এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • একদিন শিখরভূমে -- উন্নয়নের জোয়ারে বিপর্যয়ের নীরব সাক্ষী তেলকুপি বা পঞ্চকোট 

    Dipankar Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০১৯ বার পঠিত
  • "কাটিলা মহেন্দ্র মর্ত্ত্যে বজ্র প্রহরণে
    পর্ব্বতকুলের পাখা; কিন্তু হীনগতি
    সে জন্যে নহ হে তুমি, জানি আমি মনে,
    পঞ্চকোট! ... তেয়াগি তোমারে
    গিয়াছেন দূরে দেবী, তেঁই হে! এ স্থলে,
    মনোদুঃখে মৌনভাব তোমার; কে পারে
    বুঝিতে, কি শোকানল ও হৃদয়ে জ্বলে?
    মণিহারা ফণি তুমি রয়েছ আঁধারে।"

    বছর কয়েক আগে এমনই এক শীতের মরসুমে পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোট থেকে ফিরে এসে উপলব্ধি করেছিলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন লিখেছিলেন, "মণিহারা ফণি তুমি রয়েছ আঁধারে।"
    দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক দশকও হয়নি।  টেলিফোন, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ার এই তাৎক্ষণিক দুনিয়ায় বসে কল্পনা করাও কঠিন সে সময়ের পরিস্থিতি।  পরিবেশ এবং হেরিটেজ-সংরক্ষণ, জনজাতির জীবিকা ও ঐতিহ্য রক্ষার মতো বিষয়গুলি জনপরিসরের চর্চায় তখন উঠে আসেনি। সংবাদমাধ্যমের এই নজরদারিও তখন ছিল না। সেই কারণেই উত্তরকাশী জেলায় চারধাম মহাসড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গ ধস বা তারও আগের বছরগুলিতে উত্তরাখন্ডে ক্রমাগত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে যে আশঙ্কা ও শোরগোল তৈরি হয়েছে তার ছিঁটেফোঁটাও ছিল না যখন এই তথাকথিত উন্নয়নের দাপটেই আমাদের এই বাংলার পুরুলিয়াতেই কার্যত নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেল এক প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক সব নিদর্শন।   
      
    স্কুল-পাঠ্য ভূগোল বইতে আমরা সরল মনে পড়ে গেছি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কথা।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি ভ্যালি অথরিটির আদলে গঠিত দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডি ভি সি) তত্ত্বাবধানে নদী-বাঁধ নির্মাণের 'গৌরবময়' কৃতিত্ব।  চীনের হোয়াং হো-র সঙ্গে তুলনা টানা 'দুঃখের নদ' দামোদরের বন্যা ঠেকাতে এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রী নেহরুর উদ্বোধন করা পাঞ্চেত বাঁধের ‘উজ্জ্বল’ কাহিনী।  অথচ তখন ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি পাঞ্চেত জলাধার নির্মাণের মাসুলটা ছিল কী ভয়াবহ।  ১৯৫৩ সালে এজন্যে অধিগ্রহণ করতে হয়েছিল শতাধিক গ্রামের ৩৪০০০ একর জমি।  ফলে অন্তত সাড়ে ৭৩ হাজারেরও বেশি পরিবারের জীবন ও জীবিকা তো  বিপন্ন হয়েছেই।  আর সেই সঙ্গে দামোদরের জলে প্লাবিত হয়ে সলিল সমাধি ঘটেছে প্রাচীন তৈলকম্প সাম্রাজ্যের রাজধানী তেলকুপিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে নির্মিত পাল-সেন যুগের শৈব ও জৈন ধর্ম-সংস্কৃতির মূল্যবান ঐতিহ্যবাহী বহু মন্দির। দামোদরের দক্ষিণ তীরবর্তী মন্দিরময় সেই এলাকাটি পরিচিত ছিল ভৈরবস্থান নামে। পঞ্চকোট রাজত্ব ছিল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। এমন বিপর্যয় নিয়ে সোচ্চার হওয়ার মতো কোনও জন-আন্দোলন তখন গড়ে ওঠে নি।  কাজেই প্রাচীন এক সংস্কৃতির পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো কত সহজে সরকারি উদাসীনতায় ক্রমে চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেল।


