১
নন্টু আসছেন, নিভাননী সংবাদ পেয়েছিলেন। নন্টু অচ্যুতের ডাকনাম, মা নিভাননী ওই নামেই ডাকেন, ডাকে গাঁয়েঘরের লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও। নন্টুর আসার সংবাদে তিনি আদৌ খুশী হননি। বরং তীব্র রাগ হচ্ছিল। তাঁর সঙ্গে কোন কথা না বলেই “মাগ-ছেলে” নিয়ে নন্টু কলকাতায় বাসা নিয়ে চলে গেল! সেখানে বড় নাতি হীরুকে কোন একটা স্কুলে যেন ভর্তিও করে দিয়েছে! কলকাতার স্কুলে ছেলেকে পড়িয়ে, নাকি ‘জজ ব্যারিষ্টর’ করে তুলবে! কেন পাড়াগাঁয়ে থেকে কেউ কী বড়ো মানুষ হয় না? গাঁয়ের স্কুলেই পড়া শেষ করে, বর্ধমানের কলেজে পড়ে মনা হাজরা, গোপাল চাটুজ্জ্যে, বিশু সামন্তরা বড়ো মানুষ হয়নি? হাজরাদের মনা কলকাতা হাইকোর্টের দুঁদে উকিল। গোপাল চাটুজ্জে “ম্যাজিস্টর”, তার হুকুমে সবাই হুজুরে হাজির থাকে। বিশু সামন্ত বায়স্কোপ বানায়, দেশে-বিদেশে তার নাকি খুব “সুখ্যাৎ”। এঁদো গাঁয়ের স্কুলের জন্যে ওদের কী কিছু আটকেছে? যার হবার তার হবেই, আর যার হবার নয়, তার কোথাও হবে না। কলকাতার স্কুলে পড়লেই বুঝি সবাই ডাক্তার-মোক্তার হয়?
বিয়ের আগে নিভাননী কলকাতা না হলেও, কাশীপুরে অনেকদিন থেকেছেন বড়োদাদার বাসায়। তাঁর বড়োদাদা থানার ছোটবাবু ছিলেন। কলকাতার মতো ইল্লুতে জায়গা আর দুটো নেই। বড়োদাদার বাসার কাছেই একটা পাঁউরুটির কারখানা ছিল। সেখানে তিনি দেখেছেন, কারখানার লোকেরা পায়ে দলিয়ে পাঁউরুটির ময়দা মাখছে। সেই পাঁউরুটি নাকি কলকাতার বাবুরা মাখন মাখিয়ে খায়। ঝ্যাঁটা মার, ঝ্যাঁটা মার – জাত ধম্মো আর কিছু বাকি আছে কলকাতায়? তাছাড়া বখাটে, বাউন্ডুলে, মাতাল, ঘর পালানে “মিন্সে” চারদিকে কিলবিল করছে। ঘরের বাইরে পা রাখতেই বুক কাঁপে! বউ বগলে করে, সেই শহরেই গিয়ে বাসা বাঁধল নন্টু? এই বাড়ির বড়বৌ, ঘরের লক্ষ্মী - একটা অসৈরণ-সৈরণ নেই? বামুনের ঘরের বউ, সেজেগুজে নচ্ছার মাগীর মতো বাজার-হাট করবে? ট্রামে-বাসে ব্যাটাছেলেদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যাওয়া আসা করবে? আজ থাকতেন নন্টুর বাবা, খড়মপেটা করে ছেলের এই বারটান আর বাউন্ডুলেপনা, শায়েস্তা করে দিতেন।
নন্টুর বাবা যখন মারা গেলেন, নন্টু তখন কলকাতার কলেজে পড়ে। সে আজ বেশ কবছর হল। নিভাননীর ছোট ছেলে শান্টুর বয়েস তখন বছর পাঁচেক। তার ওপরের দিদি চিত্রার বয়েস ষোলো। বাবার মৃত্যুর পর, নন্টু যোগ্য বড়ো ছেলের মতোই সংসারের হাল ধরেছিল। কলেজের পড়ায় পাশ দিয়েই, মেজঠাকুরপোর সুপারিশে সরকারি চাকরিটাও সে পেয়ে গিয়েছিল। মেজ ঠাকুরপোও সেই দুর্দিনে নন্টুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সত্যিকারের অভিভাবকের মতো। নন্টু চাকরিটা পাওয়ার পরেই, সংসারটা একটু গুছিয়ে নিয়ে, বেশ ধুমধাম করেই ছোটবোনের বিয়ে দিয়েছিল।
