞানের ইতিহাসের আগ্রহের ব্যাপার। তিনি আদ্রিয়ান-মারি লেজান্ড্র (নাকি লেজঁদ্র?) (জন্ম - ১৭৫২, মৃত্যু - ১৮৩৩।) অঙ্কের ইতিহাসে তার-ও কীর্তি কম নয়। চট করে ভাবলেই মনে পড়ছে - লেজান্ড্র পলিনমিয়াল, লেজাণ্ড্র ট্রান্সফর্মেশন, লেজাণ্ড্র ডিফারেনশিয়াল ইকোয়েশন, লেজান্ড্র সিম্বল, লেজান্ড্র কণ্ডিশন ফর ক্যালকুলাস অফ ভেরিয়েশন, লেজান্ড্র রিলেশন ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কিছু। ভদ্রলোক এর-ই পাশাপাশি নাম্বার থিওরি, এলিপটিকাল ইন্টিগ্রাল, ক্যালকুলাসের উপর বই লিখেছিলেন বেশ কিছু, আর ইউক্লিডের জিওমেট্রির মালমশলা নিয়ে লিখেছিলেন বেশ জনপ্রিয় পাঠ্যবই, একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল সেটি। তাও লেজান্ড্র জীবদ্দশায় প্রচুর খ্যাতি পেয়েছিলেন এ কথা লিখলে মিথ্যা বলা হবে। অন্যান্য সমমানে বিখ্যাত গাণিতিকদের মত তার 'সমগ্র' বেরোয়নি। এমন কি, ব্যক্তি লেজান্ড্র কেমন ছিলেন সে বিষয়ে আমাদের জানা আজ-ও অতি অল্প। ছাত্র অথবা বন্ধুদের দু-একটি চিঠির ভেতর যেটুকু যা ধরা যায় তাইই। তবে, সে এমন কিছু আশ্চর্য হয়তো না। কত বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কি অঙ্কবিদ সারাজীবন নিভৃতচারী হয়ে কাটান। অন্য এক আশ্চর্যতর জগতের বাসিন্দা হয়ে। তাদের রোজনামচা না-ই জানা থাকতে পারে। কিন্তু লেজাণ্ড্রের গল্পের সবথেকে আশ্চর্য বিষয় এই যে এক শতাব্দীর-ও বেশি সময় ধরে মানুষ অন্য এক লেজান্ড্র-র ছবি দেখে ভেবেছে এই সেই আদ্রিয়ান-মারি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেখানে যেখানে যে বইতে লেজান্ড্রর কথা পড়েছে, যে ওয়েবসাইটে অঙ্কের ইতিহাসে লেজান্ড্রর কীর্তি পড়েছে, সেই কীর্তির পাশে যাঁর ছবি দেখেছে তিনি আদৌ গণিতজ্ঞ লেজান্ড্র নন। আদ্রিয়েন-মারির সাথে তাঁর যে কোনোরকম বাহ্যিক সাদৃশ্য ছিলো এমন-ও না। শুধু, মিল ছিল পদবীতে। ... ...
সিনেমার আলো কতরকম হয়? স্বেন নিকভিস্ট এর উত্তরে বলেছিলেন যে আলো অনেকরকম হয়। সম্ভ্রান্ত, স্বপ্নবৎ, নিঃস্ব, জীবন্ত, মৃত, পরিচ্ছন্ন, দৃঢ়, তীর্যক, যৌনময়, আবছা, বিষাক্ত, রহস্যময়, উত্তপ্ত, অন্ধকারাচ্ছন্ন, হিংস্র, প্রেমময়, পতনশীল, শান্ত এবং বিবর্ণ! নিকভিস্ট বার্গম্যানের কুড়িটি ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন। দুবারের অস্কার বিজয়ী। এই যতরকম আলোর কথা বলা হল তারমধ্যে সবচেয়ে পরিচিত আলো কোনটা জানি না! আলোর গভীরে একটা ইমেজ থাকে,যেটা শুধুই অনুভূতিগ্রাহ্য! যেমন ধরুন "শান্ত আলো"! আপাত ভাবে এর কোনো অর্থ হয় না। এবার এই "শান্ত আলো" শব্দ দুটিকে নিয়ে একটু ভাবা যেতে পারে। ধরে নিন একটা মধ্যবিত্ত গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে নিঝুম অপরাহ্নের আলো এসে পড়েছে। একটা বিড়াল ঘুমোচ্ছে। গৃহস্থের ঘর ভেতর থেকে বন্ধ! এই নিবিড়তাকে শান্ত ভাবা যেতেই পারে। অর্থাৎ আলোর চরিত্র নির্ভর করছে তার সাবজেক্টের ফর্মের ওপর। ... ...