    গড় পঞ্চকোট -- পঞ্চরত্ন মন্দির

    শীত পড়তেই প্রতি বছর ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার মতো পর্যটকদের ঢল নামে পুরুলিয়াতেও। অযোধ্যা পাহাড়, মুরগুমা, বড়ন্তি, কাশীপুর রাজবাড়ি এবং গড় পঞ্চকোট জনপ্রিয় গন্তব্য। সেখানে গাছপালা ঘেরা প্রচুর সবুজের  মাঝে যে বেসরকারি রিসর্টে  আদিবাসী আলপনায় সাজানো খড়ের চাল দেওয়া মাটির বাড়িতে ছিলাম তার নাম ছিল 'তেলকুপি'। আর সব পর্যটকের মতোই আমরাও সেবারে পাহাড়ের কোলে রিসর্টের বাগানে গোল হয়ে বসে সকলে মিলে গপ্পো করেছি, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছি, পড়ন্ত বিকেলে একটু দূরে গড় পঞ্চকোটে হাল আমলে সংস্কার হওয়া পঞ্চরত্ন মন্দির দেখতে গেছি।  পরদিন কুয়াশা-মাখা ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে টাটকা খেজুর রস খেয়েছি, রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি দেখেছি কিন্তু তখনও তেলকুপির আসল তাৎপর্য বা পঞ্চকোট সাম্রাজ্যের প্রাচীন ঐতিহ্য বা ইতিহাসের কথা, পাঞ্চেত বাঁধ নির্মাণের দরুন প্রাচীন মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা কিছুই জানতাম না। কলকাতায় ফিরে আসার পর কৌতূহল বশতঃ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে সব তথ্য পেলাম তা রীতিমতো আকর্ষণীয়, চমকপ্রদ এবং একইসঙ্গে দুৰ্ভাগ্যজনক।  প্রাচীন পঞ্চকোট সাম্রাজ্যের ইতিবৃত্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস, কিংবদন্তি এবং লোকশ্রুতি।

    ব্রিটিশ আমলে পুরুলিয়া ছিল মানভূম জেলার অন্তর্গত। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, বর্ধমান মহাবীর পরেশনাথ পাহাড়ে যাওয়ার সময় মানভূমের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন। তাই ভূখণ্ডটি ব্রজভূমি নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে মহাবীরের অনুগামীরা এই অঞ্চলে বিভিন্ন দেব দেউল নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন সে সময়কার জৈন ব্যবসায়ীরা। এই সব জৈন ব্যবসায়ী আকরিক তামা, তৈলবীজ প্রভৃতি রপ্তানি করতেন। সেকালের বিখ্যাত নদী বন্দর ছিল তৈলকম্প বা তেলকুপি। তৈলকম্প শুনে তেলের অনুষঙ্গের কথা মনে আসে। তবে চাণক্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী 'তৈল' শব্দের আলাদা একটি অর্থ হল কর। আর 'কম্প' বা 'কাম্পান' হল পরগণা বা প্রশাসনিক এলাকা। তৈলকম্প দেশের শাসককে কর দিত।  তৈলকম্পের রাজা ছিলেন রুদ্রশিখর। সন্ধ্যাকর নন্দী তাঁর 'রামচরিতম' কাব্যে অসম সাহসী ও সমরকুশলী রাজা হিসেবে রুদ্রশিখরের প্রশস্তি করেছেন। রুদ্রশিখর জৈন ব্যবসায়িদের প্রচুর সহযোগিতা করতেন । ওই ব্যবসায়ীরা মানবাজারের কাছে দুটি তাম্রখনি তামাজুড়ি এবং তামাখুন থেকে তামার আকরিক সংগ্রহ করে ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি ও মোষের গাড়িতে সড়কপথে বন্দরে নিয়ে আসতেন । সেখান থেকে নৌকা করে সেইসব আকরিক ও তৈলবীজ যেত তাম্রলিপ্ত বন্দরে। জৈন ব্যবসায়ীরা এই পথ ধরে প্রচুর দেব দেউল নির্মাণ করেছিলেন। জৈন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামাঞ্চলের হিন্দু জনগোষ্ঠীও জৈন মার্গের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিভিন্ন জৈন দেবালয় স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে শঙ্করাচার্যের প্রভাবে সারা দেশের সঙ্গে মানভূমেও সনাতন ধর্ম প্রসারিত হয়।