চিত্রার বিয়ে মিটে যাওয়ার পর, নিভাননী বলেছিলেন, “এবার বিয়ে থা করে, তুইও সংসারী হ, নন্টু। তোর বিয়ে হয়ে গেলে, আমি ঝাড়া হাত পা হবো, বেরিয়ে পড়বো তীর্থ দর্শনে। সংসারের এই টানাপোড়েন আর ভাল লাগছে না, রে”।
সে কথায় নন্টু খুব উৎসাহ দেখিয়েছিল, বলেছিল, “সেই ভালো, মা। শান্টুকে ভালো কোন একটা বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে দিই দাঁড়াও, তারপর তোমাকে নিয়ে আমিও বেরিয়ে পড়বে তীর্থ যাত্রায়। বিয়ে থা করে আর কাজ নেই। সারা বছর ঘুরে বেড়াবো, সব ঠিকঠাক চলছে কিনা মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো”।
বড়ছেলের ছেলেমানুষিতে হেসে ফেলেছিলেন, নিভাননী, বলেছিলেন, “তাই কী হয় নাকি? চাকরি বাকরি শিকেয় তুলে, তুই কোথায় যাবি, বাবা? আর মায়ের চোখের সামনে সোমত্ত ছেলে আইবুড়ো বসে থাকবে, এ আবার একটা কথা হল? আমি খোঁজখবর করছি। তোর একটা গতি না করে, আমি তীর্থে গিয়েও যে শান্তি পাবো না, বাবা!”
“না, না, মা, এই বেশ আছি। তুমি আমাকে আর ওসবের মধ্যে জড়িও না”। ছেলের এই আপত্তি যে কথার কথা সেটা বুঝতে ভুল করেননি নিভাননী। তিনি খোঁজখবর করেছেন। মেয়ে দেখতে, মেয়ের ঘরদোর বুঝতে, কথাবার্তা বলতে মেজঠাকুরপোকে পাঠিয়েছেন। নন্টু সবই শুনেছে, বুঝেছে, মেয়ে পছন্দ করে বিয়েও করেছে – কোন আপত্তি করেনি। তারপর দুটি ছেলেও হয়েছে। তিনি নিজেও সংসারে আর জড়াবেন না ভাবলেও, জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি বিধবা, ছোটছেলে শান্টুর লেখাপড়াও শেষ হয়নি এখনো নাবালক। তার একটা হিল্লে না হওয়া পর্যন্ত, তিনি শান্তি পাচ্ছেন না। মেজছেলে চাকরি নিয়ে চলে গেছে বহুদূরে। বছরে কয়েকদিনের জন্যে বেড়াতে আসে। কোন খোঁজখবর নেয় না, সংসারের কোন দায়দৈবে মাথাও ঘামায় না। সেজছেলে একটা চাকরি নিয়ে কলকাতার মেসে থাকে। সেও কমাস আগেই বিয়ে করেছে। সেজবৌ বাড়িতেই থাকে।
বড়ছেলে নন্টু ছাড়া তিনি আর কাউকেই তেমন ভরসা করতে পারেন না! কিন্তু পরের ঘরের মেয়ে যদি কান ভাঙানি দেয়, পর করে দেয় তাঁর নন্টুকে? প্রত্যক্ষ কোন কারণ না ঘটলেও, সেই আতঙ্কে তিনি তটস্থ থেকেছেন অহরহ। আজ সেটাই সত্যি হল, নন্টু পরই হয়ে গেল? মা-ভাইকে ভুলে বাসা নিয়ে ফেলল কলকাতায়! তাও তাঁর বিনা অনুমতিতে?
