আলাদা করে না , এখানেই লিখি।
ভাষা মূলত যোগাযোগের মাধ্যম। কখনো কখনো মনের ভাবপ্রকাশের মাধ্যমও। ভাষার অনেক রকম লিখিত রূপের মধ্যে একটা ছোট সাবসেট হল সাহিত্য। কিন্তু শিক্ষা পদ্ধতিতে আমাদের এটা শেখানো হয় না। জোর দেওয়া হয় সাহিত্য পড়ার ওপর। ফলে পড়ুয়ারা নোট মুখস্ত করে পরীক্ষা দিয়ে ভাষাটা ভুলে যায়। এই দুটো আলাদা ভাবে শেখানো উচিত। সাহিত্য সবার জন্য নয় , যার ভাল লাগবে সে নেবে। কিন্তু ভাষাটা সবার জন্যই শেখাতে হবে।
রাজ্যের ভাষা শেখানো উচিত ইউরোপের ভাষাগুলোর CEFR অনুসরণ করে। এই পদ্ধতিতে নানারকম লেভেল হয় , সোজা থেকে কঠিনের দিকে যায় এবং পড়া / শোনা / বলা / লেখা চারটে জিনিসেরই ওপর সমান জোর দেওয়া হয়। এবং ভাষাশিক্ষা শেষ হলে ক্লাস এইট/টেনের পর একটা পরীক্ষা নিয়ে সেই লেভেলের সার্টিফিকেট পড়ুয়াকে দেওয়া উচিত। যেটা পরে সরকারী চাকরির পরীক্ষা ইত্যাদিতে দেখা হবে।
এখানকার বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে সঠিক ভাষা শোনা এবং বলার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়না। ফলে 'কেন কি' , 'হাত ছুটে গেল' , 'আমি একটা ভাল লোক নয়' ইত্যাদি ভুলভাল জিনিস কানে আসে। কালকে সিবিএসি, আইসিএসইর বাংলা পাঠক্রম খুলে দেখলাম একই ব্যাপার - বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সাহিত্য পড়ার ওপর। জিনিসটা ইংরেজির ক্ষেত্রেও এক। ব্যবহারিক ইংরেজি বা ব্যবহারিক বাংলা শেখানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত, যেমন খবরের কাগজ থেকে আনসিন তুলে দেওয়া , ক্লাসে ভাষাটা ঠিকঠাক শোনা এবং বলতে পারা, ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ লেখা, ছোট ছোট কথোপকথন। যে ক্লাস এইটের পড়ুয়া বাংলায় জটিল বাক্যই হয়ত পড়তে বা লিখতে পারেনা তাকে মেঘনাদবধ , কপালকুণ্ডলা এসব পড়ালে বুঝবে কি করে।
বাইরে পড়তে যেতে চাইলে যে আইএলটিএস , জিআরই , টোয়েফল দিতে হয় সেগুলোর সঙ্গেও থমাস হার্ডি বা ওয়ার্ডসওয়ার্থ পড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যবহারিক দিকটা দেখা হয়। একই কথা UPSC র জন্যেও। ইংরেজি এবং বাইশটি ভারতীয় ভাষার মধ্যে যেকোনো একটি ভাষার পেপারে পাস করা বাধ্যতামূলক। সেই পরীক্ষার প্রশ্নে এলিয়টের ওয়েস্ট ল্যান্ডের সারসংক্ষেপ লিখতে দেওয়া হয় না। ক্লাস টেন স্ট্যান্ডার্ডের প্রবন্ধ , প্যারা অনুবাদ , ব্যাকরণ ইত্যাদির ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়।
ভাষা চর্চার বিষয়। পিথাগোরাসের উপপাদ্য নয় যে একবার পড়লে সূত্রটা সারাজীবন মনে থাকবে। চর্চা না করলে ভাষা ভুলে যাবেন। ওই বাইরে যাবার পরীক্ষাগুলোও যেমন দু বছর বাদে বাদে তামাদি হয় , আবার পরীক্ষাটা দিতে হয় লেভেলটা বোঝার জন্য। অন্য কোনো ভাষার আগ্রাসন আটকাতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে ওই ভাষাটা কিভাবে ছড়াচ্ছে। হিন্দির ব্যাপারটা এরকম না যে প্রেমচাঁদ আর কমলেশ্বরের বই ঘরে ঘরে রাখা হচ্ছে , জিনিসটা তো ছড়াচ্ছে সিনেমা গান ইত্যাদির মাধ্যমে। সেগুলো কিন্তু শোনা / বলার ব্যাপার। সাহিত্যের ব্যাপার নয়। অতএব যে রাজ্যে কেউ থাকে তাকে সেই রাজ্যের ভাষাটা বাধ্যতামূলক খেলাচ্ছলে , ওয়ার্কশপের মত শেখাতে হবে যাতে ভাষা শেখানো আরো ইনক্লুসিভ হয়। কিন্তু আমরা জানি এসব কিছু হবেনা , অতএব ...