    পঞ্চকোট রাজবংশ তালিকা থেকে জানা যায়, মহারাজা বিক্রমাদিত্য ছিলেন এঁদের পূর্বপুরুষ।  তেলকুপি নামের উৎপত্তির সঙ্গেও মিশে রয়েছে বিক্রমাদিত্যের কাহিনী।  শোনা যায় সেখানে এসে দেহে তেল মালিশ করে রাজা বিক্রমাদিত্য ছাতা পুকুরে স্নান করতেন।  এলাকাটি আদিবাসী সাঁওতালদের কাছে পুণ্যভূমি। উজ্জ্বয়িনীর কাছে মধ্যপ্রদেশের ধারানগরী থেকে বিক্রমাদিত্যের বংশধরেরা কিভাবে অতীতের শিখরভূম বা মানভূমে এসে সাম্রাজ্য স্থাপন করলেন তা নিয়েও রয়েছে মনোরম কাহিনী।

    মহারানা জগদ্দেও সিং এবং তাঁর রানী বীরমতি  তাঁদের কুলদেবী কঙ্কালী মাতার স্বপ্নাদেশ পেয়ে ৮০ খ্রিস্টাব্দে পুরীতে জগন্নাথ দেব দর্শনের জন্যে রওনা হন।  বহু তীর্থ ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা এক সময় হাজির হন অরুণা বনে (যা আজকের পঞ্চকোট বা পাঞ্চেত অরণ্য)।  সেখানে রানী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন।  জন্মের পর শিশুটি বহুক্ষণ সংজ্ঞাহীন থাকায় মৃত সন্তান প্রসব হয়েছে ভেবে সদ্যোজাত শিশুকে ওই অবস্থায় জঙ্গলে ফেলেই তাঁরা তীর্থ যাত্রায় অগ্রসর হন। পরিত্যক্ত শিশুকে দুধ পান করিয়ে লালন করে কপিলা গাই।  সেই শিশু ধীরে ধীরে ওই জঙ্গলেই বেড়ে উঠতে থাকে।  একদিন আদিবাসী সর্দারদের সাত ভাইয়ের এক দল জঙ্গলে শিকারে গিয়ে ওই শিশুর মধ্যে অলৌকিকত্ব খুঁজে পেয়ে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে ঝালদায়।  ক্রমে আদিবাসী সর্দাররা তাকেই পরগনা চৌরাশিয়ার (যা পরিচিত ছিল 'শিখরভূম' বা শিকারিদের রাজত্ব নামে) রাজা হিসেবে নির্বাচন করে। রাজার জন্য তারা গড়ে দেয় পঞ্চকোট দূর্গ এবং নাম দেয় দামোদর শেখর ওরফে 'জটা রাজা'। আর সেই কপিলা গাইয়ের মৃত্যর পর সেই গাভীর লেজ হয়ে ওঠে রাজত্বের অন্যতম প্রতীক।