স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে সোনা, এ বাড়ির বৌ হয়ে এসে, অনটনের সংসারে মানিয়ে নিয়েছেন বিস্তর। তাঁর আচরণে কাজে কর্মে কোথাও তেমন কোন ত্রুটি ধরা পড়ে নি কোনদিন। কিন্তু এই অত্যধিক মেনে নেওয়াটাও যে মেনে নেওয়া যায় না! কোন প্রতিবাদ না করে, সব অভাব, সব অনটন যদি কেউ মুখ বুজে, হাসি মুখে সহ্য করে নেয়, সেটাই বা কেমনতর! এও তো একধরনের স্পর্ধাই। আমি কত ভালো, আমার বাপের ঘরের শিক্ষা কতো ভালো, এ যেন তার দেখনদারি!
পুত্রবধূর অস্পষ্ট অথচ অসহ্য এই গুমোর কল্পনা করে নিভাননীর গাত্রদাহ হয়। পাড়া প্রতিবেশী যত তাঁর বড়োবউয়ের প্রশংসা করে, সোনা তত তাঁর চোখের বালি হতে থাকেন। পুকুরঘাটে গাঁয়ের মেয়েবউদের সঙ্গে স্নান থেকে ফিরতে দেরি হলে বিরক্ত হন, মুখ ঝামটা দেন। ঘরের সব কাজ সেরে প্রতিবেশী-জ্ঞাতি মেয়েবউদের সঙ্গে বসে দুপুরে বিন্তি বা রঙ মেলান্তি খেললেও বিরক্ত হন। নন্টুর বাবা ছিলেন কট্টর শুদ্ধাচারী নীতিবাগীশ ব্রাহ্মণ। তিনি বেঁচে থাকতে তাঁর ব্রাহ্মণ্যে গ্রামের লোকেরা ভয়ে এবং ভক্তিতে তটস্থ থাকত।
স্বামীর জীবদ্দশায় তিনি নিজেও সর্বদা আতঙ্কে থাকতেন, ঘরভরা ছেলেমেয়ের সংসারে সর্বদা সব বিধান কী আর মেনে চলা যায়? পান থেকে চূণ খসলেই স্বামীর বাক্যবাণে বিদ্ধ হতেন এবং আড়ালে চোখের জল ফেলতেন। অথচ বিধবা হয়ে, সেই তিনিই পালা-পার্বণ, তিথি-নক্ষত্র, বার-ব্রত, আমিষ-নিরামিষ, ছ্যুৎ-অছ্যুৎ, কাচা-আকাচা, আচার-বিচারের মোড়কে নিজেকে মুড়ে ফেলেছেন। একাদশীর দিন তিনি নির্জলা উপবাস করেন। সমস্ত বার-ব্রত-তিথি-নক্ষত্র পালনে তিনি স্বয়ং মনুর থেকেও নিষ্ঠুর এবং অমোঘ।
সেই সব তিথির পালনীতে সামান্য চ্যুতি হলে, তিনি পুত্রবধূকে ছেড়ে কথা বলেন না, “তুমি আর এসব জানবে কী করে মা, তোমরা বড়োমানুষের মেয়ে। তোমাদের বাড়িতে শুনেছি কত জাতের কত কাজের লোক। তোমাদের বাপের ঘরে অমন চলতে পারে, কিন্তু এখানে তো ওসব চলবে না, বৌমা। তোমার শ্বশুরঠাকুর ছিলেন এই দিগড়ের বিধান দাতা। তাঁর নির্দেশ ছাড়া এই গাঁয়ের লোকের একপাও চলার ক্ষমতা ছিল? বাপরে, কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে তুলতেন! কেউ কিছু অনাচার করে ফেললে, তার প্রায়শ্চিত্তের যা বিধান দিতেন, সে সব শুনলে তোমরা ভিরমি খাবে!”