১৯২৮ সাল নাগাদ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, শুক্রের আকাশ ঘিরে রয়েছে ঘন ও পুরু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের আস্তরণ। মেঘের সেই স্তর ভেদ করে শুক্র পৃষ্ঠ থেকে কোনো আলোই মহাকাশের বুকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে শুক্র পৃষ্ঠের কোনো আলো এসে পৌঁছতে পারে না পৃথিবীর বুকেও। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায়, শুক্র পৃষ্ঠ থেকে যদি কোনো আলো পৃথিবীর বুকে এসে না পৌঁছয়, তাহলে শুক্র গ্রহকে আমরা দেখি কী করে? ঘোলাটে সাদা রঙের যে শুক্র গ্রহকে দেখে থাকি আমরা, আদতে তা হলো শুক্র গ্রহকে ঘিরে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড মেঘমালার বহিঃস্তর থেকে প্রতিফলিত সূর্যালোক। শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্রের মাটি থেকে কোনো আলো মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে পড়ে না বলেই, শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্র ভূমিকে কখনই দেখতে পাওয়া সম্ভবপর নয়। শুক্র সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পরই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, আলোকচিত্র নয়, একমাত্র রেডার চিত্র বা রেডিও ওয়েভই পারে শুক্র পৃষ্ঠের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে। কারণ, মেঘের স্তর ভেদ করে স্বচ্ছন্দে শুক্র পৃষ্ঠে পৌঁছে যেতে পারে রেডিও তরঙ্গ। শুক্র পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে ফের মেঘের স্তর ভেদ করে বেড়িয়েও আসতেও সক্ষম সে তরঙ্গ। অথয়েব শুক্র পৃষ্ঠের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য রেডার চিত্রই একমাত্র ভরসা। আর ঠিক সেই লক্ষ্য নিয়েই শুক্রের উদ্দেশ্যে পাইওনিয়র শুক্রযান দু’টো পাঠিয়েছে নাসা। শুক্র পৃষ্টের কাছাকাছি পৌঁছে, শুক্র পৃষ্ঠের উদ্দেশ্যে রেডিও ওয়েভ নিক্ষেপ করবে দুই শুক্রযান। শুক্র পৃষ্ট থেকে সেই তরঙ্গের প্রতিফলন সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে তারা। পাইওনিয়র ভেনাস দু’টোর উপর তাই একটু বেশিই ভরসা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর বিজ্ঞানীদের মোটেও নিরাশ করে নি পাইওনিয়র ভেনাস ১ ও ২। শুক্রের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে, বহু আকাঙ্খাকিত চমৎকার কিছু রেডার চিত্র পাঠিয়েছে তারা। সেই রেডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানালেন, শুক্র পৃষ্ঠের বিশাল আয়তনের দুই উচ্চভূমিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। ৫,৬০০ কিমি ও ১০,০০০ কিমি ব্যাসবিশিষ্ট সেই উচ্চভূমি দুটোকে সহজেই শনাক্ত করা যাচ্ছে। দুটো নতুন নাম দিয়ে এবার এই উচ্চভূমি দুটোর নামকরণের কথা ভাবলেন তাঁরা। ... ...