    ডঃ দেবলা মিত্র -- জন্ম শতবর্ষ ২০২৪ সালেই। 

    অন্য একটি কাহিনী অনুযায়ী জন্মাবার পরে রাজা ও রানীর সঙ্গে যাবার সময় শিশুটি হাতির পিঠ থেকে হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে পড়ে যায়।  শিশুটি মারা গেছে ভেবে রাজা ও রানী পুরী অভিমুখে এগিয়ে চলেন।  তখন পরিত্যক্ত শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে আসত কপিলা গাই।  সেই আশ্চর্য গাভী থাকত পুরুলিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে কপিলা পাহাড়ে।  শিশু যখন বড় হল তখন সে সেই গাভীর সঙ্গেই জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে বেড়াত।  অবশেষে পরবর্তী কালে পাঁচ আদিবাসী গোষ্ঠীপতি তাকে রাজা হিসেবে নির্বাচন করলেন।  তখন তাঁর পরিচয় হল, 'গৌমুখী রাজা'।  পাঁচ সর্দারের নির্বাচিত বলে রাজত্বের নাম হল পঞ্চকোট।  রাজার ছিল এক রাখাল।  বনের মধ্যে সে একদিন এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখল -- পাহাড়ের কোটর থেকে বেরিয়ে আসা  এক সাপ মুখ থেকে উগরে দিল এক মণি।  সঙ্গে সঙ্গে গোটা জঙ্গল এক অলৌকিক আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।  আর সেই সঙ্গে সেখানে নেমে এল স্বর্গীয় পরী আর বাদকের দল।  অপার্থিব আলোয় আলোকিত জঙ্গলে সেই সাপকে গোল হয়ে ঘিরে চলল পরীদের নাচ আর অনিবর্চনীয় বাদ্য-গীতি।  কিছুক্ষণ পরে সব আবার মিলিয়ে গেল। রাখালের কাছ থেকে এই ঘটনা শুনে রাজা একদিন গেলেন অরণ্যের গভীরে।  রাজাও দেখলেন সেই অলৌকিক দৃশ্য এবং সব দেখে তিনি মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।  সেই অবস্থায় প্রাসাদে ফিরে আসার পর তিনি তিন বছরের মধ্যে মারা গেলেন।
    এরপর তাঁর পুত্রের আমলে মুর্শিদাবাদের রাজার আক্রমণে পঞ্চকোট রাজবংশ প্রায় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। গ্রামের সর্দার একটি বালককে পিপের মধ্যে লুকিয়ে রাখায় বেঁচে যায় শুধু সে।  পরে তারই হাত ধরে আবার নতুন করে উদ্ধার হয় হৃত সাম্রাজ্য। পঞ্চকোটের সিংদেও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা হয় দামোদর শেখরকেই। রাজত্ব প্রতিষ্ঠা বহু আগে হলেও গড় পঞ্চকোটে তা উঠে আসে অনেক পরে আনুমানিক ৯৪০ সালে এবং ১৭৫০ সাল পর্যন্ত তা সেখানেই ছিল।  তার মধ্যে ১৬০০ সাল নাগাদ কিছুদিনের জন্যে পঞ্চকোট দখল করেন বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজা বীর হাম্বির।  মুঘল সম্রাট আকবরের বিশ্বস্ত সেনাপতি রাজা মান সিংকে সহায়তা করে তিনি পঞ্চকোট রাজকে দিল্লির বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন।  কিন্তু তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় নি। মান সিংহের নাম থেকেই মানভূম। পুরুলিয়ার মানবাজারের অস্থায়ী শিবির গুটিয়ে মান সিংহের প্রত্যাবর্তনের পর পঞ্চকোট রাজ আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।  অবশ্য বাদ্শাহনামার বিবরণ অনুযায়ী ১৬৩২-৩৩ সালে পঞ্চকোট রাজ বীর নারায়ণ মুঘল সম্রাট শাহজাহানকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের পেসকস বা কর দিতেন।  মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে পঞ্চকোটের ওপর মুর্শিদাবাদের নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যায় এবং দিল্লিতে পাঠানো  খাজনার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।  সম্ভবত সেই কারণেই পরবর্তী কালে মুর্শিদাবাদের চাপ এড়াতে পঞ্চকোট থেকে প্রাসাদ সরিয়ে নেওয়া হয় কেশরগড়ে, যা ছিল বহিরাগতদের পক্ষে এক দুর্গম এলাকা।  রক্তে রাজপুত এবং ক্ষত্রিয় শৌর্য থাকায় পঞ্চকোট রাজারা বরাবর ছিলেন স্বাধীনচেতা।  ব্রিটিশ আমলে লর্ড কর্ণওয়ালিসের আরোপিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিরোধিতা করা থেকে শুরু করে সিপাহি বিদ্রোহেরও  আগে স্থানীয় সাঁওতালদের জোটবদ্ধ করে রাজা নীলমণি সিংদেও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতকে মারাঠা বর্গী আক্রমণের পরে সিংদেওরা তাঁদের রাজধানী এবং প্রাসাদ স্থানান্তর করেন পুরুলিয়ার দ্বারকেশ্বর নদীর নিকটবর্তী কাশীপুরে।  এই নিয়ে মোট সাতবার।  এখনও রাজবাড়ি সেখানেই রয়েছে।