প্রখর গ্রীষ্মে, একাদশীর নির্জলা উপবাসের দিন, মেঝেয় আঁচল বিছিয়ে শুয়ে থাকা নির্জীব শ্বশ্রুমাতাকে, সোনা একবার এক গেলাস লেবুমিছরির সরবৎ খাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, তাতে নিভাননী উত্তর দিয়েছিলেন, “ছি, ছি, বৌমা, এ তুমি কী করলে? এ যে পাপ। বামুনের ঘরের বেধবাকে একাদশীর ব্রতভঙ্গ করাতে এলে? তোমার কি একবারও মনে হল না, এ অনাচার?”
“ভোর থেকে এত বেলা হল, এই প্রচণ্ড গরমে আপনি একবিন্দু জলও মুখে দিলেন না। আমরা এবার ভাত খেতে যাবো, আর আপনি এভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, মা, তাই...”।
তীব্র ঝাঁজের সঙ্গে নিভাননী উত্তর দিয়েছিলেন, “রক্ষে করো, বৌমা, আমার জন্যে তোমার অত দরদে আর কাজ নেই! ওসব তুমি বুঝবে না, মা। উপোসে শরীর-মন শুদ্ধ হয়, কষ্ট হয় না, তোমার বড়লোক বাপ-মা এই শিক্ষাটুকুও দেননি, বাছা? যাও যাও, বেলা অনেক হল, খেয়ে নেবে যাও। আমার ভাবনা আমাকেই ভাবতে দাও”।
সোনা, মাথা নিচু করে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, গেলাসের সরবত উঠোনের মাটিতে ফেলে দিয়ে, নিজের ঘরে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কেঁদেছিলেন খুব। ছোট্ট হীরু মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে, জিগ্যেস করেছিল, “ও মা, কাঁদছো কেন? খেতে দেবে না? ও মা, চলো না খিদে পেয়েছে”। সেজজা এসে সোনাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, “ও দিদি, মন খারাপ করো না তো! কচি ছেলেটার খিদে পেয়েছে, চলো খেতে দাও”।
২
অচ্যুত যখন বাড়িতে ঢুকলেন, নিভাননী খুঁটিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন দাওয়ায়। ছোট করে ছাঁটা সাদা-কালো কদমফুলি চুল। পরনে পাড়হীন সাদা থান, সাদা ব্লাউজ। সমস্ত শরীর পাথরের মতো কঠোর আবেগহীন।
“কেমন আছো, মা?” নিচু হয়ে চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করলেন অচ্যুত। নির্বিকার স্বরে নিভাননী উত্তর দিলেন, “যেমন তোমরা, রেখেছো, বাছা! আমাদের আর থাকা না থাকা, শেষের প্রহর গোনা বৈ আর কাজ কী?”
মায়ের অনুমতি ছাড়া পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যাওয়া নিয়ে অচ্যুতের মনে অপরাধবোধ ছিলই, কুণ্ঠিত স্বরে বললেন, “ওভাবে বলছো কেন, মা? তড়িঘড়ি সব কিছু ঠিক হয়ে গেল, তোমাকে জানাতে পারিনি। অন্যায় যে হয়েছে, সেটা কি আমি বুঝতে পারছি না, মা?”