    মহারাজা নীলমণি সিংদেওয়ের আমলে ১৮৬৮ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই কাশীপুর রাজবাড়িতেই কিছুদিনের জন্যে এস্টেট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন।  সেই সময় তিনি তিনটি কবিতা লিখেছিলেন -- 'পঞ্চকোট গিরি', পঞ্চকোটস্য রাজশ্রী' এবং 'পঞ্চকোট গিরি বিদায় সঙ্গীত'।

    ব্রিটিশ আমলে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল এ কানিংহামের সহকারি আর্মেনিয়ান ইঞ্জিনিয়ার,  আলোকচিত্রী এবং লেখক জে ডি বেগলার ১৮৬৬-৬৭ সালে তেলকুপি-পঞ্চকোট পরিদর্শন করেন। মালদার গৌড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ এবং নৈহাটির কাছে গঙ্গার ওপর জুবিলি সেতু নির্মাণের তত্ত্বাবধানও তিনিই করেছিলেন।  তাঁর সেই সমীক্ষার বিবরণ বেরিয়েছিল "Report of a Tour through the Bengal Provinces" প্রকাশনায়।  সেখানে তেলকুপির মন্দিরগুলি দেখে তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, “the finest and largest number of temples within a small space that is to be found in the Chutia Nagpur (ছোটনাগপুর) Circle in Bengal.”  দামোদরের গর্ভে বিলীয়মান বিভিন্ন মন্দিরের মধ্যে বেগলার ১৩ টি মন্দির চিহ্নিত করে সেগুলির পুরাতাত্ত্বিক তাৎপর্যের খুঁটিনাটি বিবরণ এবং ছবি নথিভুক্ত করেন।  শুধু তাই নয়, তেলকুপি ও পঞ্চকোটকে ঘিরে ইতিহাস ও পৌরাণিক নানা কাহিনী এবং কিংবদন্তীর হদিসও প্রথম জানা যায় বেগলারের প্রতিবেদন থেকেই।



    এর বহু পরে ১৯৫৯ সালের ১১ ফেব্রূয়ারি আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর তথা পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ডঃ দেবলা মিত্র ওই অঞ্চল পরিদর্শন করেন।  তার দু-বছর আগেই তেলকুপি ও পঞ্চকোটের গ্রামবাসীরা পাঞ্চেত বাঁধ নির্মাণের ফলে দামোদরের জলে  মন্দির প্লাবিত হওয়ার ব্যাপারে সরকারি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন।  কিন্তু তাতে কারও টনক নড়ে নি।  এলাকা পরিদর্শনের পর দেবলা মিত্র ১৯৬০ সালে যে রিপোর্ট লেখেন সেটি ন' বছর বাদে এ এস আই প্রকাশ করে “Memoirs of the Archaeological Survey of India” [No. 76] – Telkupi – a submerged temple site in West Bengal” শিরোনামে। তাঁর বিবরণ থেকে জানা যায়, তেলকুপির ২৬ টি মন্দিরের মধ্যে মে-জুন মাসের প্রখর গ্রীষ্মেও দেশি নৌকা করে কেবল ১৭ ও ১৮ নং মন্দিরেই যাওয়া গিয়েছিল -- তাও হাঁটু-সমান কাদা ঠেলে।  অন্যান্য সব মন্দিরই তখন পুরোপুরি প্লাবিত।  সেই মন্দিরের বহু বিগ্রহ জলে ডোবা অবস্থায় কিছু মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে পড়ে ছিল।  সেগুলির মধ্যে ছিল মহিষাসুরমর্দিনী, গণেশ, উমা-মহেশ্বর, বিষ্ণু ও অম্বিকার মূর্তি। সেগুলিকে উদ্ধার করে শুকনো এলাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসও ব্যর্থ হয় কারণ দেবতার অভিশাপের ভয়ে কোনও মাঝি বা গ্রামবাসী বিগ্রহগুলিকে স্থানচ্যূত করতে অস্বীকার করে।  দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকেও বিপর্যয় ঠেকাতে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা হয়েছে।  দেবলা মিত্র তাঁর প্রতিবেদনে ওই অঞ্চলের ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ পরম্পরার কথাও তুলে ধরেছিলেন।  এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, দন্ড-ছাতা পরব, ধর্মরাজ পুজো, হরিনাম সংকীর্তন, দূর্গা পুজো, কালী পুজো, লিডোলি পুজো, খেলাইচন্ডি পুজো, সরস্বতী পুজো, শিব পুজো, বারুনী পুজো, চড়ক প্রভৃতি। শুধু গড় পঞ্চকোট বা তৈলকম্প নয়, বহু বৌদ্ধ প্রত্নস্থল খনন ও আবিষ্কারের কৃতিত্বের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে দেবলা মিত্রের নাম। এছাড়া অজন্তা, কোনারক, সাঁচি, উদয়গিরি, খন্ডগিরি সম্পর্কে তাঁর লেখা বই রয়েছে। ১৯২৫ সালে অবিভক্ত বঙ্গের খুলনায় জন্ম। পড়াশুনা খুলনা ও কলকাতায়। প্যারিস থেকে তিনি ডক্টরেট করেন। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তিনিই প্রথম মহিলা ডিরেক্টর জেনেরাল। আগামী বছরেই তাঁর জন্মশতবর্ষ। ইতিহাস ও পুরাতত্ত্বে দেবলা মিত্রের অবদান অসামান্য। গড় পঞ্চকোট বেড়াতে গিয়ে তেলকুপি সভ্যতার ভগ্নাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা যেন এই চিরস্মরণীয় বাঙালি মহিলা পুরাতাত্ত্বিকের কথা স্মরণ করি।  