ঠাকুরঘরের দিকে যেতে যেতে নিভাননী বললেন, “অন্যায় হবে কেন, বাবা? যা করেছো ঠিকই করেছ। সেই কোন ভোরে রওনা হয়েছো, হাতমুখ ধুয়ে এসো। একটু জিরিয়ে নাও। বৌমা, নন্টু এসেছে সরবৎ দাও, জল দাও”।
নিভাননী যদি দুটো কথা কটকট করে শুনিয়ে দিতেন, কিংবা অভিযোগ করে কান্নাকাটি করতেন, অচ্যুতের পক্ষে পরিস্থিতি সামলাতে সুবিধে হত। কিন্তু উদাসীনতার এমন নিরেট দেওয়াল তিনি তুলে দিলেন, তার মধ্যে প্রবেশের আর কোন পথ খুঁজে পেলেন না। মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে, অচ্যুত দাওয়াতে হাতের ব্যাগটা রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল, ছোটভাই শান্টু, তার হাতে কাচের গেলাসে শরবৎ। তার হাত থেকে গেলাস নিতে নিতে তিনি রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকালেন, দরজার আড়ালে সেজবৌমার শাড়ির প্রান্ত দেখতে পেলেন।
শরবৎ শেষ করে, শান্টুর মাথায় হাত রেখে অচ্যুত বললেন, “কেমন আছিস রে, শান্টু?”
একগাল লাজুক হেসে শান্টু অচ্যুতকে প্রণাম করে বলল, “ভালো আছি, বড়দা। তোমাদের বাসায় আমাকে নিয়ে যাবে না, দাদা?”
ছোটভাইয়ের কথায় অচ্যুত আবেগে আপ্লুত হলেন, “দেখ বোকা ছেলে কেমন প্রশ্ন করে! নিয়ে যাবো না, কেন? আমার বাসা তো তোদেরও বাসা। যাবি, থাকবি, ওখানে থেকেই লেখাপড়া করবি। হীরু তোর কথা খুব বলে, তোর বৌদিও বলে, শান্টুটা কী করছে কে জানে!”
যে অপরাধবোধের জন্যে অচ্যুত মায়ের সামনে আড়ষ্ট হয়ে ছিলেন, ভাইয়ের আন্তরিক কথায় তিনি অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করলেন, গলা তুলে বললেন, “বৌমা, তোমাদের খবর সব ভালো তো মা? তোমার বড়দি তোমাদের কথা খুব বলে। তোমরা দুজনে সারাদিন একসঙ্গেই তো থাকতে; বলে, মালতী আমার আর জন্মের বোন ছিল”।
“সঙের মতো দাঁড়িয়ে কী শুনছিস, শান্টু? দাদার হাত থেকে খালি গেলাসটা নে। কলকাতা যাওয়ার জন্যে তোর এত আদেখলামোই বা কেন রে? কলকাতা কী পালিয়ে যাচ্ছে? দাদা-বৌদি কলকাতায় বাসা নিয়ে চলে গেছে, তোদের মতো অপোগণ্ড পোষবার জন্যে? বৌমা, দরজায় দাঁড়িয়ে আর আদিখ্যেতা করো না, বাছা। কত বেলা হল, সে খেয়াল আছে? নন্টু এতদিন পরে এল, শুধু ডালভাত বেড়ে দেবে নাকি”? ঠাকুরঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলা, নিভাননীর কর্কশ কথাগুলো, হাল্কা হওয়া পরিস্থিতিকে আবার বিষাক্ত করে তুলল। কথাগুলি বলে তিনি ঠাকুরঘরের দরজা বন্ধ করে জপে বসলেন। কম্বলের আসনে বসে, ইষ্টদেবতার মুখ মনে করার চেষ্টা করলেন বহুক্ষণ, পারলেন না। চোখ বন্ধ করলে, একটাই মুখ তিনি দেখতে পাচ্ছেন, সুন্দর অথচ কুটিল সেই মুখটি তাঁর বড়পুত্রবধূর। জপের আসনে বসেও তিনি শান্ত হলেন না, বরং ক্রোধের নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে তিনি তাকিয়ে রইলেন, রাধা-কৃষ্ণের স্মিত যুগলমুখের দিকে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।