    উন্নয়নের অজুহাতে আধুনিক ভারত তার পুরাতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সম্পদ যে ভাবে ধ্বংস করেছে বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত তেমন নজির নেই। পাঞ্চেত বাঁধ দেখলে তার সীমাহীন মাসুলের কাহিনীও যেন আমাদের মনে পড়ে। পাঞ্চেতের ঘটনা যে দেশের রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মোটেই লজ্জিত করেনি তার প্রমাণ পাওয়া যায় আরও একটি বাঁধ নির্মাণে। দামোদরের পরে সুবর্ণরেখা। পাঞ্চেতের ৫০ বছরের মধ্যেই তৈরি হল চান্ডিল বাঁধ। সেক্ষেত্রে অধুনা ঝাড়খন্ডের পাতকুমেও আরও বহু জনপদ এবং জৈন মন্দির ঠিক একই ভাবে জলের তলায় চলে গেছে। 
    UNESCO এবং ICOMOS গত ২০০৪-০৫ সালে তাদের Heritage at Risk বার্ষিক প্রতিবেদনে ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গে জৈন হেরিটেজ স্থানগুলি এভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক সচেতনতা প্রসারের আহ্বানও জানিয়েছে ইউনেসকো। লক্ষণীয় ব্যাপার হল, স্বাধীনতার পর থেকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে, পরিবেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত উন্নয়নযজ্ঞের এই ধ্বংসলীলা কিন্তু একই ভাবে অব্যাহত রয়েছে।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 122.164.***.*** | ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:০৫526825
  • স্বাধীনতার পর পঞ্চাশ ষাট বছর ধরে ভাগ্যিস এই বাঁধ গুলো নির্মান হয়েছিল, রাস্তাঘাট বানানো হয়েছিল, ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছিল। এগুলো না হলে এখনো দেশের ডেভেলপমেন্ট প্রাগৈতিহাসিক কালে পড়ে থাকতো।  
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:3e9b:4edc:1606:***:*** | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:৫২526832
  • এই বাঁধগুলোর প্রয়োজন সম্পর্কে আমি একমত। কিন্তু তেলকুপিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত। পাঞ্চেত উদ্বোধন হয় ১৯৫৯, উইকি বলছে। ১৯৫৫তে নাগার্জুন সাগর বাঁধ তৈরি শুরু হয়। নাগার্জুন সাগরের বেলায় ওই অঞ্চলের পুরাকীর্তিগুলো নাগার্জুনকোন্ডায় তুলে আনা হয়। অল্প পরে ইজিপ্টের আসোয়ান বাঁধের ক্ষেত্রেও আবু সিম্বল এবং আরো সব পুরাকীর্তি সরিয়ে এনে রক্ষা করা হয়েছিল। তেলকুপির বেলায় সেটা না হওয়ার কোন কারণ ছিল না। তবে বাঙালীর ঐতিহ্যের বোধ সবসময়ই কম, এমনকি এখনো কম। নইলে মমতা ব্যানার্জির মুসোলিনি মার্কা সাংস্কৃতিক ভ্রষ্টাচার সহ্য করত না।
  • আ খোঁ | 2402:3a80:1cd2:e100:378:5634:1232:***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:০১526895
  • ডিসি স্বঘোষিত ক্যাপিটালিস্ট। অসুবিধে নেই। তবে আগে এক বিতর্কে যদ্দুর মনে পড়ে, রিসোর্সের এফিসিয়েন্ট ব্যবহার - এইসব বলেছিলেন। তা, বড় নদীবাঁধ যে ক্যাটাস্ট্রফিক ফেইলড কনসেপ্ট সেটা উন্নত ধণতান্ত্রিক দেশগুলোর ডেভলপমেন্ট মাতব্বরেরাও মোটামুটি মেনে নিয়েছে। এখন এই বাঁধ নিয়ে উদ্বাহু আল্লাদ কি আপনার সেই এফিসিয়েনসির সঙ্গে যায়? ২০২৩ এ দাঁড়িয়ে এ যে ট্রাম্প আর উনিজির ক্রোনি উন্নয়ন দর্শন মার্গ এর লাইন ডিসি সাহেব। :-)
  • dc | 122.164.***.*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৩৯526896
  • নদীবাঁধ তাহলে ইনএফিসিয়েন্ট ইউস অফ রিসোর্স? তা হতে পারে। তাও নদীবাঁধ বানানো নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই :-) শুধু নদীবাঁধ ​​​​​​​না, কোন ​​​​​​​মেগা ​​​​​​​কনস্ট্রাকশান প্রোজেক্ট ​​​​​​​নিয়েই ​​​​​​​আমার ​​​​​​​আপত্তি ​​​​​​​নেই। এক্সপ্রেসওয়ে, ​​​​​​​হাইস্পিড ​​​​​​​রেল ​​​​​​​নেটওয়ার্ক, পোর্ট, ​​​​​​​এয়ারপোর্ট, ​​​​​​​পাওয়ার ​​​​​​​প্ল্যান্ট ইত্যাদি ​​​​​​​সবেতেই ​​​​​​​আমার ​​​​​​​সমর্থন ​​​​​​​আছে।
  • আ খোঁ | 2402:3a80:1cd2:dca3:378:5634:1232:***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৬526898
  • তা ভালো। তবে  একটা কথা সেঁটে যাই। এই নদীবাঁধ প্রকল্পগুলোর কান্ডারি যিনি, ওই নেহরুজী আর কি, ১৯৫৪ সালে ভ্যাকরা নাঙ্গালের বিস্তর ঢাকঢোল পিটিয়ে ফিতে কেটে বলেছিলেন, এই প্রকল্পগুলো হলো গিয়ে 'আধুনিক' ভারতের মন্দির। তো সে লোকটার আধুনিক মন্দির-টন্দির থেকে ভক্তি উঠে গেল চারটে বছর যেতে না যেতেই। মন্দির এর আশীর্বাদ হয়ে গেল 'ডিজিজ অফ জায়গান্টিজম'.। আবার কোথায় বললেন - সেন্ট্রাল বোর্ড অফ পাওয়ার এন্ড ইরিগেশনের এক হলঘর ভর্তি ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশ্য করে। তো ওই বলছিলাম আর কি, গরিবের কথাটা একটু খেয়ালে রাখবেন। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২৪526904
  • চতুর্মাত্রিক, আছেন? অনেকদিন আগে সেই যে বলছিলেন সিন্ধুসভ্যতার শহরগুলোর পরে তখন আর শহর হয় নি, অযোধ্যা, মিথিলা, মথুরা, হস্তিনা ---ইত্যাদি সবই ছিল ইকোফ্রেন্ডলি ব্যাপার, গ্লোরিফাইড গ্রাম। ( জনক নিজেই হলকর্ষণ উৎসবে যেতেন।) সেইসবেরই রিভিজিট হচ্ছে দেখছেন? এই যে আখাম্বা উঁচু উঁচু বাড়ি করে ময়দানবের মায়ানগরী করেছে, এখন দেখছে ডেবে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আর দুনিয়ার পরিবেশের কথা তো জানেনই।
  • dc | 122.164.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৬526905
  • আ খোঁ, নেহরু এতো সব বলেছেন জানতাম না, এসব ইতিহাস আমি একেবারেই জানিনা। নেহরুর সম্বন্ধে ইন জেনারাল আমার খুবই কম জানা আছে, শুধু এইটুকু মনে হয় যে উনি ইন্ডিয়াকে সোশ্যালিজম এর দিকে ঠেলে দিয়ে বড়ো ভুল করেছিলেন, সেই সময় থেকেই ক্যাপিটালিস্ট মডেল ফলো করলে আরও আগে ইন্ডিয়ার ডেভেলেপমেন্ট হতো। তবে মনমোহন সিং নব্বুইএর দশকে সেই ভুল সংশোধন করেছিলেন, ইকোনমিক লিবারাইজেশান শুরু করেছিলেন, সো ইন দ্য এন্ড ইট ওয়াজ অলরাইট :-) 
     
    তবে নেহরুকে নদীবাঁধ প্রকল্পর কান্ডারি বলা বোধায় ঠিক হবে না। পৃথিবীর বহু দেশে বড়ো বড়ো হাইড্রোইলেকট্রিক প্রোজেক্ট বানানো হয়েছে আর এখনও হচ্ছে, যেমন চীন, ইজিপ্ট, আমেরিকা, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, য়ুরোপ, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি। কাজেই নেহরু অর নো নেহরু, ডেভেলপমেন্ট হতো বলেই মনে হয়। বলা বাহুল্য, এসবই আমার ব্যাক্তিগত মতামত। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৬526906
  • হতই। নেহরুকে সাইড করে দিয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র এসে দেশের হাল ধরলেও ইন্ডাস্ট্রি, সায়েন্স, টেকনোলজি, বাঁধ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি এই হরেদরে একই রাস্তায় চলত বলেই মনে হয়। কারণ এগুলো তো খুবই গ্লোবাল চাপের জিনিস, দেশীয় সিদ্ধান্ত তো শুধু নয়।
  • dc | 2a02:26f7:d6c1:680d:0:d8bd:a720:***:*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৬526907
  • আমারও তাই মনে হয়। সুভাষ, নাতো প্যাটেল, নাতো অন্য কেউ। তবে এসবই স্পেকুলেশান :-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন